বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫ | ১২ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

তোমাদের ত্যাগেই কষ্টার্জিত আমাদের বিজয়

‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’ হিসেবে স্বীকৃত কুষ্টিয়া জেলা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘অস্থায়ী রাজধানী’ হিসেবে স্বীকৃত বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মুজিবনগর- দুটো নামের মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ১৬ ডিসেম্বর বাংলার আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো বিজয়ের আনন্দ। কুয়াশার পর্দা সরিয়ে সবুজ বনানীর বুক চিরে রক্তাক্ত বলয়টা ধীরে ধীরে সগর্বে মাথা তুলে দাঁড়াল। সুদীর্ঘ নয় মাসের বন্দি জীবনে মুক্তির উচ্ছাস। শিশিরে ভেজা উন্মুক্ত খোলা প্রাঙ্গণে পা রেখে প্রভাতী সূর্যের সোনালী আলোয় বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো বাংলার মানুষ। বিজয় উল্লাসে মত্ত অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধাদের রোষানল থেকে বাঁচাতে সুহৃদ প্রজ্ঞাবান সদ্য বিজয়ী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের কণ্ঠ ‘স্বাধীন বাংলা বেতার’ থেকে যখন ভেসে আসে- ‘দেশবাসীর কাছে আবেদন, বিচারের পর শাস্তি হবে। তাই আইন ও শৃঙ্খলার ভার নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না’, তখন মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৫০ কিলোমিটার সম্প্রচার যন্ত্রটি এক অসাধ্য সাধন করেছিলো বলেই মনে হয়েছিলো। গর্বের বিষয় এই যে, কুষ্টিয়া অঞ্চলের বহু শিল্পী ও কর্মী শব্দযুদ্ধে ভাষা সৈনিকের ভ‚মিকা গ্রহণ করেছিলেন। আব্দুল জব্বার, রাজু আহমেদ, কল্যাণ মিত্র, সুশীল বসু, শাহীন সামাদ, তিমির নন্দী, প্রসেনজিৎ বসু, বাবুয়া, মান্না হক, রঞ্জু, গণেশ, জমির প্রমুখ কণ্ঠসৈনিকদের অংশ গ্রহণের প্রভাবেই জাতি সেদিন একটি ফুলকে বাঁচাতে যুদ্ধ করতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১১টি সেক্টরের মধ্যে কুষ্টিয়া ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর নেত্বত্বে পরিচালিত হয় এবং পরবর্তীতে মেজর মঞ্জুর এই সেক্টরের নেত্বত্ব গ্রহণ করেন। কুষ্টিয়ার তৎকালীন বাঙালি জেলা প্রশাসক মো. শামসুল হক জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের দক্ষিণ-পশ্চিম ১ নম্বর জোনে স্বার্থক দায়িত্ব পালন করেছিলেন।



‘সুন্দর কুষ্টিয়া’ আয়োজিত শিল্পী ইতি খানের শিল্পকর্ম ‘শত্রু’ সুভ্যেনিরে প্রকাশিত গীতিকার ও নাট্যকার দুলাল জুবাইদ রচিত ‘অসুন্দরের বিপক্ষে’ কবিতায়-

হে মানুষ
নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সেই নিকৃষ্টতম
যার হাত প্রতিবেশীর রক্তে রঞ্জিত
যার চোখে কিশোরী ধর্ষণের লোলুপতা
যার দ্বারা মানবতা লাঞ্চিত।
এবং নিশ্চয়ই তার প্রতি অযুত কণ্ঠে বর্ষিত হোক
ঘৃণা! ঘৃণা! এবং ঘৃণা!...

আমাদের দুঃখী দেশটি আমাদের বড় ভালোবাসার দেশ, বড় মমতার দেশ। যারা জীবন বাজি রেখে এই স্বাধীন দেশটি আমাদের এনে দিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আর যেসব স্বাধীনতা বিরোধী, বিশ্বাসঘাতক, যুদ্ধপরাধী এই স্বাধীন রাষ্ট্রটিকে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা করছে তাঁদের জন্যে রয়েছে অন্তহীন ঘৃণা। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে বলতে চাই- যতদিন বাংলাদেশ টিকে থাকবে, এই দেশের মানুষ স্বাধীনতা বিরোধী, বিশ্বাসঘাতক, যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করবে না।

কুষ্টিয়ার স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী অ্যাডভোকেট আব্দুল জলিল স্মৃতিচারণে বলেন: “আমি, মারফত সহ বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ করে দেখি শুধু লাশ আর লাশ, বিভীষিকাময় অবস্থা। কুষ্টিয়া পৌর বাজারের উত্তর বোমের আঘাতে বিরাট পুকুর হয়ে গেছে। পাকপিকচার সিনেমা হল আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রন্থ। প্রায় বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার বাড়িতে এসে দেখি পোড়া বাড়ি, বাড়িতে কেউ নেই। ...। আমার মা-বাবা, ভাইবোনেরা নদীর ওপারে হরিপুর নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। এর মধ্যে শামসুল হাদী, মির্জা জিয়াউল বারী নোমান, শেখ দলিল, শামসুল হুদা তাঁদের স্ব স্ব গ্রুপ ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পর কুষ্টিয়া শহরে চারপাশ থেকে হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে কুষ্টিয়ার আকাশ বাতাসকে মুখরিত করে তোলে এবং আমাদের স্বাগত জানায়। শামসুল হক, এমপিএ আব্দুর রউফ চৌধুরী, জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ডিসি শামসুল হক ডিসি কোর্টে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রশাসনিক কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে আমি, শামসুল হাদী, মির্জা জিয়াউল বারী নোমান, শেখ দলিল নবী বক্সের হোটেলে (বর্তমান লাভলি টাওয়ার) স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জেলা অফিস চালু করি।”

মুক্তিযোদ্ধারা ৩১ মার্চের মধ্যেই কুষ্টিয়া শহর শত্রুমুক্ত করায় এ সম্পর্কে ভারতীয় দৈনিক পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়: “Kushtia is one of the few districts completely liberated from the Pakistan Army. The Kushtia town was taken by the Mukti Bahini after a three prolonged assault on the Army on March 29.” [গুটিকয়েক জেলার মধ্যে কুষ্টিয়া অন্যতম যেটাকে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত করা হয়েছে, মার্চের ২৯ তারিখ (প্রকৃত পক্ষে তারিখটা ছিলো মার্চের ৩০ তারিখ) মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে যুগপৎ আক্রমণ করে কুষ্টিয়া শহরকে অধিকার করেছে।]

‘টাইম’ ম্যাগাজিনের ১৯ এপ্রিল এ প্রকাশিত ‘দ্য ব্যাটল অব কুষ্টিয়া’ প্রতিবেদনটি ছিলো সাড়া জাগানো। ম্যাগাজিনের ডেন কগিন ‘PAKISTAN: The Battle of Kushtia’ প্রতিবেদনটি বন্তুনির্ভর প্রামাণ্য দলিল হিসেবে আজও বর্তমান। প্রতিবেদনটির উল্লেখযোগ্য অংশের বাংলা তরজমা: “৩১ মার্চ (প্রকৃতপক্ষে তারিখটি ৩০ মার্চ) ভোর ৪.৩০ মিনিটে প্রায় ৫০০০ কৃষক ও পুলিশ সদস্যের একটি দল কুষ্টিয়াকে মুক্ত করার জন্য একটি অভিযান শুরু করে। হাজার হাজার নগরবাসী ‘জয় বাংলা (বাংলার বিজয়)’ বলে স্লোগান দিতে দিতে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, সৈন্যরা স্পষ্টতই এতো হাজার প্রতিবাদী বাঙালির দ্বারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলো। পাকিস্তান বাহিনীর নায়েক সুবেদার (সিনিয়র সার্জেন্ট) মোহাম্মদ আইয়ুব ধরা পড়ার পর শোক প্রকাশ করে এবং আক্ষেপ করে বলে যে: ‘আমরা খুব অবাক হয়েছিলাম এবং ভেবেছিলাম যে বাঙালি বাহিনী আমাদের মতো একটি বাহিনী (কোম্পানি)’র আকার নিয়েছিলো, যাঁরা আমাদের আক্রমণ করবে। আমরা জানতাম না যে শহরবাসীর প্রত্যেকেই আমাদের বিপক্ষে ছিলো।’ কুষ্টিয়ার যুদ্ধে সর্বশেষ জীবিত আত্মগোপনে থাকা ও অস্ত্র ফেলে দেওয়া ১৩ পাকসৈন্য রেডিও ভবনে সারারাত কাটিয়ে পরদিন ভোর হওয়ার আগে পালিয়ে অচেনা পথে অজানা গন্তব্যে যাত্রা শুরু করে এবং দুই বাঙালি অস্ত্রধারী মিলিশিয়া তাঁদের বন্দি করে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে ফিরিয়ে আনার আগে ১৪ মাইল পথ পর্যন্ত তাঁরা পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেছিলো। এই ১৩ জনই ডেল্টা কোম্পানির ১৪৭ জন পুরুষের একমাত্র পরিচিত জীবিত ছিলো। পশ্চিম পাকিস্তানি নিহতদের মধ্যে নাসিম ওয়াকার ছিলেন ২৯ বছর বয়সী পাঞ্জাবী যিনি জানুয়ারিতে (১৯৭১) কুষ্টিয়ার সহকারী জেলা প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। বিক্ষুব্ধ জনতা যখন তাঁর মৃতদেহটি পেয়েছিলো তাঁরা এটি শহরের রাস্তায় আধা মাইল দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায় এবং রাস্তার পাশেই মাটিচাপা দিয়ে দেয়।”

কুষ্টিয়ার ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পিটার কারগিলের অন্যতম সহকারী অ্যানডং হেজিডেন ১৯৭১ সালের ২৮ মে কুষ্টিয়া ভ্রমণ করে এক রিপোর্ট প্রদান করেন। রিপোর্টে তিনি এক ভয়াবহ ধ্বংসচিত্রের বর্ণনায় বলেন: ‘শহরটি (কুষ্টিয়া) দেখাইতেছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর বোমার আঘাতে বিধ্বংস জার্মানির শহরগুলির অনুরূপ। শহরের প্রায় ৯০ ভাগ বাড়ি, দোকান, ব্যাংক প্রভৃতি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হইয়াছে। আমরা যখন শহর প্রদক্ষিণ করিলাম স্থানীয় সকলেই তখন পালাইতেছিলো। অবস্থাটি ছিলো পারমাণবিক হামলার পারফিনের ন্যায়। আমি একজনকে একটি খাবারের দোকান দেখাইয়া দিতে বলিলাম। কিন্তু ৯০ মিনিট খোঁজ করিয়াও কোনো খাবারের দোকান পাওয়া গেলো না। সেখানকার জনসংখ্যা ছিল ৪০ হাজার।’...

সদ্য স্বাধীন কুষ্টিয়াকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখা একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সব থেকে বিধ্বস্ত ভিয়েতনামের মাইলাই শহরের সাথে কুষ্টিয়া শহরকে তুলনা করেন। অনেক প্রাণ, অনেক ত্যাগ, অনেক ঈজ্জত-সম্ভ্রম এর বিনিময়ে ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে কুষ্টিয়া পাকিস্তান হানাদার মুক্ত হয়। ঐ সময়ে এই যুদ্ধ বিজয়ের ঘটনাটি বিবিসি ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয়। ১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত থাকার কারণে দেশবরেণ্য অনেক নেতৃবৃন্দই কুষ্টিয়া হয়ে ভারত সীমান্তে বৈদ্যনাথতলাতে যেতে সক্ষম হন এবং ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী মুজিব সরকারের শপথ গ্রহণ সম্ভব হয়। ৯ ডিসেম্বর জেলা শহর ছাড়া সমগ্র কুষ্টিয়া শত্রু মুক্ত হয়। কুষ্টিয়া শহর মুক্ত করতে মিত্রবাহিনীর বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়। ৮ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকটি ট্যাংক ও বিমান ধ্বংস এবং বহু পাকসেনা ও মিত্রবাহিনীর সৈনিক নিহত হয়। অবশেষে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধ এবং উপর্যুপরি আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে ১১ ডিসেম্বর ভোরে পাকসেনারা কুষ্টিয়া ছেড়ে ভেড়ামারা-পাকশী ফেরিঘাট পার হয়ে ঢাকার দিকে চলে যাওয়ার পর কুষ্টিয়া জেলা সম্পূর্ণ শত্রু মুক্ত হয়ে যায়। ৯ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী রাইফেল-এসএলআর এর গুলি ফুটিয়ে কুমারখালী থানায় গিয়ে বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করে কুমারখালী শহর মুক্ত ঘোষণা করেন। ৮ ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাকে শত্রু মুক্ত ঘোষণা করেন। ৮ ডিসেম্বর বিভিন্ন বয়সের হাজারও নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে। সেই থেকে এই দিনটি মিরপুর থানা পাকহানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়। ৮ ডিসেম্বর দৌলতপুর থানা হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর নুরুন্নবী। ৪ ডিসেম্বর খোকসা থানা মুক্ত হয়।



কুষ্টিয়া সম্পর্কে ‘পূর্বদেশ’ প্রতিনিধি ১৯৭২ সালেই লিখেছেন: “...বর্বর পাকসেনা ও তাঁদের অনুচরেরা গড়াই নদীর ধার দিয়ে গঙ্গা-কপোতাক্ষ ঘাট থেকে শ্মশান ঘাট পর্যন্ত দেড় মাইল এলাকার মধ্যে প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার বাঙালি নর-নারীকে হত্যা করে তাদেরকে নদীতে ফেলে দিয়েছিলো। সেই সমস্ত হতভাগ্য মানব সন্তানের হাড়গোর এখনো নদীতে গোসল করতে গেলে মাঝে মাঝে মানুষের পায়ে বাঁধে। কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়ায় বিমান নন্দীর বাড়ি বলে পরিচিত একটি বাড়িতে বর্বরতা স্থাপন করেছিলো বধ্যভূমি। এখনো সেটা জনসাধারণের কাছে ‘ফাঁসি ঘর’ বলে পরিচিত। সেখানে হত্যার নিদর্শন ফাঁসির দড়ি বেশকিছুদিন আগেও ঝুলছিলো। শহরের আর একটি বধ্যভূমি হচ্ছে কুষ্টিয়া হাউজিং কলোনি। পার্শ্ববর্তী-দূরবর্তী সব গ্রাম থেকে কিশোরী-তরুণী সমস্ত বয়সের মেয়েদের ধরে নিয়ে সেখানে তাঁদের আটকে রেখে চালাতো অমানবিক পাশবিক অত্যাচার। তাঁদের এই অত্যাচারের হাত থেকে বিধবা, পঙ্গু মেয়েরাও বাদ পড়েনি। এমনকি মাত্র চারদিনের প্রসূতিও তাঁদের পাশবিকতার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। নারী নির্যাতনের আরো একটি স্থান ছিলো পুলিশ লাইনের উত্তরে ও রেণউইক কোম্পানির পশ্চিমে অবস্থিত সিঅ্যান্ডবি’র একটি হলুদ রঙের একতলা বাড়ি- সেখান থেকে ভেসে আসতো অসহায় নারীর করুণ আর্তনাদ। শহরে আরো একটি বধ্যভ‚মি কোর্টপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান আক্কাস এমএনএ এর বাড়ি, যে বাড়িটি রাজাকারেরা দখল করে রেখেছিলো। এই বাড়ির মধ্যে একটি কুয়া আছে এবং তাঁর পাশেই লম্বা একটা ঘর। যে ঘরে হতভাগ্য মানুষদের মাটিতে শুইয়ে গোরু-ছাগলের মতো জবাই করে লাশগুলোকে ফেলতো ঐ কুয়ায়। কুয়াটি এখনো অজস্র কঙ্কালে ভরাট। গঙ্গা-কপোতাক্ষ অফিসের পাশের বাঁধানো ঘাটে হতভাগ্য মানুষদের ধরে নিয়ে এবং গলায় পাইকারিভাবে ছুরি চালিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। তাঁরা খেয়াল খুশি মতো ট্রেন থেকে লোক নামিয়ে প্রকাশ্যে মানুষের সামনেই বেয়নেট চার্জ করে পেট ফেড়ে ফেলতো।” স্বাধীনতা পরবর্তীতে জন স্টোন হাউজ ও ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলামের উপস্থিতিতে দুই পিকআপ বোঝাই মানুষের কঙ্কাল, মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যতগুলো বৃহৎ বধ্যভূমি রয়েছে বিত্তিপাড়া বধ্যভূমি তাঁর মধ্যে অন্যতম।

১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর এসব বীরের চূড়ান্ত তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে ৬৭৬ (বর্তমানে ৬৭৯) জনকে খেতাব দেওয়া হয়। তারমধ্যে কুষ্টিয়ার খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা ১১ জন। তাঁরা হলেন- শহিদ শরফুদ্দীন আহমেদ বীরউত্তম, শহিদ আবু তালেব বীরউত্তম, শহিদ খালেদ সাইফুদ্দীন তারিক বীরবিক্রম, শহিদ দিদার আলী বীরপ্রতীক, শহিদ কে এম রফিকুল ইসলাম বীরপ্রতীক, শহিদ আবদুল আলিম বীরপ্রতীক, এজাজুল হক খান বীরপ্রতীক, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বীরপ্রতীক, শহিদ হাবিবুর রহমান বীরপ্রতীক, শহিদ শামসুদ্দীন আহমেদ বীরপ্রতীক, আতাহার হোসেন বীরপ্রতীক, মোসলেম উদ্দিন বীরপ্রতীক।

স্বাধীনতার পর শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শন ও তাঁদের গৌরবময় স্মৃতি রক্ষায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের নিমিত্তে নির্মিত ২০০০ সালের বিজয় দিবসে। এটিই বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম নির্মিত ভাস্কর্য। পৃথিবীর অনেক দেশেই স্বাধীনতার স্মৃতিকে অম্লান রেখে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া হয়, যদিও আমরা এ থেকে বঞ্চিত জাতি! যুদ্ধ মানুষের ক্ষয় করে কিন্তু কোনো কোনো যুদ্ধ সৃষ্টির আনন্দে ভাস্বর। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এমনই এক দৃপ্ত ইতিহাস। কিন্তু স্বাধীনতার পর তাঁদের সেই দেশপ্রেম, সাহস ও বীরত্বের কথা আমরা ৫০ বছরেও যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারিনি। এই বীরদের মুখে বা কাগজে-কলমে স্বীকৃতি দিলেও তাঁদের কথা আমরা আজ মনে রাখিনি। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারেনি যে তাঁরা কতো বড়ো বীরের জাতি! দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে তাঁদের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের সেই উজ্জ্বল আত্মত্যাগ ও বীরত্বের ইতিহাস তুলে ধরা ছিলো একটি জাতীয় কর্তব্য। বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অগণিত সাধারণ মানুষের অসাধারণ যোদ্ধায় পরিণত হওয়ার রুদ্ধশ্বাস কাহিনি। এ যুদ্ধ তীর ধনুক নিয়ে কিংবা ঢাল তলোয়ার দিয়েও নয়; এ যুদ্ধ থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও বাঙালির বাঁশের লাঠি এবং আপামর দেশবাসীর যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে অত্যাধুনিক কামান ও আধুনিক মরণাস্ত্রের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও মুক্তির যুদ্ধ। এরকম একটি যুদ্ধে আমাদের পূর্বপুরুষরা যদি অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়তেন তবে আমরা এ রকম একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেতাম না। ছাত্র-যুবক, কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ও পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই দেশ-মাতৃকার ডাকে শত্রæর বিরুদ্ধে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। ১৯৭১ সালে তাঁরা প্রশিক্ষিত ও অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধ করেছিলেন, তা অবিশ্বাস্য। অনেক ঘটনা গল্প-কাহিনির চেয়েও রোমাঞ্চকর। মুক্তিযুদ্ধ যেমন শোক ও বেদনার, তেমনি বীরত্ব ও গৌরবের। এই ইতিহাস বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

লেখক: ইতিহাস গবেষক ও প্রাবন্ধিক

Header Ad
Header Ad

প্রকৃত ঘটনা জানলে হাসনাত আবদুল্লাহ তার ভুল বুঝতে পারবেন: দুদকের ডিজি

এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

‘স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল এক লাখ টাকা’—এমন শিরোনামে দুদকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে গত ২৪ জুন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) আক্তার হোসেন বলেছেন, হাসনাত আবদুল্লাহ যখন প্রকৃত ঘটনা জানতে পারবেন কী ঘটেছে, তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন; যে তিনি ভুল করেছেন। দুদক কর্মকর্তাদের নামে যারা ফোন দিয়েছিল, তারা ছিল প্রতারক। সেসব প্রতারকদের ধরতে দুদকসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, যে বিষয়টি হাসনাত আবদুল্লাহ তার ফেসবুক পেজে তুলে এনেছেন, সে বিষয়টির ওপর দুদক অনুসন্ধান করছে। এছাড়াও এ বিষয়ে অনুসন্ধানের আরও অনেক দিক আসবে। তবে হাসনাত আবদুল্লাহ একটা দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে ভেরিফাই না করে এ ধরনের তথ্য ছড়ালে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিষ্ঠান যাতে বিতর্কিত না হয়, নিশ্চয়ই সবাই সহযোগিতা করবো।

আক্তার হোসেন বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে একটা এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়েছিল। সেই অভিযানের পরপরই যে চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন, এনফোর্সমেন্ট অভিযানে তার নাম এসেছে বলে দাবি করেছেন। কিন্তু দুদক থেকে যখন অভিযানের তথ্য গণমাধ্যমে দেওয়া হয়, তখন তার নাম দেওয়া হয়নি। তিনি অন্যভাবে নাকি জেনেছেন। তাকেও এই অভিযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তিনি দুদকের কাছে বার বার অভিযোগ করছিলেন। এখন কেন তিনি প্রতারকের ফাঁদে পড়েছেন, পুরো বিষয়টি নিয়েই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুদকের জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি পোস্ট কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পোস্টটিতে তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেন।

এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করে দুদক বলে, একটি প্রতারক চক্র দুদকের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতির আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করে আসছে। যার সঙ্গে কমিশনের কোনো কর্মকর্তা জড়িত নন। ইতিমধ্যে কমিশন বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং প্রতারক চক্রের অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

এর আগে, ২৪ জুন রাতে নিজের ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, 'স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা।' ওই স্ট্যাটাসে আরও উল্লেখ করা হয়, 'আপনার নামে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও ক্লিয়ারেন্স নিতে আপনাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে।'

তিনি দাবি করেন, সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছে থেকে এই টাকা দাবি করা হয়েছে দুদকের ডিজি আকতার ও একজন উপপরিচালকের পরিচয়ে। মাহমুদাকে বলা হয়, 'আপনি একজন ডাক্তার, আপনার তো টাকা-পয়সার অভাব থাকার কথা না। আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।'

বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ ঘটনায় দুদকের কোনো কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা নেই।

Header Ad
Header Ad

বিরামপুরে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস পালিত

বিরামপুরে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস পালিত। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

দিনাজপুরের বিরামপুরে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্‌যাপন করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রথমে একটি র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়।

পরে বিকেল ৪টায় উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফার্স্ট কনসার্ন্স (বিওয়াইএফসি)-এর আয়োজনে একটি আলোচনা সভা ও খেলাধুলার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম আওন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিরামপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমশের আলী মন্ডল, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এনামুল হক চৌধুরী, একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুস সালাম এবং বিরামপুর প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক শাহ্ আলম মন্ডল।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিওয়াইএফসি'র প্রোগ্রাম ম্যানেজার সম্রাট বেপারী। আলোচনা সভায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন এবং মাদকবিরোধী সচেতনতা বিষয়ে মতামত ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।

আলোচনা শেষে বিওয়াইএফসি’র পক্ষ থেকে উপজেলার ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে খেলার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি ও তরুণ সমাজকে খেলাধুলা ও ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানানো হয়।

Header Ad
Header Ad

এনসিপির তুষারের বিরুদ্ধে ‘আপত্তিকর আলাপ’সহ যত অভিযোগ নীলা ইসরাফিলের

সারোয়ার তুষার ও নীলা ইসরাফিল। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেত্রী নীলা ইসরাফিল পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, সরোয়ার তুষার বারবার তাকে ভিডিও কলে কথা বলতে এবং ব্যক্তিগত ছবি পাঠাতে চাপ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এনসিপি গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া অভিযোগপত্র নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন নীলা ইসরাফিল। অভিযোগপত্রে তিনি নিজেকে এনসিপির সদস্য এবং ধানমন্ডি থানার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

নীলা ইসরাফিলের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তার প্রাক্তন স্বামীর দ্বারা সহিংসতার শিকার হয়ে শারীরিক, মানসিক এবং সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় তাকে মানবিক সহায়তা দেন সরোয়ার তুষার। পরে রাজনৈতিক যোগাযোগের এই সম্পর্ককে সরোয়ার তুষার ব্যক্তিগত ও অনৈতিক রূপ, যৌন হয়রানি করতে উদ্যত হন। 

এ ঘটনায় চারটি সুস্পষ্ট অভিযোগের কথা উল্লেখ করেছেন নীলা ইসরাফিল। সেগুলো হলো-

১. নৈশকালীন ব্যক্তিগত ও আপত্তিকর আলাপ:

তিনি (সরোয়ার তুষার) প্রায়ই রাতের বেলা কল করে বলেন, ‘রাজনীতি নিয়ে কথা ভালো লাগে না, তোমার কণ্ঠে ভালো লাগে প্রতিবাদের স্লোগান’, ‘তোমার ঠোঁট সুন্দর’, ‘একটা সুন্দর ছবি পাঠাও’— এ ধরনের মন্তব্য বারবার আমাকে অস্বস্তি ও অপমানের মধ্যে ফেলেছে।

২. ভিডিও কলে কথা বলার চাপ ও ব্যক্তিগত ছবি চাওয়া:

আমি বারবার অনুরোধ করেছি পেশাদারির সীমা রক্ষা করতে। এরপরও তিনি (সরোয়ার তুষার) বারবার ব্যক্তিগত আলাপের দিকে আলোকপাত করেন। ছবি চাইতেন এবং ভিডিও কলে কথা বলতে চাইতেন।

৩. ডিবি অফিসারের কাছে আমার সম্পর্কে মিথ্যা দাবি:

তিনি (তুষার) বলেন— ‘তোমার বিষয়ে ডিবি অফিসার আমাকে প্রশ্ন করলে আমি বলেছি, তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড।’ একজন রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে এ ধরনের ভ্রান্ত তথ্য প্রদান চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং আমার সামাজিক মর্যাদাকে হেয় করার শামিল।

৪. ফোনালাপ রেকর্ড ও প্রচারের ঘটনা:

আমি যখন বুঝতে পারি, এই রাজনৈতিক সম্পর্ক আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ও মানসিকভাবে নিঃশেষ করছে, তখন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে তুষারের সঙ্গে কয়েকটি ফোনালাপ রেকর্ড করি। 

১৬ জুন সেই রেকর্ডের একটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তুষার আমাকে চাপ দিতে থাকেন যেন আমি ফেসবুকে বলি, তার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। 

আমি তখন দ্বিতীয় ও তৃতীয় ফোনালাপও রেকর্ড করি এবং এগুলো কিছু মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকের মাধ্যমে প্রচারে সম্মতি দিই। কেননা, সেইগুলো উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানিমূলক, এবং যৌন হয়রানিমূলক অপরাধ করে তা প্রকাশ করা থেকে বিরত করবার চেষ্টাও হয়েছিল অবিরত।

অভিযোগপত্রের শেষে নীলা লিখেছেন, আমি এই অভিযোগ করেছি দীর্ঘ আত্মসংযমের পর, অনেক চিন্তা ও মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে। আমি দলীয়ভাবে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি এবং বিশ্বাস করি, সত্যের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে এনসিপি একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে, যেখানে নারী কর্মী কেবল ভুক্তভোগী নয়, বরং সম্মানিত ও নিরাপদ রাজনৈতিক অংশীদার।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

প্রকৃত ঘটনা জানলে হাসনাত আবদুল্লাহ তার ভুল বুঝতে পারবেন: দুদকের ডিজি
বিরামপুরে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস পালিত
এনসিপির তুষারের বিরুদ্ধে ‘আপত্তিকর আলাপ’সহ যত অভিযোগ নীলা ইসরাফিলের
২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ১৯ জনের করোনা শনাক্ত
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণ করে স্বৈরাচারকে রুখে দেয়া হয়েছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
নীরবতা ভেঙে খামেনি বললেন, ইরান ‘বিজয়’ অর্জন করেছে
সাংবাদিকতায় বাংলাদেশের মতো স্বাধীনতা উন্নত বিশ্বেও নাই: প্রেস সচিব
রংপুরে দেশীয় অস্ত্র ও অবৈধ মাদকসহ ২ যুবক গ্রেফতার
৪৩ দিন পর নগর ভবনে এলেন ডিএসসিসি প্রশাসক, পেলেন অভ্যর্থনা
ভেঙেই গেল জনপ্রিয় মার্কিন গায়িকা কেটি পেরির সংসার!
সব সরকারি ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
জেলার সব প্রতিষ্ঠানে ডোপ টেস্টের ঘোষণা দিলেন ডিসি
রংপুরে চিকিৎসা অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু, হাসপাতালকে ২ লাখ জরিমানা
টাঙ্গুয়ার হাওরে গাঁজা সেবন দায়ে ৫ পর্যটকের কারাদণ্ড
৮৩ লাখ মাদকাসক্ত দেশে, গাঁজা সেবনকারী সবচেয়ে বেশি
নতুন গিলাফে আবৃত পবিত্র কাবা শরিফ
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালের ৩ দিনের রিমান্ড
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
সারাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এইচএসসি পরীক্ষা চলছে: শিক্ষা উপদেষ্টা
হজ শেষে দেশে ফিরেছেন ৫১ হাজার ৬১৫ বাংলাদেশি, মৃত ৩৮