মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত সংস্কার জরুরি 

বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যে অবস্থা; প্রথমত, আমরা কভিড-১৯ এর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছি। বাংলাদেশ ভালোভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, যদিও গতিটা মন্থর ছিল। এরসঙ্গে হঠাৎ করে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক টানাপড়েন; এগুলোর ফলে বিশ্বে আরও নানারকম সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এসব মিলে বাংলাদেশেও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

আমাদের নিজস্ব যে চ্যালেঞ্জগুলো ছিল আর্থিক খাতে সমস্যা, দুর্নীতি, অর্থের অপচয়, মুদ্রাপাচার, কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা এগুলো তো ছিলই। এরসঙ্গে এখন বৈশ্বিক সমস্যাগুলো যেমন জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে; গম, চাল, সয়াবিন তেলসহ খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের বাণিজ্য ও রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছুটা প্রভাব পড়ছে। এর ফলে আমরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। বাংলাদেশের জন্য যেটা একটু ভালো ছিল, আমাদের যে পারফরম্যান্স ছিল, সেটা এখন করা কঠিন হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে আমি চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে আলোচনা করব। তারপর ব্যাংকিং খাতে যে সমস্যা, সেগুলো সম্পর্কে আলাপ করব।বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ দুই ধরনের এক. অভ্যন্তরীণ, দুই. বৈশ্বিক। এখন মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমাদের টাকার বিনিময় হার, সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থানের সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে আরও প্রকট হয়ে উঠছে। ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলো তো আরও প্রকট।

আমাদের যেটা প্রয়োজন, সেটা আমি যদি মোটা দাগে বলি, আমাদের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। সমন্বিত পদক্ষেপ বলতে বাংলাদেশ ব্যাংক ভূমিকা পালন করবে, অন্যরা কেউ কিছু করবে না, তা নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত; এনবিআর আছে, কাস্টমস আছে, এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো আছে এদের সবাইকে একযোগে একসঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ, বিদেশি মুদ্রাবাজার দেখবে এগুলোর সমস্যা সমাধান করে চলবে সেইসঙ্গে। রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না, আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না। ইমপোর্টে যথাযথ মাল আসছে কি না, মূল্যটা সঠিক কি না, পরিমাণটা সঠিক কি না এগুলোর সমাধান এককভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে সব মন্ত্রণালয় ও সব সংস্থার একইসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি একটা উদাহরণ দিলাম। সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।  দুঃখজনক হলেও সত্য যেটা, আমাদের সমন্বয়টা হচ্ছে না। অনেকে ভাবে, জিনিস পত্রের দাম বেড়ে গেছে, বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখবে। তারা দেখবেই। সঙ্গে সঙ্গে যারা পণ্য সরবরাহ করে, যারা পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ করে, সেইসঙ্গে প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংস্থা তাদেরও তো কাজ আছে। অতএব নিজেদের মতো করে যদি সবাই মনে করে আমাদের কাজ চলবে, আমরা করতে থাকব, তাহলে চলবে না।

একসঙ্গে সবাই মিলিত হয়ে সমন্বিতভাবে করবে, সেটা কিন্তু হচ্ছে না।শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, এখানে কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ এনজিও আছে। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদেরও ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে লোকাল লেভেলে যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো কাজ করে, তাদের হেল্পনিতে হবে।উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রাইমারি হেলথের টিকা, কলেরা টিকা এসব যে স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা দিয়েছেন, তাদের পাশে রেখে কাজ করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরের প্রতিষ্ঠান আর চেম্বারগুলো সব সমস্যা সমাধানে সরকারকে সুষ্ঠুভাবে সহায়তা করতে পারবে, এটা একটা ভুল ধারণা। এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে নীতি-কৌশল অবলম্বন করা দরকার এবং সবার অংশগ্রহণমূলক প্রচেষ্টা নিশ্চিত করতে হবে।এখন আসি আমাদের বর্তমান প্রসঙ্গ নিয়ে। মোটামুটি আমাদের ইতিবাচক দিক আছে। ভবিষ্যতে কী হবে সেটা বলা মুশকিল।

এখানে বেশি দরকার হলো আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এখানে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেটাকে আমরা লিজিং কোম্পানি বলি  সেখানকার নীতিমালা আছে, পুঁজিবাজারের নীতিমালা আছে। আর্থিক খাতে, বিশেষ করে ব্যাংক খাতে নিয়ন্ত্রণ, পরিবীক্ষণ আরও সুদৃঢ় করতে হবে। সময় এসেছে ব্যাংক খাতে সময়োপযোগী সংস্কার করার। বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও শক্তভাবে কাজ করতে হবে। খেলাপিঋণ বেশি, তারপর ব্যাংকিং খাতে নানারকম দুর্নীতি হচ্ছে। ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাইরে অর্থপাচারও হয়ে যাচ্ছে।অন্যদিকে কুটির শিল্প, ছোট ও মাঝারিশিল্পগুলো তাদের চাহিদা অনুপাতে ঋণ পায় না। তাদের বলা হচ্ছে, এই করো, সেই করো, এই কাগজ নিয়ে এসো ইত্যাদি। ইদানীং বাংলাদেশ ব্যাংক ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনরর্থায়ন করার ঘোষণা দিয়েছে। সেটা যথাসময়ে যথাযথভাবে উপযুক্ত ব্যক্তিদের কাছে বিতরণ করতে হবে।  

কভিড-১৯ এ একটা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে। সেটা কী হলো? বেশির ভাগ টাকা তো ব্যাংকের মাধ্যমে চলে গেছে বড়দের কাছে। বড় বড়গার্মেন্টে, বড় বড় এক্সপোর্টে। ছোট শিল্পগুলো কিন্তু কর্মসংস্থান বেশি করে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা তারা বাড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করে। সেটা উৎপাদন খাতে যদি বেশি দেওয়া হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি ও কিছুটা হ্রাস হবে। কারণ মূল্যস্ফীতিটা অনেকটা সরবরাহের ব্যাপার। আমাদের পণ্য সরবরাহ যদি বৃদ্ধি পায়, তাহলে মূল্যস্ফীতি কমবে।  কুটিরশিল্প, ছোট ও মাঝারি শিল্প সম্পর্কে অনেক কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে মোটেও সঠিক নয়। ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত কনজারভেটিভ। তারা সহজে ছোট শিল্পকে ঋণ দিচ্ছে না। তাদের পেছনে ব্যাংকের সময় ব্যয় হয় বেশি, সুপারভাইজ করা কঠিন, ছোট অঙ্কের টাকায় মুনাফা কম এ সব ব্যাংকের যুক্তি, যেগুলো খোঁড়া যুক্তি। অথচ ছোট ঋণগ্রহণকারীদের পরিশোধের হার অত্যন্ত সন্তোষজনক। অন্যদিকে, বড় বড় ঋণগ্রহীতার অনাদায়ি ঋণের ভারে দেশের উন্নয়নও ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে বড় বড় শিল্পকে নানারকম সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। যারা এক্সপোর্ট করে, তাদের আরও বেশি সুবিধা দেওয়া হয়।

অসম একটা উন্নয়নের প্রচেষ্টা বা অসম উন্নয়নের দিকে আমরা চলে যাচ্ছি। এদিকে আবার ডিফল্ট ঋণ শোধ করার জন্য ৯ বছরের সময় দেওয়া হয়েছে। তারপর ঋণ পুনঃতফসিল করার সময়ে ডাউন পেমেন্টের পরিমাণও কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অযাচিতভাবে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বড় বড় খেলাপি ঋণ গ্রহীতাকে। এমনিতে অর্থনৈতিক বৈষম্য আছে, বিশেষ করে আয়ের বৈষম্য। এরসঙ্গে ব্যাংক ঋণের অযাচিত সুবিধা এবং সরকারি প্রণোদনার বিশেষ সুবিধা পেয়ে এক শ্রেণি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে, দিনদিন সম্পদের বৈষম্যও প্রকট হচ্ছে। ২০২২ সালে অর্থনীতিতে তিন জন অর্থনীতিবিদ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাদের অবদান ব্যাংকিং খাতের কার্যকলাপ সম্পর্কে। তাদের যুক্তির মূল বক্তব্য হচ্ছে, ব্যাংকিং খাত সমস্যা সংকুলান হলে অর্থনৈতিক মন্দা বেশি প্রকট হবে। আমি বারবার বলেছি, ব্যাংকিং খাত ঠিক করতে হবে, ব্যাংকিং খাত ঠিক না করলে আমাদের অর্থনীতির দ্রুত অগ্রগতি হবে না।

জ্যাঁতি হল, যিনি ২০১৪ সালে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন, তিনি বাজারের ক্ষমতা এবং আর্থিক নিয়ম বিধির ওপর তার গবেষণার জন্য এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার কাজ বেশির ভাগ ছিল বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ২০০৭-০৮ সম্পর্কিত। তিনি একটা বই লিখেছিলেন ২০১০ সালে, নাম ব্যালান্সিং দ্য ব্যাংক । বইয়ের মধ্যে তিনি অর্থনৈতিক মন্দার জন্য খেলাপিঋণ, অর্থের অপচয়, করাপশন, অর্থপাচার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলাপ করেছেন। সবকিছু পর্যালোচনা করে এটাই প্রতীয়মান হয় যে ব্যাংকিং খাতকে যদি যথাযথভাবে পরিচালনা না করা হয়, তাহলে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুরূহ হবে।

লেখক: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

Header Ad
Header Ad

আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ড. ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে আগামী বছরের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে অবহিত করেছেন দেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় দুই নেতার মধ্যে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ টেলিফোনালাপে এ বিষয়টি উঠে আসে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, মার্কো রুবিও বাংলাদেশের চলমান সংস্কার কর্মসূচি এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য ও রেমিট্যান্সের অন্যতম শীর্ষ উৎস, ফলে দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় করা সময়ের দাবি।

দুই নেতার মধ্যে এই টেলিফোন আলোচনা চলে প্রায় ১৫ মিনিট। আলোচনায় উঠে আসে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রক্রিয়া, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, রোহিঙ্গা সংকট এবং নিরাপত্তা-সহ নানা বিষয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও নিশ্চিত করেছে, ফোনালাপে উভয় পক্ষ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নির্বাচন কমিশন বর্তমানে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে, যা আগের সরকার সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছিল। আগামী নির্বাচনে আমাদের অনেক তরুণই প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচনের আগে মার্কো রুবিওর বাংলাদেশ সফর তরুণদের অনুপ্রাণিত করবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের স্পষ্ট বার্তা পৌঁছাবে।

তিনি আরও জানান, সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যান্ডাউয়ের সঙ্গে সফল বৈঠক করেছেন। দুই দেশই সম্পর্ক আরও জোরদার করতে আগ্রহী। এছাড়া পারস্পরিক শুল্ক ব্যবস্থা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার বিষয়ে সম্মত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।

রোহিঙ্গা ইস্যুতেও যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক মানবিক সহায়তার প্রশংসা করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, “২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সর্ববৃহৎ দাতা হিসেবে কাজ করছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বাস্তব সম্ভাবনা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে উজ্জ্বল।”

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদারে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। ফোনালাপের বিস্তারিত তথ্য আমাদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।”

এই সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনার মধ্য দিয়ে দুই দেশের গভীর সম্পর্ক ও পারস্পরিক আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

Header Ad
Header Ad

বিসিবি সভাপতির উপদেষ্টা পদে থাকছেন না সামি, জানালেন কারণ

বিসিবি সভাপতির উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন সৈয়দ আবিদ হোসেন সামি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির উপদেষ্টা পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ক্রীড়া সাংবাদিক ও উপস্থাপক সৈয়দ আবিদ হোসেন সামি। মঙ্গলবার (১ জুলাই) নিজের ফেসবুক পোস্টে এই দায়িত্ব পালন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে আবেগঘন বক্তব্য দেন তিনি।

সামি জানান, তিনি নিজের উদ্যোগে নয়, বরং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের আহ্বানে উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এটি ছিল সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী পদ। কোনো সম্মানি বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নয়, শুধুমাত্র ক্রিকেটের উন্নয়নে সহযোগিতার উদ্দেশ্যেই এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি।

তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই একটি বিশেষ গোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। সামির ভাষায়, “সেদিনই (দায়িত্ব ঘোষণার দিন) থেকে একটা মহল আমার রেপুটেশন খারাপ করার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে। কেন, তা আমি জানি না। আমি তো প্রেসিডেন্টের চাওয়াতেই এসেছিলাম।”

 

সামি জানান, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তিনি মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেন। অনূর্ধ্ব-১২ ক্রিকেট কার্নিভাল নিয়ে প্রথম বৈঠকে অংশ নিয়ে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রস্তাব দেন—যেমন পেসার হান্ট প্রতিযোগিতা, প্যারেন্টাল কোচিং গাইডলাইন, শিশুদের জন্য টেস্ট ক্রিকেটভিত্তিক চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি। পরবর্তীতে দেশের চারটি বিভাগে ঘুরে গিয়ে মাঠ পর্যায়ের সমস্যা চিহ্নিত করে তা বিসিবির বিভিন্ন বিভাগে জমাও দেন।

তবে মাঠপর্যায়ের কাজের পাশাপাশি কনটেন্ট তৈরি করা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। সামি জানান, তার পেশা হচ্ছে কনটেন্ট তৈরি, আর সেটাই বিসিবি জানত। তবুও একটি গোষ্ঠী তার কাজকে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বলে প্রচার করতে থাকে। অথচ, তিনি নিজ খরচে ক্যামেরাম্যানসহ কনটেন্ট তৈরি করেছেন এবং এর জন্য বিসিবির কোনো অর্থও গ্রহণ করেননি।

এই বিতর্কে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিসিবি সভাপতি নিজেই—এমন মন্তব্য করে সামি বলেন, “একটা সফল কার্যক্রমের দিনশেষে প্রেসিডেন্টের মুখ থেকে হাসি উড়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র আমাকে ঘিরে গড়ে ওঠা একটি কৃত্রিম সংকট তাকে ডিস্ট্র্যাক্ট করছে।”

সামি আক্ষেপ করে লেখেন, “আমি রাজনীতিবিদ নই, বড় ব্যবসায়ী নই, বড় কোনো ব্যাকআপও নেই। ডার্টি পলিটিক্স আমার কাজ না। আমি শুধু কাজটাই করতে পারি—রিসার্চ, হোমওয়ার্ক, ডে রিপোর্ট, মাঠপর্যায়ে ঘুরে ঘুরে সমস্যা চিহ্নিত করা, সমাধানের চেষ্টা করা।”

তিনি বলেন, তার এই কাজের মনোভাবই গত ১০ বছর যমুনা টেলিভিশনে স্থিতিশীল ক্যারিয়ারের পেছনে মূল কারণ। সব টিভি চ্যানেল তাকে স্পোর্টস প্রোগ্রামে রাখে তার হোমওয়ার্ক ও এফোর্টের কারণে।

 

বিসিবি সভাপতির উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন সৈয়দ আবিদ হোসেন সামি। ছবি: সংগৃহীত

নিজের সরে দাঁড়ানোর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে সামি দেখান বিসিবি সভাপতির স্বচ্ছ, দেশপ্রেমিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি না করাই। তিনি বলেন, “বুলবুল ভাই দেশের ক্রিকেটে বড় পরিবর্তনের সূচনা করেছেন। আমি থাকলে হয়তো উনার পথ আরো কঠিন হয়ে যাবে। আমি বিতর্কের কারণ হতে চাই না।”

ফেসবুক পোস্টের শেষাংশে সামি লেখেন, “একটা বাস্তবতার শিক্ষা আমার স্ত্রী আমাকে বারবার দিতেন—‘বাংলাদেশে শুধু মেধা বা ট্যালেন্ট দিয়েই সব হয় না।’ আজ আবার মনে হলো, Wife is always right।”

Header Ad
Header Ad

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জুলাই। দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর সূচনাদিবস হিসেবে। এক বছর আগে এই দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন ঢেউ, যা পরিণত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কোটা না মেধা, মেধা মেধা” স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ৩৬ দিনের এক বিরল গণআন্দোলনে। ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই ১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেদিন শিক্ষার্থীরা কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হলগুলো ঘুরে ভিসিচত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখানে তারা উত্থাপন করেন চার দফা দাবি: ১) ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বহাল রাখা, ২) মেধাভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখা, ৩) কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, এবং ৪) কেবল সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যই সুযোগ রাখার প্রস্তাব।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। ২ জুলাই ঢাবি থেকে গণপদযাত্রা এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের উচিত আমাদের দাবির চূড়ান্ত আইনি সমাধান ঘোষণা করা।’ তিনি জানান, একইসাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওইদিন আন্দোলনে সরব ছিলেন। তারা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন। তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—"১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অথচ আজও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরিতে কোটা নয়, নিয়োগ হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে জাবির প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ রেখে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তারা—৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক পুরোপুরি অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে।

একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা রায়সাহেব বাজার হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ঘোষণা করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের দেশব্যাপী কর্মসূচি। আজ সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর গাইবান্ধা ও রংপুর সদরে পথসভায় অংশ নেবেন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ড. ইউনূস
বিসিবি সভাপতির উপদেষ্টা পদে থাকছেন না সামি, জানালেন কারণ
বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি