শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

পদ্মা সেতু: অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে উজ্জ্বল মাইলফলক

বাঙালির স্বপ্নের মিনার-পদ্মা সেতু চালু হতে যাচ্ছে। এটি নিশ্চয়ই নিছক স্টিলের কোনো কাঠামো নয়। পদ্মা সেতু আমাদের আবেগের নাম। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের এক উজ্জ্বল মাইলফলক। বিপুল আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষ দুই চোখ ভরে আমাদের আত্মশক্তির এই প্রতীকটি দেখছে। বঙ্গবন্ধু এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুজনেই দক্ষিণ বাংলার মানুষ। বাবার মতোই বঙ্গবন্ধুকন্যাও এই অঞ্চলের মানুষের দুঃখ-কষ্ট বোঝেন। তাই ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে মাওয়া ফেরিঘাটের কাছেই এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু সেতুটির নির্মাণ কাজ থমকে যায় রাজনৈতিক হীনমন্যতার কারণে। ২০০৯ সালে ফের ক্ষমতায় ফিরে এসে তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণকে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে আসেন। শুরুতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা, আইডিবি এই সেতুর অর্থায়নের অংশীদার হলেও পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক যুক্ত হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণেও এই উন্নয়ন অংশীদাররা যুক্ত ছিল। তাই সরল বিশ্বাসেই বিশ্বব্যাংককে যুক্ত করেছিল বাংলাদেশ সরকার। প্রস্তাবিত ১.২ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পের অর্থায়নে শেষ পর্যন্ত সেই বিশ্বাসের দাম রাখেনি এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। অযথাই একটি নোংরা বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল মনগড়া দুর্নীতির অভিযোগ তুলে। বেলাশেষে সেই অভিযোগ কানাডার আদালতসহ কোথাও টেকেনি। বিশ্বব্যাংক ছাড়া অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদাররা খুবই বিব্রত বোধ করছিল এই অযথা অভিযোগ তোলার জন্য। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের নেতৃত্ব তারা মানতে বাধ্য। তবুও এই প্রকল্পটি যাতে এভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে তাদের দৌড়ঝাপ আমি দেখেছি। সে সময়ের জাপানি রাষ্ট্রদূত একাধিকবার আমার সাথে দেখা করেছেন এবং বিশ্ব ব্যাংকের বাড়াবাড়ির সমালোচনা করেছেন।

সেই সময়টায় আমি খুব কাছে থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরো ষড়যন্ত্রটা কেমন বীরত্বের সঙ্গে লড়ে ভুল করে দিলেন সে দৃশ্যও দেখেছি। খুবই দ্রুততার সঙ্গে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে নিজেদের অর্থে এই মেগা-প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বিশ্বকে দেখিয়ে দেবেন আমরাও পারি। অর্থ বিভাগের আপত্তি সত্ত্বেও যখন তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আমরা বলেছিলাম, বাংলাদেশের রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় ঊর্ধ্বমুখী। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। তাই বিশ্বব্যাংকের দেয় ১.২ বিলিয়ন ডলার না নিলেও আমরা আমাদের ব্যাংকিং খাত থেকে এই পরিমাণ বিদেশি মুদ্রার জোগান দিতে সক্ষম। আমরা জানতাম এই পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এক বছরেই লাগার কথা নয়। তাই সরকার যদি টাকার জোগান দিতে পারে, আমরা ডলারের জোগান দিতে পারব। দেশবাসী জেনে খুশি হবেন যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি-সহযোগিতায় অগ্রণী ব্যাংক এরই মধ্যে ১.৪ বিলিয়ন ডলার পদ্মা সেতুর জন্য দিতে সক্ষম হয়েছে। বাদবাকি ডলারের জোগানও আমাদের ব্যাংকিং খাত দিতে পারবে। আর তা না হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তো আছেই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে খুবই কৃতজ্ঞ যে ২০১৬ সালে একটি দলীয় সভায় তিনি পদ্মা সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় বিদেশি মুদ্রার সরবরাহের নীতি নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেছিলেন।
বলতে দ্বিধা নেই যে এত বড় প্রকল্পের অর্থায়ন বাংলাদেশ নিজেদের সম্পদ থেকেই সম্পন্ন করতে পারে সেটিই ছিল এই পদ্মা সেতু বিতর্কের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সে সময়ে প্রবাসী বাঙালিদের যে দেশপ্রেমের প্রকাশ দেখেছি তা সত্যি মনে রাখার মতো। তাদের কাছ থেকে কতো যে ই-মেইল এবং ক্ষুদে বার্তা পেয়েছি তা বলে শেষ করা যাবে না। কোন ব্যাংকের কোন হিসেবে তারা ডলার পাঠাবেন সে রকম প্রশ্নবাণে আমি জর্জরিত হয়েছি। আমাদের রোদে পোড়া পরিশ্রমী প্রবাসী কর্মীদের দেশের জন্য কিছু করার এই আকুতি সত্যি অসাধারণ। তাদের প্রতি রইলো অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরাও নিশ্চয় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের অনুষ্ঠান দেখে উদ্বেলিত হবেন। আমি নিশ্চিত যুগে যুগে বাঙালির কাছে ইতিহাসের এই মুহূর্তটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আবেগ ও উচ্ছাস বাদেও পদ্মা সেতুর প্রভাবে বাংলাদেশের, বিশেষ করে দক্ষিণ বাংলার অর্থনীতির ওপর কি ধরনের প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে নিয়ে কিছু বলতে চাই। নিশ্চিতভাবেই দক্ষিণ বাংলার অর্থনীতিতে পড়বে ব্যাপক প্রভাব। এ অঞ্চলের একুশটি জেলার অর্থনীতি ও সমাজে আসবে অকল্পনীয় পরিবর্তন। এই সেতু চালু হবার পর সড়ক ও রেল দুই পথেই দক্ষিণ বাংলার মানুষ অল্প সময়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন। দিনের পর দিন আর পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় বসে থাকবে না। আর ঝড়-বৃষ্টিতে ফেরি বন্ধ থাকার কারণে মানুষের যাতায়াতও থমকে থাকবে না। সেতুটির কারণেই এই প্রথমবারের মতো পুরো দেশ একটি সমন্বিত যোগাযোগ কাঠামোতে চলে আসবে। দক্ষিণ বাংলার গ্রামেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগবে। এই অঞ্চলের কৃষক, মৎস্যজীবী, তাঁতি, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভোক্তার সমাবেশ যে রাজধানী ঢাকা তার সঙ্গে অনায়াসে সংযুক্ত হতে পারবেন। অন্যদিকে তারা রাজধানী থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে পারবেন তাদের গ্রামের ও আশপাশের এসএমই উদ্যোগগুলোর জন্য। এরই মধ্যে পদ্মা সেতু হবে শুনেই ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত হতে শুরু করেছে। বরিশাল শহরের আশে পাশের জমির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর দুই পারেই এক্সপ্রেসওয়ের পাশের জমির দাম তিন-চার গুন বেড়ে গেছে। নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানা, আবাসন প্রকল্প, রিসোর্ট, বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক, মানব সম্পদ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, রেস্টুরেন্ট ও নানা ধরনের এসএমই উদ্যোগ স্থাপনের হিড়িক পরে গেছে। খুলনা ও বরিশালে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করেছে। কুয়াকাটায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটছে দ্রুত গতিতে। আগামীতে বিকাশের এই ধারা আরো বেগবান হবে।
ঢাকার কাছে বলে পদ্মার ওপারে ছোট-বড় নানা শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। দক্ষিণ বাংলা হবে পর্যটনের এক উৎকৃষ্ট হাব। ছুটি পেলেই ঢাকা ও অন্যান্য নগরের বাসিন্দারা ছুটবেন দক্ষিণ বাংলার প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক সৌন্দর্যের সন্ধানে। তারা যাবেন কুয়াকাটা, সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি পরিদর্শনে, যাবেন পায়রা বন্দরে। পদ্মার চরগুলোতে গড়ে উঠবে নতুন নতুন রিসোর্ট ও পরিকল্পিত ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্র। সরকারও এরই মধ্যে নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে পদ্মা পারের পুরো এলাকাকে উন্নত করার লক্ষ্যে। শোনা যাচ্ছে, পদ্মার চরাঞ্চলে অলিম্পিক ভিলেজ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি, হাইটেক পার্ক, আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, বিমান বন্দরসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কথা ভাবছে সরকার। পদ্মা সেতুর কাছেই দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী গড়ে উঠছে। এখানে থাকবে আধুনিক আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব সুযোগ-সুবিধা। পদ্মা সেতুর আশপাশে গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটবে। খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে শিপ-বিল্ডিং শিল্পের বিকাশ ঘটবে। মোংলা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মোংলা ইপিজেড, পায়রা বন্দর, রূপপুর প্রকল্পের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা গেলে এসব প্রকল্পে বিপুল কর্মসংস্থান ঘটবে। একটি গবেষণায় বলা হচ্ছে যে পদ্মা সেতু চালু হবার পর বছরে প্রায় বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ১.০৪ শতাংশের কর্মসংস্থান হবে। আরও সহজ করে বলা যায় আগামি পাঁচ বছরে দশ লাখ অর্থাৎ বছরে দুই লাখ মানুষের নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটবে। দশ বছর পর এই সংখ্যা তিন গুন হয়ে যাবে।

সার্বিকভাবে এই সেতু আমাদের জাতীয় জিডিপিতে ১.২৬ শতাংশ প্রতি বছর যোগ করবে। আঞ্চলিক জিডিপিতে যোগ হবে ২.৫ শতাংশ। রেল চালু হলে জাতীয় জিডিপিতে যোগ হবে আরও ১ শতাংশ। প্রতি বছর দক্ষিণ বাংলায় দারিদ্র্য কমবে ১.০৪ শতাংশের মতো। জাতীয় পর্যায়ে তা কমবে ০.৮৪ শতাংশ। উত্তরবঙ্গে যেমন বঙ্গবন্ধু সেতুর কারণে মঙ্গা আর এখন দৃশ্যমান নয়, তেমনি পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণবঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার অতিদারিদ্র্যের হারও কমবে। সেখানকার ছিন্নমূল মানুষকে তখন আর ঢাকা বা অন্য নগর পানে কষ্টের জীবন বেছে নিতে হবে না। নিজের পরিবেশেই নিজের জীবন সংগ্রামে স্বস্তি খুঁজে পাবে বিপর্যস্ত এই দুঃখী মানুষেরা।
নিঃসন্দেহে পদ্মা সেতু আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথনকশায় এক নতুন আশা-সঞ্চারি মাইলফলক। তাই আমাদের স্বপ্নের মিনার-এই স্থাপনাকে নিয়ে আমাদের উচ্ছাস যেন কেবল উদ্বোধনের দিনেই (অর্থাৎ ২৫ জুনেই) সীমাবদ্ধ না থাকে। সরকারের দিক থেকে তো উদযাপন থাকবেই। বৃহত্তর জনসাধারণও যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই উদযাপনে অংশীদার হতে পারেন তা নিশ্চিত করা গেলে ভালো হয়।

লেখক: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

 

Header Ad

আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস

ছবি: সংগৃহীত

আজ ৩ মে, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। ১৯৯১ সালে ইউনেসকোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ মোতাবেক ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ অর্থাৎ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘‌গ্রহের জন্য গণমাধ্যম: পরিবেশগত সংকট মোকাবেলায় সাংবাদিকতা।’

১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ অনুসারে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেয়া হয়। এর পর থেকে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমকর্মীরা দিবসটি পালন করে আসছেন। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনদানকারী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় দিবসটিতে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) প্রতি বছর ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে থেকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক প্রকাশ করে। আরএসএফের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তারা ২০০২ সাল থেকে এ সূচক

প্রকাশ করছে। সংস্থাটির গত বছর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ২০২৩ সালে একধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়ায় ১৬৩তম। সে বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৫ দশমিক ৩১।

এ বছর দিবসটি উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে সম্পাদক পরিষদ। অনুষ্ঠানটি আগামীকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সকাল ১০টায় শুরু হবে। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিল ইরান

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরাইলকে সমর্থন দেয়ায় দেশ দু’টির কয়েকজন ব্যক্তি ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (২ মে) ইরানের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খবর এএফপির

ইরানের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন সাত মার্কিন নাগরিক। তাদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল অপারেশনস কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল ব্রায়ান পি ফেন্টন ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর পঞ্চম নৌবহরের সাবেক কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার।

অপরদিকে যুক্তরাজ্যের যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইরান নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস, ব্রিটিশ আর্মি স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের কমান্ডার জেমস হকেনহাল।

এছাড়া লোহিত সাগরে যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনীর বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তেহরান।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হিসেবে লকহিড মার্টিন, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে শেভরনকেও। যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে এলবেইট সিস্টেমস, পার্কার মেগিট ও রাফায়েল ইউকে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের আর্থিক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি কোনো লেনদেন করতে পারবেন না।

ইরানে তাদের সব সম্পদে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ইরানের কোনো অঞ্চলে তারা প্রবেশ করতে পারবেন না বলেও জানানো হয়েছে।

বজ্রপাতে পাঁচ জেলায় প্রাণ গেল ১১ জনের

প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন নাজেহাল হয়ে পড়েছে। ঠিক এরইমধ্যে দেশের কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। কিন্তু স্বস্তির বৃষ্টির মধ্যে ঘটে গেছে ভয়ঙ্কর ঘটনা। বজ্রপাতে দেশের পাঁচ জেলায় একদিনে নারীসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এর মধ্যে কুমিল্লায় চার, রাঙামাটিতে তিন, কক্সবাজারে দুই এবং খাগড়াছড়ি একজন ও সিলেটে একজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।

রাঙামাটি:

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির দুই উপজেলায় বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে রাঙামাটি শহরের সিলেটিপাড়া ও বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপাকারী ইউনিয়নের মুসলিম ব্লকে এবং দুপুরে একই উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের লুইনথিয়ান পাড়ায় এসব বজ্রপাতে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার সিলেটিপাড়া এলাকার বাসিন্দা নজির হোসেন (৫০), বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপাকারী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মুসলিম ব্লক গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী বাহারজান বেগম (৫৫) এবং সাজেক ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের লুইনথিয়ান পাড়ায় বেটলিং মৌজার কারবারি মিথুন ত্রিপুরার বোন তনিবালা ত্রিপুরা (২৫)।

অন্যদিকে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বলেন, বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে মোট দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থকে প্রতি পরিবারকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার:

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুই লবণচাষির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কোদাইল্যাদিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন— উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া এলাকার জমিরের ছেলে দিদারুল ইসলাম (৩৫) এবং রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়া এলাকার জামালের ছেলে মো. আরমান (২৫)।

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মগনামার কোদাইল্যাদিয়ায় ভোরে দিদারুল ইসলাম লবণের মাঠ পরিচর্যা করতে গেলে হঠাৎ বজ্রপাত হয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার জানান, গতকাল রাতে প্রচুর বজ্রপাত হয়। ভোরেও বজ্রপাত অব্যাহত থাকে। রাতের বৃষ্টিতে লবণের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাষি আরমান তা পরিচর্যা করতে যান। ওই সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।

খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ঝোড়ো বাতাসে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাত (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

ইয়াছিন আরাফাত বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ার বাসিন্দা ইউসুফ মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাবা ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

জানা যায়, সকালে বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে বাড়ির উঠানের পাশে কাঁচা আম কুড়াতে যায় দুই ভাই। এ সময় সেখানে বজ্রপাত হয়। এতে ছোট ভাই প্রাণে বেঁচে গেলেও বড় ভাই ইয়াছিন আরাফাত ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বলেন, সকালের দিকে বজ্রাঘাতে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ মৃত্যু বড়ই মর্মান্তিক। তাদের পরিবারকে সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কুমিল্লা:

কুমিল্লার ৪ উপজেলায় বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার চান্দিনা, বুড়িচং, সদর দক্ষিণ ও দেবিদ্বার উপজেলায় মোট চারজনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে দুজন কৃষক বলে জানা গেছে।

নিহতরা হলেন—চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের কিছমত-শ্রীমন্তপুর এলাকার সুন্দর আলীর ছেলে কৃষক দৌলতুর রহমান (৪৭), বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাঁচোড়া এলাকার কুদ্দুস মিয়ার ছেলে কৃষক আলম হোসেন, দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান ও সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম।

নিহত দৌলতের স্বজনরা জানান, বিকেলে চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নে ধানের জমিতে কাজ করছিলেন দৌলতুর রহমান। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বুড়িচং উপজেলায় নিহত আলম হোসেনও কৃষি জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে নিহত হন। তিনি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাঁচোড়া এলাকার বাসিন্দা।

দেবিদ্বার উপজেলা ও সদর দক্ষিণ উপজেলায় নিহত ২ জনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

সিলেট:

সিলেটের কানাইঘাটে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে এক বর্গাচাষি কৃষক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুজন।

বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার দিঘীরপার পূর্ব ইউনিয়নের শফিক হাওরে এ ঘটনা ঘটে।

বজ্রপাতে নিহত বর্গাচাষি দক্ষিণ কুয়রেরমাটি গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে বাবুল আহমদ (৪৮)। বজ্রপাতে ঝলসে গুরুতর আহতরা হলেন- নিহত বাবুলের ভাতিজা ফাহিম আহমদ (১৭) ও মানিকপুর গ্রামের বাবু বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস (১২)।

স্থানীয়রা জানান, দুপুরে স্থানীয় শফিকের হাওরে বর্গা জমিতে বোরো ধান কাটতে যান বাবুল। সঙ্গে ছিলেন ভাতিজা ফাহিম ও প্রদীপ। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঝলসে গিয়ে গুরুতর আহত হন তারা। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বাবুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

সর্বশেষ সংবাদ

আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিল ইরান
বজ্রপাতে পাঁচ জেলায় প্রাণ গেল ১১ জনের
যুগ্ম সচিব মর্যাদার ৩ জনকে বদলি
টিকেট নিয়ে সেনা সদস্য-টিটিই'র বাকবিতন্ডায় পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে ভাংচুর, আহত ৫
সারা দেশে আরও ২ দিন হিট অ্যালার্ট জারি
জমি নিয়ে বিরোধ: স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ
কক্সবাজারে হবে উন্মুক্ত কারাগার, শিগগিরই নির্মাণ শুরু : সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
গাইবান্ধায় ট্রাকের ধাক্কায় পাওয়ার টিলার চালক নিহত
আরেক দফা কমলো স্বর্ণের দাম
জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছে : সেতুমন্ত্রী
মে মাসে আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর
জায়েদ খানের উপস্থাপনায় মঞ্চ মাতাবেন জেমস
আইপিএল থেকে কত টাকা পাচ্ছেন মুস্তাফিজ?
পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা করে ৯৯৯-এ ফোন দিলেন স্বামী
গণমাধ্যমের যে কোনো সমালোচনাকে সরকার স্বাগত জানায়: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
কংগ্রেসকে পাকিস্তানের ‘মুরিদ’ বললেন নরেন্দ্র মোদি
দেশে নির্মাণ হচ্ছে স্বর্ণ কারখানা
টাঙ্গাইলে প্রতীক পেয়েই প্রার্থীদের প্রচারণা
ওমরাহ পালন করতে সস্ত্রীক ঢাকা ছাড়লেন মির্জা ফখরুল