৬০ ভাগ তরুণ-তরুণী ভুগছেন ‘টেক্সট নেক’-এ, জানুন কারণ ও করণীয়

ছবি: সংগৃহীত
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, কাজের চাপ সব কিছুর প্রভাবে বাড়ছে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষ করে তরুণরা নানা সমস্যায় ভুগছেন। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দেখা দেছে প্রায় ৬০ শতাংশ তরুণ-তরুণী ভুগছেন ‘টেক্সট নেক’ সমস্যায়। এটি একটি ঘাড়ের সমস্যা।
টেক্সট নেক সিনড্রোম কী? এই সমস্যা হলে কী হয়? কেনই বা হয় টেক্সট নেক সমস্যা? কাদের ঝুঁকি বেশি?— সব প্রশ্নের উত্তর জানুন এই প্রতিবেদনে।
টেক্সট নেক সিনড্রোম কী:
স্মার্টফোনের দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট একটি সমস্যা হলো টেক্সট নেক সিনড্রোম। দীর্ঘক্ষণ ধরে খারাপ ভঙ্গিতে ঘাড় বাঁকিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা, টানা রিলস বা সিনেমা দেখার অভ্যাসে দেখা দিতে পারে ঘাড় ব্যথা। এমনকি ঘাড় শক্তও হয়ে যেতে পারে।
কিছুক্ষেত্রে এই সমস্যাটি খুব বেশি অস্বস্তির কারণ হতে পারে। যার কারণের দৈনন্দিন কাজকর্ম করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
টেক্সট নেকের সমস্যা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে:
১৫-২০ বছর বয়সীদের মধ্যে টেক্সট নেকের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ হেলথ সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫-২০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা এই ধরণের ঘাড়ের সমস্যার জন্য সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। পশ্চিম আফ্রিকার বেনিনে ১৮৩৫ জন শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা করা হয়। এতে দেখা গেছে ৭৪.৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘন ঘন মেসেজিং করার কথা জানিয়েছেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, তাদের মধ্যে ১,০০০ জনেরও বেশি ঘাড়ে ব্যথার অভিযোগ করেছেন। যারা এক ঘণ্টায় চার থেকে পাঁচবার স্মার্টফোন ব্যবহার করেছেন তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি ছিল।
টেক্সট নেকের কারণ:
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক যুগে টেক্সট নেক একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এই ঝুঁকি ঘাড় ও মেরুদণ্ড বাঁকানো এবং দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে দেখা দিতে পারে। এতে পেশী ও হাড়ের উপর চাপ বেড়ে যায়। মাথা বাঁকালে ঘাড়ের বাঁকানো অংশের ওপর চাপ বাড়ে।
সাধারণত মাথার ওজন প্রায় ৪.৫-৫.৫ কেজি হয়। কিন্তু যখন মাথা ৬০ ডিগ্রি হেলে থাকে, তখন ঘাড় বাঁকানোর সময় এটি ২৫ কেজি পর্যন্ত ওজনের হতে পারে। এইভাবে, এটি ঘাড়ের ব্যথা এবং পেশীর সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
টেক্সট নেকের লক্ষণ:
যেহেতু আমরা সবাই নিয়মিত মোবাইল ফোন ব্যবহার করি এবং তরুণদের মধ্যে টেক্সট নেকের সমস্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই সবারই এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরি। টেক্সট নেকের কিছু লক্ষণ হলো-
>ঘাড়ে ব্যথা
>ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া
>কাঁধ এবং পিঠের ওপরের অংশে টান অনুভব করা
>ক্রমাগত মাথাব্যথা
>মনোযোগে অসুবিধা
>হাতে ঝিঁঝিঁ ধরা বা কখনও কখনও অসাড়তা
টেক্সট নেক হওয়ার ঝুঁকি কাদের বেশি:
যারা অতিরিক্ত মোবাইল এবং ট্যাবলেট ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়।
২০২০ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা যারা দিনে গড়ে ৩-৫ ঘণ্টা সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাদের টেক্সট নেক-এর সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
অফিস কর্মীরা যারা ক্রমাগত ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের ওপর ঝুঁকে কাজ করেন, তারাও এই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। মাথা যত বেশি হেলে থাকবে, ঘাড়ের ওপর তত বেশি চাপ পড়বে।
টেক্সট নেকের সমস্যা এড়াতে করণীয়:
১. এই ধরনের সমস্যা এড়াতে, মোবাইল বা ল্যাপটপের স্ক্রিন চোখের সমান্তরালে রাখার অভ্যাস করুন।
২. অফিসে কাজ করলে ২০ মিনিট অন্তর বিরতি নিন এবং স্ট্রেচিং করুন।
৩. পেশী শক্ত হওয়া রোধ করতে ঘাড় ও কাঁধের ব্যায়াম করুন।
যদি আপনি দীর্ঘদিন এই সমস্যায় ভোগেন তাহলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
