শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব- ১৫

যারা যুদ্ধ করেছিল

শান্তি কমিটির মেম্বর ফজলুর রহমান ভয়ঙ্কর বিরক্ত মুখে বাড়িতে আসে। তারপর রাজাকার আলিম, জহর ও গেদুকে জরুরি ভিত্তিতে ডেকে পাঠায়। রাজাকার তিনজন আসতে দেরি করছিল। ফজলুর রহমানের অস্থিরতা বেড়ে যায়। ওরা আসামাত্র ফজলুর রহমান ধমকে ওঠে, ‘কীসের ডিউটি করস? মুক্তিফৌজ কীভাবে মিলিটারি ক্যাম্প আক্রমণ করে?’

রাজাকার আলিম ঢোক গিলে বলে, ‘শালারা মনে হয় যাদু জানে। কেমনে আসে কেমনে যায় আমরা বুঝতেও পারি না মেম্বর সাব।’
ফজলুর রহমান দাঁত খিঁচিয়ে বলে, ‘মিলিটারি তোগো ডাইকা পাঠাইছে। এই কথা তাগো সামনে কইতে পারবি?’
বেটে মতো রাজাকার জহর তুতলিয়ে বলে, ‘আম-গো ডাকছে ক্যা?’
ফজলুর রহমান বলে, ‘পর পর দুই রাত মুক্তিফৌজ মিলিটারি ক্যাম্প আক্রমণ করছে। তোরা কি বইসা বইসা বাল ছেঁড়স। তাড়াতাড়ি খবর নে। দুস্কৃতিকারীরা কোন বাড়িতে আশ্রয় নেয়।’ ফজলুর রহমান গালাগালি করে ধমকে ওঠে। বোকা স্বভাবের গেদু রাজাকার বলে, ‘আমার মনে হয়, ওরা জ্বিনের মন্ত্র পইড়া আসে। তাই আমরা দেখতে পাই না।’
‘হারামজাদা কয় কী? মিলিটারি তোগো হোগার মধ্যে বন্ধুকের নল ঢুকায়া নাড়িভুড়ি বাইর কইরা দিব। খামাখা তোগো রাজাকার বানাইছে?’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে ফজলুর রহমান। দম নিয়ে বিড় বিড় করে বলে, ‘আজ অল্পের জন্য জানে বাঁইচা আছি। নলসোন্দা গ্রামের বাচ্চু হাজিকে ক্যাপটেন আব্বাস খান লাত্থি দিয়া চেয়ার থাইকা ফালায়া দিছে। আমার তখন হাত পা কাঁপতে ছিল।’
‘তারে লাত্থি দিছে ক্যা?’
ফজলুর রহমান উদাস কণ্ঠে বলে, ‘ক্যাপটেনের মেজাজ ছিল চড়া। এইসময় হাজি সাহেব রসিকতা করে বলেছে, ‘স্যার, বাচ্চা পোলাপান ক্যাম্প অ্যাটাক করছে তাতে আপনারা এতো কেয়া ডরকে যাতা হায়।’
হাজি সাহেব এই কথা কওয়ার লগে লগে ক্যাপটেন সাহেবের চোখ ফাইটা যেন আগুন বাইর হচ্ছিল। উইঠা গিয়া এমন লাত্থি ঝাড়ে হাজি সাহেব কয়েক গড়ান খায়া ছিটকে বাইরে গিয়া পড়ে। ক্যাপটেন সাহেব পিস্তল বাইর করে হাজি সাহেবের বুকে ধরে। তাই দেইখা সবারই হাত-পার কাঁপুনি শুরু হয়। তার এই ব্যাঘ্র গর্জন আমরা আগে কোনোদিন দেখি নাই।’

আলিম বলে, ‘বাঁচার বুদ্ধি কন মেম্বর সাব। কী করলে তার মেজাজ ঠান্ডা হবে?’
ভাবনা মুখে ফজলুর রহমান বলে, ‘তারা যে ক্ষ্যাপা ক্ষেপছে, আমি তো বাঁচার কোনো কূল কিনারা দেখতাছি না। পারলে আমাগোরেই গুলি করে। আমিতো ভীষণ ভয় পাইছিলাম এই বুঝি বাপের দেওয়া জানটা আজ যায়।’ ফজলুর রহমান দম নিয়ে বলে, ‘একটা পথ আছে।’
‘কী পথ?’ রাজাকাররা দম ফেলে উন্মুখ হয়ে তাকায়।
‘খোঁজ নিয়া দেখ, আশে পাশের কোনো গ্রামে আওয়ামী লীগ কিংবা কোনো হিন্দুর সুন্দরী মেয়ে আছে কিনা? থাকলে তাকে ক্যাম্পে দিয়া আয়। শুনছি ক্যাপটেন সাহেবের মাইয়া নেশা আছে। সুন্দরী মেয়ে দেখলে ক্যাপ্টেনের মেজাজ ঠান্ডা হতে পারে।’
গেদু রাজাকার বলে, ‘নদীর ওপার রাধানগর গ্রামে এক হিন্দুর সুন্দরী মেয়ে আছে।’
‘ওই হিন্দুর নাম কী?
‘কালিপদ রায়।’
‘কালিপদ মাস্টার?’ ফজলুর রহমান জিজ্ঞেস করে।
গেদু বলে, ‘হ কালিপদ মাস্টার।’
‘তাইলে আর দেরি করিস না। আজই ওই মালাউনের মেয়েকে ধইরা ক্যাম্পে দিয়া আয়।’

ফজলুর রহমানের এই আদেশ পেয়ে রাজাকাররা আর দেরি করে না। তারা তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে যায়। ফজলুর রহমান আয়েশ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে। এইসময় সাকিব ঢুকে রুমে। সে এতক্ষণ আড়াল থেকে সবই শুনেছে। সাকিব ফজলুর রহমানের কাছে গিয়ে বলে, ‘আব্বা, আপনি কালিপদ স্যারের মেয়েকে ক্যাম্পে দিতে বললেন?’
‘হ্যা। অসুবিধে কী?’
‘উনি আমার শিক্ষক। খুবই ভালো মানুষ।’
‘সে মালাউন। মালাউনরা কোনোদিন ভালো হয় না। ওরা মুশরিক কাফের। ওরা ইসলামের শত্রু। যতক্ষণ ওরা ইসলাম গ্রহণ না করবে ততক্ষণ ওরা মুসলমানদের শত্রু। ওদের হত্যা করার বিধান দিয়েছেন আল্লাহপাক।’ ফজলুর রহমান এই কথা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সাকিবের মনটা ভীষণ খারাপ হয়। স্যারের মতো সজ্জন অমায়িক মানুষের মেয়েকে মিলিটারি ক্যাম্পে দেওয়াটা সাকিব মেনে নিতে পারছে না। বাধা দিতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। রাজাকাররা সাথীর কথা মিলিটারিকে জানিয়ে দিতে পারে। তার এই স্বপ্নময় দিনের অবসান হয়ে যাবে। দুস্কৃতিকারির বোনকে আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে জীবনটাও চলে যেতে পারে। সাকিব ভেবে পাচ্ছে না এখন সে কী করবে।
ঘণ্টা খানেকের মধ্যে এলাকায় প্রচার হয়ে যায় রাধানগর গ্রামের কালিপদ মাস্টার এবং তার স্ত্রীকে গুলি করে মেরে তার কলেজ পড়ুয়া ছোটমেয়ে হৈমন্তিকে তুলে নিয়ে গেছে রাজাকাররা। বড় মেয়ে শুক্লা ও একমাত্র ছেলে জীবন কুমার অনেক আগেই কোলকাতা চলে গেছে। বাবা কালিপদ ও মাকেও নিতে চেয়েছিল তারা। কালিপদ রায় রাজী হননি। বলেছেন, ‘জন্মভূমি ছেড়ে তিনি কোথাও যাবেন না।’
যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে চিঠি লিখে বড় মেয়ে শুক্লা বার বার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভীষণ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। তুমি সবাইকে নিয়ে আমাদের এখানে চলে এসো। কালিপদ রায় জবাবে বলেছেন, ‘মরলে তিনি জন্মভূমিতেই মরবেন। তবু জন্মভূমি ছেড়ে কোথাও যাবেন না।’

ঘটনাটা যেই শুনছে সেই আফসোস করছে। অত্যন্ত সজ্জন অমায়িক ব্যক্তি বাবু কালিপদ। দীর্ঘদিন রতনকান্দি হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। অবসরে সকাল বিকেল ছাত্র পড়িয়ে এখন সময় কাটান।
কেউ কেউ রাজাকারদের অভিসম্পাত করছেন। জোহা তালুকদার বার বার আফসোস করছেন। তিনি আদমজি জুট মিলের ম্যানেজার। ২৫ মার্চ পাকিস্তানিরা গণহত্যা শুরু করলে জোহা তালুকদার পরিবার নিয়ে পালিয়ে বাড়ি চলে আসেন। তিনি কান্না গলায় বার বার বলছিলেন, ‘উনি আমার শিক্ষক ছিলেন। এমন মহাজ্ঞানী শিক্ষক, এমন ভালো মানুষ আমার জীবনে আর পাইনি। অংকের জাহাজ বলা হতো তাকে।’
স্ত্রী সাহারাকে বললেন, ‘তাঁর সম্পর্কে একটা মিথ চালু আছে, জানো? আমরা শুনেছি, একবার স্কুলে ইন্সপেক্টর এসেছে। তখন তিনি ক্লাস নাইনে অ্যালজেব্রা করাচ্ছেন। ব্ল্যাকবোর্ডে তিনি অংকটি লিখছিলেন, সেইসময় ইন্সপেক্টর তাঁর ক্লাসে ঢুকে পড়েন।
ইন্সপেক্টর জিজ্ঞেস করেন, ‘কী করাচ্ছেন আপনি?’
কালিপদ স্যার বলেন, ‘স্যার অ্যালজেব্রা করাচ্ছি।’
ইন্সপেক্টর ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে কালিপদ স্যারের করা অংকটি দেখে বিরক্ত মুখে বললেন, ‘আপনিতো ভুল অংক করাচ্ছেন।’
ইন্সপেক্টরের এই কথায় কালিপদ স্যারের ইগোতে লাগে। তিনি মনে মনে ভীষণ রেগে যান। তারপর তিনি ইন্সপেক্টরকে বিনীত ভাবে তার আসনে বসতে বলেন। অংকটি এক নম্বর দুই নম্বর দিয়ে মোট নয় নম্বর পর্যন্ত লিখলেন ব্ল্যাকবোর্ডে।
ইন্সপেক্টর অবাক হয়ে বললেন, ‘এ কী করছেন আপনি? কালিপদ বাবু বললেন, ‘স্যার, এই অংকটি আমি নয় ধরনের ফর্মুলায় করেছি।’
‘কেন?’
‘এক নম্বর ফর্মুলা হলো ক্লাস সেভেনের ছাত্রদের জন্য। দুই নম্বর হলো ক্লাস এইটের ছাত্রদের জন্য। তিন নম্বর হলো ক্লাস নাইনের ছাত্রদের জন্য। চার নম্বর হলো ক্লাস টেনের ছাত্রদের জন্য। পাঁচ নম্বর হলো কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের জন্য। ছয় নম্বর হলো সেকেন্ড ইয়ারের জন্য। সাত নম্বর হলো বিএসসি ছাত্রদের জন্য। আট নম্বর হলো এমএসসি ছাত্রদের জন্য আর নয় নম্বর হলো আপনার মতো ইনসপেক্টরের জন্য।’

কালিপদ স্যারের এই কথায় ইন্সপেক্টর সাহেব রেগে-মেগে চলে যান। গিয়ে তিনি স্কুলের ডেভলপমেন্ট ফান্ড বন্ধ করে দেন।
তাতে কালিপদ বাবু দমে যাননি। তার অংক ভুল এই কথা তিনি মেনে নিতে পারেননি। কোলকাতা শিক্ষা বোর্ডে তিনি অংকে একশোতে একশো পেয়েছিলেন। কোলকাতা শিক্ষা বোর্ড তাঁকে স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মানিত করেছিল। অবসর নেওয়ার পর ছাত্রদের অনুরোধে সকাল বিকেল কয়েক ব্যাজ ছাত্রকে অংক শিখাতেন। সেই দেবতুল্য মানুষটিকে রাজাকাররা গুলি করে মেরেছে। এই কষ্টে জোহা তালুকদার অস্থির হয়ে পড়েছেন।
রাজাকাররা তার মেয়ে হৈমন্তিকে ধরে নিয়ে যাবার সময় তার স্ত্রীসহ ওদের সামনে এসে দাঁড়ালে আলিম রাজাকার দুইজনকে গুলি করে মেরে ফেলে। গুলি শব্দে কেউ তাদের সামনে এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। কালিপদ বাবুর মাথায় গুলি করে আলিম। সঙ্গে সঙ্গে মগজ ছিটকে বেরিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। কালিপদ বাবুর স্ত্রীর বুকে গুলি করে। সে অনেকক্ষণ জল জল বলে গোঙরাতে থাকে। গুলির শব্দে ভয়ে প্রতিবেশিরা পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সেও মারা যায় জল না পেয়ে।
প্রতিবেশিরা লাশ ঘিরে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে থাকে। কেউ বলে, ‘রিস্ক নিয়ে তার এইসময় বাংলাদেশে থাকা ঠিক হয়নি।’
কেউ বলে, ‘তার ছাত্ররা যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছে তারা এই ব্যাপারটা মেনে নেবে না। তারা চরম প্রতিশোধ নেবে।’
হৈমন্তিকে চোখ বেঁধে মুখে কাপড় গুজে টেনে-হিচড়ে নিয়ে আসে রাজাকার আলিমের বাড়িতে। আলিমের বউ বাপের বাড়ি গেছে। স্বামী রাজাকারের দলে ভর্তি হয়েছে এটা সে মেনে নিতে পারেনি।
ফাঁকা বাড়িতে দুইজন হৈমন্তিকে চেপে ধরে রাখে। হৈমন্তি প্রাণপণ চেষ্টা করে ওদের হাত থেকে ছুটতে। না পেরে সে ওদের পা জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। প্রথমে আলিম তাকে ধর্ষণ করে। তারপর বাকি দুজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তারপর রাতে তাকে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। তখনো বার বার হৈমন্তি তাদের পা জড়িয়ে ধরছিল।

ক্যাপ্টেন আব্বাস খান হৈমন্তিকে দেখে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। বোঝা যায় হৈমন্তিকে তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। হৈমন্তি পছন্দ হওয়ার মতো মেয়ে। তার দুধে আলতা গায়ের রং। টানা চোখ জোড়ায় মায়াবি আকর্ষণ। দৃষ্টি কাড়া শরীর। ক্যাপ্টেন আব্বাস খান আর দেরি করে না। হাসি মুখে হৈমন্তির হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়। আলিমরা সালাম দিয়ে খুশি মনে চলে আসে।
রাতে গ্রামে ফিরে সোজা চলে যায় শান্তি কমিটির মেম্বর ফজলুর রহমানের বাড়িতে। সব শুনে ফজলুর রহমান তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ধন্যবাদ দেয় রাজাকারদের। বলে, ‘তোদের চাকরি আজ থেকে স্থায়ী হলো। এখন বাড়ি গিয়া আরাম কইরা ঘুমা।’
তারপর তিন রাজাকার ফিরে আসে আলিমের বাড়িতে। রাতে তারা একসঙ্গে আনন্দ ফূর্তি করে কাটাবে। এই ভাবনায় তারা আলিমের বাড়িতে ভালো খানাপিনার আয়োজন করে। পাশের বাড়ির এক বুড়ি চাচিকে ডেকে নিয়ে আসে। তাকে রান্নার দায়িত্ব দেয়। তাদের মন ভীষণ ফুরফুরে। ক্যাপ্টেন সাহেবকে তারা খুশি করতে পেরেছে। তার উপর হিন্দু নারী ভোগ করে অসীম ছোয়াবের ভাগীও হয়েছে। সেই আনন্দে তারা আত্মহারা।
মুরগির মাংস আর ভূনা খিচুড়ি খেয়ে অনেক মজা করে গভীর রাতে তারা শুয়ে পড়ে।

চলবে...
আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>
যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৪

 

 

Header Ad
Header Ad

দেশের তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে যা বলল আবহাওয়া অফিস

ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র গরমের দাপট। চলতি মে মাসের শুরুতে আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে সহনীয় থাকলেও গত বুধবার (৭ মে) থেকে বাড়তে শুরু করে তাপমাত্রা।

শুক্রবার (৯ মে) পর্যন্ত দেশের ৪৫টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী রোববার (১১ মে) থেকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসবে এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কিছু এলাকায়, যা কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে জনজীবনে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, এবার এপ্রিল মাসে সাধারণত যতোটা গরম পড়ে, তার তুলনায় এবারের উষ্ণতা ছিল তুলনামূলক কম। বর্ষার আগমনের আগে এই সময়টিতে স্বাভাবিকভাবেই গরম বাড়ে, তবে এবারের তাপপ্রবাহটি ব্যাপক বিস্তৃত হওয়ায় তা জনজীবনে ভোগান্তি বাড়িয়েছে। আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, এপ্রিল মাসে দেশে কিছু এলাকায় তাপপ্রবাহ থাকলেও তা এত বিস্তৃত ছিল না। বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ স্থানে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের বুলেটিন অনুযায়ী, বর্তমানে রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারি, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বরিশাল ও পটুয়াখালীসহ মোট ৪৫ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

তাপমাত্রা যদি ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তবে তা মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি হলে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর চেয়ে বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে ধরা হয়।

বুলেটিনে আরও বলা হয়, শুক্রবার সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রাও সামান্য বাড়বে। আকাশ থাকবে আংশিক মেঘলা এবং আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে।

ঢাকায় এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২৮ মার্চ রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টায় ঢাকার বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৭৮ শতাংশ এবং পশ্চিম বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বাতাস বয়ে যাচ্ছিল ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে।

চুয়াডাঙ্গায় এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অপরদিকে, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল লালমনিরহাটের ডিমলায়—২২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিস্তৃত রয়েছে। এর প্রভাবে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে কিছু এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা তাপপ্রবাহ প্রশমনে সহায়ক হতে পারে।

এ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রচণ্ড গরমে যথাসম্ভব রোদ এড়িয়ে চলা, হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান, পর্যাপ্ত পানি পান এবং ঘন ঘন বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

Header Ad
Header Ad

আ.লীগ নিষিদ্ধে গুরুত্বের সাথে সরকার বিবেচনা করছে: সরকারের বিবৃতি

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাস ও স্বৈরশাসনের অভিযোগে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এ দাবি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

সরকার জানিয়েছে, এ বিষয়ে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়েছে এবং আলোচনা শেষে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের উল্লেখও করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

এ পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। পাশাপাশি জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এরই মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

 

এছাড়া, ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বর্তমানে হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনের ঘটনায় জনগণের ক্ষোভের বিষয়টিও সরকার পর্যবেক্ষণ করছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে সরকার।

Header Ad
Header Ad

টাঙ্গাইলে নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতা রাজ্জাকসহ ২ জন গ্রেফতার

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগে ডেভিল হান্টের অভিযানে টাঙ্গাইলের মধুপুরে নাশকতার মামলায় ভূঞাপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মো. আব্দুর রাজ্জাকসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে ভূঞাপুর থানা পুলিশ।

শুক্রবার (০৯ মে) সকালে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম রেজাউল করিম এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতারকৃত আব্দুর রাজ্জাক উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বাগবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলের অনুসারী ছিলেন।

অপরদিকে, একই মামলায় গত বুধবার রাতে উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সস্পাদক আলমগীর নামে আরেক নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে গত বৃহস্পতিবার মধুপর থানায় সোপর্দ করা হয়।

এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম রেজাউল করিম জানান, মধুপুর থানায় নাশকতার মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক ও আলমগীরকে গ্রেফতারের পর মধুপুর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে যা বলল আবহাওয়া অফিস
আ.লীগ নিষিদ্ধে গুরুত্বের সাথে সরকার বিবেচনা করছে: সরকারের বিবৃতি
টাঙ্গাইলে নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতা রাজ্জাকসহ ২ জন গ্রেফতার
অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল
এবার অপেক্ষা তারেক রহমানের ফেরার, চলছে জোরালো প্রস্তুতি
পদ্মার এক ইলিশের দাম সাড়ে ৮ হাজার টাকা
৫ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে থানায় নেওয়া হলো আইভীকে
জুমার পর যমুনার সামনে বড় জমায়েতের ডাক হাসনাত আব্দুল্লাহর
প্রথম আমেরিকান পোপ হলেন রবার্ট প্রিভোস্ট
একের পর এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল ভারত, সীমান্তজুড়ে ব্ল্যাকআউট
নিষিদ্ধ হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ
অবশেষে গ্রেফতার আইভী
ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার জেরে পিএসএলের বিদেশি ক্রিকেটারদের দেশত্যাগ শুরু
সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ল দুই মাস
মাহফুজ-আসিফ আ’লীগ নিষিদ্ধ চায়, কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কারা: হাসনাত
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও পদ ছাড়লেন স্নিগ্ধ
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ, ৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
টাঙ্গাইলে ট্রাক-পিকআপের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
ভারতীয় অর্ধশত সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের
নওগাঁর পতিসরে বিশ্বকবির কাছারি বাড়িতে জন্মবার্ষিকী ঘিরে উৎসবের আমেজ