রবিবার, ১১ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

রোজাদারের বর্জনীয় ও করণীয়

হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে, রমজান মাসে যারা সিয়াম পালন করেন তাদের দুটি শ্রেণি রয়েছে। এক শ্রেণির পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে। অন্য শ্রেণি ক্ষুধা-পিপাসায় কষ্ট করা ছাড়া কিছুই লাভ হবে না। প্রথম শ্রেণির রোজাদারদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং আল্লাহর নিকট সাওয়াব অর্জনের খাঁটি নিয়তে রমজানের সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে।” (বুখারি, আস-সহিহ ১/২২, ৬/৬৭২; মুসলিম, আস-সহিহ ১/৫২৩)

দ্বিতীয় শ্রেণির রোজাদারদের বিষয়ে তিনি বলেন: “অনেক সিয়াম পালনকারী আছে যার সিয়াম থেকে শুধু ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া আর কোন লাভ হয় না। এবং অনেক কিয়ামকারী বা তারাবিহ-তাহাজ্জুদ পালনকারী আছে যাদের কিয়াম-তারাবিহ থেকে শুধু রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কোনোই লাভ হয় না।” (ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ১/৫৩৯; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/২৬২)
এরূপ রোজাদারদের প্রতি বদদোয়া করে তাদের দুর্ভাগ্যের কথা জানিয়ে রাসূলুল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল, কিন্তু এই মাসে তাকে ক্ষমা করা হলো না সেই ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে চির বিতাড়িত।” (২. হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৪/১৭০; ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ ২/১৪০-১৪১; আলবানী সহীহুত তারগীর ১/২৬২।)

আমরা যারা রমজানের সিয়াম পালন করতে যাচ্ছি তাদের একটু ভাবতে হবে, আমার কোন দলে পড়ব। আর তা জানতে হলে রোজা বা সিয়ামের অর্থ বুঝতে হবে। রাসূলুল্লাহ বলেন:
“পানাহার বর্জনের নাম সিয়াম নয়। সিয়াম হলো অনর্থক ও অশ্লীল কথা-কাজ বর্জন করা।” (৩. ইবনু হিব্বান, আস-সাহীহ ৮/২৫৫: হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৫৯৫; আলবানী, সহীহহুত তারগীব ১/২৬১)।

বর্জনীয়:
তাহলে চিন্তাহীন, অনুধাবনহীন, সৎকর্মহীন পানাহর বর্জন “উপবাস” বলে গণ্য হতে পারে তবে ইসলামি “সিয়াম” বলে গণ্য হবে না। হারাম বা মাকরূহ কাজেকর্মে রত থেকে হালাল খাদ্য ও পানীয় থেকে নিজের বিরত রাখার নাম সিয়াম নয়। সিয়াম অর্থ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সকল হারাম, মাকরূহ ও পাপ বর্জন করার সঙ্গে সঙ্গে হালাল খাদ্য, পানীয় ও সম্ভোগ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। এভাবে হৃদয়ে সার্বক্ষণিক আল্লাহ সচেতনতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে লক্ষ্য রেখে শত প্রলোভন ও আবেগ দমন করে সততা ও নিষ্ঠার পথে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য সিয়াম। যদি আপনি কঠিন ক্ষুধা বা পিপাসায় কাতর হয়েও আল্লাহর ভয়ে ও তার সন্তুষ্টির আশায় নিজেকে খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত রাখেন, অথচ সামান্য রাগের জন্য গালি, ঝগড়া ইত্যাদি হারাম কাজে লিপ্ত হন, মিথ্যা অহংবোধকে সমুন্নত করতে পরনিন্দা, গিবত, চোগলখুরী ইত্যাদির ভয়ংকর হারামে লিপ্ত হন, সামান্য লোভের জন্য মিথ্যা, ফাঁকি, ঘুষ ও অন্যান্য যাবতীয় হারাম নির্বিচারে ভক্ষণ করেন, তাহলে আপনি নিশ্চিত জানুন যে, আপনি সিয়ামের নামে আত্মপ্রবঞ্চনার মধ্যে লিপ্ত আছেন। ধার্মিকতা ও ধর্ম পালনের মিথ্যা অনুভূতি ছাড়া আপনার কিছুই লাভ হচ্ছে না।

রাসলুল্লাহ বলেছেন, “যে ব্যক্তি পাপ, মিথ্যা বা অন্যায় কথা, অন্যায় কর্ম, ক্রোধ, মূর্খতাসুলভ ও অজ্ঞতামূলক কর্ম ত্যাগ করতে না পারবে, তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।” (৪. বুখারি, আস-সহীহ ২/৬৭৩, ৫/২২৫১)।

আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, তোমরা রোজার সময় দিবসে পানাহার কর না। এরপরের আয়াতেই আল্লাহ বললেই, তোমরা অপরের সম্পদ অবৈধভাবে আহার কর না। এখন আপনি প্রথম আয়াতটি মেনে দিবসে আপনার ঘরের খাবার আহার করলেন না, কিন্তু পরের আয়াতটি মানলেন না, সুদ, জুলুম, চাঁদাবাজি, যৌতুক, গিবত, মিথ্যা মামলা, জবর-দখল, সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখল ইত্যাদি নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে অন্যের সম্পদ আহার করলেন, তাহলে আপনি কেমন রোজাদার?

ইফতারের সময় ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। সবরত ও ঠান্ডা তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়াই উত্তম। পরিমিত আহার করতে হবে। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে রোজার মর্ম উপলদ্ধি করা যাবে না। রোজা রেখে ক্ষুধার্ত ব্যক্তির কষ্ট অনুভব করা যাবে না।

করনীয়:
সিয়াম শুধু বর্জনের নাম নয়। সকল হারাম ও মাকরূহ বর্জনের সঙ্গে সঙ্গে সকল ফরজ-ওয়াজিব ও যথাসম্ভব বেশি নফল মুস্তাহাব কর্র্ম করাই সিয়াম। বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় যে, রমজান মাসে নফল-ফরজ সকল ইবাদতের সাওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এজন্য সকল প্রকার ইবাদতের বেশি বেশি আদায় করা দরকার। সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রমজান মাসে উমরা আদায় করা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে হজ করার সমতুল্য। যদি কেউ রোজা অবস্থায় দরিদ্রকে খাবার দেয়, অসুস্থ মানুষকে দেখতে যায় এবং জানাজায় শরিক হয় তবে সে ব্যক্তিকে আল্লাহ জান্নাত দান করবেন। এ ছাড়া হাদিসে রমজানে বেশি বেশি তাসবিহ, তাহলিল, দুআ ও ইসতিগফারের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, রোজা অবস্থার দুআ ও ইফতারের সময়ের দুআ আল্লাহ কবুল করেন।

বিশেষভাবে দু প্রকারের ইবাদত রমজানে বেশি করে পালন করতে হাদিসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, দান। সাদকা বা দান আল্লাহ তাআলার প্রিয়তম ইবাদত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, সাদকার কারণে মুমিন অগণিত সওয়াব লাভ ছাড়াও অতিরিক্ত দুটি পুরস্কার লাভ করেন: প্রথমত দানের কারণে গোনাহ ক্ষমা করা হয় এবং দ্বিতীয়ত দানের কারণে আল্লাহর বালা-মুসিবত দূর হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, দুজন মানুষের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া, ন্যায় কর্মে নির্দেশ দেওয়া, অন্যায় থেকে নিষেধ করা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক দ্রব্য বা বস্তু সরিয়ে দেওয়া, বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করা বা যে কোনোভাবে মানুষের উপকার করাই আল্লাহর নিকট সাদকা হিসাবে গণ্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা বেশি বেশি দান করতে ভালোবাসতেন। আর রমজান মাসে তার দান হতো সীমাহীন। কোনো বাঞ্ছাকারীকে বা প্রার্থীকে তিনি বিমুখ করতেন না।

রমজান এলেই দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ। এদেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ী মুসলমান। অধিকাংশ ব্যবসায়ী রোজা রাখেন ও দান করেন। কিন্তু আমাদের দান হালাল উপার্জন থেকে হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। গুদামজাত করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা বা স্বাভাবিকের বাইরে অতিরিক্ত দাম গ্রহণের মাধ্যমে ক্রেতাদের জুলুম করা নিষিদ্ধ। হারাম বা নিষিদ্ধভাবে লক্ষ টাকা আয় করে থেকে হাজার টাকা ব্যয় করার চেয়ে হালাল পদ্ধতিতে হাজার টাকা আয় করে তা থেকে দু-এক টাকা ব্যয় করা অনেক বেশি সাওয়াব ও বরকতের কাজ। এ ছাড়া অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে। আমরা জানি, মানুষের কল্যাণে ও সহমর্মিতায় যা কিছু করা হোক সবই দান। যদি কোনো সৎ ব্যবসায়ী যদি রমজানে ক্রেতা সাধারণের সুবিধার্থে তার প্রতিটি পণ্যে এক টাকা কম রাখেন বা নায্যমূল্যে তা বিক্রয় করেন তাও আল্লাহর নিকট অত্যন্ত বড় সাদকা হিসেবে গণ্য হবে।

রমজানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো কুরআন তিলওয়াত। বিগত খুতবায় আমরা এ বিষয়ে কিছু আলোচনা করেছি। রমজানে দুভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে: প্রথমত কুরআন কারীম দেখে দেখে দিবসে ও রাতে তিলাওয়াত করতে হবে। সম্ভব হলে অর্থসহ অন্তত একখতম কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। যারা তিলাওয়াত করতে পারেন না তারা আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানে তিলাওয়াত শিখতে শুরু করুন। অবসর সময়ে তিলাওয়াতের বা অর্থসহ তিলাওয়াতের ক্যাসেট শুনুন। কুরআন তিলাওয়াতে যেমন সাওয়াব, তা শ্রবণেও তেমনি সওয়াব।

কুরআনের দ্বিতীয় ইবাদত হলো কিয়ামুল্লাইল। সালাতুল ইশার পর থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যেকোনো সময়ে নফল সালাত আদায় করাকে কিয়ামুল্লাইল, সালাতুল্লাইাল বা রাতের সালাত বলা হয়। তাহাজ্জুদও কিয়ামুল্লাইল। একটু ঘুমিয়ে উঠে কিয়ামুল্লাহইল আদায় করলে তাকে তাহাজ্জুদ বলা হয়। সারা বৎসরই কিয়ামুল্লাইল করা দরকার।

রমজানের কিয়ামের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি খাঁটি ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজানে কিয়ামুল্লাইল আদায় করবে তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে।” (বুখারি, আস-সহীহ ১/২২, ২/৭০৭; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৫২৩)

রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান ও গাইর রমজান সর্বদা প্রতি রাতে মধ্য রাত থেকে শেষ রাত পর্যন্ত ৪/৫ ঘণ্টা ধরে কিয়ামুল্লাইল আদায় করতেন। উমার (রা)- এর সময়ে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরা কুরআনের হাফিজ না হওয়াতে হাফিযদের পেছনে কিয়াম করতে চেষ্টা করতেন। এজন্য মসজিদে নববীতে সালাতুল ইশার পর ছোট ছোট জামাত শুরু হতো। এ দেখে উমার (রা) উবাহ ইবনু কাব (রা) কে বলেন, মানুষেরা দিবসে রোজা রাখে, কিন্তু তারা কুরআনের হাফেজ না হওয়াতে রাতের কিয়াম ভালোভাবে আদায় করতে পারে না। এজন্য আপনি তাদের নিয়ে সালাতুল ইশার পরে জামাতে কিয়াম বা তারাবিহ আদায় করেন। এ ছাড়া তিনি সুলাইমান ইবনু আবী হাসমাকে নির্দেশ দেন মহিলাদের নিয়ে পৃথক তারাবিহের জামাত করতে। উসমান (রা) ও আলী (রা) এর সময়েও এভাবে জামাতে তারাবিহ আদায় করা হতো এবং মহিলাদের জন্য পৃথক তারাবিহের জামাত কায়েম করা হতো। (বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা, ২/৪৯৩)

উমরা (রা) সময়ে ৮ ও ২০ রাকাত তারাবিহ পড়া হতো বলে সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় যে, সাহাবি-তাবিয়িদের সময়ে ইশার পর থেকে মধ্য রাত বা শেষ রাত পর্যন্ত তারাবিহের জামাত চলত এবং তারা প্রত্যেক রাকাতে ১/২ পারা কুরআন পাঠ করতেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, প্রথম দিকে ৮ রাকাত তারাবিহ আদায় করা হতো। প্রত্যেক রাকাতে তারা ১/২ পারা কুরআন পাঠ করতেন এবং ইশার পর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত প্রায় ৫/৬ ঘণ্টা তারা এভাবে সালাত আদায় করতেন। প্রতি রাকাতে আধা ঘণ্টা বা তার বেশি দাঁড়াতে কষ্ট বেশি। এজন্য পরে তারা এরূপ ৫/৬ ঘণ্টা ধরে ২০ রাকাত পাঠ করতেন। রাকআতের সংখ্যা বাড়াতে দাঁড়ানো কষ্ট কিছুটা কম হতো।

সাহাবি-তাবিয়িরা প্রতি তিন দিন বা দশ দিনে তারাবিহের জামাতে কুরআন খতম করেতন। আর আমরা পুরো রমজানে এক খতম করতেও কষ্ট পাই। তারা ৫/৬ ঘণ্টা ধরে তারাবিহ পড়তেন। আমরা একঘণ্টাও দাঁড়াতে চাই না। হাফেজ সাহেব একটু সহিহ তারতিলের সঙ্গে পড়লে আমরা রাগ করি। কুরআনের সঙ্গে এর চেয়ে বেশি বেয়াদবি আর কী হতে পারে। কুরআন শ্রবণের আগ্রহ নিয়ে ইমামের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত তারাবিহ আদায় করুন। ইমামের সঙ্গে সঙ্গেই নিয়ত করুন এবং পুরো কুরআন মহব্বতের সঙ্গে শুনুন। সময় তো চলেই যাবে। হয়ত এভাবে কুরআন শোনার সময় আর পাব না। আল্লাহ আমাদের সিয়াম ও কিয়াম কবুল করুন। আমীন।

পিতা-মাতার দ্বায়িত্ব:
পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো, সাত বছর থেকে ছেলেমেয়েদের নামাজ, রোজা,তারাবিহ ইত্যাদিতে অভ্যস্থ করা। তাদের বয়স দশ বৎসর হলে এ বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করা ফরজ। নিজের নামাজ-রোজা যেমন ফরজ, ছেলেমেয়েদের নামাজ-রোজা আদায় করানোও তেমনি ফরয। ছেলেমেয়েরো নামাজ পড়লে, রোজা রাখলে, তারাবিহতে শরিক হলে তারা যেমন সাওয়াব বরকত লাভ করবে, তেমনি তাদের পিতামাতাও সাওয়াব ও বরকত লাভ করবেন। এছাড়া ছেলেমেয়েরা আজীবন যত নামাজ, রোজা, তারাবিহ, কুরআন, যিক্র, দান ও অন্যান্য ইবাদত করবে সকল ইবাদতের সমপরিমাণ সাওয়াব পিতামাতা লাভ করবেন। পক্ষান্তরে পিতামাতার অবহেলার কারণে যদি ছেলেমেয়েরা বেনামাজি বা বে-রোজাদার হয় তবে তাদের গোনাহের সমপরিমাণ গোনাহ তারা লাভ করবেন। ছেলেমেয়েরা আমাদের হৃদায়ের শান্তি। আসুন রমজানের বরকতে তাদের শরিক করি। তাদের রোজা রাখতে উৎসাহিত করি। ৭ বৎসর বা তার বেশি বয়সের ছেলেদেরকে তারাবিহের জামাতে সঙ্গে করে নিয়ে যাই। তাদের নেককার রূপে গড়ে তুলি। তাহলে তারা দুনিয়াতে যেমন আমাদের হৃদয়ের শান্তি হবে, জান্নাতেও তেমনি আমাদের হৃদয়ের শান্তি হবে, জান্নাতেও তেমনি আমাদের হৃদয়ের শান্তি হবে। আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।

ড. মাহবুবা রহমান: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা।

এসএন

Header Ad
Header Ad

আ.লীগের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জনগণের কল্যাণে ব্যয়ের দাবি নুরুল হক নুরের

ছবি: সংগৃহীত

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে জনগণের যে সম্পদ লুটপাট করেছে, তা বাজেয়াপ্ত করে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত। তিনি দাবি করেন, দলটি এখন আর শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং এটি ‘সীমান্তপারের ষড়যন্ত্রকারী শক্তি’ হিসেবে কাজ করছে।

রবিবার (১১ মে) দুপুরে পুরানা পল্টনে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

নুর আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী’ দল আখ্যা দিয়ে বলেন, “এ দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা না করলে দেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে।” তিনি অভিযোগ করেন, “বিরোধী দলসমূহ একটি সমাবেশ করার পর প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, অথচ আওয়ামী লীগের মাত্র ৩২ জন নেতাকর্মীও গ্রেফতার হয়নি।”

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলে সেটি দেশের জন্য ভবিষ্যতে বড় সংকট হয়ে দাঁড়াবে। তিনি অভিযোগ করেন, দলটি গত নয় মাস ধরে দেশবিরোধী প্রোপাগান্ডা চালিয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করেছে।

নুর আরও বলেন, “আমরাও যমুনা ঘেরাও কর্মসূচি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে প্রধান উপদেষ্টা তরুণদের বক্তব্য শুনে দেশের ভবিষ্যতের গতি নির্ধারণ করতে চান। সে বিশ্বাস থেকেই আমরা কর্মসূচি স্থগিত করেছি।”

সরকারের অভ্যন্তরে ‘আপসকামী উপদেষ্টা’ থাকার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্য বিদেশি দূতাবাসে গিয়ে গোপন বৈঠক করছেন। এরপরই করিডর দেওয়ার ঘোষণা আসে এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।”

সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নুর। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতির পালিয়ে যাওয়ার দায় শুধু একজন জেলা পুলিশ কর্মকর্তার নয়, এর সঙ্গে ইমিগ্রেশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।”

নুর সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “এই সরকার আমাদের রক্ত-ঘাম ও জেল-জুলুমের বিনিময়ে গঠিত হয়েছে। আবারও যদি আমাদের এই সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নামতে হয়, সেটি হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”

সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

লুঙ্গি-গেঞ্জি-মাস্ক পরে ছদ্মবেশে বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি: সংগৃহীত

এক অভূতপূর্ব নাটকীয়তায় দেশ ছেড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই, লুঙ্গি, গেঞ্জি ও মাস্ক পরে গভীর রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছান তিনি। একে ‘নিরাপদ দেশত্যাগের গোপন অভিযান’ বললেও অত্যুক্তি হবে না। রাষ্ট্রপতির মতো একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির এমন ছদ্মবেশে দেশত্যাগের ঘটনা জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

বুধবার রাত প্রায় ১২টা ৪৫ মিনিট। আবদুল হামিদের ব্যক্তিগত গাড়ি পৌঁছায় শাহজালালের ভিআইপি টার্মিনালে। সেখানে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি থামিয়ে আরোহীদের পরিচয় জানতে চান। চালক জানান, গাড়িতে রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবার। তখনও স্পষ্ট করা হয়নি, তিনি নিজেই গাড়িতে রয়েছেন। কিছুক্ষণ পর এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এসে তার পরিচয় নিশ্চিত করেন এবং জানান, তার বহির্গমনের অনুমতি রয়েছে।

আবদুল হামিদ প্রথমে লুঙ্গি, গেঞ্জি এবং মাস্ক পরে ছিলেন, যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কক্ষের ভেতর নিয়ে যাওয়ার আগেই গাড়ির মধ্যেই তিনি ছদ্মবেশ থেকে বেরিয়ে সাধারণ প্যান্ট-শার্ট পরে নেন। এমন গোপনীয়তা সাধারণত কোনো গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা মিশন বা নিরাপত্তা-হুমকির সময় দেখা যায়, অথচ এবার তা ঘটল সাবেক একজন রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে।

সব ধরনের নিরাপত্তা ও ইমিগ্রেশন প্রটোকল এড়িয়ে, কোনও রকম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই আবদুল হামিদকে বিমানে তুলে দেওয়া হয় থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে (TG340)। বিমানটির অবস্থান পরিবর্তন করে ভিআইপি টার্মিনালের কাছে এনে রাখা হয় যাতে তাকে সরাসরি বিমানে নেওয়া যায়। তিনি বিমানে ওঠার পর কিছু সময় পর তার ছেলে রিয়াদ আহমেদ এবং শ্যালক ডা. এনএম নওশাদ খানও বিমানে ওঠেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি: সংগৃহীত

তিনি দেশ ত্যাগ করেন কূটনৈতিক মর্যাদার ‘লাল পাসপোর্ট’ (নম্বর D00010015) ব্যবহার করে, যেটি তার রাষ্ট্রপতি থাকার সময় ২০২০ সালে ইস্যু করা হয়েছিল। এই পাসপোর্টটির মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত। উল্লেখযোগ্যভাবে, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হলেও আবদুল হামিদের পাসপোর্ট বাতিল হয়নি, যা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিমানবন্দরের একাধিক নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও কেউ কোনো বাধা দেননি। পুলিশ, এভসেক, সিভিল এভিয়েশন কিংবা ইমিগ্রেশন—সব পক্ষই ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এমনকি ইমিগ্রেশনের নিয়ম অনুযায়ী ব্যক্তিকে সরাসরি উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়, কিন্তু আবদুল হামিদের ক্ষেত্রে সেটাও অনুসরণ করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে ইমিগ্রেশন অফিসারদের সামনে হাজির করা হয়নি—কারণ অনেকেই ছিলেন ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানে।

তথ্য অনুযায়ী, আবদুল হামিদের টিকিট ছিল দিল্লি পর্যন্ত, যদিও ফ্লাইটের রুট ব্যাংকক হয়ে। ১৬ জুন তার ফিরে আসার একটি টিকিট কনফার্ম করা রয়েছে। তবে আদৌ তিনি ফিরবেন কি না—তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে।

এখনো পরিষ্কার নয়, কেন সাবেক রাষ্ট্রপতির এমন গোপন ও নাটকীয় প্রস্থান ঘটল। অনেকেই বলছেন, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত নিরাপদ বহির্গমন—সম্ভবত নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় তার ভূমিকার কারণে। আবার কেউ কেউ সন্দেহ করছেন, তিনি হয়তো কোনো বিশেষ মিশনে বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যেই দেশ ছাড়লেন। তবে সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য এখনো আসেনি।

Header Ad
Header Ad

সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিএনপির কথা মিলে গেছে: এ্যানি

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত বিএনপির কথার সঙ্গে মিলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।

রোববার (১১ মে) দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের বড়বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মান্দারী ইউনিয়নের মিয়াপুর ভূঁইয়া বাড়ি নূরানী মাদরাসায় বিএনপির ওয়ার্ডভিত্তিক নেতা নির্বাচনের ভোট পর্যবেক্ষণকালে তিনি এ কথা বলেন।

শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, “বিএনপি যা চেয়েছে, তাই হয়েছে। বহু আগেই যদি সব রাজনৈতিক দলকে একত্র করে সরকার আলোচনায় বসত, তাহলে এই নিষ্পত্তি আরও আগেই সম্ভব হতো।”

তিনি বলেন, জনগণ সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান চায়। কিন্তু সরকারের গড়িমসি, আলোচনা এড়িয়ে চলা এবং বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণে মানুষ বারবার কষ্ট পাচ্ছে।

হাসিনার দ্রুত বিচার দাবি করে এ্যানি বলেন, “গণহত্যা, গুম, খুনের বিচার হলে একটি ফলাফল আসবে। যারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। জনগণ চায় এই বিচার দ্রুত সম্পন্ন হোক। অন্তর্বর্তী সরকারের এখন দায়িত্ব—সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে দ্রুত বিচার কাজ সম্পন্ন করা।”

এসময় তিনি আরও বলেন, “আমরা ১৭ বছর ধরে এই বিচার চেয়ে আসছি। আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো দৃশ্যমান বিচার হয়নি। মানুষ জানতে চায়, এই বিচার প্রক্রিয়া এত ধীর কেন? হাসিনার বিচার দৃশ্যমান ও দ্রুত হলে মানুষ আশ্বস্ত হবে।”

একই সঙ্গে আন্দোলনে একসঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদের আশঙ্কা নিয়ে তিনি বলেন, “যদি ঐক্য ভেঙে যায়, মানুষ কষ্ট পাবে। আমরা সেই কষ্ট দিতে চাই না। মানুষ এখন দেশ গড়তে চায়।”

এ সময় জেলা বিএনপির সদস্য হাফিজুর রহমান, জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আহমেদ ফেরদৌস মানিক, চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক বেলাল হোসেন ও সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন বাচ্চু উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আ.লীগের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জনগণের কল্যাণে ব্যয়ের দাবি নুরুল হক নুরের
লুঙ্গি-গেঞ্জি-মাস্ক পরে ছদ্মবেশে বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ
সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিএনপির কথা মিলে গেছে: এ্যানি
নিষিদ্ধ কোনো সংগঠনের কর্মকাণ্ড চলবে না: ডিআইজি
টানা চারদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়, নাভিশ্বাস জনজীবনে
ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী, গ্রেপ্তার চাচা
লঞ্চে দুই তরুণীকে বেল্ট দিয়ে মারধর, নেহালসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ভারতে ব্লক পিনাকী, ইলিয়াস, কনক ও জুলকারনাইনের ইউটিউব চ্যানেল
চীন-পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতায় আফগানিস্তান, ভারতীয় প্রভাব নিয়ে উদ্বেগে নয়াদিল্লি
এলডিসি থেকে উত্তরণে দ্রুত-সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি: কবে শুরু হচ্ছে আইপিএল
‘আওয়ামী লীগ পালিয়েছে’ বলায় বিএনপির ৪ কর্মীকে কুপিয়ে জখম
রাজনৈতিক দলের বিচারে ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ
ভারতে যাওয়ার সময় দর্শনা চেকপোস্টে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার
সরকার শেখ হাসিনার পথেই হাঁটছে: রিজভী
লা লিগার মোড় ঘুরাতে আজ এল ক্লাসিকোতে মুখোমুখি বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ
দুই পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে ভাইয়ের বাসায় খালেদা জিয়া
যুদ্ধবিরতির ২৪ ঘণ্টা না যেতেই ভারত-পাকিস্তানকে ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব
মেসির দুর্দান্ত গোলেও রক্ষা হয়নি, মিনেসোটার কাছে বিধ্বস্ত ইন্টার মায়ামি
‘এই মোটু’ বলে কটাক্ষ, রেগে গিয়ে গুলি