বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৭

বিষাদ বসুধা

পত্রিকায় মোহিনীর একটি ছবি ছাপা হয়েছে। ছবির সঙ্গে বড় হেডলাইনে খবর। অবহেলিত মানুষের পাশে মোহিনী। খবরটি দেখে মোহিনী খুবই বিব্রত। পত্রিকা হাতে নিয়ে তিনি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। মোহিনী যেন একটা পাথরের মূর্তি। তিনি মনে মনে বলেন, কে করল এই কাজটা? কেন করল? যে করেছে সে নিশ্চয়ই আমার ভালো চায় না। নিশ্চয়ই কোনো স্বার্থের জন্য কাজটি করেছে। ছবি ছাপা হবে মন্ত্রী-এমপিদের; যারা রাজনীতি করেন। আমি তো রাজনীতি করি না। রাজনীতির ধারেকাছেও যাই না। আমার ছবি কেন পত্রিকায় ছাপা হবে?

মোহিনীর ভাবনা মিলিয়ে যেতে না যেতেই তার মোবাইল ফোনের রিং বাজে। এই সাত সকালে কে ফোন করল? ফোন ধরতে ইচ্ছা করছিল না তার। দুতিনবার রিং বাজার পর তিনি ফোন কেটে দিয়ে নিজের কক্ষের দিকে যান। টেবিলের উপর পত্রিকা ছুড়ে ফেলে তিনি খাটের উপর বসেন। খবরটি নিয়ে ভাবেন।

আসলে আত্মপ্রচার মোহিনী পছন্দ করেন না। ভালোও লাগে না। তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও পত্রিকায় খবরটি এসেছে। তার অফিসের লোকরাও জানত না, মোহিনী এতো এতো মানুষকে সহায়তা করেছে। পত্রিকায় খবর দেখে অনেকের চোখ কপালে ওঠে। মনে মনে গর্ববোধ করে। অনেকে মোহিনীর অফিসে এসে আবার অনেকে টেলিফোনে তাকে ধন্যবাদ জানায়। এতেও মোহিনী বিব্রত হয়। এটা অবশ্য মোহিনীর ধাতে সওয়ার না। সইবেও না কোনোদিন। কারণ, তার বাপ-দাদার চরিত্রও এমনই। তারাও আত্মপ্রচার একদম পছন্দ করতেন না কিংবা করেন না। মোহিনীর দাদাকে বলা হতো দাতা হাতেমতাই। কারণ তিনি দুই হাতে মানুষকে বিলাতেন। নিজের বা পরিবারের সুখ-শান্তির কথা তিনি ভাবতেন না। তার কথা, যতক্ষণ পর্যন্ত হাতে টাকা থাকবে ততক্ষণ বিলিয়ে যাও। একজন দানবীর হওয়া সত্ত্বেও তিনি তা কাউকে বলতেন না। গোপন রাখতেন। এক হাতে বিলালে অন্য হাত তা জানতে পারত না। পবিত্র কোরআনে নাকি মহান সৃষ্টিকর্তা এরকম নির্দেশনাই তার বান্দাকে দিয়েছেন।

মোহিনীর বাবাও সেই অভ্যাস পেয়েছেন। তিনিও দুই হাতে মানুষকে বিলান। সেই রক্ত মোহিনীর শরীরে বহমান। কাজেই ধাতে সইবে কেন?

অনেকেই আছেন সামান্য সহায়তা করতে গিয়ে বিশাল ঢাকঢোল পেটান। সহায়তা দেওয়ার আগ থেকে শুরু হয়। টানা এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ চলতে থাকে। আত্মপ্রচার কাহাকে বলে তা তারা বুঝিয়ে দেন। ভাবখানা এমন যেন না জানি কি করে ফেলছেন। অথচ তাদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি সহায়তা করেও অনেকে কাউকে তা বলেন না। বরং বলতে লজ্জাবোধ করেন। মোহিনী এমনিতেই প্রচারবিমুখ মানুষ। তার ওপর আবার নিজের দান-খয়রাতের কথা অন্য জানাবে! মোটেই না।

মোহিনীর মোবাইলে আবার রিং বাজে। তিনি মনে মনে বিরক্ত হন। কে আবার ফোন করেছে? কেন বার বার ফোন করছে? মোহিনী মোবাইল হাতে নিয়ে দেখেন। নম্বরটা অচেনা। তিনি আবার ফোন কেটে দেন। তিনি বুঝতে পারছেন তার মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে আছে। এসময় ফোন ধরা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাই তিনি ফোন ধরা থেকে বিরত থাকেন। তিনি ফোনটা হাত থেকে টেবিলের ওপর রাখতে যাবেন এমন সময় ম্যাসেজ আসার টোন পান। তিনি ম্যাসেজ খুলে দেখেন, আসিফের ম্যাসেজ। সে-ই বার বার তাকে ফোন দিচ্ছে। মোহিনী নিজেই ওই নম্বরে ফোন দেন। আসিফ ফোন ধরেই বলেন, সরি তোমাকে সাত-সকালে বিরক্ত করলাম।
না না। বিরক্ত কেন বলছ?
কয়েকবার ফোন দিলাম তো! তুমি ধরোনি। তাই ভাবলাম তুমি বিরক্ত হচ্ছ কি না।
এটা যে তোমার নম্বর সেটাই তো জানি না।
ওহ! তোমাকে এই নম্বরটা দেইনি না?
না তো!
তোমার ওপর একটা লেখা পড়লাম। ভীষণ ভালো লাগল। এটা জানানোর জন্যই তোমাকে ফোন দিয়েছি।
কোথায় পড়েছ?
প্রথম আলোতে।
তাই নাকি?
হুম।
কি লিখেছে?
তুমি পড়ে দেখ। খুব ভালো লিখেছে। সত্যিই খুব ভালো লিখেছে। আমি তোমাকে কতবার বললাম, তুমি যে মানুষকে সহায়তা করছ এটা নিয়ে একটা লেখা ছাপি। তুমি বললে না। আত্মপ্রচার তুমি পছন্দ করো না। আমি নিজেও অবশ্য জানি। তুমি পছন্দ করো না বলে আমি খুব বেশি চাপ দিইনি।
কাজটা কে করল বলতে পার?
আমি জেনে দিতে পারব। তুমি জানতে চাও?
হুম। জানতে চাই। যে করেছে সে হয়ত না জেনেই করেছে।
জেনে করুক আর না জেনে করুক; কাজটা যে খুব ভালো করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

মোহিনী কোনো কথা বলেন না। তিনি চুপ করে আছেন। মোহিনী কোনো কথা বলছেন না দেখে আসিফ আহমেদ বললেন, কি ব্যাপার! কিছু বলছ না যে! তোমার ওপর আমরা একটা আর্টিকেল করে দিই?
না না। কোনো দরকার নেই। এটা বাবা দেখলে ভীষণ রাগ করবেন। তাকে যে কি করে সামলাবো সেটা নিয়ে ভাবছি।
হুম। উনিও তো আত্মপ্রচার একদম পছন্দ করেন না।
হ্যাঁ। আমার চেয়ে কিন্তু বাবা অনেক বেশি সহায়তা করছেন। অথচ কেউ জানেও না। আসলে বাবা জানতে দেন না। আমারটা দেখলে উনি কি ভাববেন কে জানে?
তুমি তো আর নিজে করাওনি! তুমি এটাই তাকে বলে দেবে।
হুম। তারপর তোমার কথা বলো। কেমন আছ?
আর বোলো না। আয়-রোজগার একেবারেই কমে গেছে। বেসরকারি বিজ্ঞাপন একেবারেই নেই। কিছু সরকারি বিজ্ঞাপন পাচ্ছি। তার টাকা কবে পাওয়া যাবে তার কোনো ঠিক নেই। এদিকে ঠিকমতো বেতন দিতে পারছি না।
সে কী! বেতন দিতে পারছ না মানে? এতো বড় প্রতিষ্ঠান! আর তোমরা বেতন দিতে পারছ না? এটা কেউ বিশ্বাস করবে?
সেটাই তো কথা। মানুষ ভাবে, আমরা না জানি কত সুখে আছি। বড় কোম্পানিতে চাকরি করি। টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। যত বড় ঝড় আসুক তা সামাল দেওয়া কোনো ব্যাপার না। অথচ আলোর নিচে যে অন্ধকার তা কেউ বুঝতে চায় না। আরও সমস্যা কি জানো?
কি?
বেসরকারি বিজ্ঞাপনদাতারা বলে, এতোবড় কোম্পানির পত্রিকা! আমরা কেন বিজ্ঞাপন দেব? ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন থেকে আমরা বঞ্চিত। ব্যাংকগুলোর বিজ্ঞাপন পাই না। কারণ, আমাদের মূল প্রতিষ্ঠান প্রায় সবগুলো ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়ে বসে আছে। কত যে ঝামেলায় আছি তা যদি বুঝতে?
তাই বলে এই সময় বেতন না দিলে..মোহিনী আমতা আমতা করে বললেন।
সে কথাই তো তোমাকে বলছি। এরা কতই বা বেতন পায়। অথচ আমরা ঠিকমতো বেতন দিতে পারছি না। সবার মধ্যে দুশ্চিন্তা ভর করেছে। কারো মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
তোমার চেয়ারম্যানকে বলো, বেতনের টাকাটা অন্তত দিক। তোমরা তো মূল প্রতিষ্ঠানের অনেক বিজ্ঞাপনও ছাপো। তাই না?
হ্যাঁ। কিন্তু সেই টাকা চাওয়া যাবে না। বুঝতে পারছ? সেই টাকা চাইতে গেলেই দোষ।
এখন তো একটা বিপদের সময়। তুমি বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই দেবে।
আসিফ আহমেদ বললেন, তুমি কি ভেবেছ আমি বলিনি? অনেকবার বলেছি। চেয়ারম্যান বললেন, এক পয়সাও আমি দিতে পারব না। আমি দেবো কোত্থেকে? বরং এই পত্রিকা করে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। কেন যে জেদের বশে পত্রিকা করতে গেলাম! অথচ এই পত্রিকার কারণে যে তারা টিকে আছে সে কথা বেমালুম ভুলে গেছে।
কি আর করবে? ধৈর্য ধরো। এছাড়া আর কি বলব?
ধৈর্য কত ধরা যায়? ধৈর্যেরও তো একটা সীমা আছে। সরি, তোমাকে অনেক কথা বলে ফেললাম মোহিনী। কিছু মনে কোরো না।
না না! কি বলো! শোনো, আমাদের কাছে বিজ্ঞাপনের কোনো টাকা পাওনা থাকলে আমাকে বোলো। আমি দিয়ে দেব।
আসিফ আহমেদ সন্তুষ্টির সঙ্গে বললেন, ধন্যবাদ মোহিনী। অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থেকো। সাবধানে থেকো।
হুম। সাবধানে তো থাকতেই হবে। তা না হলে সবকিছু যে ওলোটপালোট হয়ে যাবে। তুমিও ভালো থেকো। ধন্যবাদ।

মোহিনী টেলিফোন রেখে আবার পত্রিকাটা হাতে নেন। প্রতিবেদনটা ভালো করে দেখেন। এরমধ্যেই রহিমাবিবি হন্তদন্ত হয়ে মোহিনীর কক্ষে ঢুকে বলল, আপামনি, আপামনি! আপনারে খালু ডাকতাছে?
মোহিনী রহিমাবিবির দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর তিনি বললেন, বাবা কি করছেন রে?
নাশতা করতেছেন। আপনারে ডাকতেছেন।
মা কোথায়?
খালাম্মাও নাশতা করতেছেন।
ও। আচ্ছা যাচ্ছি।
রহিমাবিবি চলে যায়। মোহিনী ভাবেন, বাবা কি পত্রিকাটা দেখেছেন? আমার নিউজটা তার কি চোখে পড়েছে? এ বিষয়ে বাবা আমাকে কিছু বলতে পারেন। নিশ্চয়ই বলতে পারেন। তা বলুন। আমি তো নিজের থেকে নিউজটা করাইনি। ওরা নিজেরাই করেছে। আমি জানিও না। এ কথাই বাবাকে বলব।
মোহিনী খাবার ঘরে পা রেখেই বললেন, শুভ সকাল বাবা। কেমন আছো?
শুভ সকাল। আমি ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো? ঘুম হয়েছে তো?
হ্যাঁ বাবা। হয়েছে। ভালো ঘুম হয়েছে। বাবা, আজ একটা কাণ্ড ঘটে গেছে।
মোহসীন আহমেদ মুখের খাবার এপাশ ওপাশ করে গিলে ফেললেন। কি ঘটেছে মা?
ও তুমি দেখনি!
দেখেছি। তুমি কি কাণ্ড ঘটেছে সেটা আগে বলো!
বাবা, প্রথম আলো পত্রিকায় আমাকে নিয়ে একটা ফিচার লিখেছে। এটা দেখেছ?
হুম। দেখলাম। তুমি করিয়েছ নাকি?
না না বাবা! আমি কেন করাতে যাব? পড়ে কি তোমার তাই মনে হয়েছে?
না। তা মনে হয়নি।
আনোয়ারা বেগম বললেন, কি লিখেছে রে?
মোহসীন আহমেদ বললেন, ওকে নিয়ে পত্রিকায় একটা ফিচার করেছে। বেশ ভালো লিখেছে। ওর মানবিক কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে আর কি!
তাই নাকি! দেখিনি তো! আজকের পত্রিকায়?
মোহিনী বললেন, হ্যাঁ মা। ওরা নিজেরাই করেছে। আমার সঙ্গে কথাও বলেনি।
মোহসীন আহমেদ বললেন, আমি জানতাম, তুমি নিজের থেকে এটা করাবে না। করাতে পার না। আফটারঅল, তুমি আমার মেয়ে।
এই! শুধু আমার মেয়ে কেন বললে? আমি কি মানবিক নই?
সরি সরি। আমাদের মেয়ে।
ঠিক বলেছ বাবা। আমি সব সময়ই সে বিষয়ে সতর্ক। আমি নিজেও আত্মপ্রচার পছন্দ করি না। অনেকেই আমার সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছে। আমাকে অনুরোধ করেছে। আমার এক বন্ধু আছে পত্রিকার সম্পাদক।
তোমার বন্ধু সম্পাদক!
হ্যাঁ বাবা।
কে সে?
আসিফ আহমেদ।
ও তাই নাকি! ও তো খুব ভালো ছেলে! খুবই ভালো সাংবাদিক।
হ্যাঁ বাবা। ভীষণ সৎ।
ও কি বলে? মোহসীন আহমেদ জানতে চাইলেন।
মোহিনী বললেন, আমাকে নিয়ে একটা লেখা লেখাতে চেয়েছিল। আমি রাজি হইনি।
ধন্যবাদ। তারপর, তোমার ব্যবসার কি অবস্থা?
চলছে বাবা। বাইরের কিছু অর্ডার পেন্ডিং আছে। অসুবিধা হবে না আশা করছি।
বেশ বেশ।
বাবা, আমার কাজকর্ম ঠিক আছে তো?
হ্যা মা। একদম ঠিক আছে। ঠিক না থাকলে বলতাম।
ধন্যবাদ বাবা।
মোহিনী পত্রিকাটা তোর কাছে আছে?
হ্যাঁ মা। আমি তোমাকে দেখাচ্ছি।

মোহসীন আহমেদ দরাজ গলায় রহিমাবিবিকে ডাকলেন। রহিমাবিবি, রহিমাবিবি! আজকের পত্রিকাটা নিয়ে আয় তো!
রহিমাবিবি পত্রিকা নিয়ে দৌড়ে খাবার ঘরে এসে মোহসীন আহমেদের হাতে পত্রিকা দেয়। তিনি মোহিনীকে নিয়ে লেখা প্রতিবেদনটি বের করে আনোয়ারা বেগমের হাতে এগিয়ে দেন। তিনি গভীর মনোযোগে পড়তে শুরু করেন। মোহিনী চায়ের কাপ হাতে নিয়ে নিজের কক্ষের দিকে এগিয়ে যান।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১২

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১১

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৮

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

আরএ/

 

 

 

আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি

হিট অ্যালার্ট জারি। ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে চলমান তাপমাত্রার পারদে উঠতি গতার খুব একটা হেরফের না হওয়ায় এখনও অস্বস্তি কমেনি। মাথার ওপর গনগনে সূর্যকে সঙ্গী করেই প্রচণ্ড দাবদাহে নাজেহাল পরিস্থিতি পার করছে মানুষ। যদিও কয়েকদিনের তুলনায় কিছুটা বাতাসের উপস্থিতি থাকলেও পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান এ তথ্য জানান।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, আমরা এর আগে তিন দিনের যে হিট অ্যালার্ট জারি করেছিলাম তার মেয়াদ আজ শেষ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) থেকে আরও তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হবে। কারণ, আপাতত বড় পরিসরে বৃষ্টি হয়ে তাপপ্রবাহ দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা হিট অ্যালার্ট জারি করে সরকারকে জানিয়ে দিই। সরকার সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। সংশ্লিষ্টরা তাদের করণীয় যা সেটা করবে।

তিনি বলেন, সারাদেশের তাপমাত্রা গতকালের থেকে আজ কিছুটা বেড়েছে। চলতি এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহ পুরোপুরি দূর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা দেখছি যে এটা মে মাসের ২ থেকে ৩ তারিখ পর্যন্ত চলবে। এরপর হয়তো বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এর আগে পর্যন্ত বড় পরিসরে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। স্থানীয়ভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে।

মো. আজিজুর রহমান বলেন, আপাতত দিনের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তাপমাত্রা আর খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় দেওয়া পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিবিরাজ করতে পারে।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প আসছে বাংলাদেশের পর্দায়

ডকুফিল্ম ‘মুচাচোস’ এর পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবের কাছে হেরে অঘটন দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল আলবিসেলেস্তারা। তবে শেষমেশ লিওনেল মেসির হাতেই ওঠে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি, এমন বিশ্ব আসরকে সেরা বলতে বাধ্য যে কেউ।

অবিস্মরণীয় এই বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ নিয়ে এরইমধ্যে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু ডকুফিল্ম। যার মধ্যে আলোচিত একটি স্প্যানিশ ভাষায় নির্মিত ডকুফিল্ম ‘মুচাচোস’।

স্প্যানিশ পরিচালক জেসাস ব্র্যাসেরাস নির্মাণ করেছেন ১০০ মিনিটের এই ডকুফিল্ম। গত ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনায় মুক্তি পাওয়া ‘মুচাচোস’ সেখানকার দর্শকদের মধ্যে দারুণ সাড়া তুলেছিল।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্টার সিনেপ্লেক্স জানিয়েছে, আগামী শুক্রবার ‘মুচাচোস’ মুক্তি পাবে এই মাল্টিপ্লেক্সের সবগুলো শাখায়।

বাংলাদেশে ডকুফিল্মটি মুক্তি নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের মিডিয়া ও মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার বিপুলসংখ্যক সমর্থক রয়েছে। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার খেলা উপভোগ করেছে কোটি মানুষ। বিশ্বকাপ জয়ের পর ঢাকাসহ সারাদেশ উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের সমর্থকদের উন্মাদনা দেখে রীতিমত অবাক হয়েছেন আর্জেন্টিনার মানুষও।

“লিওনেল মেসির হাত ধরে বিশ্বকাপ জয়ের এই মুহূর্ত নিয়ে ভক্তদের উৎসাহ ফুরাবে না সহজে। এই ভক্ত-সমর্থকদের জন্যই ‘মুচাচোস’ নিয়ে এসেছি আমরা। আশা করি এই ছবি দেখাটা চমৎকার একটা ব্যাপার হবে দর্শকদের জন্য।’’

‘মুচাচোস’এ অভিনয় করেছেন জেসুস ব্র্যাসেরাস, বসসি অগাস্টিন বসি, হার্নান ক্যাসশিয়ারি, ম্যাক্সিমিলিয়ানো লাসানস্কিসহ আরও অনেকে।

শরীয়তপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ৫

হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তি। ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরের জাজিরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে দফায় দফায় উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের সারেংকান্দি এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়।

আহতরা হলেন- শাহাবুদ্দিন সারেং (৩০), মো. আরশাদুল (১১), সৈকত সরদার (১৯), হাজেরা বেগম (৭৫) ও আকাশ হাওলাদার (২৮)।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্র জানায়, জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী এবং তার নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আব্দুল জলিল মাদবরের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গত ২৭ মার্চ দুপক্ষের সংঘর্ষে বোমার আঘাতে সজীব মুন্সী নামের এক যুবক গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সেই ঘটনার সূত্র ধরে আজ আবারও দুপক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়ায়। সকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এসময় তারা সারেংকান্দি এলাকায় ফসলি জমিতে নেমে একে–অপরকে লক্ষ্য করে হাতবোমা (ককটেল) ছুঁড়তে থাকে। ককটেলের মুহুর্মুহু শব্দে ভারী হয়ে উঠে আশপাশ। এই ঘটনায় শাহাবুদ্দিন, আরশাদুল, সৈকত, আকাশ ও হাজেরা নামে ৫ জন গুরুতর আহত হয়। পরে তাঁদের উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহাবুদ্দিন, আরশাদুল, সৈকত ও আকাশকে ঢাকায় পাঠান। এছাড়া দুপক্ষের বেশকিছু বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়। বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আব্দুল জলিল মাদবর অভিযোগ করে বলেন, ‘কুদ্দুস বেপারীর লোকজন গতকাল মঙ্গলবার আমাকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে স্টাটাস দিয়ে বলেন, ‘‘বাবার জন্মে হয়ে থাকলে সবার সামনে গিয়ে মারামারি করিস। পোলাপান সামনে দিয়ে মারামারি করিস না। আগামীকাল সকালে শুরু হবে।’’ এ বিষয়ে আমি পুলিশকে জানিয়েছি। পরে আজ কুদ্দুস বেপারীর লোকজন আমার লোকজনের বাড়িঘর ভাংচুর করে ও আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়।’

তবে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুস বেপারী বলেন, ‘জলিল মাদবর মারামারি করার জন্য কয়েক গ্রাম থেকে লোকজন এনে আমার লোকজনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আমার একজন লোক মুমূর্ষু অবস্থায় আছে।’

এ বিষয়ে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক বছর যাবত বিলাসপুর ইউনিয়নে দুইটি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব, হামলা-মামলা চলছে। তারই জেরে আজ দুই পক্ষ সংঘর্ষে জরায়। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সংঘর্ষ থামাতে চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা পৌঁছানোর আগেই দুপক্ষের অন্তত চারজন লোক আহত হয়। তারা বেশ কিছু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। যারা এসব ঘটিয়েছে তাদের আটকের চেষ্টা চলছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ সংবাদ

আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প আসছে বাংলাদেশের পর্দায়
শরীয়তপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ৫
মুক্তি পেল ইমতু রাতিশ ও অলংকার এর 'বরিশাইল্লা সং'
জরুরি সাংগঠনিক নির্দেশনা দিলো ছাত্রলীগ
সাহিত্য চর্চার আড়ালে শিশু পর্নোগ্রাফি বানাতেন টিপু কিবরিয়া
সাজেকে শ্রমিকবাহী ট্রাক খাদে পড়ে নিহত ৬
ধাওয়া খেয়ে গরু ও গাড়ি রেখে পালালো চোর, গাড়িতে আগুন দিল জনতা
আর্জেন্টাইন ফুটবলার কার্লোস তেভেজ হাসপাতালে ভর্তি
সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এফডিসিতে মানববন্ধন
রাজবাড়ীতে হিটস্ট্রোকে স্কু‌লশিক্ষকের মৃত্যু
প্রসূতির পেটে গজ ও ফুল রেখে সেলাইয়ের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন
তাপদাহ কমে গেলে লোডশেডিং থাকবে না: বিদ্যুৎ সচিব
ইন্টারনেট ছাড়াই হোয়াটসঅ্যাপে ছবি-ভিডিও পাঠাবেন যেভাবে
ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশি নারী বক্সার জিন্নাত ফেরদৌস
নিজে না মেরেও সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন রিয়াজ
নারী কর্মীদের বোরকা ও নেকাব পরা নিষিদ্ধ করল চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল
ব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
কালশী উড়ালসেতুর নাম বদলে হলো শেখ তামিম মহাসড়ক
ক্যান্সারে না ফেরার দেশে পেপার রাইম ব্যান্ডের সাদ