সুড়ঙ্গ থেকে হামাস নেতা সিনওয়ারসহ সহযোগীদের মরদেহ উদ্ধার: রিপোর্ট

ছবি: সংগৃহীত
গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে একটি সুড়ঙ্গ থেকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের শীর্ষ সামরিক নেতা মুহাম্মদ সিনওয়ারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি সংবাদমাধ্যম আল-হাদাথ। সংবাদটি টাইমস অব ইসরায়েল-এর বরাত দিয়ে প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে হামাসের রাফাহ ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ শাবানার মৃত্যুর প্রমাণও পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসে অবস্থিত ইউরোপীয় হাসপাতালের নিচে একটি গোপন ভূগর্ভস্থ কমান্ড সেন্টারে ব্যাপক হামলা চালায়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেই ইসরায়েলি হামলায় মুহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হন। পরবর্তীতে ওই সুড়ঙ্গ থেকে সিনওয়ারসহ তার ১০ জন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
যদিও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি, তবে সিএনএন জানায়, ইসরায়েলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং হামলার বিষয়ে অবগত দুটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, গত ১৩ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ইউরোপীয় হাসপাতালের নিচের কম্পাউন্ডে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের পর সেখানে একাধিকবার বিমান হামলা চালানো হয় যেন কেউ সুড়ঙ্গে প্রবেশ করতে না পারে।
উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ে হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুহাম্মদ দেইফ নিহত হওয়ার পর তার স্থলাভিষিক্ত হন মুহাম্মদ সিনওয়ার। এরপর অক্টোবরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তার বড় ভাই ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হলে মুহাম্মদ সিনওয়ারই গাজার ডি-ফ্যাক্টো প্রধান নেতার ভূমিকায় উঠে আসেন।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের দাবি, যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি বিনিময়ের আলোচনায় সিনওয়ার বড় বাধা হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি যুদ্ধবিরতির বেশ কয়েকটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। সিনওয়ারের দীর্ঘসময় ধরে হামাসে সক্রিয় থাকার ইতিহাস রয়েছে। ১৯৯০-এর দশকে তিনি ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ছিলেন এবং ২০০০ সালে রামাল্লাহতে প্যালেস্টাইন অথরিটির একটি কারাগার থেকে পালিয়ে যান। ২০০৬ সালে ইসরায়েলি সেনা গিলাদ শালিট অপহরণে জড়িত হামাস সেলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়া, তিনি হামাসের খান ইউনিস ব্রিগেডের সাবেক কমান্ডারও ছিলেন।
এদিকে গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শনিবার, ১৭ মে থেকে আলোচনা শুরু হয়েছে। এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত সমঝোতায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েল নয়জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিদিন গাজায় ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ এবং আহতদের সরিয়ে নেওয়ার সুযোগও থাকবে প্রস্তাবনায়।
তবে আলোচনায় অগ্রগতি আনতে হলে সব জিম্মি জীবিত আছেন কিনা, তা নিশ্চিত হতে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে ইসরায়েল। সিনওয়ারের মৃত্যু নিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা না আসলেও তার অনুপস্থিতি আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: আল-হাদাথ, সিএনএন, বিবিসি, টাইমস অব ইসরায়েল।
