বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ | ৫ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

নারী পুনর্বাসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। চারিদিকে বিজয়ের আনন্দ। কিন্তু সেই আনন্দ বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের মনে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি করতে পারেনি। জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তখন মানসিকভাবে বিব্রত ও বিপর্যস্ত। যুদ্ধের সময় মানুষ কোনো রকম প্রাণে বেঁচে থাকাটাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছে।

কিন্তু যুদ্ধ শেষে দেখা গেল প্রায় সাড়ে চার লাখ নারীর বেচেঁ থাকাটাই হয়ে উঠেছে লজ্জা আর অপমানের। শুধু ধর্ষণের শিকার নারীরাই নন, তার পরিবার, আত্মীয়স্বজনের পরিবারও তাদের নিয়ে বিব্রত ছিল। এই পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচতে অনেকে আত্মহত্যা করেছে, অনেকে আত্মপরিচয় গোপন করেছে, অনেকে দেশ ত্যাগ করেছে। বাঙালির ঐতিহ্য বা প্রথা অনুসারে সমাজে ধর্ষিতার কোনো স্থান নেই। সে অপবিত্র, হেয় ও নিন্দার পাত্র। এই রকম প্রতিকূল পরিস্থিতে নির্যাতিতা নারীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। মুস্তফা চৌধুরী তার’ ৭১- এর যুদ্ধশিশু অবিদিত ইতিহাস গ্রন্থের ৮ পৃষ্ঠায় বলেন—
‘১৯৭২- এর জানুয়ারি এবং এপ্রিল মাসের মধ্যে আত্মহত্যার বিষয়ে যে দালিলিক প্রমাণ গেছে, তাতে ২০০ জন নারীর আত্মহত্যার উল্লেখ রয়েছে। ডা. ডেভিস ও তার সহকর্মীদের কাছে ২০০ আত্মহত্যার হিসেবটি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। তাদের মতে, যুদ্ধের পর পরিবারের ভালোর জন্য তারা মনে করেন আত্মহত্যার বিষয় সবাই একটু রক্ষণশীলতার সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন।’

এ বিষয়ে ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ দৈনিক বাংলায় একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। সম্পাদকীয়টির শিরোনামই ছিল— ‘অবলাদের আত্মহত্যা’।

‘একটি শঙ্কিত হবার মত সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি সপ্তাহে গড়ে দুশো থেকে তিনশো নির্যাতিতা বীরাঙ্গনা আত্মহত্যা করছেন। কর্তৃপক্ষীয় সূত্র থেকে এ সংবাদটি পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে। সময়মতো সত্যিকার সাহায্য সহযোগিতা লাভে ব্যর্থ হয়েই এইসব নির্যাতিতা বীরাঙ্গনারা নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করার জন্য এই পথ বেছে নিয়েছেন।’

১০ জানুয়ারি ১৯৭২- এ বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি আগেই জানতেন। কাজেই তিনি দেশে ফিরেই বদরুন্নেসা আহমেদ ও নূরজাহান মুর্শিদকে দায়িত্ব দেন একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য। সেই পরিকল্পনায় শুধু বীরাঙ্গনারাই নয়, থাকবে পরিত্যক্ত, আশ্রয়হীন বিধবা ও অসহায় নারীর পুনর্বাসনের প্রসঙ্গেও।
পরিকল্পনানুযায়ী ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু গঠন করেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় নারীপুনর্বাসন বোর্ড’। বোর্ডকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হলেও এটি ছিল স্বায়ত্তশাসিত বোর্ড। বোর্ডের চেয়্যারম্যান ছিলেন বিচারপতি জনাব কে এম সোবহান। এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ছিলেন মিস্টার আবদুল আউয়াল। এ ছাড়া সদস্য ছিলেন ১১ জন। এরা হলেন— বেগম বদরুন্নেসা এম সিএ, বেগম নূরজাহান মোরশেদ এম সিএ, বেগম সাজেদা চৌধুরী এম সি এ, বেগম মমতাজ বেগম এম সি এ, মিস রাফিয়া আখতার ডলি এম সিএ, ডক্টর নীলিমা ইব্রাহীম, কবি বেগম সুফিয়া কামাল, ডাক্তার মিসেস জাহানারা রাবিব, মিসেস মুনির চৌধুরী, মিসেস জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ও মিসেস মোসফেকা মাহমুদ। ৯ ফেব্রুয়ারি বোর্ড সারা বাংলাদেশের নির্যাতিতা নারীদের বিষয়ে একটি কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।

এদিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাবনা জেলার নগরবাড়ির উত্তরে বসন্তপুর গ্রামে যান। সেখানে বাঁধ নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করবেন তিনি। চারদিকে লোকে লোকারণ্য। বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য মঞ্চে উঠবেন। এমন সময় বঙ্গবন্ধুর কাছে কয়েকজন নারী আসতে চাচ্ছেন। কিন্তু তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বিষয়টি লক্ষ করলেন এবং নির্দেশ দিলেন তাদের আসতে দিতে। তারা ছুটে এসে বঙ্গবন্ধুর সামনে তার পায়ে লুটিয়ে পড়লেন। একজন জানালেন, হানাদার বাহিনী তাকে লাঞ্ছিত করেছে। তাই তার স্বামী তাকে সংসারে নিতে চাচ্ছে না। সমাজের মানুষও তাদের স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করছেন না। বঙ্গবন্ধু সব শুনলেন। মঞ্চে উঠে বক্তৃতা দিলেন। বললেন, ‘আজ থেকে পাকিস্তান বাহিনীর নির্যাতিত মহিলারা সাধারণ মহিলা নয়। তারা এখন থেকে ‘বীরাঙ্গনা’ খেতাবে ভূষিত। কেননা দেশের জন্য তারা ইজ্জত দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে তাদের অবদান কম নয়। বরং কয়েক ধাপ উপরে, যা আপনারা সবাই জানেন, বুঝিয়ে বলতে হবে না। তাই তাদের বীরাঙ্গনা মর্যাদা দিতে হবে এবং যথারীতি সম্মান দেখাতে হবে আর সেই স্বামী পিতাদের উদ্দেশে আমি বলছি যে আপনারাও ধন্য। কেননা এ ধরনের ত্যাগী ও মহৎ স্ত্রীর স্বামী বা মেয়ের পিতা হয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু তাদের কেবল বীরঙ্গনা খেতাব ভূষিত করে চুপ করে বসে থাকেননি। তাদের পারিপারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল ছিলেন। বীরাঙ্গনারা সবচেয়ে বড় লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন স্বাধীন দেশের নিজ সামজে। তাই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ধর্ষিতা মেয়ে বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দাও শেখ মুজিবুর রহমান। আর ঠিকানা লিখে দাও ধানমন্ডি বত্রিশ। মুক্তিযুদ্ধে আমার মেয়েরা যা দিয়েছে তার ঋণ আমি কীভাবে শোধ করবো।’ বলেই বঙ্গবন্ধু ডুকরে কেঁদে উঠেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাদের দহন যন্ত্রণা হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলেন সর্বজনীন পিতা, অসহায় মানুষের নিরাপদ আশ্রয়, নির্ভরযোগ্য এক মহিরুহ। শুধু বঙ্গবন্ধু নন, বেগম মুজিবও এই সময় যোগ্যমায়ের ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে আসেন। ঢাকার দুটি ক্লিনিক পরিদর্শনে যান বেগম মুজিব। সেই সময় তিনি বলেন, ‘এই বীরাঙ্গনা রমণীদের জন্য জাতি গর্বিত। তাদের লজ্জা ও গ্লানিবোধের কোনো কারণ নেই।’

মার কাছে সন্তদানের কোনো লজ্জা ও গ্লানিবোধ নেই। সব লজ্জা ও গ্লানি তুচ্ছ করে তারা বেগম মুজিবকে মাতৃত্বের অধিকারে গ্রহণ করতে পারেন। তারা জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছেন সত্য, কিন্তু সব হারাননি। এই সামান্য সান্তনাই তাদের এই দুঃখ ভারাক্রান্ত পৃথিবীতে বাঁচার প্রেরণা দেবে।

নির্যাতনের শিকার নারীদের পুনর্বাসন একটি দীর্ঘমেয়াদি জটিল প্রক্রিয়া। একটি সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা খুবই কষ্টসাধ্য। তবুও বঙ্গবন্ধু তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছেন এবং দেশি-বিদেশি সকল প্রতিষ্ঠানের সাহায্য কামনা করেছেন। এইসব নারীদের আঘাতের ক্ষত মুছে তাদের খাবার, আশ্রয় ও কাজ দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের হৃদয়ের যন্ত্রণা আন্তরিকতার সাথে অনুভব করতে পারতেন। আর তাই তিনি হয়ে উঠেছিলেন জাতির পিতা। তার উদার বক্ষের আশ্রয় থেকে কেউ বঞ্চিত হোক এমনটা তিনি কখনোই ভাবেননি। তাই নিজের পৃষ্ঠপোষকতায় নারীপুনর্বাসনের মতো একটি জটিল প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন। নারীর দৈনিক জীবন যাত্রার নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা দিয়ে তার জীবনে গুনগত পরিবর্তন আনা সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই কঠিন কাজ ছিল। তবু বঙ্গবন্ধু দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, ন্যায় ও মূল্যবোধের পক্ষে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। নির্দেশ দিয়েছেন ক্ষুধার হাত থেকে লাঞ্ছিতা মহিলা ও এতিম শিশুদের বাঁচতে। দেশের সত্যিকার নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন বোর্ডকে।

সেই মোতাবেক বোর্ড মহিলাদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। বোর্ড মহিলাদের ক্যারিয়ার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট খোলে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল বাংলাদেশে প্রথম। বেইলি রোডে তাহেরুন্নেসা আবদুল্লাহর পরিচালনায় কাজ শুরু হয়। তাহেরুন্নেসা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন—আমি ডিরেক্টর ট্রেনিং হিসেবে সেখানে যোগ দিই। আমাদের মেইন অফিস ছিল মোহাম্মদপুরে। ওখানে একটি ট্রেনিং সেন্টারও ছিল। আর বেইলি রোডে ‘ফেডারেশন অব ইউনিভাসির্টি ওমনে’- এর বিল্ডিং-এ ‘উইমেন্স ক্যারিয়ার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ চালু করা হয়।” এ ছাড়া বোর্ড সেক্রেটারিয়াল কোর্স চালু করে হ্যান্ডিক্রাফটের কাজ শুরু হয়। মোহাম্মদপুর সেলাই ও কারুশিল্প প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। সাভারে খোলা হয় পোল্ট্রি ফার্ম।

নারীপুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল প্রেগন্যান্সি। নির্যাতনের শিকার, কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া নারীদের মধ্যে একটা বড় অংশই গর্ভবতী হয়ে পড়েন। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্ট জানিয়েছিল-
‘জানা যায় পাকিস্তানি সৈন্যরা ব্যাপক ধর্ষণ চালিয়েছে প্রাপ্তবয়ষ্ক নারী ও কমবয়সি মেয়েদের ওপর। অসংখ্য সূত্র থেকে ঘটনা সম্পর্কে স্বীকারোক্তি পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ সরকার দাবি করেছে যে, ৭০,০০০- এর বেশি নারী এ সব ধর্ষনের ফলে গর্ভবতী হয়ে পড়েছে।’

এ থেকে স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, বিবাহিতা ও অবিবাহিতা নারীর এই অবঞ্ছিত গর্ভধারনের জন্য সমাজ কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিল না। এর ফলে ধর্মীয় অনুশাসন, সামাজিক ঐতিহ্য ও প্রথার ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয় যা দূর করার জন্য বঙ্গবন্ধু এগিয়ে আসেন। তিনি বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ধর্ষণের শিকার নারীদের গর্ভপাতের জন্য ঢাকায় পৌঁছায় ব্রিটিশ, আমেরিকান এবং অস্ট্রেলিয়ান ডাক্তাররা। এছাড়া ভারত ও ডেনমার্ক থেকেও আসেন। তারা বাংলাদেশে পৌঁছার পরেই স্থাপন করা হয় গর্ভপাত কেন্দ্র। এই কেন্দ্রগুলো মূলত সেবা সদন নামেই পরিচিত পায়।
সেই সময় নির্যাতিতা নারীদের জন্য সরকারে পুর্নবাসন বোর্ড বাংলাদেশে ৫০টি সেবা সদন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় যার মধ্যে চারটি ঢাকায় এবং অপর ৪৬টি দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা পর্যায়।

৩ মার্চ ১৯৭২- এ নারীপুর্নবাসন বোর্ডের চেয়ারম্যান বিচারপতি কে এম সোবহান সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি জানান এ যাবৎ সংস্থার সেবা সদনে যারা চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের মধ্যে চৌদ্দ বছরের কম মেয়ের সংখ্যাই বেশি এবং এদের মধ্যে শতকরা প্রায় সত্তর ভাগই হচ্ছেন স্কুলের ছাত্রী।

বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া ছিল তাদের বিয়ে। বঙ্গবন্ধু বাঙালি সমাজের প্রথা ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতেন। তিনি জানতেন কাজটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই দুরূহ ও জটিল্ তবু তিনি ট্যাবু ভাঙলেন। যুবকদের আহ্বান জানালেন। বঙ্গবন্ধু তার বক্তৃতার দেশের তরুণ সমাজের প্রতি বিশেষ অনুরোধ করেন। তিনি নির্যাতনের শিকার নারীদের সমাজে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তরুণদের বৈবাহিক সম্পর্কে স্থাপনে উৎসাহিত করেন। এ কারণে দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অনেকেই বীরাঙ্গনাদের জীবন সঙ্গিনী করতে আগ্রহী হয়েছিল। এতে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চত থেকে যুবকেরা বীরাঙ্গনাদের বিয়ে করার জন্য চিঠি পাঠাতে লাগলেন। এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশও হচ্ছিল পত্রিকায়। বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই বাংলার বাণীসহ অন্যান্য পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করেছিল যাতে সমাজে বিদ্যমান ট্যাবু ভেঙে যায়। যাতে বীরাঙ্গনাদের দোষী ও অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা কমে যায়।

এদিকে বঙ্গবন্ধু নির্দেশে মফস্বলেও যে নারীপুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল তার মধ্যে সিরাজগঞ্জ ছিল এগিয়ে। তৎকালীন এমপি, সৈয়দ হায়দার আলী, এমএনএ মোতাহার হোসেন ও মহকুমা আওয়ামী লীগ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী এ বিষয়ে মিটিং করেন এবং সিরাজগঞ্জে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যেগ নেন। ১৯৭২ সালের ১৩ মার্চ গঠিত হয় দশ সদস্য বিশিষ্ট এক কমিটি। এই কমিটির সভাপতি ছিলেন সখিনা হোসেন তালুকদার, কোষাধ্যক্ষ মিসেস ফজিলাতুননেসা (স্বামী হাফিজুর রহমান), সাংগঠনিক সম্পাদক সাফিনা লোহানী, সদস্য আমিনা বেগম মিনা (স্বামী আজিজুল হক বকুল, মুক্তিযোদ্ধা), মিসেস শাহানা আবেদিন (স্বামী জয়নাল আবেদীন), মিসেস ইসাবেলা হোসেন (স্বামী সিরাজ খলিফা), জসিম ডাক্তারের স্ত্রী ও সাহেব আলী ডাক্তারের স্ত্রী। এই সময়ে এসডিও মহকুমা প্রশাসক এস এ মালিক নারীপুনর্বসানের জন্য ভিক্টোরিয়া স্কুল রোডে পরিত্যক্ত টিনশেডের একটি বাড়ি অনুদান হিসেবে বরাদ্দ দেন। সেই সময় সাফিনা লোহানীর উদ্যোগে নারী কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়িয়েছেন পরিত্যক্তা ও বীরাঙ্গনাদের খোঁজে। এই কেন্দ্রে শুরুতে খুব কম সংখ্যক নারী এলেও পরে প্রায় ১০০ জন বীরাঙ্গনা সেখানে আশ্রয় পেয়েছিলেন। স্থানীয়রা ছাড়াও সেখানে দূর-দূরান্ত থেকেও নারীরা এসেছিলেন এবং চিকিৎসা সেবা নিয়ে চলে গেছেন। সেই সময় স্থানীয় সরকারি হাসপাতালের ডা. রেজাউল করিম নির্যাতনের শিকার মা-বোনের চিকিৎসা সেবা দিতেন।

১৯৭২ সালেই বঙ্গবন্ধু ‘সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশায়িত প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে শতকরা ১০টি শূন্যপদে নির্যাতিতা মহিলা বা মুক্তিযুদ্ধে যাহাদের আত্মীয় স্বজন মারা গেছে এমন সব মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রাখার আদেশ দেন।’
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বীরাঙ্গনাদের প্রসঙ্গটা একেবারেই অন্ধকারে তলিয়ে যায়। বীরাঙ্গনা প্রশ্নে সামাজিক ‘কলঙ্ক’ ইস্যুটি ক্রমেই একটি নীরবতার সংস্কৃতি তৈরি করেছিল। একাত্তরের পর বিষয়টি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান হলেও বঙ্গবন্ধু সেই ট্যাবু ভেঙে দিতে পেরেছিলেন। কিন্তু ৭৫- এর পরে বিষয়টি একেবারেই নীরবতার অন্ধকারে তলিয়ে যায়।

এখন জানা প্রায় অসম্ভব-পুনর্বাসন কেন্দ্রে ঠিক কতজন বীরাঙ্গনা কবে, কোথায়, কীভাবে, আশ্রয় পেয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে দুর্বিষহ নির্যাতনের শিকার নারীদের আর্তনাদ, হাহাকার ইতিহাস গৌণ বিষয় হিসেবেই চাপা পড়ে গেল। ১৯৯০-এর দিকে পিপলস ট্রাইব্যুনাল বা গণ-আদালত প্রতিষ্ঠা হলেও তা বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রে কার্যত কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। অথচ বঙ্গবন্ধু এইসব নারীদের অবস্থানকে চিহ্নিত করেছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধার অবস্থানের সমকক্ষ হিসেবেই। এজন্যই তিনি তাদের মা বলে ডেকেছিলেন। আর তিনিও হয়ে উঠেছিলেন তাদের সত্যিকারের পিতা।

ড. মাহবুবা রহমান: সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা,

আরএ/

Header Ad
Header Ad

১৭ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পেলেন বাবর

লুৎফুজ্জামান বাবরকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। ছবি: সংগৃহীত

অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের দণ্ড থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে বাবরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২৮ মে আটক হন লুৎফুজ্জামান বাবর। ওই দিন বাবরের গুলশানের বাসার শোবার ঘর থেকে অবৈধ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করার অভিযোগে একই বছরের ৩ জুন রাজধানীর গুলশান থানায় এ মামলা হয়।

বিচার শেষে একই বছরের ৩০ অক্টোবর ঢাকার মহানগর নয় নম্বর বিশেষ ট্রাইবুন্যাল আদালত বাবরকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে ২০০৭ সালেই আপিল করেন। সেই আপিলের শুনানি শেষে আজ বুধবার রায়ের জন্য দিন রাখা হয়।

এরপর বিভিন্ন মামলায় তার দণ্ড হয়। সেই সব মামলা থেকে খালাস ও জামিনের পর ১৬ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি। তিনি প্রায় ১৭ বছর কারাবন্দি ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

বগুড়ার সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ

ছবিঃ সংগৃহীত

শ্রমিক নেতাদের মারধরের ঘটনায় বগুড়া থেকে সারা দেশের সঙ্গে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। মটরস ইউনিক ইউনিয়নের দুই নেতাকে ছুরিকাঘাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দূরপাল্লার যান চলাচল করে দেয় সংগঠনটি।

বুধবার (১৯ মার্চ) সকাল থেকে বগুড়ার জিরো পয়েন্ট, সাতমাথা, চারমাথা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড ও ঠনঠনিয়া অবস্থিত ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

এর আগে মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে শহরের স্টেশন রোডে মিতালী পাম্পের সামনে দুই মোটর শ্রমিক নেতাকে মারধর করে আহত করা হয়। তারা হলেন- বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রানা এবং নির্বাহী সদস্য হযরত আলী। তারা বর্তমানে বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

জানা গেছে, মিতালী পাম্পের সামনে নারিকেল ব্যবসায়ীদের দোকান রয়েছে। এসব দোকানের সামনে সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালকরা তাদের অটোরিকশা স্ট্যান্ড করে যাত্রী ওঠানো-নামানো করেন। এ নিয়ে বিকেলে চালকদের সঙ্গে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে।

Header Ad
Header Ad

‘কেবল শুরু’ বলে ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞের সতর্কবার্তা দিলেন নেতানিয়াহু  

ছবিঃ ঢাকাপ্রকাশ

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইল ‘পূর্ণশক্তিতে আবার যুদ্ধ শুরু করেছে।’

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাতভর চালানো ইসরাইলের দফায় দফায় বিমান হামলায় এ পর্যন্ত ৪০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত অসংখ্য।

এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু সতর্ক করে বলেছেন, শুধুমাত্র আক্রমণের মুখেই আলোচনা চলবে এবং ‘এটি কেবল শুরু’।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, মঙ্গলবার রাতভর ইসরাইলের তীব্র বিমান হামলায় ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং শত শত আহত হয়েছেন।

এদিকে ইসরাইল জানায়, যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর আলোচনা নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী ‘বিস্তৃত’ হামলা শুরু করেছে।

১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর এটিই ইসরাইলের সবচেয়ে বড় হামলা।

মঙ্গলবার বেইত লাহিয়া, রাফাহ, নুসাইরাত এবং আল-মাওয়াসিতে ইসরাইল বিমান হামলা চালায়। যেখানে শত শত মানুষ নিহত হন। যাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশুও রয়েছে।

এছাড়া মঙ্গলবারের বিমান হামলায় হামাসের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা নিহত হন। যাদের মধ্যে গাজার উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদ আবু ওয়াতফা এবং হামাসের সর্বোচ্চ পদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তাও রয়েছেন।

এদিকে নেতানিয়াহু তার ভাষণে বলেন, গাজায় এখনও আটক থাকা ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার জন্য ইসরাইল হামাসের সাথে আলোচনার চেষ্টা করেছে। তিনি হামাসকে প্রতিবারই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার অভিযোগ করেন।

মার্চের গোড়ার দিকে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে এই চুক্তি কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায় তা নিয়ে ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরাইল তার সমস্ত যুদ্ধ লক্ষ্য অর্জনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে - ‘জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা, হামাসকে নিষ্ক্রিয় করা এবং নিশ্চিত করা যে হামাস ইসরাইলের জন্য হুমকি নয়।’

এদিকে মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করেই ইসরাইল হামলা চালিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউজ।a

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

১৭ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পেলেন বাবর
বগুড়ার সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ
‘কেবল শুরু’ বলে ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞের সতর্কবার্তা দিলেন নেতানিয়াহু  
২২ ছক্কার সঙ্গে ৫০ চারে একাই ৪০৪ রান করলেন মুস্তাকিম  
পঞ্চগড়ে মাদ্রাসা ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে শিক্ষক কারাগারে  
ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রধানমন্ত্রী নিহত    
তল্লাশি চালানোর সময় পুলিশ সদস্যকে অপহরণ করলো ডাকাতদল  
খিলক্ষেতে ধর্ষণের অভিযোগে তরুণকে গণপিটুনি, পুলিশের ওপর হামলা
সোনার দাম ফের বাড়ল
চুয়াডাঙ্গায় শিশু খাদ্য, কাপড় ও কসমেটিক্সের দোকান মালিককে ৪৪ হাজার টাকা জরিমানা
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির ৬ সদস্য নারায়ণগঞ্জে গ্রেপ্তার
আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসুক: ডিপ্লোম্যাটকে নাহিদ ইসলাম
গাজীপুরে ঘোড়া জবাই ও মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি
ক্রিকেটার সেজে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টায় আটক ১৫ বাংলাদেশি
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে বলিউড ইনফ্লুয়েন্সার ওরি আটক
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শুরু বৃহস্পতিবার, আলোচনায় থাকছে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব
গ্রামের মানুষকে নিজ হাতে ঈদ উপহার দিলেন হামজা
ছাত্রদের নতুন দলের সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই: মাসুদ সাঈদী
সাদ্দাম-ইনানসহ ঢাবির বহিষ্কৃত ১২৮ ছাত্রলীগ নেতার নাম-পরিচয় প্রকাশ
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক রাতে নিহত ৪০০ ছাড়াল, আহতের সংখ্যা ৬৬০