শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৪

বিষাদ বসুধা

শাহবাজ খান মোহিনীর মতো দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যবসায়ী। তবে তার বাবা বৈরম খানের উত্থানও খুব বেশি দিনের নয়। বৈরম খানের জমির ব্যবসা। জমি কিনে জমি বেচেন। তা দিয়েই তিনি বড়লোক। লোকে বলে, বৈরম খান পানি কেনেন। কিন্তু বেচেন জমি। ঢাকার আশপাশের জলাশয় কিনে রাখেন। তারপর তা ভরাট করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করেন। এক সময় জহিরুল ইসলাম এই ব্যবসা করে ধনী হয়েছিলেন। জমির ব্যবসা করেই বাংলাদেশের প্রথম ধনী হন জহিরুল ইসলাম। বৈরম খান সেই পথেই হাঁটছেন। জহিরুল ইসলাম তার স্বপ্ন পুরুষ। তিনিই তার চোখ খুলে দিয়েছেন। তিনি নতুন করে স্বপ্ন বুনলেন। মনে মনে বললেন, ঢাকা শহরের জমি সোনার চেয়ে দামি। তাই তিনি স্ত্রীর সোনা-দানা যা ছিল সব বিক্রি করে জমির ব্যবসা শুরু করলেন।

ঢাকা শহরের অদূরে আমিন বাজারের বিপরীত দিকে বিশাল জলাশয় কিনলেন বৈরম খান। তার জমি কেনার ধরন দেখে লোকে টিপ্পনি কেটে বলল, হালায় বোকার হদ্দ। ট্যাকা এইভাবে কেউ পানিতে ফালায়! লোকের কথা শুনে বৈরম খান মিটিমিটি হাসতেন। কিছুই বলতেন না। শুধু মনে মনে বলতেন, একটু সবুর কর। বোকা কে সেটা পরে বুঝবি!

বৈরম খান কড় গুণে গুণে ঠিক পাঁচ বছর পর জমির কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। ততদিনে জলাশয় ভরাট হয়ে গেলো। জলাশয় হয়ে গেলো ধানি জমি। জমির সামনে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে বৈরম খান বলেন, এইবার দেখ কে বোকা? আমি না তোমরা?

ধানি জমিতে প্লট বানিয়ে বিক্রি শুরু করলেন বৈরম খান। প্রথমবারই তিনি টেক্কা মেরে দিলেন। কারি কারি টাকা জমা করলেন ব্যাংকে। সেই টাকা দিয়ে ঢাকার আশপাশে আরো ডোবা-নালা কিনতে শুরু করলেন। দিনে দিনে তিনি বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক হয়ে উঠলেন। কিন্তু মানুষ তাকে মাটি খেকো, ভূমি দস্যু, জমির দালাল ইত্যাদি বলে তিরস্কার করতে শুরু করল। এতে তিনি অস্বস্তিবোধ করেন। মনে মনে বলেন, ছি ছি! জমির ব্যবসা করতে গিয়ে এমন দুর্নাম! না না! এটা হতে পারে না। এই দুর্নাম ঘোচাতে হবে। অন্য ব্যবসায় হাত দিতে হবে।

নতুন কী করা যায় তা নিয়ে ভাবে বৈরম খান। অনেক ভাবনাচিন্তার পর তিনি ঠিক করলেন গার্মেন্টস ব্যবসায় হাত দেবেন। তখন গার্মেন্টস ব্যবসা সবে চালু হয়েছে। কেউ কেউ বিদেশে তৈরি পোশাক পাঠাচ্ছে। এই ব্যবসা অনেকদিন ধরে চলবে। তিনি ছেলে শাহবাজ খানের হাতে কোটি টাকার চেক দিয়ে বললেন, যাও গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করো।

শাহবাজ খান শুরু করল গার্মেন্টস ব্যবসা। বাবার হাতে জমির ব্যবসা আর ছেলের হাতে গার্মেন্টস ব্যবসা। শুরুতে শাহবাগ খান হোচট খাচ্ছিল। কিছুতেই দাঁড়াতে পারছিল না। বার বার হোচট খেতে খেতে এক পর্যায়ে বলল, বাবা পথটি খুবই পিচ্ছিল। দাঁড়াতেই পারছি না।

বৈরম খান বললেন, ধৈর্য ধরো। ব্যবসায় ধৈর্য ধরতে হয়। কথায় আছে না, সবুরে মেওয়া ফলে। আমাকে দেখ না! আমি কি পরিমাণ ধৈর্য ধরেছি। জমি কিনে পাঁচ দশ বছর ফেলে রেখেছি। মানুষে গালি দিয়ে বলতে, হালায় বোকা নাকি! টাকা কেউ এভাবে জলে ফেলে! সেই জলে যে সোনা ছিল তা তো তারা দেখেনি। আমি দেখেছি। তাই আমি আজ অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছি। তোমাকেও এগিয়ে থাকতে হবে।

জমি বিক্রির কাচা টাকা ঢালতে থাকলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়।

ব্যবসা শুরুর আগে বৈরম খান ছেলেকে নানা রকম ছবক দেন। সেই ছবকের নমুনা এরকম, অন্যকে না ঠকালে সে বড় হতে পারবে না। কথায় বলে না, শ্রমিক চুষে বড়লোক! কথাটা মনে রাখতে হবে। শ্রমিকদের বেশি বেতন দেয়া যাবে না। সব সময় বেতন বকেয়া রাখতে হবে। তাদেরকে সব সময় বলতে হবে, ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। ভালো ব্যবসা করতে পারলে অবশ্যই তোমাদের দেয়া হবে।

শাহবাজ খান বাবার কথা মনে রেখে শ্রমিক ঠকানো শুরু করলেন। অল্প বেতন। তাও আবার ঠিকমতো না দেয়ার কৌশল নিলেন। দুতিন মাসের বেতন বকেয়াই থাকে। ফলে বকেয়া আদায়ের জন্য অল্প বেতনেই সবাই চাকরি করে। শ্রমিক ঠকাতে ঠকাতেই শাহবাজ খানের ব্যবসা বড় হয়ে ওঠে। একটা, দুইটা তিনটা। এভাবে বাড়তে থাকে একটার পর একটা গার্মেন্টস। এখন সাত সাতটি গার্মেন্টসের মালিক শাহবাজ খান। গার্মেন্টস ব্যবসা দিয়ে কানাডা ও মালয়েশিয়ায় বাড়ি কিনেছেন। এখন বেশির ভাগ সময় বিদেশেই কাটান।

করোনার কারণে দেশে আটকা পড়েন শাহবাজ খান। তার ব্যবসায়ও ধ্বস নামে। বায়ারদের অর্ডার বাতিল করায় তাকে সবগুলো গার্মেন্টস বন্ধ করে দিতে হয়। বাসায় বসে অলস সময় কাটান শাহবাজ খান। কিন্তু বাসায় শুয়ে বসে কত আর সময় কাটানো যায়। একদিন তিনি টেলিফোনে মোহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মোহিনীর কাছ থেকে তার ব্যবসার খোঁজখবর জানতে চান।
মোহিনী তাকে তার ব্যবসায়িক নীতির কথা জানালে শাহবাজ খান বললেন, এতো নীতিফিতি নিয়ে চললে তুমি বড় ব্যবসায়ী হতে পারবে না।

কৌতুহলের বশে মোহিনী জানতে চান, কেন?
এখন তোমার কোন ব্যবসা নেই। অথচ তুমি সবাইকে বেতন দিয়ে যাচ্ছো! এই করোনা কবে শেষ হবে তা কি জানো?
না। আমি কেন, কেউ জানে না।
আমি জানি।
কি জানো?
করোনার রেশ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে। আর অর্থনীতির ধকল আগামী দুই বছরেও কাটিয়ে ওঠা যাবে কি না সন্দেহ আছে।
হুম। তোমার তো গার্মেন্টস ব্যবসা; তাই না?
হ্যাঁ।
তোমার ব্যবসার কি অবস্থা?
খুবই খারাপ। আমার সাতটি গার্মেন্টসই বন্ধ।
বলো কি?
শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দিয়েছ?
তা তো বটেই।
বেতন দিয়েছ?
কিসের বেতন? প্রোডাকশন নেই, আবার বেতন কিসের?
তাহলে তাদের উপায় কি হবে?
তাদের উপায় কি হবে তা নিয়ে আমি ভাবলে চলবে। তাহলে তো তাদের সঙ্গে আমারও পথে বসতে হবে!
তাই বলে তুমি তাদের বেতন দেবে না?
তুমি দাও। মানবিকতা দেখাও। তারপর বুঝবা?
দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে মোহিনী বললেন, আসলেই আমরা বোকা। তুমি অনেক বুদ্ধিমান।
শোন, টিপ্পনি কাটো আর যাই কাটো, অবশ্যই আমি বুদ্ধিমান। বুদ্ধিমান না হলে কি সাতটি গার্মেন্টসের মালিক হতে পারতাম! কানাডা-মালয়েশিয়ায় বাড়ি কিনতে পারতাম!
তাই নাকি! ভালো ভালো। তুমি ভাই সুখে শান্তিতে থাকো। আমাদের জন্য পারলে প্রার্থনা কোরো। আমরা যেন এই করোনা নামক বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারি।
শোন শোন! এখন তো আমার কথা শুনবা না! একদিন আমাকে মনে করবা। করোনা দেশের অর্থনীতিকে যে কোথায় নিয়ে যাবে তা কি তুমি জানো না! ভয়ঙ্কর সময় আসছে।
দেখা যাক। যখন ভয়ঙ্কর সময় আসবে তখন মোকাবেলা করব। ভূত আসছে, ভূত আসছে বলে যদি ভূতের ভয়ে ঘরে ঢুকে যাই তাহলে তো কিছুই করা যাবে না। আর আমি মনে করি, একটা মানুষ মানবিক না হলে সে কিসের মানুষ? অমানবিক মানুষকে আমি মানুষ বলেই গণ্য করি না। সরি, অনেক কথা বলে ফেললাম। কিছু মনে কোরো না। ফোন কোরো। যোগাযোগ রেখো। আমি রাখছি। ভালো থেকো।

মোহিনী ফোন রেখে ভাবতে শুরু করলেন। এটা কি কোনো কথা হলো! একটিমাত্র গার্মেন্টস থেকে সাত সাতটি গার্মেন্টস করল। বিদেশে বাড়ি করল। বিদেশি ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখল। তারপরও তাদের অভাব দূর হয় না। তারপরও তারা শ্রমিকদের ঠকায়। শ্রমিকদের টাকা মেরে খায়। নাহ! এরা মানুষ না! এরা মানুষ না!

মোহিনী শুধু নিজের অফিসের লোকদেরই সহায়তা করছেন না; তিনি তার অফিসের কয়েকজন লোককে নিয়ে ঢাকা শহরের অভাবী মানুষদের সহায়তা করতে শুরু করলেন। প্রতিদিন তার অফিস থেকে দরিদ্র পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, লবণ, তেল এবং আলু বিতরণ করা হয়। নিত্যপণ্যগুলো কিনে কিছু লোক অফিসে বসে সারাদিন প্যাকেজ করে। বিকেল থেকে শুরু হয় বিতরণ। সহায়তার প্যাকেট নিয়ে দুটি মাইক্রোবাস ছুটে যায় শহরের অলিতে গলিতে।

করোনা শুরু হওয়ার পর ঢাকা শহরের মানুষের মধ্যে যে হাহাকার অবস্থা শুরু হয়। অনেকেই বাজার থেকে চাল ডাল লবন তেল কিনে বাসায় ভর্তি করে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দুর্ভিক্ষ লেগে গেছে। মানুষ যে কী! সহায়তা করার জন্যও চাল ডাল লবন তেল কিনতে পাওয়া যায় না! অবশ্য সে অবস্থা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ঢাকা জেলা অফিস, পুলিশ বিভাগ থেকেও সহায়তা দেয়া হয় দরিদ্র মানুষগুলোকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কিছু এনজিও কর্মীও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। কিন্তু এর শুরুটা হয় মোহিনীর হাত ধরে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরাও তাদের প্রতিবেশিদের খাবার সহায়তা দিচ্ছে। এটা দেখে মোহিনী তৃপ্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলেন, কে বলেছে দেশটা শেষ হয়ে গেছে! দেশে এখনো মানবিকতা আছে। কাজেই ভাবনার কিছু নেই।

শাহবাজ খান বাসায় ঝিমমেরে বসে আছেন। তিনি কারো সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। কেউ তাকে খুঁজেও পাচ্ছে না। তিনি যখন নিজে নিজে আত্মগোপন করেন তখন তাকে কেউ খুঁজে পায় না। মোবাইল ফোন, বাসার ফোন সব বন্ধ করে রাখে। বাসার পিওন-দারোয়ানদের বলে দেয়, কাক-পক্ষীও যেন না জানে যে তিনি বাসায় আছেন। তিনি এমন সব কাণ্ড করেন যে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকেও এড়িয়ে চলছেন। তিনি তার বাসার অফিস ঘরে নিঃসঙ্গ সময় কাটান। আজ তিনি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছেন। তারপর দুই গ্লাস পানি গিলে অফিস ঘরের চেয়ারে বসে একটার পর একটা সিগারেট টানছেন। মোহিনীর কথা তার বার বার মনে পড়ছে। মোহিনী তাকে রীতিমতো জ্ঞান দিয়ে দিল। মোহিনী যে তার চেয়ে অনেক বড় মনের সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিল। এটা শাহবাজ খানের জন্য খুবই অপমানের। কথা বলার সময় ফিল না করলেও এখন তিনি ফিল করছেন। কিন্তু মোহিনী এতো মানবিক হতে পারলে আমি কেন পারব না? বাবা আমাকে কি শিক্ষা দিয়েছেন? মানবিকতার শিক্ষা তো পরিবার থেকেই পাওয়া যায়। রক্তের ভেতরে থাকে। বাবা কি শুধু আমাকে টাকাই চিনিয়েছেন? মানবিকতার কোনো দীক্ষা দেননি! কেন? আমি মারা গেলে আমার টাকা পয়সা কে খাবে? আমি কি এসব কবরে নিয়ে যেতে পারব? মোহিনীর কথাই তো ঠিক। একটা মানুষ মানবিক না হলে সে কিসের মানুষ!

শাহবাজ খান মনে মনে ভাবেন, ফালতু কাজে কত টাকা খরচ করছি! কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশে মৌজ করছি। জুয়া খেলে দুই হাতে টাকা উড়াচ্ছি। অথচ আমাদের দেশের মানুষ না খেয়ে মরছে! আমার মা বাবা, আমার পরিবারের কেউ তো কখনো বলল না, মানবিক হও। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াও। মানুষকে সহযোগিতা কর। আমি কি বাবার মুখোমুখি দাঁড়াবো। তার কাছে জানতে চাইব, কেন তিনি আমাকে মানবিকতার শিক্ষা দেননি। তিনিই বা কেন দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করেন না।

শাহবাজ খানের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। গ্রামের মানুষ তাদের বাড়িতে সহায়তা চাইতে এলে বৈরম খান তাদেরকে দূরদূর করে তাড়িয়ে দিতেন। তার সামনে কেউ হাত পাতলে গালমন্দ করতেন। বলতেন, কাজ করে খেতে পারিস না? অন্যের কাছে টাকা চাইতে লজ্জা করে না? নিতান্তই সমস্যায় না পড়লে কোনো মানুষ কি আরেকজন মানুষের কাছে হাত পাতে? কি জানি। শাহবাজ খান কিছু সহায়তা দিতে গেলেও বাবার চোখ রাঙানি তাকে সইতে হতো।

শাহবাজ খান কখনো তার পরিবারে অর্থ কষ্ট দেখেননি। দারিদ্র শব্দটির সঙ্গে সে পরিচিত নয়। কখনো ক্ষুধার কষ্ট পায়নি। মুখ দিয়ে বলামাত্রই তার সামনে খাবার হাজির হয়ে গেছে। তার বাড়িতে খাবার যায়নি এমন কোনো পাঁচ তারকা হোটেল কিংবা নামিদামি কোনো রেস্তোরাঁ বাদ নেই। কেউ তার কানে দিতে পারলেই হোলো, ওমুক রেস্তোরাঁর খাবার মজাদার। ব্যাস, সঙ্গে সঙ্গে খাবার নিয়ে আসা হয়। তার মানে তিনি কি ভোজনবিলাসী? না। তাও নয়। সখ। সখের কারণেই তিনি এসব করেন। নিজে অল্প খান। বাকি খাবার খায় তার চারপাশের লোকজন। তাকে চাটুকাররা যখন বলে, স্যার খাবারটা খুব মজার! তিনি তখন হাসি ছড়িয়ে দিয়ে বলেন, তাই তাই? খা। বেশি করে খা। পেট ভরে খা।

লেখাপড়ার ব্যাপারে তেমন কোনো আগ্রহই ছিল শাহবাজ খানের। যদিও তার বাবা সখ করে ছেলেকে ঢাকা শহরের সবচেয়ে নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। অনেক কষ্টে এ লেভেল করেছে। তারপর লেখাপড়ার নাম করে আমেরিকায় গিয়ে ঘোরাঘুরি। বছর খানিক পর দেশে ফিরে এসে বাপের দেয়া টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। শুরুতে একজন আনাড়ি মাঝির যেমন হাল ধরতে কষ্ট হয়; তেমনি নতুন ব্যবসা করতে গেলে হোচট খেতে হয়। বুঝতে কিছুটা কষ্ট হয়। সময় লাগে। কারো একটু বেশি আবার কারো কম। হোচট খেতে খেতেই রপ্ত হয়ে যায়। সেই সময়টুকু শাহবাজ খানকেও দিতে হয়েছে। গার্মেন্টস সেক্টরে তিনি এখন বড় ব্যবসায়ী।

শাহবাজ খান আবার মোহিনীর কথা ভাবেন। মোহিনী কি আমার চেয়ে বেশি ধনী? সে কি অনেক টাকার মালিক? না না! সেটা হওয়ার কথা না। তাহলে সে এতো মানবিক হতে পারলে আমি কেন পারব না?

মানবিক হওয়ার চেষ্টা যে শাহবাজ খান করেননি তা নয়। করেছেন। কিন্তু অন্য মানুষকে টাকা দিতে গেলেই তার হাত কাঁপে। বুকের মধ্যে ধরফর করে। মনে হয়, অন্যকে বিলাতে গেলে তার টাকা ফুরিয়ে যাবে। তিনি বিপদে পড়বেন। তার বিপদে কেউ তাকে সাহায্য করবে না। এ কারণে তিনি কাউকে সাহায্য করতে পারেন না।

সাহায্য সহযোগিতার বিষয়টি অভ্যাসের ব্যাপারও। চিরায়ত নিয়ম বা পারিবারিক ঐতিহ্য বলেও একটা কথা চালু আছে। পরিবারে ছোটবেলা থেকে দান-খয়রাত সংস্কৃতি চালু থাকলে নিশ্চয়ই তা রপ্ত করা সম্ভব হতো। এ ধরনের সংস্কৃতি শাহবাজ খানের পরিবারে কখনোই ছিল না। কাজেই অভ্যাসে পরিণত হওয়া কিংবা রপ্ত হওয়ার বিষয়টি একেবারেই নেই।

শাহবাজ খান মনস্থির করেছেন যে, আজ তিনি তার বাবার মুখোমুখি হবেন। তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন। তার সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। কেন তার বাবা মানবিক নয় তা স্পষ্ট করে শুনবেন।

অতঃপর শাহবাজ খান তার বৈরম খানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তার কাছে জানতে চান, বাবা তুমি কেন মানবিক নও? কেন তুমি দান-খয়রাতকে নিরুৎসাহিত করো? কেন তুমি দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করো না? আমাকে খোলাখুলি বলবে?

বৈরম খান ছেলের কথায় রেগে গেলেন। এমনিতেই তিনি রকচটা মানুষ। তাকে কেউ প্রশ্ন করবে এটা তিনি কিছুতেই মানতে পারেন না। তিনি সবাইকে নাজেহাল করবেন। তিনি সবাইকে বকাবাজি করবেন। কিন্তু তাকে কোনো কিছুর জন্য জবাবদিহি করতে হবে না। তিনি জবাবদিহির উর্ধ্বে। আসলে আচার আচরণে তিনি রাজা-বাদশাদের মতো। কিন্তু স্বভাব-চরিত্র ফকিরের মতো। যক্ষের ধনের মতো তিনি টাকা-পয়সা আকড়ে রাখেন। একটা কানাকড়িও যাতে বাজে খরচ না হয় সেদিকে তার কড়া দৃষ্টি। অথচ নিরাপত্তার কাজে তিনি বিপুল খরচ করেন।

বৈরম খানের ধারনা, টাকাপয়সার লোভে তাকে কেউ মেরে ফেলতে পারে। সেজন্য তিনি সব সময় নিরাপত্তা বেস্টনীর মধ্যে থাকেন। বডিগার্ড নিয়ে চলেন। ছেলেকেও সেভাবেই তৈরি করেছেন। ছেলেকে এমন ধারনা দিয়েছেন যে, তারা রাজা-বাদশা। বাকিরা সবাই সাধারণ। সাধারণের কাছ থেকে তাদের দূরে থাকতে হবে। তাদেরকে আলাদা ভাবতে হবে। সাধারণের কথা ভেবে নিজেদের সুখ-সাচ্ছন্দ্য বিনষ্ট করা যাবে না। অথচ সেই ছেলেই কি না আজ বৈরম খানের কাছে জবাব চাইছে? এতোবড় দুঃসাহস তার কি করে হলো?

বৈরম খান রেগে আগুন। তিনি রাগলে কোনো কিছুই তার মাথায় থাকে না। চেঙ্গিশ খানের রূপ ধারণ করেন। তখন তিনি মানুষ খুনের চেয়েও বড় কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। ছেলে না হয়ে অন্য কেউ হলে হয়তো আজ মহাপ্রলয় ঘটে যেত। মহাপ্রলয়ের আগে যে রকম হয় সে রকমই একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে বৈরম খানের বাড়িতে। বৈরম খানের রুদ্র মূর্তি দেখে শাহবাজ খান আত্মগোপন করেছে। বসার ঘরে ঘূর্ণিঝড় কুন্ডুলি পাচাচ্ছে দেখে বৈরম খানের স্ত্রী পারভীন বেগম শোবার ঘরে গিয়ে খিল আটকে বসে আছেন। তিনি মনে মনে ছেলেকে বকাবাজি করছেন। তিনি সব সময় ছেলেকে সতর্ক করতেন এই বলে যে, বাপকে কখনো রাগাবি না। তাহলে কিন্তু মহাবিপদে পড়বি। শাহবাজ খান নিজেও তা জানে। ছোটবেলা থেকে দেখেও আসছে, বৈরম খান রাগতে পারেন এমন কোনো কাজ কেউ করে না। করতে পারে না।

শাহবাজ খান বন্ধুর অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি তার বাবার মুখোমুখি হন। এরফলে কী বিপদেই না পড়েছেন তিনি! সারা বাড়িতে তুলকালাম কাণ্ড শুরু হয়েছে। যে-ই বৈরম খানের সামনে পড়ছে তাকেই ভয়ানক গালাগাল শুনতে হচ্ছে। এরমধ্যেই বাড়ির চাকর-বাকর দু’তিন জনের চাকরি চলে গেছে। কারণ তারা শাহবাজ খানকে খুঁজে বের করতে পারেননি। আত্মগোপনের সময় শাহবাজ খানও তাদেরকে হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন, কেউ তার খোঁজ দিলে চাকরি যাবে। ফলে বাপ-ছেলের ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়ে চাকর-বাকরদের চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা!

এখন আর কেউ বৈরম খানের সামনে পড়ছে না। সামনে পড়লেই কোনো না কোনো বিপদে পড়তে হবে। সেই আশঙ্কায় সবাই দূরে দূরে থাকে। কাউকে না পেয়ে বৈরম খানের মেজাজ আরো বিগড়ে যায়। তিনি পাগলের মতো বাড়ির মধ্যে ছোটাছুটি করেন আর ছেলেকে গালমন্দ করেন। জেদে নিজের চুল নিজে ছেড়েন। চিৎকার চেঁচামেচির এক পর্যায়ে তার বুকে ব্যথা ওঠে। বুকে হাত দিয়ে তিনি বসে পড়েন। তারপর অসহায়ের মতো বললেন, কে আছিস! আমাকে ধর!

বাড়ির লোকজন ছোটাছুটি করে বৈরম খানকে ধরার জন্য এগিয়ে যায়।

শাহবাজ খান বেশ কিছুদিন তার বাবার বাড়িতে যায়নি। বৈরম খানের সঙ্গে কথা বলেনি। বলতে গেলে বাপ-ছেলের মুখ দেখাদেখিই বন্ধ। বৈরম খান বেশ কয়েকবার শাহবাজ খানকে ডেকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সে তার বাবার ডাকে সাড়া দেয়নি। এ নিয়ে বাবা আর ছেলের মধ্যে বেশ কিছুদিন মান-অভিমান চলে। এক পর্যায়ে বৈরম খানই ছেলের মান ভাঙান। তবে তাদের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে ঝুট-ঝামেলা লেগেই আছে। আগে বাবা যা বলতেন তা অক্ষরে অক্ষরে ছেলে পালন করত। এখন শাহবাজ খান নিজের বুদ্ধিতে কিংবা তার আশপাশের লোকজনের পরামর্শে কাজ করেন। বৈরম খান কোনো নির্দেশ দিলে তা উল্টে যায় শাহবাজ খানের নির্দেশে। এ এক আজব খেলা শুরু হয়েছে বৈরম খানের পরিবারে। বাপ আর ছেলের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
সাধারণত রাজ-পরিবারে এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা যায়। ক্ষমতার মোহে বাপ-ছেলে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু একটা সাধারণ পরিবারেও যে ক্ষমতা দেখানোর প্রবনতা প্রবল হয়ে উঠছে তা বৈরম খানের পরিবার না দেখলে উপলব্ধি করা কঠিন! বাপ-ছেলের দ্বন্দ্বের কারণে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিপদে পড়েছে। তারা কার নির্দেশ মানবে? কার মন রক্ষা করে চলবে তা নিয়ে রীতিমতো সংকটে পড়ে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কি তা নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে যায় তারা।

 

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১২

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১১

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৮

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

Header Ad

টাঙ্গাইলে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

নির্মাণাধীন ভবন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নিরাপত্তা বেষ্টুনীবিহীন একটি ভবনে কাজ গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে বাবুল মিয়া বাবু (৫৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার মাইজবাড়ী এলাকার গুটু মিয়ার ছেলে।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে ভূঞাপুর পৌর শহরের ফসলআন্দি এলাকায় সাংবাদিক আসাদুল ইসলাম বাবুলের তিন তলা ভবনের নিচের একটি ড্রেনে পড়ে গিয়ে তিনি মারা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াহেদুজ্জামান পলাশ জানান, জুয়েল নামে এক ব্যক্তির নির্মাণাধীন বাসায় কাজ করছিলেন ওই নির্মাণ শ্রমিক। কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ পা ফসকে ভবনের চার তলা ছাদ থেকে নিচের একটি ড্রেনে পড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে তার সহকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয়রা জানান, নির্মাণাধীন এই ভবনের কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না। নির্মাণ শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে আসছিলেন। নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় এর আগেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগ উঠেছে, থানা পুলিশকে না জানিয়ে কৌশলে ভবনের মালিক জুয়েল হাসপাতাল থেকে তার লাশ নিয়ে যায়।

ভবন মালিক জুয়েল বলেন, নির্মাণ শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারের সাথে সমঝোতা হয়েছে। পরিবারকে অর্থ সহায়তা প্রদান করা হবেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আহসান উল্লাহ্ বলেন, এ বিষয়ে কেউ অবগত করেনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

ফাইল ছবি

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। রাজিবুল ইসলামকে (বাপ্পি) সভাপতি ও সজল কুণ্ডুকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অনুমোদন দিয়ে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এ কমিটির অনুমোদন দেন।

কমিটি অনুমোদন দিয়ে এতে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'স্মার্ট বাংলাদেশ', 'স্মার্ট মহানগর' বিনির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলো।

ঘোষিত কমিটিতে সহ-সভাপতি হয়েছেন কাউসার আহমেদ (ইমন), সৈয়দ ইমরান হোসেন, মো. নাজমুল হোসেন, উবায়দুর রহমান লিও, নিবাস মজুমদার, রেহানুল হক রাফি, রাজীব সাহা, আবু তালিম ভূইয়া, আরাফাত হোসেন মারুফ, মো. হাসিবুল আলম পুলক, শাখাওয়াত হোসেন আরেফিন, মো. শাকিল তালুকদার, আহমেদ আলী রেজওয়ান, সালমান রহমান (আশরাফ), আদনান আইয়ুব, মো. রিয়াজ মোল্লা, শাহজালাল শাহীন, ইশতেফাক হক (ইফাজ), সৈয়দ আমিনুল ইসলাম (নিবিড়), কাজী জাহিদুল ইসলাম রাজন, মাশরুফ বিন নেসার শান, মো. শাহরিয়ার শাওন, মো. আক্তার হোসেন, মো. বিপ্লব খান,নাইমুল ইসলাম নোমান, নাজমুল হাসান প্রিন্স তালুকদার, সারোয়ার হোসেন, ফারকিলিত সাফাক-ই-আরফাকসাজ, আনিসুর রহমান আনিস, জুটন চন্দ্র দাস,মাহমুদুল হাসান (ইমন)।

এছাড়াও সহ-সভাপতি হিসেবে আরও আছেন, মাজেদুল মজিদ মাহমুদ (সাদমান), সাদি মোহাম্মদ সৈকত, আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ রাজু, রাকিবুল ইসলাম শাওন, মো. ফজলে রাব্বি, সোহানুর রহমান সোহান, ওহিদুল ইসলাম অপু, মেহেদী হাসান, তানভীর আহমেদ, রুবেল মাহমুদ, সাব্বির বিন ইসলাম, মাসুদ রানা, মো. আবু ইউসুফ হৃদয়, আশিক মাহমুদ, মো. নুরুদ্দিন হাওলাদার, মাহমুদ হাসান জিল্লু, মো. ইনজামুল ইসলাম (আকিব), সোহেল রানা, আব্দুল্লাহ আল-হাসান, আহমেদ সারোয়ার স্বচ্ছ, মো. কামরুজ্জামান ইফতি, আরাফাত হোসেন রনি, মো. ইমরান হোসেন, সিফাত হোসেন, শেখ কোরবান ইসলাম, আব্দুল্লাহ আশিক, এফ এম সাইফুজ্জামান সজিব, মো. শামীম খান, বখতিয়ার শিকদার বাপ্পি, সুজন দাস, মো. তাবারক হোসেন (বিপ্লব), বাবু দাস, মো. ইমরান হোসেন পাভেল, জবিউল্লাহ শান্ত, বিশ্বজিৎ হাওলাদার জিৎ, ফেরদাউস আনসারী, নাইমুর রহমান দুর্জয়, জহিরুল ইসলাম খান তুহিন, মেহেদী হাসান রাজু, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, আল আমিন।

যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সাগর (সানাফ), সৈয়দ মুক্তাদির সাদ, সৌরভ দেব নয়ন, মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ আবিয়াজ সাজেদ, নয়ন শিকদার, কাজী তানবীর হোসেন, মাহবুব আলম মাহিব, রফিকুল ইসলাম রাসেল, ইয়াসির আরাফাত, আক্তারুজ্জামান মান্না।

সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন, সাকিব হোসাইন, শাকিল হোসেন (জীবন), আরমান মাহমুদ তুষার, রহমান ইকবাল (ইকু), জোবায়েদ সাদাফ সাজিদ, দিপ্ত কুন্ডু, জাহিদুল ইসলাম দিপু, মো. রাকিব হোসেন, নাইমুল ইসলাম, মো. সাইদুল ইসলাম জনি, মো. রাহাত হোসেন রাব্বি।

প্রচার সম্পাদক হয়েছেন হামিম খান কাজল। উপ-প্রচার সম্পাদক করা হয়েছেন আরিফুল ইসলাম, এরশাদ হোসাইন, এম আহসানুর রহমান ইমন, এম এস আর সবুজ, মাহবুব আলম খান তনিম, মুনতাসির রাফি।

দপ্তর সম্পাদক করা হয়েছে মো. সাকিব আল হাসান (রাজিব) কে। উপ-দপ্তর সম্পাদক হয়েছেন নাঈফুজ্জামান কোতোয়াল, শিমুল রায়, জুনাইদ বোগদাদী প্রধান, রাইসুল আলম ইসতিয়াক, শফিক বেপারী, কাজী রাকিব হোসেন।

গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক হয়েছেন মীর মোহাম্মদ সাইকুন আলী শান্ত। উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক হয়েছেন মোকারোম হোসাইন রুদ্র, মো. জনি ইসলাম, জুয়েল রানা, মো. মারজুক হোসেন ভুবন, মারুফ বিল্লাহ ও জাফরুল ইসলাম (লিটন)।

শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক করা হয়েছে শাহাদাত মাহমুদ সাকিবকে। উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক হয়েছেন মো. জিন্নাত হোসেন, সাব্বির হাওলাদার, প্রতীম বিশ্বাস, রোহান আহমেদ, আহসান হাবিব ইমরান।

সাংস্কৃতিক সম্পাদক হয়েছেন তমাল পাল। উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক করা হয়েছেন এইচ. এম. আমিনুল, নীলপদ্ম রায় প্রান্ত, স্বপন চৌধুরী, রাহুল কুমার ভৌমিক, সোহেল জামান রাকিব।

সমাজসেবা সম্পাদক হয়েছেন শাকিল আহমেদ হৃদয়। উপ-সমাজসেবা সম্পাদক করা হয়েছে শেখ মেহেদী হাসান, মাসুম বিল্লাহ, সাদ্দাম হোসেন সাদমানকে। ক্রীড়া সম্পাদক হয়েছেন মো. আবু হোসাইন। উপ-ক্রীড়া সম্পাদক হয়েছেন নাঈম ইসলাম দুর্জয়, তারিকুল ইসলাম অপু, সজল হাওলাদার, মো. নূর নবী (রাঈদ), সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, আব্দুল্লাহ সাবিত আনোয়ার চৌধুরী।

আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন শাহ আলম বিজয়। উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন শাহরিয়া ইসলাম জয়, মোস্তাফিজুর রহমান দিপু, শেখ মুহাম্মদ নাঈম উল ইসলাম, ওয়াহিদুল ইসলাম নিশান, সৈয়দ লামমিম হাসান নিলয়। পাঠাগার সম্পাদক হয়েছেন সাফায়েত খন্দকার সিয়াম। উপ-পাঠাগার সম্পাদক হয়েছেন ইমতিয়াজ আহমেদ ইমরান, ফয়সাল আহম্মেদ তমাল, মাহমুদুল হাসান তুষার।

তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হয়েছেন হাবিবুর রহমান শাকিল। উপ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হয়েছেন ফয়সাল আহমেদ ভুবন, সাবের হোসাইন, মুরসালিন সরকার। অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন মো. সোহাগ রানা। উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন সুরুজ ফরাজী, গোলাম রাব্বি সিকদার শফিউদ্দিন মাহমুদ তুষার, আখিয়ারুল ইসলাম আফিক।

আইন বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন মেহেদী হাসান (নাহিদ)। উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন কাজী জার্জিস বিন এরতেজা, মো. মঈন হোসেন (সজীব), মো. জুবায়ের হোসেন শেখ রওনক আহমেদ, আরিফুর রহমান ফাহাদ, নওফেল হামিদ জয়। পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন ইরফান আহমেদ বাধন। উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন মো. রাব্বী হোসেন, সজীব হাওলাদার, জাহিদুল ইসলাম।

স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন মো. আরাফাত উল্লাহ। উপ-স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন আহসানুল্লাহ সজীব, নিয়ামাল ওয়াকিল, নিবিড় হাসান, মো. ফয়সাল রাব্বি। বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন আবরার খান তাহমিদ। উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন আবু কাওসার, মো. তানভীর আহমেদ বাপ্পি, মো. জিসান হাওলাদার, মো. ওয়ালিউল।

দিনাজপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু

দিনাজপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

দিনাজপুরের হাকিমপুরে গরুবোঝাই ভটভটির সঙ্গে মোটরসাইকেল সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের থাকা দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। এর আগে, সকালে ঘোড়াঘাট উপজেলায় দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকের চালক ও সহকারীর মৃত্যু হয়।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে বিরামপুর-হাকিমপুর আঞ্চলিক সড়কের ডাঙ্গাপাড়া বাজারের উত্তর পাশে হাকিমপুর - বিরামপুর উপজেলার জিরো পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ভোরে ঘোড়াঘাট উপজেলার দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের টিএন্ডটি মোড় এলাকায় দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহত দুই মোটরসাইকেল আরোহী হলেন- নবাবগঞ্জ উপজেলার কুমারপাড়া গ্রামের ধীরাজ কুমার ছেলে ধীমান কুমার ঘোষ (৩০) ও একই উপজেলার দাউদপুর এলাকার আনারুলের ছেলে আরিফ হোসেন (৩৫)।

হাকিমপুর থানা পুলিশ জানায়, দুপুরের দিকে মোটরসাইকেল যোগে হাকিমপুর থেকে দুই বন্ধু বিরামপুর যাবার পথে হাকিমপুর উপজেলার শেষ সীমানায় গরু বোঝাই ভটভটির সাথে মোটরসাইকেল ধাক্কা খেয়ে পাকা রাস্তায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী ছিটকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়।

নিহত ধীমান কুমার ঘোষ এর মামা হাকিমপুর হিলি পৌরসভার বাসিন্দা স্বপন কুমার বলেন, আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে মোবাইল ফোনে আমাকে ভাগিনা ধীমান কুমার বলেন, মামা আমি জরুরি কাজে হিলি আসছিলাম তাই আপনার সাথে দেখা করতে পারলাম না। এর কিছুক্ষণ পরে দুর্ঘটনার খবর শুনতে পাই এবং হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাগিনা মারা গেছে।

হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. দুলাল হোসেন জানান, দুপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেলের আরোহীর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা স্থলে পুলিশ পাঠিয়ে দেয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে গরুবাহী ভটভটি জব্দ করে থানায় এবং নিহতদের হাসপাতালে আনা হয়েছে। পরবর্তীতে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি না থাকায় লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। ভটভটি চালক পলাতক রয়েছে।

এদিকে ঘোড়াঘাট উপজেলায় মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে দুজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ঘোড়াঘাট উপজেলার দিনাজপুর -ঢাকা মহাসড়কের ঘোড়াঘাট টিএনটি মিশন মোড় এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ট্রাকচালক গোলাম রাব্বি (৪৫)। সে জয়পুরহাট জেলা সদরের আমদই এলাকার মমতাজের ছেলে। তার সহযোগী রেজোয়ান ইসলাম (২৮) একই এলাকার চৌমুহনীর বাসিন্দা।

স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা ভুট্টাবোঝাই ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট-২০৬৬৪৯) সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা দিনাজপুর শহরমুখী সারবোঝাই ট্রাকের (ঝিনাইদহ-ট-১১১৬৪৬) মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারা এসে ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় ২ জনকে উদ্ধার করে ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

ঘোড়াঘাট ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা সকালে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ২ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়েছি।’

ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. সা-আদ আস সামস বলেন, ‘সকালে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ২ জন রোগীকে মৃত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়েছে।’

ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, উপজেলার টিএনটি মোড় এলাকায় ভুট্টা ও সারবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা ভুট্টাবোঝাই ট্রাকটিকে দিনাজপুর শহরমুখী সারবোঝাই একটি ট্রাক সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ভুট্টাবোঝাই ট্রাকের চালক ও সহকারীর মৃত্যু হয়। ট্রাক দুটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ সংবাদ

টাঙ্গাইলে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
দিনাজপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে রিকশাচালক নিহত, আটক ১
ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের ভেতরে আগুন
৭৬ বছরের তাপপ্রবাহের রেকর্ড ভাঙল, জানা গেল বৃষ্টির তারিখ
ফিলিস্তিনি মৃত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি আর বেঁচে নেই
অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি শ্রীময়ী, দুশ্চিন্তায় কাঞ্চন মল্লিক
প্রথমবার এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করবেন বাংলাদেশের জেসি
বিয়ে না দেওয়ায় মাকে জবাই করলো ছেলে
রেকর্ড তাপপ্রবাহের জন্য সরকার দায়ী: রিজভী
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২.৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড, জনজীবনে অস্বস্তি
বিএনপির আরও ৭৫ নেতা বহিষ্কার
প্রেমিকার আত্মহত্যা, শোক সইতে না পেরে প্রেমিকও বেছে নিলেন সে পথ
দুই বিভাগে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস
অভিষেকেই শূন্য রানে ৭ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন রোহমালিয়া
ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে অস্ত্র ত্যাগ করবে হামাস
দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না: ওবায়দুল কাদের
কয়েক মিনিটের দেরিতে বিসিএসের স্বপ্ন ভঙ্গ ২০ পরীক্ষার্থীর
লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত