দীর্ঘ এক বছরের জটিলতা কাটিয়ে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য আবারও উন্মুক্ত হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। আগামী ছয় বছরে দেশটি বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক সম্পূর্ণ বিনা খরচে মালয়েশিয়ায় কাজের সুযোগ পাবেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) মালয়েশিয়ার রাজধানী পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল ও মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কেও’র সঙ্গে এক যৌথ বৈঠকে মিলিত হন বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বৈঠকে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মতি দেওয়া হয়। তবে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করার কথাও জানিয়েছে দেশটি।
মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে এবং শ্রমবাজার খুলছে বলেই আমরা আশা করছি।" আগামী ২১ মে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অপরদিকে, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়মিতকরণ (legalization) নিয়েও আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এর আগে, ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. আনোয়ার ইব্রাহিম এক সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশে আসেন। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি জানান, দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। সেখানে কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি, শিক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং শ্রমবাজার খোলাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।
ড. ইউনূসকে ব্যক্তিগত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশের শ্রমিকরা আধুনিক দাস নয়। তাদের মর্যাদা রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বন্ধ শ্রমবাজার আবার চালু করে বন্ধুকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখছি।"
শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় মালয়েশিয়ায় সাধারণ শ্রমিকদের আয় দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে এই বাজার পুনরায় চালু হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি যেমন উপকৃত হবে, তেমনি বাড়বে বৈধ অভিবাসন ও রেমিট্যান্স প্রবাহ। এর মাধ্যমে হাজারো শ্রমিক বৈধভাবে বিদেশে কাজের সুযোগ পাবেন, যা কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য নিরসনে বড় অবদান রাখবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ মে সরকারি সফরে মালয়েশিয়া যান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া এবং উপসচিব মো. সারওয়ার আলম। এই সফরের ফলাফল হিসেবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার বিষয়টি এবার বাস্তবায়নের পথে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।