
যারা যুদ্ধ করেছিল
১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:০৭ পিএম | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:০৮ এএম

শান্তি কমিটির মেম্বর ফজলুর রহমান ভয়ঙ্কর বিরক্ত মুখে বাড়িতে আসে। তারপর রাজাকার আলিম, জহর ও গেদুকে জরুরি ভিত্তিতে ডেকে পাঠায়। রাজাকার তিনজন আসতে দেরি করছিল। ফজলুর রহমানের অস্থিরতা বেড়ে যায়। ওরা আসামাত্র ফজলুর রহমান ধমকে ওঠে, ‘কীসের ডিউটি করস? মুক্তিফৌজ কীভাবে মিলিটারি ক্যাম্প আক্রমণ করে?’
রাজাকার আলিম ঢোক গিলে বলে, ‘শালারা মনে হয় যাদু জানে। কেমনে আসে কেমনে যায় আমরা বুঝতেও পারি না মেম্বর সাব।’
ফজলুর রহমান দাঁত খিঁচিয়ে বলে, ‘মিলিটারি তোগো ডাইকা পাঠাইছে। এই কথা তাগো সামনে কইতে পারবি?’
বেটে মতো রাজাকার জহর তুতলিয়ে বলে, ‘আম-গো ডাকছে ক্যা?’
ফজলুর রহমান বলে, ‘পর পর দুই রাত মুক্তিফৌজ মিলিটারি ক্যাম্প আক্রমণ করছে। তোরা কি বইসা বইসা বাল ছেঁড়স। তাড়াতাড়ি খবর নে। দুস্কৃতিকারীরা কোন বাড়িতে আশ্রয় নেয়।’ ফজলুর রহমান গালাগালি করে ধমকে ওঠে। বোকা স্বভাবের গেদু রাজাকার বলে, ‘আমার মনে হয়, ওরা জ্বিনের মন্ত্র পইড়া আসে। তাই আমরা দেখতে পাই না।’
‘হারামজাদা কয় কী? মিলিটারি তোগো হোগার মধ্যে বন্ধুকের নল ঢুকায়া নাড়িভুড়ি বাইর কইরা দিব। খামাখা তোগো রাজাকার বানাইছে?’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে ফজলুর রহমান। দম নিয়ে বিড় বিড় করে বলে, ‘আজ অল্পের জন্য জানে বাঁইচা আছি। নলসোন্দা গ্রামের বাচ্চু হাজিকে ক্যাপটেন আব্বাস খান লাত্থি দিয়া চেয়ার থাইকা ফালায়া দিছে। আমার তখন হাত পা কাঁপতে ছিল।’
‘তারে লাত্থি দিছে ক্যা?’
ফজলুর রহমান উদাস কণ্ঠে বলে, ‘ক্যাপটেনের মেজাজ ছিল চড়া। এইসময় হাজি সাহেব রসিকতা করে বলেছে, ‘স্যার, বাচ্চা পোলাপান ক্যাম্প অ্যাটাক করছে তাতে আপনারা এতো কেয়া ডরকে যাতা হায়।’
হাজি সাহেব এই কথা কওয়ার লগে লগে ক্যাপটেন সাহেবের চোখ ফাইটা যেন আগুন বাইর হচ্ছিল। উইঠা গিয়া এমন লাত্থি ঝাড়ে হাজি সাহেব কয়েক গড়ান খায়া ছিটকে বাইরে গিয়া পড়ে। ক্যাপটেন সাহেব পিস্তল বাইর করে হাজি সাহেবের বুকে ধরে। তাই দেইখা সবারই হাত-পার কাঁপুনি শুরু হয়। তার এই ব্যাঘ্র গর্জন আমরা আগে কোনোদিন দেখি নাই।’
আলিম বলে, ‘বাঁচার বুদ্ধি কন মেম্বর সাব। কী করলে তার মেজাজ ঠান্ডা হবে?’
ভাবনা মুখে ফজলুর রহমান বলে, ‘তারা যে ক্ষ্যাপা ক্ষেপছে, আমি তো বাঁচার কোনো কূল কিনারা দেখতাছি না। পারলে আমাগোরেই গুলি করে। আমিতো ভীষণ ভয় পাইছিলাম এই বুঝি বাপের দেওয়া জানটা আজ যায়।’ ফজলুর রহমান দম নিয়ে বলে, ‘একটা পথ আছে।’
‘কী পথ?’ রাজাকাররা দম ফেলে উন্মুখ হয়ে তাকায়।
‘খোঁজ নিয়া দেখ, আশে পাশের কোনো গ্রামে আওয়ামী লীগ কিংবা কোনো হিন্দুর সুন্দরী মেয়ে আছে কিনা? থাকলে তাকে ক্যাম্পে দিয়া আয়। শুনছি ক্যাপটেন সাহেবের মাইয়া নেশা আছে। সুন্দরী মেয়ে দেখলে ক্যাপ্টেনের মেজাজ ঠান্ডা হতে পারে।’
গেদু রাজাকার বলে, ‘নদীর ওপার রাধানগর গ্রামে এক হিন্দুর সুন্দরী মেয়ে আছে।’
‘ওই হিন্দুর নাম কী?
‘কালিপদ রায়।’
‘কালিপদ মাস্টার?’ ফজলুর রহমান জিজ্ঞেস করে।
গেদু বলে, ‘হ কালিপদ মাস্টার।’
‘তাইলে আর দেরি করিস না। আজই ওই মালাউনের মেয়েকে ধইরা ক্যাম্পে দিয়া আয়।’
ফজলুর রহমানের এই আদেশ পেয়ে রাজাকাররা আর দেরি করে না। তারা তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে যায়। ফজলুর রহমান আয়েশ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে। এইসময় সাকিব ঢুকে রুমে। সে এতক্ষণ আড়াল থেকে সবই শুনেছে। সাকিব ফজলুর রহমানের কাছে গিয়ে বলে, ‘আব্বা, আপনি কালিপদ স্যারের মেয়েকে ক্যাম্পে দিতে বললেন?’
‘হ্যা। অসুবিধে কী?’
‘উনি আমার শিক্ষক। খুবই ভালো মানুষ।’
‘সে মালাউন। মালাউনরা কোনোদিন ভালো হয় না। ওরা মুশরিক কাফের। ওরা ইসলামের শত্রু। যতক্ষণ ওরা ইসলাম গ্রহণ না করবে ততক্ষণ ওরা মুসলমানদের শত্রু। ওদের হত্যা করার বিধান দিয়েছেন আল্লাহপাক।’ ফজলুর রহমান এই কথা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সাকিবের মনটা ভীষণ খারাপ হয়। স্যারের মতো সজ্জন অমায়িক মানুষের মেয়েকে মিলিটারি ক্যাম্পে দেওয়াটা সাকিব মেনে নিতে পারছে না। বাধা দিতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। রাজাকাররা সাথীর কথা মিলিটারিকে জানিয়ে দিতে পারে। তার এই স্বপ্নময় দিনের অবসান হয়ে যাবে। দুস্কৃতিকারির বোনকে আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে জীবনটাও চলে যেতে পারে। সাকিব ভেবে পাচ্ছে না এখন সে কী করবে।
ঘণ্টা খানেকের মধ্যে এলাকায় প্রচার হয়ে যায় রাধানগর গ্রামের কালিপদ মাস্টার এবং তার স্ত্রীকে গুলি করে মেরে তার কলেজ পড়ুয়া ছোটমেয়ে হৈমন্তিকে তুলে নিয়ে গেছে রাজাকাররা। বড় মেয়ে শুক্লা ও একমাত্র ছেলে জীবন কুমার অনেক আগেই কোলকাতা চলে গেছে। বাবা কালিপদ ও মাকেও নিতে চেয়েছিল তারা। কালিপদ রায় রাজী হননি। বলেছেন, ‘জন্মভূমি ছেড়ে তিনি কোথাও যাবেন না।’
যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে চিঠি লিখে বড় মেয়ে শুক্লা বার বার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভীষণ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। তুমি সবাইকে নিয়ে আমাদের এখানে চলে এসো। কালিপদ রায় জবাবে বলেছেন, ‘মরলে তিনি জন্মভূমিতেই মরবেন। তবু জন্মভূমি ছেড়ে কোথাও যাবেন না।’
ঘটনাটা যেই শুনছে সেই আফসোস করছে। অত্যন্ত সজ্জন অমায়িক ব্যক্তি বাবু কালিপদ। দীর্ঘদিন রতনকান্দি হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। অবসরে সকাল বিকেল ছাত্র পড়িয়ে এখন সময় কাটান।
কেউ কেউ রাজাকারদের অভিসম্পাত করছেন। জোহা তালুকদার বার বার আফসোস করছেন। তিনি আদমজি জুট মিলের ম্যানেজার। ২৫ মার্চ পাকিস্তানিরা গণহত্যা শুরু করলে জোহা তালুকদার পরিবার নিয়ে পালিয়ে বাড়ি চলে আসেন। তিনি কান্না গলায় বার বার বলছিলেন, ‘উনি আমার শিক্ষক ছিলেন। এমন মহাজ্ঞানী শিক্ষক, এমন ভালো মানুষ আমার জীবনে আর পাইনি। অংকের জাহাজ বলা হতো তাকে।’
স্ত্রী সাহারাকে বললেন, ‘তাঁর সম্পর্কে একটা মিথ চালু আছে, জানো? আমরা শুনেছি, একবার স্কুলে ইন্সপেক্টর এসেছে। তখন তিনি ক্লাস নাইনে অ্যালজেব্রা করাচ্ছেন। ব্ল্যাকবোর্ডে তিনি অংকটি লিখছিলেন, সেইসময় ইন্সপেক্টর তাঁর ক্লাসে ঢুকে পড়েন।
ইন্সপেক্টর জিজ্ঞেস করেন, ‘কী করাচ্ছেন আপনি?’
কালিপদ স্যার বলেন, ‘স্যার অ্যালজেব্রা করাচ্ছি।’
ইন্সপেক্টর ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে কালিপদ স্যারের করা অংকটি দেখে বিরক্ত মুখে বললেন, ‘আপনিতো ভুল অংক করাচ্ছেন।’
ইন্সপেক্টরের এই কথায় কালিপদ স্যারের ইগোতে লাগে। তিনি মনে মনে ভীষণ রেগে যান। তারপর তিনি ইন্সপেক্টরকে বিনীত ভাবে তার আসনে বসতে বলেন। অংকটি এক নম্বর দুই নম্বর দিয়ে মোট নয় নম্বর পর্যন্ত লিখলেন ব্ল্যাকবোর্ডে।
ইন্সপেক্টর অবাক হয়ে বললেন, ‘এ কী করছেন আপনি? কালিপদ বাবু বললেন, ‘স্যার, এই অংকটি আমি নয় ধরনের ফর্মুলায় করেছি।’
‘কেন?’
‘এক নম্বর ফর্মুলা হলো ক্লাস সেভেনের ছাত্রদের জন্য। দুই নম্বর হলো ক্লাস এইটের ছাত্রদের জন্য। তিন নম্বর হলো ক্লাস নাইনের ছাত্রদের জন্য। চার নম্বর হলো ক্লাস টেনের ছাত্রদের জন্য। পাঁচ নম্বর হলো কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের জন্য। ছয় নম্বর হলো সেকেন্ড ইয়ারের জন্য। সাত নম্বর হলো বিএসসি ছাত্রদের জন্য। আট নম্বর হলো এমএসসি ছাত্রদের জন্য আর নয় নম্বর হলো আপনার মতো ইনসপেক্টরের জন্য।’
কালিপদ স্যারের এই কথায় ইন্সপেক্টর সাহেব রেগে-মেগে চলে যান। গিয়ে তিনি স্কুলের ডেভলপমেন্ট ফান্ড বন্ধ করে দেন।
তাতে কালিপদ বাবু দমে যাননি। তার অংক ভুল এই কথা তিনি মেনে নিতে পারেননি। কোলকাতা শিক্ষা বোর্ডে তিনি অংকে একশোতে একশো পেয়েছিলেন। কোলকাতা শিক্ষা বোর্ড তাঁকে স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মানিত করেছিল। অবসর নেওয়ার পর ছাত্রদের অনুরোধে সকাল বিকেল কয়েক ব্যাজ ছাত্রকে অংক শিখাতেন। সেই দেবতুল্য মানুষটিকে রাজাকাররা গুলি করে মেরেছে। এই কষ্টে জোহা তালুকদার অস্থির হয়ে পড়েছেন।
রাজাকাররা তার মেয়ে হৈমন্তিকে ধরে নিয়ে যাবার সময় তার স্ত্রীসহ ওদের সামনে এসে দাঁড়ালে আলিম রাজাকার দুইজনকে গুলি করে মেরে ফেলে। গুলি শব্দে কেউ তাদের সামনে এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। কালিপদ বাবুর মাথায় গুলি করে আলিম। সঙ্গে সঙ্গে মগজ ছিটকে বেরিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। কালিপদ বাবুর স্ত্রীর বুকে গুলি করে। সে অনেকক্ষণ জল জল বলে গোঙরাতে থাকে। গুলির শব্দে ভয়ে প্রতিবেশিরা পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সেও মারা যায় জল না পেয়ে।
প্রতিবেশিরা লাশ ঘিরে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে থাকে। কেউ বলে, ‘রিস্ক নিয়ে তার এইসময় বাংলাদেশে থাকা ঠিক হয়নি।’
কেউ বলে, ‘তার ছাত্ররা যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছে তারা এই ব্যাপারটা মেনে নেবে না। তারা চরম প্রতিশোধ নেবে।’
হৈমন্তিকে চোখ বেঁধে মুখে কাপড় গুজে টেনে-হিচড়ে নিয়ে আসে রাজাকার আলিমের বাড়িতে। আলিমের বউ বাপের বাড়ি গেছে। স্বামী রাজাকারের দলে ভর্তি হয়েছে এটা সে মেনে নিতে পারেনি।
ফাঁকা বাড়িতে দুইজন হৈমন্তিকে চেপে ধরে রাখে। হৈমন্তি প্রাণপণ চেষ্টা করে ওদের হাত থেকে ছুটতে। না পেরে সে ওদের পা জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। প্রথমে আলিম তাকে ধর্ষণ করে। তারপর বাকি দুজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তারপর রাতে তাকে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। তখনো বার বার হৈমন্তি তাদের পা জড়িয়ে ধরছিল।
ক্যাপ্টেন আব্বাস খান হৈমন্তিকে দেখে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। বোঝা যায় হৈমন্তিকে তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। হৈমন্তি পছন্দ হওয়ার মতো মেয়ে। তার দুধে আলতা গায়ের রং। টানা চোখ জোড়ায় মায়াবি আকর্ষণ। দৃষ্টি কাড়া শরীর। ক্যাপ্টেন আব্বাস খান আর দেরি করে না। হাসি মুখে হৈমন্তির হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়। আলিমরা সালাম দিয়ে খুশি মনে চলে আসে।
রাতে গ্রামে ফিরে সোজা চলে যায় শান্তি কমিটির মেম্বর ফজলুর রহমানের বাড়িতে। সব শুনে ফজলুর রহমান তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ধন্যবাদ দেয় রাজাকারদের। বলে, ‘তোদের চাকরি আজ থেকে স্থায়ী হলো। এখন বাড়ি গিয়া আরাম কইরা ঘুমা।’
তারপর তিন রাজাকার ফিরে আসে আলিমের বাড়িতে। রাতে তারা একসঙ্গে আনন্দ ফূর্তি করে কাটাবে। এই ভাবনায় তারা আলিমের বাড়িতে ভালো খানাপিনার আয়োজন করে। পাশের বাড়ির এক বুড়ি চাচিকে ডেকে নিয়ে আসে। তাকে রান্নার দায়িত্ব দেয়। তাদের মন ভীষণ ফুরফুরে। ক্যাপ্টেন সাহেবকে তারা খুশি করতে পেরেছে। তার উপর হিন্দু নারী ভোগ করে অসীম ছোয়াবের ভাগীও হয়েছে। সেই আনন্দে তারা আত্মহারা।
মুরগির মাংস আর ভূনা খিচুড়ি খেয়ে অনেক মজা করে গভীর রাতে তারা শুয়ে পড়ে।
চলবে...
আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>
যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৪
এসএন

এবার দেশের সকল ইউএনওকে বদলির নির্দেশ
০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২৪ পিএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:১৫ এএম

দেশের সকল ওসিকে বদলির নির্দেশের পর এবার দেশের সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) বদলির নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে এ নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
গতকাল ইসির উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে নির্দেশনাটি পাঠান।
চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের নিমিত্ত সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বর্তমান কর্মস্থলে ১ বছরের অধিক চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে তাদের অন্য জেলায় বদলির প্রস্তাব আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করা প্রয়োজন।
চিঠিতে আরও জানানো হয়, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশিত হয়ে বিনীত অনুরোধ করা হলো।
এর আগে দেশের সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদলি করতে নির্দেশনা দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে উদ্দেশ্য করে এ নির্দেশনা দেয় সাংবিধানিক সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) ইসির উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমান এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে।
চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের অধিক চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে তাদের অন্য জেলায়/অন্যত্র বদলির প্রস্তাব আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করা প্রয়োজন। এ অবস্থায় উল্লিখিত সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশিত হয়ে বিনীত অনুরোধ করা হলো।

ঢাকাপ্রকাশ-এর ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২০ পিএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:১৭ এএম

‘পুরাতনকে ভুলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা’ এই স্লোগান ধারণ করে ঢাকাপ্রকাশ-এর এবারের ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) উদযাপিত হয়েছে। রাজধানীর ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার-এর নিজ কার্যালয়ে দিনটি উদযাপিত হয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এদিন সকাল থেকেই ঢাকাপ্রকাশ-এর ভবনে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা নিজেদের মধ্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি উৎসবে আগতদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন।

শুক্রবার (০১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কেক কেটে ঢাকাপ্রকাশ-এর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অত্র প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শাহাদৎ জামান সাইফ। এ সময় অন্যান্য অতিথির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকাপ্রকাশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রবিউল ইসলাম, ঢাকাপ্রকাশ-এর সাংবাদিক ও কলাকুশলীরা।

কেক কাটার পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শাহাদৎ জামান সাইফ বলেন, ঢাকাপ্রকাশ তার দ্বিতীয় বছর অতিক্রম করল। দুইটি বছর গণমাধ্যমের জন্য বড় কিছু নয়। কিন্তু এই দুই বছরে বোঝা যায়; এই মাধ্যমটির সম্ভাবনা কতটুকু। এই অল্প সময়েই ঢাকাপ্রকাশকে পাঠকরা যতটা গ্রহণ করেছে তা সত্যি অভাবনীয়। ‘পুরাতনকে ভুলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা আরও সামনে এগিয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর। তারুণ্য নির্ভর এই গণমাধ্যম পাঠকদের ভালোবাসায় সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে ছড়িয়ে পড়বে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
এসময় ঢাকাপ্রকাশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, আজ ঢাকাপ্রকাশের জন্মদিন। সাফল্যের দুই বছর অতিক্রম করে ৩য় বর্ষে পা রাখল তারুণ্য নির্ভর এই গণমাধ্যমটি। মাল্টিমিডিয়া নিউজপোর্টালটি বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পাঠকদের মাঝে ইতিধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। তারুণ্যের অদম্য শক্তিতে ঢাকাপ্রকাশ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
তিনি আরও বলেন, দুই বছর সময়টি কম হলেও আমরা পাঠকদের কাছে এই অল্প সময়ের মধ্যে যে জায়গা করে নিয়েছি তা সত্যিই অনেক বড় অর্জন। আমাদের এই অর্জনের পেছনে পাঠকদের ভূমিকা সব থেকে বেশি। তাদের গ্রহণযোগ্যতাই আমাদের সব থেকে বড় সম্পদ। তারাই আমাদের শক্তি, আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। পাঠকদের এই ভালোবাসাই ঢাকাপ্রকাশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে।

বর্ষপূর্তিতে ঢাকাপ্রকাশের মফস্বল বিভাগের জাহিদুল ইসলাম তার অনুভতি ব্যক্ত করে জানান, নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। ঢাকাপ্রকাশ তরুণ নির্ভর একটি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন বিভাগের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে সাজানো হয়েছে এই পরিবার। ঢাকাপ্রকাশ অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় স্থান দখল করে নিয়েছে। এর জন্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ও কাঠামোগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
স্পোর্টস বিভাগের আশিক মোহাম্মদ রিয়াদ বলেন, সাফল্যের দুটি বছর শেষ করলাম আমরা। এবার সামনে এসেছে নতুন সম্ভাবনার দিন। ঢাকাপ্রকাশ পরিবার আরও সামনে এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করছি। শুভ জন্মদিন ঢাকাপ্রকাশ।

কথা হয় ঢাকাপ্রকাশের ক্যাম্পাস বিভাগের একরামুজ্জামানের সাথে। তিনি বলেন, আজ ঢাকাপ্রকাশ তার ২ বছরের সাফল্যমাখা সময় অতিক্রম করে তৃতীয় বর্ষে পা রাখল। গণমাধ্যমে সত্যতা ও সচ্ছ্বতা বিদ্যমান রাখা সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। ঢাকাপ্রকাশ সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ‘পুরাতনকে ভুলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা’ এই স্লোগানকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে তার নিজস্ব গতিতে। পাঠকদের ভালোবাসায় পুরাতনকে ভুলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে চাই আমরা।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ঢাকাপ্রকাশের বিনোদন বিভাগের আরিফ হাসান বলেন, ঢাকা প্রকাশ এগিয়ে যাক অদম্য গতিতে। ছুটে চলুক সত্যের সন্ধানে। শুভ জন্মদিন ঢাকাপ্রকাশ।

ঢাকাপ্রকাশের ওয়েব ডেভেলপার পার্থদেব জানান, প্রতিদিনই আমরা পাঠকদের মন্তব্য বিশ্লেষণ করে তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের ওয়েবসাইটকে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। পাঠকদের বিভিন্ন মতামতের উপর ভিত্তি করে ঢাকাপ্রকাশকে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে।
এদিকে সারাদেশ থেকে প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং শোবিজ অঙ্গণের অনেকের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা এসে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ঢাকাপ্রকাশ-কে।
বিভাগ : গণমাধ্যম
বিষয় : ঢাকাপ্রকাশ , তয়-বর্ষে-ঢাকাপ্রকাশ , বর্ষপূর্তি , উদযাপিত , উদযাপন , পুরাতনকে-ভুলে-নতুন-উদ্যমে-এগিয়ে-যাচ্ছি-আমরা , জন্মদিন

ইসি’র শোকজের জবাব দিলেন সাকিব
০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০০ পিএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০৬ এএম

মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান তার বিরুদ্ধে করা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে করা শোকজের জবাব দিয়েছেন । শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত হয়ে শোকজের ব্যাখ্যা দেন তিনি। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সাকিব আল হাসান বলেন, সব কিছু সব সময় ক্যামেরাতে বলা সম্ভব না। দেখুন আমি তো গতকালই বললাম প্রথমবার আমি ইলেকশনে অংশগ্রহণ করতেছি। স্বাভাবিকভাবেই ভুলত্রুটি আমার হতে পারে, আমার অজান্তে। সেগুলো সংশোধন করা আমার দায়িত্ব। যখন আমি সব নিয়ম কানুন জানব, পড়ব, বুঝব, তারপর যদি হয় তখন আমার দোষ হতে পারে। কিন্তু এখন যেটা হয়েছে এটা নিতান্তই অনাকাঙ্ক্ষিত একটা বিষয়। নেক্সট টাইম যাতে এমন না হয় সে বিষয়ে আমি খেয়াল রাখব।
সাকিবের আইনজীবী সাজেদুর রহমান সংগ্রাম জানান, ২৯ নভেম্বর সাকিব আল হাসান মাগুরায় আসেন। তখন কামারখালী এলাকায় লোকজন জমা হয়। সেখানে ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। সেখানে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না কিংবা দলীয় কাউকে তিনি রাখেননি। সুতরাং এতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি। ভবিষ্যতে আমরা এ বিষয়ে সতর্ক থাকব। আইন মেনে চলব।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) মাগুরা-১ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধানী কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ সত্যব্রত শিকদার আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে সাকিব আল হাসানকে তলব করেন। তাকে আজ শুক্রবার অনুসন্ধান কমিটির কাছে সশরীরে হাজির হয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।