বুধবার, ৮ মে ২০২৪ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৪

বিষাদ বসুধা

শাহবাজ খান মোহিনীর মতো দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যবসায়ী। তবে তার বাবা বৈরম খানের উত্থানও খুব বেশি দিনের নয়। বৈরম খানের জমির ব্যবসা। জমি কিনে জমি বেচেন। তা দিয়েই তিনি বড়লোক। লোকে বলে, বৈরম খান পানি কেনেন। কিন্তু বেচেন জমি। ঢাকার আশপাশের জলাশয় কিনে রাখেন। তারপর তা ভরাট করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করেন। এক সময় জহিরুল ইসলাম এই ব্যবসা করে ধনী হয়েছিলেন। জমির ব্যবসা করেই বাংলাদেশের প্রথম ধনী হন জহিরুল ইসলাম। বৈরম খান সেই পথেই হাঁটছেন। জহিরুল ইসলাম তার স্বপ্ন পুরুষ। তিনিই তার চোখ খুলে দিয়েছেন। তিনি নতুন করে স্বপ্ন বুনলেন। মনে মনে বললেন, ঢাকা শহরের জমি সোনার চেয়ে দামি। তাই তিনি স্ত্রীর সোনা-দানা যা ছিল সব বিক্রি করে জমির ব্যবসা শুরু করলেন।

ঢাকা শহরের অদূরে আমিন বাজারের বিপরীত দিকে বিশাল জলাশয় কিনলেন বৈরম খান। তার জমি কেনার ধরন দেখে লোকে টিপ্পনি কেটে বলল, হালায় বোকার হদ্দ। ট্যাকা এইভাবে কেউ পানিতে ফালায়! লোকের কথা শুনে বৈরম খান মিটিমিটি হাসতেন। কিছুই বলতেন না। শুধু মনে মনে বলতেন, একটু সবুর কর। বোকা কে সেটা পরে বুঝবি!

বৈরম খান কড় গুণে গুণে ঠিক পাঁচ বছর পর জমির কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। ততদিনে জলাশয় ভরাট হয়ে গেলো। জলাশয় হয়ে গেলো ধানি জমি। জমির সামনে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে বৈরম খান বলেন, এইবার দেখ কে বোকা? আমি না তোমরা?

ধানি জমিতে প্লট বানিয়ে বিক্রি শুরু করলেন বৈরম খান। প্রথমবারই তিনি টেক্কা মেরে দিলেন। কারি কারি টাকা জমা করলেন ব্যাংকে। সেই টাকা দিয়ে ঢাকার আশপাশে আরো ডোবা-নালা কিনতে শুরু করলেন। দিনে দিনে তিনি বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক হয়ে উঠলেন। কিন্তু মানুষ তাকে মাটি খেকো, ভূমি দস্যু, জমির দালাল ইত্যাদি বলে তিরস্কার করতে শুরু করল। এতে তিনি অস্বস্তিবোধ করেন। মনে মনে বলেন, ছি ছি! জমির ব্যবসা করতে গিয়ে এমন দুর্নাম! না না! এটা হতে পারে না। এই দুর্নাম ঘোচাতে হবে। অন্য ব্যবসায় হাত দিতে হবে।

নতুন কী করা যায় তা নিয়ে ভাবে বৈরম খান। অনেক ভাবনাচিন্তার পর তিনি ঠিক করলেন গার্মেন্টস ব্যবসায় হাত দেবেন। তখন গার্মেন্টস ব্যবসা সবে চালু হয়েছে। কেউ কেউ বিদেশে তৈরি পোশাক পাঠাচ্ছে। এই ব্যবসা অনেকদিন ধরে চলবে। তিনি ছেলে শাহবাজ খানের হাতে কোটি টাকার চেক দিয়ে বললেন, যাও গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করো।

শাহবাজ খান শুরু করল গার্মেন্টস ব্যবসা। বাবার হাতে জমির ব্যবসা আর ছেলের হাতে গার্মেন্টস ব্যবসা। শুরুতে শাহবাগ খান হোচট খাচ্ছিল। কিছুতেই দাঁড়াতে পারছিল না। বার বার হোচট খেতে খেতে এক পর্যায়ে বলল, বাবা পথটি খুবই পিচ্ছিল। দাঁড়াতেই পারছি না।

বৈরম খান বললেন, ধৈর্য ধরো। ব্যবসায় ধৈর্য ধরতে হয়। কথায় আছে না, সবুরে মেওয়া ফলে। আমাকে দেখ না! আমি কি পরিমাণ ধৈর্য ধরেছি। জমি কিনে পাঁচ দশ বছর ফেলে রেখেছি। মানুষে গালি দিয়ে বলতে, হালায় বোকা নাকি! টাকা কেউ এভাবে জলে ফেলে! সেই জলে যে সোনা ছিল তা তো তারা দেখেনি। আমি দেখেছি। তাই আমি আজ অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছি। তোমাকেও এগিয়ে থাকতে হবে।

জমি বিক্রির কাচা টাকা ঢালতে থাকলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়।

ব্যবসা শুরুর আগে বৈরম খান ছেলেকে নানা রকম ছবক দেন। সেই ছবকের নমুনা এরকম, অন্যকে না ঠকালে সে বড় হতে পারবে না। কথায় বলে না, শ্রমিক চুষে বড়লোক! কথাটা মনে রাখতে হবে। শ্রমিকদের বেশি বেতন দেয়া যাবে না। সব সময় বেতন বকেয়া রাখতে হবে। তাদেরকে সব সময় বলতে হবে, ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। ভালো ব্যবসা করতে পারলে অবশ্যই তোমাদের দেয়া হবে।

শাহবাজ খান বাবার কথা মনে রেখে শ্রমিক ঠকানো শুরু করলেন। অল্প বেতন। তাও আবার ঠিকমতো না দেয়ার কৌশল নিলেন। দুতিন মাসের বেতন বকেয়াই থাকে। ফলে বকেয়া আদায়ের জন্য অল্প বেতনেই সবাই চাকরি করে। শ্রমিক ঠকাতে ঠকাতেই শাহবাজ খানের ব্যবসা বড় হয়ে ওঠে। একটা, দুইটা তিনটা। এভাবে বাড়তে থাকে একটার পর একটা গার্মেন্টস। এখন সাত সাতটি গার্মেন্টসের মালিক শাহবাজ খান। গার্মেন্টস ব্যবসা দিয়ে কানাডা ও মালয়েশিয়ায় বাড়ি কিনেছেন। এখন বেশির ভাগ সময় বিদেশেই কাটান।

করোনার কারণে দেশে আটকা পড়েন শাহবাজ খান। তার ব্যবসায়ও ধ্বস নামে। বায়ারদের অর্ডার বাতিল করায় তাকে সবগুলো গার্মেন্টস বন্ধ করে দিতে হয়। বাসায় বসে অলস সময় কাটান শাহবাজ খান। কিন্তু বাসায় শুয়ে বসে কত আর সময় কাটানো যায়। একদিন তিনি টেলিফোনে মোহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মোহিনীর কাছ থেকে তার ব্যবসার খোঁজখবর জানতে চান।
মোহিনী তাকে তার ব্যবসায়িক নীতির কথা জানালে শাহবাজ খান বললেন, এতো নীতিফিতি নিয়ে চললে তুমি বড় ব্যবসায়ী হতে পারবে না।

কৌতুহলের বশে মোহিনী জানতে চান, কেন?
এখন তোমার কোন ব্যবসা নেই। অথচ তুমি সবাইকে বেতন দিয়ে যাচ্ছো! এই করোনা কবে শেষ হবে তা কি জানো?
না। আমি কেন, কেউ জানে না।
আমি জানি।
কি জানো?
করোনার রেশ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে। আর অর্থনীতির ধকল আগামী দুই বছরেও কাটিয়ে ওঠা যাবে কি না সন্দেহ আছে।
হুম। তোমার তো গার্মেন্টস ব্যবসা; তাই না?
হ্যাঁ।
তোমার ব্যবসার কি অবস্থা?
খুবই খারাপ। আমার সাতটি গার্মেন্টসই বন্ধ।
বলো কি?
শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দিয়েছ?
তা তো বটেই।
বেতন দিয়েছ?
কিসের বেতন? প্রোডাকশন নেই, আবার বেতন কিসের?
তাহলে তাদের উপায় কি হবে?
তাদের উপায় কি হবে তা নিয়ে আমি ভাবলে চলবে। তাহলে তো তাদের সঙ্গে আমারও পথে বসতে হবে!
তাই বলে তুমি তাদের বেতন দেবে না?
তুমি দাও। মানবিকতা দেখাও। তারপর বুঝবা?
দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে মোহিনী বললেন, আসলেই আমরা বোকা। তুমি অনেক বুদ্ধিমান।
শোন, টিপ্পনি কাটো আর যাই কাটো, অবশ্যই আমি বুদ্ধিমান। বুদ্ধিমান না হলে কি সাতটি গার্মেন্টসের মালিক হতে পারতাম! কানাডা-মালয়েশিয়ায় বাড়ি কিনতে পারতাম!
তাই নাকি! ভালো ভালো। তুমি ভাই সুখে শান্তিতে থাকো। আমাদের জন্য পারলে প্রার্থনা কোরো। আমরা যেন এই করোনা নামক বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারি।
শোন শোন! এখন তো আমার কথা শুনবা না! একদিন আমাকে মনে করবা। করোনা দেশের অর্থনীতিকে যে কোথায় নিয়ে যাবে তা কি তুমি জানো না! ভয়ঙ্কর সময় আসছে।
দেখা যাক। যখন ভয়ঙ্কর সময় আসবে তখন মোকাবেলা করব। ভূত আসছে, ভূত আসছে বলে যদি ভূতের ভয়ে ঘরে ঢুকে যাই তাহলে তো কিছুই করা যাবে না। আর আমি মনে করি, একটা মানুষ মানবিক না হলে সে কিসের মানুষ? অমানবিক মানুষকে আমি মানুষ বলেই গণ্য করি না। সরি, অনেক কথা বলে ফেললাম। কিছু মনে কোরো না। ফোন কোরো। যোগাযোগ রেখো। আমি রাখছি। ভালো থেকো।

মোহিনী ফোন রেখে ভাবতে শুরু করলেন। এটা কি কোনো কথা হলো! একটিমাত্র গার্মেন্টস থেকে সাত সাতটি গার্মেন্টস করল। বিদেশে বাড়ি করল। বিদেশি ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখল। তারপরও তাদের অভাব দূর হয় না। তারপরও তারা শ্রমিকদের ঠকায়। শ্রমিকদের টাকা মেরে খায়। নাহ! এরা মানুষ না! এরা মানুষ না!

মোহিনী শুধু নিজের অফিসের লোকদেরই সহায়তা করছেন না; তিনি তার অফিসের কয়েকজন লোককে নিয়ে ঢাকা শহরের অভাবী মানুষদের সহায়তা করতে শুরু করলেন। প্রতিদিন তার অফিস থেকে দরিদ্র পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, লবণ, তেল এবং আলু বিতরণ করা হয়। নিত্যপণ্যগুলো কিনে কিছু লোক অফিসে বসে সারাদিন প্যাকেজ করে। বিকেল থেকে শুরু হয় বিতরণ। সহায়তার প্যাকেট নিয়ে দুটি মাইক্রোবাস ছুটে যায় শহরের অলিতে গলিতে।

করোনা শুরু হওয়ার পর ঢাকা শহরের মানুষের মধ্যে যে হাহাকার অবস্থা শুরু হয়। অনেকেই বাজার থেকে চাল ডাল লবন তেল কিনে বাসায় ভর্তি করে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দুর্ভিক্ষ লেগে গেছে। মানুষ যে কী! সহায়তা করার জন্যও চাল ডাল লবন তেল কিনতে পাওয়া যায় না! অবশ্য সে অবস্থা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ঢাকা জেলা অফিস, পুলিশ বিভাগ থেকেও সহায়তা দেয়া হয় দরিদ্র মানুষগুলোকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কিছু এনজিও কর্মীও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। কিন্তু এর শুরুটা হয় মোহিনীর হাত ধরে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরাও তাদের প্রতিবেশিদের খাবার সহায়তা দিচ্ছে। এটা দেখে মোহিনী তৃপ্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলেন, কে বলেছে দেশটা শেষ হয়ে গেছে! দেশে এখনো মানবিকতা আছে। কাজেই ভাবনার কিছু নেই।

শাহবাজ খান বাসায় ঝিমমেরে বসে আছেন। তিনি কারো সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। কেউ তাকে খুঁজেও পাচ্ছে না। তিনি যখন নিজে নিজে আত্মগোপন করেন তখন তাকে কেউ খুঁজে পায় না। মোবাইল ফোন, বাসার ফোন সব বন্ধ করে রাখে। বাসার পিওন-দারোয়ানদের বলে দেয়, কাক-পক্ষীও যেন না জানে যে তিনি বাসায় আছেন। তিনি এমন সব কাণ্ড করেন যে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকেও এড়িয়ে চলছেন। তিনি তার বাসার অফিস ঘরে নিঃসঙ্গ সময় কাটান। আজ তিনি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছেন। তারপর দুই গ্লাস পানি গিলে অফিস ঘরের চেয়ারে বসে একটার পর একটা সিগারেট টানছেন। মোহিনীর কথা তার বার বার মনে পড়ছে। মোহিনী তাকে রীতিমতো জ্ঞান দিয়ে দিল। মোহিনী যে তার চেয়ে অনেক বড় মনের সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিল। এটা শাহবাজ খানের জন্য খুবই অপমানের। কথা বলার সময় ফিল না করলেও এখন তিনি ফিল করছেন। কিন্তু মোহিনী এতো মানবিক হতে পারলে আমি কেন পারব না? বাবা আমাকে কি শিক্ষা দিয়েছেন? মানবিকতার শিক্ষা তো পরিবার থেকেই পাওয়া যায়। রক্তের ভেতরে থাকে। বাবা কি শুধু আমাকে টাকাই চিনিয়েছেন? মানবিকতার কোনো দীক্ষা দেননি! কেন? আমি মারা গেলে আমার টাকা পয়সা কে খাবে? আমি কি এসব কবরে নিয়ে যেতে পারব? মোহিনীর কথাই তো ঠিক। একটা মানুষ মানবিক না হলে সে কিসের মানুষ!

শাহবাজ খান মনে মনে ভাবেন, ফালতু কাজে কত টাকা খরচ করছি! কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশে মৌজ করছি। জুয়া খেলে দুই হাতে টাকা উড়াচ্ছি। অথচ আমাদের দেশের মানুষ না খেয়ে মরছে! আমার মা বাবা, আমার পরিবারের কেউ তো কখনো বলল না, মানবিক হও। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াও। মানুষকে সহযোগিতা কর। আমি কি বাবার মুখোমুখি দাঁড়াবো। তার কাছে জানতে চাইব, কেন তিনি আমাকে মানবিকতার শিক্ষা দেননি। তিনিই বা কেন দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করেন না।

শাহবাজ খানের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। গ্রামের মানুষ তাদের বাড়িতে সহায়তা চাইতে এলে বৈরম খান তাদেরকে দূরদূর করে তাড়িয়ে দিতেন। তার সামনে কেউ হাত পাতলে গালমন্দ করতেন। বলতেন, কাজ করে খেতে পারিস না? অন্যের কাছে টাকা চাইতে লজ্জা করে না? নিতান্তই সমস্যায় না পড়লে কোনো মানুষ কি আরেকজন মানুষের কাছে হাত পাতে? কি জানি। শাহবাজ খান কিছু সহায়তা দিতে গেলেও বাবার চোখ রাঙানি তাকে সইতে হতো।

শাহবাজ খান কখনো তার পরিবারে অর্থ কষ্ট দেখেননি। দারিদ্র শব্দটির সঙ্গে সে পরিচিত নয়। কখনো ক্ষুধার কষ্ট পায়নি। মুখ দিয়ে বলামাত্রই তার সামনে খাবার হাজির হয়ে গেছে। তার বাড়িতে খাবার যায়নি এমন কোনো পাঁচ তারকা হোটেল কিংবা নামিদামি কোনো রেস্তোরাঁ বাদ নেই। কেউ তার কানে দিতে পারলেই হোলো, ওমুক রেস্তোরাঁর খাবার মজাদার। ব্যাস, সঙ্গে সঙ্গে খাবার নিয়ে আসা হয়। তার মানে তিনি কি ভোজনবিলাসী? না। তাও নয়। সখ। সখের কারণেই তিনি এসব করেন। নিজে অল্প খান। বাকি খাবার খায় তার চারপাশের লোকজন। তাকে চাটুকাররা যখন বলে, স্যার খাবারটা খুব মজার! তিনি তখন হাসি ছড়িয়ে দিয়ে বলেন, তাই তাই? খা। বেশি করে খা। পেট ভরে খা।

লেখাপড়ার ব্যাপারে তেমন কোনো আগ্রহই ছিল শাহবাজ খানের। যদিও তার বাবা সখ করে ছেলেকে ঢাকা শহরের সবচেয়ে নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। অনেক কষ্টে এ লেভেল করেছে। তারপর লেখাপড়ার নাম করে আমেরিকায় গিয়ে ঘোরাঘুরি। বছর খানিক পর দেশে ফিরে এসে বাপের দেয়া টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। শুরুতে একজন আনাড়ি মাঝির যেমন হাল ধরতে কষ্ট হয়; তেমনি নতুন ব্যবসা করতে গেলে হোচট খেতে হয়। বুঝতে কিছুটা কষ্ট হয়। সময় লাগে। কারো একটু বেশি আবার কারো কম। হোচট খেতে খেতেই রপ্ত হয়ে যায়। সেই সময়টুকু শাহবাজ খানকেও দিতে হয়েছে। গার্মেন্টস সেক্টরে তিনি এখন বড় ব্যবসায়ী।

শাহবাজ খান আবার মোহিনীর কথা ভাবেন। মোহিনী কি আমার চেয়ে বেশি ধনী? সে কি অনেক টাকার মালিক? না না! সেটা হওয়ার কথা না। তাহলে সে এতো মানবিক হতে পারলে আমি কেন পারব না?

মানবিক হওয়ার চেষ্টা যে শাহবাজ খান করেননি তা নয়। করেছেন। কিন্তু অন্য মানুষকে টাকা দিতে গেলেই তার হাত কাঁপে। বুকের মধ্যে ধরফর করে। মনে হয়, অন্যকে বিলাতে গেলে তার টাকা ফুরিয়ে যাবে। তিনি বিপদে পড়বেন। তার বিপদে কেউ তাকে সাহায্য করবে না। এ কারণে তিনি কাউকে সাহায্য করতে পারেন না।

সাহায্য সহযোগিতার বিষয়টি অভ্যাসের ব্যাপারও। চিরায়ত নিয়ম বা পারিবারিক ঐতিহ্য বলেও একটা কথা চালু আছে। পরিবারে ছোটবেলা থেকে দান-খয়রাত সংস্কৃতি চালু থাকলে নিশ্চয়ই তা রপ্ত করা সম্ভব হতো। এ ধরনের সংস্কৃতি শাহবাজ খানের পরিবারে কখনোই ছিল না। কাজেই অভ্যাসে পরিণত হওয়া কিংবা রপ্ত হওয়ার বিষয়টি একেবারেই নেই।

শাহবাজ খান মনস্থির করেছেন যে, আজ তিনি তার বাবার মুখোমুখি হবেন। তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন। তার সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। কেন তার বাবা মানবিক নয় তা স্পষ্ট করে শুনবেন।

অতঃপর শাহবাজ খান তার বৈরম খানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তার কাছে জানতে চান, বাবা তুমি কেন মানবিক নও? কেন তুমি দান-খয়রাতকে নিরুৎসাহিত করো? কেন তুমি দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করো না? আমাকে খোলাখুলি বলবে?

বৈরম খান ছেলের কথায় রেগে গেলেন। এমনিতেই তিনি রকচটা মানুষ। তাকে কেউ প্রশ্ন করবে এটা তিনি কিছুতেই মানতে পারেন না। তিনি সবাইকে নাজেহাল করবেন। তিনি সবাইকে বকাবাজি করবেন। কিন্তু তাকে কোনো কিছুর জন্য জবাবদিহি করতে হবে না। তিনি জবাবদিহির উর্ধ্বে। আসলে আচার আচরণে তিনি রাজা-বাদশাদের মতো। কিন্তু স্বভাব-চরিত্র ফকিরের মতো। যক্ষের ধনের মতো তিনি টাকা-পয়সা আকড়ে রাখেন। একটা কানাকড়িও যাতে বাজে খরচ না হয় সেদিকে তার কড়া দৃষ্টি। অথচ নিরাপত্তার কাজে তিনি বিপুল খরচ করেন।

বৈরম খানের ধারনা, টাকাপয়সার লোভে তাকে কেউ মেরে ফেলতে পারে। সেজন্য তিনি সব সময় নিরাপত্তা বেস্টনীর মধ্যে থাকেন। বডিগার্ড নিয়ে চলেন। ছেলেকেও সেভাবেই তৈরি করেছেন। ছেলেকে এমন ধারনা দিয়েছেন যে, তারা রাজা-বাদশা। বাকিরা সবাই সাধারণ। সাধারণের কাছ থেকে তাদের দূরে থাকতে হবে। তাদেরকে আলাদা ভাবতে হবে। সাধারণের কথা ভেবে নিজেদের সুখ-সাচ্ছন্দ্য বিনষ্ট করা যাবে না। অথচ সেই ছেলেই কি না আজ বৈরম খানের কাছে জবাব চাইছে? এতোবড় দুঃসাহস তার কি করে হলো?

বৈরম খান রেগে আগুন। তিনি রাগলে কোনো কিছুই তার মাথায় থাকে না। চেঙ্গিশ খানের রূপ ধারণ করেন। তখন তিনি মানুষ খুনের চেয়েও বড় কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। ছেলে না হয়ে অন্য কেউ হলে হয়তো আজ মহাপ্রলয় ঘটে যেত। মহাপ্রলয়ের আগে যে রকম হয় সে রকমই একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে বৈরম খানের বাড়িতে। বৈরম খানের রুদ্র মূর্তি দেখে শাহবাজ খান আত্মগোপন করেছে। বসার ঘরে ঘূর্ণিঝড় কুন্ডুলি পাচাচ্ছে দেখে বৈরম খানের স্ত্রী পারভীন বেগম শোবার ঘরে গিয়ে খিল আটকে বসে আছেন। তিনি মনে মনে ছেলেকে বকাবাজি করছেন। তিনি সব সময় ছেলেকে সতর্ক করতেন এই বলে যে, বাপকে কখনো রাগাবি না। তাহলে কিন্তু মহাবিপদে পড়বি। শাহবাজ খান নিজেও তা জানে। ছোটবেলা থেকে দেখেও আসছে, বৈরম খান রাগতে পারেন এমন কোনো কাজ কেউ করে না। করতে পারে না।

শাহবাজ খান বন্ধুর অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি তার বাবার মুখোমুখি হন। এরফলে কী বিপদেই না পড়েছেন তিনি! সারা বাড়িতে তুলকালাম কাণ্ড শুরু হয়েছে। যে-ই বৈরম খানের সামনে পড়ছে তাকেই ভয়ানক গালাগাল শুনতে হচ্ছে। এরমধ্যেই বাড়ির চাকর-বাকর দু’তিন জনের চাকরি চলে গেছে। কারণ তারা শাহবাজ খানকে খুঁজে বের করতে পারেননি। আত্মগোপনের সময় শাহবাজ খানও তাদেরকে হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন, কেউ তার খোঁজ দিলে চাকরি যাবে। ফলে বাপ-ছেলের ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়ে চাকর-বাকরদের চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা!

এখন আর কেউ বৈরম খানের সামনে পড়ছে না। সামনে পড়লেই কোনো না কোনো বিপদে পড়তে হবে। সেই আশঙ্কায় সবাই দূরে দূরে থাকে। কাউকে না পেয়ে বৈরম খানের মেজাজ আরো বিগড়ে যায়। তিনি পাগলের মতো বাড়ির মধ্যে ছোটাছুটি করেন আর ছেলেকে গালমন্দ করেন। জেদে নিজের চুল নিজে ছেড়েন। চিৎকার চেঁচামেচির এক পর্যায়ে তার বুকে ব্যথা ওঠে। বুকে হাত দিয়ে তিনি বসে পড়েন। তারপর অসহায়ের মতো বললেন, কে আছিস! আমাকে ধর!

বাড়ির লোকজন ছোটাছুটি করে বৈরম খানকে ধরার জন্য এগিয়ে যায়।

শাহবাজ খান বেশ কিছুদিন তার বাবার বাড়িতে যায়নি। বৈরম খানের সঙ্গে কথা বলেনি। বলতে গেলে বাপ-ছেলের মুখ দেখাদেখিই বন্ধ। বৈরম খান বেশ কয়েকবার শাহবাজ খানকে ডেকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সে তার বাবার ডাকে সাড়া দেয়নি। এ নিয়ে বাবা আর ছেলের মধ্যে বেশ কিছুদিন মান-অভিমান চলে। এক পর্যায়ে বৈরম খানই ছেলের মান ভাঙান। তবে তাদের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে ঝুট-ঝামেলা লেগেই আছে। আগে বাবা যা বলতেন তা অক্ষরে অক্ষরে ছেলে পালন করত। এখন শাহবাজ খান নিজের বুদ্ধিতে কিংবা তার আশপাশের লোকজনের পরামর্শে কাজ করেন। বৈরম খান কোনো নির্দেশ দিলে তা উল্টে যায় শাহবাজ খানের নির্দেশে। এ এক আজব খেলা শুরু হয়েছে বৈরম খানের পরিবারে। বাপ আর ছেলের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
সাধারণত রাজ-পরিবারে এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা যায়। ক্ষমতার মোহে বাপ-ছেলে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু একটা সাধারণ পরিবারেও যে ক্ষমতা দেখানোর প্রবনতা প্রবল হয়ে উঠছে তা বৈরম খানের পরিবার না দেখলে উপলব্ধি করা কঠিন! বাপ-ছেলের দ্বন্দ্বের কারণে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিপদে পড়েছে। তারা কার নির্দেশ মানবে? কার মন রক্ষা করে চলবে তা নিয়ে রীতিমতো সংকটে পড়ে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কি তা নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে যায় তারা।

 

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১২

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১১

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৮

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

Header Ad

বিমানবন্দরেই মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় সংসদের অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেও ২০০৭ সালের ৭ মে দেশে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে এলে বিমানবন্দরেই মেরে ফেলা হবে, এমন হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার (৭ মে) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ২০০৭ সালের ৭ মে সব বাধা উপেক্ষা করে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে অনির্ধারিত এই আলোচনার সূত্রপাত করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান। বহুল আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে উত্থাপিত এ আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য আহমদ হোসেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকের দিনটা (৭ মে) আমার জীবনের অনন্য দিন, কারণ আমি সেদিন দেশে ফিরে এসেছিলাম শত বাধা অতিক্রম করে। আমাকে সেই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক উপদেষ্টাও ফোনে বলেছিল আপনি আসবেন না, আপনি বাইরে থাকেন, যা যা লাগে করব। আবার কেউ কেউ ধমকও দিয়েছিল। এ কথা বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে ফিরলে ওই এয়ারপোর্টেই মেরে ফেলে দেবে। আমি বলেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ, আমি নিজের দেশের মাটিতেই তো কিন্তু আমি আসব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল এয়ারলাইন্সকে নিষেধ করা হয়েছিল, আমাকে বোর্ডিং পাস যেন না দেওয়া হয়। আমেরিকায় তিন ঘণ্টা এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়া করে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে লন্ডন পর্যন্ত আসি। লন্ডনে যেদিন আমি বিমানে উঠতে যাব উঠতে দেওয়া হয়নি। সে দিন আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যেভাবেই হোক আমি দেশে ফিরব। এমনকি আমি যখন এয়ারপোর্টে রওনা হই, তখন অনেকে আমাকে ফোনে বলেছে আপনি আসবেন না, আসলে আপনাকে মেরে ফেলে দেবে। আমি পরোয়া করিনি। তবে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও কর্মী ভাইদের প্রতি।

শেখ হাসিনা বলেন, তখন বলা হয়েছিল যে কেউ যেন এয়ারপোর্ট না যায়। এমনকি আমার দলের ভেতর থেকেও। তখন দলের যিনি সেক্রেটারি ছিলেন তিনি সবাইকে বলে দিয়েছিলেন এয়ারপোর্টে গেলে তাকে বহিষ্কার করা হবে। আর আমাদের নেতা-কর্মী কেউ রাস্তায় থাকতে পারবে না। আমি শুধু একটাই মেসেজ দিয়েছিলাম সবাই থাকবে। আমরা গেরিলা যুদ্ধ করেছি, সবাই থাকবা, তবে ঘাসের সঙ্গে থাকবা, আমি বলেছিলাম আমার প্লেনটা না নামা পর্যন্ত, আমি দরজা খুলে না বের হওয়া পর্যন্ত তোমরা বের হবে না।

তিনি বলেন, আমাকে বলা হয়েছিল, আমি গাড়িতে উঠলে আমাকে একটা অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি ড্রাইভারকে বলেছিলাম যেদিকে মানুষ যাচ্ছে সেদিকে যাবা, ফ্লাইওভারের উপরে উঠবা না। হাজার হাজার মানুষ তখন রাস্তায়। আমার দলের কিছু লোকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শুধু সংবর্ধনা নয় আমাকে নিরাপত্তাও দিয়েছে নেতা-কর্মীরা।

তিনি আরও বলেন, সেই সময় কালে ভদ্রে দুই এক জন আমার কাছে আসতে পারত। সাবিনা ইয়াসমিন অসুস্থ, আমি গেরিলা কায়দায় বেরিয়ে গিয়েছিলাম। পুলিশের চোখ এড়িয়ে আমি হাসপাতালে যাই। সেদিন সেখানে আমি খুব কড়া কথা বলি, আমি বলেছিলাম সে সময় দেশ চালাচ্ছে কে? পরের দিন সকালে পুলিশ এসে হাজির। আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে সংসদ ভবনের এক পরিত্যক্ত নোংরা ভবনে। সেখানেই আমাকে বন্দি করে রাখা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু এই দিন নয়, ৮৩ সালেও এরশাদ সাহেব আমাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়েছিল ৩০ হেয়ার রোডে লাল দালানে। সেখান থেকে ডিজিএফআই অফিসে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে। এরশাদ সাহেব আমাকে আরও কয়েকবার গ্রেপ্তার করে। আমি মতিয়া আপা, সাহারা আপা (এখন নেই) আমাদের তিনজনকে এক সঙ্গে নিয়ে কন্ট্রোল রুমে সারা রাত বসিয়ে রাখে। শুধু তাই নয়, বার বার গ্রেপ্তার সরাসরি গুলি বোমা গ্রেনেড সব কিছু অতিক্রম করে আজকে এখানে এসে জনগণের সেবা করতে পারছি। এখন আমি শুধু দাঁড়িয়েছি, বাংলাদেশের জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানাতে, দলের নেতা-কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানাতে।

হাত-পা বেঁধে স্বামীর গোপনাঙ্গে সিগারেটের ছ্যাঁকা! সিসিটিভি ফুটেজে পর্দাফাঁস স্ত্রীর

স্বামীকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত

হাত-পা বেঁধে স্বামীর গোপনাঙ্গে সিগারেটের ছ্যাঁকা! শুধু তাই নয়। স্বামীর গোপনাঙ্গে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টাও করেন স্ত্রী।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের বিজনোরে। যদিও অভিযুক্ত মহিলার অভিযোগ, স্বামী তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্থা করেন। তিনি প্রতিবাদ করলে স্বামী তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন। যার জেরে নিজের প্রাণ বাঁচাতেই তিনি এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে পুলিসের কাছে দাবি করেছেন অভিযুক্ত স্ত্রী। খবর: জি ২৪ ঘণ্টা

তবে পুলিশ এই ঘটনায় নির্যাতনের অভিযোগে ২৮ বছরের ওই স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে। পুরো ঘটনাটি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। নির্যাতিত স্বামী বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তার অভিযোগ, অভিযুক্ত মেহের জাহান ২৯ এপ্রিল দুধে নেশার সামগ্রী মিশিয়ে স্বামীকে সেই দুধ পান করতে বাধ্য করেন। এরপর স্বামী বেহুঁশ হয়ে পড়লে স্বামীর হাত-পা বেঁধে তার সারা শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়। শুধু তাই নয় সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে তার সারা শরীর পুড়িয়ে দেয়। এমনকি গোপনাঙ্গেও ছ্যাঁকা দেয়। গোপনাঙ্গ কেটে ফেলার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ।

জানা গেছে, গত নভেম্বরের ১৭ তারিখ সেওহারা থানা এলাকার সাফিয়াবাদ গ্রামের বাসিন্দা মেহের জাহানকে বিয়ে করেন মান্নান। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি। স্বামীর অভিযোগ, বিয়ের কয়েকদিন পর তিনি দেখতে পান যে তার স্ত্রী মদ্যপ এবং ধূমপান করেন। তিনি বাধা দিলে স্ত্রী তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন।

পাল্টা মেহের জাহানেরও অভিযোগ, স্বামী মান্নান তার উপরে নির্যাতন চালান বিবাদের সময়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত নতুন স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত জাতীয় পরিচয়পত্র হস্তান্তর করছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত

‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত নতুন স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার (৭ মে) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে এ পরিচয়পত্র হস্তান্তরের মাধ্যমে বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি।

এদিন দুপুরে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত জাতীয় পরিচয়পত্রটি হস্তান্তর করেন।

এসময় সচিব কমিশনের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। পর্যায়ক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত নতুন স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি।

‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, এটি মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের অনন্য স্বীকৃতি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান জাতি সবসময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।

মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের কল্যাণে সম্মানী ভাতা বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে এবং যেকোনো প্রয়োজনে সরকার সবসময় তাদের পাশে থাকবে।

এ সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিবগণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ সংবাদ

বিমানবন্দরেই মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী
হাত-পা বেঁধে স্বামীর গোপনাঙ্গে সিগারেটের ছ্যাঁকা! সিসিটিভি ফুটেজে পর্দাফাঁস স্ত্রীর
বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত নতুন স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ির মানে ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’: দেবপ্রিয়
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে বিমান হামলার সাইরেন
বন্ধুদের আড্ডায় রাসেল ভাইপারের ছোবল, প্রাণ গেল রাবি শিক্ষার্থীর
সিক্স-জি নেটওয়ার্ক নিয়ে হাজির জাপান, গতি ফাইভ-জি’র চেয়ে ২০ গুণ
হ্যাটট্রিক জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ
টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী
তৃতীয় বিয়ের আলোচনার মধ্যে ‘তুফান’ নিয়ে হাজির শাকিব খান
ডেঙ্গুতে আমার মা মারা গেছেন, আর কেউ যেন মারা না যায়: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সিনেমায় আসছেন সোহেল চৌধুরী–দিতির কন্যা লামিয়া
৬ মাসের মধ্যে শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল পুরোপুরি চালু : মন্ত্রী
টানা পঞ্চমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন পুতিন
ডামি ও প্রতারণার উপজেলা নির্বাচনের সঙ্গে জনগণ নেই : রিজভী
কারওয়ান বাজারে হঠাৎ প্রাইভেটকারে আগুন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে লাগবে ডোপ টেস্ট
ম্যাডোনার কনসার্টে হাজির ১৬ লাখ দর্শক
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ
এ বছর পুলিৎজার পুরস্কার পেল যেসব সংবাদমাধ্যম