শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৪

যারা যুদ্ধ করেছিল

আমিনের হাতে গুলি লেগেছে গত যুদ্ধে। সেই থেকে মমিনের ভীষণ মন খারাপ। আমিন অত্যন্ত সাহসী যোদ্ধা। তার আহত হওয়াকে দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মমিন মনে করছে। কষ্টের খবর হলো এখনো আমিনের হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা সম্ভব হয়নি। আশেপাশে ভালো ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। গুলি লাগা স্থানে গামছা দিয়ে চেপে বেঁধে রেখেছে। তাতে রক্তপড়া বন্ধ হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর পর গামছা ভিজে উঠছে।

মমিনের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা খারাপের দিকে না যায়। মমিন আমিনের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘এখন কেমন লাগছে?’
‘মমিন ভাই। আমাকে নিয়ে আপনাকে বেশি ভাবতে হবে না। আমি ভালো আছি।’
‘না। তুমি ভালো নেই।’ মমিন জোর দিয়ে বলে।
‘রক্ত পড়া বন্ধ করতে না পারলে যে কোনো মুহূর্তে বিপদ হতে পারে।’
‘আপনি চিন্তা করবেন না মমিন ভাই। কিছুক্ষণ পর দেখবেন আপনা আপনি রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে।’

আমিনের কথা গুরুত্ব না দিয়ে বাড়ির কর্তাকে ডেকে পাঠালো মমিন। মাঝারি বয়সের বাড়ির কর্তা আবুল সরকার এসে সালাম দিয়ে দাঁড়ায়। তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। মমিন তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আশেপাশের গ্রামে কোনো ডাক্তার আছে চাচা মিয়া?’
আবুল হোসেন প্রশ্ন শুনে ভাবতে থাকে। এইসময় সেখানে উপস্থিত মন্টু নামের এক কিশোর নিজের থেকেই বলে ওঠে, ‘দুই গ্রাম পরে একজন ভালো ডাক্তার আছে।’
‘তুমি চেন সেই গ্রাম?’ মমিন জিজ্ঞেস করে।
মন্টু বলে, ‘হ্যা চিনি। গ্রাম চিনি, সেই ডাক্তারকেও চিনি। সে আমাদের আত্মীয়। সে ঢাকায় ডাক্তারি পড়ে।’

এই খবরে মমিনের মুখ দীপ্তময় হয়ে ওঠে। বলে, ‘তুমি যেতে পারবে তাকে খবর দিতে?’
‘হ্যা পারবো।’
‘কিভাবে যাবে?’
‘সাইকেল নিয়ে যাব।’
মমিন এবার ছেলেটির বৃত্তান্ত জানতে বাড়ির মালিক আবুল হোসেনকে ডেকে আড়ালে নিয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে, ওই ছেলেকে সে চেনে কি না?

বাড়ির মালিক আবুল হোসেন বলে, ‘হ্যা। ওকে চিনি। আমার ভাস্তির ছেলে। শহরে থাকে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শহর থেকে পালিয়ে এসে এখন এখানেই থাকে। ওর মা থাকে শশুর বাড়ি। আর মন্টু থাকে নানার বাড়ি।’

পরে মন্টুকে সাইকেলসহ পাঠিয়ে দেওয়া হলো। তাকে আরও বলা হলো ডাক্তারকে সে গোপনে বলবে, একজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে গুলি লেগেছে। রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। তার জন্য যা যা করতে হবে তিনি যেন সব প্রস্তুতি নিয়ে আসেন। মন্টু অতি উৎসাহে রওনা দেয়। এই ধরনের কাজে যেতে পেরে সেও ভীষণ উৎফুল্ল। যেন সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পেরেছে। এটা তার জীবনের একটা রেকর্ড। বিশেষ স্মৃতি।

ঘণ্টা খানেকের মধ্যে একজন তরুণকে নিয়ে মন্টু হাজির। মমিন তরুণকে গভীরভাবে খেয়াল করে। ইশারায় কাছে ডাকে। জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি কি ডাক্তার?’
‘আমি এখনো ডাক্তার হইনি। এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ারে আছি।’ তরুণ ডাক্তার সমীহ ভঙ্গিতে বললো।
মমিন বললো, ‘চলবে। আপনি দেখেনতো আমাদের একজন যোদ্ধার হাতে গুলি লেগেছে। রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না। দেখুনতো কি করা যায়।’
তরুণ ডাক্তারকে আমিনের কাছে আনা হলো। সে গামছা পেঁচানো জায়গা আলগা করে সেখানে ভালো করে পরীক্ষা করে বললো, ‘দুটো ইনজেকশন দিতে হবে।’
‘ইনজেকশন আপনার কাছে নেই?’ মমিন জিজ্ঞেস করলো।
‘জ্বি না।’
‘কোথায় পাওয়া যাবে?’
ছোটখাটো ফার্মেসিতে পাবেন না। আমি লিখে দিচ্ছি। কাউকে রায়গঞ্জ বাজারে পাঠিয়ে ওটা নিয়ে আসতে হবে। ইনজেকশন দিতে না পরলে ঘা শুকাতে সময় লাগবে। এমন কি অসুখ অন্যদিকে মোড় নিতে পারে।’ কথা বলতে বলতে গুলি লাগা জায়গায় এন্টি সেফটিক দিয়ে ওয়াশ করেন তরুণ ডাক্তার। তারপর আমিনকে জিজ্ঞেস করে, ‘ব্যথা করে?’
‘ভীষণ।’ আমিন বলেই হেসে ফেলে। ডাক্তার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ব্যথা করে এটাতে হাসির কি হলো? ব্যথাকেও এই মানুষগুলো অতি তুচ্ছ মনে করে। এরাই প্রকৃত যোদ্ধা। এমন নির্বিকার না হলে তারা যুদ্ধ করার সাহস পেত না।
মমিন বললো, ‘ইয়ং ডাক্তার, আপনি আমাদের একটু হেল্প করুন।’
‘বলুন। কি করতে হবে?’
‘এই ইনজেকশন কীভাবে, কোথা থেকে পাব আমরা?’
‘ওইতো বললাম, রায়গঞ্জ বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
তরুণ ডাক্তার আরও বলে, ‘কাছেই রায়গঞ্জ বাজার। সেখানে হেলাল ফার্মেসি আছে। ফার্মেসিতে গিয়ে আমার নাম বললেই তারা আর কিছু বলবে না।’
‘আপনার নাম বলতে হবে কেন? তারা কি এই ওষুধটা সবার কাছে বিক্রি করে না?’
‘না।’
‘কেন?’
‘এই ওষুধটা দুস্প্রাপ্য। ইমার্জেন্সি না হলে ওরা ওষুধটা বিক্রি করে না। বিশেষ করে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তারা এটা সরবরাহ করে থাকে। কোনো রাজাকার গিয়ে মাথা কুটলেও ওরা রাজী হবে না। বলবে ওষুধ নাই।’

মমিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ‘অতো কথার দরকার নেই। আপনি দুলাইন চিঠি লিখে দেন।’ তরুণ ডাক্তার চিঠি লিখে মমিনের হাতে দেয়। মমিন নিয়ে পড়ে। তারপর সে চিন্তিত মুখে নিজে নিজে বলে, কাকে পাঠানো যায়?
মন্টু আগের মতো উৎসাহ নিয়ে বলে, ‘আমাকে দেন। আমি নিয়ে আসবো।’
‘তুই পাারবি?’ তরুণ ডাক্তার সংশয় নিয়ে প্রশ্ন করে।
মন্টু জোর দিয়ে বলে, ‘অবশ্যই পারবো। কতদিন আমি একাই বাজারে গেছি।’

বাজারে রাজাকারদের ক্যাম্প আছে। প্রাপ্ত বয়স্ক কাউকে পাঠালে রাজাকাররা নানা জেরা করতে পারে। সন্দেহ হলে ধরে বেঁধে রাখতে পারে। মন্টু বয়সে ছোট। ওকে সন্দেহ করবে না।
তরুণ ডাক্তার পকেট থেকে টাকা বের করে মন্টুর হাতে দেয়। মমিন বাধা দিলে তরুণ ডাক্তার বলে, ‘আমাকে এইটুকু সহযোগিতা করার সুযোগ দিন প্লিজ। আপনারা জীবন দিতে প্রস্তুত আমরাতো কিছুই করতে পারছি না। একজন আহত যোদ্ধাকে সামান্য সেবা করার সুযোগ থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন না।’

আবেগে ডাক্তারের চোখ জোড়া টলমল করছে দেখে মমিন আর কথা বাড়ায় না। টাকা নিয়ে মন্টু চিলের মতো উড়ে চলে যায়।
তরুণ ডাক্তার এবং মমিন নিঃশব্দে বসে আছে। ঘরের এক কোণে আমিন একটি চৌকিতে একা শুয়ে আছে। পাশে মজনু বসে আস্তে আস্তে কথা বলছে।
হঠাৎ তরুণ ডাক্তার মমিনকে বলে, ‘একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? রাগ করবেন নাতো?’
‘কি কথা?’
‘যুদ্ধের গতি প্রকৃতি কেমন বুঝছেন? কতদিন এই যুদ্ধ চলবে?’

মমিন হাসি মুখে বলে, ‘সেটাতো আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। আমরাতো অন্ধকারে আছি। যুদ্ধের কোনো খবরই আমরা জানি না। আপনারা নিশ্চয়ই বিবিসি আকাশবাণী স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্র শোনেন। আমাদের কিছুই শোনার সুযোগ নেই। যুদ্ধের গতি প্রকৃতি আপনাদেরই ভালো জানার কথা।’
‘সে কথা আপনি ভুল বলেননি। আমি নিয়মিত বিবিসি এবং স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র শুনি।’
‘তাহলে এবার আপনি বলুন যুদ্ধের মোড় কোনদিকে যাচ্ছে? আমরা কি শুধু শুধু বন বাদাড়ে ছুটছি নাকি এর কোনো ফ্রুটফুল রেজাল্ট আছে?’
তরুণ ডাক্তার জবাব দিতে থমকে যায়। যুদ্ধ নিয়ে তার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তবে বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ তীব্র হচ্ছে। অনেক স্থানে পাকবাহিনী পর্যুদুস্ত হচ্ছে। পাকিস্তানি মিলিটারি বেঘোরে মারা যাচ্ছে মুক্তিবাহিনীর হাতে। খবরে শোনা কথাগুলো গুছিয়ে বলে তরুণ ডাক্তার। তার বলার ধরন দেখে মমিন মুগ্ধ হয়ে শোনে। বলে, ‘ডাক্তার সাহেব, তাহলে আমরা কি আশাবাদী হতে পারি দেশ স্বাধীন হবে?’ শেখ হাবিব নামের এই সুদর্শন তরুণ ডাক্তার উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে বলে, ‘অবশ্যই আমি আশাবাদী।’
মমিন বলে, তাহলে আপনি যুদ্ধের গতি প্রকৃতি নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন কেন?’
ডাক্তার হাবিব বলে, ‘আপনাদের মুখে শুনলে মনে বড় জোর পাই।’
‘কেন?’
‘আপনারা জাতির সাহসী সন্তান।’
‘আপনার সাহস নেই?’
‘আপনাদের মতো আমার অতো সাহস নেই। থাকলে অবশ্যই যুদ্ধে যেতাম।’

মমিন হেসে ডাক্তার হাবিবের দিকে তাকালে হাবিব লাজুক ভঙ্গিতে মাথা নামিয়ে নেয়। তাদের কথার মাঝেই মন্টু এসে হাজির। খুব দ্রুত গতিতে এসে পড়েছে মন্টু। হাঁপাচ্ছে। ডাক্তার হাবিব জিজ্ঞেস করে, ‘সব ওষুধ আনতে পেরেছ?’
‘জ্বি। সব ওষুধ আনতে পেরেছি।
ডাক্তার হাবিব আর দেরি করে না। এমনিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ওষুধ আরও আগে দিতে পারলে ভালো হতো। মন্টুর কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে হাবিব আমিনের কাছে যায়। হাবিব যখন ইনজেকশনে ওষুধ ভরছিল আমিন বলে ওঠে, ‘ব্যথা পাবো নাতো? ইনজেকশন দেখে আমার কিন্তু ভীষণ ভয় করে।’

এই কথায় হাবিব হাসতে থাকে। বলে, ‘আপনি মিলিটারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ভয় পান না। সামান্য ইনজেকশন নিতে ভয় পাচ্ছে? অবাক কাণ্ড!’

মমিন পাশে দাঁড়িয়ে বললো, ‘পাগলামি করো না আমিন। লক্ষ্মী ছেলের মতো চুপচাপ শুয়ে থাকো। ইনজেকশনটা তোমার জন্য বিশেষ প্রয়োজন। দুজনের কথার মধ্যে হাবিবের ইনজেকশন দেওয়া শেষ।

মমিন অবাক হয়ে বলে, ‘হয়ে গেছে!’
হাবিব বলে, জ্বি
‘কিরে আমিন, তুই কি কিছু বুঝতে পেরেছিস?’ মমিন জিজ্ঞেস করে।
আমিন বলে, ‘না।’
‘তবে যে বললি ইনজেকশন দেখে ভয় করে?’
‘মজা করেছি।’ সবাই এবার হেসে ওঠে।
হাবিব যাওয়ার অনুমতি চায়। মমিন বলে, ‘আপনি কি আজ রাতে আর একবার আসতে পারবেন? লাস্ট অবস্থাটা দেখে গেলেন।’
‘অবশ্যই আসতে পারবো। সামান্য এইটুকু সেবা করতে পারাও আমার জন্য অনেক কিছু।’
‘রাত দশটার মধ্যে আসবেন।’
‘আপনারা কি রাতে এখান থেকে চলে যাবেন?’
‘প্রশ্ন না করে যা বলছি তাই করবেন।’
হাবিব আর কথা না বাড়িয়ে ঘরের বাইরে চলে যায়। সঙ্গে মন্টুও যেতে থাকে।

দুপুরে খাওয়ার পর মমিন বিছানায় গড়িয়ে নিচ্ছিল। এইসময় তার চোখের পাতা এক হয়ে এসেছে মাত্র সেইসময় রকিব এসে ঘরে ঢোকে। মমিনকে ডাকে। মমিন লাফিয়ে ওঠে। রকিবকে দেখে ইশারায় কাছে আসতে বলে। পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘বাড়ির খবর কী? মা কেমন আছে? বাবা?’
রকিব বিমর্ষ মুখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। মমিন আবার জিজ্ঞেস করে। রকিব তবু কিছু বলে না। মমিন এবার ধমকে ওঠে, ‘কি হয়েছে? কথা বলছিস না কেন?’
রকিব সাথীর চিঠিটা মমিনের হাতে দিয়ে ঘরের বাইরে চলে যায়। মমিন চিঠি পড়ে থ হয়ে বসে থাকে। তার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরতে থাকে। রাগে ঘরময় পায়চারী করে। রুমের বাকি যোদ্ধারা আতঙ্কিত মুখে তাকিয়ে থাকে।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৩

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১২

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১১

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১০ 

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৯

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৮

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৭

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৬

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৫

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৪

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৩

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-২

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১

আরএ/

Header Ad

দেশবিরোধী জামায়াত, বিএনপি, ইউনূস গঙকে রুখে দিতে হবে: নৌপ্রতিমন্ত্রী

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এম.পি বলেছেন, বিএনপি জামায়াত ২০০৯, ২০১১, ২০১৩, ২০১৫, ২০১৮, ২০২৩ সালে সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে সকল উন্নয়নকে টেনে ধরার জন্য একটি সেটেল ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। দেশবিরোধী জামায়াত, বিএনপি, ইউনূস গঙকে রুখে দিতে হবে। তারা আমাদের চেতনা, অস্তিত্ব, রাষ্ট্রযন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্সকৃতির ওপর আঘাত হেনেছে।

প্রতিমন্ত্রী শনিবার (২৭ জুলাই) সম্প্রতি দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা ভাঙচুরকৃত জেলা, সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ অফিস পরিদর্শনকালে বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করব। সাধারণ মানুষকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতীক। দুষ্কৃতকারীরা শুধু দিনাজপুরে নয়, সমগ্র বাংলাদেশে আঘাত করেছে। এ আঘাত বাংলাদেশের ওপর আঘাত। ৭৫ এর পর জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ার শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের ওপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের ক্ষতবিক্ষত করেছে। দল ভাঙার জন্য বিভেদ সৃষ্টি, দলকে দুর্বল করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এরপরও ইস্পাত কঠিন ঐক্য নিয়ে আওয়ামী লীগ দাঁড়িয়ে আছে।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এমদাদ সরকার বক্তব্য রাখেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, আত্মমর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যেতে না পারে সেজন্য তারা হামলা করেছে। ‌ একটি সেটেল ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতকারীরা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে - এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।

পরে প্রতিমন্ত্রী সার্কিট হাউজে জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কিত বিশেষ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

অলিম্পিক ইতিহাসে ভিন্নধর্মী উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপহার দিল ফ্রান্স

ছবি: সংগৃহীত

সকাল থেকেই প্যারিসের আকাশে বৃষ্টির দাপট। কখনো ঝিরি, কখনো বা ভারী। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে কোনো ভুল করেনি প্যারিস। সত্যিকার অর্থেই অলিম্পিক ইতিহাসে ভিন্নধর্মী এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপহার দিয়েছে ভালোবাসার শহরটি।

আগেই জানানো হয়েছিল, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কোনো স্টেডিয়াম নয় বরং আয়োজিত হবে প্যারিসের প্রাণকেন্দ্র সেন নদীতে। ৪ ঘণ্টা ব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরুটা হয় মশালের ভিডিও দিয়ে। যেখানে দেখা যায় ফ্রান্স ফুটবল কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানকে।

ভিডিওর পর শুরু হয় মার্চপাস্ট। সেন নদীতে ৬ কিলোমিটারের ভাসমান প্যারেডে প্রায় ৭ হাজার অ্যাথলেটকে বহন করেছে ৮৫ টি নৌকা। সবগুলোই নৌকাতেই লাগানো থাকবে ক্যামেরা। যাতে করে নদীর তীরে থাকা দর্শকরা ক্লোজ-আপ ভিউ পেতে পারেন।

অস্তারলিজ ব্রিজ থেকে শুরু করে লুভরে জাদুঘর, পন্ত দে আর্টস ব্রিজ সহ অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনা পেরিয়ে আইফেল টাওয়ারের কাছে এসে থামে অ্যাথলেটদের প্যারেড।

মার্চপাস্টে বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন আর্চার সাগর ইসলাম। এবারের আসরে তিনিসহ অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের পাঁচ অ্যাথলেট।

মার্চপাস্টের ফাঁকে ফাঁকেই ফ্রান্সের ঐতিহ্য, বিপ্লব, ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। ছিল নাচগানের আয়োজনও। যার শুরুটা করেন পপ গায়িকা লেডি গাগা। এরপর একে একে সুরে মাতোয়ারা করে রাখেন র‍্যাপার রিম কে, মেটাল ব্যান্ড গজিরা ও আয়া নাকামুরা।

আধার নেমে এলে আরও জমতে থাকে অনুষ্ঠান। মার্চপাস্ট শেষে প্যারিস অলিম্পিক কমিটি প্রধান ও আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি প্রধানের ভাষণের পর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রো। এরপর আইফেল টাওয়ারে শুরু হয় জমকালো লেজার শো। আলোর জলকানি বারবারই মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। ৩ লাখেরও বেশি দর্শক বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেবল তাকিয়ে ছিলেন সেদিকে।

মশালের আগুন থেকে কলড্রনের আলো জ্বালিয়ে অলিম্পিক শুরুর সংকেত দেন ফ্রান্সের সাবেক স্প্রিন্টার মেরি জোসে পেরেচ ও জুদোকা তেদি রিনার। কলড্রনটি দেখতে উষ্ণ বায়ু বেলুনের মতোই ছিল। ১৭৮৩ সালে প্রথমবারের মতো মানুষ বহনকারী উষ্ণ বায়ু বেলুনকে উড়তে দেখা যায়। যা আবিষ্কার করেন ফ্রান্সের মন্তগলফিয়ার সহোদর।

অনুষ্ঠানের শেষটা হয় বিখ্যাত মার্কিন গায়িকা সেলিন ডিওনের পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে। দারুণ এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর কাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া মহাযজ্ঞ।

ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে কারাগারে আশ্রয় ফিলিস্তিনিদের

ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে কারাগারে আশ্রয় ফিলিস্তিনিদের। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলি সেনাদের বোমার আঘাত থেকে বাঁচতে পরিত্যক্ত কারাগারে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকশ ফিলিস্তিনি। ইয়াসমিন আল-দারদেশি নামে এক নারী এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর বার্তাসংস্থা রয়টার্সের।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের একটি জেলা থেকে বাস্তচ্যুত হওয়ার পর কারাগারে আশ্রয় নেয় ইয়াসমিন আল দারদাসির পরিবার। দারদাসি জানান, তার পরিবার তিন দিন একটি গাছের নিচে কাটিয়েছেন। এখন তারা খান ইউনিসের কেন্দ্রীয় সংশোধন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মসজিদে থাকেন। এখানে তারা সূর্যের প্রখর রোদ থেকে রক্ষা পাচ্ছে। এর চেয়ে বেশি আর তেমন সুবিধা পাচ্ছে না।

ইয়াসমিনের স্বামীর কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে। অসুস্থ এ মানুষটি কোনো ধরনের লেপ ও তোষক ছাড়াই থাকছেন।

এই ফিলিস্তিনি নারী রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা এখানেও বসতি স্থাপন করছি না। এই নারীর শঙ্কা এখান থেকেও তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে।’

ইসরায়েলের দাবি বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তারা গাজায় অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা বলছেন ইসরায়েলি হামলায় তারা সব হারিয়েছেন। এখন তাদের যাওয়ার আর কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

সর্বশেষ সংবাদ

দেশবিরোধী জামায়াত, বিএনপি, ইউনূস গঙকে রুখে দিতে হবে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
অলিম্পিক ইতিহাসে ভিন্নধর্মী উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপহার দিল ফ্রান্স
ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে কারাগারে আশ্রয় ফিলিস্তিনিদের
ইসরায়েল নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের, চাপে নেতানিয়াহু
সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৪তম জন্মদিন আজ
বাংলাদেশে নতুন নির্বাচনের দাবি ড. ইউনূসের
জালিমদের ব্যাপারে ইসলাম যা বলে
ডিবি হেফাজতে নাহিদসহ কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক
আগামীকাল চালু হতে পারে মোবাইল ইন্টারনেট
'আমাকে নিয়ম শেখানোর দরকার নেই, ওরাই শিখে নিক'
‘দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা’
দুর্নীতির দায়ে রাশিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী গ্রেপ্তার
আজও ঢাকাসহ চার জেলায় কারফিউ শিথিল
আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭
‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’
কোটা আন্দোলনে নিহত রুদ্রের নামে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকের নামকরণ
সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
এক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৬ কোটি টাকা লোকসান
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ-পাঞ্জাবে ১৪৪ ধারা জারি