শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৪

যারা যুদ্ধ করেছিল

আমিনের হাতে গুলি লেগেছে গত যুদ্ধে। সেই থেকে মমিনের ভীষণ মন খারাপ। আমিন অত্যন্ত সাহসী যোদ্ধা। তার আহত হওয়াকে দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মমিন মনে করছে। কষ্টের খবর হলো এখনো আমিনের হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা সম্ভব হয়নি। আশেপাশে ভালো ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। গুলি লাগা স্থানে গামছা দিয়ে চেপে বেঁধে রেখেছে। তাতে রক্তপড়া বন্ধ হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর পর গামছা ভিজে উঠছে।

মমিনের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা খারাপের দিকে না যায়। মমিন আমিনের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘এখন কেমন লাগছে?’
‘মমিন ভাই। আমাকে নিয়ে আপনাকে বেশি ভাবতে হবে না। আমি ভালো আছি।’
‘না। তুমি ভালো নেই।’ মমিন জোর দিয়ে বলে।
‘রক্ত পড়া বন্ধ করতে না পারলে যে কোনো মুহূর্তে বিপদ হতে পারে।’
‘আপনি চিন্তা করবেন না মমিন ভাই। কিছুক্ষণ পর দেখবেন আপনা আপনি রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে।’

আমিনের কথা গুরুত্ব না দিয়ে বাড়ির কর্তাকে ডেকে পাঠালো মমিন। মাঝারি বয়সের বাড়ির কর্তা আবুল সরকার এসে সালাম দিয়ে দাঁড়ায়। তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। মমিন তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আশেপাশের গ্রামে কোনো ডাক্তার আছে চাচা মিয়া?’
আবুল হোসেন প্রশ্ন শুনে ভাবতে থাকে। এইসময় সেখানে উপস্থিত মন্টু নামের এক কিশোর নিজের থেকেই বলে ওঠে, ‘দুই গ্রাম পরে একজন ভালো ডাক্তার আছে।’
‘তুমি চেন সেই গ্রাম?’ মমিন জিজ্ঞেস করে।
মন্টু বলে, ‘হ্যা চিনি। গ্রাম চিনি, সেই ডাক্তারকেও চিনি। সে আমাদের আত্মীয়। সে ঢাকায় ডাক্তারি পড়ে।’

এই খবরে মমিনের মুখ দীপ্তময় হয়ে ওঠে। বলে, ‘তুমি যেতে পারবে তাকে খবর দিতে?’
‘হ্যা পারবো।’
‘কিভাবে যাবে?’
‘সাইকেল নিয়ে যাব।’
মমিন এবার ছেলেটির বৃত্তান্ত জানতে বাড়ির মালিক আবুল হোসেনকে ডেকে আড়ালে নিয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে, ওই ছেলেকে সে চেনে কি না?

বাড়ির মালিক আবুল হোসেন বলে, ‘হ্যা। ওকে চিনি। আমার ভাস্তির ছেলে। শহরে থাকে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শহর থেকে পালিয়ে এসে এখন এখানেই থাকে। ওর মা থাকে শশুর বাড়ি। আর মন্টু থাকে নানার বাড়ি।’

পরে মন্টুকে সাইকেলসহ পাঠিয়ে দেওয়া হলো। তাকে আরও বলা হলো ডাক্তারকে সে গোপনে বলবে, একজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে গুলি লেগেছে। রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। তার জন্য যা যা করতে হবে তিনি যেন সব প্রস্তুতি নিয়ে আসেন। মন্টু অতি উৎসাহে রওনা দেয়। এই ধরনের কাজে যেতে পেরে সেও ভীষণ উৎফুল্ল। যেন সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পেরেছে। এটা তার জীবনের একটা রেকর্ড। বিশেষ স্মৃতি।

ঘণ্টা খানেকের মধ্যে একজন তরুণকে নিয়ে মন্টু হাজির। মমিন তরুণকে গভীরভাবে খেয়াল করে। ইশারায় কাছে ডাকে। জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি কি ডাক্তার?’
‘আমি এখনো ডাক্তার হইনি। এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ারে আছি।’ তরুণ ডাক্তার সমীহ ভঙ্গিতে বললো।
মমিন বললো, ‘চলবে। আপনি দেখেনতো আমাদের একজন যোদ্ধার হাতে গুলি লেগেছে। রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না। দেখুনতো কি করা যায়।’
তরুণ ডাক্তারকে আমিনের কাছে আনা হলো। সে গামছা পেঁচানো জায়গা আলগা করে সেখানে ভালো করে পরীক্ষা করে বললো, ‘দুটো ইনজেকশন দিতে হবে।’
‘ইনজেকশন আপনার কাছে নেই?’ মমিন জিজ্ঞেস করলো।
‘জ্বি না।’
‘কোথায় পাওয়া যাবে?’
ছোটখাটো ফার্মেসিতে পাবেন না। আমি লিখে দিচ্ছি। কাউকে রায়গঞ্জ বাজারে পাঠিয়ে ওটা নিয়ে আসতে হবে। ইনজেকশন দিতে না পরলে ঘা শুকাতে সময় লাগবে। এমন কি অসুখ অন্যদিকে মোড় নিতে পারে।’ কথা বলতে বলতে গুলি লাগা জায়গায় এন্টি সেফটিক দিয়ে ওয়াশ করেন তরুণ ডাক্তার। তারপর আমিনকে জিজ্ঞেস করে, ‘ব্যথা করে?’
‘ভীষণ।’ আমিন বলেই হেসে ফেলে। ডাক্তার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ব্যথা করে এটাতে হাসির কি হলো? ব্যথাকেও এই মানুষগুলো অতি তুচ্ছ মনে করে। এরাই প্রকৃত যোদ্ধা। এমন নির্বিকার না হলে তারা যুদ্ধ করার সাহস পেত না।
মমিন বললো, ‘ইয়ং ডাক্তার, আপনি আমাদের একটু হেল্প করুন।’
‘বলুন। কি করতে হবে?’
‘এই ইনজেকশন কীভাবে, কোথা থেকে পাব আমরা?’
‘ওইতো বললাম, রায়গঞ্জ বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
তরুণ ডাক্তার আরও বলে, ‘কাছেই রায়গঞ্জ বাজার। সেখানে হেলাল ফার্মেসি আছে। ফার্মেসিতে গিয়ে আমার নাম বললেই তারা আর কিছু বলবে না।’
‘আপনার নাম বলতে হবে কেন? তারা কি এই ওষুধটা সবার কাছে বিক্রি করে না?’
‘না।’
‘কেন?’
‘এই ওষুধটা দুস্প্রাপ্য। ইমার্জেন্সি না হলে ওরা ওষুধটা বিক্রি করে না। বিশেষ করে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তারা এটা সরবরাহ করে থাকে। কোনো রাজাকার গিয়ে মাথা কুটলেও ওরা রাজী হবে না। বলবে ওষুধ নাই।’

মমিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ‘অতো কথার দরকার নেই। আপনি দুলাইন চিঠি লিখে দেন।’ তরুণ ডাক্তার চিঠি লিখে মমিনের হাতে দেয়। মমিন নিয়ে পড়ে। তারপর সে চিন্তিত মুখে নিজে নিজে বলে, কাকে পাঠানো যায়?
মন্টু আগের মতো উৎসাহ নিয়ে বলে, ‘আমাকে দেন। আমি নিয়ে আসবো।’
‘তুই পাারবি?’ তরুণ ডাক্তার সংশয় নিয়ে প্রশ্ন করে।
মন্টু জোর দিয়ে বলে, ‘অবশ্যই পারবো। কতদিন আমি একাই বাজারে গেছি।’

বাজারে রাজাকারদের ক্যাম্প আছে। প্রাপ্ত বয়স্ক কাউকে পাঠালে রাজাকাররা নানা জেরা করতে পারে। সন্দেহ হলে ধরে বেঁধে রাখতে পারে। মন্টু বয়সে ছোট। ওকে সন্দেহ করবে না।
তরুণ ডাক্তার পকেট থেকে টাকা বের করে মন্টুর হাতে দেয়। মমিন বাধা দিলে তরুণ ডাক্তার বলে, ‘আমাকে এইটুকু সহযোগিতা করার সুযোগ দিন প্লিজ। আপনারা জীবন দিতে প্রস্তুত আমরাতো কিছুই করতে পারছি না। একজন আহত যোদ্ধাকে সামান্য সেবা করার সুযোগ থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন না।’

আবেগে ডাক্তারের চোখ জোড়া টলমল করছে দেখে মমিন আর কথা বাড়ায় না। টাকা নিয়ে মন্টু চিলের মতো উড়ে চলে যায়।
তরুণ ডাক্তার এবং মমিন নিঃশব্দে বসে আছে। ঘরের এক কোণে আমিন একটি চৌকিতে একা শুয়ে আছে। পাশে মজনু বসে আস্তে আস্তে কথা বলছে।
হঠাৎ তরুণ ডাক্তার মমিনকে বলে, ‘একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? রাগ করবেন নাতো?’
‘কি কথা?’
‘যুদ্ধের গতি প্রকৃতি কেমন বুঝছেন? কতদিন এই যুদ্ধ চলবে?’

মমিন হাসি মুখে বলে, ‘সেটাতো আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। আমরাতো অন্ধকারে আছি। যুদ্ধের কোনো খবরই আমরা জানি না। আপনারা নিশ্চয়ই বিবিসি আকাশবাণী স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্র শোনেন। আমাদের কিছুই শোনার সুযোগ নেই। যুদ্ধের গতি প্রকৃতি আপনাদেরই ভালো জানার কথা।’
‘সে কথা আপনি ভুল বলেননি। আমি নিয়মিত বিবিসি এবং স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র শুনি।’
‘তাহলে এবার আপনি বলুন যুদ্ধের মোড় কোনদিকে যাচ্ছে? আমরা কি শুধু শুধু বন বাদাড়ে ছুটছি নাকি এর কোনো ফ্রুটফুল রেজাল্ট আছে?’
তরুণ ডাক্তার জবাব দিতে থমকে যায়। যুদ্ধ নিয়ে তার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তবে বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ তীব্র হচ্ছে। অনেক স্থানে পাকবাহিনী পর্যুদুস্ত হচ্ছে। পাকিস্তানি মিলিটারি বেঘোরে মারা যাচ্ছে মুক্তিবাহিনীর হাতে। খবরে শোনা কথাগুলো গুছিয়ে বলে তরুণ ডাক্তার। তার বলার ধরন দেখে মমিন মুগ্ধ হয়ে শোনে। বলে, ‘ডাক্তার সাহেব, তাহলে আমরা কি আশাবাদী হতে পারি দেশ স্বাধীন হবে?’ শেখ হাবিব নামের এই সুদর্শন তরুণ ডাক্তার উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে বলে, ‘অবশ্যই আমি আশাবাদী।’
মমিন বলে, তাহলে আপনি যুদ্ধের গতি প্রকৃতি নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন কেন?’
ডাক্তার হাবিব বলে, ‘আপনাদের মুখে শুনলে মনে বড় জোর পাই।’
‘কেন?’
‘আপনারা জাতির সাহসী সন্তান।’
‘আপনার সাহস নেই?’
‘আপনাদের মতো আমার অতো সাহস নেই। থাকলে অবশ্যই যুদ্ধে যেতাম।’

মমিন হেসে ডাক্তার হাবিবের দিকে তাকালে হাবিব লাজুক ভঙ্গিতে মাথা নামিয়ে নেয়। তাদের কথার মাঝেই মন্টু এসে হাজির। খুব দ্রুত গতিতে এসে পড়েছে মন্টু। হাঁপাচ্ছে। ডাক্তার হাবিব জিজ্ঞেস করে, ‘সব ওষুধ আনতে পেরেছ?’
‘জ্বি। সব ওষুধ আনতে পেরেছি।
ডাক্তার হাবিব আর দেরি করে না। এমনিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ওষুধ আরও আগে দিতে পারলে ভালো হতো। মন্টুর কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে হাবিব আমিনের কাছে যায়। হাবিব যখন ইনজেকশনে ওষুধ ভরছিল আমিন বলে ওঠে, ‘ব্যথা পাবো নাতো? ইনজেকশন দেখে আমার কিন্তু ভীষণ ভয় করে।’

এই কথায় হাবিব হাসতে থাকে। বলে, ‘আপনি মিলিটারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ভয় পান না। সামান্য ইনজেকশন নিতে ভয় পাচ্ছে? অবাক কাণ্ড!’

মমিন পাশে দাঁড়িয়ে বললো, ‘পাগলামি করো না আমিন। লক্ষ্মী ছেলের মতো চুপচাপ শুয়ে থাকো। ইনজেকশনটা তোমার জন্য বিশেষ প্রয়োজন। দুজনের কথার মধ্যে হাবিবের ইনজেকশন দেওয়া শেষ।

মমিন অবাক হয়ে বলে, ‘হয়ে গেছে!’
হাবিব বলে, জ্বি
‘কিরে আমিন, তুই কি কিছু বুঝতে পেরেছিস?’ মমিন জিজ্ঞেস করে।
আমিন বলে, ‘না।’
‘তবে যে বললি ইনজেকশন দেখে ভয় করে?’
‘মজা করেছি।’ সবাই এবার হেসে ওঠে।
হাবিব যাওয়ার অনুমতি চায়। মমিন বলে, ‘আপনি কি আজ রাতে আর একবার আসতে পারবেন? লাস্ট অবস্থাটা দেখে গেলেন।’
‘অবশ্যই আসতে পারবো। সামান্য এইটুকু সেবা করতে পারাও আমার জন্য অনেক কিছু।’
‘রাত দশটার মধ্যে আসবেন।’
‘আপনারা কি রাতে এখান থেকে চলে যাবেন?’
‘প্রশ্ন না করে যা বলছি তাই করবেন।’
হাবিব আর কথা না বাড়িয়ে ঘরের বাইরে চলে যায়। সঙ্গে মন্টুও যেতে থাকে।

দুপুরে খাওয়ার পর মমিন বিছানায় গড়িয়ে নিচ্ছিল। এইসময় তার চোখের পাতা এক হয়ে এসেছে মাত্র সেইসময় রকিব এসে ঘরে ঢোকে। মমিনকে ডাকে। মমিন লাফিয়ে ওঠে। রকিবকে দেখে ইশারায় কাছে আসতে বলে। পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘বাড়ির খবর কী? মা কেমন আছে? বাবা?’
রকিব বিমর্ষ মুখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। মমিন আবার জিজ্ঞেস করে। রকিব তবু কিছু বলে না। মমিন এবার ধমকে ওঠে, ‘কি হয়েছে? কথা বলছিস না কেন?’
রকিব সাথীর চিঠিটা মমিনের হাতে দিয়ে ঘরের বাইরে চলে যায়। মমিন চিঠি পড়ে থ হয়ে বসে থাকে। তার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরতে থাকে। রাগে ঘরময় পায়চারী করে। রুমের বাকি যোদ্ধারা আতঙ্কিত মুখে তাকিয়ে থাকে।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৩

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১২

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১১

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১০ 

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৯

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৮

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৭

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৬

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৫

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৪

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-৩

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-২

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১

আরএ/

Header Ad

সৌদির যেকোনো ভিসা থাকলেই ওমরাহ পালন করা যাবে

ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ওমরাহ পালনে বিদেশিদের জন্য ভিসা ব্যবস্থাপনা আরও সহজ করেছে সৌদি আরব। এখন থেকে যেকোনো ধরনের ভিসায় সৌদি আরব গেলেই বিদেশিরা ওমরাহ পালনের অনুমতি পাবেন।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বলেছে, যেকোনো দেশ থেকে এবং যেকোনো ভিসায় সৌদি আরবে আগতরা এখন থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে ওমরাহ পালন করতে পারবেন।

মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ট্রানজিট, শ্রম ও ই-ভিসাসহ সব ভিসাধারী ব্যক্তিরা এ সুযোগ পাবেন। এছাড়া ওমরাহ পালনের অনুমতি ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ের জন্য ‘নুসুক’ অ্যাপ ব্যবহার করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার।

এদিকে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববিতে হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের ইবাদত সহজ করতে ‘ডিজিটাল ব্যাগ’ চালু করেছে সৌদি সরকার।

সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয় জানায়, এই ব্যাগ প্রোগ্রাম হজ ও ওমরাহযাত্রীদের জীবনমান সহজ করবে। তাদের হজ ও ওমরাহ পালন সহজ করবে। মুসল্লিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে এর মাধ্যমে। বিশেষ করে কখন তারা কোন বিধান পালন করবে, সে বিষয়ে সতর্ক করা হবে।

নাটোরে বোনের বৌভাতে গিয়ে একে একে তিন ভাইয়ের মৃত্যু

নিহত জাওহার আমিন লাদেন। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের বড়াইগ্রামে মামাতো বোনের বউভাতের অনুষ্ঠানে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জাওহার আমিন লাদেন (১৮) নামে আরও এক কলেজছাত্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা গেছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজন প্রাণ হারালেন।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ এ চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়

নিহত জাওহার বড়াইগ্রামের গোপালপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা রুহুল আমিনের ছেলে।

জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল মামাতো বোনের বৌভাতের অনুষ্ঠানে যায় তিন ভাই। পরে মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়াতে বের হন তারা। পথে বড়াইগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে তিনজনই গুরুতর আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মামাতো ভাই আকিব হাসান (১৫) ও খায়রুল বাশার ছাগির (১৭) মারা যায়। বুধবার রাতে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেক ভাই জাওহারের মৃত্যু হয়।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম খান বলেন, গত ১৫ এপ্রিল উপজেলার ধামানিয়াপাড়া গ্রামে মামাতো বোনের বৌভাতের অনুষ্ঠানে গিয়ে তিন মামাতো-ফুফাতো ভাই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে তিনজন গুরুতর আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনই মারা গেছেন।

জনপ্রতি ১২-১৪ লাখ চুক্তিতে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্নফাঁস, গ্রেপ্তার ৫

গ্রেপ্তার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের পাঁচ সদস্য। ছবি: সংগৃহীত

প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপরই বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। চক্রটি এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কয়েকশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে দুইজন ঢাবি শিক্ষার্থী ও তিনজন পরীক্ষার্থী।

ডিবি জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে বসে এ পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করতেন তারা। পরীক্ষা শুরুর আগেই পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হতো উত্তরপত্র।

গ্রেপ্তাররা হলেন- ঢাবি শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন (২৬) ও সুজন চন্দ্র রায় (২৫) এবং পরীক্ষার্থী মনিষ গাইন (৩৯), পংকজ গাইন (৩০) ও লাভলী মণ্ডল (৩০)।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

ডিবিপ্রধান বলেন, গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২১ জেলার সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এ পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের উত্তরপত্র ও ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাতজন ও রাজবাড়ীতে একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।

ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ছবি: সংগৃহীত

এ ঘটনায় দুই জেলায় আলাদাভাবে মামলা করে সংশ্লিষ্টরা। রাজবাড়ীতে আটক হওয়া পরীক্ষার্থী আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তিনি জানান, কীভাবে এবং কখন তার মোবাইলে উত্তরপত্র এসেছে। মাদারীপুরে গ্রেপ্তার হওয়া পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জামিনে বের হয়ে যান। ঘটনাটি তদন্তের জন্য মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাসুদ আলমের অনুরোধে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ তদন্তে নামে।

মাঠে নেমে গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন ও সুজন চন্দ্রকে। তারা দুজনেই ঢাবির জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

তারা গোয়েন্দা পুলিশকে জানান, পরীক্ষার আগেই তারা প্রশ্ন সমাধানের জন্য পেয়েছেন। এ প্রশ্ন সমাধানের দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যোতির্ময় গাইনের চাচা অসিম গাইনের মাধ্যমে।

প্রশ্ন প্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাসে তাদের দিয়ে প্রশ্ন সমাধান করান অসিম। এ প্রস্তাবে জ্যোতির্ময় ও সুজনসহ সাতজন ঢাবির জগন্নাথ হলের জ্যোতির্ময়গুহ ঠাকুরতা ভবনের ২২৪ রুমে বসে তারা প্রশ্নের সমাধান করে পাঠান। অসিম তার ভাতিজা জ্যোতির্ময় গাইনকে প্রশ্ন সামাধানের দায়িত্ব দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের পাঁচ সদস্য। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে, তিনি পরীক্ষার দুই থেকে তিন মাস আগেই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স শেষের পথে, এমন পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করতেন। তাদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করতেন।

পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগেই প্রশ্নের উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন অসিম গাইন। তাদের সমাধান করে দেওয়া প্রশ্নের মধ্যে ৭২ থেকে ৭৫টিই মিলেছে।

ডিবি প্রধান আরও বলেন, আমাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত যে প্রমাণ পেয়েছি, তাতে এ চক্রের হোতা অসিম গাইন। তার বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। তিনি আগেও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। তিনি অল্পদিনে কয়েকশ’ কোটি টাকা আয় করেছেন। এ টাকা দিয়ে তার গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকা অসিমের মানবপাচার, হুন্ডি ব্যবসা ও ডিশের ব্যবসা রয়েছে। যেখানে তিনি প্রশ্ন ফাঁস করে আয় করা টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেপ্তার করলে কীভাবে প্রশ্নগুলো পান, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারব।

এ ঘটনায় দুজনকে আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। যারা প্রশ্নের সমাধান করেছেন, আদালতে তারাও স্বীকার করেছেন। যারা প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন, তারাও স্বীকার করেছেন। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের পরীক্ষা বাতিলের অনুরোধ জানানো হবে কি-না, এ প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হারুন বলেন, আমরা এ মামলার তদন্তে নেমে যা যা পেয়েছি সবকিছুই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন পরীক্ষা বাতিল করবেন না-কি বহাল রাখবেন।

সর্বশেষ সংবাদ

সৌদির যেকোনো ভিসা থাকলেই ওমরাহ পালন করা যাবে
নাটোরে বোনের বৌভাতে গিয়ে একে একে তিন ভাইয়ের মৃত্যু
জনপ্রতি ১২-১৪ লাখ চুক্তিতে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্নফাঁস, গ্রেপ্তার ৫
কুড়িগ্রামে হিট স্ট্রোকে নারীর মৃত্যু
রবিবার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারও চলবে ক্লাস
বাংলাদেশের উন্নতি দেখে এখন লজ্জিত হই: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
মৌসুমের সর্বোচ্চ ৩৯.২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পুড়ছে নওগাঁ
চেন্নাইয়ের হয়ে খেলা সবসময় স্বপ্ন ছিল: মোস্তাফিজ
বৃষ্টি কামনায় টাঙ্গাইলে ইস্তিস্কার নামাজ আদায়
মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে আরও ৬ ধাপ পেছালো বাংলাদেশ
বৃষ্টি কবে হবে, জানাল আবহাওয়া অফিস
এফডিসিতে ইউটিউবার প্রবেশ নিষিদ্ধ চাইলেন অঞ্জনা
অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা, ক্ষোভে বাসে আগুন দিল শিক্ষার্থীরা
থাইল্যান্ডে হিট স্ট্রোকে ৩০ জনের মৃত্যু
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় ‘এমপিরাজ’ তৈরি হয়েছে: রিজভী
অনুমতি মিললে ঈদের আগেই গরু আমদানি সম্ভব: ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত
আবারও ঢাকাই সিনেমায় কলকাতার পাওলি দাম
ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় সাবেক কৃষকলীগ নেতাসহ নিহত ২
গোবিন্দগঞ্জে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়