১৯ বছর পর গ্রেপ্তার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি

১৯ বছর পর জুলেখা হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পালাতক আসামি সিরাজুলকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব-৪)। বুধবার (২২ জুন) নারায়ণগঞ্জের চর সৈয়দপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব বলছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ এক অভিযান পরিচালনা করে তাকে ধরা হয়। প্রথমে ভিকটিমকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করে সিরাজুল। এসব বিষয়ে গ্রাম্য সালিশ হলে সে আরো ক্ষিপ্ত হয় এবং যৌতুকের জন্য মারধর করে। ভিকটিম যৌতুক আনতে অক্ষমতার পরিচয় দিলে তাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে হত্যা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বেলা ১২ টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিইও) মো.মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি জানান, গত ২০০২ সালে মানিকগঞ্জ সদর থানার বাহের চর এলাকার সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে সিংগাইর থানার উত্তর জামশা
গ্রামের মো. আব্দুল জলিলের মেয়ে জুলেখা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর হতে জুলেখাকে যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো এবং যৌতুক না দিতে পারলে তালাক দিবে ভয়-ভীতি দেখাত। ইতিমধ্যে জুলেখা ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
মো. মোজাম্মেল হক বলেন, আসামি যৌতুক না পাওয়ার কারণে পারিবারিক কলহ আরো বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে সিরাজুল তার প্রতিবেশী মোশারফ নামে এক যুবকের সঙ্গে জুলেখার পরকীয়ার সম্পর্ক থাকার সম্পূর্ণ মিথ্যা ভূয়া অমূলক অভিযোগ তোলে এবং আরো বেশি নির্যাতন করতে থাকে।
র্যাব জানায়, এসব নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ভিকটিমের বাবা ও ভাইসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সিরাজুলের গ্রামে সালিশ হয়। সেখানে ভিকটিমের কোনো দোষ না পেয়ে এবং পরকীয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় সালিশে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ সিরাজুলকে গালিগালাজ করে এবং ভিকটিমকে নির্যাতন না করার জন্য সতর্ক করে দেয়। এই ঘটনার পর সিরাজুল আরও ক্ষিপ্ত হয় এবং জুলেখাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক জানান, এরপর ২০০৩ সালের ৬ ডিসেম্বর ডাক্তার দেখানোর কথা বলে মানিকগঞ্জ শহরে নিয়ে যায় এবং বিভিন্ন অজুহাতে ইচ্ছাকৃতভাবে কালক্ষেপণ করে গভীর রাতে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে মানিকগঞ্জ শহর হতে রওনা হয়। শশুর বাড়ি না গিয়ে কৌশলে কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামি তার ব্যাগে থাকা পামছা বের করে ভিকটিম জুলেখার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে নদীর পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
র্যাব এই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মো.মোজাম্মেল হক বলেন, এ ঘটনায় জুলেখার বাবা মো. আব্দুল জলিল বাদি হয়ে সিরাজুল সহ তার বড় ভাই রফিকুল, মা রাবেয়া বেগম, খালু শামসুল, চাচা ফাইজুদ্দিন ও তাইজুদ্দিন এবং মামা আবুল হোসেনসহ মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০০৫ সালের শেষের দিকে সিরাজুলকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
গ্রেপ্তারকৃতের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম
