শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

বিজয় অর্জনের গৌরবগাঁথা

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল বাঙালির সামনে স্বাধীনতার নতুন সূর্য। এই দিন রেসকোর্স ময়দানে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করেছিল পরাজিত পাকিস্তান বাহিনী। বীর বাঙালি অস্ত্র ধরেছিল ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ সাহসী উচ্চারণ বুকে নিয়ে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পরে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল। উচ্চারিত হয়েছিল ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’- বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতিতে উড়েছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। এই দিন স্বাধীন দেশের অস্তিত্ব নিয়ে পতাকার মতো উড়ছে ৫১ বছর ধরে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশে ফিরে আসা স্বাধীনতা অর্জনের আর একমাত্রা। তিনি এসে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ৯ই মে রাজশাহী মাদ্রাসার মাঠে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমার ভাইয়েরা ও বোনেরা, আজ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু বড় ত্যাগের বিনিময়ে। এত রক্ত কোন দেশ কোনদিন কোন জাতি দেয়নি, যা আজ আমার বাংলার মানুষকে দিতে হয়েছে। আজ ঘরে ঘরে, গ্রামে গ্রামে মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। জালেমরা রাস্তাঘাট ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। চালের গুদাম ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার সরকারি কর্মচারীদের গুলি করে হত্যা করেছে। আমার পুলিশ ভাইদের, বিডিআর, সামরিক বাহিনীর ছেলেদের গুলি করে হত্যা করেছে। হত্যা করেছে আমার ছাত্র, আমার যুবক, আমার কৃষক, আমার বুদ্ধিজীবী, আমার সাংবাদিকদের। ............ আমি কি চাই? আমি চাই আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি কি চাই? আমার বাংলার বেকার কাজ পাক। আমি কি চাই? আামার বাংলার মানুষ সুখী হোক। আমি কি চাই? আমার বাংলার মানুষ হেসে খেলে বেড়াক। আমি কি চাই? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণ ভরে হাসুক। কিন্তু বড় দুঃখ ভাই, জালেমরা কিছুই রেখে যায়নি। সমস্ত নোটগুলি পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়ে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রা, বিশ্বাস করুন, যেদিন আমি এসে সরকার নিলাম এক পয়সার বৈদেশিক মুদ্রাও পাইনি।'

বিজয় লাভের পরে এই ছিল বাংলাদেশের পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের বিজয় গৌরব ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্বে। ৫০তম বিজয় দিবস বাঙালির বাংলাদেশের বিশ্বজুড়ে গৌরব অর্জনের দিন। বিজয় দিবস বাঙালি একটি দিনে সীমাবদ্ধ রাখেনি। বিজয়ের বহুমাত্রিক মাত্রায় বাংলাদেশের নানামুখী বিজয়-অর্জন আজকের বিশ্বে দৃশ্যমান প্রেক্ষাপট।

১৯১৩ সালে বাংলা ভাষার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করে। ১৯৭৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন। সেদিন তিনি বাংলা ভাষাকে পুরো বিশ্বের সামনে মর্যাদার অবস্থানে তুলে ধরেছিলেন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই গৌরবময় অর্জন ছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক বিজয়। পাশাপাশি জাতিসত্তার অস্তিত্তে¡র প্রশ্নে এই বিজয় ছিল দিগন্তছোঁয়ার স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান করেছেন তিনি বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেছেন। বাংলা এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের সরকারি ভাষা হয়নি। সেটা সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রেখেছেন। এটাই নেতৃত্বের সাহসী দৃঢ়তা। বিজয় দিবসকে একদিনে সীমাবদ্ধ না রাখার অঙ্গীকার। এভাবে আমাদের বিজয়ের অর্জন ছড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে।

তিনি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘বিশ্বের ২৫ কোটি মানুষের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাবি উত্থাপন করেছি। ... আজ সারা বিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।’ এভাবে বিজয়ের অর্জনের মাত্রাকে বহুমুখী করে বাংলাদেশের পথচলা হিমালয় শীর্ষের উচ্চতা লাভ করবে। পরবর্তী প্রজন্ম শিখবে দেশের মর্যাদার প্রশ্নে আপোষ করতে নেই। দেশ ও জাতিসত্ত্বা বেঁচে থাকার মৌলিক সত্য।

জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘যে মহান আদর্শ জাতিসংঘের সনদে রক্ষিত আছে আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছে। শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তোলার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে আজকের বাংলাদেশ মানবিক বোধের চেতনায় শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার দেশ। বিজয়ের এও এক বিশাল অর্জন।

১৯৯৯ সালে বিজয়ের আর এক অর্জন ঘটেছে যেদিন ইউনেস্কো কর্তৃক আমাদের ২১শে ফেব্রæয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাঙালি মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য জীবন উৎসর্গ করে যে গৌরব অর্জন করেছিল ইউনেস্কোর এই ঘোষণার মাধ্যমে সে মর্যাদার দর্শন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এই বিজয় অর্জনের সূচনা হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি। সেদিন কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানকে চিঠির মাধ্যমে বাঙালির শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করার আবেদন করেছিলেন। জাতিসংঘ থেকে জানানো হয়েছিল বিষয়টি ইউনেস্কোর এখতিয়ারভুক্ত। সেখানে পাঠাতে হবে। রফিকুল ইসলাম রীতি অনুযায়ী নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবেদন পত্র সেখানে পাঠান। ইউনেস্কো থেকে জানানো হয় প্রস্তাবটি বাংলাদেশের সরকারের কাছ থেকে আসতে হবে। এরমধ্যে বেশ লম্বা সময় গড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে প্রস্তাব পাঠানোর সময় ছিল মাত্র ২ দিন। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে এক সুদূরপ্রসারী বিজয় অর্জন করেছেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, ইউনেস্কোতে যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে হবে তা আপনারা দ্রুত পাঠিয়ে দিন। ফাইলের ফর্মালিটিজ পরে সম্পন্ন করবেন।

গৌরব অর্জনে এ এক অসাধারণ সিদ্ধান্ত ছিল। ইউনেস্কোর জেনারেল কনফারেন্সে প্রস্তাবটি সেই সভায় উত্থাপিত না হলে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ প্রস্তাব উত্থাপন ভবিষ্যতে আর হতো না। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ১৮৮টি দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে পাশ হয় মাতৃভাষা দিবসের এই প্রস্তাব। বিশ্বজুড়ে গণমানুষের কাছে পৌঁছে গেছে মাতৃভাষার মর্যাদার এই বার্তা। গৌরবে মহীয়ান হয়েছে বাংলাদেশ। ৭১-এর বিজয় দিবস প্রবহমান ধারায় রক্ষা করে চলেছে বিজয়ের গৌরব। এই পর্যায়ে আরও একটি দিন অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। কানাডার বিভিন্ন প্রদেশ, যেমন ওন্টারিওর টরোন্টো সিটি, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারে সিটি, ভ্যাঙ্কুভার, রিচমন্ড সিটিসহ আরও অনেক শহরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সরকারিভাবে পালিত হয় ২০০৭ সাল থেকে। অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পার্লামেন্টে দিবসটি সরকারিভাবে পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। বাংলাদেশ মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য জীবনদানকারী দেশ। পৃথিবীজুড়ে বিলুপ্ত হচ্ছে অনেক নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা। সব দেশের সামনে এখন আশার আলো নিয়ে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ গৌরবময় বিজয় অর্জনের আর একটি অন্যতম মাত্রা। বিশ্বের অগণিত মানুষের অধিকারের প্রশ্নে উচ্চারিত হবে এই ভাষণের পংক্তিসমূহ। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবরে প্যারিসের ইউনেস্কো সদর দপ্তরে মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ঘোষণা দিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি ‘বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে ‘ ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ। ইউনেস্কো জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি ইতিহাসের বড়ো সময় ধরে বিশ্বজুড়ে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি করেছে। ইউনেস্কোর মাধ্যমে বাঙালির অর্জন বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য। যে ঐতিহ্য মানবজাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। অনুপ্রেরণা প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের ভেতর দিয়ে মানুষের মানবিক অধিকারকে সুরক্ষিত করে। বলতেই হবে বাঙালির বিজয় দিবসের বহুমাত্রা নিয়ে ৭ই মার্চের এই ভাষণ বিজয়ের গৌরবগাঁথা।

বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণ শুরু করেছিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার’ সম্বোধন করে। ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত ভাষণ বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠস্বর ধ্বনিত হবে বিশ্বজুড়ে। তিনি বিশ্ববাসীকে জড়ো করে বলছেন, ভাইয়েরা আমার। ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড কর্মসূচির অ্যাডভাইজরি কমিটির ১৫ জন সদস্য দুই বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ঐতিহাসিক দলিলসমূহ গভীর পর্যবেক্ষণের আওতায় এনে যে সিদ্ধান্ত দিল তাতে বাঙালির দরজা খুলে গেছে বিশ্ববাসীর সামনে। যেভাবে বিশ্বের মানুষ আব্রাহাম লিঙ্কনের ভাষণ স্মরণ করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চেতনায় For the People, By the People, Of the People. মানুষের প্রতিরোধের জায়গা জোরদার হয়ে ওঠে নেতৃত্বের অমর বাণী থেকে। বাংলাদেশও এই জায়গাটি তৈরি করেছে।

ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ Jacob F. Field একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন ‘We shall Fight on The Beaches – The Speeches That Inspired History’ শিরোনামে। গ্রন্থটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। এই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ‘The Struggle This Time is the Struggle for Independence’ শিরোনামে। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থটি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছেছে।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরে ভারতের পশ্চিম বাংলায় এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সব মিলিয়ে ১৬২টি ছিটমহল সৃষ্টি হয়েছিল। এসবের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের অংশে ছিল ভারতের ১১১টি ছিটমহল। আর ভারতের অংশে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের ৫১টি ছিটমহল। একরকম বন্দীজীবন কাটিয়েছে ছিটমহলের অধিবাসীরা। অন্য রাষ্ট্র দ্বারা সীমান্ত রক্ষিত ছিল বলে তাদের ছিটমহলের বাইরে যাওয়ার অনায়াস ব্যবস্থা ছিল না। তারা বঞ্চনার জীবন-যাপন করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত জীবন ছিল তাদের। ভোটাধিকারও ছিল না ছিটমহলবাসীর। তাঁরা অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশার দীর্ঘ বছর অতিবাহিত করে। যেদিন ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে দিল্লিতে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। দীর্ঘ বছর গড়িয়েছে। ‘৪৭ পরবর্তী সময় থেকে ৬৮ বছর পার হয়েছে। কিন্তু ছিটমহলবাসীর জীবনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক জীবনের মুক্তির সন্ধান মেলেনি। চুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে এই চুক্তির বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গণমানুষের পক্ষে মানবিক চেতনার দীপ্ত নেত্রী। মানুষের বেঁচে থাকার সহজ সত্যকে তিনি মূল্যায়ন করেন। সমাধানের পথে এগিয়ে আসেন। তারই ফলশ্রুতি দেশভাগের ৬৮ বছর পরে ছিটমহলের মানুষের বন্দী জীবনের অবসান। এটি ছিল মানবিকতার পক্ষে বড় ধরনের বিজয়-অর্জন।

বাংলাদেশের সমুদ্র জয় এমন আরও একটি বড় অর্জন। ২০১২ সালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রসীমার যে বিরোধ ছিল তা ‘সমুদ্র আইন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে’ (ITLOS) নিষ্পত্তি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন এটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। বিশ্বের মানুষের সামনে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মতো দীপ্ত গৌরবের উদাহরণ থাকবে। এমন আরও অর্জন আছে বাংলাদেশের ৪৬ বছরের ইতিহাসের পৃষ্ঠায়। আমাদের নৃগোষ্ঠীর মানুষদের ভাষার মর্যাদা দিয়ে আমরা ওদের মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা করি। জয় হোক বিজয়ের গৌরবের। জয় হোক দেশবাসীর। বাংলাদেশের মানচিত্রে উড়তে থাকবে লাল-সবুজ পতাকা। এই পতাকা বিভিন্ন দেশে ওড়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেট দল -- ওড়ায় বাংলাদেশের ফুটবল-ক্রিকেট খেলোয়াড় মেয়েরা। এই দীপ্ত আলোর দিকে তাকিয়ে এ বছরে উদযাপিত হোক বিজয় দিবস। আমাদের তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে আসুক বিজয়ের মুকুট মাথায় নিয়ে।

লেখক: বাংলা একাডেমির সভাপতি ও সাহত্যিকি

/এএস

Header Ad
Header Ad

গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন আওয়ামী লীগ নেতা

ছবি: সংগৃহীত

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের চূড়াইন গ্রামে এক ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী হলো এলাকাবাসী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলী হোসেন মৃধা (৪৮) গোলাপ জলে গোসল করে জনসমক্ষে ঘোষণা দিলেন— তিনি রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিচ্ছেন।

শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে নিজ বাড়ির উঠানে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে এই ঘোষণা দেন তিনি। এই ঘোষণার মাধ্যমে একদিকে যেমন রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন, অন্যদিকে নিজ গ্রামে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

আলী হোসেন মৃধা ছিলেন বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এর আগে তিনি ওই ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। চূড়াইন গ্রামের প্রয়াত আব্দুল খালেক মৃধার সন্তান আলী হোসেন মূলত পেশায় একজন ডেকোরেটিং ব্যবসায়ী।

তিনি জানান, ২০১৬ সালে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং তখনই আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

গোলাপ জলে গোসল করে রাজনৈতিক জীবনের ইতি টেনে আলী হোসেন মৃধা বলেন, “আমি মূলত ব্যবসায়ী মানুষ। রাজনীতি আমাকে কখনো খুব টানেনি। তবে এলাকার মানুষের অনুরোধে ও সময়ের প্রেক্ষাপটে আমি যুক্ত হয়েছিলাম।”

তিনি আরও বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতনের পর আমার ভেতরে একটি পরিবর্তন আসে। আমার মনে হয়েছে, রাজনীতি আমার পথ নয়। অনেকেই পালিয়ে গেছেন, কিন্তু আমি এলাকায় থেকে গেছি। আমি কখনো দুর্নীতি বা অনিয়মে জড়াইনি।”

আলী হোসেন মৃধার ভাষায়, এটি ছিল তাঁর ‘বোধোদয়’—একটি আত্মচিন্তার ফল। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, “আমি আর রাজনীতি করবো না। আওয়ামী লীগও করবো না। এখন থেকে শুধু ব্যবসা নিয়েই থাকতে চাই।”

স্থানীয়ভাবে এই ঘোষণা বেশ আলোড়ন তুলেছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি হয়তো রাজনৈতিক কৌশল, আবার কেউ বলছেন এটি একজন সাধারণ কর্মীর বিবেকের জাগরণ।

অনেকেই মনে করছেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যক্তি পর্যায়ে এমন অবস্থান নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে। গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়ার ঘটনা হয়তো বিরল, কিন্তু তা কেবল এক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নয়—বরং এটি একটি সময়ের প্রতিচ্ছবি, যেখানে রাজনীতি নিয়ে মানুষের দ্বিধা, আস্থা ও প্রত্যাশার জায়গাগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

সাগরতীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন করলেন কিম জং উন

ছবি: সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন ছয় বছর বিলম্বে উদ্বোধন করলেন দেশের অন্যতম বৃহৎ পর্যটন প্রকল্প— ওনসান কালমা সমুদ্র সৈকত রিসোর্ট। পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই বিলাসবহুল রিসোর্টটি আগামী জুলাই মাস থেকে দেশীয় পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ। তবে বিদেশি পর্যটকদের জন্য এটি কবে উন্মুক্ত হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।

গত ২৪ জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিম জং উনের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী রি সল জু এবং কন্যা কিম জু এ। ২০২৪ সালের শুরু থেকে এটি ছিল রি সল জুর প্রথম প্রকাশ্য উপস্থিতি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ম্যাটসেগোরাসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও, যা উত্তর কোরিয়ার কূটনৈতিক বার্তাও বহন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এক সময় ওনসান শহরটি পরিচিত ছিল উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘাঁটি হিসেবে। কিন্তু কিম জং উন এখন সেই শহরকেই রূপ দিচ্ছেন পর্যটন নগরীতে। নিজের শৈশব কাটানো এলাকা ওনসানে অভিজাতদের ব্যক্তিগত বাড়ি থাকলেও এবার সাধারণ পর্যটকদের জন্যও খুলে দেওয়া হলো সমুদ্রতীরবর্তী বিলাসবহুল রিসোর্টটি।

কেসিএনএর দাবি অনুযায়ী, রিসোর্টটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪ কিলোমিটার এবং এতে প্রতিদিন ২০ হাজার পর্যটক অবস্থান করতে পারবেন। এতে থাকছে হোটেল, রেস্তোরাঁ, ওয়াটার পার্ক, শপিং মলসহ নানা বিনোদন সুবিধা। তবে এই তথ্যগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ওনসান রিসোর্টের উদ্বোধন কিম সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন কৌশলের অংশ হতে পারে। যদিও উত্তর কোরিয়ায় পর্যটন নিয়ন্ত্রণের কড়াকড়ি রয়েছে, তবুও বিদেশি পর্যটক বিশেষ করে চীন ও রাশিয়া থেকে আসা পর্যটকদের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে দেশটি।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার পর কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে পিয়ংইয়ং। প্রায় তিন বছর পর, ২০২৩ সালে কিছুটা শিথিলতা আসে এবং ২০২৪ সালে রাশিয়ার পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খোলা হয়। তবে ইউরোপীয় ও অস্ট্রেলিয়ান পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খোলার ঘোষণা এলেও কিছু সপ্তাহ পরেই সেটি আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা উত্তর কোরিয়ার পর্যটন নীতির অনিশ্চয়তা ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দেয়।

কেসিএনএ জানিয়েছে, ওনসান রিসোর্ট উদ্বোধন “সমগ্র দেশের জন্য একটি মহান ও শুভ ঘটনা” এবং এটি উত্তর কোরিয়ার পর্যটনে “একটি নতুন যুগের সূচনা”।

প্রথমে ২০১৯ সালের অক্টোবরে এই রিসোর্ট খোলার কথা থাকলেও, নির্মাণে বিলম্ব ও কোভিডের অভিঘাতের কারণে তা সম্ভব হয়নি।

ওনসান কালমা রিসোর্টের উদ্বোধন কেবল পর্যটকদের জন্যই নয়, বরং আন্তর্জাতিক সমাজের দৃষ্টিতে উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত অর্থনৈতিক মনোযোগেরও প্রতিফলন। বিদেশি পর্যটকদের জন্য এটি কতটা সহজলভ্য হবে এবং আদৌ কি তা বৈদেশিক রাজস্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে— তা সময়ই বলে দেবে। তবে রিসোর্টের ছায়ায় লুকিয়ে থাকা রাষ্ট্রীয় ‘নিয়ন্ত্রণ’ ও ‘গোপনতা’ এখনো উত্তর কোরিয়ার পর্যটনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়ে গেছে।

সূত্র: ইনসাইডার, কেসিএনএ

Header Ad
Header Ad

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৬২

ছবি: সংগৃহীত

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ২৬২ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া একজন পুরুষ। আর আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ২১৪ জনই ঢাকার বাইরের।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪১ জন, যাদের মধ্যে ২৩ জন পুরুষ ও ১৮ জন নারী।

এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন নয় হাজার ৪৮৪ জন, যার মধ্যে পাঁচ হাজার ৫৮৩ জন পুরুষ ও তিন হাজার ৯০১ জন নারী।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন আওয়ামী লীগ নেতা
সাগরতীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন করলেন কিম জং উন
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৬২
কূটনৈতিক অস্ত্র পানি নিয়ে ভারতের কঠোর অবস্থান, শঙ্কায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান
পশ্চিমবঙ্গে পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগে তোলপাড়
দুধ আমদানি করা লজ্জার বিষয়: উপদেষ্টা ফরিদা
পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ সেনা নিহত
ছায়ানটের সভাপতি হলেন ডা. সারওয়ার আলী, কার্যনির্বাহী কমিটিতে নতুন মুখ
জুলাই যোদ্ধাদের যথাযথ মর্যাদা দিতে চাই: রিজভী
৮ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস, নদীবন্দরে সতর্কতা
সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে হেগে পাকিস্তানের আইনি জয়, রায় প্রত্যাখ্যান করল ভারত
আগস্টে ঢাকার ৩ এলাকায় চালু হবে ই-রিকশা
বিনিয়োগকারীদের জন্য বিডার নতুন ওয়েবসাইট চালু
টাঙ্গাইলে যৌনপল্লীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ১২টি ঘর পুড়ে ছাই
আবাসিক হোটেল থেকে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসাধারীদের খুশির খবর দিল সৌদি আরব
চীন সফর অত্যন্ত ‘সফল’ ও ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে: মির্জা ফখরুল
ইরানে আবারও বোমা হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প
ইনিংস ব্যবধানে হারের পরই টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়লেন শান্ত
৩ হাজারের বেশি কবর খোঁড়া সেই মনু মিয়া মারা গেছেন (ভিডিও)