শনিবার, ৪ মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান

সবাই ওখানে জমায়েত হলে আশপাশের বাড়িগুলোর সামনের বাগানের মরচেধরা বেড়ার ওপরে ব্যাট বাড়ি দিতে দিতে সবাই ছুটে চলত। তাদের চলার শব্দ লোকজনকে জাগিয়ে তুলত আর লতা গাছপালার নিচে শুয়ে থাকা বিড়ালগুলো ঘুম থেকে জেগে উঠে লাফিয়ে পড়ত। রাস্তা পার হয়ে ছুটতেই থাকত তারা। একজন আরেকজনকে ধরার চেষ্টা করত; ততক্ষণে তাদের সবার শরীর ঘেমে উঠত। কয়েক রাস্তা পরে তাদের স্কুল; সেখান থেকে খুব কাছেই একটা সবুজ মাঠ ছিল; সেই মাঠের দিকে ছিল তাদের যাত্রা। কিছুদূর এগিয়ে সামনে একটা অকেজো পানির ফোয়ারা ছিল; সেখানে গিয়ে সবাই থেমে পড়ত।

বড় গোলাকার জায়গাটাতে ফোয়ারার বেসিন বৃষ্টির পানিতে ভরে থাকত। সেই পানির ভেতর পড়ে থাকত পুরনো শ্যাওলা, তরমুজের খোসা, কমলালেবুর খোসা এবং সব ধরনের আবর্জনা। সূর্যের আলো সেই পানি শুষে না নেওওয়া পর্যন্ত কিংবা সেচে ফেলে দেওয়ার জন্য কর্পোরেশনের লোকদের টনক না নড়া পর্যন্ত পানি জমাটবদ্ধ হয়ে থাকত। বেসিনের তলায় অনেক দিন ধরে জমে থাকত নর্দমার ময়লার মতো পদার্থ। সেই পদার্থও ওভাবেই পড়ে থাকত যতদিন না সূর্যের আলো সেটাকে শুকিয়ে ফেলার গরজ না দেখানো পর্যন্ত কিংবা ঝাড়ু–দারের শলাকা শুকিয়ে যাওয়া ময়লাকে ধূলি আকারে চার পাশের ডুমুর গাছের চকচকে পাতায় পৌঁছে না দেওয়া পর্যন্ত। গরমের দিনে যেভাবেই হোক বেসিনটা শুকনো থাকত। চকচকে কালো পাথরের কিনার হাজার হাজার হাত আর ট্রাউজারের ঘষা খাওয়ার ফলে পিছলে হয়ে যেত। জ্যাক, পিয়েরে এবং তাদের বন্ধুরা নাইটদের মতো যুদ্ধ যুদ্ধ খেলত আর কিনারার ওপর দিয়ে ঘুরতে থাকত। ঘুরতে ঘুরতে এক সময় অবশ্যই বেসিনটার অগভীর তলায় পড়ে যেত। তখন নাকে আসত সূর্যালোকের গন্ধ আর মুতের ঝাঁঝ।

খেলার এরকম অবস্থায় তাদের পায়ে এবং স্যান্ডেলে ধূলির এক প্রস্থ সাদা আস্তরণ পড়ে যেত। কড়া তাপের মধ্যে তারা দৌড়তে থাকতো সবুজ মাঠের দিকে। ব্যারেল তৈরির কারখানার পেছনে ওই মাঠটা ছিল একটা ফাঁকা জায়গা। সেখানে মরচেধরা আংটা আর ব্যারেলের পচনধরা তলদেশের ভেতর দিয়ে ফ্যাকাশে ঘাস গজাত। কোথাও কোথাও সাদা রঙের গুচ্ছ গুচ্ছ ঘাসের চাপড়াও দেখা যেত। হৈচৈ করতে করতে ঘাসের গুচ্ছগুলোর মধ্যে তারা গোল দাগ তৈরি করত। তাদের একজন ব্যাট হাতে ওই গোল দাগের মধ্যে দাঁড়াত। বাকিরা সিগার আকারের কাঠের টুকরোটাকে বৃত্তের মধ্যে ছুড়ে মারত। কাঠের টুকরোটাকে কেউ দাগের বৃত্তের মধ্যে ফেলে দিতে পারলে ব্যাট হাতে সে দাঁড়াত মাঝখানে। তখন তার পালা হতো বৃত্তটা আগলানো। খেলোয়ারদের মধ্যে যার দক্ষতা বেশি সে কাঠের টুকরোটাকে বলিষ্ঠ হাতে দূরে পাঠিয়ে দিত।

সে ক্ষেত্রে টুকরোটা যেখানে পড়েছে অন্যরা সেখানে গিয়ে ওটা ব্যাট দিয়ে শূন্যে পাঠিয়ে দিত। কেউ হয়তো ব্যাট মারতে ব্যর্থ হতো কিংবা অন্য কেউ শূন্যের ওপর থেকেই টুকরোটা ধরে ফেলত। তখন বৃত্ত রক্ষক তাড়াতাড়ি ফিরে এসে তার বৃত্তে দাঁড়াত যাতে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা বৃত্তের মধ্যে টুকরোটা ছুড়ে মারতে না পারে। এটা ছিল আসলে গরিবের টেনিস খেলা; তবে টেনিস খেলার চেয়ে তাদের নিয়ম কানুন ছিল আরও জটিল। এই খেলায় তাদের পুরো বিকেলটাই শেষ হয়ে যেত। সবচেয়ে ভালো খেলত পিয়েরে। জ্যাকের চেয়ে হালকা পাতলা এবং আকৃতিতে ছোট পিয়েরে ছিল খুবই পলকা, মাথায় সোনালি আর তামাটে চুলের সমান মিশ্রণ, চোখের ভ্রু পর্যন্ত নেমে আসত চুল। সেই চুলের নিচে তার চোখের চাহনি ছিল সোজাসাপটা এবং নাজুক, কিছুটা যেন বেদনার্ত আর বিস্মিত; চালচলনে আনাড়ি মনে হলেও কাজের ক্ষেত্রে ছিল নিশ্চিত এবং নির্ভুল। অন্যদিকে জ্যাক অসম্ভব রকমের প্রতিরোধ তৈরি করতে পারলেও ব্যাকহ্যান্ড খেলায় লক্ষ্য ঠিক রাখতে পারত না। প্রতিরোধের দক্ষতা থাকার কারণে তার বন্ধুরা তার খেলার প্রশংসা করত এবং জ্যাক মনে করত, সে-ই সবার চেয়ে ভালো খেলে। এতে তার মধ্যে অহংকারের একটা ভাবও চলে আসত। আসলে পিয়েরের কাছে সে সব সময়ই হেরে যেত। তবে পিয়েরে এ বিষয়ে কিছুই বলত না। অবশ্য খেলার পরে সে অহংকারের ভাব ছেড়ে সোজা হয়ে বন্ধুদের প্রশংসায় মনে মনে হাসত।

যখন আবহাওয়া কিংবা তাদের নিজেদের মনের অবস্থা রাস্তাঘাট আর ময়লা আবর্জনাময় জায়গায় দৌড়াদৌড়ির ব্যাপারে সায় দিত না তখন প্রথমত সবাই জমায়েত হতো জ্যাকদের বাড়ির হল রুমে। সেখান থেকে পেছনের দরজা দিয়ে একটা উঠোনের মতো জায়গায় নেমে যেত। জায়গাটা বাড়ি ঘরের দ্বারা তিন দিক থেকে বন্ধ। খোলা পাশটাতে ছিল একটা বিরাট কমলালেবু গাছ। গাছটার প্রশস্ত ডাল পালা ছড়িয়ে ছিল পাশের একটা বাগানের দেয়ালের ওপর পর্যন্ত। গাছটাতে যখন ফুল ফুটত হতদরিদ্র বাড়িগুলো সুবাসে ভেসে যেত। সুগন্ধটা ভাসতে ভাসতে তাদের হল রুম পর্যন্ত এবং ঊঠোনের পাথুরে সিঁড়ি পর্যন্ত চলে আসত। উঠোনের এক দিকে পুরোটা এবং অন্য দিকের অর্ধেকটা পাশ জুড়ে ছিল একটা ইংরেজি এল আকৃতির ভবন। সেখানে থাকত এক স্প্যানিস নাপিতের পরিবার। লোকটার দোকান ছিল রাস্তার পাশে। ওই ভবনের আরেক অংশে থাকত এক আরব পরিবার। সে পরিবারের গৃহিনী কোনো কোনো সন্ধ্যায় উঠোনে কফি তৈরি করত। তৃতীয় দিকের বাসিন্দারা কাঠ আর তারের বেড়া দিয়ে তৈরি উঁচু ভাঙাচোরা খাঁচায় মুরগি পুষত।

চতুর্থ দিকের ভবনের ভূগর্ভস্থ ঘরের কালো গর্ত সিঁড়ির দুপাশে হা করে থাকত। ওই গুহার মধ্য থেকে বের হওয়ার কোনো পথ ছিল না; আলোর কোনো ব্যবস্থাও ছিল না; মাটি কেটে কোনো রকম বেড়া না দিয়েই তৈরি। সব সময় আর্দ্রতার ঘাম বের হতো সেখান থেকে। সবুজ ছাতলা ঢাকা গর্তের কাছে পৌঁছতে চার কদম ফেললেই হতো; সেখানকার বাসিন্দারা যখন তখন অতিরিক্ত জিনিসপত্র স্তুপ করে রাখত; তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়; পুরনো বস্তা পচত ওখানে, সিন্দুকের ভাঙা টুকরো, ফুটো ওয়াশবেসিন, আর যেসব জিনিস ভাগাড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় এমনকি যেগুলো হতদরিদ্র মানুষদেরও কোনো কাজে আসে না তেমন জিনিসপত্র। জ্যাক এবং তার খেলার সঙ্গীরা ওখানেই জড়ো হতো। স্পেনীয় নাপিতের দুই ছেলে জাঁ এবং যোসেফ ওখানে খেলতে অভ্যস্ত ছিল। জায়গাটা তাদের জীর্ণ বাড়ির দোর গোড়ায় ছিল বলে এটা ছিল তাদের নিজস্ব এলাকা। নধর চেহারার যোসেফ ছিল হাসিখুশি স্বভাবের এবং তার যা কিছু ছিল সব অন্যদের বিলিয়ে দিতে কোনো কার্পণ্য ছিল না তার।

অন্যদিকে খাটো এবং পলকা জাঁ বাইরে ছোটখাটো পেরেক কিংবা স্ক্রু থেকে শুরু করে যা কিছু পেত কুড়িয়ে সংগ্রহ করত। খুবানির বিচি এবং মার্বেলের ব্যাপারে জাঁ ছিল অতিশয় কৃপণ। ছোটদের অন্যতম প্রিয় খেলায় এগুলোর দরকার হতো। এই ভ্রাতৃজুটির চেয়ে বিপরীত স্বভাবের আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পিয়েরে, জ্যাক এবং ম্যাক্সের মতো সঙ্গীদের নিয়ে তারা ওই আর্দ্র এবং দুর্গন্ধময় গর্ত-ঘরের মধ্যে ঢুকত। সাদা তেলাপোকাকে তারা বলত গিনিপিগ। পচনধরা ছেঁড়া বস্তা থেকে সাদা তেলাপোকা তাড়িয়ে মরচে ধরা খাড়া লোহার খণ্ডের ওপর বিছিয়ে দিয়ে তারা নিজেদের একটা জায়গা তৈরি করত। অবশ্য তখন কারোই এমন কোনো ঘর কিংবা বিছানা ছিল না যেটাকে তারা নিজের বলতে পারত। কুৎসিত ওই তাঁবুর নিচে গিয়ে তারা আগুন জ্বালাত। কিন্তু ওখানকার স্যাঁতসেতে বাতাসে আগুন নিভে যেত এবং প্রচণ্ড ধোঁয়া তৈরি হতো। ফলে তাদের বাধ্য হয়ে ওই গুহা থেকে বের হয়ে আসতে হতো। উঠোন থেকে মাটি খুঁড়ে নিয়ে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিত। শেষে তারা ছোট জাঁর কাছ থেকে যুক্তিতর্কের অনেক কসরতের পর পুদিনার স্বাদ জড়ানো মিঠাই, শুকনো লবণাক্ত বাদাম, মটরদানা, লবণ জড়ানো এক ধরনের গোখাদ্যের ফল ইত্যাদি চেয়ে নিত। আরও ছিল গাঢ় রঙে পরিণত হয়ে যাওয়া জবের চিনি। এটা বিক্রি করত আরব দোকানদাররা।

নিকটবর্তী সিনেমা হলের সামনে চাকাঅলা গাড়িতে কাঠের তৈরি বাক্সে করে মাছি ভনভন একটা স্ট্যান্ডের ওপরে খোলা অবস্থায়ও বিক্রি হতো জবের চিনি। খুব বেশি বৃষ্টি হলে উঠোনের পানি গড়িয়ে পড়ত ওই গর্তসদৃস ঘরে। খোলা আকাশ আর সমুদ্রের হাওয়া থেকে বহু দূরে নিজেদের দারিদ্রের রাজ্যে জ্যাক এবং তার বন্ধুরা পুরনো বাক্সপেটরার ওপরে দাঁড়িয়ে রবিনসন ক্রুসো সাজত।
তবে তাদের খেলার সবচেয়ে ভালো সময় ছিল গরমের মৌসুমে। কোনো না কোনো অজুহাতে, মিথ্যে বলে তারা দুপুরের ঘুম ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়ত। তখন তাদের কাছে ট্রলি-বাসে ওঠার মতো টাকা থাকত না বলে তাদের অভিজ্ঞতার পর্যবেক্ষণ চালানোর জায়গা বলে পরিচিত যে বাগানটা ছিল সেখানে যেতে গোটা পথ তাদের হাঁটতে হতো: কাছাকাছি এলাকার হলুদ আর ধূসর রাস্তা পেরিয়ে, ঘোড়ার আস্তাবলপূর্ণ এলাকা পিছে ফেলে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন ঘোড়ার গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রেতাদের দোকান পার হয়ে যেত তারা। ঠেলা দিয়ে খোলার মতো সব দরজার পেছনে মাটিতে ঘোড়ার পদশব্দ শোনা যেত, নাক থেকে হঠাৎ ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাস পতনের ফলে ঘোড়াগুলোর ঠোটের ওপরে জোরে শব্দ শোনা যেত।

ঘোড়ার গলার লোহার শিকল জাবনাপাত্রের কাঠের সঙ্গে বাড়ি লেগে শব্দ হতো। ওইসব জায়গা পার হয়ে যেতে যেতে বিষ্ঠার জৈব সার, খড়, ছোটদের জন্য নিষিদ্ধ ওই এলাকা থেকে উত্থিত ঘামের গন্ধ তারা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করতে থাকত। এমনকি ঘুমের মধ্যেও জ্যাকের নাকে আসত ওইসব গন্ধ। আস্তাবলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের গতি মন্থর হয়ে যেত; সেখানে ঘোড়াদের দেখাশোনা করা হতো; বড় বড় খুরঅলা ঘোড়াগুলো ফ্রান্স থেকে আনা; রোদের তাপ আর মাছিদের কাছে ঘোড়াগুলো কাবু হয়ে থাকত। ঘোড়াগুলোর চোখের দিকে তাকালে বোঝা যেত নির্বাসনে এসেছে। তারপর গাড়োয়ানরা তাদের তাড়িয়ে দিলে তারা বিরাট একটা বাগানের দিকে দৌড়ে চলে যেত; ওই বাগানে বিরল প্রজাতির গাছপালা জন্মানো হতো। বিরাট জলাধার আর ফুলের ভেতর দিয়ে সমুদ্রের দৃশ্য দেখা যেত একটা বড় পায়েচলা পথ দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে। সেখানেও বাগানের প্রহরীরা তাদেরকে সন্দেহের চোখে দেখত।

যারা আস্তে ধীরে হেঁটে বেড়াতে আসত তাদেরও হাঁটার ধরন বদলে যেত ছোটদের উপস্থিতির কারণে। তবে আড়াআড়ি পথের প্রথমটাতে এসে তারা বাগানের পূর্ব পাশের দিকে পথ ধরত। ওদিকটায় যেতে হতো বিরাট বিরাট ঘন ম্যানগ্রোভ গাছের ভেতর দিয়ে; গাছগুলোর ছায়ায় দিনের বেলাতেই রাত নেমেছে মনে হতো। এরপর তারা বড় বড় রাবার গাছ পেরিয়ে যেত; হরেক রকমের শিকড়ের গাছগুলোর প্রথম ডাল থেকে আরও সব ডালাপালা বের হয়ে মাটি ছুঁয়ে আছে দেখা যেত। সেখান থেকে আরও এগিয়ে যাওয়া লাগত তাদের অভিযানের আসল গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য: তালগাছের মতো লম্বা গাছের মাথায় বড় বড় গোলাকার কমলা রঙের ফলগুলো খুব ঘন হয়ে ঝুলে থাকত। ফলগুলোকে তারা বলত কোকোসেস।

ওখানে পৌঁছে প্রথমে দেখতে হতো আশপাশে কোনো প্রহরী আছে কি না। তারপর শুরু হতো অস্ত্র খোঁজা, মানে ঢিল। পকেট ভর্তি ঢিল যোগাড় করে সবাই ফিরে এলে গাছে গাছে উঁচুতে ঝুলে থাকা থোকাগুলোতে ঢিল ছুড়ত তারা। একেকটা ঢিলে বেশ কয়েকটা করে ফল পড়ত। যার ঢিলে যে ফলগুলো পড়ত সেগুলোর মালিক হতো সেই। তার ফলগুলো কুড়ানো পর্যন্ত অন্যরা অপেক্ষা করত; এরপর আসত তাদের পালা। জ্যাকের হাতের লক্ষ্য খুব পাকা ছিল বলে এই খেলায় সে পিয়েরের সমকক্ষ ছিল। তবে যাদের হাতের লক্ষ্য অতোটা পাকা ছিল না তাদের সঙ্গে জ্যাক এবং পিয়েরে নিজেদের ফলগুলো ভাগাভাগি করে নিত। এই খেলায় সবচেয়ে খারাপ হাত ছিল ম্যাক্সের; তার চোখের দৃষ্টি ছিল দুর্বল এবং চোখে চশমা পড়ত সে। গাট্টাগোট্টা চেহারার ম্যাক্সকে তারা যেদিন প্রথম মারামারির দৃশ্যে দেখেছিল সেদিন থেকে সবাই তাকে সমীহ করে চলত। অন্যরা, বিশেষ করে জ্যাক, মারমুখি মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাস্তায় মারামারির সময়ে প্রচণ্ড বেগে হাত পা ছুড়ে সর্বশক্তি দিয়ে তাকে আঘাত করার চেষ্টাতেও ঝুঁকির মধ্যে থাকত। কারণ মারের প্রতিবাদে ম্যাক্সও কষে মার লাগাতে ওস্তাদ ছিল। ম্যাক্সের নামের উচ্চারণে জার্মান ভাষার ছোঁয়া ছিল বলে কষাইয়ের ছেলে যাকে অন্যরা গিগট বলে ডাকত সে একদিন ম্যাক্সকে ‘শালার হান’ বলে গালি দিয়েছিল। সেদিন উত্তেজনা প্রকাশ না করেই ম্যাক্স চশমা খুলে যোসেফের কাছে রেখে মুষ্টিযোদ্ধাদের স্টাইলে দাঁড়িয়ে গেল; খবরের কাগজে সে মুষ্টিযোদ্ধাদের ওরকম করে দাঁড়ানোর ছবি দেখেছিল আগেই। তারপর গিগটকে তার গালি পুনরায় আওড়াতে আহ্বান করল।

সামান্যতম ঘাম না ঝড়িয়েই গিগটের প্রত্যেকটা আঘাত এড়িয়ে তাকে আচ্ছা মতো কয়েক বার করে ধোলাই দিয়ে দিল। ওদিকে গিগট তাকে আঙুল দিয়ে ছোঁয়ার সুযোগও পেল না। শেষে ঘুষি মেরে গিগটের চোখের কোণে কালো দাগ ফেলে দিয়ে ম্যাক্স সর্বোচ্চ বিজয়লাভ করেছিল সেদিন। সেদিন থেকেই তাদের ক্ষুদে দলে ম্যাক্সের জনপ্রিয়তা সুনিশ্চিত হয়ে গেল। ফলের রসে পকেট আর হাত বোঝাই হয়ে গেলে তারা বাগান ছেড়ে সমুদের দিকে এগোতে থাকত। বাগানের সীমানা পার হয়ে গিয়ে তাদের ময়লাজীর্ণ রুমালে বিছিয়ে ফলগুলো খেতে থাকত। দাঁতের নিচে ফলগুলো যেন বিজয়ের মতোই কড়া মিষ্টি আর রসালো লাগত। তারপর তারা সমুদ্র সৈকতের দিকে ছুটে যেত।

(চলবে)

এসএ/

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad

মিল্টন সমাদ্দারের মানবিকতার আড়ালে প্রতারণা, যা বললেন ব্যারিস্টার সুমন

ছবি: সংগৃহীত

হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা অনিয়মের প্রতিবাদ ও মানবিক স্টোরি তুলে ধরে ব্যাপক আলোচনায় আসেন এই সংসদ সদস্য।

বর্তমানে এমপি হলেও আগের মতো নানা ইস্যুতে আওয়াজ তুলেন ব্যারিস্টার সুমন। সেই ধারাবাহিকতায় মানবিকতার আড়ালে ভয়ংকর প্রতারক মিল্টন সমাদ্দারকে নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন তিনি।

মিল্টন সমাদ্দার মানবিক কাজ দিয়ে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। বর্তমানে তার মানবিক কাজগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, এ বিষয়ে কী বলবেন? জবাবে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, একটা বিষয় আমাদের মনে রাখা উচিৎ, যারা মানবিক কাজ করে মুখ দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে করে। মুখ দিয়ে মানবিক কাজ করলে নানা প্রশ্নবিদ্ধ হবে কিন্তু হৃদয় থেকে করলে তাকে কেউ আটকাতে পারবে না।

মানবিক কাজগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হলে সমাজে কী নীতিবাচক প্রভাব ফেলে না? এমন প্রশ্নের জবাবে এই সংসদ সদস্য বলেন, সমাজে নীতিবাচক প্রভাব ফেলতে ফেলতে এই পর্যায়ে আমরা দাঁড়িয়েছি। আর পেছনের যাওয়ার সুযোগ নেই, সামনের দিকে যেতে হবে। আমরা নষ্ট হওয়ার শেষ পেরিয়ে গেছি। এর থেকে বেশি নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, দুস্থ, অসহায় ব্যক্তিদের আশ্রয় ও সাহায্যের মতো মানবিক কাজের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত পান মিল্টন সমাদ্দার।

সম্প্রতি গণমাধ্যমে এসব কাজের আড়ালে তার নানা অন্যায়-অনিয়মের অভিযোগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর বুধবার এই মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তার বিরুদ্ধে ডেথ সার্টিফিকেট জালিয়াতি, মানবপাচার, আশ্রয় দেওয়া অসহায়, দুস্থ ব্যক্তিদের মৃত্যুর পর তাদের কিডনি বিক্রি, জমি দখলসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে: ইরান

ছবি: সংগৃহীত

চলমান ছাত্র বিক্ষোভে দমন-পীড়ন ও ধরপাকড়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মুখ থেকে ভণ্ডামির মুখোশ সরে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স বার্তায় এই মন্তব্য করেন তিনি। খবর ইরানি গণমাধ্যম ইরনার

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ দমন প্রসঙ্গে কানানি বলেছেন, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মিথ্যা রক্ষকদের মুখ থেকে ভণ্ডামির মুখোশ সরে গেছে। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনপন্থি ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ঠেকাতে দমন-পীড়নকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য সত্যকে বিকৃত করে শিক্ষার্থী ও একাডেমিক কর্মীদের প্রকৃত ক্ষোভ ও তাদের প্রতিবাদকে ইহুদিবিদ্বেষ হিসাবে বর্ণনা করছে মার্কিন সরকার।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল। বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি ক্যাম্পাসে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা। এর জেরে ক্লাস-পরীক্ষা বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। সে সঙ্গে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকতেও বিন্দুমাত্র পিছপা হননি তারা।

এমনকি পুলিশ এসে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে। গ্রেফতার করেছে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে। তবে এতকিছু করেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা পুলিশ প্রশাসন। উলটো তা আরও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি মার্কিন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ছাড়িয়ে এখন বৈশ্বিক রূপ ধারণ করেছে।

নিজের মান ইজ্জত রক্ষা করুন, মন্ত্রী-এমপিদের প্রতি ইসি রাশেদা

ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, যেকোন মূল্যে উপজেলা নির্বাচন হবে প্রভাবমুক্ত। সরকারের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রভাবশালীরা এই নির্বাচনে প্রভাব খাটালে কমিশন প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে বিধিবিধান অন্যুায়ী ব্যবস্থা নিবে।

শনিবার দুপুরে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রাজশাহীর চার জেলার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদা সুলতানা একথা বলেন।

রাশেদা সুলতানা বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি পছন্দের প্রার্থী পক্ষে নেক দৃষ্টি দিয়ে সরকারের অতি সুবিধাভোগি কিছু ব্যক্তিরা (মন্ত্রী-এমপি) এ নির্বাচনে প্রভাব খানাটোর চেষ্টা করছেন। ওই সমস্ত পদে যারা আছেন তাদের প্রতি অনুরোধ করবো- দয়া করে আপনারা আপনাদের জায়গায় থাকেন। আপনি এলাকার ভোটার আপনি আসবেন ভোট দিবেন চলে যাবেন। আপনি যে পর্যায়ে আছেন- আপনি আপনার মান ইজ্জত রক্ষা করবেন। আপনার ইজ্জত আপনি যদি রক্ষা না করেন তাহলে কিন্তু যে কোন মুহুর্তে বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। এর দায় কিন্তু আমরা নিব না। আপনাই সেটা বহন করবেন। আপনারা নিজের মর্যাদায় আসিন থেকে দ্বায়ীত্ব পালন করবেন।

প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে ইসি রাশেদা সুলতানা আরও বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের সৌন্দর্য নেই, গ্রহনযোগ্যতা নেই, আনন্দও নেই। ১০ শতাংশ ভোট পেয়ে যেতা আর ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতার মধ্যে প্রার্থক্য আপনারাই বুঝতে পারবেন। তাই আপনার চিন্ত করেন, পরিবেশ নষ্ট করে ১০ শতাংশ ভোটে জিততে চান ভোটার না এনে; ৮০ শতাংশ ভোটে জিততে চান। আপনাদের উপর এই ভারটা ছেড়ে দিলাম সিদ্ধান্ত নেয়ার।

ইসি বলেন, ভোটের দিন কোন রকম উশৃঙখলতা, বিশৃঙখলাতা, সহিংস আচরণ, ভোট কেন্দ্র দখল করার মত কোন দুঃসাহস করবেন না। আপনার অবৈধভাবে যে ব্যালটই রাখেন না কেন আমাদের কাছে তথ্য গেলে প্রমান পেলে সেই ভোট বাতিল করে দিব যেকোন মুহুর্তে। আর অসাধুচারণ করেন, আচরন বিধি ভঙ্গ করেন আমরা কিন্তু নির্বাচনের মুহুর্তেও প্রার্থীতা বাতিল করে দিব। ভোটের দিন যে কোন নৈরাজ্য মূলক আচরণ করলে আমরা কিন্তু নির্বাচন স্থগিত করবো, নির্বাচন বাতিল করবো, প্রার্থীতা বাতিল করবো।

তিনি আরও বলেন, গনতন্ত্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে নির্বাচন। তাই নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য নির্বাচন কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। জনগনের মনে যেন গেঁথে থাকে এমন একটি নির্বাচন হবে এবার। তাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কমিশন চায় না।

নির্বাচনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের উদেশ্যে রাশেদা সুলতানা বলেন, কোন প্রার্থী জিতল কোন প্রার্থী জিতল না এ নিয়ে ইসির কোন মাথা বেথা নেই। নির্বাচন কমিশনের একটি নির্দেশনা, আপনার সব প্রার্থীকে সমান চোখে দেখবেন, নিরপেক্ষতার সাথে দেখবেন, যে হাঙ্গামা করবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। তবে কমিশনার নির্দেশনা যিনি প্রতি পালন করবেন না তার দায়দায়িত্বও তিনি নিবেন। আপনাদের কৃতকর্মের দায় কমিশন বহন করবে না।

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও জয়পুরহাটের উপজেলার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।

সর্বশেষ সংবাদ

মিল্টন সমাদ্দারের মানবিকতার আড়ালে প্রতারণা, যা বললেন ব্যারিস্টার সুমন
যুক্তরাষ্ট্রের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে: ইরান
নিজের মান ইজ্জত রক্ষা করুন, মন্ত্রী-এমপিদের প্রতি ইসি রাশেদা
উদ্যোক্তারাই দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির কাণ্ডারী : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
টানা ৬ দিন হতে পারে ঝড়বৃষ্টি জানাল আবহাওয়া অফিস
সেই ভাইরাল নেতা পাকিস্তান জামায়াতের আমির নির্বাচিত
টানা ৮ দফা কমার পর বাড়ল স্বর্ণের দাম
দিয়াবাড়ির লেক থেকে ২ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
রাজধানীবাসীর জন্য সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস
মক্কায় প্রবেশে আজ থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ
‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার জিতলেন মিথিলা
ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো বগুড়ার আলু ঘাঁটি উৎসব
টাঙ্গাইলে পাগলা কুকুরের কামড়ে শিশুসহ ২২ জন আহত
১৭ রোগীকে হত্যার দায়ে মার্কিন নার্সের ৭৬০ বছর কারাদণ্ড
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে ছাত্রলীগের কর্মসূচি ঘোষণা
দুবাইয়ের ‘গোল্ডেন ভিসা’ পেলেন শাকিব খান
সুন্দরবনের গহীনে ভয়াবহ আগুন, ছড়িয়েছে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে
স্কুলে দেরি করে আসায় শিক্ষিকাকে ঘুষি মারলেন অধ্যক্ষ
আইপিএলের প্লে অফের দৌড়ে এগিয়ে কারা?
আবারও বাংলাদেশে প্রবেশ করল মিয়ানমারের ৪০ বিজিপি সদস্য