হাঁস পালনে হাসি ফুটেছে চুয়াডাঙ্গার গ্রামীণ গৃহবধূদের

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদীবেষ্টিত জিরাট গ্রামে গৃহবধূদের মুখে এখন সাফল্যের হাসি। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে তারা বেছে নিয়েছেন হাঁস পালনকে। আমেরিকান পিকিং জাতের হাঁস পালনের মাধ্যমে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি যোগাচ্ছেন পরিবারের অতিরিক্ত আয়, মিটাচ্ছেন আমিষের চাহিদাও।
এই পরিবর্তনের গল্প শুরু হয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর অর্থায়নে দশজন গৃহবধূকে ৫০টি করে পিকিং হাঁসের বাচ্চা, প্রশিক্ষণ, খাবার, ভ্যাকসিন এবং ঘর তৈরির জন্য কিছু নগদ অর্থ প্রদান করে ওয়েভ। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে সেই গৃহবধূরা এখন হাঁস বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন।
স্থানীয় গৃহবধূ নাসরিন আক্তার বলেন, “ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে ৫০টি হাঁসের বাচ্চা, কিছু টাকা আর খাবার পেয়েছি। দু’মাস ধরে পালন করছি। এখন প্রতিটি হাঁসের ওজন দু’ থেকে আড়াই কেজি। কেজি প্রতি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করলেও ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ থাকবে। এই লাভ দিয়ে ব্যবসা বাড়ানোর ইচ্ছে রয়েছে।”
আরেক গৃহবধূ আফসানা বলেন, “প্রথমে ভয় লাগলেও প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত ভ্যাকসিন পেয়ে হাঁসগুলো বড় হয়েছে। এখন বিক্রি করে লাভ হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে করতে চাই।”
রেহানা ও শিরিনা খাতুন জানান, তারা হাঁস পালনের কৌশল ভালোভাবে শিখে নিয়েছেন। নিয়মিত পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। শিরিনা বলেন, “আমাদের এলাকার আরও নারীদেরও যদি হাঁসের বাচ্চা দেওয়া হয়, তবে সবাই ঘরে বসেই উপার্জন করতে পারবে।”
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু সুফিয়ান জানান, “ নদীবেষ্টিত এলাকায় হাঁস পালন খুবই লাভজনক। নদীতে হাঁস নামালে খাবারের খরচ কমে যায় এবং হাঁস সুস্থ থাকে। আমরা নিয়মিত ভ্যাকসিন ও মনিটরিং দিয়ে গৃহবধূদের সহায়তা করি।”

দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নীলিমা আক্তার হ্যাপি বলেন, “গৃহবধূরা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে আরও প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে। ওয়েভ ফাউন্ডেশন প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। এতে গ্রামের নারীরা ঘরে বসেই স্বপ্ন দেখার সাহস পাচ্ছে।”
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সমন্বয়কারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান যুদ্ধ বলেন, “এই প্রকল্প আরও সম্প্রসারিত হবে। যারা সফল হয়েছে, তাদের আবার হাঁসের বাচ্চা দেওয়া হবে। প্রতি ক্লাস্টারে ২০ জন করে নারীকে দুটি প্রশিক্ষণ, হাঁসের খাবার, ভ্যাকসিন ও নগদ অর্থ দিয়ে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
প্রকল্পের মাধ্যমে নারীরা শুধু আর্থিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন না, বরং আমিষের ঘাটতি পূরণেও ভূমিকা রাখছেন।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসীন আলী বলেন, “পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নে ৪০ জন নারী খামারিকে পিকেএসএফ-এর সহায়তায় পেকিন হাঁসের বাচ্চা দেওয়া হয়েছে। মাত্র তিন মাসেই প্রতিটি হাঁস ৩-৪ কেজি ওজনের হয় এবং বাজারে এর কেজি প্রতি দাম ৩০০-৩৫০ টাকা। এতে করে ৩০-৩৫ হাজার টাকা লাভ হওয়া সম্ভব। অনেক নারী এরই মধ্যে সফল হয়ে উঠেছেন।”
এই সাফল্য এখন ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের গ্রামেও। হাঁস পালনের এই সাফল্যের গল্প দেখে অন্যরাও উৎসাহী হচ্ছেন।
