রবিবার, ৮ জুন ২০২৫ | ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
Dhaka Prokash

কারাগারের রোজনামচা: বাংলাদেশকে ভালোবাসার দলিল

বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ এক নাগাড়েই পড়ে ফেলার মতো একটি বই। তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ও একই ধাঁচের আরেকটি বই। অতি সহজে মনের কথা বলার ও লিখার এক অভাবনীয় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। এ বই দুটো পড়েই আমার মনে হয়েছে রাজনৈতিক সাহিত্যিক হিসেবে বিশ্বজুড়ে তার সুনাম চিরদিনই বহাল থাকবে।

এই দুটো বইয়ের সম্পাদক তারই সুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে তার আরও কয়েকটি বই অচিরেই বের হবে। আরও সন্তুষ্টির কথা যে বইগুলোর ইংরেজি অনুবাদও বের হবে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ইংরেজি অনুবাদ এরই মধ্যে বের হয়েছে। সবগুলো বই যখন বের হবে তখন বিশ্বমানের এক সাহিত্যিক হিসেবেও আমরা আমাদের জাতিসত্তার জনকের পরিচয় সর্বত্র গর্বের সঙ্গে তুলে ধরতে সক্ষম হব।

তার লেখায় মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও স্বদেশ প্রেম যেভাবে এসেছে তা তার মাটি ঘেঁষা রাজনীতিরই স্পষ্ট প্রতিফলন। আর সে কারণেই তিনি হতে পেরেছিলেন বাংলার বন্ধু-বঙ্গবন্ধু। জীবনের প্রধান অংশই তিনি যাপন করেছেন জেলে। প্রথম জেলে গিয়েছিলেন ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ। রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বাংলা চাওয়ার অপরাধে। এরপর থেকে নিত্য তার যাওয়া আসা। জেলের বাসিন্দাদের কাছে তিনি এক প্রিয় মুখ। কয়েদি, পাহারাদার, বন্দি, পাগল, গাছ, পাখি, বিড়াল সবাই তার পরিচিত ও প্রিয়ভাজন।

আলোচ্য বইটির ২৭ থেকে ৫৪ পাতা ‘জেলের ভেতর অনেক ছোট ছোট জেল আছে’ শিরোনামে লেখা। ‘জেলে যারা যায় নাই, জেল যারা খাটে নাই- তারা জানে না জেল কী জিনিস’। এ শব্দগুচ্ছ দিয়ে শুরু করা জেলের ভেতরের ২৭ পৃষ্ঠার এই বিবরণই প্রমাণ করে তিনি কতোটা মানবিক ছিলেন। জেলের ভেতরে যে একসঙ্গে থাকা যায় না, এর ভেতরে যে আরও ছাট ছোট জেল আছে, জেল যে ‘আলাদা এক দুনিয়া’ তা এই বই না পড়লে আমার মতো অনেকের কাছে অজানাই থেকে যেত।

এই ‘রোজনামচা’ পড়েই জানতে পারি যে ১৯৬৬ সাল নাগাদ তিনি পাঁচবার জেলে গেছেন। এমন কী হাজতি হিসেবেও তাকে জেল খাটতে হয়েছে। কত রকম জেল, কত রকম বন্দি মানুষ, কী তাদের কষ্ট তা এই বই পড়লে জানা যায়। হাজতি, রাজবন্দিরা কীভাবে আলাদা আলাদাভাবে থাকেন, সেল এরিয়া কাকে বলে এসব কথা এই বই পড়েই জানতে পারলাম। বারে বারে কয়েদিদের গুণতে হয়, লাইন বেঁধে বসিয়ে তাদের গণনা করা হয়। এক সেলে একজন, তিনজন, চার, পাঁচ বা তারও বেশি জনকে বন্ধ করে রাখা হয়। কিন্তু দুজনকে এক সেলে রাখা হয় না। জেলের ভেতরে হাসপাতাল, ডাক্তার সবই আছে। জেলে কাজ করতে হয়। যারা লেখাপড়া জানে তাদের রাইটারের কাজ দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর কেউ বাইরে থাকতে পারে না। সাজার সময় ভেদে কয়েদিদের প্রমোশনও দেওয়া হয়। পাহারাদার, মেট হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। নাইট গার্ডদেরও রকম ফের আছে। তাদের ক্ষমতারও হেরফের আছে। কয়েদিদের একজন আরেকজনকে কাজ বুঝিয়ে দিতে হয়, কাজ বুঝে নিতে হয়। কয়েদির চিঠি জেলের কর্মকর্তারা পড়ে তবেই পাঠানো হয়। রাজনৈতিক বন্দিদের চিঠি কাটাকুটি করা হয়। কালি ঢেলে অস্পষ্ট করা হয়।

তা ছাড়া, জেলের ভেতরে রয়েছে নানা শব্দভাণ্ডার যা শুধু সেখানেই প্রচলিত। অনেকদিন জেলে থাকলেই কেবল এসব শব্দের মর্মার্থ বোঝা সম্ভব। কয়েদিরা তাদের মতো করে ইংরেজি শব্দের ভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। ‘থালা বাটি কম্বল জেলাখানার সম্বল’ শিরোনামে এই লেখাটিতে অদ্ভুত সব শব্দভাণ্ডারের পরিচয় পাই। কেস ফাইল বা কেস টেবিল হয়ে যায় ‘কেসটাকোল, ‘রাইটার দফা’। ‘চৌকি দফা’, ‘জলভরি দফা’, ‘ঝাড়– দফা’, ‘বন্দুক দফা’, ‘পাগল দফা’, ‘শয়তানের কল’, ‘দরজি খাতা’, ‘মুচি খাতা’ - এমন সব শব্দকোষ ব্যাখ্যাসহ তিনি এই বইতে অত্যন্ত যত্নসহকারে লিখেছেন। জেলের ভেতরের এই অজানা কথাগুলো আমরা কোনোদিনই জানতে পারতাম না এই বইটি না বের হলে।

শুধু কী শব্দকোষ? এই শব্দকোষ তৈরি করেছে সেসব জেলের অধিবাসী তাদের কথাও রয়েছে এই বইতে। তিনি তাদের কথা লিখেছেন দরদ দিয়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি তার সঙ্গে যুক্ত থাকা বা আশেপাশের কয়েদিদের দুঃখ-ভরা জীবনের কাহিনি শুনতেন। তাদের সেসব কথাও স্থান পেয়েছে এই বইতে। মনে হয় এরা তার কতই না আপনজন। উদাহরণ হিসেবে ‘লুদু’র কথা বলা যায়। ১৯৫০ সালে যখন জেলে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু তখন পরিচয় হয় লুদু ওরফে লুৎফর রহমানের সঙ্গে। ১৯৫৪ ও ১৯৫৮ সালেও তাকে তিনি দেখেছেন জেলে। ১৯৬৬তেও এসে পান তাকে। তার গল্প তিনি লিখেছেন অসীম মমতায়।

চুরি ও পকেটমারাকে কেন পেশা হিসেবে নিয়ছিল লুদু? তার বাবার সাত বিয়ে ও নানা বদভ্যাসের ফসল লুদু। নানার বাড়ির পাশের বাড়ির গোপাল নামে এক যুবকের কাছে তার চুরি বিদ্যায় হাতে খড়ি। এরপর একা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ল লুদু। থানার পুলিশ ও দারোগার সঙ্গে ‘দেখা সাক্ষাৎ করে’ কী করে আরও বড় পকেটমার হয়ে উঠল, সে কাহিনি বঙ্গবন্ধুর বইতে ফুটে উঠেছে। এরপর জিআরপি, সিআইডিসহ পুলিশের নানা পর্যায়ে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ‘বন্দোবস্ত’ করতে পারেনি এমন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ফের লুদু জেলে।

জেলের ভেতরেও রয়েছে অপরাধ জগত। সেই জগতেরও পাকা সদস্য লুদু। গলায় ‘খোকড়’ কেটে জেলখানা থেকে বের হয়ে নানা জায়গায় পকেটমারি করে। ফের ধরা পড়ে। মাঝখানে বের হয়ে বিয়েও করেছে লুদু। তার স্ত্রীকে খুব অনুভব করে লুদু। একটা ছেলে ছিল। সেও মারা গেছে। লুদুর চিন্তা কী করে বাঁচবে তার স্ত্রী। ‘জীবনের উপর একটা ধিক্কার এসেছে’ লুদুর। এইভাবে একেবারে সাধারণ এক অপরাধীর কষ্টের কথা সযত্নে তুলে এনেছেন বঙ্গবন্ধু তার লেখায়।

এরপর নিয়মিত ডায়েরি। ২ জুন ১৯৬৬। বৃহস্পতিবার। প্রায় প্রতিদিনই তিনি লিখেছেন জেলের জীবন নিয়ে। প্রায় সব দিনের লেখাতেই রাজনৈতিক সহকর্মী ও কর্মীদের জন্যে তার উৎকণ্ঠা, দরদ ও ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। ৭ জুনের হরতালকে বানচাল করার জন্য তাদের যেভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাতে তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খানের বাড়াবাড়ি বিষয়ে তিনি বিস্তর লিখেছেন। আর লিখেছেন সুবিধাবাদী রাজনীতিকদের আপসকামীতার কথা। তবে ছয় দফার প্রশ্নে তিনি যে আপসহীন সে কথা বলতে ভুলেননি। ‘এত জনপ্রিয় সরকার তাহলে গ্রেপ্তার শুরু করেছেন কেন!’- এমন বিস্ময় তার মুখেই সাজে। কাকে কাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই খবর জানার জন্যে তিনি উতলা ছিলেন। সত্যি কথা বলতে তিনি কখনও দ্বিধা করতেন না।

মওলানা ভাসানীকে তিনি খুবই শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু ছয় দফা নিয়ে তার মন্তব্যে বঙ্গবন্ধু বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তিনি তাই লিখেছেন, “মওলানা সাহেব পশ্চিম পাকিস্তানে যেয়ে এক কথা বলেন, আর পূর্ব বাংলায় এসে অন্য কথা বলেন। যে লোকের যে মতবাদ সেই লোকের কাছে সেভাবেই কথা বলেন। আমার চেয়ে কেউ তাকে বেশি জানে না।” একথা বলেই তিনি রাজনীতির মূলনীতি বিষয়ে মুখ খুলেছেন।” তবে রাজনীতি করতে হলে নীতি থাকতে হয়। সত্য কথা বলার সাহস থাকতে হয়। বুকে আর মুখে আলাদা না হওয়াই উচিত।” বুকে মুখে এক কথা বলতেন বলেই পাকিস্তানি রাষ্ট্র তাকে একদণ্ডের জন্যেও স্বস্তি দেয়নি।

কারারক্ষীদের অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করতেন। তাই তারা তার খোঁজ নিতেন। প্রয়োজনীয় তথ্য দিতেন। ওই সময়টায় যে প্রচুর ‘শেখ সাহেবের লোক’ জেলে ঢুকছে সে তথ্য তিনি এদের কাছ থেকেই পান। আর এ তথ্য পেয়ে তিনি অস্থির হয়ে যান।

‘আজ আর লেখাপড়ায় মন দিতে পারছি না। কী হবে বাইরে, কর্মীদের কী অবস্থা, অত্যাচার ও গ্রেপ্তার সমানে চলছে, আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর। দিন ভরই ছটফট করতে লাগলাম, কাগজ কখন পাব?’ এই ছটফটানি তার শেষ হবার নয়। তার সহকর্মীদের ডিভিশন দেওয়া হচ্ছে না, তার কর্মীদের ভালোভাবে খাবার দাবার দেওয়া হচ্ছে না। তাই তার উদ্বেগের কোনো শেষ নেই। যারা তার কথা ভাবেন, তার জন্য দোয়া করেন, তাদের সম্বন্ধে তিনি লিখেছেন, “দুঃখ হয়, এদের কোনো কাজেই বোধহয় আমি লাগব না। ... একথা সত্য, যখন আমি জেল অফিসে যাই তখন কয়েদিদের সাথে দেখা হলে, জেল অফিসারদের সামনেই আমাকে সালাম দিতে থাকে। যারা দূরে থাকে তারাও এগিয়ে আসে। বুড়া বুড়া দু’একজন বলেই ফেলে, বাবা আপনাকে আমরা দোয়া করি।” জেলের রান্না ভাত খেতে কষ্ট হয়। তবু খেতে হয়। শুধু বাঁচার জন্যে। তা সত্ত্বেও তার উদ্বেগ, “যারা এই দুদিনে জেলে এসেছে, তাদের ডিভিশন দেয় নাই, কীভাবে কোথায় রেখেছে- জানার উপায় নেই।”

এরই মধ্যে ঝাড়ুদার এক কয়েদি নাছোড়বান্দা। “আমাকে আপনি ছেড়ে দিন, আপনি বললেই জেল থেকে বের করে দিবে।” তার এ কথার উত্তরে বঙ্গবন্ধু বললেন, “আমি তো তোমার মতো একজন কয়েদি, আমার ক্ষমতা থাকলেই আমিও বা জেলে আসব কেন?” সে বলে, “আপনি কলম মাইরা দিলেই কাজ হয়ে যায়।” বঙ্গবন্ধু বললেন, “কলম আছে, কিন্তু মাইরা দিবার ক্ষমতা নাই।”

তাদের সবার বিশ্বাস তিনি বললেই হবে। এই যে মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা এবং তার প্রতি মানুষের বিশ্বাস তা তো একদিনে হয়নি। আজীবন তিনি যে তাদের পাশেই ছিলেন। সব অর্থেই যে তিনি হতে পেরেছিলেন ‘তাদের লোক’। বাবুর্চির রান্না ভালো হয় না বলে নিজেই রান্না করতে নেমে যান। পাইলসের অসুখটা ফের দেখা দিয়েছে। জেলের খাবারে তার ওই অসুখ আরও বেড়েছে। কিন্তু পরিবার, বিশেষ করে, স্ত্রী রেনুকে জানানো যাবে না। তারা দুঃশ্চিন্তা করবেন।

ইত্তেফাক ও তার মালিক-সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই। ইত্তেফাক তার ও তার দলের কথা বলত। মানিক মিয়া বঙ্গবন্ধুর বড় ভাইয়ের মতো। তাই ইত্তেফাকের ওপর সরকারের চাপাচাপিতে তিনি খুবই বিক্ষুব্ধ। বন্ধু শহীদুল্লাহ্ কায়সারের ‘সংশপ্তক’ বইটি পড়ে তার খুব ভালো লেগেছে। ওই বই পড়তে পড়তেই লিখেছেন, ‘বেপরোয়া গ্রেপ্তারের পরেও ভেঙে পড়ে নাই দেখে ভালোই লাগছে। রাজনৈতিক কর্মীদের জেল খাটতে কষ্ট হয় না, যদি বাইরে আন্দোলন থাকে।”

রাজনীতি আর জীবন এভাবেই এক ‘অর্গানিক’ সম্বন্ধে বাঁধা পড়ে যায়, সন্ধ্যে বেলা তার ঘর বন্ধ করে দেয়। পরের দিন পাশেই রাখা পাগলদের গোসল করানোর কথা লিখেছেন। পাগলদের সঙ্গে যে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয় তাতে তিনি খুবই আহত। যদিও পাগলদের চিৎকারে প্রায়ই তিনি ঘুমুতে পারেন না, তবু তাদের জন্য রয়েছে তার দরদী মন। সুযোগ পেলেই তাদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের জন্যে কিছু করতে চেষ্টা করেন। খাবার পাঠান।

৬ জুনে ডায়েরির পাতায় তিনি লিখেছেন, “আগামীকাল ধর্মঘট। পূর্ব বাংলায় জনগণকে আমি জানি, হরতাল তারা করবে। রাজবন্দিদের মুক্তি তারা চাইবে। ছয় দফা সমর্থন করবে।” মানুষের সমর্থন তার প্রতি রয়েছে বলেই তিনি এই নিঃসঙ্গ জেলজীবন হাসিমুখেই বরণ করে নিয়েছিলেন। তিনি তার মনের অবস্থা বোঝাতে এভাবে লিখেছেন, “আমি একা থাকি, আমার সাথে কাওকে মিশতে দেওয়া হয় না। একাকী সময় কাটানো যে কত কষ্টকর তাহা যাহারা ভুক্তভোগী নন বুঝতে পারবেন না। আমার নিজের উপর বিশ্বাস আছে, সহ্য করার শক্তি খোদা আমাকে দিয়েছেন। ভাবি শুধু আমার সহকর্মীদের কথা। এক একজনকে আলাদা আলাদা জেলে নিয়ে কীভাবে রেখেছে? ত্যাগ বৃথা যাবে না, যায় নাই কোনো দিন। নিজে ভোগ নাও করতে পারি, দেখে নাও যেতে পারি, তবে ভবিষ্যৎ বংশধররা আজাদী ভোগ করতে পারবে। ... জয়ী আমরা হবই। ত্যাগের মাধ্যমে আদর্শের জয় হয়।” ভয়কে জয় করার জন্যেই কবিগুরুর কাছে ফিরে যেতেন। গুনগুনিয়ে উঠতেন, “বিপদে মোরে রক্ষা করো/ এ নহে মোর প্রার্থনা / বিপদে আমি না যেন করি ভয়।”

এর পরের দিন ৭ জুন। হরতালের দিন। বাইরে কী হচ্ছে কে জানে। সর্বক্ষণ ছটফট করছেন তিনি। লিখেছেন, “বন্দি আমি, জনগণের মঙ্গল কামনা ছাড়া আর কী করতে পারি! ... গুলি ও মৃত্যুর খবর পেয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। শুধু পাইপই টানছি। ... কী হবে? কী হতেছে? দেশকে এরা কোথায় নিয়ে যাবে, নানা ভাবনায় মনটা আমার অস্থির হয়ে রয়েছে। এমনিভবে দিন শেষ হয়ে এল। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা জেলে আছি। তবুও কর্মীরা, ছাত্ররা ও শ্রমিকরা যে আন্দোলন চালাইয়া যাইতেছে, তাদের জন্য ভালোবাসা দেওয়া ছাড়া আমার দেবার কিছুই নাই। মনে শক্তি ফিরে এল এবং দিব্য চোখে দেখতে পেলাম ‘জয় আমাদের অবধারিত।’ কোনো শক্তি আর দমাতে পারবে না।”

রাতে আর ঘুম আসে না। শুধুই চিন্তা। এর পরের দিন (৮ জুন) ডায়েরির পাতা জুড়ে রয়েছে প্রেপ্তার করা কর্মীদের বিবরণ। “কারও পায়ে জখম, কারও কপাল কেটে গিয়েছে, কারও হাত ভাঙা, এদের চিকিৎসা বা ঔষধ দেওয়ার কোনো দরকার মনে করে নাই কর্তৃপক্ষ।”

দিনভরই জেল ভর্তি করা হচ্ছিল। কিছু স্কুলের ছাত্রও তাদের মধ্যে ছিল। কেউ কেউ এদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছিল। তাই বাধ্য হয়ে তিনি জেল কর্তৃপক্ষকে জানালেন, “অত্যাচার বন্ধ করুন। তানা হলে ভীষণ গোলমাল হতে পারে।” ওই দিন বিরাট করে ডায়েরি লিখেছেন তিনি। ছয় দফা যে বৃথা যাবে না সে কথা জোর দিয়ে বলেছেন। “যে রক্ত আজ আমার দেশের ভাইদের বুক থেকে বেরিয়ে ঢাকার পিচঢালা কাল রাস্তা লাল করল, সে রক্ত বৃথা যেতে পারে না।”

সারাদিন তিনি পাগলের মতো ঘরে বাইরে করছিলেন। ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরে এনেছে। জানালা দিয়ে চিৎকার করে দিনে বলছিলেন, “জমাদার সাহেব এদের খাবার বন্দোবস্ত করে দিবেন। বোধ হয় দুই দিন না খাওয়া।” এর পরের পাতাগুলোও এমন মানবিক আবেদন ও ছটফটানিতে ভর্তি। মানুষকে কতোটা ভালোবাসলে কারাবন্দি এক নেতা দেশবাসীর জন্যে এমন করে দুঃখ পেতে পারেন তা পাঠকই বিবেচনা করবেন। এই স্বল্প পরিসরে তার মানবিকতার বিবরণ সম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলা আমার জন্যে সত্যি অসাধ্য।

এরপর রয়েছে মায়ের অসুখের কথা। তার জন্যে গভীর কষ্টের কথা। জেলে জেলে ঘুরছেন। মাকে দেখতে পারছেন না। মা বাবার ছোট্ট ‘খোকা’র সে যে কী আকুতি তা পড়ে চোখ ভিজে আসে। এসব কথা সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত তার কন্যাদেরও চোখের পানি ছল ছল করে বয়ে গেছে। টাইপ করেছে যে মেয়েটি তার চোখের জলে ভিজে গেছে কমপিউটারের কী-বোর্ড। এক দিকে মায়ের অসুখ, অন্যদিকে অনেক কর্মী জেলে, অনেকেই আহত নিহত। তিনি অস্থির। ট্রেন দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু, সিলেটের বন্যায় মানুষের কষ্ট- সবই তাকে উতলা করে তোলে। তার কিছুই ভালো লাগে না। তবুও অর্থমন্ত্রী শোয়েবের বাজেট বিবরণ ঠিকই তুলে ধরেছেন।

ওই বাজেটে যে বাঙালির হিস্যা খুবই সামান্য সে কথা অঙ্ক কষে বের করেছেন জেলে বসে। কর ধার্য বেশি করায় জনগণের কী কষ্ট হবে সে কথা ভেবেই তিনি উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি, পূর্ব-পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী এম এন হুদার বাজেট নিয়েও তার মন্তব্য রয়েছে। বিশেষ করে, ছয়-দফার বিরুদ্ধে বলায় তাকে এক চোট নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। এরপর পরিবারের কথা লিখেছেন। ছেলে মেয়েরা ও স্ত্রী তাকে দেখতে আসেন। বড় দুটো ছেলেমেয়ে বুঝলেও ছোট দুটো তো বোঝে না। তারা বাবাকে ছেড়ে ফিরতে চায় না। তাই বাচ্চাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তার মন খারাপ হয়ে যায়। বাবা-মার দেখা পান না বলে তার মন আরও ভারাক্রান্ত।

ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক ভাইয়ের গ্রেপ্তারে তিনি দারুণ উদ্বিগ্ন। তিনি সত্য কথা বলেন বলে তাকে জেলে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি কীভাবে জেলের এই জুলুম সহ্য করবেন সেই চিন্তাতেই তার ঘুম আসে না। কয়েক দিন ধরে ইত্তেফাক ও মানিক মিয়াকে নিয়ে কত কথাই না তিনি তার ডায়েরিতে লিখেছেন। সংবাদের কথাও বার কয়েক এসেছে। এসেছে ন্যাপের কারাবন্দি নেতাদের সঙ্গে জেলে দেখা হওয়ার কথা। ভিন্ন দলের হলেও তাদের জন্য তার দরদ কম নয়। যেসব কর্মী জেলে থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তাদের জন্যেও তার উৎকণ্ঠার শেষ নেই।

এ ছাড়া জেলে বন্দিরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, তাদের তিনি খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ান, মেটসহ কয়েদিদের ভালো মন্দ খাবারের ভাগ দেন। পাশের গাছে দুটো হলুদ পাখি, বারান্দায় কবুতরের বাচ্চাটির বেড়ে ওঠা, এমকি মুরগির মৃত্যু যন্ত্রণা- সব কিছুই তার দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শুধু গুরুত্বপূর্ণ ছিল না তার নিজের জীবন। এই ডায়েরির পাতায় পাতায় জায়গা পেয়েছে রাজনৈতিক সহকর্মী, কর্মী ও সাধারণ কয়েদিদের কথা। আর জায়গা পেয়েছে স্বদেশের মুক্তি চিন্তা। এর মাঝেই আচমকা তাকে আসামি করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়। নিয়ে যাওয়া হওয়া কুর্মিটোলায়। সামরিক আদালতে বিচার শুরু হবে। সর্বক্ষণ পাহারা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। নিঃসঙ্গ। টান টান উত্তেজনা। সারা পূর্ব বাংলায় চলছে আন্দোলন। এক পর্যায়ে ১৯৬৯ সনে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মুক্তিপান শেখ মুজিব। তাদের ভালোবাসায় হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। মানুষের প্রতি তার বিশ্বাস ও ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না বলেই এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে পেরেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের দিকে। ডাক দিতে পেরেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের। তিনিই প্রকৃত বীর যিনি মৃত্যুকে ভয় পান না। বারে বারে তিনি মৃত্যুকে উপেক্ষা করে বীরের বেশে জেল থেকে বের হয়ে এসেছেন।

মাটি ও মানুষের প্রতি নির্ভেজাল ভালোবাসার দলিল এই রোজনামচা। তার কন্যা শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধায়নে শেষ পর্যন্ত যে বইটি বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে তার ঐতিহাসকি মূল্য অপরিসীম। যুগে যুগে তার এই ত্যাগের কথা, মানুষের প্রতি ভালোবাসার কথা আমাদের দেশে এবং সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

বইটির সম্পাদনায় প্রচুর মুন্সিয়ানার পরিচয় মেলে। সংযোজনীতে ছয়-দফা, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, টীকা, নির্ঘণ্ট- বইটির সম্পাদনায় পেশাদারিত্ব ও আধুনিকতা স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিন বলেছেন যে, এই বইয়ের পাতায় পাতায় সাধারণ মানুষের দুঃখ ও গ্লানি ঘোচানোর যে আকুতি রয়েছে তার আলোকেই তিনি স্বদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। গরিব-দুঃখী মানুষের মঙ্গল চিন্তাই হবে তার সব নীতির মূল কথা। সেটাই স্বাভাবিক।

মানুষকে যে বঙ্গবন্ধু কতোটা ভালোবাসতেন তা এই বই পড়ে যেমন বোঝা যায়, তেমনি তার ভাষণগুলো পড়লেও অনুভব করা যায়। আমি অন্যত্র তার জীবন ও ভাষণগুলো নিয়ে গবেষণা করেছি। সেই বইতে (আতিউর রহমান: শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম) বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী শাহরিয়ার ইকবালের সৌজন্যে অন্য আরেকটি ডায়েরির ইংরেজিতে লেখা একটি পাতা থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করার লোভ সম্বরণ করতে পাচ্ছি না। “As a man, what concerns mankind concerns me. As a Bengalee, I am deeply involved in all that concerns Bengalees. This abiding involvement is born of and nourished by love, enduring love, which gives meaning to my politics and to my very being.”

রাজনীতির এই অমর কবি অক্ষরে অক্ষরে তার কথা রেখেছেন। মানুষকে চিরদিনের ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে ঘুমিয়ে আছেন তিনি বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে।

লেখক: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাবেক বঙ্গবন্ধু চেয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

Header Ad
Header Ad

পাকিস্তান-তুরস্ক-চীনের অদৃশ্য জোটে চাপে ভারত

ছবি: সংগৃহীত

নয়াদিল্লি যখন অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ও সামরিক পুনর্গঠনে মনোযোগ দিচ্ছে, তখন সমুদ্রপথে ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন এক সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিশ্লেষকদের মতে, ২০৪০ সালের মধ্যেই ভারতকে মোকাবিলা করতে হতে পারে চীন, তুরস্ক ও পাকিস্তানঘনিষ্ঠ এক ‘কার্যত নৌ জোট’-এর।

তিনটি দেশ যদিও কোনো আনুষ্ঠানিক সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ নয়, তবে সামরিক, প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সহযোগিতায় তারা একে অপরের পাশে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিদুঁর’ মহড়ার সময় এই বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেখানে ভারতের সন্দেহ, পাকিস্তানের সঙ্গে নেপথ্যে তুরস্ক ও চীনও সক্রিয় ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতের যেকোনো যুদ্ধেই ভারতকে একা লড়তে হতে পারে, আর প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে পারে বহুজাতিক সমন্বিত বাহিনী। ফলে শুধু সামরিক ভারসাম্য নয়, কূটনৈতিক কৌশলেও চাপে পড়তে পারে নয়াদিল্লি।

চীনের নৌবাহিনী ২০৪০ সালের মধ্যে ছয়টি বিমানবাহী রণতরী, শতাধিক ডুবোজাহাজ ও শতাধিক যুদ্ধজাহাজ নিয়ে সমুদ্রজয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দর কার্যত একটি সামরিক ঘাঁটিতে রূপান্তরিত হয়েছে। তুরস্কও আধুনিক ডুবোজাহাজ, সশস্ত্র ড্রোন ও যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে জোর দিচ্ছে এবং এসব প্রযুক্তি পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে ভারতও নিজেদের শক্তি বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হয়েছে। ২০৪০ সালের মধ্যে তিনটি কেরিয়ার ব্যাটল গ্রুপ, ২০০টি যুদ্ধজাহাজ ও আধুনিক ডুবোজাহাজ ফ্লিট গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে নয়াদিল্লি। তবে একে বাস্তবে রূপ দিতে হলে আরও দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে—মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

নয়াদিল্লির আশঙ্কা, যথাযথ প্রস্তুতি না থাকলে পাকিস্তান-তুরস্ক-চীনের সম্ভাব্য জোট সমুদ্রের নিচে ভারতের কৌশলগত অবস্থান ডুবিয়ে দিতে পারে।

Header Ad
Header Ad

রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নয়: ট্রাম্প

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার (৬ জুন) সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মস্কোর আচরণই নির্ধারণ করবে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী অবস্থান।

ট্রাম্প জানান, রাশিয়া যদি রক্তপাত বন্ধে উদ্যোগ না নেয় এবং যুদ্ধবিরতির পথে না আসে, তবে পরিস্থিতি ভিন্নভাবে বিবেচনা করবেন তিনি।

এর আগে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি বিল মার্কিন সিনেটে পাস হলেও, তা কার্যকরের জন্য প্রয়োজন প্রেসিডেন্টের অনুমোদন।

বিশ্লেষকদের মতে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট এবং বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে খোলামেলা দ্বন্দ্বে জড়াতে চাইছেন না ট্রাম্প। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক প্রভাব হ্রাস পেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

Header Ad
Header Ad

রাজধানীতে কোরবানির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়

ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে রাজধানীজুড়ে। তবে এরই মাঝে আলোচনায় এসেছে কোরবানির মাংসের বাজারদর—যেখানে ৯৫০ থেকে ১১০০ টাকা খরচে প্রস্তুত হওয়া মাংসই বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬০০-৬৫০ টাকায়!

ঈদের নামাজ শেষে সকাল থেকেই রাজধানীর অলিগলি, গ্যারেজ ও খোলা জায়গায় পশু কোরবানি দেন নগরবাসী। দুপুরের দিকে হঠাৎ বৃষ্টিতে কোরবানির কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। তবে বিকেল হতেই দৃশ্যপট পাল্টায়। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড, উত্তর বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও, সূত্রাপুর, ও জুরাইন রেলগেটসহ বেশ কিছু এলাকায় গড়ে ওঠে অস্থায়ী মাংসের বাজার।

মুলত গরিব, অসহায় ও ভিক্ষুকরা বিভিন্ন বাসা থেকে যে মাংস সংগ্রহ করেন, সেটাই বিক্রি করছেন এসব স্থানে। এ সুযোগে মৌসুমি কিছু ব্যবসায়ীও যুক্ত হয়েছেন। রামপুরা বাজারের এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী জানান, ‘‘আসল মাংস কিনতে গেলে কেজিতে ৭৫০ টাকা লাগে। এখন কম দামে সংগ্রহ করে কাবাব বা হালিম তৈরিতে কাজে লাগাবো।’’

বিকেল চারটার দিকে রামপুরা বাজারের সামনে দেখা যায়, অনেকে পলিথিন ব্যাগে ৮-১০ কেজি করে মাংস এনে বিক্রি করছেন। এক বিক্রেতা বলেন, “রান্না করে খাওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। তাই কিছুটা বিক্রি করে সংসার চালাই।”

তবে এখানেই উঠছে প্রশ্ন—এসব মাংস কতটা নিরাপদ? বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা, সংরক্ষণহীন পরিবেশে রাখা এবং ভ্যাপসা গরমে বিক্রি হওয়া এই মাংসের গুণগত মান নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট উদ্বেগ।

বিশেষ করে যখন এসব মাংস পরবর্তীতে রাস্তায় বিক্রি হওয়া হালিম, কাবাব বা অন্যান্য খাদ্যপণ্যে ব্যবহৃত হয়, তখন জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকির আশঙ্কা আরও বাড়ে।

 

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পাকিস্তান-তুরস্ক-চীনের অদৃশ্য জোটে চাপে ভারত
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নয়: ট্রাম্প
রাজধানীতে কোরবানির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়
ইউক্রেনে রাশিয়ার ভয়াবহ ড্রোন ও মিসাইল হামলা
আরাফাতের ময়দানে হজের সময় সন্তানের জন্ম দিলেন টোগোর নারী
দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ২৬ জন, মোট মৃত্যু ২৩
রাজধানীতে কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে আহত ৭৭ জন
ঈদ মৌসুমে টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টির পূর্বাভাস, সতর্ক থাকতে বলছে আবহাওয়া অফিস
ঈদের দিন গাজায় ৪ ইসরায়েলি সেনা নিহত
পাকিস্তানের নেতৃত্ব খুবই শক্তিশালী : ট্রাম্প
ঢাকায় দেড় ঘণ্টায় ২১ মিলিমিটার বৃষ্টি, ঈদের আনন্দে ব্যাঘাত নেই
কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শনে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা
নগরজুড়ে কোরবানির পশু জবাই, পরিচ্ছন্নতায় প্রস্তুত ২০ হাজারের বেশি কর্মী
ঈদের দিন বন্ধ মেট্রোরেল, কাল থেকে ফের চলবে
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সস্ত্রীক সাক্ষাৎ
কাশ্মীর হামলায় ভারতকে সমর্থন চীন-ইরানের, পাকিস্তানের ওপর বাড়ছে কূটনৈতিক চাপ
দেশকে গণতান্ত্রিক ধারা থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে: ইশরাক হোসেন
লা লিগার সেরা রাফিনিয়া, অনূর্ধ্ব-২৩ বিভাগে ইয়ামাল
ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে জাতির জন্য ভালো হবে: মির্জা ফখরুল
ঈদের দিনেও গাজায় ইসরায়েলি হামলা, ঝরল ৪২ প্রাণ