শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫ | ৭ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

আড়াই'শ বছরের চোখ ধাঁধানো জামালপুর মসজিদ

ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছে বেশকিছু প্রাচীন ঐতিহ্য। জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই চোখে পড়বে অপূর্ব সৌন্দর্য আর দৃষ্টিনন্দন প্রাচীন ঐতিহ্যের জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ। অপরূপ নকশা সম্বলিত মসজিদটি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে। জেলার পরিচিতি হিসেবেও স্থান পেয়েছে মসজিদটি।

জেলার পাঁচটি উপজেলায় ছড়িয়ে থাকা অনেক পুরাকীর্তির মধ্যে ২৪০ বছরেরও অধিক পুরাতন জামালপুর জমিদার বাড়ির এই মসজিদটি অন্যতম। এর নির্মাণশৈলী ও অপূর্ব কারুকাজ মুগ্ধ করে যেকোনো মানুষকে। ১৭৮০ শতাব্দীতে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন জমিদার আব্দুল হালিম চৌধুরী।



জামালপুর চৌধুরী পরিবার সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম বাংলার তৎকালীন উত্তর দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট মহকুমার রায়গঞ্জ থানার বারোর পরগনা তাজপুর গ্রামে পীর বংশে জন্ম গ্রহণ করেন আব্দুল হালিম। ১৭৬৫ শতাব্দীর দিকে আব্দুল হালিম কাপড়ের ব্যবসার উদ্দেশ্যে তাজপুর থেকে বসন্ত নগরে আসেন। যার বর্তমান নামকরণ করা হয়েছে জামালপুর এবং সেখানে তিনি বসতি স্থাপন করেন।

কাপড়ের ব্যবসা করতে করতে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের জমিদার লালা মুক্তি প্রসাদ নন্দের কাছে লাটের পারপূগী মৌজার প্রায় এক হাজার বিঘা জমি কেনার মাধ্যমে জমিদারি পান আব্দুল হালিম চৌধুরী। ১৭৭০ দশকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া প্রশাসন তাকে চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত করে। জমিদার থাকাকালীন পর্যায়ক্রমে তিনি মোট ২৬ হাজার একর জমি কিনেছিলেন। বর্তমানে সেই জমিগুলো ৩ জেলার ৮ থানায় পড়েছে। থানাগুলো হলো- আটোয়ারি, বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর, রায়গঞ্জ, রাণীশংকৈল, পীরগঞ্জ, বীরগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও। তখন তিনি ব্রিটিশ চৌধুরী নামে খ্যাত ছিলেন।

জানা যায়, আব্দুল হালিম চৌধুরী ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে তার রাজ প্রাসাদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। রাজ প্রাসাদের দ্বিতীয় তলার নির্মাণ কাজ চলাকালীন ১৭৮০ দশকে ভারতের উত্তর প্রদেশের এলাহবাদ থেকে মিস্ত্রি এনে এই মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। আব্দুল হালিম চৌধুরীর মৃত্যু হলে জমিদারী পান তার ছেলে রওশন আলী চৌধুরী। পরে রওশন আলী চৌধুরীর মৃত্যু হলে তার ছেলে জামাল উদ্দীন চৌধুরী জমিদারির দায়িত্বভার বহন করেন এবং মসজিদ নির্মাণ কাজ চলমান রাখেন। জামাল উদ্দীন চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ছেলে নুনু মোহাম্মদ চৌধুরী ১৮০১ দশকে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। মসজিদটি নির্মাণ করতে চার পুরুষের প্রায় ২১ বছর সময় লাগে। মসজিদ নির্মাণের প্রধান দুই মিস্তি হংস রাজ ও রামহিৎ হিন্দু ধর্মের ছিলেন। জমিদারবাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার ফলে মসজিদের ব্যয়বহুল নির্মাণ কাজ শেষ হলেও জমিদার বাড়িটির নির্মাণ অসমাপ্ত থেকে যায়।

জামালপুর জামে মসজিদটি সংস্করণ করার জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত। তাই যাতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন তার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মসজিদ অঙ্গনে প্রবেশমুখে বেশ বড় সুন্দর একটি তোরণ রয়েছে। মসজিদটির শিল্পকলা দৃষ্টিনন্দিত, মনোমুগ্ধকর ও প্রশংসাযোগ্য। মসজিদে বড় আকৃতির তিনটি গম্বুজ আছে। গম্বুজের শীর্ষদেশ পাথরের কাজ করা। এই মসজিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো মিনারগুলো। মসজিদের ছাদে ২৪টি মিনার আছে। একেকটি মিনার ৩৫ ফুট উঁচু এবং প্রতিটিতে নকশা করা রয়েছে। গম্বুজ ও মিনারের মিলনে সৃষ্টি হয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য। এত মিনার সচরাচর কোনো মসজিদে দেখা যায় না।



মসজিদটির চারটি অংশ হলো মূল কক্ষ, মূল কক্ষের সঙ্গে ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা এবং ছাদবিহীন বারান্দাটি অর্ধ প্রাচীরে বেষ্টিত হয়ে পূর্বাংশে মাঝখানে চার থামের উপর ছাদবিশিষ্ট মূল দরজা। খোলা বারান্দার প্রাচীরে এবং মূল দরজার ছাদে ছোট ছোট মিনারের অলংকার রয়েছে। মসজিদটির মূল দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ৬ ইঞ্চি। প্রস্থ ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি। মসজিদটির বারান্দা দুইটি। প্রথম বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ২ ইঞ্চি ও প্রস্থ ১১ ফুট ৩ ইঞ্চি এবং দ্বিতীয় বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১৯ ফুট ৫ ইঞ্চি। মূল কক্ষের কোণগুলো তিন থামবিশিষ্ট। এর জানালা দুটি, দরজা তিনটি, কুলুঙ্গি দুটি। মসজিদটির ভিতরে দরজায়, বারান্দায় এবং বাইরের দেয়ালগুলোতে প্রচুর লতাপাতা ও ফুলের সুদৃশ্য নকশা রয়েছে। এক সাথে এই মসজিদে ৩০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে।

১৮৮৫ সালের দিকে ইমদাদুর রহমান চৌধুরী সেই স্থানটির নাম বসন্ত নগর পরিবর্তন করে জামাল উদ্দীন চৌধুরীর নামানুসারে জামালপুর নামকরণ করা হয়। বর্তমানে এটি জামালপুর এস্টেট নামে পরিচিত।

জামালপুর জমিদার বাড়ির সদস্য আবেদুর রহমান চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ১৯৬৫ সালের দিকে মসজিদটির ১১টি মিনার ঝড় বৃষ্টিতে ভেঙে যায়। তার মধ্যে ৭টি মিনার তৎকালীন চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা মেরামত করেন এবং আরও ৪টি মিনার এখনো ভাঙা অবস্থায় আছে।

তিনি আরও বলেন, ১০ থেকে ১৫ বছর আগে মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নিলেও এখন পর্যন্ত মসজিদটি সংরক্ষণে তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। স্থানীয় প্রশাসন ও সরকার যদি মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য সুদৃষ্টি দিত তাহলে এটি আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকবে বলেও মনে করেন তিনি।

মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. রুহুল আমীন বলেন, ‘মসজিদটি দেখতে শুধু বাংলাদেশ থেকে নয় বিদেশ থেকেও মানুষ আসেন। এখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এই মসজিদ আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। এটি দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই আসেন। তবে মসজিদটির সে রকম কোনো সংস্কার না হওয়ায় একটি ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে। এখানে যদি সরকারি কোনো বরাদ্দ আসে তাহলে মসজিদটির জন্য অনেক ভালো হয়।

মসজিদ দেখতে আসা রুবেল ইসলাম বলেন, যা আগে কখনো দেখিনি তা এখানে এসে দেখে অভিভূত হলাম। যেহেতু এটি অতি পুরাতন একটি মসজিদ, তাই এটিকে সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই। মসজিদটি সংরক্ষণ করা গেলে এটির স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পাবে।

এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা মসজিদটির কারুকাজ দেখে অবাক হয়ে বলেন, সরকার যদি মসজিদটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে এটি ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এটি দেখতে পারবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত। তাই যাতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন তার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসএন

Header Ad
Header Ad

নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২১ মার্চ) ভোরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন রায়পুরা উপজেলার মোহিনীপুর গ্রামের আমিন (২৩) ও বাশার (৩৫), যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি সালাম মিয়ার সমর্থক বলে জানা গেছে। নিহত আমিনের পায়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁনপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর সালাম মিয়া এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সোহাগের সঙ্গে বিএনপি নেতা সামসু মেম্বারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরে সামসু মেম্বার ও তার সমর্থকদের এলাকা ছাড়া করেছিলেন সালাম ও সোহাগ।

তবে গত ৫ আগস্টের পর সামসু মেম্বার ও তার সমর্থকরা এলাকায় ফিরে এলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে সালাম মিয়া ও তার সমর্থকরা এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে সামসু মেম্বারের সমর্থকরা তাদের বাধা দেয়।

পরে দেশীয় অস্ত্র, টেঁটা-বল্লম, দা, ছুরি, ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে আমিন এবং টেঁটা ও ছুরিকাঘাতে বাশার ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন।

রায়পুরা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আদিল মাহামুদ জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন নিহত ও একজন গুলিবিদ্ধসহ আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।

Header Ad
Header Ad

বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সংশোধিত খসড়ায় এই নেতাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকার ৯৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১০ মার্চ এ-সংক্রান্ত কার্যপত্রে (খসড়াসহ অন্যান্য বিষয়) স্বাক্ষর করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ও এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য) হিসেবে নির্বাচিত এই নেতারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে গণপরিষদ গঠিত হলে তাদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। তবে নতুন খসড়া আইনে তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৯৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সংশ্লিষ্ট খসড়ায় স্বাক্ষর করেন। সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি আরও চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই চার শ্রেণির মধ্যে রয়েছে—

১. মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে প্রবাসে পেশাজীবী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার চালানো ও বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা।
২. মুজিবনগর সরকারের অধীনে কর্মকর্তা, কর্মচারী, দূত ও অন্যান্য সহযোগী।
৩. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কলাকুশলী ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সাংবাদিকরা।
৪. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।

এই খসড়া কার্যকর হলে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা তালিকার অন্তত ১০ হাজার ব্যক্তির পরিচয় বদলাতে হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। যারা এতদিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছিলেন, তাদের নতুনভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গণমাধ্যমকে বলেন, 'বীর মুক্তিযোদ্ধা কেবল তারাই থাকবেন, যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। রাজনীতিবিদরা সরাসরি যুদ্ধ করেননি, তাই তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে কোনো মর্যাদা কমানো হয়নি, বরং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।'

তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, 'আইন বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান পরিবর্তন করা যায় না। এটি অপ্রয়োজনীয় এবং অপচয়মূলক উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারীদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। যদি কেউ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।'

মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ, কেবল সামরিক যুদ্ধ নয়। এ লড়াইয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঢালাওভাবে এমএনএ, এমপিএ ও গণপরিষদ সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।'

খসড়া আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, 'যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন, তারাই বীর মুক্তিযোদ্ধা।'

সংশোধনীতে রাজনীতিবিদদের নাম বাদ দেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও নার্সদের মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে সীমান্তবর্তী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক ও নার্সদের স্বীকৃতি বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যা ইতিহাসকে বিকৃত করার শামিল। মুক্তিযুদ্ধ একটি পরিকল্পিত সংগ্রাম ছিল, যেখানে রাজনীতিবিদরাই মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন।'

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, 'এটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক সিদ্ধান্ত। মুক্তিযুদ্ধ জাতির ইতিহাসের মীমাংসিত অধ্যায়। এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা অযৌক্তিক।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে পর্যালোচনা করা দরকার। আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করব।'

মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন যাচাই-বাছাই:

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পুনরায় যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখন শুধু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকের স্বীকৃতি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইন চূড়ান্ত অনুমোদনের পর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে। এটি কার্যকর হলে বেসামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যেও অনেকের স্বীকৃতি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান আইনে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছিল, '১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য যে লড়াই হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধ। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় সাড়া দিয়ে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা।'

কিন্তু নতুন খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, '১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা।'

এই পরিবর্তনের ফলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর এটি অধ্যাদেশ আকারে প্রকাশের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এই নতুন খসড়া আইনের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও মর্যাদা সংক্রান্ত ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এটি বাস্তবায়িত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

বাইতুল মোকাররমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবিতে মিছিল

বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার বিচার দাবি করে শুক্রবার (২১ মার্চ) রাজধানীর বাইতুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল করেছে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা। জুমার নামাজ শেষে তারা "নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার" স্লোগানে মুখরিত হয়ে পল্টন মোড়ের দিকে মিছিল করে।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা নানা স্লোগান দিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সময়, বাইতুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর শাখাও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিক্ষোভ মিছিলের জন্য সমাবেশ শুরু করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মসজিদের প্রবেশমুখে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন, এবং নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিজিবি সদস্যদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। এছাড়া, মসজিদে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করতে পুলিশ সদস্যদের কাজ করতে দেখা গেছে।

প্রসঙ্গত, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেটে আজ বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করা হয়। এর পাশাপাশি, ছাত্রশিবির ও জামায়াতের সদস্যরাও মসজিদ এলাকায় উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০
বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি
বাইতুল মোকাররমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবিতে মিছিল
হিথ্রো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড, হাজার হাজার যাত্রী আটকা
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ট্রাম্পের ‘পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে: হোয়াইট হাউস
ওমরাহ থেকে ফিরে অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা বর্ষার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে এক সপ্তাহে ২৪৯ অপরাধী গ্রেপ্তার
ভিজিএফের চালের বস্তায় শেখ হাসিনার নামে স্লোগান; স্থানীয়দের ক্ষোভ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকিরকে সাময়িক বরখাস্ত
ভিনিসিয়ুসের শেষ মুহূর্তের জাদুতে ব্রাজিলের রোমাঞ্চকর জয়
ইউনূস-মোদি বৈঠকের জন্য দিল্লির কাছে ঢাকার চিঠি
কুমিল্লায় শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৫ জন নিহত, তিনদিনে প্রাণ গেল ৬০০ ফিলিস্তিনির
আত্মপ্রকাশ করলো সাবেক সেনা কর্মকর্তা-আমলাদের ‘জনতার দল’
১৯৪ জন উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি
ভোরে মাঠে নামছে ব্রাজিল, যেমন হবে একাদশ
মার্চে রেমিট্যান্সে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ
ঢাকা সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার
হামাসের রকেট হামলায় কাঁপল ইসরাইল, বিমান চলাচল ব্যাহত
কবরস্থানের মালিকানা নিয়ে বিরোধে মারামারি, আ.লীগ নেতার মৃত্যু