মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪ | ৬ কার্তিক ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৭

যারা যুদ্ধ করেছিল

রাজাকার আলিমের ভীষণ মন খারাপ। তার বউ খবর পাঠিয়েছে সে আর রাজাকারের সংসার করবে না। আলিম লোক পাঠিয়েছিল বউ আনতে। আলিমের বউ রুবিনা আসেনি। বলে দিয়েছে, ‘রাজাকারের সঙ্গে সে সংসার করবে না। কিছুদিনের মধ্যেই সে তালাকনামা পাঠিয়ে দেবে।’
এই খবরে আলিমের বুক পাথর হয়ে গেছে। তার সঙ্গীদের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য তাদের ডেকে পাঠিয়েছে। জহর এসেছে খবর পেয়েই। দেরি করছে বোকা-সোকা গেদু। জহর বলে, ‘গেদু আসলে আসুক। ডাকছো ক্যা সেই কথা কও। আমার টেনশন চলতাছে। আবার কোনো ঝামেলা হইছে না তো?’
আলিম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে, ‘তোর ভাবি আমারে কলা দেহাইছে। ভাইস্তা সলিমউল্লাহকে পাঠাইছিলাম তাকে আনতে। সে না কইরা দিছে। আসবে না।’
‘ক্যা?’
‘আমি রাজাকার। রাজাকারের সঙ্গে সে থাকবে না। কয়দিন বাদে নাকি তালাকনামা পাঠিয়ে দেবে।’
গেদু রাজাকার হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে। বলে, ‘এখন তুমি কী করতে চাও?’
‘কী করতে চাই, তার জন্যে পরামর্শ করতে তোদের ডাকছি।’
অনেক পরে গেদু আসে। বোকার মতো হাসছিল। আলিম কষে ধমক দেয়। ‘ব্যাক্কলের মতো হাসতাছস ক্যা? মনে খুব ফূর্তি লাগছে, না?’
গেদু হাসি থামিয়ে বলে, ‘চেইতো না ওস্তাদ। মেলাদিন তোমার বাড়ি খালি। ভাবি আসার আগে আরেকবার মজমা করলে ভালো হতো না? ভাবি আসলে কিন্তু এই সুযোগ আর পাইবা না।’
আলিম দাঁত কিড়মিড় করে বলে, ‘কালিপদ মাস্টারের মাইয়ারে লাগাইয়া আউস মেটে নাই?’
গেদু বলে, ‘ওই মাখনের মতো শরীর একবার লাগাইয়া কি স্বাদ মেটে? শালার ক্যাপটেন আত্মা ভইরা খাইতাছে।’
‘তোর বোনকে লাগাইলে তোর মনে এমন ফূর্তি লাগত?’ আলিম এই কথার সঙ্গে গালাগাল করে উঠলে গেদু হতভম্ব মুখে তাকিয়ে থাকে। আলিম আবার বলে, ‘একবারও কি ভাইবা দেখছোস হৈমন্তির কেমন লাগতাছে?’
গেদু স্তম্ভিত মুখে আলিমকে বলে, ‘কী অইল ওস্তাদ, তুমি মেয়েটাকে ক্যাপটেনের হাতে দিয়া আইলা। এখন আবার উল্টা সুর গাইতাছ।
এবার মুখ খোলে জহর। বলে, ‘ওস্তাদের মুড অফ। ভাবি আসবে না বইলা দিছে।’
‘ক্যা আসবে না?’
জহর দম নিয়ে বলে, ‘রাজাকারের সঙ্গে ভাবি ঘর করবে না। এই ব্যাপার নিয়ে পরামর্শের জন্য ওস্তাদ আমাগো ডাকছে। আর তুই কি না আসলি গা ভাসাইয়া। আইসাই ঢংয়ের কথা শুরু করলি। ওস্তাদের কথা কী কমু। আমারইতো মেজাজ খারাপ অইছে। শোন, আর কথা না বাড়াইয়া এবার কামের কথা ক। কী করা যায় এখন। তাড়াতাড়ি বুদ্ধি বাইর কর।’
গেদু কেলাসের মতো হাসতে হাসতে বলে, ‘আমি কী বুদ্ধি বাইর করমু? আমার তো বুদ্ধি কম। সবাই আমারে কয় বেকুব। গাধা।’
আলিম ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলে, ‘দাঁত ক্যালায়া হাসিস না। মেজাজ বেশি খারাপ অইলে পাছার মধ্যে নল ঢুকায়া গুলি কইরা দিমু কইলাম।’
জহর বলে, ‘ওস্তাদ মাথা ঠান্ডা কর। ভাবির ব্যাপারে তুমি কী ভাবতাছো সেইটা আগে কও।’
আলিম বলে, ‘আমার মাথায় কিছু আসতাছে নারে। এই জন্যে তো তোদের খবর দিছি।’
গেদু বলে, ‘চল। কাইল গিয়া জোর কইরা তুইলা নিয়া আসি।’
আলিম মাথা নামিয়ে ছিল। মাথা তুলে বলল, ‘কথাটা মন্দ কস নাই। আমিও তাই ভাবছিলাম। কিন্তু ওদের বাড়ি আরেক জেলায়। এত দূরের পথ অস্ত্র নিয়া কীভাবে যাবি? পথে যদি মুক্তিবাহিনীর সাথে দেখা হয়ে যায়, তখন? বাপের দেওয়া জানটাতো খোয়াবি।’
‘খাঁটি কথা কইছ ওস্তাদ।’ গেদু বলে।
জহর বলে, ‘আমাকে একটু ভাবতে দেও। তোমরাও ভাব। একটা পথতো বাইর করতে অইব।’
সবাই বিছানায় গা এলিয়ে ভাবতে থাকে।
আলিম বলে, ‘ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমাইয়া যাইস না। মনে রাখিস, গুলি কিন্তু শেষ। আগামীকাল থানা সদরে যাইতে হবে গুলি আনতে।’

ভাবতে ভাবতে নাক ডাকার শব্দ শুরু হয়। প্রথমে গেদু রাজাকার। তারপর জহর, শেষে
আলিম। আলিম ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখতে পাচ্ছে তার স্ত্রী রুবিনা ফিরে এসে মিহি সুরে আলিম আলিম বলে ডাকছে। আলিম লাফিয়ে উঠে অন্ধকারে দরজা খুঁজতে থাকে। হাতড়ে হাতড়ে দরজা খুঁজে পায়। দরজা খুলে ভূত দেখার মতো আলিম চমকে ওঠে। দরজার মুখে অনেকগুলো মানুষ। সবার মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা। আলিম কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার মুখ চেপে ধরে। তারপর বাকি দুজনকে ঘুমের মধ্যে হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে। তারপর তিনজনকে দূরে ফাঁকা মাঠে নিয়ে যায়।
মমিন নিজের মুখের কাপড় সরিয়ে বলে, ‘চিনছোস আমাকে?’
‘মমিনভাই।’ বলেই আলিম রাজাকার মমিনের পা জড়িয়ে ধরে। বলে, ‘মমিনভাই জান ভিক্ষা চাই।’
মমিন বলে, ‘পাবি। জান ভিক্ষা দিমু। আমরা যা বলি তুই যদি তাই করিস।’
আলিম সঙ্গে সঙ্গে বলে, ‘আপনারা যা বলবেন আমরা তাই করমু। তাও জানে মাইরেন না।’
মমিন বলে, ‘তাহলে চল। যেতে যেতে করণীয় বলছি তোকে।’
জহর ও গেদু রাজাকারকে কয়েকজনের পাহারায় রেখে আলিমকে নিয়ে মমিন ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।
জহর ও গেদু ভাবে আগে ওরা আলিমকে মেরে তারপর ওদের মারবে। আজ কারও রক্ষা নাই। রাজাকার হওয়ার সাধ আজ জন্মের মতো মিটিয়ে দেবে।

আলিমকে যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছে সেইভাবে আলিম গিয়ে সাকিবকে মৃদু স্বরে ডাকে। সাকিব জেগে আতঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’
আলিম বলে, ‘আমি আলিম। আলিম রাজাকার।’
‘এত রাতে কী চাস?’ সাকিব ধমকে ওঠে।
‘ভাই আস্তে কথা কন। জরুরি খবর আছে। ওঠেন।’
সাকিব দরজা খুলে বাইরে আসা মাত্র আড়াল থেকে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বেরিয়ে এসে সাকিবের মুখ চেপে ধরে। তারপর গামছা মুখ বাঁধে। দড়ি দিয়ে দুই হাত পিঠমোড়া করে বাঁধে।
আলিম রাজাকার একই কায়দায় ফজলুর রহমানের ঘরের কাছে গিয়ে মোলায়েম স্বরে ডাকে। ‘চাচা, চাচা, চাচা কি জাইগা আছেন?’
বার কয়েক ডাকার পর ফজলুর রহমান গলা খাকারি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে। বলে, ‘কে ডাকে?’
‘আমি আলিম। আলিম রাজাকার।’
‘কী চাস?’
‘জরুরি খবর আছে চাচা। ওঠেন। বাইরে আসেন।’
‘এখন যা। সকালে আসিস।’
‘সকালে আসলে হবে না চাচা। তাইলে চিড়িয়া উইড়া যাবে। মমিন বাড়ি আইছে চাচা। এই সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।’
সবই আলিমকে শিখিয়ে দেওয়া। আলিম শুধু তোতা পাখির মতো শেখানো বুলি আওড়িয়ে যাচ্ছে। ফজলুর রহমান টর্চলাইট জ্বালিয়ে চোখ রগড়ে বাইরে আসে। বাইরে আসামাত্র কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আচমকা ফজলুর রহমানের মুখ চেপে ধরে। তারপর হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে আসে বাইরে। এইসময় মমিন রকিবকে ঈশারায় ডেকে পূর্বে শিখানো কথামতো কাজ করতে বলে। তারপর ফজলুর রহমান, সাকিব ও আলিমের মুখ ও চোখ বেঁধে বাইরে নিয়ে যায়। যেখানে জহর ও গেদু রাজাকারকে বেঁধে রাখা ছিল।
রকিব সাকিবের ঘরে ঢুকে সাথীকে মৃদু স্বরে ডাকতে থাকে। কোনো সাড়া না পেয়ে টর্চলাইট জ্বালিয়ে চারদিক খুঁজতে থাকে। খুঁজতে খুঁজতে রকিব বলে, ‘সাথী আমি রকিব। মমিন ভাই এসেছে তোমাকে উদ্ধার করতে। তুমি ভয় পেও না। বেরিয়ে এস।’
সাথী এবার খাটের নিচে থেকে বেরিয়ে এসে রকিবকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। রকিব বলে, কেঁদ না সাথী। এখন কাঁদার সময় না। চল, এখনই আমাদের এই গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে।’
রকিবের সঙ্গে সাথী যেতে যেতে বলে, ‘ভাইয়ার সঙ্গে দেখা হবে না? কতদিন ভাইয়াকে দেখি না। কেমন আছে আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়া?’
‘আমরা যেমন আছি। সেও তেমন আছে। দোয়া কর আমরা যেন পাকিস্তানি হায়েনাদের পরাজিত করে বীরের বেশে স্বাধীন দেশে ফিরতে পারি।’
করিম মিয়া ও রমিছা বিবি পোটলা-পুটিলি বেঁধে রেডি হয়ে ছিল। সাথী আসামাত্র তারা দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে।

খোলা মাঠে সবাই জমায়েত হলে দলের সিনিয়র ভাই হায়দার আলীকে মমিন বলে, ‘ভাই, এই লোকের নাম ফজলুর রহমান। শান্তি কমিটির মেম্বার। সে এই রাজাকারদের তৈরি করেছে। সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ করেছে এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক কালিপদ রায় ও তার স্ত্রীকে হত্যা করে তার মেধাবী সুন্দরী মেয়েকে মিলিটারি ক্যাম্পে দিয়ে এসেছে। সেই জঘন্য কাজের সাহায্যকারী হলো এই রাজাকাররা। আর এই পিশাচের নাম সাকিব। তার কথাতো আপনাকে আগেই বলেছি। এখন তাদের কী শাস্তি দেওয়া যায় আপনি ভেবে ঠিক করেন। আমি একটু মা-বাবার সঙ্গে দেখা করে আসি।’

গ্রামের পশ্চিম মাথায় একটি ঝাঁকড়া বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল রকিব, মমিনের মা-বাবা
ও বোন সাথী। মমিনকে দেখে রকিব মৃদু স্বরে আওয়াজ দেয়, ‘এই দিকে।’ মমিন কাছে
আসামাত্র সাথী ভাইকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
মমিন কান্না আটকিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, ‘কাদিস না। কাঁদলে বুকের আগুন পানি হয়ে যায়। আগুন জ্বালিয়ে রাখ। বেঈমান সাকিবকে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেছি। চরম প্রতিশোধ নেওয়া হবে। কাঁদিস না। ভাইয়ের জন্য দোয়া করিস। আমরা যেন স্বাধীন দেশে বীরের মতো মাথা উচুঁ করে ফিরতে পারি।’
মমিন বাবা-মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করে। করিম মিয়া মমিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে। রমিছা বিবি কিছু বলতে পারে না। শুধু কাঁদে।
মমিন বলে, ‘রকিব আর দেরি নয়। মা-বাবা আর সাথীকে তোর বোনের বাড়িতে রেখে কালবিলম্ব না করে সোজা রেলের ব্রিজের কাছে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবি। যা দেরি করিস না।’
ওরা তবু যাচ্ছিল না। মমিন ধমক দিয়ে বলে, ‘দেরি করছিস কেন? কথা গায়ে লাগছে না?’ বলেই মমিন আবার হাঁটতে শুরু করলে তখন ওরা যেতে থাকে। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে মমিন কিছুক্ষণ মা-বাবার গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাবে, এই হয়তো শেষ দেখা। বাবা-মার সঙ্গে আর দেখা হবে কি না সেটা ভবিতব্য জানে।

মমিন দ্রুত হেঁটে এসে মূল দলের সঙ্গে যুক্ত হয়। দল তখন করতোয়া নদী পেরিয়ে গেছে। মমিন দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মজনুকে খুঁজে বের করে।
তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘কার কী শাস্তি দিল হায়দার ভাই?’
মজনু বলে, ‘ফজলুর রহমানকে জবাই করে নদীর জলে ভাসায়ে দিছি। রাজাকারদেরও তাই করছি। সাকিবকে ভিন্নরকম সাজা দেওয়া হয়েছে।’
‘কী রকম?’ মমিন জিজ্ঞেস করে।
মজনু হাসি মুখে বলে, ‘ভীষণ মজার শাস্তি। ওর সোনা কেটে খোজা করা হইছে। আর চোখজোড়া উপড়ে ফেলছে। শালার ব্যাটা জ্যান্ত মরা হয়ে বাঁইচা থাক।’
মমিন গম্ভীর হয়ে থাকে। কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় না। মজনু বলে, ‘ওস্তাদ, শাস্তি কি কম হইছে?’
‘না। বেশি হইছে।’
মজনু বলে, ‘সাকিব মহা অন্যায় করছে ওস্তাদ। হায়দার ভাই তার শাস্তির ব্যাপারে সবাইকে জিজ্ঞাসা করলে সবাই এই শাস্তির কথা বলে। এখন আপনি কন, ‘ওই হারামির বাচ্চা মানুষ হইলে বন্ধুর বোনের সাথে এই আকাম করতে পারত?’

চলবে…
আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>
যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৬

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৫

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৪

Header Ad

হাফ ভাড়া না নেওয়ায় ৩০ বাস আটকেছে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ভিআইপি পরিবহনের বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে শিক্ষার্থীরা ৩০টি বাস আটক করেছে। বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষার্থী সাবিত, যিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের ছাত্র, অভিযোগ করেছেন যে তিনি বাসে উঠার পর হাফ ভাড়া নিয়ে বাসের হেল্পারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। বাস থেকে নামার সময় হেল্পার তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, ফলে তার দুই পা কেটে যায়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে হয়।

আহত সাবিত জানান, "আমি আজিমপুর থেকে কলেজে আসার জন্য ভিআইপি বাসে উঠি। নামার সময় হাফ ভাড়া দিতে চাওয়ায় তারা আমার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এরপর আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, যার ফলে আমি পা ও হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হই।"

অপরদিকে, আটক বাস চালকরা জানিয়েছেন, পূর্ববর্তী কোনো ঘটনার কারণে এসব বাস আটক করা হয়েছে। লিটন নামের এক চালক বলেন, "কোন বাসের সঙ্গে ঘটনা ঘটেছে সেটা আমি জানি না। তবে, শুনেছি কলেজের এক ছাত্রকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে হেল্পার। তাই আমাদের বাসগুলো আটক করেছে।"

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, "আমরা বিষয়টি জেনেছি এবং নিউমার্কেট থানাকে জানিয়েছি। থানার কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি দেখছে। তবে শিক্ষার্থীদের নিজেদের হাতে বিচার তুলে নেওয়া উচিত নয়।"

বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে স্থানীয় নিউমার্কেট থানার পুলিশ ও কলেজ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় আটক বাসগুলো নিয়ে যায় মালিকপক্ষ। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।

Header Ad

ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধের অবসান ঘটেছে, ঘোষণা দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘকাল ধরে চলমান ভারত ও চীনের সীমান্ত সমস্যা অবশেষে মিটে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষও ঘটেছে, কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি উন্নতির পথে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ভারতের গণমাধ্যম দ্য হিন্দু এবং আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা এএফপির রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশিত হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) সংক্রান্ত এলাকায় 'টহল বন্দোবস্ত' এবং সেনা মোতায়েনের বিষয়ে যে অচলাবস্থা ছিল, তা সমাধান করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। তাঁর এই সফরের প্রেক্ষিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি বলেন, "গত কয়েক সপ্তাহে ভারত ও চীনের কূটনীতিক এবং সামরিক মধ্যস্থতাকারীরা বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করেছেন। এই আলোচনার ফলস্বরূপ, সীমান্তে বিরোধের বিষয়গুলো সমাধান হয়েছে।"

তিনি আরও জানান, দুই দেশ এখন 'পরবর্তী উদ্যোগ' নিতে শুরু করবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও এই চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, "২০২০ সালের আগে সীমান্তে যে ধরনের টহল কার্যক্রম পরিচালনা করা হত, তা আবারও শুরু হবে।"

যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই চুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি, তবে জয়শঙ্কর বলেছেন, "২০২০ সালের পরিস্থিতিতে ফিরে গেছি, যার মাধ্যমে আমি বলতে পারি যে চীনের সঙ্গে সীমান্তে বিরোধের অবসান ঘটেছে।"

অতীতে, ভারত সরকার জানিয়েছিল যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি তখনই ফিরে আসবে, যখন চীন তাদের সেনা সরিয়ে নেবে। চীনের সেনা মোতায়েনের জবাবে ভারতও ওই এলাকায় সেনা মোতায়েন করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিকস সম্মেলন শুরুর এক দিন আগে এই ঘোষণায় মোদি ও শি জিনপিংয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মোদি ও শি'র দেখা হয়েছে ১৪ বার, কিন্তু ২০২২ সালে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘাতের পর মাত্র দুইবার তারা সাক্ষাৎ করেছেন।

এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লি জিয়ান জানিয়েছেন, "ভারত-চীন সীমান্তের বিরোধিতাপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধানে দুই দেশ একমত হয়েছে।"

Header Ad

টাকা না পেয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের গেটে তালা দিল গ্রাহকরা

ছবি: সংগৃহীত

টাকা না পাওয়ায় চাঁদপুরের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) শাখায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকাল থেকে শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার ফয়সাল শপিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত ব্যাংকটিতে টাকা উত্তোলনের জন্য গ্রাহকরা জড়ো হন। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লেনদেন বন্ধ রাখলে উত্তেজিত গ্রাহকরা প্রবেশদ্বারে তালা লাগিয়ে দেন।

পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়। চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া উপস্থিত হয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

চাঁদপুর জেলা শাখায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ২২ হাজার গ্রাহক রয়েছে, কিন্তু বর্তমানে ১০০ জন গ্রাহকেরও টাকা দিতে পারছে না ব্যাংক। জেলার অন্যান্য শাখাগুলোর পরিস্থিতিও একই রকম। ব্যাংকের টাকা সংকটের কারণে গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী সেবা পাচ্ছেন না, যা তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

সরকার পতনের পর থেকেই ব্যাংকটির লেনদেনে জটিলতা শুরু হয় এবং তা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বর্তমানে ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। তবে টাকার সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ঠিকমতো সেবা দিতে পারছে না।

অনেক গ্রাহক জানান, দুই সপ্তাহ ধরে টাকা তোলার জন্য ব্যাংকে এসে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রতিবারই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের পরবর্তী সপ্তাহে আসার পরামর্শ দেন, কিন্তু টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হয় না। আজকের দিনেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাংকের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন।

ব্যাংকের ম্যানেজার মো. মাহবুব আলম জানান, রোববার ও সোমবার সীমিত আকারে লেনদেন চলছিল, তবে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। আজ সম্পূর্ণ লেনদেন বন্ধ থাকায় গ্রাহকরা তালা মেরেছেন। তিনি আরও জানান, প্রধান কার্যালয় থেকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে, যা দিয়ে আপাতত গ্রাহকদের ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া সম্ভব হবে।

ওসি মো. বাহার মিয়া বলেন, "ব্যাংকে ভিড় জমেছে এবং গ্রাহকরা তাদের টাকা পাচ্ছেন না, এমন খবর পেয়ে আমরা টহল পার্টি পাঠাই। পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে আমি নিজে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি এবং ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে কিছু টাকার ব্যবস্থা করি। আশা করছি, আপাতত গ্রাহকদের শান্ত করা যাবে।"

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

হাফ ভাড়া না নেওয়ায় ৩০ বাস আটকেছে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা
ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধের অবসান ঘটেছে, ঘোষণা দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
টাকা না পেয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের গেটে তালা দিল গ্রাহকরা
২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম
আন্দোলনে মাথায় গুলিবিদ্ধ শিশু মুসা উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলো
বিরামপুরে এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইনের এ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত
১৭ প্রতিষ্ঠানসহ সালমান পরিবারের নথি তলবে ৭০ সংস্থায় চিঠি
আন্ডারপাসের দাবিতে ঢাকা-যমুনা সেতু মহাসড়ক অবরোধ, যানবাহনের দীর্ঘলাইন
নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আইনি লড়াইয়ের পথ খুলল
এসআই অব্যাহতির পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ক্ষমা চেয়ে আদালতে ব্যারিস্টার সুমন বললেন, ‘আমি খুব সরি স্যার’
ফেসবুক লাইভে মিথ্যা আতঙ্ক ছড়ালেন সাদিয়া আয়মান
পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন ১৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড
১৬ বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি করেছেন শাজাহান খান
নারায়ণগঞ্জে আসামির ছুরিকাঘাতে পুলিশ সদস্য আহত
ব্যারিস্টার সুমন ৫ দিনের রিমান্ডে
লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরও ১৫৭ বাংলাদেশি
সারদায় পুলিশের ২৫০ ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে গনজমায়েতের ডাক
৩৬৯ দিন পর অবশেষে মাঠে ফিরলেন নেইমার