জাতীয়

বর্ণিল পরিবেশনায় প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ


নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ :১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:১৬ এএম

বর্ণিল পরিবেশনায় প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ
ছবি : সংগৃহীত

অ্যারোবেটিক এয়ার শো, উড়ন্ত হেলিকপ্টার থেকে রজ্জু বেয়ে অবতরণ, প্যারাসুট জাম্প ও চলন্ত যান্ত্রিক সামরিক কন্টিনজেন্টের সালাম গ্রহণসহ সামরিক নানা রণকৌশলের বর্ণিল পরিবেশনায় শেষ হলো প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ। এবারের এই আয়োজনে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজে অংশ নেয় পাঁচটি দেশ। দেশগুলো হলো- ভুটান, ভারত, রাশিয়া, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র।

আজ বৃহষ্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সকাল সাড়ে ১০টায় এ কুচকাওয়াজ শুরু হয়। শেষ হয় ১২টা ৪৫ মিনিটে। এতে অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপি এবং কারারক্ষীরা।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। বর্ণিল এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে যোগ দিতে ঢাকা সফরে আসা ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও কুচকাওয়াজে গেস্ট অব অনার হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

বিজয় দিবস কুচকাওয়াজে প্যারেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ৯ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক। উপ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা। কুচকাওয়াজে বিভিন্ন বাহিনীর সর্বমোট ২৩ টি কন্টিনজেন্ট এবং বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভুটান, ভারত এবং রাশিয়ার ৩টি কন্টিনজেন্ট ও মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক দল মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে সালাম প্রদান করেন।

উল্লেখ্য যে, এই বারই প্রথমবারের মতো কুচকাওয়াজে ৫টি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের কন্টিনজেন্ট ও পর্যবেক্ষক দল অংশগ্রহণ করে। কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী সম্মিলিত যান্ত্রিক বহরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ৯ আর্টিলারি ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাজেদুল ইসলাম। জাতিসংঘ কন্টিনজেন্ট ও বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহের কন্টিনজেন্টের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ৮১ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শাহান সাদি।

কুচকাওয়াজের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মুর‌্যাল ও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ’র প্রতিকৃতি প্রদর্শনীর পরই সুসজ্জিত বাহনে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে সালাম প্রদান করেন। চিত্তাকর্ষক যান্ত্রিক বহরে সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সংবলিত আকর্ষণীয় ও সুসজ্জিত গাড়ী বহর অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও, আর্মি এভিয়েশন, নেভাল এভিয়েশন ও র‌্যাব ফোর্সেস এর ফ্লাইপাষ্ট, দুঃসাহসিক প্যারা কমান্ডো সদস্যদের ফ্রিফল জাম্প এবং hi Special Patrol Insertion and Extraction (SPIE) অপারেশন ডিসপ্লে কুচকাওয়াজকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।

যান্ত্রিক বহরের প্রদর্শনীর পরপরই শুরু হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এক মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট ও এরোবেটিক ডিসপ্লে । বিমান বাহিনীর ফ্লাইপাস্টের নেতৃত্ব দেন এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।

এর আগে মহান বিজয় দিবসসের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তখন রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক উপস্থিত ছিলেন।

তাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কুচকাওয়াজ শেষে মহান বিজয় দিবস ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ দিবস উপলক্ষে গণভবনে ডাক টিকিট অবমুক্ত করবেন সরকার প্রধান। একই সঙ্গে দুপুরে বাংলাদেশ পর্যটন ব্র্যান্ড নেম ‘মুজিব’স বাংলাদেশ’ লোগো উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ পরিচালনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল সাড়ে ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান।

উল্লেখ, গত বছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও বিজয়ের ৪৯তম ১৬ ডিসেম্বরে বৈশ্বিক মহামারি করোনা থাকায় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসতে পারেননি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

এনএইচ/টিটি