মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২
Dhaka Prokash

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুদের কারিকুলাম

আধুনিক শিক্ষাক্রমের প্রবক্তা Ralph Tylor ১৯৫৬ সালে শিক্ষাক্রমের একটি ধারণা দেন। এর মূল কথা হচেছ-‌‘শিক্ষার্থীদের সকল শিখন যা শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিদ্যালয়ের দ্বারা পরিকল্পিত ও পরিচালিত হয় তাই শিক্ষাক্রম।

(All the learning of students which is planned  and directed by the school to attain its educational goals.) তিনি চারটি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষাক্রমের ধারণাটি স্বচছ করার চেষ্টা করেন। প্রশ্নগুলো হচেছ (ক) শিক্ষা কি কি উদ্দেশ্য অর্জন করবে (খ) কী কী শিখন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিদ্যালয় উল্লেখিত উদ্দেশ্য অর্জন করবে (গ) এ সকল শিখণ অভিজ্ঞতা কী উপায়ে সংগঠন ও বিন্যাস করা যাবে এবং ( ঘ) উদ্দেশ্যগুলো অর্জিত হয়েছে কিনা তা কিভাবে যাচাই করা যাবে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-বিষয়বস্তু-সংগঠন-মূল্যায়ণ এই চারস্তর মডেল বলা হয়ে থাকে টেলরের ধারণাকে। ১৯৭০ সালে Mauritz Johnson বলেন, Ó“Curriculum is concerned not with what students will do in the learning situation, but with what they will learn as a consequence of what they do. Curriculum is concerned with results. ১৯৭৯সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) শিক্ষাক্রমের একটি ধারণ প্রদান করে। এতে শিখণ-শেখানো প্রক্রিয়াকে প্রাধ্যান্য দেয়া হয়। এখানে বলা হয়, A curriculum is an educational project defining: (a) the aims, goals and objectives of an educational action; (b) the ways, means and activities employed to achieve these goals; (c) the methods and instruments required to evaluate the success of the action.

বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর তৃতীয় বছর থেকেই অতি উচ্চাশা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ পাঁচ থেকে আট বছরে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় কিন্তু ২০২১ সালে এসেও আমরা এ শিক্ষার মেয়াদ অধিকাংশ দেশের মতো ষষ্ঠ শ্রেণিতেও উন্নীত করতে পারিনি। এটিকে কি বলব-বাস্তবতা না আমাদের অপারগতা? প্রাথমিক শিক্ষা এখনও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত থাকার ফলে মাধ্যমিক স্তরের ব্যাপ্তি হয়েছে সাত বছর। এখানে উল্লেখ্য যে, মাধ্যমিক স্তর কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। সেটিও আমরা আজ পর্যন্ত ঠিক করত পারিনি কারন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিকে আমরা কলেজ বানিয়ে আলাদা শিক্ষক্ষেত্র তৈরি করে রেখেছি। এগুলো শুধুমাত্র একাডেমিক সিদ্ধান্ত নয়, এর সাথে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একাডেমিক সিদ্ধান্ত যারা নিতে পারেন, মতামত দিতে পারেন তাদের তো আর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই বিষয়টি অবহেলিত কিংবা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যেই রয়ে গেছে। সাত বছরের মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর আবার তিনটি উপস্তরে বিভক্ত: নিম্ন মাধ্যমিক তিন বছর ( ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম), মধ্য-মাধ্যমিক ( আমরা একে শুধু ’ মাধ্যমিক নামে ডাকি। দু’বছর (৯ম-১০ম শ্রেণি) এবং উচচমাধ্যমিক ( ১১শ-১২শ শ্রেণি) দু’বছর। ’আধুনিক বিশ্বের সব দেশেই ১৭-১৮ বছরের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ এই তিনটি স্তরে বিন্যস্ত।

স্তুরগুলোর ব্যাপ্তিও প্রায় সমান (৫ থেকে ৭ বছর)। অষ্ট্রেলিয়ার মতো যেসব দেশে একশ্রেণির প্রাক-প্রাথমিক (যাকে ’জিরো ইয়ার’ নামে ডাকা হয়) শিক্ষা ছয় শ্রেনির প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একীভূতি, সেসব দেশে মোট সাত শ্রেণির প্রাথমিক, ছয় শ্রেণির মাধ্যমিক এবং পাঁচ-ছয় বছরের উচচশিক্ষার ব্যপ্তি (৭+৬+৫) একটি সুন্দর পিরামিডের আকৃতি ধারন করে। আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে যদি ষষ্ঠ শ্রেনি পর্যন্ত করা যেত, বাকী সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক তাহলে অনেক ঝামেলাই চুকে যেত। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আর একটি শ্রেণি বৃদ্ধি করলে শিক্ষকদের পাঠদানেও খুব একটা সমস্যা হতো না, ইনফ্রাস্ট্রকাচারেও খুব বেশি একটি খরচ হতো না। আর সপ্তম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তো আমাদের একটি মডেল ইতিমধ্যে আছে-যেতন ক্যাডেট কলেজ। এভাবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও তারপর উচচশিক্ষা-এই তিনটি স্তরে বিভক্ত করা হলে বৈশ্বিক শিক্ষাস্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ন হতো।

আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রান্তিক যোগ্যতা ধরা হয়েছিল ৪৯টি। এটিও সম্ভবত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাকে ধরে করা হয়েছিল। বর্তমানে এগুলোকে কমিয়ে ২৯টি করা হয়েছে। যেমন-(১) সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা/সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসস্থাপন, সকল সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসায় উদ্দীপ্ত হওয়া। (২) নিজ নিজ ধর্ম প্রবর্তকের আদর্শ এবং ধর্মীয় অনুশাসন অনুশীলনের মাধ্যমে নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন করা (৩) সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্দীপ্ত ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া। (৪) কল্পনা, কৌতুহল, সৃজনশীলতা ও বুদ্ধির বিকাশে আগ্রহী হওয়া (৫) সংগীত, চারু ও কারুকলা ইত্যাদির মাধ্যমে সৃজনশীলতা, সৌন্দয্যচেতনা, সুকুমারবৃত্তি ও নান্দনিকবোধের প্রকাশ এবং সৃজনশীলতার আনন্দ ও সৌন্দর্য উপভোগে সামর্থ অর্জন করা। (৬) প্রকৃতির নিয়ম গুলোর জানার মাধ্যমে বিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করা (৭) বিজ্ঞানের নীতি ও পদ্ধতি এবং যৌক্তিক চিন্তার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের অভ্যাস গঠন এবং বিজ্ঞানমনস্কতা অর্জন করা (৮) প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা ও প্রয়োগের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা (৯) বাংলাভাষার মৌলিক দক্ষতা অর্জন এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা (১০) বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষার মৌলিক দক্ষতা অর্জন ও ব্যবহার করা (১১) গাণিতিক ধারণা ও দক্ষতা অর্জন করা (১২) যৌক্তিক চিন্তার মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারা (১৩) মানবাধিকার, আন্তর্জাতিকতাবোধ, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বসংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া (১৪) স্বাধীন ও মুক্তচিন্তায় উৎসাহিত হওয়া এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুশীলন করা (১৫ নৈতিক ও সামাজিক গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে ভালো-মন্দের পার্থক্য নিরূপন এবং তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা (১৬) ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও সংরক্ষণে যত্মশীল হওয়া (১৭) বিশেষ চাহিতসম্পন্ন শিশুসহ নারী-পুরুষ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ন সহ-অবস্থানের মানসিকতা অর্জন করা। (১৮) অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে ত্যাগের মনোভাব অর্জন ও পরমসহিষ্ণুতা প্রদর্শন ও মানবিক গুণাবলী অর্জন করা। (১৯) সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং নিজের দায়িত্ত ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া। (২০) প্রতিকূলতা ও দুর্যোগ সম্পর্কে জানা এবং তা মোকাবেলায় দক্ষ ও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া। (২১) নিজের কাজ নিজে করা এবং শ্রমের মর্যাদা দেওয়া। (২২) প্রকৃতি, পরিবেশ ও বিশ্বজগত সম্পর্কে জানা ও ভালোবাসা এবং পরিবেশের উন্নয়ন ও সংরক্ষনে উদ্ধুদ্ধ হওয়া। (২৩) আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণে সচেষ্ট হওয়া। (২৪) মানুষের মৌলিক চাহিদা ও পরিবশের ওপর জনসংখ্যার প্রভাব এবং জনসম্পদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা। (২৫) শরীরচর্চা ও খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধন এবং নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করা। (২৬) নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের অভ্যাস গঠন করা। (২৭) মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত হওয়া এবং ত্যাগের মনোভাব গঠন ও দেশ গড়ার কাজে সক্রিয় অংশগ্রহন করা। (২৮) জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা এবং এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। (২৯) বাংলাদেশকে জানা ও ভালোবাসা। প্রশ্ন হচেছ আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাদান, মূল্যায়ন এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা কি এগুলো নিশ্চিত করতে পারছে।

প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির স্তরের একটি মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুদের পড়তে, লিখতে ও অনুসন্ধান করতে শেখাকে নিশ্চিত করা। শিশুরা যেহেতু এই স্তরেও ঠিকমতো মুক্ত পাঠের দক্ষতা অর্জন করেনা তাই এই স্তরের মূল শিখন-শেখানো সামগ্রী হচেছ শিক্ষক নির্দেশিকা। শিক্ষক নির্দেশিকাতে উল্লিখিত নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন খেলা, কাজ ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখন যোগ্যতাসমূহ অর্জন করবে। বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক নির্দেশিকার পাশাপাশি শিক্ষার্র্থীদের জন্য তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ওয়ার্কবুক, পাঠ্যপুস্তক, সম্পূরক পঠন-সামগ্রী, চার্ট ও কার্ডের উন্নয়নসহ খেলনা সামগ্রী, অডিও-ভিজুয়াল ও বিভিন্ন উপকরণ প্রচলন করা প্রয়োজন সেটি আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি? কে করবেন এগুলো? প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনে এর সঠিক উল্লেখ ও দায়িত্ব বণ্টন করা আছে কিনা সেটিও দেখার বিষয়। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হচেছ শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগ-অনুভূতির বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্মবোধে, বিজ্ঞানমনস্কতায়, সৃজনশীলতায় ও উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্ধুদ্ধ করা। প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় হচেছ শিশুদের পরবর্তী শিখনের জন্য প্রস্তুতিমূলক পর্ব, প্রাথমিক হচ্ছে ভিত্তি, মাধ্যমিক হচ্ছে সামাজিকীকরণ, উচ্চ মাধ্যমিক হচেছ বিশেষায়ণের জন্য প্রস্তুুতি আর উচ্চশিক্ষা হচেছ বিশেষায়ণ পর্যায়। এই উদ্দেশ্যগুলো দেখলে মনে হয় আমাদের শিক্ষার এত স্তর ও উপস্তর ঠিক আছে-কিন্তু আমাদের মেলাতে হবে বৈশ্বিক স্তর ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে। আমাদের দেশের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যখন বলে যে, আমরা কলেজে পড়ি তখন বাইরের যে কোন দেশ মনে করবে তারা স্নাতকের শিক্ষার্থী। আসলে বিষয়টি তো তা নয়। আবার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যখন বলে যে, আমরা হাইস্কুলে পড়ি তখন অনেক দেশেই সেটিকে মনে করা হবে নবম/দশম/একাদশ শ্রেণি। এই বিষয়গুলোকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুবিন্যস্ত করা প্রয়োজন ।

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের মূল কৌশল হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক সক্রিয় শিখন- যা শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদান প্রক্রিয়া বা সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষার্থী বিভিন্ন কৌশলে শ্রেণিকক্ষে, বিদ্যালয়ে, বাড়িতে, নিকট পরিবেশে বিভিন্ন কার্যক্রম ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখন সম্পন্ন করে নির্ধারিত যোগ্যতাসমূহ অর্জন করে। এরূপ নানাবিধ শিখন শেখানো কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনা করতে হলে পর্যাপ্ত শিখন সময় থাকা প্রয়োজন তবে তা শুধু শ্রেণিকক্ষ ভিত্তিক নয়। বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রমে শিখন সময়কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

ইউনেস্কোর শিক্ষাক্রম পরিভাষায় শিখন সময়ের বিভিন্ন পরিভাষা ও তার ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। যেমন: কনট্যাক্ট পিরিয়ড বলতে শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সক্রিয় শিখন শেখানো সময়কে ধরা হয়েছে। ইন্সট্রাকশনাল টাইম বলতে সেই নির্দিষ্ট সময়কে বোঝানো হয়েছে যেখানে শ্রেণিকক্ষে বা ভার্চুয়াল পরিবেশে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছ থেকে সরাসরি শিখনের জন্য সহায়তা পেয়ে থাকে। আবার শিখন সময় বলতে সেই নির্দিষ্ট সময়কে বিবেচনা করা হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে কোনো শিখন-সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত থাকে অথবা কার্যকর শিখনে নিবিষ্ট থাকে। বর্তমান যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম উদ্দেশ্যভিত্তিক শিক্ষাক্রমে বিধৃত উদ্দেশ্যাবলির ওপর প্রধান তিনটি উপাদান অতিরিক্ত যুক্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ১) মাস্টারি লার্ণিং অর্থাৎ শিক্ষণীয় বিষয়ের পুরোটা শেখা ২) শিখণ-শেখানো প্রক্রিয়ায় সব শিক্ষার্থীর বিচিত্র চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখা যা অন্তর্ভুক্তি নামে পরিচিত এবং ৩) শিখনকালীন অবিরত মূল্যায়নের মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীর প্রয়োজনমতো নিরাময় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শিখণ-শেখানো প্রক্রিয়ার সময় শিক্ষক যদি এসব শর্ত মেনে চলেন তবে এ স্তরে ‘সিস্টেম লস’ অনেক কমানো সম্ভব। এসব অর্জন করতে হলে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশ কম হতে হয় যাতে শিক্ষক প্রত্যেক শিক্ষার্থীর চাহিদার প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন, কিন্তু সেটি কিভাবে ও কতটা পালিত হচ্ছে সে খবর কি আমরা রাখতে পারছি?

 

মাছুম বিল্লাহ
(শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক )

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার

ছবি: সংগৃহীত

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) সদস্যদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘পুলিশ পরিচয়ে’ ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন কমিশনার মো. মজিদ আলী। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আচরণ সর্বক্ষেত্রে পেশাদার ও সংবেদনশীল হতে হবে।

সোমবার (৩০ জুন) আরপিএমপির মাসিক কল্যাণ সভায় পুলিশ কমিশনার এই নির্দেশনা দেন।

কমিশনার বলেন, "পুলিশ সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের পেশাগত পরিচয় ব্যবহার করতে পারবেন না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে।"

তিনি আরও যোগ করেন, সদস্যদের অনলাইন জিডি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে, যাতে জনগণ আরও দ্রুত ও কার্যকর সেবা পায়।

সভায় কমিশনার মজিদ আলী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, দায়িত্ব পালনে সতর্কতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখা জরুরি। পুলিশ সদস্যদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, "পুলিশের দায়িত্ব শুধু আইন প্রয়োগ নয়, এটি একটি জনসেবামূলক পেশা।"

সভায় আগের মাসের কল্যাণ সভায় উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যা ও সুপারিশের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। অনেক বিষয় সমাধানের নির্দেশও দেন কমিশনার।

এ সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) নরেশ চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) সফিজুল ইসলাম, উপপুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) হাবিবুর রহমান, উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) তোফায়েল আহম্মেদ, এবং উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুর রশিদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন
বিরামপুরে ১৭০তম সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালন