শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫ | ১৩ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

কিশোরীদের দেখা একাত্তরের ভয়াবহ স্মৃতি


মধুবন্তী ডায়েসের গল্পঃ

[ ১] আমি মধুবন্তী, সবাই এই নামে চিনেন। পুরো নাম মধুবন্তী ডায়েস। আমার আব্বার আসল নাম আশরাফ উদ্দিন আহম্মেদ। আমার দাদা পর্যন্ত মুসলমান ছিল। আমার আব্বা আর ছোট কাকা খ্রিস্টান হয়ে যায়। কারণটা আমার সঠিক জানা নেই। কেউ কেউ বলে, মা খ্রিস্টান ছিল তো, মাকে ভালোবেসে আব্বা খ্রিস্টান হয়েছে। তা না হয় মানলাম। কিন্তু ছোট কাকা কেন খ্রিস্টান হলেন। খ্রিস্টান হওয়ার পর নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন আশরাফ কুমার খন্দকার। আমরা সাত ভাই বোন। তিন বোন আর চার ভাই। আমিই সবার ছোট।

আমার আব্বা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগেই দেশ থেকে চলে আসেন। প্রথমে আব্বা একা আসেন। তারপর আস্তে আস্তে আমার বড় ভাইদেরকে নিয়ে যায়। আর যুদ্ধের তিন চার বছর পর আমরা সবাই চলে আসি। আমার দাদা-দাদীমাকেও আনার জন্য অনেক চেস্টা করেছিল আব্বা। কিন্তু তারা কিছুতেই আসেননি। আব্বা খ্রিস্টান হওয়ার পরও দাদার বাড়িতে যোগাযোগ ছিল। আব্বা যাওয়া আসা করতেন। কিন্তু দাদা দাদীরা কেউ আব্বার কাছে কখনোই আসেননি। আমার দাদা-দাদীমা খুব কস্ট পেয়েছিলেন। এগুলো নিয়ে অনেক কিছু হয়েছিল। আমার মনে হয় সেই দু:খে অভিমানে আব্বা দেশ ছেড়ে চলে এসেছিলেন। দাদা-দাদীমার কস্ট পাওয়ার মতন যথেস্ট কারণ তো আছেই। সন্তান বড় হয়ে অনেক কিছুই করতে পারে। কিন্তু এমন কিছু করা উচিৎ নয় যাতে বংশ, মা বাবার মাথা নিচু হয়ে যায় সমাজে এবং বড় কস্ট পেতে পারে। আমি মনে করি আমার আব্বার দোষ। এমন কিছু ঘটেনি যে, নিজের বাপ দাদার ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহন করতে হবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমার বয়স কতই বা হবে, ১৩ কি ১৪ বছর। এর বেশি তো আর না। যখন দেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছে; সারা দেশের মানুষ আশ্রয়হীন অসহায় হয়ে পড়েছে; ঘরে খাবার নেই, পরনে কাপড় নেই; মেয়েদের মান ইজ্জত নিয়ে রাস্তা-ঘাটে, ঘরে-বাহিরে কোথাও কোন নিরাপদ আশ্রয় ছিল না; সবাই যার যার জীবন বাঁচানো নিয়ে ব্যস্ত; দিন নেই, রাত নেই মিলিটারিদের চোখে পড়লেই একটা গুলির শব্দ আর পরে মরে যাওয়া; সেই দুর্দিনে, অসময়ে আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়ি। আমাদের পাশে কেউ নেই। কোথায় যাব, কি খাব, কিভাবে থাকবো, আশ্রয়হীন এত বড় একটা পরিবার। তখন সৃষ্টিকর্তার মতন একদিন গিয়ে দাদা উপস্থিত হলেন আমাদের বাড়িতে। সেইদিনের আগে কোন দিন দাদাকে দেখিনি, নাম শুনেছি। যখন দাদা গিয়ে তার নাম বললেন, আমরা সবাই কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলাম। তখন বুঝতে পারিনি, কেন গিয়েছে, ভাল না খারাপ উদ্দেশ্য ছিল। আমরা ভয় পাব, না আনন্দিত হব। দাদা তার পরিচয় দিয়ে মাকে বললেন, দেশের পরিস্থিতি খুব বেশি খারাপ হয়ে পড়েছে। এখানে তোমরা মোটেও নিরাপদ না। তোমরা আমার সঙ্গে চল। খুব বেশি প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া অন্য কিছু নিবে না। রাস্তায় কোন গাড়ি-ঘোড়া নেই। হেঁটে যেতে হবে। আর হাঁটাও নিরাপদ না। আমি যে এসেছি, খুব খারাপ অবস্থা দেখে এসেছি।

সেইদিন দাদাকে আমার সৃষ্টিকর্তা মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল সৃষ্টিকর্তা বুঝি নিজে দাদাকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। দাদার এক কথায় আমরা চলে গিয়েছিলাম দাদার সঙ্গে। তখন বুঝতে পারিনি। পরে আস্তে আস্তে বুঝতে পেরেছি। সন্তানের জন্য মা বাবা সবই করতে পারে। যুদ্ধের পুরো সময় দাদা আমাদেরকে ছায়া দিয়ে, মায়া দিয়ে রেখেছেন। দাদীমাও কম করেননি। যুদ্ধ শেষ হলে মা আমাদের বাসায় এসেছিল। এসে দেখে সেই বড়িঘরের কোন অস্তিত্বই নেই। মা আবার ফিরে যায়। আমেরিকায় আসা পর্যন্ত আমরা দাদা দাদীমার সঙ্গে তাদের বাড়িতে ছিলাম। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় সেই সময়টুকু যতদিন দাদা দাদীর সঙ্গে ছিলাম। আব্বাকেও তো কখনো সেইভাবে কাছে পাইনি। যুদ্ধের আগে দুই একবার মনে হয় এসেছিল কিছুদিনের জন্য। তখন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা থেকে শুরু করে আব্বার কত রকমের কত কাজ ছিল। আব্বার সঙ্গে যেহেতু থাকতাম না সেহেতু আব্বার সঙ্গে তেমন একটা সম্পর্কও আমার ছিল না। আর আব্বার সময় বা সুযোগ ছিল না আলাদা করে আমাকে সময় দেয়ার। তাই আব্বার প্রতি তেমন কোন টানও ছিল না। দাদা-দাদীমার কাছ থেকে আমি যা পেয়েছি, তা আমি জীবনে কারো কাছ থেকে পাইনি আর পাবো-ও না। তাদের কাছ থেকে শিখেছি, দেখেছি, কিভাবে মানুষকে ভালবাসতে হয়, ভাল রাখতে হয় এবং সত্যিকারের মানুষের মতন মানুষ হওয়া যায়। দাদা-দাদীমা মারা যাওয়ার পর আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।

আমরা ঢাকায় থাকতাম। আর দাদার বাড়ি ছিল খুলনায়। আমরা ঢাকা থেকে খুলনা যেতে সময় লেগেছিল পাঁচ দিন। কোন গাড়ি তখন চলছে না। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমরা কোথায় যাব কিভাবে যাব, এসব নিয়ে চিন্তা করছেন। তখন তো মা ছাড়া আর কেউ নেই। তাই মা হিমশিম খাচ্ছে। কি করবো, কি করা উচিত। মা কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেন নি। ঘরের ভেতর বসে বসে শুধু কান্নাকাটি করতো সবাইকে নিয়ে। চার দিন শুধু গুলির শব্দ। মানুষের আহাজারি। ভয়ে আতংকে মিলিটারিদের ভয়ে রাস্তায় কুকুরও যেত না। আকাশে পাখিও উড়তো না। ভোরে মুরগিও ডাকতো না। শুধু গুলির শব্দ আর গুলির শব্দ। এমন অবস্থায় এতগুলো মানুষ নিয়ে ঘর থেকে বাহির হওয়ার সাহস পায়নি মা । দাদা এসে বলার পর মায়ের মনে হয় দেহে জান ফিরে এল। ঢাকা থেকে আমরা রাত খুব সম্ভব এগারটার দিকে রওনা দিয়েছিলাম। হাঁটা না শুধু দৌড়াতাম। দাদা সঙ্গে করে গ্রাম থেকে আরও দুইজনকে নিয়ে এসেছিল । ঢাকা শহর ছাড়ার পর আমরা গরুর গাড়ী আর পায়ে হেঁটে পাঁচ দিনে গিয়ে পৌঁছালাম দাদার বাড়িতে। রাস্তায় দুই জায়গায় মিলিটারিদের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। তখন তো সব জায়গায়ই মিলিটারি ছিল। দ্বিতীয় দিন যখন হাঁটছি, হাঁটতে হাঁটতে একটা নদীর কাছে চলে যাই। নদীর পার দিয়ে হাঁটছি। হঠাৎ নদীর দিকে চোখ পড়তেই দেখি, পানি কেমন যেন লাল। মনে মনে ভাবছি পানি লাল কেন। আবার তাকালাম আমার দেখতে মনে হয় ভুল হয়েছে। অনেকক্ষণ যাবৎ হাঁটছি তো, সারা শরীর জুড়ে ক্লান্তি, তাই ঝাপসা দেখছি। আবার দেখি লাল। তারপর চোখে ডলতে ডলতে ভালভাবে পরিস্কার করে তাকিয়ে দেখি, না, আমি যা দেখছি তা ঠিকই, পানি-ই লাল। আমি ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি। তখন কে যেন বলছে, কি হয়েছে। আমি বলি, পানির দিকে তাকাও, নদীর পানি দেখ কেমন। তখন সবাই দাঁড়িয়ে। দাদীতো বুঝে ফেলেছেন ঘটনা কি। দাদা বলছেন, দাঁড়াও, কেউ হেঁটো না। সবাই দাঁড়িয়ে পড়েছি। আমাদের সঙ্গে আরও ২৫/৩০ জন হবে। তারা কে বা কারা, কেউ কাউকে চিনে না। অথচ আমরা একই সঙ্গে যাচ্ছি। কারো সঙ্গে কোন কথাও হচ্ছে না।

দাদা বাড়িতে চার পাশটা ভাল করে দেখলেন। দেখেন, সামনে একটা ঝোপঝাড়ের মতন আছে। তা দেখে দাদা বললেন, তোমরা ঐ ঝুপের ভেতরে গিয়ে বস, আমি পরিস্থিতিটা দেখে আসি। আমরা নদীর পারে বসে আছি। দেখি, রক্তে নদী লাল হয়ে যাচ্ছে। অল্প একটু পরেই দেখি একটা লাশ ভেসে আসছে। তারপর দেখি, লাশের পর লাশ ভেসে আসছে। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সব বয়সের লাশ। এসব দেখে নিজের চোখকে বিশ^াস করতে পারছি না যে এত লাশ। আহা! লাশের পর লাশ। নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে একবার ভাসছে, আবার ডুবছে। এক এক করে বয়ে যাচ্ছে। জানিনা কোথায় গিয়ে থেমেছিল। কি হয়েছিল সেই লাশগুলির। নদীর মাছে খেয়েছিল, না কুমিরে। না নদীর কিনারে গিয়ে আটকেছিল, না কোন শিয়াল, কুকুরে খেয়েছিল। না কেউ তাদের লাশ দেখে চিনতে পেরে তুলে মাটির নীচে রেখেছিল। কত লাশ ছিল তাও জানিনা, জানিনা কি ছিল তাদের অপরাধ। কি কারণে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল।

এসব দেখে চোখ যেমন নদীর দিকে আটকেছিল । ঠিক তেমনি পা আটকে গিয়েছিল মাটিতে। যতই হাঁটছি না কেন, পা আর চলছে না। পথ আর ফুরাচ্ছে না। আর এদিকে সবাই তাড়া দিচ্ছে হাঁটার জন্য। আমরা ৩০/৩৫ জন লোক হাঁটছি, কোন কথা নেই, শুধু একটাই শব্দ, তাড়াতাড়ি হাঁট, তাড়াতাড়ি, সামনে বিপদ। একটা নিরাপদ আশ্রয় নিতে হবে। আরও কিছুদূর যাওয়ার পর দূরে দেখা যাচ্ছে একজন লোক দৌড়াচ্ছে, মনে হচ্ছে কিছু একটা ইশারা দিচ্ছে। কিন্তু আমরা কেউই বুঝতে পারছি না। দাদা বুঝতে পেরেছে মনে হয়। দাদা আবার হাঁটা থামিয়ে দিয়েছে। আমরা সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম। ঐ লোকটি তার দৌড়ের গতি আরও বাড়িয়ে দিয়ে ছুটে আসছে। কাছাকাছি এসে বলছে, তোমরা সামনের দিকে যেও না। সামনে মহা বিপদ। মিলিটারি এদিকে আসছে। তোমাদেরকে পালাতে হবে। কিন্তু কোথায় পালাবো। তখন সামনেই একটা জঙ্গলের ভেতরে আমরা সবাই চলে যাই। সারা দিন সেই জঙ্গলের ভেতরেই ছিলাম। সন্ধ্যার সময় জঙ্গল থেকে বাহির হয়ে আবার হাঁটতে থাকি। ঐ এলাকায় কোন ঘরবাড়ি ছিল না। আরও তিন চার ঘন্টা হাঁটার পর দুই একজন লোক দেখা গিয়েছে। দাদা তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, সামনে জঙ্গল, কোন পথ-ঘাট নেই। নদী পার হতে হবে। পরে আবার হাঁটার রাস্তা আছে। সামনেই নদীর ঘাট আছে। গেলাম ঘাট পর্যন্ত। ঘাটে গিয়ে দেখি শত শত লোক পার হচ্ছে। ছোট ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে পার করছে কয়েকজন যুবক ছেলে। নৌকায় কোন বৈঠা নেই, লাইন ধরে পার করছেন তারা। আমরা পার হতে হতে ভোর হয়ে গিয়েছে।

 লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক

Header Ad
Header Ad

দেশজুড়ে রথযাত্রা উৎসব শুরু আজ

ছবি: সংগৃহীত

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু আজ। সনাতনী রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা।

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আনন্দমুখর পরিবেশে ৯ দিনব্যাপী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ৫ জুলাই বিকেল ৩টায় উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এই উৎসব শেষ হবে। এ বছর ঢাকাসহ সারা দেশে ইসকনের ১২৮টি মন্দির ও আশ্রমে এদিন রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, জগন্নাথদেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগৎ হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। জীবরূপে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না। এই বিশ্বাস থেকেই রথের উপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমূর্তি রেখে রথ নিয়ে যাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

শুভ রথযাত্রা উপলক্ষ্যে ঢাকায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) আয়োজিত ৯ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান মালায় রয়েছে, হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামানায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, পদাবলী কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ, ধর্মীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়ন।

ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী জানান, ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমে শুক্রবার সকাল ৮টায় বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে শুভ রথযাত্রা মহোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে দুপুর দেড়টায় আলোচনা সভা শেষে বিকেল ৩টায় রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করা হবে।

ঢাকায় রথযাত্রার রুট উল্লেখ করে তিনি জানান, স্বামীবাগ আশ্রম থেকে রথযাত্রা শুরু হয়ে জয়কালী মন্দির, ইত্তেফাক মোড়, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট, পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট মাজার, দোয়েল চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জগন্নাথ হল, পলাশী মোড় হয়ে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে পৌঁছবে। পরে আগামী ৫ জুলাই বিকেল ৩টায় উল্টোরথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা একই পথে বিপরীত দিক থেকে অর্থাৎ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে স্বামীবাগ আশ্রমে আনা হবে।

এছাড়া পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের জগন্নাথ জিউ ঠাকুর মন্দির, জয়কালী রোডের রামসীতা মন্দির এবং শাঁখারীবাজার একনাম কমিটিসহ রাজধানীর অন্যান্য মন্দির ও দেশের বিভিন্ন মন্দিরেও রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

Header Ad
Header Ad

ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ বিলিয়ন ডলারের গোপন প্রস্তাব

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের সঙ্গে সমঝোতায় গোপনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনা এবং মার্কিনদের কথামতো চালাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন নানাভাবে চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে চারটি সূত্র সিএনএনকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র মতে, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে বেসামরিক-শক্তি উৎপাদনকারী পারমাণবিক কর্মসূচি গড়ে তুলতে সহায়তা করার জন্য ৩০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত অর্থ প্রদান, নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা এবং বিশ্বব্যাপী ইরানের ফ্রিজ হওয়া তহবিলের বিলিয়ন ডলার মুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা করেছে। আর এ সবই করা হচ্ছে অত্যন্ত গোপনে।

যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের মূল খেলোয়াড়রা গত দুই সপ্তাহে ইরান ও ইসরায়েলে সামরিক হামলার মধ্যেও পর্দার আড়ালে ইরানিদের সঙ্গে কথা বলেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর এই সপ্তাহেও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, বেশ কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। এগুলো প্রাথমিক ও ক্রমবর্ধমান। তবে একটি অ-আলোচনাযোগ্য শর্ত বহাল রয়েছে। তা হলো, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শূন্য হতে হবে। যদিও ইরান ধারাবাহিকভাবে বলেছে, তাদের প্রয়োজনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করা হচ্ছে তবুও চাপ প্রয়োগকারীরা এ শর্তে ছাড় দিতে নারাজ। দুটি সূত্র সিএনএনকে অন্তত একটি প্রাথমিক খসড়া প্রস্তাব সরবরাহ করেছে। এতে ইরানের জন্য বেশ কয়েকটি প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং উপসাগরীয় অংশীদারদের মধ্যে একটি গোপন বৈঠকে কিছু বিবরণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। মার্কিন সামরিক হামলার আগের দিন ছিল কয়েক ঘণ্টার সেই বৈঠক সম্পর্কে জানা দুটি সূত্র সিএনএনকে এসব নিশ্চিত করেছে।

আলোচিত শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইরানের একটি নতুন অ-সমৃদ্ধকরণ পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য আনুমানিক ২০-৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এ কেন্দ্র বেসামরিক শক্তি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং প্রস্তাব সম্পর্কে জানা সূত্রগুলো সিএনএনকে জানিয়েছে, অর্থ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসবে না; বরং আরব অংশীদাররা এই বিল পরিশোধ করার পথ খোঁজা হচ্ছে। ইরানের পারমাণবিক শক্তি সুবিধাগুলোতে বিনিয়োগের বিষয়টি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পারমাণবিক আলোচনার পূর্ববর্তী রাউন্ডগুলোতেও আলোচিত হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনাগুলোর নেতৃত্ব দিতে ইচ্ছুক। পারমাণবিক কর্মসূচি গড়ে তুলতে কারও না কারও অর্থ প্রদান করতে হবে। তবে আমরা সেই প্রতিশ্রুতি দেব না।

অন্যান্য প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে ইরানের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা অপসারণের সম্ভাবনা এবং ইরানকে ৬ বিলিয়ন ডলার ফ্রিজ সম্পদ ব্যবহার করতে দেওয়া, যা বর্তমানে বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে এবং তারা বহু বছর তা অবাধে ব্যবহার করতে পারছে না।

সূত্র সিএনএনকে বলেছে, বিভিন্ন মানুষের দ্বারা অনেক ধারণা উত্থাপিত হচ্ছে এবং তাদের অনেকেই সৃজনশীল হওয়ার চেষ্টা করছে। এখানে কী ঘটবে, তা সম্পূর্ণরূপে অনিশ্চিত। ইসরায়েলি ও মার্কিন হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে প্রথম পাঁচ রাউন্ডের আলোচনা সম্পর্কে জানা একটি পৃথক সূত্রও একই তথ্য দিয়েছে।

উইটকফ বুধবার সিএনবিসিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি শান্তি চুক্তি চায়। সব প্রস্তাব ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র প্রাপ্তি থেকে বিরত রাখার জন্য নকশা করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে , ইরান শান্তিপূর্ণ বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি চালু রাখতে পারে। তবে সেই কর্মসূচির জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না। পরিবর্তে ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম স্বল্প মাত্রায় আমদানি করতে পারবে। কতটুকু খরচ হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষকদের নিয়মিত জানাতে হবে।

উইটকফ বলেন, এখন ইরানের সঙ্গে আলোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমরা কীভাবে ইরানকে উন্নত বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু রাখার সুযোগ দেব, সেটিই মুখ্য।

 

Header Ad
Header Ad

প্রত্যেক জেলায় হাসপাতালের মত সিনেমা হলও দরকার: জাহিদ হাসান

ছবি: সংগৃহীত

‘প্রত্যেকটা জেলায় শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য যেমন হাসপাতাল আছে তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সিনেমা হল থাকা দরকার। সুস্থ বিনোদন থাকলে মানুষ নেশা, হানাহানি ও মব জাস্টিস থেকে দূরে থাকবে। আমাদের যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান দরকার তেমনি বিনোদনের জন্য সিনেমা হল দরকার।’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘উৎসব’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী শেষে কথাগুলো বলছিলেন নন্দিত অভিনেতা জাহিদ হাসান।

‘উৎসব’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। শুটিংয়ের বহুদিন পেরিয়ে গেলেও জাহাঙ্গীর চরিত্রের মধ্যে থেকে এখনো বের হতে পারেননি বলেন জানালেন এই অভিনেতা।

 

ছবি: সংগৃহীত

জাহিদ হাসান বলেন, ‘এখনো আমি এই চরিত্রটার মধ্যে ডুবে আছি। সিনেমার আমার চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। আসলে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে জাহাঙ্গীর লুকিয়ে আছে। কারণ, আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের মাঝে হিরোইজম আছে, ভিলেন আছে। আছে উপলব্ধি করার ক্ষমতা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের সেই রিয়েলাইজেশনের সময়টা আছে। কখন মৃত্যু হয় আমরা জানি না। এই রিয়েলাইজ যদি আমাদের মধ্যে থাকে তাহলে আজ আমরা যারা জাহাঙ্গীরের মত আছি, কাল আমরা ভালো হয়ে যাবো।’

ঈদের সিনেমা মানেই এখন যেন অ্যাকশন অথবা থ্রিলার। গত কয়েক বছরে ঈদে বাজিমাত করা সিনেমাগুলোর দিকে তাকালে এমনটাই মনে হতে পারে। সেসব থেকে বেরিয়ে হাস্যরস পরিবার এবং সম্পর্কের গল্পে এবার ঈদে বাজিমাত করেছে ‘উৎসব’। এই সফলতার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করলেন প্রত্যেক শিল্পীর সততাকে।

জাহিদ হাসানের কথায়, ‘প্রডাক্টশন বয় থেকে শুরু করে এই সিনেমার সঙ্গে আমরা যারা যুক্ত ছিলাম তারা প্রত্যেকেই অনেক সৎ ছিলাম। অভিনয় নিয়ে কোনো অসৎ অবস্থার মধ্যে আমরা যাইনি। এটাই মনে হয় আমাদের সফলতার বড় বিষয়। এই সিনেমার প্রত্যেকটি দৃশ্যের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে।’

করোনা মহামারির পর অভিনয়ে খুব একটা দেখা যায়নি জাহিদ হাসানকে। নির্মাতাদের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে খুব একটা কথা হয়নি তার। কারোনার পর ‘উৎসব’-ই তার প্রথম সিনেমা। তার ভাষ্য, ‘করোনার পর খুব একটা অভিনয় করা হয়নি। আমাকে অভিনয়ে নেওয়া বা না নেওয়াটা নির্মাতাদের দায়িত্ব। বলতে গেলে গত কয়েকবছর সেভাবে সুযোগও আসেনি। ‘উৎসব’ সিনেমার মধ্যে সেই সুযোগটা এলো। অভিনয় করলাম। দর্শক প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝেছি অন্তত ফেল করিনি।’

 

ছবি: সংগৃহীত

সিনেমার হলের সংখ্যা কম হওয়ায় দেশের সিনেমা সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছচ্ছে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন জাহিদ হাসান। সেইসঙ্গে জেলা প্রশাসকদের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।

জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। আমার বোন ফোন করে বললেন এখানে তো সিনেমা হলে নেই। তাই আমরা সিনেমা দেখতে পারছি না। এই কথা শুনে কষ্ট পেয়েছি। এটা সত্য সিরাজগঞ্জের মত দেশের অনেক বড় শহরে সিনেমা হল নেই। জেলা প্রশাসকসহ দায়িত্বশীল পর্যায়ে যারা আছে তাদের সবাইকে অনুরোধ করবো তারা যেন প্রত্যেকটি জেলায় সিনেমা হলের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়ে তার বাস্তবায়ন করেন।’

তানিম নূর পরিচালিত ‘উৎসব’ সিনেমায়ি জাহিদ হাসান ছাড়াও অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, অপি করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আফসানা মিমি, তারিক আনাম খান, আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনার, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সৌম্য জ্যোতি, সাদিয়া আয়মান।

 

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশজুড়ে রথযাত্রা উৎসব শুরু আজ
ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ বিলিয়ন ডলারের গোপন প্রস্তাব
প্রত্যেক জেলায় হাসপাতালের মত সিনেমা হলও দরকার: জাহিদ হাসান
দেশে ফিরতে ইরান থেকে পাকিস্তান পৌঁছেছেন ২৮ বাংলাদেশি
যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির সাক্ষাৎ
খুলনায় বিএনপির নেতার বাড়ি ভাঙচুর, এসআই সুকান্ত চুয়াডাঙ্গায় গ্রেপ্তার
বিশেষ সুবিধা: ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের কার কত বেতন বাড়ছে
হানিয়া আমিরের সঙ্গে সিনেমায় অভিনয়, ভারতে দিলজিৎকে নিষিদ্ধের দাবি
আমি যদি ভবিষ্যতে শেখ হাসিনার মতো করি, আমারও পতন হবে: কাদের সিদ্দিকী
চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে জোট গড়ছে না বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামে থাকা ৯৭৭ স্থাপনার নাম পরিবর্তন
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে ‘পাবলিক’ রাখতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল
প্রকৃত ঘটনা জানলে হাসনাত আবদুল্লাহ তার ভুল বুঝতে পারবেন: দুদকের ডিজি
বিরামপুরে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস পালিত
এনসিপির তুষারের বিরুদ্ধে ‘আপত্তিকর আলাপ’সহ যত অভিযোগ নীলা ইসরাফিলের
২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ১৯ জনের করোনা শনাক্ত
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণ করে স্বৈরাচারকে রুখে দেয়া হয়েছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
নীরবতা ভেঙে খামেনি বললেন, ইরান ‘বিজয়’ অর্জন করেছে (ভিডিও)
সাংবাদিকতায় বাংলাদেশের মতো স্বাধীনতা উন্নত বিশ্বেও নাই: প্রেস সচিব
রংপুরে দেশীয় অস্ত্র ও অবৈধ মাদকসহ ২ যুবক গ্রেফতার