
বিজ্ঞান-তথ্যপ্রযুক্তি
এআইয়ের জয়! মাইক্রোসফটে ৯ হাজার ছাঁটাই, কর্মীদের চোখে জল

প্রযুক্তির অগ্রগতির জয়যাত্রা যেমন ভবিষ্যতের দ্বার খুলে দেয়, তেমনি কখনো কখনো তা আনে জীবনের নির্মম বাস্তবতা। এমনই এক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন মাইক্রোসফটের প্রায় ৯ হাজার কর্মী।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর কার্যক্রমে আরও গভীরভাবে যুক্ত হতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গ্লোবাল কর্মীবলের প্রায় ৪ শতাংশ ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাইক্রোসফট বলছে, সংগঠনকে আরও "দক্ষ" ও "খরচ-সাশ্রয়ী" করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে এই "দক্ষতা অর্জনের" মূল্য দিতে হচ্ছে হাজার হাজার কর্মীকে—যাঁদের অনেকেই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বহু বছর ধরে যুক্ত ছিলেন, ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনেছেন, অবিরাম শ্রম দিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র জানান, “বাজার পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের কোম্পানি ও টিমগুলোকে প্রস্তুত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক রদবদল আনা হচ্ছে।”
এই সিদ্ধান্তে মাইক্রোসফটের প্রায় ২ লাখ ২৮ হাজার কর্মীর মধ্যে ৯ হাজার জন ছাঁটাইয়ের আওতায় পড়বেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু মাইক্রোসফটের একক সিদ্ধান্ত নয়, বরং গোটা প্রযুক্তি খাতে পরিবর্তনশীল এক সময়ের প্রতিচ্ছবি।
গুগল, মেটা, অ্যামাজনসহ প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো বর্তমানে এআই ও অটোমেশন-নির্ভর কাঠামো গড়ে তুলছে, যার ফলে মানুষের চেয়ে মেশিনের প্রতি নির্ভরতা বাড়ছে। একদিকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে কর্মসংস্থান হারাচ্ছে মানবসম্পদ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওপেনএআই-এর সঙ্গে মাইক্রোসফটের অংশীদারিত্ব এবং এআই-ভিত্তিক সেবায় বিপুল বিনিয়োগের চাপ সামলাতে প্রতিষ্ঠানটি অবকাঠামোগত খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাইকে বেছে নিয়েছে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই প্রযুক্তি কি মানবিকতার ঊর্ধ্বে?
একসময় যারা প্রতিষ্ঠানটির ‘হিউম্যান রিসোর্স’ ছিলেন, আজ তারাই শুধুই ‘সংখ্যা’—একটি হিসাবের ঘরে নামমাত্র উপস্থিতি।
এই সিদ্ধান্ত প্রযুক্তিগত দিক থেকে যৌক্তিক হলেও মানবিক দিক থেকে তা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। প্রযুক্তি যেন এগিয়ে চলে মানুষের কল্যাণে, কাউকে ছিটকে ফেলে নয়। কারণ, দিনশেষে প্রযুক্তির সফলতা তখনই সত্যিকারের অর্থ পায়, যখন তা মানব জীবনের উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়—মানবতাকে ত্যাগ করে নয়।