শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫ | ৭ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

ইংল্যান্ডের স্বপ্ন ভেঙে এক যুগ পর ইউরো কাপ জিতল স্পেন

এক যুগ পর ইউরো কাপ জিতল। ছবি: সংগৃহীত

অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে ফাইনালে ওঠেছিল স্পেন। শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে সেই ধারা অব্যাহত রেখে শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে স্প্যানিশরা। ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে ১২ ইউরোপ সেরার মুকুট নিজেদের করে নিলো স্পেন।

বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ম্যাড়ম্যাড়ে প্রথমার্ধে কোনও দলই গোলের দেখা পায়নি। তবে বিরতির পর ফিরেই জাল কাঁপায় স্পেন। তারপর কয়েকটি মুহুর্মুহু আক্রমণ। সেগুলো জালের দেখা পায়নি। সুপার সাবের সৌজন্যে গোল শোধ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। কিন্তু এবার সুপার সাবে সাফল্যের মুখ দেখলো স্পেন। তাতে টানা দ্বিতীয়বার ইউরো ফাইনালে উঠেও শিরোপা খরা ঘুচাতে পারলো না ইংল্যান্ড। ২-১ গোলে তাদেরকে হারিয়ে রেকর্ড চতুর্থ ইউরো শিরোপা জিতলো স্পেন।

পঞ্চম মিনিটে স্পেনের ফরোয়ার্ড নিকো উইলিয়ামসের ক্রস আলভারো মোরাতার কাছে পৌঁছানোর আগে ব্লক করে কর্নার বানান জন স্টোন্স। ১৩ মিনিটে সতীর্থের হেড ক্রসে মোরাতার বাইসাইকেল কিক লক্ষ্যে ছিল না। ইংল্যান্ড প্রথম আক্রমণে যায় ১৬ মিনিটে। বুকায়ো সাকা ডান দিকে বল বাড়ান। তার পাস ধরে কাইল ওয়াকার সামনে আগান। বক্সের মধ্যে তার পাস ব্লক করেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার।

২৫ মিনিটে রুইজকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন কেইন। ২৮ মিনিটে ফ্যাবিয়ান রুইজের শট গুয়েহির গায়ে লেগে সহজেই পিকফোর্ডের হাতে ধরা পড়ে। চার মিনিট পর ডেকলান রাইসকে চ্যালেঞ্জ করে হলুদ কার্ড দেখেন ড্যানি ওলমো।

৪৪ মিনিটে লাপোর্তের থ্রু বল বক্সের মধ্যে পান মোরাতা। স্পেন অধিনায়ক গুয়েহিকে কাট পাস করে কাটানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ইংলিশ ডিফেন্ডার তাকে প্রতিহত করেন। স্টোন্স বল ক্লিয়ার করে কর্নার বানান। পেলের ৬৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় লামিনে ইয়ামাল এই অর্ধে ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে।

দ্বিতীয়ার্ধে ৬৯ সেকেন্ডে ইংল্যান্ডের জাল কাঁপায় স্পেন। দানি কারভাহালের বানিয়ে দেওয়া বলে ইয়ামাল ডান দিক দিয়ে বক্সের বাঁ প্রান্তে পাস দেন। উইলিয়ামস বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে জালে বল জড়ান।

দুই মিনিট পর আরেকটি সুযোগ তৈরি করে স্পেন। উইলিয়ামসের পাসে ওলমো বক্সের মাঝখান থেকে শট নেন, কিন্তু বল ডানপোস্টের অনেক সামনে দিয়ে মাঠের বাইরে যায়।

৫৫ মিনিটে কারভাহাল বল দেন মোরাতাকে। কিন্তু স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড উইলিয়ামসকে পাস না দিয়ে নিজেই শট নেন। গুয়েহি ভালো অবস্থানে থেকে শট ব্লক করেন। পরের মিনিটে মোরাতার আরেকটি শট ক্লিয়ার করেন স্টোন্স। কয়েক সেকেন্ড পর উইলিয়ামসের শট বাঁ পাশের পোস্ট দিয়ে বাইরে চলে যায়।

৬০ মিনিটে কাইল ওয়াকারকে আর্মব্যান্ড দিয়ে মাঠ ছাড়েন কেইন। অধিনায়কের বদলি হন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ের নায়ক ওলি ওয়াটকিন্স।

চার মিনিট পর সাকার বাড়ানো বলে বক্সের বাইরে থেকে শট নেন বেলিংহ্যাম। তার বাঁ পায়ের শট বাঁদিকের পোস্টের বেশ দূর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

৬৭ মিনিটে সাকাকে দেওয়া পিকফোর্ডের পাসে বাগড়া দেন কুকুরেল্লা। বল পেয়ে যান মোরাতা, তার পাস ধরে ডানদিক থেকে ইয়ামাল বাঁ দিকে সরে শট নেন। চমৎকার সেভে স্পেনকে আরও এগিয়ে যেতে দেননি পিকফোর্ড। এরপরই মিকেল ওয়ারজাবালের বদলি হয়ে মাঠ ছাড়েন মোরাতা। তার অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড ওঠে কারভাহালের হাতে।

৬৯ মিনিটেস স্পেনের কর্নার পাঞ্চ করে ফেরান পিকফোর্ড। রুইজ বক্সের বাইরে বল পেয়ে ক্রসবারের উপর দিয়ে মারেন।

পরের মিনিটে মাইনুর বদলি নামা কোল পালমার ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন। মাঠে নামার চতুর্থ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে রকেট গতির শটে জাল কাঁপান তিনি। ৭৩ মিনিটে সাকা ডানপাশ দিয়ে বক্সের মধ্যে বল বাড়ান। বেলিংহ্যাম বক্সের বাইরে ফাঁকা জায়গায় থাকা পালমারকে বল পাঠান। বক্সের প্রান্ত থেকে বাঁ পায়ের জোরালো নিচু শট নেন, ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও বল আটকাতে পারেননি সিমন। আরেকবার সুপার সাব এসে বাঁচিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় দলটি।

গোল হজম করে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে স্পেন। ৮২ মিনিটে উইলিয়ামস বল নিয়ে সামনে আগান। ওলমোকে দিয়ে বল বানিয়ে দেন ইয়ামালকে। ১৭ বছর বয়সী উইঙ্গারের শট দুই হাত দিয়ে রুখে দেন পিকফোর্ড।

খেলা শেষ হওয়ার চার মিনিট আগে বুনো উল্লাসে মেতে ওঠে স্পেন। কুকুরেল্লার সঙ্গে ওয়ান টু পাসে বল পেয়ে গোলমুখের সামনে থেকে জাল কাঁপান ওয়ারজাবাল। সুপার সাবে এবার স্পেন ঘুরে দাঁড়ায়।

৯০ মিনিটেই গোল শোধ দিতে বসেছিল ইংল্যান্ড। পালমারের কর্নার বক্সের মধ্যে খুঁজে পায় রাইসকে, গোলমুখে নেওয়া তার শক্তিশালী হেড ফিরিয়ে দেন সিমন। খুব কাছ থেকে ফিরতি হেড করেন গুয়েহি। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় ছিলেন ওলমো। গোললাইন থেকে হেড করে বল ক্লিয়ার করে স্পেনকে বাঁচান তিনি।

যোগ করা চার মিনিটে আর ভাগ্য পাল্টাতে পারেনি ইংল্যান্ড। গতবার ইতালির কাছে টাইব্রেকারে হারের পর আরেকবার ফাইনালে আক্ষেপে পুড়তে হলো তাদেরকে।

১৯৬৪, ২০০৮ ও ২০১২ সালের পর আবার চ্যাম্পিয়ন হলো স্পেন। জার্মানিকে ছাপিয়ে এখন তারাই ইউরোপের সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ী। এছাড়া প্রথম ইউরোপিয়ান দল হিসেবে বিশ্বকাপ কিংবা ইউরোতে সাত ম্যাচের সবগুলো জিতলো লা রোহারা, তবে সব মিলিয়ে দ্বিতীয়বার এমন কীর্তি গড়লো কেউ। ২০০২ সালে ব্রাজিল এমন রেকর্ড গড়েছিল। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন স্পেনের ম্যানসিটি তারকা রদ্রি। আর চার অ্যাসিস্ট ও এক গোলে ইয়াং প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছেন ইয়ামাল।

Header Ad
Header Ad

পৃথিবীর সর্বত্র আজ দিন-রাত সমান

ছবি: সংগৃহীত

আজ (২১ মার্চ) পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান। বছরের এই দিনটিকে বলা হয় ‘ভারনাল ইকুইনক্স’। এ দিন সূর্য ঠিক বিষুবরেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়, যার ফলে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে দিন ও রাতের ব্যাপ্তি সমান হয়ে থাকে।

পৃথিবীর মেরু রেখা ধ্রুবতারামুখী হয়ে সবসময় কক্ষপথের সঙ্গে ৬৬.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে। অপরদিকে, নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখার সমতল কক্ষপথের সঙ্গে ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে। এর ফলেই প্রতি বছর ২১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয়।

২০ মার্চ সূর্য তার দক্ষিণ গোলার্ধের অবস্থান শেষ করে উত্তর গোলার্ধের দিকে যাত্রা শুরু করে এবং রাতের শেষের দিকে বিষুবরেখার ওপর অবস্থান নেয়। তাই পরের দিন অর্থাৎ ২১ মার্চ পৃথিবীর উভয় গোলার্ধে দিন ও রাত সমান থাকে।

আগামীকাল থেকে সূর্য উত্তর গোলার্ধের দিকে সরে যেতে শুরু করবে এবং এ কারণে উত্তর গোলার্ধে গরমের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়বে। দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে এবং রাতের দৈর্ঘ্য কমতে থাকবে। এই পরিবর্তন চলবে আগামী ২১ জুন পর্যন্ত, যেদিন উত্তর গোলার্ধে বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ দিন এবং সবচেয়ে ক্ষুদ্র রাত ঘটে।

Header Ad
Header Ad

নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২১ মার্চ) ভোরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন রায়পুরা উপজেলার মোহিনীপুর গ্রামের আমিন (২৩) ও বাশার (৩৫), যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি সালাম মিয়ার সমর্থক বলে জানা গেছে। নিহত আমিনের পায়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁনপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর সালাম মিয়া এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সোহাগের সঙ্গে বিএনপি নেতা সামসু মেম্বারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরে সামসু মেম্বার ও তার সমর্থকদের এলাকা ছাড়া করেছিলেন সালাম ও সোহাগ।

তবে গত ৫ আগস্টের পর সামসু মেম্বার ও তার সমর্থকরা এলাকায় ফিরে এলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে সালাম মিয়া ও তার সমর্থকরা এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে সামসু মেম্বারের সমর্থকরা তাদের বাধা দেয়।

পরে দেশীয় অস্ত্র, টেঁটা-বল্লম, দা, ছুরি, ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে আমিন এবং টেঁটা ও ছুরিকাঘাতে বাশার ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন।

রায়পুরা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আদিল মাহামুদ জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন নিহত ও একজন গুলিবিদ্ধসহ আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।

Header Ad
Header Ad

বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সংশোধিত খসড়ায় এই নেতাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকার ৯৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১০ মার্চ এ-সংক্রান্ত কার্যপত্রে (খসড়াসহ অন্যান্য বিষয়) স্বাক্ষর করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ও এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য) হিসেবে নির্বাচিত এই নেতারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে গণপরিষদ গঠিত হলে তাদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। তবে নতুন খসড়া আইনে তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৯৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সংশ্লিষ্ট খসড়ায় স্বাক্ষর করেন। সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি আরও চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই চার শ্রেণির মধ্যে রয়েছে—

১. মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে প্রবাসে পেশাজীবী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার চালানো ও বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা।
২. মুজিবনগর সরকারের অধীনে কর্মকর্তা, কর্মচারী, দূত ও অন্যান্য সহযোগী।
৩. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কলাকুশলী ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সাংবাদিকরা।
৪. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।

এই খসড়া কার্যকর হলে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা তালিকার অন্তত ১০ হাজার ব্যক্তির পরিচয় বদলাতে হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। যারা এতদিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছিলেন, তাদের নতুনভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গণমাধ্যমকে বলেন, 'বীর মুক্তিযোদ্ধা কেবল তারাই থাকবেন, যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। রাজনীতিবিদরা সরাসরি যুদ্ধ করেননি, তাই তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে কোনো মর্যাদা কমানো হয়নি, বরং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।'

তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, 'আইন বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান পরিবর্তন করা যায় না। এটি অপ্রয়োজনীয় এবং অপচয়মূলক উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারীদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। যদি কেউ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।'

মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ, কেবল সামরিক যুদ্ধ নয়। এ লড়াইয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঢালাওভাবে এমএনএ, এমপিএ ও গণপরিষদ সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।'

খসড়া আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, 'যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন, তারাই বীর মুক্তিযোদ্ধা।'

সংশোধনীতে রাজনীতিবিদদের নাম বাদ দেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও নার্সদের মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে সীমান্তবর্তী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক ও নার্সদের স্বীকৃতি বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যা ইতিহাসকে বিকৃত করার শামিল। মুক্তিযুদ্ধ একটি পরিকল্পিত সংগ্রাম ছিল, যেখানে রাজনীতিবিদরাই মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন।'

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, 'এটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক সিদ্ধান্ত। মুক্তিযুদ্ধ জাতির ইতিহাসের মীমাংসিত অধ্যায়। এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা অযৌক্তিক।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে পর্যালোচনা করা দরকার। আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করব।'

মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন যাচাই-বাছাই:

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পুনরায় যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখন শুধু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকের স্বীকৃতি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইন চূড়ান্ত অনুমোদনের পর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে। এটি কার্যকর হলে বেসামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যেও অনেকের স্বীকৃতি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান আইনে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছিল, '১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য যে লড়াই হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধ। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় সাড়া দিয়ে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা।'

কিন্তু নতুন খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, '১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা।'

এই পরিবর্তনের ফলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর এটি অধ্যাদেশ আকারে প্রকাশের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এই নতুন খসড়া আইনের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও মর্যাদা সংক্রান্ত ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এটি বাস্তবায়িত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পৃথিবীর সর্বত্র আজ দিন-রাত সমান
নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০
বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি
বাইতুল মোকাররমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবিতে মিছিল
হিথ্রো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড, হাজার হাজার যাত্রী আটকা
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ট্রাম্পের ‘পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে: হোয়াইট হাউস
ওমরাহ থেকে ফিরে অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা বর্ষার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে এক সপ্তাহে ২৪৯ অপরাধী গ্রেপ্তার
ভিজিএফের চালের বস্তায় শেখ হাসিনার নামে স্লোগান; স্থানীয়দের ক্ষোভ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকিরকে সাময়িক বরখাস্ত
ভিনিসিয়ুসের শেষ মুহূর্তের জাদুতে ব্রাজিলের রোমাঞ্চকর জয়
ইউনূস-মোদি বৈঠকের জন্য দিল্লির কাছে ঢাকার চিঠি
কুমিল্লায় শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৫ জন নিহত, তিনদিনে প্রাণ গেল ৬০০ ফিলিস্তিনির
আত্মপ্রকাশ করলো সাবেক সেনা কর্মকর্তা-আমলাদের ‘জনতার দল’
১৯৪ জন উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি
ভোরে মাঠে নামছে ব্রাজিল, যেমন হবে একাদশ
মার্চে রেমিট্যান্সে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ
ঢাকা সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার
হামাসের রকেট হামলায় কাঁপল ইসরাইল, বিমান চলাচল ব্যাহত