সোমবার, ৬ মে ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

পর্ব-১

বিশ্ব মন্দা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত সতর্কবার্তা

যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘ সফর শেষে গত ৪ অক্টোবর সাংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী অনেক বিষয়ে কথা বললেও আমার কাছে মনে হয়েছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি তিনি বলেছেন সম্ভাব্য প্রচণ্ড বিশ্ব মন্দা নিয়ে। অনেক রাষ্ট্রনেতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানদের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে তার আলাপ হয়েছে। তারা প্রায় সবাই তাকে আভাস দিয়েছেন যে সারা বিশ্বের জন্যেই আগামী বছরটি মহামন্দার ঝুঁকিবহ। সেই বিষয়টিই তিনি আরও স্পষ্ট করে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে ‘বিশ্বব্যাপী একটা আশঙ্কা, ২০২৩ সাল একটা মহাসংকটের বছর হবে।’

আরও স্পষ্ট করে তিনি জানিয়েছেন, যে এবছর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা প্রকট হতে পারে। সেজন্য আগে থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। যার যার জায়গা আছে, চাষ শুরু করে দিন। কৃষিই যে বিপদের দিনে আমাদের রক্ষাকবচ সে কথাটি তিনি ভালো করেই জানেন। তাই নির্দ্বিধায় বলেছেন যে কৃষি খাতের বাড়তি বাজেট ছাড়াও তিনি সংকট মোকাবিলার জন্য আলাদা করে বাজেট করেছেন।
সংবাদ সম্মেলন ছাড়াও আরও বার কয়েক তিনি বিশ্বে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধানের সঙ্গে আলাপের সময় সারা বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা নিয়ে কথা বলেছেন। দেশে এসেও তিনি তার সেই আশঙ্কার কথা একাধিকবার বললেন।

একথা তিনি এমন করে বলতে পেরেছেন এ কারণে যে খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে মানুষের বেঁচে থাকা যে বড়ই কষ্টের সে বিষয়টি প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি নানা সংকট মোকাবিলার সময় তিনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন এবং তার প্রতিকারের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমাদের মনে আছে ১৯৯৮ সালের মহাবন্যার সময় তিনি সম্মুখসারির একজন যোদ্ধার মতো বিপর্যস্ত মানুষকে পর্যাপ্ত খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণের ব্যবস্থাই শুধু করেননি, বন্যাপরবর্তী কৃষির পুনর্বাসনের জন্য কৃষিঋণসহ সব উপকরণ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এমন কী বর্গাচাষিরাও যাতে কৃষিঋণ পান সেজন্য রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোকে হাটে বাজারে ব্যাংকিং বুথ খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

নাগরিক সমাজের অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে ওই বন্যার কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ যাবে। কিন্তু সুদক্ষ ত্রাণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে বন্যার অভিঘাতে তৈরি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় যেন একজন মানুষেরও প্রাণ না যায়। একই সঙ্গে পুরো সমাজকে তিনি দায়বদ্ধ করতে পেরেছিলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে ঢাকা শহরের প্রতিটি সচ্ছল পরিবার কোনো কোনোভাবে ত্রাণ বিতরণে অংশ নিয়েছিল। প্রতিটি বেসরকারি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান স্হানীয় প্রশাসনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে ত্রাণ বিতরণে অংশগ্রহণ করেছিল। অনেক তরুণ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বন্যার্তদের উদ্ধারে নেমে প্রাণও দিয়েছিল।

সরকারের সময়োপযোগী কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির কারণে বন্যাপরবর্তী ধান ও সবজির বাম্পার ফলন হয়েছিল। সেবার সরকার হেলিকপ্টারে করে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ধানের চারা সরবরাহ করতে দ্বিধা করেনি। আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিএডিসি, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগসহ প্রতিটি অধিদপ্তর ও সংস্থা সরকারি ও বেসরকারি সব উদ্যোগের সমন্বয় করে কৃষি উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তীকালে যেকোনো সংকটকালে ওই অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের কৃষকহিতৈষী নেতৃত্ব সরকারি নীতিমালাকে সমন্বিত উপায়ে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে।

আমরা জানি কৃষির প্রবৃদ্ধি শুধু খাদ্যই যোগায় না। কৃষি গ্রামীণ মানুষের চল্লিশ শতাংশেরও বেশি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে। কৃষি ভালো করলে অকৃষি খাতও ভালো করে। বাড়ন্ত আধুনিক কৃষি শিল্পের কাঁচামাল ও দেশের সার্বিক অভ্যন্তরীণ চাহিদাও যোগায়। ফলে দেশে কোনো মন্দা দেখা দেয় না। ২০০৯ সালেও চলছিল বিশ্ব আর্থিক সংকট। কিন্তু সংকট মোকাবিলায় সিদ্ধহস্ত প্রধানমন্ত্রী কৃষি, এসএমই, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের ওপর বিশেষ নজর দিয়ে এমন এক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করেছিলেন; যার ফলে বাংলাদেশের মানুষ ওই বিশ্ব আর্থিক সংকটের আঁচই পায়নি।

উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে সময়টায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কৌশল নিয়ে সরকারের মাটিঘেঁষা উন্নয়ন অভিযাত্রায় শামিল হয়েছিল। কৃষককে দশ টাকায় হিসাব খুলে দেওয়া, বর্গাচাষিদের কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা, নারী উদ্যোক্তাদের বিনা জামানতে ঋণের সুযোগ করে দেওয়া সহ অসংখ্য উদ্ভাবনীমূলক উদ্যোগ সরকারের জনবান্ধব উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে আরও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সহযোগিতা করেছিল।

অন্তর্ভুক্তিমূলক সেই উন্নয়ন কৌশল কভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক ঝাপ্টা মোকাবিলায় যথেষ্ট কাজে লেগেছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মিলে প্রণোদনা কর্মসূচির আদলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এমন এক উপযোগী কৌশল গ্রহণ করেছিল যার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি মোটেও ঝিমিয়ে পড়েনি। বরং উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সবচেয়ে গতিশীল প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে। জিডিপির প্রায় ছয় শতাংশ এই প্রণোদনার আওতায় স্বল্প সুদের ঋণ এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখনো কৃষি ও ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি চালু করে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির চাকাকে বেশ গতিশীল রেখেছে।

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ যখন সারা বিশ্বের প্রবৃদ্ধি এবছর এবং আগামী বছর তিন শতাংশের আশে পাশে রাখছে সেই সব প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার এই দুবছরই তার দ্বিগুণেরও বেশি হবে বলে তাদের অর্থনৈতিক প্রক্ষেপণে তুলে ধরেছে। এডিবি তার চেয়েও আরেকটু বেশির কথা বলছে। আর বাংলাদেশ আশা করছে তার প্রবৃদ্ধির হার এই সময়টায় সাত শতাংশের কম হবে না।

তবে এই ক্রান্তিকালে প্রবৃদ্ধি যদি প্রক্ষেপিত হারের চেয়ে খানিকটা কমও হয় তাতে দোষের কিছু নেই। এই মুহূর্তের বড় সংকট কী করে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়? শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বজুড়েই বইছে এই প্রবল মূল্যস্ফীতির লু হাওয়া। এর ফলে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। দারিদ্র্যের হারও বাড়ন্ত। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতির দাপট বেশ আক্রমণাত্মক।

অথচ এই মূল্যস্ফীতির উৎস অভ্যন্তরীণ নয়। আমদানি করা এই মূল্যস্ফীতির পেছনে একদিকে কোভিডের কারণে পর্যুদস্ত আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন (বিশেষ করে বাড়ন্ত জাহাজ ভাড়া) এবং তদুপরি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে জ্বালানি, গ্যাস ও ভোজ্য তেলের পাশাপাশি খাদ্যমূল্য দারুণ হারে বেড়ে যাওয়ার কারণগুলো কাজ করছে। এর ওপরে ‘মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে নেমে এসেছে ডলারের দাম বৃদ্ধি। কোভিডের সময় যুক্তরাষ্ট্রও ব্যাপক হারে তার অর্থনীতিতে অর্থ ঢেলেছিল। সেই অর্থ বাজার থেকে তুলে নেওয়ার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মৌলিক নীতি হার বাড়িয়েই চলেছে। এরই মধ্যে কয়েকবারে তিন শতাংশের মতো মৌলিক সুদ হার বাড়িয়েছে ফেড। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে এখনো মূল্যস্ফীতি আট শতাংশের বেশি তাই সহজেই এই নীতি হার বাড়ানোর কৌশল থেকে সরে আসবে না ফেড। এর ফলে অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মুদ্রার বাস্কেটের মূল্যমানের চেয়ে এরই মধ্যে প্রায় তেরো-চৌদ্দ শতাংশ বেড়েছে ডলারের দাম।

আর আমাদের মতো দেশের মুদ্রার তো কথাই নেই। যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও জাপান তাদের মুদ্রার মান ধরে রাখার জন্য রিজার্ভ থেকে বিদেশি মুদ্রা ছেড়ে দিচ্ছে। রেপো রেট বাড়াচ্ছে। কিন্তু একমাত্র জাপান ছাড়া আর সব উন্নত দেশেই মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের বেশি। শূন্য মূল্যস্ফীতির দেশ জাপানের মূল্যস্ফীতিও তার টার্গেট দুই শতাংশ কবেই অতিক্রম করে গেছে।

বিশ্বের চল্লিশ শতাংশ বাণিজ্য হয় ডলারে। বিশ্ব বন্ড বাজার প্রায় পুরোটায় ডলার নির্ভর। ডলারের দাম বাড়ায় একদিকে আমদানির খরচ বাড়ছে তো বাড়ছেই, অন্যদিকে বিদেশে ডলার মূল্যের বন্ড বিক্রি করে বিনিয়োগকারীরা ছুটছে মার্কিন ট্রেজারি বন্ড কেনার জন্য। সেদেশে বন্ড থেকে পাওয়া লাভের অংক লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর শ্রীলংকার মতো যেসব দেশ ডলার বন্ড বাজারে ছেড়েছিল তারা আর বিক্রিচ্ছুক বিনিয়োগকারীদের ডলারে দাম শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে।

শ্রীলংকা তো নিজেকে দেওলিয়া ঘোষণা করে এই সংকট থেকে বাঁচবার কতোই না চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড মার্কেট তেজি হচ্ছে এবং একই সঙ্গে ডলারের দামও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ফেড যাতে তার নীতি হার আর না বাড়ায় সেজন্য জাতিসংঘ পর্যন্ত আহ্বান জানিয়েছে। কেননা এর প্রভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা বেড়েই চলেছে। এর শিকার দুর্বল অর্থনীতির উন্নয়নশীল দেশগুলোর ম্যাক্রো অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে।

অন্য দিকে উন্নত দেশগলোর মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় তাদের ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়ছে আমাদের মতো রপ্তানিকারক দেশগুলোর ওপর। বিশেষ করে মূলত বস্ত্র রপ্তানির দেশ বলে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের বেশ খানিকটা ঝুঁকি তো তৈরি হচ্ছেই। এমনিতেই হঠাৎ আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার বিলাসী ও কম অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমমদানি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কয়েক মাস ধরেই অনেকগুলো নীতি গ্রহণ করেছে।

ঋণের মার্জিন বাড়িয়ে দেওয়া, বেশি মূল্যের এলসি নিবিড়ভাবে মনিটর করা, ডলার খরচ কমানোর জন্য প্রশাসনিক অনেক কৃচ্ছ কর্মসূচি হাতে নেয় এবং অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি থামিয়ে দেওয়ার মতো সুবিবেচনামূলক নীতিমালার সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।

তা ছাড়া দেশে আরও বেশি ডলার প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আনার জন্য টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন এবং নিয়মনীতি সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। তাই বাণিজ্য ঘাটতি ও চলতি হিসেবে ঘাটতি গত তিন মাসে বেশ কমেছে। এর ফলে প্রায় এক বছর পরে হলেও রিজার্ভ ক্ষয়ের ধারাটি থেমেছে। ধীরে হলেও রিজার্ভ ফের বাড়তে শুরু করেছে। ডলারের একাধিক হারের বদলে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি হারের দিকে এগোতে পারলে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের গতি আরও বাড়বে বলেই মনে হয়। সামনের দিনগুলোতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়বে এবং অন্যদিকে আমদানি খরচ কমবে আশা করা যায়। দুইয়ে মিলে ডলার-টাকা বিনিময় হার স্থিতিশীল হবে এবং রিজার্ভের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে।

লেখক: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসএন

Header Ad

অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট

ছবি: সংগৃহীত

তীব্র দাবদাহের মধ্যেও দেশে গাছ কাটা অব্যাহত থাকায় প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছে একটি পরিবেশবাদী সংগঠন। আগামীকাল সোমবার ওই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এইচআরপিবির পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ রোববার (৫ মে) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন।

আবেদনে পাঁচটি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এগুলো হল-

১. গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে ৭ দিনের মধ্যে পরিবেশবাদী, পরিবেশবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকের সমন্বয়ে সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন, যারা প্রয়োজনে ঢাকা শহরে গাছ কাটার অনুমতি দেবেন।

২. গাছ কাটা বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৭ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা পরিবেশ অফিসার, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি/সেক্রেটারি এবং সিভিল সার্জনের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রদান করবেন, যাদের অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না।

৩. গাছ কাটা বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৭ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে; কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজকল্যাণ অফিসার, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব ল্যান্ড এবং এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সমন্বয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রদান করবে, যাদের অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যাবে না।

৪. কমিটি গঠন হওয়ার আগে পর্যন্ত সকল বিবাদী নিজ নিজ এলাকায় যাতে কোনো গাছ কাটা না হয় সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

৫. গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, ঢাকা শহরসহ অন্যান্য জেলা এবং উপজেলা শহরে গাছ কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং সামাজিক বনায়ন বিধিমালা-২০০৪ এর বিধানে গাছ লাগানোর চুক্তিভুক্ত পক্ষকে অর্থ প্রদানের বিধান সংযুক্ত করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না-সে মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।

এইচআরপিবির পক্ষে রিট আবেদনকারীরা হলেন-অ্যাডভোকেট ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া এবং অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, পরিবেশ বিভাগ মহাপরিচালক, ঢাকা উত্তর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র, ঢাকা উত্তরা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান বন সংরক্ষক, সড়ক মহাসড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শককে রিট আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‌‘সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ঢাকা শহরে যে পরিমাণ গাছপালা থাকা দরকার, তা দিন দিন কমছে এবং সম্প্রতিকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। এ কারণে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।’

ওবায়দুল কাদেরের ভাইসহ ৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল

ছবি: সংগৃহীত

৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে নোয়াখালীর ৩টি উপজেলার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইসমাঈল। অপরদিকে, তিনটি উপজেলায় ৩৭ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধতা পেয়েছে।

রোববার (৫ মে) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠিত হয়।

মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন: কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ও বেগমগঞ্জের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী এ এস এম সেলিম। শাহাদাত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, হলফনামায় মামলা সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ না করে তথ্য গোপনের অভিযোগে বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী এ এস এম সেলিমের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের হলফনামায় চারটি মামলার তথ্য গোপন করায় তার মনোনয়নপত্র বাতিলে ঘোষিত হয়। মামলার তথ্য গোপনের অভিযোগে বেগমগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. নুর হোসেন মাসুদ ও মো. মনির হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়।

উল্লেখ্য, মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা আগামী ৬মে থেকে ৮মে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করার সুযোগ পাবেন। আগামী ২৯ মে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় ধাপে নোয়াখালীর সদর উপজেলা, বেগমগঞ্জ উপজেলা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

গ্রামে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না, সংসদে ক্ষোভ চুন্নুর

ছবি: সংগৃহীত

গ্রামে এখন ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক বলেছেন, ‘সরকার বলেছে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সক্ষমতা আছে, তাহলে বিদ্যুৎ গেল কোথায়?’

আজ রবিবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক আরও বলেন, এখন দেশের মানুষ অনেক সমস্যায় আছে। এর মধ্যে দুটি সমস্যা গুরুতর। একটি হলো বিদ্যুৎ, আরেকটি সড়ক দুর্ঘটনা।

জাপা মহাসচিব বলেন, এখন গ্রামে-গঞ্জে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোথাও ১২ ঘণ্টা, কোথাও আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। আমার এলাকায় পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। সরকার বলছে, ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আছে। তাহলে সেই বিদ্যুৎ গেল কোথায়?
এ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যদের কেউ কেউ আপত্তি করলে চুন্নু বলেন, লোডশেডিং হয় না গ্রামে? চ্যালেঞ্জ করলাম। আমার এলাকার মানুষ আমাকে বলেছে, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে দাওয়াত দিতে, আমার এলাকায় একটা দিন থাকতে, লোডশেডিং হয় কি না তা দেখার জন্য।

তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন আরেক জায়গায়। ভাড়ায় যেসব বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র আছে, তাদের ৪১ শতাংশ সক্ষমতা থাকার পরও বসে আছে। ২২-২৩ আর্থিক বছরে বসে থাকার পরও ভাড়া বাবদ তাদের ২৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

চুন্নু বলেন, এর আগে সংসদে বলেছিলাম, আমার এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, আমি আজ চ্যালেঞ্জ চাই না। আমি চাই, তিনি সশরীরে আমার এলাকায় যাবেন দুই-চার দিনের মধ্যে। দেখে আসবেন কয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে।

তিনি বলেন, দায়মুক্তি দিয়ে যেসব চুক্তি আমরা করেছি, সেগুলো দয়া করে প্রত্যাহার করুন। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে বসে বসে জরিমানা দেওয়া হবে, এ চুক্তি বাতিল করুন। সেসব কোম্পানি বিদ্যুৎ দিলে বিল পরিশোধ করবেন। বসিয়ে রেখে এভাবে এক বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা দেবেন, তারপর আবার লোডশেডিংও থাকবে! ঢাকায় থেকে অসহনীয় অবস্থা আপনারা বুঝবেন না।

তিনি বলেন, বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করুন। বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছেন। মন্ত্রী একটি সুন্দর কথা বলেন, সমন্বয়। সমন্বয়ের মানে মূল্যবৃদ্ধি। এ সমন্বয় আগামী তিন বছর বারবার করবেন। ভর্তুকি তুলে নিলে বিদ্যুতের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাবে দুই-তিন বছর পর। মানুষ কিনতে পারবে কি না, আমি জানি না। আমি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলব, শুধুমাত্র দাম না বাড়িয়ে এমন কিছু পদক্ষেপ নিন, যাতে জনগণের ওপর চাপ না পড়ে, একটি সহনীয় অবস্থায় আপনারা সরকারেও থাকতে পারেন, আর বিদ্যুৎও যাতে পাওয়া যায়।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১৫ জন মারা গেছেন ঈদের আগে ও পরে। প্রতিদিন এখন ১৪ জন মারা যান। বছরে পাঁচ হাজারের মতো লোক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এটি সরকারের সংস্থার হিসাব। ১৭ এপ্রিল ঝালকাঠিতে সিমেন্টবাহী ট্রাকের চাপায় ১৪ জন মারা যান। সেই ট্রাকের চালকের ভারি যানবাহন চালানোর কোনো লাইসেন্সই ছিল না।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ২২ এপ্রিল যে বাসের ধাক্কায় একজন শিক্ষার্থী মারা যান, সেটির ফিটনেসই ছিল না। ৪৩ বছরের পুরোনো গাড়ি। এ গাড়ি তো দুর্ঘটনা ঘটাবেই। সড়কে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা হয় পুরোনো, ফিটনেসবিহীন গাড়িতে। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী, আপনি একটু শক্ত হোন। এসব গাড়ি-অটো যদি রাস্তায় চলাচল না করে, তাহলে এভাবে মানুষ মারা যাবে না। দয়া করে আপনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিন।

সর্বশেষ সংবাদ

অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট
ওবায়দুল কাদেরের ভাইসহ ৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল
গ্রামে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না, সংসদে ক্ষোভ চুন্নুর
আটকে গেল এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি
৩০ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে সুন্দরবনের আগুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
এবার মানবপাচার মামলায় ৪ দিনের রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার
দ্বিতীয় বিয়েতে বাধা দেওয়ায় স্ত্রীকে তালাকের অভিযোগ
দেশে ফেরা হলো না প্রবাসীর, বিমানে ওঠার আগে মৃত্যু
বজ্রপাত থেকে বাঁচার ‘কৌশল’ জানাল আবহাওয়া অফিস
নওগাঁয় ঔষধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করল জনতা
সত্য বলায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত লাগলে কিছু করার নেই: ওবায়দুল কাদের
সেনাবাহিনীকে আরও আধুনিক ও দক্ষ করে তোলা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
উপজেলা নির্বাচন বর্জনে রিজভীর লিফলেট বিতরণ
টাঙ্গাইলে বজ্রপাতে বাবুর্চির মৃত্যু
জিম্বাবুয়ে-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজের ফলাফল কোনো কাজে আসবে না : সাকিব
১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী
গাজায় দেড় লাখের বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী পানিশূন্যতায় ভুগছেন