জাতীয়

বউ পেটানোয় শীর্ষে বরিশাল ও খুলনার মানুষ: পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ


ঢাকাপ্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশ :০৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৪ পিএম

বউ পেটানোয় শীর্ষে বরিশাল ও খুলনার মানুষ: পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA)-এর ২০২৪ সালের জরিপে উঠে এসেছে নারীদের প্রতি সহিংসতা বাংলাদেশের একটি ভয়াবহ বাস্তবতা। পরিবারে ঘরে থাকা সুরক্ষার পরিবর্তে অনেকে এসে দাঁড়াচ্ছে নির্যাতনের ভয়াবহতায়। 

জরিপে দেখা গেছে, দেশের প্রতিটি বিভাগে নারী জীবনের কোনো না কোনো সময় শারীরিক, মানসিক, যৌন বা অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর হাতেই।

জরিপ অনুযায়ী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতার হার সবচেয়ে বেশি। বরিশালে ৮২ শতাংশ এবং খুলনায় ৮১ শতাংশ নারী তাদের জীবনকালে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি পাঁচ নারীর মধ্যে চারজনেরও বেশি এমন সহিংসতার অভিজ্ঞতা বয়ে বেড়াচ্ছেন, যা সমাজে নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে।

যেখানে ঘর হওয়ার কথা ছিল নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল, ভালোবাসার পরিবেশ—সেই ঘরই পরিণত হয়েছে নীরব এক কারাগারে। যেখানে একজন নারী যিনি সমাজে মা, স্ত্রী, কর্মজীবী বা শিক্ষার্থী হিসেবে সম্মান পান, সেখানে ঘরে ফিরে তাঁর সেই পরিচয়ের কোনো মর্যাদা থাকে না। বরং তিনি সহ্য করেন অব্যাহত নির্যাতন, যা অনেক সময় তাকে পরিণত করে চুপচাপ সহ্য করে যাওয়া এক ‘শিকারী’তে।

বরিশাল ও খুলনার পর চট্টগ্রামে ৭৬ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭৫, রাজশাহীতে প্রায় ৭৫ এবং রংপুরে ৭৪ শতাংশ নারী ঘরোয়া সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এমনকি তুলনামূলকভাবে ‘কম’ সহিংসতার অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত সিলেট ও ঢাকা বিভাগেও যথাক্রমে ৭৩ শতাংশ নারী এমন সহিংসতার শিকার। অর্থাৎ দেশের কোনো বিভাগেই এই হার ৭০ শতাংশের নিচে নামেনি।

জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশের নারীদের জীবদ্দশায় সহিংসতার গড় হার ৭০ শতাংশ। শুধু গত এক বছরেই ৪১ শতাংশ নারী এই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় এই সংজ্ঞা কিছুটা সম্প্রসারিত করলে চিত্র আরও ভয়াবহ—জীবদ্দশায় ৭৬ শতাংশ নারী এবং গত বছরে ৪৯ শতাংশ নারী পারিবারিক সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে—প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলিতে নারীদের প্রতি সহিংসতার হার আরও বেশি। ঘরের ছাদ যেমন হারায়, তেমনি নারীর নিরাপত্তা, সম্মান ও মানবাধিকারও সংকটে পড়ে। দুর্যোগের সময় নারীদের লড়তে হয় কেবল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে নয়, বরং ঘরের ভেতরের অমানবিকতা, দারিদ্র্যের চাপ, বাস্তুচ্যুতি এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধেও।

এই জরিপ কেবল সংখ্যা নয়—এটি আমাদের সমাজের একটি অন্ধকার চিত্র। যেখানে ঘর হয়ে উঠেছে নারীর জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ স্থান, প্রিয়জন হয়ে উঠেছে নির্যাতক। এই বাস্তবতা থেকে মুক্তি পেতে হলে জরুরি নারী-অধিকার রক্ষা আইন শক্তিশালী করা, জনসচেতনতা বাড়ানো এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।