সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫ | ১৫ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

৩০০ কোটি টাকা নিয়ে নিরুদ্দেশ নওগাঁর ৮ সমবায় সমিতি!

৩০০ কোটি টাকা নিয়ে নিরুদ্দেশ নওগাঁর ৮ সমবায় সমিতি। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

পুকুরের মাছ, খেতের ফসল বিক্রি করে তিল তিল করে ১৬ লাখ টাকা জমিয়েছিলেন নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম (৫০)। টাকাগুলো চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে কয়েক ধাপে দোয়েল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি সমিতিতে স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা রেখেছিলেন।

৮ মাসের লভ্যাংশসহ তা বেড়ে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। কিন্তু দোয়েল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি গত ২৫ অক্টোবর রাতারাতি বন্ধ করে পালিয়ে যান উদ্যোক্তারা। এত টাকার সঞ্চয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় জাহিদুলের বৃদ্ধ মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

জাহিদুল বলেন, ‘সমিতি বন্ধ হয়ে খবর পাওয়ার পর আমার মা গত শনিবার স্ট্রোক করেন। স্ট্রোক করার পর এখনও মা পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি। তিল তিল জমানো টাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরও নাওয়া-খাওয়া নেই। স্বপ্ন ছিল জমানো টাকা দিয়ে নওগাঁ শহরে কিছু জমি কিনে একটা বাড়ি করব। কিন্তু এখন আমি সর্বশান্ত। জায়গা-বাড়ি করা তো দূরের কথা এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাই মুশকিল হয়ে যাবে।’

দোয়েল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিতে টাকা রেখে সঞ্চিত টাকা খুইয়েছেন নওগাঁ সদর, রাণীনগর, আত্রাই ও বদলগাছী উপজেলার অন্তত ৪০০ গ্রাহক। গ্রাহকের আমানতের ২২ কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে দোয়েল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা।

শুধু দোয়েল সমিতিই নয়; গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হচ্ছে অনেক সমিতি। এতে দরিদ্র মানুষ সমবায় সমিতির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার বদলে নিঃস্ব হচ্ছে। ভাঙছে তাঁদের স্বপ্ন।

একটি সরকারি অফিসে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন শহিদুল ইসলাম (৬৫)। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর পেনশন হিসেবে ৮ লাখ টাকা পান তিনি। দুই বছর আগে পেনশনের সমুদয় টাকা তিনি সুরমা মাল্টিপারপাস সমবায় সমিতি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা রাখেন। প্রতি মাসে লাখে তিন হাজার টাকা করে মুনাফা দেওয়ার শর্তে তিনি ওই টাকা জমা রাখেন। টাকা জমা দেওয়ার পর থেকে প্রথম দিকে মাসে মাসে নিয়মিত লভ্যাংশ দিচ্ছিল। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে সমিতির কর্মকর্তারা লভ্যাংশ দেওয়া নিয়ে তালবাহানা শুরু করেন। এরমধ্যে গত মার্চ মাসে সমিতির নির্বাহী পরিচালক ছবেদুল ইসলাম ও তাঁর সহযোগীরা সমিতির কার্যালয়ে তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। থানায় অভিযোগ করেও গত ৭ মাসেও সঞ্চিত টাকা ফেরত পানননি শহিদুল ইসলাম। একইভাবে ওই সমিতির চার শতাধিক গ্রাহকের অন্তত ৭০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে সমিতির নির্বাহী পরিচালক ছবেদুল ইসলাম ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

মাদারগঞ্জ উপজেলার মাহফুজা বেগম। সত্তরোর্ধ্ব এই নারী লাঠিতে ভর দিয়ে এসেছেন টাকা আদায়ের মানববন্ধনে। ‘শতদল সমবায় সমিতি’তে রাখা টাকার জন্য ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। মাহফুজা বেগম বলেন, ‘৭০ হাজার টাকা তোলার কত চেষ্টা করলাম, তাও দিলো না। এখন আমার আছে শুধু এক আল্লাহ। আর কিছু নাই।’

একই অবস্থা সম্প্রতি বন্ধ হওয়া জগৎসিংপুর সূর্যমুখী বহুমুখী সমবায় সমিতির দুই শতাধিক গ্রাহকের। জগৎসিংহপুর এলাকার বাসিন্দা আকলিমা বিবি (৭০)। স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতার চার বছর ধরে ধাপে ধাপে জমা করেছিলেন ওই সমিতিতে। গত জুলাই মাসে সমিতির নির্বাহী পরিচালক মুকুল হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা রাতারাতি উধাও হয়ে যায়। এখন তিনি পাগল প্রায়।

আকলিমা বিবি বলেন, ‘সন্তান নাতি-নাতনিদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সূর্যমুখী সমবায় সমিতিতে টাকাগুলা জমা থুছিলাম। গত জুলাই মাসে হঠাৎ করে একদিন দেখি সমিতির অফিস তালা দেওয়া। পরিচালক মুকুল ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ নাই। মুকুলের বউ-ছাওয়ালও ভ্যাগে গেছে। এখন জমানো টাকা ফেরত ল্যাওয়ার জন্য থানা, ইউএনও অফিস ও ডিসি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরোছি। কিন্তু কোনো কাম হছে না।’

শুধু আকলিমা, শহিদুল বা জাহিদুলই নয়, এমন হাজার হাজার মানুষের অন্তত ৩০০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমবায় সমিতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তারা। সারাজীবনের কষ্টের টাকা হারিয়ে দিশেহারা মানুষগুলো। আত্রাই উপজেলার বান্দাইখাড়া এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘পরিবারের জন্যই তো টাকা জমা রেখেছিলাম। এখন তো প্রয়োজনের সময় টাকা না পেয়ে আমার পরিবারই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর নওগাঁয় জেলায় আটটি সমবায় সমিতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তারা গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত না দিয়ে হঠাৎ করে কার্যক্রম বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে গেছেন। ওই আটটি সমবায় সমিতি হচ্ছে, নওগাঁ সদর উপজেলায় সুরমা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, ডলফিন সমবায় সমিতি, জগৎসিংহপুর সূর্যমুখী বহুমুখী উন্নয়ন সমবায় সমিতি, বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন ও মেঘনা সেভিংস এন্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মহাদেবপুর উপজেলার ব্যতিক্রম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এবং মান্দা উপজেলার আল আরাফাহ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড। এসব সমবায় সমিতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অন্তত পাঁচ হাজার গ্রাহকের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। লাগাতার আন্দোলন ও মামলা করেও গ্রাহকেরা তাঁদের সঞ্চিত টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।

আত্মগোপনে থাকা দোয়েল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পর থেকে সমিতির সদস্যরা সবাই একসঙ্গে আমানতের টাকা ফেরত চাইতে শুরু করে। সবাই একসঙ্গে জমা টাকা ফেরত চাওয়ায় বেকায়দায় পড়ে যাই। গ্রাহকদের কাছ থেকে মাসিক ও স্থায়ী আমানত হিসেবে আমার সমতিতিতে প্রায় ২১ কোটি সঞ্চয় আছে। সেই টাকা থেকে ১৬ কোটি টাকা ক্ষুদ্র ঋণ হিসেবে দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের কাছ থেকে ঋণ দেওয়া আছে। সেই টাকা তুলতে না পারায় সদস্যদের টাকা ফেরত দিতে পারছি না। কিন্তু সদস্যরা তা মানতে চান না। টাকা না পেলে অনেকেই আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। নিরাপত্তার কারণে গত শুক্রবার থেকে আমি আত্মগোপনে আছি। তবে প্রশাসন আমাকে নিরাপত্তা দিলে আমি এলাকায় ফিরে আমার সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকদের সব টাকা ফেরত দেব। কারও টাকা আত্মসাৎ করব না।’

ভুক্তভোগীরা জানান, জেলা ও উপজেলা কার্যালয় থেকে সমবায় সমিতি হিসেবে নিবন্ধন নেওয়ার পর সমিতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তা বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের প্রলুব্ধ করে অবৈধভাবে ব্যাংকের আদলে মাসিক ও বার্ষিক আমানত প্রকল্প, স্থায়ী বিনিয়োগ ও স্থায়ী আমানত নামে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে টাকা রাখতে শুরু করে। টাকা জমা রেখে গ্রাহকদের প্রতি মাসে মুনাফা দিতে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। ধীরে ধীরে সমিতির গ্রাহকসংখ্যা ও আমানতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এক সময় গ্রাহকদের আমানতের টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায় সমিতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তারা।

নওগাঁ জেলা সমবায় সমিতি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর ১১টি উপজেলায় নিবন্ধিত সমবায় সমিতির সংখ্যা ১ হাজার ৬২০টি। এর মাধ্যমে ঋণদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ৪৫০টি সমিতি।

গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে একের পর এক সমবায় সমিতির লাপাত্তা হওয়ার বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন নওগাঁর সাবেক সম্পাদক বেলাল হোসেন বলেন, ‘প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সমবায় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের অসর্তকর্তার কারণে এসব হচ্ছে। এতে নিরীহ ও অসহায় মানুষ সমবায় সমিতির খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে। এসব সমস্যা উত্তরণে নিবন্ধন দেওয়ার আগে আরও ভালো করে যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। নিবন্ধন দেওয়ার পর সমবায় কার্যালয়কে সমিতিগুলোকে ভালো করে মনিটরিং করতে হবে। এছাড়া প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদারকি বাড়াতে হবে।’

গ্রাহকের টাকা সমিতির লাপাত্তা হওয়ার বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা খোন্দকার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নওগাঁতে ৪৫০টির মতো ঋণদানকারী সমিতির কার্যক্রম বর্তমানে চলমান আছে। এর মধ্যে কয়েকটি সমবায় সমিতি সম্প্রতি গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত না দিয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে তাঁদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে এসব সমিতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে ও থানাতেও একাধিক মামলা চলমান আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেই টাকা উৎপাদনশীল খাতে না খাটিয়ে অনেক সময় সমিতির কর্মকর্তারা জমিজমা কিংবা বাড়ি-গাড়ি কিনে থাকেন। এসব করতে গিয়ে সমিতিগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সমিতি পরিচালনার কারণে গ্রাহকেরা যখন লভ্যাংশ কিংবা আমানতের টাকা ফেরত চান তখন তাঁদের টাকা দিতে পারছে না সমিতিগুলো। আগামীতে কোনো সমবায় সমিতি যাতে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চলতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানো হবে।’

Header Ad
Header Ad

অবশেষে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করল এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ছবি: সংগৃহীত

চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি অবশেষে প্রত্যাহার করেছেন। রোববার (২৯ জুন) রাতে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শেষে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাসান মাহমুদ তারেক এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বিবৃতিতে তিনি জানান, গত ২৮ ও ২৯ জুন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে যে পূর্ণদিবস শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে, তার ফলে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি হয় এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়ে। এই সংকট নিরসনে দেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উদ্যোগী হয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন। অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় কিছু বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

হাসান মাহমুদ তারেক আরও বলেন, সরকার রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে যে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ তা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই কমিটির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করে একটি টেকসই রাজস্ব সংস্কারে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। এসব বিবেচনায় নিয়ে তারা শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করছেন বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে, এনবিআরের চলমান সংকট নিরসনে সরকার ইতোমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে গঠিত এই কমিটিতে আরও রয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এনবিআরের আওতাধীন কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট ও শুল্ক স্টেশনসমূহের সকল শ্রেণির কর্মস্থলকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সেবা’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়েছে।

সরকার ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ইতিবাচক মনোভাবের ফলে এ সংকট নিরসনের পথে এগোচ্ছে—এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স: জানুন কীভাবে পাওয়া যায় অস্ত্র রাখার অনুমতি

ছবি: এআই

সম্প্রতি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নিয়ম-কানুন ও লাইসেন্স পদ্ধতি নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যক্তিগত বা আত্মরক্ষার জন্য বৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র কেনা, রাখা ও ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, যা মূলত ১৮৭৮ সালের 'Arms Act' এবং ১৯২৪ সালের 'Arms Rules' আইনের আওতায় পরিচালিত হয়।

কারা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন?

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কিছু নির্ধারিত মানদণ্ড রয়েছে। নিচে উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো তুলে ধরা হলো—

আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের বৈধ নাগরিক হতে হবে।

আত্মরক্ষার জন্য জীবনহানির আশঙ্কা থাকলে কেবলমাত্র আবেদন করা যাবে।

অস্ত্রের জন্য কমপক্ষে ৩০ বছর বয়স হতে হবে, সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৭০ বছর।

আবেদনকারীকে অবশ্যই আয়কর দাতা হতে হবে এবং ০৩ (তিন) কর বছরে ধারাবাহিকভাবে পিস্তল/ রিভলবার/রাইফেল এর ক্ষেত্রে ন্যূনতম ০৩ (তিন) লক্ষ টাকা এবং শটগান এর ক্ষেত্রে ন্যূনতম ০১ (এক) লক্ষ টাকা আয়কর দিতে হবে। আবেদনকারী কর্তৃক পরিশোধিত আয়করের পরিমাণ উল্লেখসহ এনবিআর কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র আবেদনের সাথে দাখিল করতে হবে।

অনুমোদন পাওয়ার পর দেশীয় কোনো বৈধ অস্ত্র ডিলারের কাছ থেকে বা আমদানি করে অস্ত্র সংগ্রহ করা যাবে।

একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

 

কীভাবে আবেদন করবেন?

লাইসেন্স পেতে হলে আবেদনকারীকে নিজ জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অস্ত্র শাখা থেকে নির্ধারিত আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এরপর আবেদনপত্র জমা দিয়ে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়—

এসবি রিপোর্ট: পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে।

জেলা প্রশাসকের অনুমোদন: এসবি রিপোর্টের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক আবেদন অনুমোদন করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি পত্র (NOC): এরপর আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় এবং অনাপত্তি পত্র পাওয়ার পরই লাইসেন্স ইস্যু করা হয়।

আবেদনের সঙ্গে যা জমা দিতে হবে:

বৈধ নাগরিকত্বের প্রমাণ (জাতীয় পরিচয়পত্র)

আয়কর সার্টিফিকেটের ফটোকপি

ছয় কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

নির্ধারিত লাইসেন্স ফি

আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নিয়ম

২০১৬ সালের "আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা" অনুসারে কেবলমাত্র আত্মরক্ষার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ নীতিমালায় ব্যক্তিগতভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

'টেস্ট ফায়ার' বা পরীক্ষামূলক গুলি চালনার নিয়ম

নতুন অস্ত্র: প্রথমবার অস্ত্র কেনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে ‘টেস্ট ফায়ার’ করা যায়।

নবায়নের সময়: পুরনো অস্ত্রের কার্যকারিতা যাচাই করতে লাইসেন্স নবায়নের সময় ‘টেস্ট ফায়ার’ করতে হয়, তাও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে।

অনুমতি: টেস্ট ফায়ারের পূর্বে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

গুলি সংগ্রহের নিয়ম

গুলি কেনার জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমতি প্রয়োজন।

গুলির পরিমাণ লাইসেন্সে নির্ধারিত থাকে।

গুলির হিসাব সংশ্লিষ্ট থানা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জানাতে হয়।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলি

লাইসেন্সধারীর নামেই অস্ত্র ব্যবহার: মালিক নিজে ব্যবহার করলে তার নামে লাইসেন্স থাকতে হবে। দেহরক্ষী ব্যবহার করলে তার নামেও লাইসেন্স থাকতে হবে।

অস্ত্র হারালে: তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে।

বিদেশ ভ্রমণে গেলে: আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা দিয়ে যেতে হবে।

নির্বাচনের আগে: নির্বাচনকালে লাইসেন্সধারীদের অস্ত্র জমা দিতে হয়।

লাইসেন্স নবায়ন: প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়ন বাধ্যতামূলক।

বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং কঠোর নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে প্রাপ্ত একটি দায়িত্বপূর্ণ অনুমতি। এ সংক্রান্ত আইন ও নির্দেশিকা মান্য করেই একজন নাগরিক অস্ত্রের মালিক হতে পারেন। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও লাইসেন্সের বিষয়টি আইনত সংবেদনশীল হওয়ায় এ বিষয়ে সতর্কতা ও সচেতনতা দুটোই অপরিহার্য।

Header Ad
Header Ad

ভুলবশত ব্যাগে ম্যাগাজিন, বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত: আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ব্যাগে ম্যাগাজিন পাওয়ার ঘটনায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং তাঁর লাইসেন্সপ্রাপ্ত বৈধ অস্ত্রের অংশ হিসেবে একটি ম্যাগাজিন ভুলবশত ব্যাগে থেকে গেছে।

রোববার (২৯ জুন) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে আমার একটি লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে অংশ নেওয়ার পর আমার ওপর কয়েকবার হামলা ও হত্যাচেষ্টা হয়েছে। তাই যখন সরকারি প্রোটোকল বা সিকিউরিটি থাকে না, তখন নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়।”

তিনি জানান, মরক্কোর মারাকেশে অনুষ্ঠিতব্য ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামে’ অংশ নিতে আজ ভোর ৬টা ৫০ মিনিটের ফ্লাইটে যাওয়ার কথা ছিল। ভোরে তাড়াহুড়োর মধ্যে প্যাকিং করার সময় একটি ম্যাগাজিন ভুল করে ব্যাগে থেকে যায়। স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ার পর সেটি তিনি নিজেই তার প্রোটোকল কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেন।

আসিফ মাহমুদ বলেন, “শুধু ম্যাগাজিন দিয়ে আমি কী করব? যদি আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে অস্ত্র রেখে আসতাম না। এখানে অবৈধ কিছু ছিল না, কিন্তু এটাকে ঘিরে অনেকে অপ্রয়োজনীয় আলোচনা করছে।”

সংবাদপত্রে খবর চাপা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “চাপ দিয়ে সংবাদ সরানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। ঘটনার পর আমি ফ্লাইটে ছিলাম। অনেকক্ষণ পরে ইন্টারনেটে এসে দেখি, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে নানা খবর ছড়িয়ে পড়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “নাগরিক হিসেবে কেউ যদি নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকেন, তবে নিয়ম মেনে তিনিও অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে পারেন।”

এই ঘটনায় কোনো আইনি জটিলতা তৈরি হয়নি বলে জানা গেছে। তবে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি ঘিরে আলোচনার ঝড় উঠেছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

অবশেষে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করল এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স: জানুন কীভাবে পাওয়া যায় অস্ত্র রাখার অনুমতি
ভুলবশত ব্যাগে ম্যাগাজিন, বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত: আসিফ মাহমুদ
মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য এখনও অনেক দূর: আখতার হোসেন
ঢাকায় চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়
এনবিআরের শীর্ষ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি তদন্তে দুদক
বিএনপি–ছাত্রদলের বিরুদ্ধে শিবিরের পরিকল্পিত অপপ্রচারের অভিযোগ নাছিরের
আবাসিক হোটেল থেকে স্বামী–স্ত্রী ও ছেলের লাশ উদ্ধার
প্রথমবারের মতো ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রেমিট্যান্স
ইমাম-খতিবদের বেতন ২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি
আ.লীগ নেতাদের সঙ্গে সেই ফজর আলীর ছবি ভাইরাল
জনগণ ও অর্থনীতির স্বার্থে ছাড় নয়, এনবিআর কর্মীদের উদ্দেশ্যে কঠোর বার্তা
ক্লাব বিশ্বকাপে আজ মেসির সামনে সাবেক ক্লাব পিএসজি
অ্যান্টি-এজিং ওষুধেই মৃত্যু? রহস্যে ঢাকা শেফালি জারিওয়ালার অকালপ্রয়াণ
উত্তরায় হোটেল দখলের চেষ্টা, ‘মব সৃষ্টি’র ঘটনায় আটক ৯ জন
সান্তাহারে কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইনে হাঁটার সময় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত যুবক
ভিজিট ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ সৌদি প্রবাসীদের জন্য সুখবর
আ.লীগ নেতার অপকর্ম বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা চলছে: রিজভী
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ বাতিল করল সরকার
ঢাকায় বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার