শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
Dhaka Prokash

বিশেষ সাক্ষাৎকার

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না’

বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে ঢাকাপ্রকাশ-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তিনি বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমবেশ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকাপ্রকাশ-এর জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক শাহাদাত হোসেন। কারিগরি সহায়তায় ছিলেন আহমদ সিফাত। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ ঢাকাপ্রকাশ-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

ঢাকাপ্রকাশ: সম্প্রতি আপনারা দেশের বিভাগীয় কয়েকটি শহরে সমাবেশ করেছেন। এতে বিপুল পরিমাণ মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। আপনি কি মনে করেন বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে?

মির্জা ফখরুল: প্রকৃত বিষয়টি হচ্ছে যে, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের জোর করে ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতায় থাকার সময় ক্ষমতাকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা, তাদের দুঃশাসন, দুর্নীতি, মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া, মানুষের উপর বিভিন্ন রকম অত্যাচার নির্যাতনের ফলে গোটা দেশের মানুষ এখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটা অবস্থান নিয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের দুঃশাসন, দুর্নীতির ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল, ডাল, তেলের দাম যেভাবে বেড়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে মানুষের জীবনধারণ করা এক ধরনের অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই সবকিছু মিলিয়ে তারা মনে করছে বর্তমান আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন তাদের সমস্যাগুলো সমাধান হবে না। যে কারণে সরকারের পরিবর্তনের লক্ষ্যে মানুষ বিএনপির এই সমাবেশগুলোতে অংশগ্রহণ করছে।

এটা অবশ্যই শুধু বিএনপির দাবি দাওয়া নয়, গণমানুষের যে দাবি-তা হচ্ছে এই সরকারের এখন পরিবর্তন হওয়া উচিত। তার জন্য একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া উচিত। সেই নির্বাচনের জন্য-যেটা আমরা আগেও বলেছি যে, এখানে একটা অন্তবর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই নির্বাচন কখনই সুষ্ঠু হতে পারে না। যে কারণে আমরা এই নির্বাচন যেন তত্ত্বাবধায় সরকারের অধীন হয়, এই সংসদকে বিলুপ্ত করে দিয়ে, সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে নতুন একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে নির্বাচন করার দাবি তুলেছি। অর্থাৎ একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনই সবকিছু নয়, কিন্তু নির্বাচন হচ্ছে একটা প্রধান ফটক বা গেট যেটা পার হলে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশের দিকে যাওয়া সম্ভব হয়। আমরা সে কারণেই নির্বাচনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
কিন্তু আমরা অতীত অভিজ্ঞতায় যেটা দেখেছি-আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে পরপর দুটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা জোর করে (নির্বাচন) করেছে। যেখানে মানুষের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। তারা আগের রাত্রে ভোট নিয়ে, বিনা ভোটের মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় আছে। যে কারণে দেশে চরম অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক সংকট এবং সুশাসনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে মানুষ বিরোধীদলের এই সমাবেশগুলোতে এভাবে উপস্থিত হচ্ছে।

ঢাকাপ্রকাশ: আগামী ১০ ডিসেম্বর আপনারা ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন। এই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আপনারা সরকারকে কী বার্তা দিতে চান?

মির্জা ফখরুল: প্রথমেই বলে নেই- এটি একটি ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর আমরা ঢাকায় কোন মহাসমাবেশের ডাক দেইনি। আমরা দশটি বিভাগে ১০টি সমাবেশ করেছি। তার মধ্যে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় আমাদের একটি গণসমাবেশ আছে। এই গণসমাবেশকে সফল করার জন্য ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় কাজ হচ্ছে, প্রচার হচ্ছে। নেতা-কর্মীরা সে কাজগুলো করছেন। ঢাকা বিভাগের গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোর একটা ফেজ শেষ হবে। পরবর্তী ধাপে আমরা মূল দাবিগুলো নিয়ে অর্থাৎ সরকার পতনের দাবি, সংসদ বিলুপ্তির দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করার দাবি, এই গুলো নিয়ে আমরা সামনে আসব।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করছেন। এক সময় তো আপনারা এর বিরোধিতা করেছিলেন। এখন কেন আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে চাচ্ছেন?

মির্জা ফখরুল: রাজনীতি কোনো স্ট্যাটিক ব্যাপার নয়। এখানে কোনো দাবি বা বিষয় একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে না। মানুষের প্রয়োজনেই রাজনীতি। আমরা যেটা উপলব্ধি করেছি সেটা হচ্ছে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটা উঠেছে- আওয়ামী লীগই দাবিটা করেছে। সে সময় জাতীয় পার্টি ছিল, জামায়াতে ইসলাম ছিল-তাদের সঙ্গে তারা (আওয়ামী লীগ) দাবিটা করেছে। তখন একটা প্রচলিত নিয়ম ছিল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সেটাকে সামনে রেখে আমরা চিন্তা করেছিলাম। পরে আমরা যেটা দেখি যে আমাদের রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি সেই সংস্কৃতির জন্যে নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে কখনই সুষ্ঠ নির্বাচন হতে পারে না। সেজন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেটাকে মেনে নিয়ে পার্লামেন্টে বিশেষ সেশন ডেকে তিনি এটাকে (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) পাশ করেছেন এবং এটাকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সেটার (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) অধীনে চারটা নির্বাচন সুষ্ঠভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এটা একটা মীমাংসিত বিষয় এখানে নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকা একটা বড় প্রয়োজন হয়ে দাড়িয়েছে এবং এটাই সংকটের সমাধান করতে পারে। এ ছাড়া, সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।

ঢাকাপ্রকাশ: এবারের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা কী হবে? এটা কী বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে হবে, না নতুন কোন ফর্মুলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। 

মির্জা ফখরুল: এটা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) তো অতীতে ছিল, আমাদের সংবিধানে ছিল। এর যদি কোনো পরির্বতন করতে হয়, সরকার যদি সেটা এগ্রি করে তাহলে সেটা আলাপ আলোচনা করে কোনো কিছু পরিবর্তন থাকলে সেটুকু পরিবর্তন করা সম্ভব। কিন্তু বেসিক বিষয়টা হচ্ছে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকার নির্বাচনকালীন সময়ে থাকতে হবে।

ঢাকাপ্রকাশ: সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানে তাহলে আপনারা নির্বাচনের ব্যাপারে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন?

মির্জা ফখরুল: আমরা নির্বাচনে যাব না। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাব না। আমরা জনমত গড়ে তুলছি এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই সরকারকে বাধ্য করব তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দেওয়ার।

ঢাকাপ্রকাশ: বর্তমানে দেশে নানা ধরনের সংকট রয়েছে। আপনি কী মনে করেন বর্তমান সরকার এ সকল সংকট মোকাবিলা করে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারবে?

মির্জা ফখরুল: এই সরকার তো ব্যর্থ হয়েছে। তারা সংকট মোকাবিলা করতে পারবে না। কারণ এক নম্বর হলো এই সরকারের কোনো জনভিত্তি নেই, জনগণের ম্যান্ডেট নেই। দুই নম্বর হলো এই সরকার সম্পূর্ণ দুর্নীতিপরায়ণ। এত বেশি দুর্নীতিপরায়ণ যে সংকটগুলো দুর্নীতির কারণে আরও বেশি করে সৃষ্টি হয়েছে। এবং ইনিস্টিটিউশনগুলোকে তারা একেবারে ভেঙে ফেলেছে, ব্যাংকিং সিস্টেমকে ভেঙে ফেলেছে, স্টক মার্কেটকে নষ্ট করেছে, পুরো ফিন্যান্স সিস্টেমটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনার বিবেচনায় দেশের বর্তমান সংকট মোকাবিলায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

মির্জা ফখরুল: এটার জন্য বড় প্রয়োজন যেটা সেটা হলো একটা নির্বাচিত সরকার, জনগণের ম্যান্ডেড প্রাপ্ত সরকার।যেটা হলে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডার যারা আছে, বিশেষজ্ঞ যারা আছে, দেশের যারা বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে সমাধান করার ব্যবস্থা নিতে পারবে। জনগণের ম্যান্ডেড প্রাপ্ত সরকারের পক্ষে কেবল সেটা সম্ভব। অন্য কোনোভাবে সেটা সম্ভব নয়।

ঢাকাপ্রকাশ: সম্প্রতি গণমাধ্যমে আপনার কয়েকটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। আপনি তাতে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান কিছু কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কথা বলেছেন। আপনি কি মনে করেন নিষেধাজ্ঞার পর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে?

মির্জা ফখরুল: না বিষয়টা সেরকম নয়। বিষয়টা হলো যে র‌্যাব হলো আমাদের একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এবং এর কাজটা ছিল দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক আওয়ামী লীগ সরকার আসার পরে র‌্যাবকে তারা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করেছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য তারা র‌্যাব দিয়ে এমন কতগুলো কাজ করিয়েছে যেগুলো সম্পূর্ণভাবে বেআইনি এবং মানবাধীকার লঙ্ঘন করেছে তারা। সে কারণেই র‌্যাবকে এই স্যাংশনের আওতায় পড়তে হয়েছে। যেটা আমাদের জন্য জাতিগতভাবে অত্যন্ত লজ্জাজনক। কিন্তু এর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী হচ্ছে সরকার। যারা তাদেরকে ব্যবহার করে এই বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার ব্যবস্থা করেছে। সেক্ষেত্রে র‌্যাবকে একেবারে পুরোপুরি রাজনীতির বাইরে নিয়ে এসে তাকে তার কাজের যে জায়গাটা সৃষ্টি করা যায় সেটা করা যেতে পারে।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনি এবং আপনার দল বর্তমান সরকারকে অবৈধ সরকার বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। এর যৌক্তিক কারণ কী?

মির্জা ফখরুল: সংবাদিক হিসেবে এর যৌক্তিক কারণ তো আপনাদের সবচেয়ে বেশি জানা উচিত। এ কারণে যে সরকার কখন বৈধ হয়? যখন সে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত হয়। একটা নির্বাচনের মাধ্যমে পারলামেন্ট গঠিত হয় এবং পাররামেন্টের মাধ্যমে সে সরকার গঠিত হয়। কিন্তু এই সরকার তো কোনো নির্বাচনে জয়ী হয়নি। তারা ২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করেছে। পাচঁ শতাংশ মানুষও ভোট দিতে যায়নি। আর ২০১৮ তে আগের রাত্রে জোর করে ভোট নিয়ে চলে গেছে। সুতরাং এই সরকারের কোনো মেন্ডেটই নেই। জনগণের কোনো ভোটই তারা পায়নি। সুতরাং এটাতো অবশ্যই অবৈধ সরকার।

ঢাকাপ্রকাশ: আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। বর্তমানে তা অনুপস্থিত। এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

মির্জা ফখরুল: এর প্রধান কারণ হলো আওয়ামী লীগ মনে করে যে দেশে একমাত্র তারাই রাজনৈতিক দল থাকবে, আর কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না এবং তারা মনে করে এ দেশের মালিক তারা। এ কারণে তারা এ ধরনের আচরণ করে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে তারা কোন ধর্তব্যের মধ্যে নিয়ে আসে না। তারা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্মূল করতে চায়। বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রবলেম কোন জায়গায়? প্রবলেম এক জায়গায়। যে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে একেবারে সহ্য করতে পারে না। তারা বিএনপিকে নির্মূল করতে চায়। আমরা তো কখনই এগুলো বিশ্বাস করি না। আমরা বহুমাত্রিক গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা বহু দলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি যে, সব দলগুলো একসাথে রাজনীতি করবে। সে কারণেই আমরা একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ে এসেছি এবং সেভাবেই আমরা কাজ করি। সুতরাং আমরা মনে করি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য থাকা উচিত, তাদের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা থাকা উচিত, সহনশীলতা থাকা উচিত এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠা উচিত।

ঢাকাপ্রকাশ: মানুষের মনে প্রশ্ন, আপনাদের দল ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?

মির্জা ফখরুল: এই বিষয়টা আমি মনে করি যে একটি অযৌক্তিক প্রশ্ন। আমাদের দলের চেয়ারপারসন আছেন খালেদা জিয়া। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। সে প্রশ্নতো আসতেই পারে না। জবাব একটাই।

ঢাকাপ্রকাশ: স্যার, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

মির্জা ফখরুল: থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।

Header Ad

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত

কোটা আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের হাতে সাড়ে ৭ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল।

এ সময় নিহত আবু সাঈদের বৃদ্ধ বাবা মকবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর আগে আরেকদিন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসে। সেই সময় ভিসি স্যার আমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি স্যারকে বলেছিলাম আমাদের পরিবারের একজনকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া হয়। ভিসি স্যার আশ্বস্ত করেছেন। প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ না কেউ খোঁজ রেখেছেন।

এ ছাড়া পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই সহায়তা করছেন বলেও জানায় আবু সাঈদের পরিবার।

মকবুল হোসেন আরও বলেন, আমার কলিজার টুকরা ছিল আবু সাঈদ। তার প্রাইভেট পড়ানোর (টিউশনের) জমানো টাকায় আমার সংসার চলতো। সন্তান হারিয়েছি, এ শোকের কোনো সান্ত্বনা নেই। বাবা হয়ে সবচেয়ে ভারী কাজ হলো সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়া।

এখন শুধু সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চান বৃদ্ধ এ বাবা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে আর্থিক সহায়তা প্রদানের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, ভিসি মহোদয়ের নির্দেশে আবু সাঈদের বাবা-মায়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় যোগাযোগ রাখছে। ভিসি স্যার নিজেও সাঈদের পরিবারের খোঁজ রাখছেন, পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে আজকে সাড়ে সাত লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কোটা সংস্কারে দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মিছিলের সম্মুখে থেকে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ নিহত হন। এ ঘটনার পর আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলাজুড়ে। নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭

প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ২০৯টি। নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ২০৯টি মামলায় ২৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সারাদেশে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। অভিযানে ঢাকায় ৬৩ ও ঢাকার বাইরে ২০৩ জনসহ মোট ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এদিকে আজ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত অনেকবার গণতান্ত্রিক সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা বা দেশকে অকার্যকর করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পুলিশের কারণে তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য তারা এবার পুলিশকেই টার্গেট করেছে।

যারা পুলিশকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, স্বপ্নের মেট্রোরেলসহ সরকারি স্থাপনায় নাশকতা চালিয়েছে। যারা এসবের নেতৃত্ব দিয়েছে, অর্থ আদান-প্রদান করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’

বক্তব্য রাখছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক বলেছেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটা শতকরা পাঁচ ভাগ রেখেছে। এটি মুক্তিযোদ্ধারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু পরিষ্কার হওয়া দরকার, বাকি পদে কাদের নেওয়া হবে। আমরা বাকি ৯৫ শতাংশ কোটা নিয়ে আদালতের সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়ায় বোঝাপড়া করব।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে নরসিংদীর পাঁচদোনায় সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন পরিদর্শন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনাসভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এই পাঁচদোনা মোড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। স্মৃতিধন্য এই স্থানে নির্মাণ করা হয় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। দুঃখের বিষয়, সেই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সেই হামলা চালানো হয়েছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী ও বিএনপির ক্যাডাররা মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারেনি। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের সেই গর্বের ধন আজ পরাজিত শক্তির কাছে আক্রান্ত হচ্ছে।

এসময় তিনি রাজাকারদের তালিকা প্রস্তুত করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, কোটার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মতামত গ্রহণের জন্যও আদালতকে অনুরোধ জানানো হবে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটিও আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করা হবে।

তিনি বলেন, যারা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে, তারা কখনো ছাত্র হতে পারে না। বিএনপি, জামায়াত ও রাজাকারের দল এ নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। তাদের কার্যকলাপে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে যারা আঘাত করেছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বিএনপি, জামায়াত, শিবির ও ছাত্রদলের ক্যাডার।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য শাহজাহান খান, নরসিংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো, পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ প্রমুখ।

সর্বশেষ সংবাদ

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭
‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’
কোটা আন্দোলনে নিহত রুদ্রের নামে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকের নামকরণ
সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
এক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৬ কোটি টাকা লোকসান
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ-পাঞ্জাবে ১৪৪ ধারা জারি
রিমান্ড শেষে কারাগারে নুরুল হক নুর
ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই সরকারের: মির্জা ফখরুল
নরসিংদী কারাগার থেকে লুট হওয়া ৪৫ অস্ত্র উদ্ধার
বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়ে নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত
মোবাইল ইন্টারনেট কবে চালু হবে, জানাল বিটিআরসি
পুলিশকে দুর্বল করতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা-ধ্বংসযজ্ঞ: ডিবি হারুন
মৃত্যুর দিনক্ষণ গোপন রাখা হয়েছে যে কারণে
অলিম্পিক উদ্বোধনের আগেই প্যারিসে উচ্চগতির রেল নেটওয়ার্কে ভয়াবহ হামলা
তারেক রহমানের নির্দেশেই রাষ্ট্রের ওপর হামলা হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
শিক্ষার্থীদের হত্যা করে সরকারের ওপর দায় চাপানো হয়েছে: ওবায়দুল কাদের
‘বাংলাদেশে ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ত ঝরছে’, মমতাকে কড়া বার্তা দিল্লির
বাজারে সরবরাহ বাড়লেও সবজির দামে এখনো অস্বস্তি