বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

বিজয় অর্জনের গৌরবগাঁথা

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল বাঙালির সামনে স্বাধীনতার নতুন সূর্য। এই দিন রেসকোর্স ময়দানে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করেছিল পরাজিত পাকিস্তান বাহিনী। বীর বাঙালি অস্ত্র ধরেছিল ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ সাহসী উচ্চারণ বুকে নিয়ে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পরে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল। উচ্চারিত হয়েছিল ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’- বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতিতে উড়েছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। এই দিন স্বাধীন দেশের অস্তিত্ব নিয়ে পতাকার মতো উড়ছে ৫১ বছর ধরে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশে ফিরে আসা স্বাধীনতা অর্জনের আর একমাত্রা। তিনি এসে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ৯ই মে রাজশাহী মাদ্রাসার মাঠে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমার ভাইয়েরা ও বোনেরা, আজ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু বড় ত্যাগের বিনিময়ে। এত রক্ত কোন দেশ কোনদিন কোন জাতি দেয়নি, যা আজ আমার বাংলার মানুষকে দিতে হয়েছে। আজ ঘরে ঘরে, গ্রামে গ্রামে মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। জালেমরা রাস্তাঘাট ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। চালের গুদাম ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার সরকারি কর্মচারীদের গুলি করে হত্যা করেছে। আমার পুলিশ ভাইদের, বিডিআর, সামরিক বাহিনীর ছেলেদের গুলি করে হত্যা করেছে। হত্যা করেছে আমার ছাত্র, আমার যুবক, আমার কৃষক, আমার বুদ্ধিজীবী, আমার সাংবাদিকদের। ............ আমি কি চাই? আমি চাই আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি কি চাই? আমার বাংলার বেকার কাজ পাক। আমি কি চাই? আামার বাংলার মানুষ সুখী হোক। আমি কি চাই? আমার বাংলার মানুষ হেসে খেলে বেড়াক। আমি কি চাই? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণ ভরে হাসুক। কিন্তু বড় দুঃখ ভাই, জালেমরা কিছুই রেখে যায়নি। সমস্ত নোটগুলি পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়ে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রা, বিশ্বাস করুন, যেদিন আমি এসে সরকার নিলাম এক পয়সার বৈদেশিক মুদ্রাও পাইনি।'

বিজয় লাভের পরে এই ছিল বাংলাদেশের পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের বিজয় গৌরব ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্বে। ৫০তম বিজয় দিবস বাঙালির বাংলাদেশের বিশ্বজুড়ে গৌরব অর্জনের দিন। বিজয় দিবস বাঙালি একটি দিনে সীমাবদ্ধ রাখেনি। বিজয়ের বহুমাত্রিক মাত্রায় বাংলাদেশের নানামুখী বিজয়-অর্জন আজকের বিশ্বে দৃশ্যমান প্রেক্ষাপট।

১৯১৩ সালে বাংলা ভাষার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করে। ১৯৭৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন। সেদিন তিনি বাংলা ভাষাকে পুরো বিশ্বের সামনে মর্যাদার অবস্থানে তুলে ধরেছিলেন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই গৌরবময় অর্জন ছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক বিজয়। পাশাপাশি জাতিসত্তার অস্তিত্তে¡র প্রশ্নে এই বিজয় ছিল দিগন্তছোঁয়ার স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান করেছেন তিনি বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেছেন। বাংলা এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের সরকারি ভাষা হয়নি। সেটা সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রেখেছেন। এটাই নেতৃত্বের সাহসী দৃঢ়তা। বিজয় দিবসকে একদিনে সীমাবদ্ধ না রাখার অঙ্গীকার। এভাবে আমাদের বিজয়ের অর্জন ছড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে।

তিনি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘বিশ্বের ২৫ কোটি মানুষের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাবি উত্থাপন করেছি। ... আজ সারা বিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।’ এভাবে বিজয়ের অর্জনের মাত্রাকে বহুমুখী করে বাংলাদেশের পথচলা হিমালয় শীর্ষের উচ্চতা লাভ করবে। পরবর্তী প্রজন্ম শিখবে দেশের মর্যাদার প্রশ্নে আপোষ করতে নেই। দেশ ও জাতিসত্ত্বা বেঁচে থাকার মৌলিক সত্য।

জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘যে মহান আদর্শ জাতিসংঘের সনদে রক্ষিত আছে আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছে। শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তোলার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে আজকের বাংলাদেশ মানবিক বোধের চেতনায় শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার দেশ। বিজয়ের এও এক বিশাল অর্জন।

১৯৯৯ সালে বিজয়ের আর এক অর্জন ঘটেছে যেদিন ইউনেস্কো কর্তৃক আমাদের ২১শে ফেব্রæয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাঙালি মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য জীবন উৎসর্গ করে যে গৌরব অর্জন করেছিল ইউনেস্কোর এই ঘোষণার মাধ্যমে সে মর্যাদার দর্শন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এই বিজয় অর্জনের সূচনা হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি। সেদিন কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানকে চিঠির মাধ্যমে বাঙালির শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করার আবেদন করেছিলেন। জাতিসংঘ থেকে জানানো হয়েছিল বিষয়টি ইউনেস্কোর এখতিয়ারভুক্ত। সেখানে পাঠাতে হবে। রফিকুল ইসলাম রীতি অনুযায়ী নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবেদন পত্র সেখানে পাঠান। ইউনেস্কো থেকে জানানো হয় প্রস্তাবটি বাংলাদেশের সরকারের কাছ থেকে আসতে হবে। এরমধ্যে বেশ লম্বা সময় গড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে প্রস্তাব পাঠানোর সময় ছিল মাত্র ২ দিন। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে এক সুদূরপ্রসারী বিজয় অর্জন করেছেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, ইউনেস্কোতে যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে হবে তা আপনারা দ্রুত পাঠিয়ে দিন। ফাইলের ফর্মালিটিজ পরে সম্পন্ন করবেন।

গৌরব অর্জনে এ এক অসাধারণ সিদ্ধান্ত ছিল। ইউনেস্কোর জেনারেল কনফারেন্সে প্রস্তাবটি সেই সভায় উত্থাপিত না হলে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ প্রস্তাব উত্থাপন ভবিষ্যতে আর হতো না। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ১৮৮টি দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে পাশ হয় মাতৃভাষা দিবসের এই প্রস্তাব। বিশ্বজুড়ে গণমানুষের কাছে পৌঁছে গেছে মাতৃভাষার মর্যাদার এই বার্তা। গৌরবে মহীয়ান হয়েছে বাংলাদেশ। ৭১-এর বিজয় দিবস প্রবহমান ধারায় রক্ষা করে চলেছে বিজয়ের গৌরব। এই পর্যায়ে আরও একটি দিন অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। কানাডার বিভিন্ন প্রদেশ, যেমন ওন্টারিওর টরোন্টো সিটি, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারে সিটি, ভ্যাঙ্কুভার, রিচমন্ড সিটিসহ আরও অনেক শহরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সরকারিভাবে পালিত হয় ২০০৭ সাল থেকে। অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পার্লামেন্টে দিবসটি সরকারিভাবে পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। বাংলাদেশ মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য জীবনদানকারী দেশ। পৃথিবীজুড়ে বিলুপ্ত হচ্ছে অনেক নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা। সব দেশের সামনে এখন আশার আলো নিয়ে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ গৌরবময় বিজয় অর্জনের আর একটি অন্যতম মাত্রা। বিশ্বের অগণিত মানুষের অধিকারের প্রশ্নে উচ্চারিত হবে এই ভাষণের পংক্তিসমূহ। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবরে প্যারিসের ইউনেস্কো সদর দপ্তরে মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ঘোষণা দিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি ‘বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে ‘ ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ। ইউনেস্কো জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি ইতিহাসের বড়ো সময় ধরে বিশ্বজুড়ে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি করেছে। ইউনেস্কোর মাধ্যমে বাঙালির অর্জন বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য। যে ঐতিহ্য মানবজাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। অনুপ্রেরণা প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের ভেতর দিয়ে মানুষের মানবিক অধিকারকে সুরক্ষিত করে। বলতেই হবে বাঙালির বিজয় দিবসের বহুমাত্রা নিয়ে ৭ই মার্চের এই ভাষণ বিজয়ের গৌরবগাঁথা।

বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণ শুরু করেছিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার’ সম্বোধন করে। ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত ভাষণ বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠস্বর ধ্বনিত হবে বিশ্বজুড়ে। তিনি বিশ্ববাসীকে জড়ো করে বলছেন, ভাইয়েরা আমার। ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড কর্মসূচির অ্যাডভাইজরি কমিটির ১৫ জন সদস্য দুই বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ঐতিহাসিক দলিলসমূহ গভীর পর্যবেক্ষণের আওতায় এনে যে সিদ্ধান্ত দিল তাতে বাঙালির দরজা খুলে গেছে বিশ্ববাসীর সামনে। যেভাবে বিশ্বের মানুষ আব্রাহাম লিঙ্কনের ভাষণ স্মরণ করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চেতনায় For the People, By the People, Of the People. মানুষের প্রতিরোধের জায়গা জোরদার হয়ে ওঠে নেতৃত্বের অমর বাণী থেকে। বাংলাদেশও এই জায়গাটি তৈরি করেছে।

ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ Jacob F. Field একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন ‘We shall Fight on The Beaches – The Speeches That Inspired History’ শিরোনামে। গ্রন্থটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। এই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ‘The Struggle This Time is the Struggle for Independence’ শিরোনামে। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থটি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছেছে।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরে ভারতের পশ্চিম বাংলায় এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সব মিলিয়ে ১৬২টি ছিটমহল সৃষ্টি হয়েছিল। এসবের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের অংশে ছিল ভারতের ১১১টি ছিটমহল। আর ভারতের অংশে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের ৫১টি ছিটমহল। একরকম বন্দীজীবন কাটিয়েছে ছিটমহলের অধিবাসীরা। অন্য রাষ্ট্র দ্বারা সীমান্ত রক্ষিত ছিল বলে তাদের ছিটমহলের বাইরে যাওয়ার অনায়াস ব্যবস্থা ছিল না। তারা বঞ্চনার জীবন-যাপন করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত জীবন ছিল তাদের। ভোটাধিকারও ছিল না ছিটমহলবাসীর। তাঁরা অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশার দীর্ঘ বছর অতিবাহিত করে। যেদিন ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে দিল্লিতে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। দীর্ঘ বছর গড়িয়েছে। ‘৪৭ পরবর্তী সময় থেকে ৬৮ বছর পার হয়েছে। কিন্তু ছিটমহলবাসীর জীবনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক জীবনের মুক্তির সন্ধান মেলেনি। চুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে এই চুক্তির বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গণমানুষের পক্ষে মানবিক চেতনার দীপ্ত নেত্রী। মানুষের বেঁচে থাকার সহজ সত্যকে তিনি মূল্যায়ন করেন। সমাধানের পথে এগিয়ে আসেন। তারই ফলশ্রুতি দেশভাগের ৬৮ বছর পরে ছিটমহলের মানুষের বন্দী জীবনের অবসান। এটি ছিল মানবিকতার পক্ষে বড় ধরনের বিজয়-অর্জন।

বাংলাদেশের সমুদ্র জয় এমন আরও একটি বড় অর্জন। ২০১২ সালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রসীমার যে বিরোধ ছিল তা ‘সমুদ্র আইন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে’ (ITLOS) নিষ্পত্তি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন এটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। বিশ্বের মানুষের সামনে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মতো দীপ্ত গৌরবের উদাহরণ থাকবে। এমন আরও অর্জন আছে বাংলাদেশের ৪৬ বছরের ইতিহাসের পৃষ্ঠায়। আমাদের নৃগোষ্ঠীর মানুষদের ভাষার মর্যাদা দিয়ে আমরা ওদের মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা করি। জয় হোক বিজয়ের গৌরবের। জয় হোক দেশবাসীর। বাংলাদেশের মানচিত্রে উড়তে থাকবে লাল-সবুজ পতাকা। এই পতাকা বিভিন্ন দেশে ওড়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেট দল -- ওড়ায় বাংলাদেশের ফুটবল-ক্রিকেট খেলোয়াড় মেয়েরা। এই দীপ্ত আলোর দিকে তাকিয়ে এ বছরে উদযাপিত হোক বিজয় দিবস। আমাদের তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে আসুক বিজয়ের মুকুট মাথায় নিয়ে।

লেখক: বাংলা একাডেমির সভাপতি ও সাহত্যিকি

/এএস

Header Ad

জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছে : সেতুমন্ত্রী

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারসহ সব অধিকার প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছে এবং জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক শক্তি। তারই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সর্বদা জনগণের ভোটাধিকারসহ অন্যান্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার (২ মে) আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খানের সই করা এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক বক্তব্যের’ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনও মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল না বা ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলও না।’

বিএনপির সমালোচনা করে বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি সবসময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। যে কারণে তাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ভীতি রয়েছে এবং তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় না। একবার তারা তাদের ক্ষমতায় আসার পথ নির্বিঘ্ন করতে অর্ধ কোটি ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল। আবার ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার সৃষ্টি করেছিল। যারা জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য বিভিন্ন অপকৌশল গ্রহণ করেছিল তাদের মুখে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের কথা মানায় না।’

বিএনপির রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো যে কোনও উপায়ে ক্ষমতা দখল করা অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল এবং তা অবৈধভাবে ব্যবহার করে দুর্নীতি ও লুটপাট-তন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বাংলাদেশের ললাটে পাঁচ পাঁচ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কলঙ্ক লেপন করেছিল।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তাদের অপশাসন-দুঃশাসনের ফলে দেশের জনগণকে দুঃসহ জীবনযাপন করতে হতো। আজ তারা শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলেছে। অথচ তারা ক্ষমতায় থাকতে কোনোদিন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ায়নি। বরং বেতন-বোনাসের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকের বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা, সারের দাবিতে আন্দোলন করায় কৃষক হত্যা এবং বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন করায় সাধারণ মানুষকে হত্যার মাধ্যমে বন্দুকের জোরে মানুষকে জিম্মি করে বাংলাদেশকে দুঃশাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট করেছিল বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি।

বিএনপি আদমজী জুট মিলসহ বিভিন্ন কল-কারখানা বন্ধ করে শ্রমজীবী মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কয়েক ধাপে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছে, চা-শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়িয়েছে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘শ্রমজীবী মানুষসহ সব মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য।’

মে মাসে আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

ফাইল ছবি

সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়ে এপ্রিল মাস জুড়ে তীব্র গরমে পুড়েছে সারা দেশ। তীব্র গরমে নাস্তানাবুদ সব বয়সের মানুষ। এদিকে তাপপ্রবাহের ফলে গরমরে তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনা। এদিকে চলতি মাসে আবহাওয়া কেমন থাকবে তা জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) চলতি মাসের আবহাওয়া কেমন থাকবে সে বিষয়ে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান।

তিনি বলেন, মে মাসের তাপমাত্রা এপ্রিল মাসের চেয়ে কিছুটা কম থাকবে। মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা একটু বেশি থাকতে পারে। তবে তা এপ্রিলের মতো অবস্থায় যাবে না। তাপপ্রবাহ এত দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে না।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মে মাসে তিন থেকে পাঁচ দিন হালকা ধরনের কালবৈশাখী হতে পারে। দুই থেকে তিন দিন বজ্র–শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি ও তীব্র কালবৈশাখী হতে পারে। চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলেও এ বার্তায় বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (সিলেটসহ হাওর অঞ্চলে) নদনদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে। কিছু কিছু জায়গায় তা বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের হার ২৭৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার। তবে গত এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮১ ভাগ কম বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় বৃষ্টি কম হয়েছে ৯১ শতাংশ। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে এপ্রিলে কোনো বৃষ্টিই হয়নি।

সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিল মাসজুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এমন অবস্থা গত ৭৬ বছরে হয়নি বলেও জানিয়েছিল আবহাওয়া অফিস।

এদিকে মাসব্যাপী তীব্র তাপপ্রবাহের পর আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে।

আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ এবং খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা দেশের পূর্বাঞ্চলের কিছু জায়গা হতে প্রশমিত হতে পারে।

জায়েদ খানের উপস্থাপনায় মঞ্চ মাতাবেন জেমস

জেমস ও জায়েদ। ছবি: সংগৃহীত

উপমহাদেশের নন্দিত গায়ক নগরবাউল জেমস এবার মঞ্চ মাতাবেন লন্ডনে। আর ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’ শিরোনামের এই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়ক জায়েদ খান।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানা গেছে, আগামী ২৬-২৭ মে লন্ডনের মাইল অ্যান্ড স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় এই আয়োজনে দুদিনই মঞ্চ মাতাবেন রকস্টার জেমস। পাশাপাশি সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা, প্রীতম হাসান, সাব্বির জামান, দোলাসহ লন্ডনের প্রবাসী অনেক শিল্পী সংগীত পরিবেশন করবেন। থাকছে যাত্রাপালা ও মেলার আয়োজনও।

জেমস ও জায়েদ। ছবি: সংগৃহীত

নেক্সট স্টেজ ইভেন্ট আয়োজিত এই দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠান হাস্যরসে উপস্থাপনা করবেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান।

ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ বলে নিশ্চিত করেছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান।

সর্বশেষ সংবাদ

জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছে : সেতুমন্ত্রী
মে মাসে আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর
জায়েদ খানের উপস্থাপনায় মঞ্চ মাতাবেন জেমস
আইপিএল থেকে কত টাকা পাচ্ছেন মুস্তাফিজ?
পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা করে ৯৯৯-এ ফোন দিলেন স্বামী
গণমাধ্যমের যে কোনো সমালোচনাকে সরকার স্বাগত জানায়: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
কংগ্রেসকে পাকিস্তানের ‘মুরিদ’ বললেন নরেন্দ্র মোদি
দেশে নির্মাণ হচ্ছে স্বর্ণ কারখানা
টাঙ্গাইলে প্রতীক পেয়েই প্রার্থীদের প্রচারণা
ওমরাহ পালন করতে সস্ত্রীক ঢাকা ছাড়লেন মির্জা ফখরুল
সরকারি খাদ্য গুদামে হয়রানির অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: খাদ্যমন্ত্রী
মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে
রোনালদোর পর সিকান্দার রাজাও সংবাদ সম্মেলনে কোমল পানীয়র বোতল সরালেন
রাঙামাটিতে বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৩ জনের
শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ
ঢাবির সিনেট সদস্য হলেন গাইবান্ধা-৫ আসনের এমপি মাহমুদ হাসান
আরও কমলো এলপি গ্যাসের দাম
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন
আগেই মিষ্টি কিনেছিলেন রিঙ্কুর বাবা, কিন্তু জায়গা হলো না বিশ্বকাপে
ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করল কলম্বিয়া