শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

বাংলাদেশের কথাসাহিত্য

বাঙালির আবহমানকালের মূল্যবোধ ও জীবনদর্শন নিয়ে পূর্ব বাংলার বাঙালি বর্তমানে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের অধিবাসী। এই স্বাধীনতা বাংলা ভাষাকে একটি দেশের রাষ্ট্রভাষা করেছে। এই স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা ভাষায় জাতিসংঘে ভাষণ দিয়ে একে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। তিনিই সেই বাঙালি যিনি বলেছিলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও বলব-আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে।’ এই স্বাধীনতা লাভের দীর্ঘ পটভূমি আছে। এই পটভূমি স্বল্প সময়ে অনায়াসে তৈরি হয়নি। এর জন্য সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে এই জনগোষ্ঠীকে-ঝরেছে অগণিত মানুষের রক্ত এবং জীবন। মোটা দাগের টানে কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়।

এক. সাতচল্লিশের দেশভাগের পরবর্তী সময়ে বাহান্নর ভাষা আন্দোলন পূর্ব বঙ্গের বাঙালির একটি বিশাল এবং স্থায়ী সাংস্কৃতিক অর্জন। মাতৃভাষার জন্য এই জীবনদান পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। এ ঘটনা বাঙালির জীবনে এক অমিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। তাই ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধ আমাদের নিকট অতীতের একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।

দুই. এই ভূখণ্ডের বাঙালির পরবর্তী ধাক্কা সামরিক শাসনের নিপীড়ন-সামরিক শাসনের অভিজ্ঞতা তার এই প্রথম এবং কোনও বাঙালি জনগোষ্ঠীকে এ ধরনের নিপীড়নের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিল কি না তা আমার জানা নেই, যার ভেতর থেকে সে জনগোষ্ঠীর লেখকরা কুড়িয়ে আনতে পারে গুটিকয় সোনালি শস্যদানা।

তিন.পৃথিবীর কোথাও রবীন্দ্রনাথ রাষ্ট্রযন্ত্রের রোষানলে পড়েননি, যেমন পড়েছিলেন তৎকালীন পূর্ব বঙ্গে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী রবীন্দ্রসংগীত প্রচার নিষিদ্ধ করেছিলেন রেডিয়ো-টেলিভিশনে। পূর্ব বঙ্গবাসী তাঁকে বুকে আগলে রাখার জন্য প্রতিবাদে, বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। রবীন্দ্রসংগীত গাইবার অপরাধে সরকারের হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন কোনও কোনও শিল্পী। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান রবীন্দ্রসংগীত লিখতে পারেন না কেন বলে ধমকেছিলেন লেখকদের তাঁর সরকারি বাসভবনে ডেকে নিয়ে। ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' থেকে ছাড়া পেয়ে তার প্রথম ভাষণে বলেন, ‘আমরা রবীন্দ্রনাথের বই পড়বই, আমরা রবীন্দ্রসংগীত গাইবই এবং রবীন্দ্রসংগীত এই দেশে গীত হবেই।’

সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রতিবাদের পাশাপাশি এটি ছিল একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। শেষ পর্যন্ত মানুষের প্রতিরোধের মুখে নতিস্বীকার করেছিল পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্রে নিষিদ্ধঘোষিত রবীন্দ্রসংগীত পুনঃপ্রচারের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে প্রবাসী সরকারের কোনো নির্দেশ ছিল না, তবু মানুষের মুখে মুখে সেই দারুণ দুর্দিনে যে গান উঠে আসে তা রবীন্দ্রনাথের, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি'। ভুল সুরে, ভুল উচ্চারণে এই গান মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে শক্তি এবং সাহসের প্রতীক হয়ে। রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে মানুষের এই লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা লেখকদের এক দারুণ সঞ্চয়।

চার. পাকিস্তান সরকারের শোষণ, বঞ্চনা, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সাংস্কৃতিক পদদলনের প্রতিবাদে নয় মাস স্থায়ী যুদ্ধ বাঙালির জীবনের আকাশছোঁয়া অন্যরকম অভিজ্ঞতা। দেখতে হয়েছে গণহত্যা, বন্দিশিবিরের নিদারুণ অত্যাচার, নারী ধর্ষণ—শিশুর খুলি রাজপথে বেয়নেটের মাথায়। দেখতে হয়েছে গেরিলা অপারেশন, রাতের অন্ধকারে মুক্তিযোদ্ধার জ্বলজ্বলে চোখ। দেখতে হয়েছে স্বাধীনতার পর যুদ্ধশিশু। বিধ্বস্ত দেশ। শুনতে হয়েছে স্বজন হারানোর আর্তনাদ। সইতে হয়েছে বুদ্ধিজীবী হত্যার শূন্যতা।

পাঁচ, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট ইতিহাসের মহান বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে জীবন দিতে হয় সামরিক বাহিনীর কতিপয় সদস্যের হাতে। যিনি ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় সংসদের অধিবেশনে তাঁর গমগমে কণ্ঠস্বরে স্পিকারকে বলেছিলেন, ‘স্যার, আপনি দেখবেন, ওরা পূর্ব ‘বাংলা’ নামের পরিবর্তে পূর্ব পাকিস্তান নাম রাখতে চায়। আমরা বহুবার বলেছি, আপনারা এ দেশটাকে “বাংলা” নামে ডাকেন। বাংলা শব্দটার একটা নিজস্ব ইতিহাস আছে, আছে এর একটা ঐতিহ্য। আপনারা এই নাম পরিবর্তন করতে চাইলে আমাদের জনগণের সঙ্গে আলাপ করতে হবে।’ তিনিই আবার ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসে হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু দিবসে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন, ‘আর পূর্ব পাকিস্তান নয়, আর পূর্ব বাংলা নয়। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও শহিদ সোহরাওয়ার্দীর মাজারের পাশে দাঁড়িয়ে জনগণের পক্ষ থেকে আমি ঘোষণা করছি- আজ থেকে বাঙালি জাতির এই আবাসভূমির নাম হবে ‘বাংলাদেশ’।’

এই বাংলাদেশে তার কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই বলে ইতিহাসের নিজস্ব গতি কেউ থামিয়ে দিতে পারে না। বাংলাদেশ তার নিজস্ব পথ খুঁজে নিয়ে চলছে। উর্বর হচ্ছে তার নিজস্ব মাটি। যে কয়টি বড় ঘটনার উল্লেখ করলাম এর বাইরে আরও নানা ধরনের বিপর্যয় মোকাবেলা করতে হয়েছে দেশবাসীকে। দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন এবং গণ-অভ্যুত্থানের মতো অসংখ্য ছোট-বড় ঘটনা এ দেশের মানুষের শান্তি ও স্বস্তির বিপরীতে লৌহ-কঠিন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকার শপথ।

এই পথপরিক্রমার অজস্র অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের ভাষা ও সাহিত্য। এই নির্মাণ হাজার বছরের বাংলা ভাষার মূলস্রোতে একটি বড় সংযোজন যে সংযোজনের ফলে হাজার বছরের বাংলা ভাষার বৈচিত্র্য এবং আয়তন বেড়েছে। এ যাত্রার অনুষঙ্গ নানাবিধ-বিশ্লেষণ করলে বেরিয়ে আসবে কীভাবে এ দেশের ভাষা ও সাহিত্য বাঙালির গৌরবকে শাণিত করেছে, দিয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী রচনার মৃত্তিকা। প্রথমে ভাষার প্রসঙ্গ। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে জন্মলাভ করা পাকিস্তান শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের উপর নানারকম সাংস্কৃতিক আধিপত্য চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। তারা ভেবেছিল এ জাতিকে তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে শুধু ইসলামি সংস্কৃতির ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দিতে পারলেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মাথা তোলার কথা ভাববে না।

ভুলে যাবে নিজেদের অতীত। নতুন ইসলামি সংস্কৃতির ধারণা বাঙালিকে দেবে ভিনগ্রহে প্রবেশের উদ্দীপনা। বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠী দীর্ঘকাল ধরে ইসলামি পরিমণ্ডলে বসবাস করেছে। তাদের মুখের ভাষায় প্রচুর আরবি ফারসি শব্দ যুক্ত হয়েছে। শতাব্দীর গড়ার দিকে বাঙালি মুসলমান লেখকগণ প্রচুর পরিমাণ আরবি-ফারসি শব্দ যোগ করে যে ইসলামি আবহ সৃষ্টি করার সচেতন উদ্যোগ নিয়েছিলেন ১৯৪৭-পরবর্তী বাস্তবতা ছিল তার চেয়ে আলাদা। যে উদ্যোগ মুসলমান লেখকগণ নিয়েছিলেন সেটি ছিল অনেকটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অর্জনের তাগিদ থেকে, অনেকটা আন্তঃপ্রেরণা থেকে,তবে বেশিটা হচ্ছে বাস্তবতারই স্বীকৃতি।

সংস্কৃতায়নপ্রবণতার কারণে বাংলা ভাষায় যেভাবে প্রচুর আরবি-ফারসি শব্দ সংস্কৃত শব্দের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল,মুসলমান লেখকদের মনে তার সহজ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বাঙালি মুসলমানের ব্যবহৃত আরবি-ফারসি শব্দই শুধু নয়, বাঙালি হিন্দুর ব্যবহৃত মুখের ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দগুলোর অনেকটাই এই শ্রেণির লেখকদের হাতে প্রথমবার স্বীকৃতি পেয়েছিল। প্যারীচাদ মিত্র, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বা প্রমথ চৌধুরীদের মতে কয়েকজন লেখকের প্রাসঙ্গিক সচেতনতার কথাও এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়। কিন্তু সাতচল্লিশ-পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান সরকারের উদ্দেশ্যই ছিল আলাদা। তারা জোর করে বাঙালিকে নতুন মুসলমান বানাতে চেয়েছিল। তারা আরবি হরফে বাংলা প্রচলনের উদ্যোগ নিয়েছিল। বাঙালির মুখের ভাষাকে বদলে দেওয়ার জন্য মিডিয়াকে ব্যবহার করেছিল। জোর করে ইসলামি আবরণ চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর ভুল ভাঙতে বেশি দিন সময় লাগেনি।

পূর্ব বঙ্গবাসী পূর্ব পাকিস্তানি হয়ে পাকিস্তান সরকার সৃষ্ট সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে প্রবেশ করেছে ঠিকই, তার ভালটুকু নিয়েছে বর্জন করেছে অসার বস্তু। পাকিস্তানের সংহতির নামে চাপিয়ে দেওয়া ইসলামিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে থেকেও বিসর্জন দেয়নি অসাম্প্রদায়িক চেতনা, গ্রহণ করেনি ধর্মীয় গোঁড়ামির উন্মাদনা, হারিয়ে ফেলেনি তার মানবিক উদার দৃষ্টিভঙ্গি। শুধু জীবনযাপনের মিথস্ক্রিয়ায় গ্রহণ করেছে ধর্মীয় উৎসব, ব্যবহারিক প্রয়োজনে মুখের ভাষায় এসেছে প্রচুর ইসলামি শব্দ। এ শব্দগুলো ইসলামি শব্দ বলে গ্রহণ করা হয়েছে তা নয়, জীবনযাপনের আচার-আচরণের ফলে দীর্ঘকাল ধরে মানুষের মুখে মুখে ব্যবহৃত হতে হতে শব্দগুলো স্থায়ী হয়ে যায় জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক চেতনায়। সাধারণ মানুষের জীবনের শব্দ বলে আমাদের লেখকগণ এসব শব্দ সাহিত্যে তুলে আনেন। ভিন্ন শব্দভাণ্ডার তৈরি হওয়ার কারণে আমাদের সাহিত্যের একটি ভিন্ন গদ্যভঙ্গি তৈরি হয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা আমাদের গদ্যের এক বড় সম্পদ। বাংলা একাডেমি থেকে আঞ্চলিক ভাষার অভিধান প্রকাশিত হয়েছে। আঞ্চলিক ভাষার এই বিপুল শব্দভাণ্ডার, লেখকদের ব্যবহার পদ্ধতি আমাদের গদ্যকে বাংলা ভাষার অন্য অঞ্চলের গদ্য থেকে বিশিষ্ট করে তুলেছে। দিয়েছে ভাষার প্রাণশক্তি। যে প্রমিত গদ্য বাংলাদেশের মানুষ ব্যবহার করে তার কাঠামো সবটা কলকাতাকেন্দ্রিক নয়। অনেক সময়ে তা পূর্ববঙ্গের আঞ্চলিক ভাষাকাঠামোর উপর শুধু শুদ্ধ শব্দের প্রতিস্থাপন। এটি বাংলাদেশের সাহিত্যের গদ্যকে কিছুটা স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত করে। উচ্চারণ এবং বাকভঙ্গির ভিন্নতা গদ্যের বৈচিত্র্য নির্ণয়ের একটি বড় উপাদান। যে জনগোষ্ঠী যে ধরনের সংস্কৃতির ভেতরে বসবাস করে সে সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যের উপরও গদ্যের প্রকাশ কী হবে, তা নির্ভর করে। একটি জনগোষ্ঠী নিজস্ব মূল্যবোধের ভিত্তিতে যে জীবনাচরণ গড়ে তোলে সেটা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি। ভাষা সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান।

এই ভাষা শুধু আমাদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকেই চিহ্নিত করেনি, রাজনৈতিক দিকনির্দেশনারও বলিষ্ঠ প্রকাশ ঘটিয়েছে।বাংলাদেশের একটি আঞ্চলিক বাকভঙ্গি কীভাবে মুখের ভাষাকে অসাধারণভাবে অর্থপূর্ণ করে তোলে, তার একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করতে পারি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণটির কথা আমরা খুব গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করে থাকি। লক্ষণীয় যে এই ভাষণে তিনি একটি বাক্য ব্যবহার করেছেন এমন: ‘আর দাবায়ে রাখবার পারবা না। তিনি যদি প্রমিত বাংলা ব্যবহার করতেন, তা হলে বলতেন, ‘আর দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আঞ্চলিক শব্দ সহযোগে আঞ্চলিক ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে একটি জাতির প্রতিবাদের ভাষা কত বলিষ্ঠ, কত তীব্র হতে পারে তা প্রমাণ করেছেন তিনি। আমাদের জীবনে এই একটি বাক্য মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস। জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন। সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে এভাবে জীবনের ভাষায় রূপান্তরিত করা আমাদের গদ্যভঙ্গির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আমাদের কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে, নাটকে আঞ্চলিক ভাষার এই বিশিষ্টতা একেকজন লেখকের ক্ষমতার উপর বিচিত্রভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এই ব্যবহার পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই। যাকে সম্বল করে আমরা সাহিত্যে একটি নতুন মাত্রা গঠনে প্রয়াসী হয়েছি।

লেখক: বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক

Header Ad
Header Ad

গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন আওয়ামী লীগ নেতা

ছবি: সংগৃহীত

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের চূড়াইন গ্রামে এক ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী হলো এলাকাবাসী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলী হোসেন মৃধা (৪৮) গোলাপ জলে গোসল করে জনসমক্ষে ঘোষণা দিলেন— তিনি রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিচ্ছেন।

শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে নিজ বাড়ির উঠানে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে এই ঘোষণা দেন তিনি। এই ঘোষণার মাধ্যমে একদিকে যেমন রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন, অন্যদিকে নিজ গ্রামে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

আলী হোসেন মৃধা ছিলেন বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এর আগে তিনি ওই ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। চূড়াইন গ্রামের প্রয়াত আব্দুল খালেক মৃধার সন্তান আলী হোসেন মূলত পেশায় একজন ডেকোরেটিং ব্যবসায়ী।

তিনি জানান, ২০১৬ সালে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং তখনই আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

গোলাপ জলে গোসল করে রাজনৈতিক জীবনের ইতি টেনে আলী হোসেন মৃধা বলেন, “আমি মূলত ব্যবসায়ী মানুষ। রাজনীতি আমাকে কখনো খুব টানেনি। তবে এলাকার মানুষের অনুরোধে ও সময়ের প্রেক্ষাপটে আমি যুক্ত হয়েছিলাম।”

তিনি আরও বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতনের পর আমার ভেতরে একটি পরিবর্তন আসে। আমার মনে হয়েছে, রাজনীতি আমার পথ নয়। অনেকেই পালিয়ে গেছেন, কিন্তু আমি এলাকায় থেকে গেছি। আমি কখনো দুর্নীতি বা অনিয়মে জড়াইনি।”

আলী হোসেন মৃধার ভাষায়, এটি ছিল তাঁর ‘বোধোদয়’—একটি আত্মচিন্তার ফল। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, “আমি আর রাজনীতি করবো না। আওয়ামী লীগও করবো না। এখন থেকে শুধু ব্যবসা নিয়েই থাকতে চাই।”

স্থানীয়ভাবে এই ঘোষণা বেশ আলোড়ন তুলেছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি হয়তো রাজনৈতিক কৌশল, আবার কেউ বলছেন এটি একজন সাধারণ কর্মীর বিবেকের জাগরণ।

অনেকেই মনে করছেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যক্তি পর্যায়ে এমন অবস্থান নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে। গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়ার ঘটনা হয়তো বিরল, কিন্তু তা কেবল এক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নয়—বরং এটি একটি সময়ের প্রতিচ্ছবি, যেখানে রাজনীতি নিয়ে মানুষের দ্বিধা, আস্থা ও প্রত্যাশার জায়গাগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

সাগরতীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন করলেন কিম জং উন

ছবি: সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন ছয় বছর বিলম্বে উদ্বোধন করলেন দেশের অন্যতম বৃহৎ পর্যটন প্রকল্প— ওনসান কালমা সমুদ্র সৈকত রিসোর্ট। পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই বিলাসবহুল রিসোর্টটি আগামী জুলাই মাস থেকে দেশীয় পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ। তবে বিদেশি পর্যটকদের জন্য এটি কবে উন্মুক্ত হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।

গত ২৪ জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিম জং উনের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী রি সল জু এবং কন্যা কিম জু এ। ২০২৪ সালের শুরু থেকে এটি ছিল রি সল জুর প্রথম প্রকাশ্য উপস্থিতি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ম্যাটসেগোরাসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও, যা উত্তর কোরিয়ার কূটনৈতিক বার্তাও বহন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এক সময় ওনসান শহরটি পরিচিত ছিল উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘাঁটি হিসেবে। কিন্তু কিম জং উন এখন সেই শহরকেই রূপ দিচ্ছেন পর্যটন নগরীতে। নিজের শৈশব কাটানো এলাকা ওনসানে অভিজাতদের ব্যক্তিগত বাড়ি থাকলেও এবার সাধারণ পর্যটকদের জন্যও খুলে দেওয়া হলো সমুদ্রতীরবর্তী বিলাসবহুল রিসোর্টটি।

কেসিএনএর দাবি অনুযায়ী, রিসোর্টটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪ কিলোমিটার এবং এতে প্রতিদিন ২০ হাজার পর্যটক অবস্থান করতে পারবেন। এতে থাকছে হোটেল, রেস্তোরাঁ, ওয়াটার পার্ক, শপিং মলসহ নানা বিনোদন সুবিধা। তবে এই তথ্যগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ওনসান রিসোর্টের উদ্বোধন কিম সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন কৌশলের অংশ হতে পারে। যদিও উত্তর কোরিয়ায় পর্যটন নিয়ন্ত্রণের কড়াকড়ি রয়েছে, তবুও বিদেশি পর্যটক বিশেষ করে চীন ও রাশিয়া থেকে আসা পর্যটকদের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে দেশটি।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার পর কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে পিয়ংইয়ং। প্রায় তিন বছর পর, ২০২৩ সালে কিছুটা শিথিলতা আসে এবং ২০২৪ সালে রাশিয়ার পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খোলা হয়। তবে ইউরোপীয় ও অস্ট্রেলিয়ান পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খোলার ঘোষণা এলেও কিছু সপ্তাহ পরেই সেটি আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা উত্তর কোরিয়ার পর্যটন নীতির অনিশ্চয়তা ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দেয়।

কেসিএনএ জানিয়েছে, ওনসান রিসোর্ট উদ্বোধন “সমগ্র দেশের জন্য একটি মহান ও শুভ ঘটনা” এবং এটি উত্তর কোরিয়ার পর্যটনে “একটি নতুন যুগের সূচনা”।

প্রথমে ২০১৯ সালের অক্টোবরে এই রিসোর্ট খোলার কথা থাকলেও, নির্মাণে বিলম্ব ও কোভিডের অভিঘাতের কারণে তা সম্ভব হয়নি।

ওনসান কালমা রিসোর্টের উদ্বোধন কেবল পর্যটকদের জন্যই নয়, বরং আন্তর্জাতিক সমাজের দৃষ্টিতে উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত অর্থনৈতিক মনোযোগেরও প্রতিফলন। বিদেশি পর্যটকদের জন্য এটি কতটা সহজলভ্য হবে এবং আদৌ কি তা বৈদেশিক রাজস্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে— তা সময়ই বলে দেবে। তবে রিসোর্টের ছায়ায় লুকিয়ে থাকা রাষ্ট্রীয় ‘নিয়ন্ত্রণ’ ও ‘গোপনতা’ এখনো উত্তর কোরিয়ার পর্যটনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়ে গেছে।

সূত্র: ইনসাইডার, কেসিএনএ

Header Ad
Header Ad

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৬২

ছবি: সংগৃহীত

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ২৬২ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া একজন পুরুষ। আর আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ২১৪ জনই ঢাকার বাইরের।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪১ জন, যাদের মধ্যে ২৩ জন পুরুষ ও ১৮ জন নারী।

এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন নয় হাজার ৪৮৪ জন, যার মধ্যে পাঁচ হাজার ৫৮৩ জন পুরুষ ও তিন হাজার ৯০১ জন নারী।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন আওয়ামী লীগ নেতা
সাগরতীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন করলেন কিম জং উন
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৬২
কূটনৈতিক অস্ত্র পানি নিয়ে ভারতের কঠোর অবস্থান, শঙ্কায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান
পশ্চিমবঙ্গে পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগে তোলপাড়
দুধ আমদানি করা লজ্জার বিষয়: উপদেষ্টা ফরিদা
পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ সেনা নিহত
ছায়ানটের সভাপতি হলেন ডা. সারওয়ার আলী, কার্যনির্বাহী কমিটিতে নতুন মুখ
জুলাই যোদ্ধাদের যথাযথ মর্যাদা দিতে চাই: রিজভী
৮ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস, নদীবন্দরে সতর্কতা
সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে হেগে পাকিস্তানের আইনি জয়, রায় প্রত্যাখ্যান করল ভারত
আগস্টে ঢাকার ৩ এলাকায় চালু হবে ই-রিকশা
বিনিয়োগকারীদের জন্য বিডার নতুন ওয়েবসাইট চালু
টাঙ্গাইলে যৌনপল্লীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ১২টি ঘর পুড়ে ছাই
আবাসিক হোটেল থেকে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসাধারীদের খুশির খবর দিল সৌদি আরব
চীন সফর অত্যন্ত ‘সফল’ ও ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে: মির্জা ফখরুল
ইরানে আবারও বোমা হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প
ইনিংস ব্যবধানে হারের পরই টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়লেন শান্ত
৩ হাজারের বেশি কবর খোঁড়া সেই মনু মিয়া মারা গেছেন (ভিডিও)