সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫ | ১৬ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

দেশ নিয়ে আমাদের যেভাবে ভাবতে হবে

ক্ষুদিরাম বসু একজন ভারতীয়-বাঙালি বিপ্লবী কিশোর যিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করেছিলেন। মাতা-পিতাহীন শিশুটি বাঙ্গালী মায়ের পরিচয়ে বেড়ে ওঠেন। এই দেশের মাটিই ছিলো তার মা। নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড নয় বরং সমগ্র ভারতবর্ষকে ছেলেটি নিজের সম্পদ বলে মনে করতেন। এদেশের সকল মানুষকে নিয়েই ছিলো তার পরিবার। তাইতো কিশোর বয়সেই তার ভূ-খন্ড ও পরিবারকে ইংরেজ বাহিনীর শোষণ পীড়ন থেকে রক্ষা করতে হাতে অস্ত্র তুলে নেন। সাড়া ফেলেছেন ব্রিটিশ মহলে। এমনকি ব্রিটিশদের ঘুমও হারাম করেছেন। শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন বয়সে ফাঁসির কাষ্ঠ বরণ করেন।

আমরা ঢাকার ইডেন কলেজের ছাত্রী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের গল্প জানি। তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করলেও ব্যক্তি সুখকে বরণ না করে তিনি সমগ্র বাঙ্গালীর সুখ বরণ করতে চেয়েছেন। জ্বলে উঠেছেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আমরা তিতুমীরের গল্প জানি। তিতুমীরের গল্প ও সাহসিকতার বয়ান তুলতে গিয়ে মুখে ফেনা তুলি। আমরা নবাব সিরাজউদ্দৌলার গল্প পড়তে পড়তে চোখে ছানি পেলেছি। মীর জাফরের নামটিকে গালি হিসেবে গ্রহণ করেছি। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে আদর্শ হিসেবে পেশ করি। তাজ উদ্দিন আহমদ, কামারুজ্জামান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও মনসুর আলীর গল্প শোনাই এবং তাদেরকে শ্রদ্ধা করি। আবার খন্দকার মোস্তাকের নাম শুনলেই মুখে থুতু পেলি মন ভরে ঘৃণা করি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের কথা বলি। বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করি। চেতনায় বুদ হয়ে যাই।মুখে মুখে বাংলা মায়ের জন্য জীবন বিলাই। বক্তব্য দিতে গেলে জ্ঞান হারিয়ে পেলি। কে কার থেকে বেশি চেতনাময়ী বক্তব্য উপস্থাপন করবো সে প্রতিযোগিতায় নেমে যাই।

দেশকে ভালোবাসা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। দেশ চেতনা আমাদের হৃদয়ের গভীরে সুপ্ত থাকে। দেশের ক্লান্তি, দুঃখ-দুর্দশা, দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে আমরা দেশের জন্য টান অনুভব করি। সে টান থেকেই ১৯৭১ সালে দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার আন্দোলনে দেশের লাখো তরুণ অকাতরে নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে। মনীষী জ্যাকসন বলেছেন, ‘যে মায়ের সন্তান দেশের জন্যে জীবন দিয়েছে, তার মাতৃত্বের গৌরব চির ভাস্বর। দেশপ্রেম থাকা চাই বৈদেশিক আগ্রাসনকে প্রতিহত করার জন্যে। ইতিহাস বার বার এটাই প্রমাণ করেছে যে, দেশপ্রেমিক জাতি শত্রুর কাছে কখনও পরাজিত হয় না। সে জাতির অন্তরে জ্বলতে থাকে দেশপ্রেমের আগুন অনির্বাণ শিখার ন্যায়। সারা পৃথিবীর মায়া-মমতা, স্নেহ সব একত্রিত করলেও যেমন মায়ের অকৃত্রিম স্নেহের সঙ্গে তুলনা করা যায় না তেমনি সারা পৃথিবীর ঐশ্বর্য-বৈভব ও সৌন্দর্যের সঙ্গে নিজ দেশের কোনো তুলনা হতে পারে না। কবি তার কাব্যে, দেশকর্মী তার সমাজসেবায়, গায়ক তার গানে, শিল্পী তার ছবিতে, বৈজ্ঞানিক তার বিজ্ঞান চর্চায়, শিক্ষক তার একনিষ্ঠ শিক্ষকতায় দেশপ্রেমের পরিচয় প্রদান করতে পারেন। কবি বলেছেন, ‘তুমি দেশকে যথার্থ ভালবাস তার চরম পরীক্ষা, তুমি দেশের জন্য মরতে পার কি-না।’ আমার দেশের ছেলেরা যুগে যুগে জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছে তারা এদেশকে যথার্থ ভালোবাসে। তাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে তারা তৃপ্তির সহিত জীবন দিয়েছে।তাদের ভাবনা ছিলো আমার জীবনের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হলে এদেশে আর কাউকে আমার মত জীবন দিতে হবে না। মা-বোন ধর্ষিতা হওয়ার পরও হেরে যায়নি। তাদের ভাবনা ছিলো আমার ধর্ষিতা হওয়ার বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হলে এদেশে আর কাউকে ধর্ষিতা হতে হবেনা। বিধবার চিন্তা ছিলো আমার পর আর কাউকে বিধবা হতে হবেনা।

আফসোস যে আদর্শ আজ আমাদের মুখে মুখে। আমরা আমাদের বীরাঙ্গনা মায়ের স্বপ্ন, শহীদ ভাইয়ের চেতনা, বিধবা মায়ের আকুতিময় চাহনির মূল্য দিতে পারিনি। কথায় আছে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলেও তা রক্ষা করতে পারিনি। আমাদের আজ বহিঃশত্রু নেই। আমরা নিজেরাই আজ নিজেদের শত্রু। রক্ষক আজ ভক্ষক। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রুটিরুজির উপকরণে পরিণত। জনগণকে চেতনার বড়ি খাওয়াইয়া নিজেরা নিজের মত করে দেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছি। সর্বত্র দুর্নীতি। সরকারি অফিসের পিয়ন থেকে সর্বোচ্চ কর্তা পর্যন্ত প্রায় সবার বিরুদ্ধে দুর্নতির অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও এই অভিযোগ থেকে মুক্ত নন। দুর্নীতির এতোই ছড়াছড়ি যে, খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখি নৈতিক অবক্ষয়, অপহরণ, ছিনতাই, হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ নানান সমস্যা। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে যতই স্বপ্ন দেখাবার চেষ্টা করুক না কেন, আমরা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও তার কোনো সুফল দেখিনি।

রাজনৈতিক দল গুলো পরস্পরকে দোষারোপ করে কাঁদা ছোড়াছুড়ির মাধ্যমে দেশের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছেন। সত্যিকার অর্থে আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমের বড়ই অভাব। এ কথায় কেহ বা মনোক্ষুন্ন হতে পারে, কেউবা বলতে পারে আমরা কি দেশকে ভালবাসি না? অবশ্যই আমরা সবাই দেশকে ভালবাসি। কিন্তু কিছু কিছু কুলাঙ্গার দেশের স্বার্থ থেকে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থটাকে অনেক বড় করে দেখে।যার ফলে দেশের আজ এই দুর্গতি।আমরা দেশটাকে নিজের করে ভাবতে ভুলে গেছি। দেশের মানুষকে নিজের আপন বংশের মানুষ মনে করতে ভুলে গেছি। নিজ পেটের ধান্ধায় সব ভুলে হিংস্র নেকড়ের রূপ ধারণ করেছি। আজ আমরা এতোই বেপরোয়া যে, যেন সুযোগ পেলে নিজ ভূখন্ডকে বিক্রি করে দিয়ে ইউরোপ আমেরিকায় গিয়ে অবস্থান নেই। নিজেকে নিজে ভালো রাখতে গিয়ে আমরা নিজেদের অস্তিত্বকে ভুলে গেছি। হারিয়ে পেলেছি মায়ের মমতার স্মৃতি। ভুলে যাই এদশের ধুলো-বালির মধ্যেই আমার অস্তিত্ব। আমাদেরকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হেবে। বাংলাকে নিজের মায়ের মত দেখতে হবে। জননী এবং জন্মভূমি আমাদের কাছে পরম শ্রদ্ধেয়া। জননী জন্মদাত্রী স্তন্যে-স্নেহে আমাদের লালন-পালন করে। আর জন্মভূমি আমাদের সবাইকে শস্যে ফলে অন্নে পানীয়ে পুষ্ট করে তোলে। তাই সেও আমাদের জননী। কবি গেয়ে ওঠেন, “তুমি মুখে তুলে দিলে, তুমি শীতল জলে জুড়াইলে, তুমি যে সকল সহা সকল বহা মাতার মাতা”। তাই জননীর কাছে আমাদের যেমন অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে অনুরুপ জন্মভূমির প্রতিও আমাদের সকলের অনেক দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। আমাদেরকে সে কর্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। একটি দেশের মানোন্নয়ন নির্ভর করে সে দেশের জনতার উপর। দেশের নাগরিকের মধ্যে দেশ মাতার ভালোবাসা না থাকলে দেশ মাতা কখনো সাফল্যে ভরপুর হয়না। একটি দেশকে অগ্রযাত্রার দিকে ধাবিত করে দেশ মায়ের টান ও ভালোবাসায়। দেশ প্রেম একটি মানুষকে দেশের প্রতি আত্ম ত্যাগে উৎসাহিত করে। যদি কোন ব্যাক্তি তার দেশের প্রতি নিজেকে ঋনী না মনে করেন তাহলে তার সেই দেশের নাগরিক ও সে দেশের একজন সন্তান দাবি করাই বৃথা।কারন প্রতিটি মানুষের তার দেশের প্রতি সীমাহীন ঋন রয়েছে। আর তা কখনোই শোধ হবার নয়। দেশকে ভিন্ন দেশের নিকট মহিমান্বিত করে তোলার জন্য একমাত্র উপায় হলো স্বদেশে প্রেম। দেশপ্রেম হলো দেশের প্রতি ভালবাসা। কিন্তু আপনি আপনার দেশের জনগণকে ভালো না বেশে আপনার দেশকে ভালবাসতে পারবেন না। আমাদের শপথ করতে হবে না, তবে আমাদের একে অপরকে শক্তিশালী করতে হবে, আমাদের অবশ্যই সাধারণ সমস্যাগুলো খুঁজে বের করতে হবে, সবার ভালোর জন্য অমিল গুলো বাদ দিয়ে সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে । আমাদেরকে আমাদের স্বরণীয় বরণীয় ব্যক্তিদের আত্মজীবনী শুধু লেখা পড়া ও বক্তৃতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের জীবনে তাদের চেতনা আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে।

দেশের উপকারে যিনি নিবেদিত প্রাণ তিনিই প্রকৃত নাগরিক। পক্ষান্তরে দেশপ্রেমহীন আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তি নিঃসন্দেহে অধমের সমান। সমাজ জীবনে প্রতিনিয়ত এহেন মূর্খের মত বিবেকবর্জিত অমানুষ দেখতেন বলেই হয়তো আমাদের পূর্বসুরি রাজনৈতিক নেতারা প্রথমে মানুষ হওয়ার কথাই বলতেন। কিন্তু পূর্বপুরুষদের মত আদর্শবান রাজনৈতিক নেতা আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। তাই তাঁদের মূল্যবান কথাগুলো স্মরণীয় ও বরণীয় বাণীতে পরিণত হয়েছে। আমরা সবাই নিজেদেরকে যতই লেখক, জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক বা সচেতন নাগরিক হিসাবে দাবি করি না কেন, আমাদের উচিত হবে আমাদের চিন্তা-চেতনায় সে সব ব্যক্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখা, তাঁদেরকে স্মরণ করা। দেশের রক্ষক হচ্ছেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ রাজনৈতিক নেতা, সরকারি আমলা ও সামরিকে বাহিনীর সদস্যরা। তাদের প্রথম ও একমাত্র কাজই হলো দেশকে ভালোবাসা। দেশটাকে নিজের মায়ের মত করে শ্রদ্ধা করা। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতা, সরকারি আমলা ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বহুলাংশে তাদের কর্মজ্ঞান ভুলে পথভ্রষ্ট হয়ে আছেন। নেতারা দেশের স্বার্থ থেকে নিজের ও দলের স্বার্থকে বড় করে দেখছেন। যার প্রকৃত উদাহরণ ফুটে ওঠে হরতাল নামক ধ্বংসযঙ্গের মাধ্যমে। হরতাল অবরোধ দাবি আদায়ের গণতান্ত্রিক উপায় হলেও তারা নিজ দলের স্বার্থে রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর করে দেশের সম্পদ বিনষ্টে একটুও কুণ্ঠাবোধ করেন না। তারা দলের স্বার্থ থেকে দেশে মাতার স্বার্থকে বড় করে দেখলে দেশে কোনো অরাজকতা থাকতো না। সবসময় গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন হয় বলে সরকারি দল দাবি করলেও তারা যখন হেরে বিরোধী দল হয়ে যায় তখন কারচুপির অভিযোগ তুলেন। স্বাধীনতাত্তোর দেশের একটি নির্বাচনেও বিরোধী দল কর্তৃক সরকারি দলকে অভিনন্দন জানাতে দেখলাম না। আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে নতুন করে দেশপ্রেমের বীজ রোপন করতে হবে। রাজনীতিবিদদের সার্বিক কর্মকাণ্ডই উপরেই দেশের ভবিষ্যত নির্ভরশীল। তারা রাজনীতিকে ব্যবসা বা পেশা হিসাবে নয়, সেবা হিসাবে নিতে পারলেই দেশের বর্তমান ভয়াবহ অবস্থার অবসান হবে। দেশের মঙ্গলে দেশের সকল নাগরিকেরও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। দেশকে প্রাণাধিক ভালবাসতে হবে এবং শুধু ভালবাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবেনা, দেশসেবায় ব্রত হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশপ্রেম নয় কোনো নিছক বিমূত আদর্শ, নয় কতগুলো প্রাণহীন শব্দের সমাহার। আমাদেরকে সোচ্চার কণ্ঠে বলতে হবে, জীবনকে ভালবাসি সত্য কিন্তু দেশের চেয়ে বেশি নয়।

 

লেখক
মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত ত্বোহা
প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।
ইমেইল-tohaarafat1998@gmail.com
মোবাইল-01781704368

 

Header Ad
Header Ad

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ত্রাণপ্রার্থীসহ নিহত আরও ৭২ ফিলিস্তিনি

ছবি: সংগৃহীত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বিমান ও স্থল হামলায় রবিবার (২৯ জুন) আরও অন্তত ৭২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ, যারা শুধুমাত্র খাদ্য সহায়তা গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ত্রাণকেন্দ্রে অপেক্ষা করছিলেন।

সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, দিনভর চলা এ হামলার অধিকাংশই হয়েছে গাজা শহর ও উত্তরাঞ্চলে। গাজার মেডিকেল সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, শুধু ওই এলাকাগুলোতেই নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৭ জন।

গাজা শহর থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা মুয়াত আল-কালহুত জানান, জেইতুন, সাবরা ও আল-জাওইয়া বাজার এলাকাগুলোতে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর আহতদের ঢল নামে উত্তর গাজার আল-আহলি হাসপাতালে। সেখানে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, “অনেক শিশু ও বৃদ্ধ আহত অবস্থায় হাসপাতালে ছুটে আসছেন। পর্যাপ্ত বেড ও চিকিৎসাসামগ্রী না থাকায় অনেকেই মেঝেতে শুয়ে আছেন।”

একইসঙ্গে ইসরায়েল পূর্ব গাজা শহরে লিফলেট বিতরণ করে সাধারণ মানুষকে দক্ষিণে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও, তার ঠিক পরপরই শুরু করছে ভারী বোমা হামলা, যা হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

রবিবারের হামলায় নিহতদের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহর উত্তরে অবস্থিত একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে সহায়তা নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনি। বিতরণ কেন্দ্রগুলো বর্তমানে পরিচালনা করছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (Gaza Humanitarian Foundation - GHF), যেটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সরাসরি সমর্থনপুষ্ট।

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, GHF কর্তৃক সহায়তা বিতরণ শুরুর (মে মাসের শেষদিক থেকে) পর থেকে ইসরায়েলি সেনারা প্রায় নিয়মিতভাবেই এসব কেন্দ্রে ভিড় করা মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে। এর ফলে এখন পর্যন্ত ৫৮০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং চার হাজারের বেশি আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

গাজা বর্তমানে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। খাদ্য, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ ও পানি সংকটে বহু মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর একাধিক প্রতিবেদনে এই অবরোধ ও বর্বরতাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হলেও ইসরায়েলের দমন-পীড়ন অব্যাহত রয়েছে।

Header Ad
Header Ad

ভুয়া মামলা ও নির্দোষকে হয়রানি রোধে ফৌজদারি কার্যবিধিতে নতুন বিধান যুক্ত: আসিফ নজরুল

আইন, বিচার ও সংসদ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ছবি: সংগৃহীত

ভুয়া মামলা দায়ের এবং নিরপরাধ ব্যক্তিকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি বন্ধে ফৌজদারি কার্যবিধিতে নতুন একটি বিধান যুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

রোববার (২৯ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও উপস্থিত ছিলেন।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, “বর্তমান সরকার নিজেদের আমলের কিছু অপব্যবহার নিয়ে বিব্রত এবং সেসব ইস্যু সমাধানে উদ্যোগী। তার মধ্যে অন্যতম হলো ভুয়া মামলা ও নিরপরাধ ব্যক্তিকে মামলায় জড়ানো। বিষয়টি নিয়ে দেশের ক্রিমিনাল ল’ এক্সপার্ট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(ক)/১৭৩(অ) নামে একটি নতুন বিধান সংযোজন করা হয়েছে।”

এই বিধানে বলা হয়েছে— কোনো পুলিশ কমিশনার বা জেলা পর্যায়ের পুলিশ সুপার যদি মনে করেন কোনো মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রাথমিক তদন্ত (Preliminary Investigation) করার নির্দেশ দেওয়া প্রয়োজন, তাহলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তা নির্দেশ দিতে পারবেন। সেই প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট বিবেচনায় ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন অভিযোগপত্রে নির্দোষ ব্যক্তি জড়িত, তাহলে বিচার-পূর্ব পর্যায়ে (pre-trial stage) তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন।

আসিফ নজরুল জানান, “এ ব্যবস্থার ফলে বিচার বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করে ভুয়া মামলা ও মামলা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। নিরপরাধ ব্যক্তিদের অহেতুক গ্রেপ্তারের সুযোগ কমবে। তবে যারা প্রকৃত অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।”

কুমিল্লার মুরাদনগরের আলোচিত ধর্ষণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “এই ঘটনায় আমরা মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। ঘটনাটি ঘটার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনে সরকার সময়োপযোগী সংশোধন এনেছে। এর বাস্তব উদাহরণ মাগুরার মামলায় দেখা গেছে। মুরাদনগরের ঘটনাতেও দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।”

Header Ad
Header Ad

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে একমত সব দল, আনুপাতিক ভোটে অনৈক্য: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। তবে সংসদ সদস্য নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আনুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে এখনো মতপার্থক্য রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ।

রোববার (২৯ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান।

আলী রীয়াজ বলেন, "প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে সংসদে প্রতিনিধি পাঠানোর সংখ্যাানুপাতিক পদ্ধতির বিষয়ে অধিকাংশ দল ইতিবাচক হলেও কিছু দল স্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছে। তবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রশ্নে প্রায় সব দলই নীতিগতভাবে সম্মত।"

তিনি আরও বলেন, "ভোটগ্রহণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা চলবে এবং আশা করা যায় ভবিষ্যতে দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্য গড়ে উঠবে। আপত্তি জানানো দলগুলোও পরবর্তী বৈঠকে তাদের অবস্থান আরও পরিষ্কার করবে।"

আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির ভিত্তিতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) বাতিল করে নতুন কাঠামোতে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ নিয়োগ প্রতিষ্ঠান কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং তথ্য কমিশনের প্রধান ও সদস্য নিয়োগে কাজ করবে।

নিয়োগ কমিটির কাঠামো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "সংসদ বহাল থাকাকালীন কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, উচ্চকক্ষ থাকলে তার স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা ও অন্য বিরোধীদলগুলোর একজন প্রতিনিধি। এছাড়া রাষ্ট্রপতির একজন প্রতিনিধি (অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ ব্যক্তি) এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত একজন আপিল বিভাগের বিচারপতি থাকবেন।"

আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে, তা হলো সংসদ বাতিল থাকাকালে, অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিয়োগ কমিটির কার্যকারিতা থাকবে কি না। অধিকাংশ দল মত দিয়েছে, সে সময়ে এই কমিটি কার্যকর রাখার প্রয়োজন নেই। নির্বাচন কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় নিয়োগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে সীমিতভাবে হতে পারে, তবে অন্যান্য কমিশনে নয়।

আগামী ২ জুলাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী বৈঠকের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে সংশোধিত প্রস্তাব ও অবশিষ্ট মতপার্থক্যগুলো নিয়ে আরও আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন আলী রীয়াজ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ত্রাণপ্রার্থীসহ নিহত আরও ৭২ ফিলিস্তিনি
ভুয়া মামলা ও নির্দোষকে হয়রানি রোধে ফৌজদারি কার্যবিধিতে নতুন বিধান যুক্ত: আসিফ নজরুল
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে একমত সব দল, আনুপাতিক ভোটে অনৈক্য: আলী রীয়াজ
ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা, তাপমাত্রা স্থিতিশীল
বসুন্ধরা থেকে নিখোঁজ এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহিরা সাভার থেকে উদ্ধার
বিধ্বস্ত মেসির মায়ামি, পিএসজির সামনে ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ আট
যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ধসে পড়ল তিনটি ভবন
র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা বাহরাইনকে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করলো বাংলাদেশ নারী দল
অবশেষে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করল এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স: জানুন কীভাবে পাওয়া যায় অস্ত্র রাখার অনুমতি
ভুলবশত ব্যাগে ম্যাগাজিন, বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত: আসিফ মাহমুদ
মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য এখনও অনেক দূর: আখতার হোসেন
ঢাকায় চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়
এনবিআরের শীর্ষ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি তদন্তে দুদক
বিএনপি–ছাত্রদলের বিরুদ্ধে শিবিরের পরিকল্পিত অপপ্রচারের অভিযোগ নাছিরের
আবাসিক হোটেল থেকে স্বামী–স্ত্রী ও ছেলের লাশ উদ্ধার
প্রথমবারের মতো ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রেমিট্যান্স
ইমাম-খতিবদের বেতন ২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি
আ.লীগ নেতাদের সঙ্গে সেই ফজর আলীর ছবি ভাইরাল
জনগণ ও অর্থনীতির স্বার্থে ছাড় নয়, এনবিআর কর্মীদের উদ্দেশ্যে কঠোর বার্তা