ধর্ম
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে দিনটি গভীর শোক, আত্মত্যাগ ও ধর্মীয় তাৎপর্যে ভরপুর। হিজরি ৬১ সালের এই দিনে ইরাকের কারবালা প্রান্তরে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে শাহাদত বরণ করেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.)। তিনি ছিলেন হজরত আলী (রা.) ও হজরত ফাতিমা (রা.)-এর সন্তান।
হজরত আলীর মৃত্যুর পর সিরিয়ার শাসক হজরত মুয়াবিয়া (রা.) খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি জীবিত অবস্থায় নিজের পুত্র ইয়াজিদকে খিলাফতের উত্তরাধিকার হিসেবে মনোনীত করেন। কিন্তু ইয়াজিদের নেতৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান ইমাম হোসেন। তিনি মদিনা ত্যাগ করে সত্য ও ন্যায়ের পথ অনুসরণে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে ফুরাত নদীর তীরে কারবালায় তাঁবু স্থাপন করেন।
ইয়াজিদের নির্দেশে সেনাপতি উমর ইবনে সাদ কারবালায় প্রায় চার হাজার সৈন্য নিয়ে ইমাম হোসেন ও তাঁর সঙ্গীদের ঘিরে ফেলেন। তাঁদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে শিবিরের পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিশু ও নারী-সহ সঙ্গীরা চরম তৃষ্ণায় কাতর হলেও ইমাম হোসেন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। দীর্ঘ অবরোধের পর ১০ মহররম এক অসম যুদ্ধে ইমাম হোসেন এবং তাঁর ৭২ জন সাহসী সাথী শহীদ হন। শেষ পর্যন্ত শিমর ইবনে জিলজুশান ইমাম হোসেনের গলা কেটে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মরণে বিশ্বের মুসলিমরা দিনটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করে থাকেন। বিশেষ করে শিয়া মুসলমানদের কাছে আশুরা একটি শোকাবহ দিন। তাঁরা কালের এই নির্মম অধ্যায়কে স্মরণ করে মাতম, মিছিল এবং নানা শোকানুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
প্রতি বছরই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর সবচেয়ে বড় তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয় পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোসেনি দালান থেকে। এই শোক মিছিলটি লালবাগ, আজিমপুর, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে ধানমন্ডি লেকের পাড়ে প্রতীকী ‘কারবালা’ প্রান্তরে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েছে।
আশুরা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেন, “পবিত্র আশুরার শোকাবহ এই দিনে আমি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.) এবং কারবালায় শাহাদতবরণকারী সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের আত্মত্যাগ চিরকাল ইতিহাসে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “কারবালার ঘটনা শুধু শোকের নয়, এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। আশুরা শুধু কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, ইসলামী ইতিহাসে দিনটি বহুবিধ ফজিলতপূর্ণ ঘটনাবলির সাথেও যুক্ত। এই মহিমান্বিত দিনে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সকলকে বেশি বেশি নেক আমলের আহ্বান জানাই।”
আশুরার এই দিনে মুসলমানরা রোজা পালন, দান, ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত ও বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন।