শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৬

বিষাদ বসুধা

দুপুরের রোদে খা খা করছে চারদিক। রোদের উত্তাপে গাছের পাতাগুলো লজ্জাবতী গাছের মতো কেমন মিইয়ে পড়েছে। গাছপাতা, তরুলতাগুলোও যেন একটুখানি বাতাসের জন্য হা-পিত্তেশ করছে। কিন্তু বাতাসের কোনো নাম-গন্ধও নেই। গরমে হাঁসফাঁস করছেন জমিলা খাতুন। তিনি রান্না করতে গিয়ে গরমে হাপিয়ে উঠেন। কোথাও স্বস্তি নেই। শ্বাস-প্রশ্বাসও উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

জমিলা খাতুন তালের পাখা নিয়ে ঘরের বারান্দায় এসে বসলেন। এ সময় একটি কাক ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে বাড়ির উঠানে বাঁশের আড়ার উপর বসে। তারপর শুরু করে ডাকাডাকি। একেবারে উথালিপাথালি ডাক। কাক ডাকার শব্দটা যেন কলিজায় গিয়ে লাগে। এমন ডাক খুব সহসা শোনেননি জমিলা খাতুন। কাকের ডাক শুনে বুক ধরফর করে উঠে তার। মনটা স্থির হয়ে উঠে। তিনি কাকটাকে হাত দিয়ে তাড়া করেন। যা কাক, যা। এমন করে কেন ডাকতেছিস? কার সর্বনাশের খবর নিয়া আইছিস ক তো? যা। আর সর্বনাশা ডাক ডাকিছ না। যা যা।

কাকটা কিছুতেই যায় না। এদিক উড়ে, ওদিক উড়ে। আবার বাঁশের উপর বসে। পড়ে পড়ে ডাকে। কা কা কা কা!

জমিলা খাতুনের কাছে কাকের ডাকটা ভয়ঙ্কর লাগে। তার ছেলের কথা মনে পড়ে। তার কলিজার টুকরা আরেফিন। পরিবারের একমাত্র রত্ন। একমাত্র মানিক। গ্রামের লোকেরা ওকে বলে, গোবরে পদ্মফুল। ওদের সংসারে সবাই গো-মূর্খ। কারও ভেতরে কোনো শিক্ষার আলো নেই। পূর্বপুরুষরাও কেউ কখনো স্কুল-কলেজে যায়নি। মেধার গুণে আরেফিন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেতে পেরেছে। তার মেধার মূল্যায়ন করেছেন মোহিনী। তিনি বড়লোকের মেয়ে হয়েও অতি নীচু পরিবারের সন্তান আরেফিনকে ভালোবাসেন। তাকে তিনি বিয়ে করেন। পাল্টে যায় আরেফিনের জীবনধারা। কত বড় ভাগ্য নিয়ে তিনি পৃথিবীতে এসেছেন কে জানে!

আরেফিন মা বাবার জন্য গ্রামে প্রতিমাসে টাকা পাঠান। যত ঝড়ঝাপটাই তার উপর দিয়ে যাক, মা বাবার কাছে টাকা পাঠানোর কথা ভোলেন না। আরেফিন এক দেশ থেকে আরেক দেশে যান, আর বাবার বুকের ছাতিম ফুলেফেঁপে বড় হয়। মার মুখে হাসি ফোটে। সেই হাসি ছড়িয়ে পড়ে আজিমপুর গ্রামে। একে বলে ওকে বলে, আমার সোনার মানিকের কথা শুনছ? বিরাট পাস দিছে আমার ছেলে। বিরাট চাকরি করে। বড়লোকের মেয়েরে বিয়া করছে। আর কি চাই?

কেউ কেউ টিপ্পনি কেটে বলে, ছেলের বউরে কখনো দেখছ? খুব তো বড়াই করতেছ?

জোখের মুখে চুন পড়ার মতো অবস্থা হয় জমিলা খাতুনের। তিনি মাথা নিচু করে অন্য দিকে চলে যান। মনে মনে বলেন, সব হিংসা। এই দুনিয়ায় কারো ভালো কেউ কি দেখতে পারে! পারে না। হিংসায় জইলা পুইড়া মরে। নিজেগো পোলারা মাইনসের খেতে বদলা দেয়। আমাগো পোলায় লেখাপড়া কইরা ঢাকা শহরে বড় চাকরি করে। এইডা কি কারো সহ্য হয়। হয় না। এই জন্যই টিটকারি মাইরা কথা কয়। ওইসব আমি বুঝি না! সব বুঝি।

কিছুক্ষণ পর আবার কাকটা পড়ে পড়ে ডাকে। কা কা কা কা!

জমিলা খাতুনের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। কোনো একটা অঘটন ঘটছে। তা না হলে কাকটা এমন করে ডাকতো না। আরেফিনের বাপ কোথায় গেল! সারাদিন কই কই যে থাহে!

জমিলা খাতুন মনে মনে ছোটছেলেকে খোঁজেন। আক্কাস গেল কই? আক্কাস আক্কাস!
আক্কাস দৌড়ে আসে মা’র কাছে। কি হইছে মা?
দেখ তো তোর বাপ কই? তাড়াতাড়ি খুইজা আন।
আনতাছি মা। আনতাছি।

আক্কাস দৌড়ে দরজার দিকে যায়। বৈঠকখানায় বসে আক্কাসের বাবা আলী আকবর গল্পগুজব করছিলেন। গরমের দিনে বৈঠকখানায় বাড়ির লোকদের আড্ডা বসে। আড্ডার মধ্যমণি আলী আকবর। ছেলের কারণে আলী আকবর বাড়ির লোকদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছেন। তিনি না গেলে আড্ডা জমে না। তিনি যতক্ষণ বৈঠকখানায় থাকেন ততক্ষণই আড্ডা জমজমাট থাকে। বাড়ির লোকরা নানা বিষয়ে এখন আলী আকবরের পরামর্শ নেন। ভালোমন্দ জানতে চান। আলী আকবরও বিজ্ঞলোকের মতো যাকে যে পরামর্শ দেওয়া দরকার তা দিয়ে থাকেন। প্রতিদিনের মতো আজও আড্ডা বেশ জমে উঠে। আজ তিনি তার গর্বের ছেলেকে নিয়ে গল্প করছিলেন। কিভাবে বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করল সেই গল্প। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো আলী আকবরের গল্প শুনছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে আক্কাস আলী সেখানে হাজির হয়। সে তার কাছে গিয়ে কানে কানে বলে, মা ডাকতাছে। কি যেন হইছে তার। কেমন জানি করতাছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি চলেন বাবা।
পরে জামু। তুই গিয়া ক, আমি একটু পর আসতাছি।
বাবা, এই কথা গিয়া কইলে মা রাগ করব। আপনি চলেন তো! পরে আইসা গল্প কইরেন।
আলী আকবর সবার উদ্দেশে বললেন, মিয়ারা, আমার গল্প শেষ হয়নি। আমি আবার আসতাছি। আইসা গল্প শেষ করব।

আলী আকবর হন হন করে হেঁটে বাড়ির দিকে ছুটে যান। জমিলা খাতুনের কাছাকাছি গিয়ে বলেন, কি হইছে আরেফিনের মা? এতো উতালা হইছ কেন? আমি আমার ছেলেরে নিয়া গল্প করছিলাম। সবাই উদাস হইয়া আমার ছেলের গল্প শুনছিল। সেইডা তোমার সহ্য হইল না?
আরেফিনের গল্প?
আর কার গল্প? গল্প কিংবা গর্ব করার মতোন আর কে আছে কও?
দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে জমিলা খাতুন বললেন, আমার আরেফিন! ওর লইগ্যা আমার মনডা কেমন জানি করতেছে। বুকের মধ্যে কী রহম জানি ধুকফুক ধুকফুক করতেছে। আপনে আরফিনের খবর নেন তো! কোনো সমস্যা হইল কি না পোলাডার।
কেন? আবার কি হইল?
কাকটা দেহেন না, এহনও পইড়া পইড়া ডাকতেছে। বড় অহস্য লাগতেছে।
ওসব বাদ দেও তো! কাক ডাকতাছে তাতে সমস্যা কি? কাক ডাকবো না?
আপনে আমার কতাডা একটু হোনেন। আপনে খোঁজ লন পোলাডার। খোঁজ লইতে তো কোনো দোষ নেই! খোঁজ লইয়া আমারে কন, পোলাডা ভালো আছে।
হুম, কয়দিন পর পর কাক ডাকবো আর তোমার মন উতালা হইব; এইডা কেমন কথা?
আপনে খোঁজ লইবেন? নাকি অন্য কাউরে কমু?

কও না কও। কারে কইবা? আরেফিন যে দেশে নাই এইডা কেউ জানে? মন খারাপ কইরো বউ। আরেফিন চীন দেশে গেছে। ছোডবেলায় চীনের গল্প হোন নাই? চীনরে বলে মহাচীন। সেই দেশে আমার ছেলে গেছে। ভালোই তো আছে কইল। খারাপ থাকলে ফোন কইরা জানাইতো না?
আপনের লগে কবে কতা হইছে?
ওইদিন, তাও তিন চাইর দিন হইয়া গেছে।
আজকে তো হয় নাই?
না। আজকে হই নাই। আচ্ছা, তুমি যেহেতু কইতেছ, আমি ফোন কইরা দেখতেছি।

আলী আকবর মোবাইল হাতে নিয়ে আরেফিনের নম্বরে ফোন দেন। কিছুতেই তার ফোনে ঢোকা যাচ্ছে না। একবার দুইবার তিনবার ফোন করেন তিনি। না। কিছুতেই ফোনে ঢোকা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ কি না তাও বোঝা যাচ্ছে না। তিনি বিরক্ত হন। ভীষণ বিরক্ত হন। কিছুক্ষণ পর তিনি ছেলের বউর নম্বরে ফোন করেন। মোহিনীর ফোনে রিং বাজে। কিন্তুমোহিনী ফোন ধরছে না। মোহিনীর নম্বরেও কয়েকবার ফোন করেন তিনি। বিরক্ত হয়ে তিনি ফোনটাকে বিছানার উপর ছুড়ে মারেন।

জমিলা খাতুন স্বামীর কা-কির্তি দেখে বলেন, ওকি ওকি! ফোনডারে ছুইরা মারলেন যে!

আলী আকবর ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, আইজ কি হইল বুঝতে পারতেছি না। কুফা লাগছে। পাইতেছি না। কাউকেই পাইতেছি না।
কি কন?
হ। আরেফিনের ফোন বন্ধ। বউমা ফোন ধরতেছে না।
হায় হায়! তাইলে কি হইব?
কি আর হইব। পরে আবার দেখবনে।
বউমার ফোনে আগে কি কতা কইছেন?
না। তা কই নাই।
তাইলে কেমনে পাইবেন? আপনের অচেনা নম্বর ধরব নাকি?
অচেনা নম্বর বইলা ফোনডাও ধরব না? না ধরলে না ধরলো!
জমিলা খাতুন হতাশার চোখে আলী আকবরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ছেলের জন্য তার দুশ্চিন্তা হচ্ছে। মনে মনে আল্লাহকে ডাকেন তিনি। বিড় বিড় করে বলেন, মাবুদ গো; তুমি আমার ছেলেরে ভালো রাইখো। আমার সোনার মানিকরে তুমি সুস্থ রাইখো।

জমিলা খাতুনের চেহারা দেখে আলী আকবরও ভাবনায় পড়েন। তিনি বিড় বিড় করে বলেন, কয়দিন আগেও কতা হইল। কইল, ভালোই আছে। কোনো অসুবিধা নাই। মোবাইলডা কেন যে বন্ধ রাখল? বউমাও ফোনডা ধরতেছে না। বউমার কাছে কি আমার নম্বর আছে? কে জানে! অচেনা নাম্বার তো কেউ ধরতে চায় না।
আলী আকবর স্ত্রীর মাথায় হাত রাখেন। মন খারাপ কইরো না। আইজ যেমনেই হইক ছেলের খবর নিমু।
আবারও কাকটা ডানা ঝাপটে ঝাপটে ডাকে। কা কা কা কা!

দুশ্চিন্তায় হাবুডুবু খাচ্ছেন আলী আকবর ও জমিলা খাতুন। তাদের ধারণা, ছেলেটা কোনো বিপদে পড়েছে। তা না হলে নিশ্চয়ই সে যোগাযোগ করত। সে যোগাযোগ করছে না বলে আমরাও চুপচাপ বসে থাকব! না না! এভাবে ঘরে বসে থাকা যায় না!
আলী আকবর বললেন, আমি বরং ঢাকায় যাই। কি কও?
হ যান। ঢাকায় যান। বাসায় কেউ না কেউ তো থাকব!
হ। তা নিশ্চয়ই থাকব। ঠিকানাডা তোমার কাছে আছে নাহি?
আছে আছে। রাখছিলাম।
জমিলা খাতুন ধর্মীয় বইপুস্তকের ফাঁকে সাদা কাগজে লেখা একটা কাগজ বের করলেন। আলী আকবরের হাতে দিয়ে বললেন, দেহেন এইডা কি না?
হ আইডাই। রাহো। কাইল তাইলে রওয়ানা হই?
হ যান। দেরি কইরা লাভ নাই।
আলী আকবর ছেলের খোঁজে ঢাকায় আসেন। ছেলের বাসায় গিয়ে দেখেন দরজায় তালা ঝুলছে। বিস্ময়ের সঙ্গে বাসার দিকে তাকিয়ে থাকেন। মনে মনে ভাবেন, কি ব্যাপার! বাসার লোকজন মানে বউমা কই? বউ মা কি এই বাসায় থাহে না। আমাগোরে তো কিছুই কইলো না। এখন উপায় কি?

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আলী আকবর বাড়ির দারোয়ানের কাছে জানতে চান, আরেফিনের কোনো খবর জানো তোমরা?
আরেফিন স্যার আপনার কি হয়? দারোয়ান জানতে চাইল।
আমার ছেলে। ছেলে হয়।
সে তো বিদেশে!
হ জানি। চীন দেশে গেছে। কিন্তু বউমা? বউমা কই?
আপনার ছেলে যেদিন বিদেশে গেছে সেদিনই আপনার বউমা নিজ বাড়িতে চলে গেছে।
ওহ! বউমার ঠিকানাডা কি তোমার কাছে আছে? আমারে দিতে পারবা?
আমি কই পাব তার ঠিকানা? আমারে দেয় নাই। কেন, আপনি আপনার ছেলের শ্বশুর বাড়ি যান নাই?
দীঘনিশ্বাস ছেড়ে আলী আকবর বলেন, না রে বাবা!
দারোয়ান বিস্ময়ের দৃষ্টিতে আলী আকবরের দিকে তাকিয়ে থাকে। আলী আকবর মাথা নিচু করে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। তিনি কি করবেন তা নিয়ে ভাবেন। ছেলের খোঁজ না নিয়েই তিনি বাড়ি ফিরে যাবেন! নাকি ঠিকানা জোগাড় করে ছেলের শ্বশুর বাড়িতে যাবেন! তিনি কোনো দিন ছেলের বড়লোক শ্বশুর বাড়ি যাননি। পরিচয়ও নেই ছেলের শ্বশুরের সঙ্গে। সেখানে গেলে তাকে যদি দূরদূর করে তাড়িয়ে দেয়! তখন কি হবে?

রাজ্যের চিন্তা মাথায় নিয়ে আলী আকবর বাইরের দিকে পা বাড়ান।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১২

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১১

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৮

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

আরএ/

Header Ad
Header Ad

ড. ইউনূসের জন্মদিনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা

তারেক রহমান ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টার অফিসে বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুল ও কেক পৌঁছে দেন।

প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফেরদৌস হাসান সেলিম ফুলের তোড়া ও শুভেচ্ছা সামগ্রী গ্রহণ করেন।

ফুলেল শুভেচ্ছা পেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার সুস্বাস্থ্য ও সফলতা কামনা করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তার এই অনন্য অবদানের জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

Header Ad
Header Ad

পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের দাবিকে ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীতে জিয়াউর রহমান স্মরণে আয়োজিত এক স্মারক প্রকাশনা ও আর্কাইভ উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, “যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট—তারা নির্বাচন বিলম্ব কিংবা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচাল করতে চায়। পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রয়োগযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সংস্কার মানে বাইবেল নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কারের মূল প্রবক্তা বিএনপি নিজেই। আমরা এরইমধ্যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে উপস্থাপন করেছি। তাই জাতীয় ঐক্যের নামে একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।”

সালাহউদ্দিন আহমদ জোর দিয়ে বলেন, “কেউ যদি মনে করেন সবাইকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মত মেনে নিতেই হবে, তাহলে ঐকমত্য কখনোই সম্ভব নয়। একতরফা মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় বাস্তবতাকে বুঝতে হবে।”

বিএনপি এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত নির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা না করায় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“সরকার যদি সত্যিই নির্বাচন চায়, তাহলে তাদের উচিত দ্রুত সময়সূচি ঘোষণা করা। বর্তমানে স্থানীয় নির্বাচনের মতো আয়োজন উপযুক্ত নয়; জাতীয় নির্বাচনই এখন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামি দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির দাবি জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের মহাসমাবেশে এ পদ্ধতি চালুর দাবি তোলে। বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে বলছে, এটি বাস্তবসম্মত নয় এবং এতে নির্বাচনের স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যুতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা আগামী নির্বাচনের আগে একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিতে পারে।

Header Ad
Header Ad

জোটবদ্ধ ইসলামি দল হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি: চরমোনাই পীর

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম । ছবি: সংগৃহীত

ইসলামপন্থীদের ঐক্যের প্রতি গণমানুষের প্রবল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, “যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে জোটবদ্ধ ইসলামি দলই হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। ইনশাআল্লাহ, রাষ্ট্রক্ষমতা আমাদের হাতেই আসবে।”

শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

চরমোনাই পীর বলেন, “আমরা স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে বহু রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখেছি, কিন্তু ইসলামি দল আজও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারেনি। এর বড় কারণ—আমরা বারবার নেতৃত্ব ও নীতির বাছাইয়ে ভুল করেছি। এবার আর সে ভুল নয়, এবার আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো।”

তিনি জানান, শুধু ইসলামি দলগুলো নয়, বরং দেশপ্রেমিক আরও কিছু রাজনৈতিক শক্তিকে একত্রে নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া চলছে। সেই ঐক্যই হতে পারে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার সেতুবন্ধ।

চরমোনাই পীর বলেন, “আমি বহু আগেই বলে আসছি—ইসলামপন্থী ভোট এক বাক্সে আনতে হবে। আমরা যদি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তাহলে জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রাখবে এবং ইসলামি শক্তিই হবে এই দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব।”

তিনি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আগামী নির্বাচনে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি’ চালু করতে হবে। যে দল যত ভোট পাবে, তারা তত আসনে প্রতিনিধিত্ব পাবে। এটা এখন জনদাবি—বহু রাজনৈতিক দল এই দাবিতে একমত।”

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “বিএনপির উচিত পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চিন্তা করা। এতে করে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে।”

এ সময় তিনি ইসলামী আন্দোলনের সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোর প্রতি দলটির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “সংস্কার প্রশ্নে আমরা আপসহীন। দেরি করা মানেই ২০২৪-এর গণ-আন্দোলনের সঙ্গে বেইমানি। আমরা বিশ্বাস করি, ৭২-এর সংবিধান জনআকাঙ্ক্ষার প্রতি বধির ছিল, তাই সেটিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন অপরিহার্য।”

তিনি আরও বলেন, “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সবসময় শান্তিপূর্ণ উপায়ে জনমত গঠনে বিশ্বাসী। তবে জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে দেশজুড়ে নতুন গণজাগরণ শুরু হবে।”

মহাসমাবেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি ও ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে এই বক্তব্য নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের সক্রিয় ও সংগঠিত ভূমিকাই যে এখন আলোচনার কেন্দ্রে, সেটাই যেন প্রতিফলিত হলো এই বক্তব্যে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ড. ইউনূসের জন্মদিনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা
পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
জোটবদ্ধ ইসলামি দল হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি: চরমোনাই পীর
খামেনির প্রাণ বাঁচালাম, ধন্যবাদটুকুও দিলো না: ট্রাম্প
পুরস্কার না নিয়ে মনু মিয়ার জানাজায় অভিনেতা খায়রুল বাসার
মা হারালেন ব্যান্ড তারকা তানজির তুহিন
ক্ষমতায় গেলে ১৮ মাসে ১ কোটি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে বিএনপি: আমীর খসরু
ফিলিস্তিনের মতো সাইপ্রাসও দখলে নিচ্ছে ইসরায়েল!
কালও চলবে এনবিআরের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’
‘এনবিআরের প্রশাসনিক আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই’
সিইসির সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে যা বললেন প্রেস সচিব
নওগাঁয় ছাত্রদলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নব গঠিত কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত
করোনায় আরও দুইজনের মৃত্যু,  শনাক্ত ৭
এক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে: ট্রাম্প
ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে ১৬ দফা ঘোষণা
নতুন রক্তের গ্রুপের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা
গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন আওয়ামী লীগ নেতা
সাগরতীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন করলেন কিম জং উন
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৬২
কূটনৈতিক অস্ত্র পানি নিয়ে ভারতের কঠোর অবস্থান, শঙ্কায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান