সান্ডা কী? এটি খাওয়া কি হারাম না হালাল, কী বলে ইসলাম

মরু প্রাণী- সান্ডা। ছবি: সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে একটি ঘটনা আর কেবল একটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে না। সাম্প্রতিক সময়ে এমনই এক আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে একটি মরু প্রাণী—সান্ডা। এটি নিয়ে তৈরি হয়েছে মিম, রম্যকথা ও নানা ধরনের ভিডিও কনটেন্ট। এরই ধারাবাহিকতায় অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে: সান্ডা কি খাওয়া হালাল, নাকি হারাম? ইসলাম কী বলে এ বিষয়ে? চলুন জেনেই এসব প্রশ্নের উত্তর।
সান্ডা কী?
সান্ডা মূলত একটি মরুভূমিতে বসবাসকারী প্রাণী। দেখতে অনেকটা গিরগিটির মতো হলেও আকারে বড় এবং শরীর পোক্ত। আরবি ভাষায় একে "দাব্ব (ضبّ)" বলা হয়। মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন মরু অঞ্চলে এই প্রাণীটি দেখা যায়। অনেক এলাকায় সান্ডাকে শক্তিবর্ধক বা যৌনউত্তেজক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর তেলও বিক্রি হয় আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য।

ইসলামে সান্ডা খাওয়া হালাল নাকি হারাম?
ইসলামী শরিয়তের বিধান নির্ধারিত হয় মূলত কুরআন, হাদীস ও ফিকহবিদদের ব্যাখ্যার আলোকে। সান্ডা নিয়ে কুরআনে সরাসরি কিছু বলা না থাকলেও হাদীসে রয়েছে একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা।
রাসূল (সা.) এর জীবনের একটি ঘটনা:
সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে সান্ডা পরিবেশন করা হয়। তিনি তা খাননি। সাহাবারা জানতে চাইলেন- "ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি একে অপছন্দ করেন, নাকি এটি হারাম?" তিনি বললেন, "এটি আমার কওমের খাদ্য নয়, তাই আমি খাই না।" (সহিহ বুখারি: ৫৫৩৭, সহিহ মুসলিম: ১৯৪৪)। এরপর সাহাবাগণ তার সামনেই তা খেয়ে নেন, এবং তিনি এতে কোনো নিষেধ দেননি।
চার মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গি:
হানাফি- মাকরূহ তাহরিমি (না খাওয়াই ভালো), শাফেয়ি- হালাল, মালিকি- হালাল, হাম্বলি- হালাল। হানাফি মাযহাব অনুসারে, এটি একটি অরুচিকর প্রাণী হওয়ায় না খাওয়াই শ্রেয়। অন্য তিনটি মাযহাবের মতে, যেহেতু রাসূল (সা.) নিষেধ করেননি, বরং সাহাবারা খেয়েছেন, তাই এটি সম্পূর্ণ হালাল ও বৈধ।
সান্ডা তেল ও চিকিৎসা:
সান্ডা তেল অনেক আয়ুর্বেদিক ও প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতে যৌনস্বাস্থ্য বৃদ্ধির উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণার ঘাটতি রয়েছে। বাজারে যেসব তেল পাওয়া যায়, তার বিশুদ্ধতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত নয়।
তাহলে ইসলামে সান্ডা খাওয়া জায়েজ?
সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায়- কুরআনে সরাসরি নিষেধ নেই। রাসূল (সা.) নিজে খাননি, তবে খেতে নিষেধও করেননি। সাহাবীরা তার সামনেই খেয়েছেন। অধিকাংশ ফিকহ বিশারদ এটিকে হালাল মনে করেন। হানাফি মতে অপছন্দনীয় হলেও হারাম নয়। তবে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকলে কিংবা সন্দেহজনক উপায়ে প্রস্তুতকৃত তেল বা খাবার এড়িয়ে চলাই উত্তম।
