মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান

সবাই ওখানে জমায়েত হলে আশপাশের বাড়িগুলোর সামনের বাগানের মরচেধরা বেড়ার ওপরে ব্যাট বাড়ি দিতে দিতে সবাই ছুটে চলত। তাদের চলার শব্দ লোকজনকে জাগিয়ে তুলত আর লতা গাছপালার নিচে শুয়ে থাকা বিড়ালগুলো ঘুম থেকে জেগে উঠে লাফিয়ে পড়ত। রাস্তা পার হয়ে ছুটতেই থাকত তারা। একজন আরেকজনকে ধরার চেষ্টা করত; ততক্ষণে তাদের সবার শরীর ঘেমে উঠত। কয়েক রাস্তা পরে তাদের স্কুল; সেখান থেকে খুব কাছেই একটা সবুজ মাঠ ছিল; সেই মাঠের দিকে ছিল তাদের যাত্রা। কিছুদূর এগিয়ে সামনে একটা অকেজো পানির ফোয়ারা ছিল; সেখানে গিয়ে সবাই থেমে পড়ত।

বড় গোলাকার জায়গাটাতে ফোয়ারার বেসিন বৃষ্টির পানিতে ভরে থাকত। সেই পানির ভেতর পড়ে থাকত পুরনো শ্যাওলা, তরমুজের খোসা, কমলালেবুর খোসা এবং সব ধরনের আবর্জনা। সূর্যের আলো সেই পানি শুষে না নেওওয়া পর্যন্ত কিংবা সেচে ফেলে দেওয়ার জন্য কর্পোরেশনের লোকদের টনক না নড়া পর্যন্ত পানি জমাটবদ্ধ হয়ে থাকত। বেসিনের তলায় অনেক দিন ধরে জমে থাকত নর্দমার ময়লার মতো পদার্থ। সেই পদার্থও ওভাবেই পড়ে থাকত যতদিন না সূর্যের আলো সেটাকে শুকিয়ে ফেলার গরজ না দেখানো পর্যন্ত কিংবা ঝাড়ু–দারের শলাকা শুকিয়ে যাওয়া ময়লাকে ধূলি আকারে চার পাশের ডুমুর গাছের চকচকে পাতায় পৌঁছে না দেওয়া পর্যন্ত। গরমের দিনে যেভাবেই হোক বেসিনটা শুকনো থাকত। চকচকে কালো পাথরের কিনার হাজার হাজার হাত আর ট্রাউজারের ঘষা খাওয়ার ফলে পিছলে হয়ে যেত। জ্যাক, পিয়েরে এবং তাদের বন্ধুরা নাইটদের মতো যুদ্ধ যুদ্ধ খেলত আর কিনারার ওপর দিয়ে ঘুরতে থাকত। ঘুরতে ঘুরতে এক সময় অবশ্যই বেসিনটার অগভীর তলায় পড়ে যেত। তখন নাকে আসত সূর্যালোকের গন্ধ আর মুতের ঝাঁঝ।

খেলার এরকম অবস্থায় তাদের পায়ে এবং স্যান্ডেলে ধূলির এক প্রস্থ সাদা আস্তরণ পড়ে যেত। কড়া তাপের মধ্যে তারা দৌড়তে থাকতো সবুজ মাঠের দিকে। ব্যারেল তৈরির কারখানার পেছনে ওই মাঠটা ছিল একটা ফাঁকা জায়গা। সেখানে মরচেধরা আংটা আর ব্যারেলের পচনধরা তলদেশের ভেতর দিয়ে ফ্যাকাশে ঘাস গজাত। কোথাও কোথাও সাদা রঙের গুচ্ছ গুচ্ছ ঘাসের চাপড়াও দেখা যেত। হৈচৈ করতে করতে ঘাসের গুচ্ছগুলোর মধ্যে তারা গোল দাগ তৈরি করত। তাদের একজন ব্যাট হাতে ওই গোল দাগের মধ্যে দাঁড়াত। বাকিরা সিগার আকারের কাঠের টুকরোটাকে বৃত্তের মধ্যে ছুড়ে মারত। কাঠের টুকরোটাকে কেউ দাগের বৃত্তের মধ্যে ফেলে দিতে পারলে ব্যাট হাতে সে দাঁড়াত মাঝখানে। তখন তার পালা হতো বৃত্তটা আগলানো। খেলোয়ারদের মধ্যে যার দক্ষতা বেশি সে কাঠের টুকরোটাকে বলিষ্ঠ হাতে দূরে পাঠিয়ে দিত।

সে ক্ষেত্রে টুকরোটা যেখানে পড়েছে অন্যরা সেখানে গিয়ে ওটা ব্যাট দিয়ে শূন্যে পাঠিয়ে দিত। কেউ হয়তো ব্যাট মারতে ব্যর্থ হতো কিংবা অন্য কেউ শূন্যের ওপর থেকেই টুকরোটা ধরে ফেলত। তখন বৃত্ত রক্ষক তাড়াতাড়ি ফিরে এসে তার বৃত্তে দাঁড়াত যাতে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা বৃত্তের মধ্যে টুকরোটা ছুড়ে মারতে না পারে। এটা ছিল আসলে গরিবের টেনিস খেলা; তবে টেনিস খেলার চেয়ে তাদের নিয়ম কানুন ছিল আরও জটিল। এই খেলায় তাদের পুরো বিকেলটাই শেষ হয়ে যেত। সবচেয়ে ভালো খেলত পিয়েরে। জ্যাকের চেয়ে হালকা পাতলা এবং আকৃতিতে ছোট পিয়েরে ছিল খুবই পলকা, মাথায় সোনালি আর তামাটে চুলের সমান মিশ্রণ, চোখের ভ্রু পর্যন্ত নেমে আসত চুল। সেই চুলের নিচে তার চোখের চাহনি ছিল সোজাসাপটা এবং নাজুক, কিছুটা যেন বেদনার্ত আর বিস্মিত; চালচলনে আনাড়ি মনে হলেও কাজের ক্ষেত্রে ছিল নিশ্চিত এবং নির্ভুল। অন্যদিকে জ্যাক অসম্ভব রকমের প্রতিরোধ তৈরি করতে পারলেও ব্যাকহ্যান্ড খেলায় লক্ষ্য ঠিক রাখতে পারত না। প্রতিরোধের দক্ষতা থাকার কারণে তার বন্ধুরা তার খেলার প্রশংসা করত এবং জ্যাক মনে করত, সে-ই সবার চেয়ে ভালো খেলে। এতে তার মধ্যে অহংকারের একটা ভাবও চলে আসত। আসলে পিয়েরের কাছে সে সব সময়ই হেরে যেত। তবে পিয়েরে এ বিষয়ে কিছুই বলত না। অবশ্য খেলার পরে সে অহংকারের ভাব ছেড়ে সোজা হয়ে বন্ধুদের প্রশংসায় মনে মনে হাসত।

যখন আবহাওয়া কিংবা তাদের নিজেদের মনের অবস্থা রাস্তাঘাট আর ময়লা আবর্জনাময় জায়গায় দৌড়াদৌড়ির ব্যাপারে সায় দিত না তখন প্রথমত সবাই জমায়েত হতো জ্যাকদের বাড়ির হল রুমে। সেখান থেকে পেছনের দরজা দিয়ে একটা উঠোনের মতো জায়গায় নেমে যেত। জায়গাটা বাড়ি ঘরের দ্বারা তিন দিক থেকে বন্ধ। খোলা পাশটাতে ছিল একটা বিরাট কমলালেবু গাছ। গাছটার প্রশস্ত ডাল পালা ছড়িয়ে ছিল পাশের একটা বাগানের দেয়ালের ওপর পর্যন্ত। গাছটাতে যখন ফুল ফুটত হতদরিদ্র বাড়িগুলো সুবাসে ভেসে যেত। সুগন্ধটা ভাসতে ভাসতে তাদের হল রুম পর্যন্ত এবং ঊঠোনের পাথুরে সিঁড়ি পর্যন্ত চলে আসত। উঠোনের এক দিকে পুরোটা এবং অন্য দিকের অর্ধেকটা পাশ জুড়ে ছিল একটা ইংরেজি এল আকৃতির ভবন। সেখানে থাকত এক স্প্যানিস নাপিতের পরিবার। লোকটার দোকান ছিল রাস্তার পাশে। ওই ভবনের আরেক অংশে থাকত এক আরব পরিবার। সে পরিবারের গৃহিনী কোনো কোনো সন্ধ্যায় উঠোনে কফি তৈরি করত। তৃতীয় দিকের বাসিন্দারা কাঠ আর তারের বেড়া দিয়ে তৈরি উঁচু ভাঙাচোরা খাঁচায় মুরগি পুষত।

চতুর্থ দিকের ভবনের ভূগর্ভস্থ ঘরের কালো গর্ত সিঁড়ির দুপাশে হা করে থাকত। ওই গুহার মধ্য থেকে বের হওয়ার কোনো পথ ছিল না; আলোর কোনো ব্যবস্থাও ছিল না; মাটি কেটে কোনো রকম বেড়া না দিয়েই তৈরি। সব সময় আর্দ্রতার ঘাম বের হতো সেখান থেকে। সবুজ ছাতলা ঢাকা গর্তের কাছে পৌঁছতে চার কদম ফেললেই হতো; সেখানকার বাসিন্দারা যখন তখন অতিরিক্ত জিনিসপত্র স্তুপ করে রাখত; তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়; পুরনো বস্তা পচত ওখানে, সিন্দুকের ভাঙা টুকরো, ফুটো ওয়াশবেসিন, আর যেসব জিনিস ভাগাড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় এমনকি যেগুলো হতদরিদ্র মানুষদেরও কোনো কাজে আসে না তেমন জিনিসপত্র। জ্যাক এবং তার খেলার সঙ্গীরা ওখানেই জড়ো হতো। স্পেনীয় নাপিতের দুই ছেলে জাঁ এবং যোসেফ ওখানে খেলতে অভ্যস্ত ছিল। জায়গাটা তাদের জীর্ণ বাড়ির দোর গোড়ায় ছিল বলে এটা ছিল তাদের নিজস্ব এলাকা। নধর চেহারার যোসেফ ছিল হাসিখুশি স্বভাবের এবং তার যা কিছু ছিল সব অন্যদের বিলিয়ে দিতে কোনো কার্পণ্য ছিল না তার।

অন্যদিকে খাটো এবং পলকা জাঁ বাইরে ছোটখাটো পেরেক কিংবা স্ক্রু থেকে শুরু করে যা কিছু পেত কুড়িয়ে সংগ্রহ করত। খুবানির বিচি এবং মার্বেলের ব্যাপারে জাঁ ছিল অতিশয় কৃপণ। ছোটদের অন্যতম প্রিয় খেলায় এগুলোর দরকার হতো। এই ভ্রাতৃজুটির চেয়ে বিপরীত স্বভাবের আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পিয়েরে, জ্যাক এবং ম্যাক্সের মতো সঙ্গীদের নিয়ে তারা ওই আর্দ্র এবং দুর্গন্ধময় গর্ত-ঘরের মধ্যে ঢুকত। সাদা তেলাপোকাকে তারা বলত গিনিপিগ। পচনধরা ছেঁড়া বস্তা থেকে সাদা তেলাপোকা তাড়িয়ে মরচে ধরা খাড়া লোহার খণ্ডের ওপর বিছিয়ে দিয়ে তারা নিজেদের একটা জায়গা তৈরি করত। অবশ্য তখন কারোই এমন কোনো ঘর কিংবা বিছানা ছিল না যেটাকে তারা নিজের বলতে পারত। কুৎসিত ওই তাঁবুর নিচে গিয়ে তারা আগুন জ্বালাত। কিন্তু ওখানকার স্যাঁতসেতে বাতাসে আগুন নিভে যেত এবং প্রচণ্ড ধোঁয়া তৈরি হতো। ফলে তাদের বাধ্য হয়ে ওই গুহা থেকে বের হয়ে আসতে হতো। উঠোন থেকে মাটি খুঁড়ে নিয়ে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিত। শেষে তারা ছোট জাঁর কাছ থেকে যুক্তিতর্কের অনেক কসরতের পর পুদিনার স্বাদ জড়ানো মিঠাই, শুকনো লবণাক্ত বাদাম, মটরদানা, লবণ জড়ানো এক ধরনের গোখাদ্যের ফল ইত্যাদি চেয়ে নিত। আরও ছিল গাঢ় রঙে পরিণত হয়ে যাওয়া জবের চিনি। এটা বিক্রি করত আরব দোকানদাররা।

নিকটবর্তী সিনেমা হলের সামনে চাকাঅলা গাড়িতে কাঠের তৈরি বাক্সে করে মাছি ভনভন একটা স্ট্যান্ডের ওপরে খোলা অবস্থায়ও বিক্রি হতো জবের চিনি। খুব বেশি বৃষ্টি হলে উঠোনের পানি গড়িয়ে পড়ত ওই গর্তসদৃস ঘরে। খোলা আকাশ আর সমুদ্রের হাওয়া থেকে বহু দূরে নিজেদের দারিদ্রের রাজ্যে জ্যাক এবং তার বন্ধুরা পুরনো বাক্সপেটরার ওপরে দাঁড়িয়ে রবিনসন ক্রুসো সাজত।
তবে তাদের খেলার সবচেয়ে ভালো সময় ছিল গরমের মৌসুমে। কোনো না কোনো অজুহাতে, মিথ্যে বলে তারা দুপুরের ঘুম ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়ত। তখন তাদের কাছে ট্রলি-বাসে ওঠার মতো টাকা থাকত না বলে তাদের অভিজ্ঞতার পর্যবেক্ষণ চালানোর জায়গা বলে পরিচিত যে বাগানটা ছিল সেখানে যেতে গোটা পথ তাদের হাঁটতে হতো: কাছাকাছি এলাকার হলুদ আর ধূসর রাস্তা পেরিয়ে, ঘোড়ার আস্তাবলপূর্ণ এলাকা পিছে ফেলে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন ঘোড়ার গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রেতাদের দোকান পার হয়ে যেত তারা। ঠেলা দিয়ে খোলার মতো সব দরজার পেছনে মাটিতে ঘোড়ার পদশব্দ শোনা যেত, নাক থেকে হঠাৎ ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাস পতনের ফলে ঘোড়াগুলোর ঠোটের ওপরে জোরে শব্দ শোনা যেত।

ঘোড়ার গলার লোহার শিকল জাবনাপাত্রের কাঠের সঙ্গে বাড়ি লেগে শব্দ হতো। ওইসব জায়গা পার হয়ে যেতে যেতে বিষ্ঠার জৈব সার, খড়, ছোটদের জন্য নিষিদ্ধ ওই এলাকা থেকে উত্থিত ঘামের গন্ধ তারা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করতে থাকত। এমনকি ঘুমের মধ্যেও জ্যাকের নাকে আসত ওইসব গন্ধ। আস্তাবলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের গতি মন্থর হয়ে যেত; সেখানে ঘোড়াদের দেখাশোনা করা হতো; বড় বড় খুরঅলা ঘোড়াগুলো ফ্রান্স থেকে আনা; রোদের তাপ আর মাছিদের কাছে ঘোড়াগুলো কাবু হয়ে থাকত। ঘোড়াগুলোর চোখের দিকে তাকালে বোঝা যেত নির্বাসনে এসেছে। তারপর গাড়োয়ানরা তাদের তাড়িয়ে দিলে তারা বিরাট একটা বাগানের দিকে দৌড়ে চলে যেত; ওই বাগানে বিরল প্রজাতির গাছপালা জন্মানো হতো। বিরাট জলাধার আর ফুলের ভেতর দিয়ে সমুদ্রের দৃশ্য দেখা যেত একটা বড় পায়েচলা পথ দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে। সেখানেও বাগানের প্রহরীরা তাদেরকে সন্দেহের চোখে দেখত।

যারা আস্তে ধীরে হেঁটে বেড়াতে আসত তাদেরও হাঁটার ধরন বদলে যেত ছোটদের উপস্থিতির কারণে। তবে আড়াআড়ি পথের প্রথমটাতে এসে তারা বাগানের পূর্ব পাশের দিকে পথ ধরত। ওদিকটায় যেতে হতো বিরাট বিরাট ঘন ম্যানগ্রোভ গাছের ভেতর দিয়ে; গাছগুলোর ছায়ায় দিনের বেলাতেই রাত নেমেছে মনে হতো। এরপর তারা বড় বড় রাবার গাছ পেরিয়ে যেত; হরেক রকমের শিকড়ের গাছগুলোর প্রথম ডাল থেকে আরও সব ডালাপালা বের হয়ে মাটি ছুঁয়ে আছে দেখা যেত। সেখান থেকে আরও এগিয়ে যাওয়া লাগত তাদের অভিযানের আসল গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য: তালগাছের মতো লম্বা গাছের মাথায় বড় বড় গোলাকার কমলা রঙের ফলগুলো খুব ঘন হয়ে ঝুলে থাকত। ফলগুলোকে তারা বলত কোকোসেস।

ওখানে পৌঁছে প্রথমে দেখতে হতো আশপাশে কোনো প্রহরী আছে কি না। তারপর শুরু হতো অস্ত্র খোঁজা, মানে ঢিল। পকেট ভর্তি ঢিল যোগাড় করে সবাই ফিরে এলে গাছে গাছে উঁচুতে ঝুলে থাকা থোকাগুলোতে ঢিল ছুড়ত তারা। একেকটা ঢিলে বেশ কয়েকটা করে ফল পড়ত। যার ঢিলে যে ফলগুলো পড়ত সেগুলোর মালিক হতো সেই। তার ফলগুলো কুড়ানো পর্যন্ত অন্যরা অপেক্ষা করত; এরপর আসত তাদের পালা। জ্যাকের হাতের লক্ষ্য খুব পাকা ছিল বলে এই খেলায় সে পিয়েরের সমকক্ষ ছিল। তবে যাদের হাতের লক্ষ্য অতোটা পাকা ছিল না তাদের সঙ্গে জ্যাক এবং পিয়েরে নিজেদের ফলগুলো ভাগাভাগি করে নিত। এই খেলায় সবচেয়ে খারাপ হাত ছিল ম্যাক্সের; তার চোখের দৃষ্টি ছিল দুর্বল এবং চোখে চশমা পড়ত সে। গাট্টাগোট্টা চেহারার ম্যাক্সকে তারা যেদিন প্রথম মারামারির দৃশ্যে দেখেছিল সেদিন থেকে সবাই তাকে সমীহ করে চলত। অন্যরা, বিশেষ করে জ্যাক, মারমুখি মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাস্তায় মারামারির সময়ে প্রচণ্ড বেগে হাত পা ছুড়ে সর্বশক্তি দিয়ে তাকে আঘাত করার চেষ্টাতেও ঝুঁকির মধ্যে থাকত। কারণ মারের প্রতিবাদে ম্যাক্সও কষে মার লাগাতে ওস্তাদ ছিল। ম্যাক্সের নামের উচ্চারণে জার্মান ভাষার ছোঁয়া ছিল বলে কষাইয়ের ছেলে যাকে অন্যরা গিগট বলে ডাকত সে একদিন ম্যাক্সকে ‘শালার হান’ বলে গালি দিয়েছিল। সেদিন উত্তেজনা প্রকাশ না করেই ম্যাক্স চশমা খুলে যোসেফের কাছে রেখে মুষ্টিযোদ্ধাদের স্টাইলে দাঁড়িয়ে গেল; খবরের কাগজে সে মুষ্টিযোদ্ধাদের ওরকম করে দাঁড়ানোর ছবি দেখেছিল আগেই। তারপর গিগটকে তার গালি পুনরায় আওড়াতে আহ্বান করল।

সামান্যতম ঘাম না ঝড়িয়েই গিগটের প্রত্যেকটা আঘাত এড়িয়ে তাকে আচ্ছা মতো কয়েক বার করে ধোলাই দিয়ে দিল। ওদিকে গিগট তাকে আঙুল দিয়ে ছোঁয়ার সুযোগও পেল না। শেষে ঘুষি মেরে গিগটের চোখের কোণে কালো দাগ ফেলে দিয়ে ম্যাক্স সর্বোচ্চ বিজয়লাভ করেছিল সেদিন। সেদিন থেকেই তাদের ক্ষুদে দলে ম্যাক্সের জনপ্রিয়তা সুনিশ্চিত হয়ে গেল। ফলের রসে পকেট আর হাত বোঝাই হয়ে গেলে তারা বাগান ছেড়ে সমুদের দিকে এগোতে থাকত। বাগানের সীমানা পার হয়ে গিয়ে তাদের ময়লাজীর্ণ রুমালে বিছিয়ে ফলগুলো খেতে থাকত। দাঁতের নিচে ফলগুলো যেন বিজয়ের মতোই কড়া মিষ্টি আর রসালো লাগত। তারপর তারা সমুদ্র সৈকতের দিকে ছুটে যেত।

(চলবে)

এসএ/

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার

ছবি: সংগৃহীত

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) সদস্যদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘পুলিশ পরিচয়ে’ ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন কমিশনার মো. মজিদ আলী। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আচরণ সর্বক্ষেত্রে পেশাদার ও সংবেদনশীল হতে হবে।

সোমবার (৩০ জুন) আরপিএমপির মাসিক কল্যাণ সভায় পুলিশ কমিশনার এই নির্দেশনা দেন।

কমিশনার বলেন, "পুলিশ সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের পেশাগত পরিচয় ব্যবহার করতে পারবেন না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে।"

তিনি আরও যোগ করেন, সদস্যদের অনলাইন জিডি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে, যাতে জনগণ আরও দ্রুত ও কার্যকর সেবা পায়।

সভায় কমিশনার মজিদ আলী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, দায়িত্ব পালনে সতর্কতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখা জরুরি। পুলিশ সদস্যদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, "পুলিশের দায়িত্ব শুধু আইন প্রয়োগ নয়, এটি একটি জনসেবামূলক পেশা।"

সভায় আগের মাসের কল্যাণ সভায় উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যা ও সুপারিশের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। অনেক বিষয় সমাধানের নির্দেশও দেন কমিশনার।

এ সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) নরেশ চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) সফিজুল ইসলাম, উপপুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) হাবিবুর রহমান, উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) তোফায়েল আহম্মেদ, এবং উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুর রশিদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন
বিরামপুরে ১৭০তম সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালন