শনিবার, ৪ মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান

এই ঘটনার কথা মনে করে জ্যাক বুঝতে পারল, সে তার বাবা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জেনেছে তার ওই শিক্ষকের কাছ থেকে। তবে তার খোঁজ খবর করা কঠিন এখন। অবশ্য তার মায়ের নীরবতা থেকে যা কিছু জানা হয়েছে তার বেশি কিছু আঁচ করা যাবে না শুধু ঘটনার বর্ণনা ছাড়া। বাবা সম্পর্কে জ্যাক ধারণা করতে পারে, তিনি ছিলেন একজন কঠিন মানুষ, তিক্ত অভিজ্ঞতার মানুষ, সারা জীবন কাজ করে গেছেন; হুকুমের গোলাম হয়ে হত্যা করেছেন; যেসব বিষয় এড়াতে পারেননি সেগুলোর কাছে হার মেনেছেন; তবে নিজের বলতেও ছিল কিছু বিষয়; সেখানে অন্য কারো প্রবেশ ঘটেনি। মোটের ওপর একজন হতভাগা মানুষ।

দারিদ্র কেউ চেয়ে নেয় না। তবে হতভাগা মানুষও নিজেকে রক্ষা করতে পারে। মায়ের কাছ থেকে যা কিছু শুনেছে তার থেকে ওই একই মানুষ সম্পর্কে জ্যাকের ধারণা হয়েছে: নয় বছর পরে বিবাহিত, দুই সন্তানের বাবা, জীবনে কিছুটা ভালো অবস্থান অর্জন করেছেন; তারপর তাকে আলজিয়ার্সে ডাকা হলো যুদ্ধে যোগদানের জন্য। অসুস্থ স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে দীর্ঘ ভ্রমণ, স্টেশনে বিদায় এবং তিন দিন পর বেলকোর্টের ছোট অ্যপার্টমেন্টে জুয়াভ রেজিমেন্টের সুদর্শন লাল-নীল ইউনিফর্ম, ঢিলা ট্রাউজার পরে এসেছিলেন; জুলাইয়ের কড়া তাপে মোটা পশমী কাপড়ের নিচে শরীরের ঘাম, হাতে একটা খড়ের হ্যাট। কারণ তার টারবুশের হ্যাট ছিল না, হেলমেটও ছিল না। জাহাজঘাটার ছাউনির নিচের ডিপো থেকে দৌড়ে ফিরে এসেছিলেন স্ত্রী আর সন্তানদের বিদায়ী চুমু দিতে। কারণ যে ফ্রান্সকে তিনি আগে কখনও দেখেননি সেই ফ্রান্সের উদ্দেশে সেই রাতেই রওনা হওয়ার কথা, সমুদ্রপথে যাওয়ার কথা যে সমুদ্রের বুকের ওপর দিয়ে তিনি আগে কোথাও যাননি। তিনি স্ত্রী এবং সন্তানদের গভীর আবেগে চুমু দিলেন এবং একই গতিতে আবার ফিরে চললেন।

তার স্ত্রী ছোট ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তার উদ্দেশে হাত নাড়ালেন। ধূলি আর তাপে দগ্ধ রাস্তায় নামার আগে দৌড়ের ওপরেই স্ত্রীর হাত নাড়ানোর উত্তরে তিনি তার হাতের হ্যাটটা উঁচু করে নাড়াতে লাগলেন। তারপর সিনেমার সামনে, তারপর আরো দূরে, শেষে সকালের ঝকঝকে আলোর ভেতর তিনি মিলিয়ে গেলেন যেখান থেকে আর কখনও ফিরবেন না। বাকিটা জ্যাককে কল্পনা করে নিতে হয়েছে; তবে মা যা বলেছেন শুধু সেটুকুর ওপরে ভরসা করে নয়। কারণ ইতিহাস এবং ভূগোল বলতে কী বুঝায় সে জ্ঞান মায়ের ছিল না। মা জানতেন, তার বসবাস সমুদ্রের কাছাকাছি স্থলভাগে; আরো জানতেন, ফ্রান্স দেশটা ওই সমুদ্রের ওপারে। তিনি সেখানে কখনও যাননি। ফ্রান্স একটা অজানা দেশ যেন রাতের অন্ধকারে ডুবে থাকা দূরের দেশ, সেখানে পৌঁছনো যায় মার্সেই নামক বন্দর দিয়ে; কল্পনায় তিনি দেখতে পেতেন ওই বন্দর আলজিয়ার্স বন্দরের মতোই; লোকমুখে তিনি শুনেছিলেন, সেখানে আছে প্যারিস নামে এক নয়নাভিরাম, সুদর্শনা নগরী। সেই নগরীর একটা জায়গার নাম আলসেস; সেখান থেকেই এসেছিল তার স্বামীর পরিবারের লোকেরা।

সে অনেক দিন আগের কথা। তারা জার্মান নামক শত্রু-তাড়িত হয়ে আলজিয়ার্সে বসতি স্থাপন করতে এসেছিল। তারপর এল সেই নগরীকে ওই হিংস্র শত্রুদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার সময়। ফ্রান্সের প্রতি শত্রুরা ছিল আসলেই নিষ্ঠুর। এর চেয়ে বড় আর কোনো কারণ ছিল না। ফ্যাসাদপ্রিয় এবং অপ্রশম্য শত্রুদের কবল থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য ফ্রান্সকে সব সময়ই বাধ্য হয়ে লড়ে যেতে হয়েছে। এভাবেই তার জানাশোনার মধ্যে ছিল স্পেনও। তবে স্পেনের অবস্থান সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। মনে হতো খুব দূরে নয়; সেখান থেকেই তার নিজের পরিবারের লোকেরা, মাহুন জাতির লোকেরাও এসেছিল। সে-ও অনেক দিন আগের কথা। তার স্বামীর পরিবারের লোকেরা যে সময়ে আলজেরিয়ায় এসেছিল তার নিজের পরিবারের লোকেরাও সেই একই সময়ে এসেছিল। তার পরিবারের লোকেরা এখানে এসেছিল ক্ষুধার জ্বালায় মরণাপন্ন অবস্থায়; তার পূর্বপুরুষদের বসতি ছিল একটা দ্বীপে-সে কথা তিনি জানতেন না; অবশ্য দ্বীপ কী রকম সে বিষয়েও তার কোনো ধারণা ছিল না।  

অন্য দেশ সম্পর্কে তার ধারণার কথা বলতে গেলে কিছু কিছু দেশের নাম শুনে তার ভালো লাগত। অবশ্য ওই সব দেশের নাম ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারতেন না। কোনো প্রসঙ্গেই তিনি অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি সম্পর্কে কিংবা সার্বিয়া, রাশিয়া এমনকি ইংল্যান্ড সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। আর্চডিউক কী রকম পদবী, সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। তিনি কখনও সারায়েভো নামের চার সিলেবল এক সঙ্গে উচ্চারণ করতেও পারেননি। যুদ্ধ সেখানেই, অন্ধকার আতঙ্কবাহী ভারী মেঘের মতো। কিন্তু ওই মেঘের আকাশ আক্রমণ কিছুতেই টিকিয়ে রাখার মতো নয়।

পতঙ্গের আক্রমণ ঠেকানো যায়, কিংবা আলজিয়ার্সের সমতলভূমি আক্রমণকারী সর্বগ্রাসী ঝড়কেও ঠেকানো যায়। কিন্তু যুদ্ধের মেঘ ঠেকানো যায় না। জার্মানরা আবারো ফ্রান্সকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। আর আমাদের ভোগান্তির শুরু হলো বলে। এর পেছনে কোনো কারণই ছিল না। তিনি ফ্রান্সের ইতিহাস জানতেন না; আদৌ ইতিহাস বিষয়টাই ছিল তার জানার বাইরে। তার নিজের ইতিহাস সম্পর্কে সামান্য জানতেন। তার ভালোবাসার মানুষদের ইতিহাস প্রায় জানতেন না বললেই চলে। আর জানতেন যাদের তিনি ভালোবাসেন তারাও তার মতোই ভোগান্তির শিকার হতে যাচ্ছে। তিনি ইতিহাস জানতেন না এবং রাতের মতো পৃথিবীর চলমান ঘটনাবলীর ভেতর তিনি কল্পনা করতেও পারেননি, আরো অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত এসে গেছে। রহস্যময় বিশৃঙ্খলা এসে হাজির হয়েছে এক ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত কনস্টেবলের হাত ধরে। যে খামারের আঙুর তারা তুলতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন সেই খামার ছেড়ে তাদের চলে যেতে হবে।

বন স্টেশনে মহল্লার পাদ্রীর সঙ্গে দেখা। পাদ্রী স্টেশনে এসেছিলেন সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে যোগদানের জন্য যাদের বাছাই করা হয়েছে তাদের বিদায় জানাতে। তিনি বলেছিলেন, আমাদের সবাইকে প্রার্থনা করতে হবে। তার কথার উত্তরে মা বলেছিলেন, হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন মসিঁয়ে। তবে আসলে তিনি পাদ্রীর কথা ঠিকমতো শুনতে পাননি; পাদ্রী মহাশয় খুব আস্তে কথা বলেছিলেন। তাছাড়া প্রর্থনার কথাটা তার মাথায়ই আসেনি কখনও। তিনি কারো ব্যাপারে নাক গলাতেন না। আর এখন তো তার স্বামী বহুবর্ণিল ইউনিফর্মে যুদ্ধে গেছেন; ফিরে আসবেন খুব শিঘ্রই, সেরকমই তো সবাই বলছে। জার্মানদের শাস্তি হওয়া উচিত। তবে ততদিনে তার কাজ খুঁজে নিতে হবে। এক প্রতিবেশী নানিকে বলেছিলেন অস্ত্রাগারের কারতুজ ফ্যাক্টরিতে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হবে, যাদের স্বামীরা যুদ্ধে গেছেন এবং পরিবারের দায়িত্ব ঘাড়ে আছে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তিনি ভেবেছিলেন, পুরুত্ব আর রং অনুসারে কার্ডবোর্ডের নল তৈরি করার কাজে দিনে দশ ঘণ্টা পরিশ্রম করে সৌভাগ্যের মুখ দেখবেন। জার্মানদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত এবং হেনরি ফিরে না আসা পর্যন্ত ছেলেমেয়েরা প্রয়োজন মাফিক খেয়ে পরে বাঁচতে পারবে। অবশ্য তিনি রাশিয়ান রণাঙ্গন সম্পর্কে কিছু জানতেন না। রণাঙ্গন বিষয়ে তার জ্ঞানও তেমন ছিল না।

আরো জানতেন না, যুদ্ধ বলকান পর্যন্ত, মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত, এমনকি গোটা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফ্রান্সে সবকিছুই ঘটে যাচ্ছে: কোনো রকম ইঙ্গিত ছাড়াই জার্মানরা প্রবেশ করছে ফ্রান্সে; এমনকি শিশুদেরও হত্যা করছে তারা। ওখানে সবকিছুই ঘটছে আফ্রিকা থেকে আগত সৈনিকদের জীবনেও। তাদের মধ্যে এইচ করমারিকেও যত দ্রুত সম্ভব পাঠানো হয়েছিল মার্নের মতো এক রহস্যময় এলাকায়। লোকজন সেরকমই বলাবলি করত। তাদের জন্য তখন আর হেলমেট যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। ওখানকার সূর্য অবশ্য আলজেরিয়ার সূর্যের মতো প্রখর ছিল না যে খুব দ্রুত তাদের রং মুছে দিবে। আরব এবং ফরাসি আলজেরিয়ানরা সুবেশ উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরিহিত, মাথায় তৃণের টুপি, লাল-নীল পোশাকে সবাই যেন বিরাট পশুপালের সদস্য, এগিয়ে চলেছে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। দলের মধ্যেই তাদের হত্যা করা হচ্ছে সেখানকার স্বল্প পরিসর এলাকাটা যেন উর্বর করার জন্য।

সেখানে পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে মানুষ আসতে থাকে প্রায় চার বছর ধরে। আগুনবর্ষী সূর্যের নিচে তারা প্রতি ইঞ্চি মাটির জন্য লড়াই করে যাচ্ছে কাদা মাটির মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে। চার পাশে গোলার আর্তনাদ আর  কামানের অগ্নিব্যুহ ব্যর্থ আগ্রাসনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাইরের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মাটি খুঁড়ে কোনোরকম আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যায়নি। শুধু আফ্রিকার সৈন্যরা আগুনের নিচে বহুবর্ণিল মোমের পুতুলের মতো গলে শেষ হয়ে গেছে। আর প্রতিদিন আলজেরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় শিশুরা নতুন করে  এতিম হয়েছে। পিতৃহীন পুত্র কন্যারা এখন থেকে পিতার দিক নিদের্শনা ছাড়াই জীবনে বেঁচে থাকার শিক্ষালাভ করবে; থাকবে না উত্তরাধিকারের কোনো কিছুই।

কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে গেল। তাদের একমাত্র ওপরের তলার ভেতরের ল্যান্ডিংয়ে, সিঁড়ি আর অন্ধকার টয়লেটের মাঝখানে। সুরকির ভেতর তুর্কী কেতায় কালো ছিদ্র করে রাখায় অবিরত ক্রেসিল দিয়ে পরিষ্কার করা হলো তবু সেখান থেকে দুর্গন্ধ আসত- সেখানে কয়েক সপ্তাহ পরের এক রবিবারের সকালে লুসি করমারি আর তার মা একটা নিচু চেয়ারে বসে সিঁড়ির ওপরের জানালা দিয়ে আসা আলোয় মসুরের ডাল বাছছেন আর শিশুটা ছোট একটা লন্ড্রীর ঝুড়িতে শুয়ে নিজের মুখের লালায় ভিজানো একটা গাজর মুখে দিয়ে চুষছে। তখন গম্ভীর চেহরার এবং পরিপাটি পোশাক পরিহিত এক ভদ্রলোক সিঁড়ির মাথায় উঠে এলেন; হাতে খাম জাতীয় কিছু একটা। লুসি এবং তার মা নিজেদের মাঝখানে একটা পাত্র রেখে সেখান থেকে মসুরের ডাল বাছার কাজ করছিলেন। বিস্মিত হয়ে হাত মুছতে মুছতে তারা উঠে দাঁড়ালেন। তখনই ভদ্রলোক সিঁড়ির শেষ ধাপ ওঠা বাদ থাকতে তাদেরকে ব্যস্ত না হতে বললেন এবং মিসেস করমারির খোঁজ জানতে চাইলেন।

জ্যাকের নানি বললেন, এই তো মিসেস করমারি। আর আমি ওর মা। ভদ্রলোক বললেন, তিনি মেয়র এবং তিনি একটা দুঃখজনক খবর নিয়ে এসেছেন: তার স্বামী মহিমান্বিত ময়দানে মৃত্যুবরণ করেছেন। ফ্রান্স শোকে আচ্ছন্ন এবং একই সময়ে তার জন্য গর্বও বোধ করে। লুসি করমারি তার কথা ভালো করে বুঝতে পারেননি। উঠে দাঁড়িয়ে তিনি ভক্তিসহকারে তার হাত বাড়িয়ে দিলেন ভদ্রলোকের দিকে। নানি মুখের কাছে নিজের শক্ত হাতখানা নিয়ে স্পেনীয় ভাষায় কয়েকবার বলে উঠলেন, হায় আল্লাহ। ভদ্রলোক লুসির হাতখানা নিজের দুহাতের মধ্যে নিয়ে মৃদু চাপ দিলেন এবং খামটি এগিয়ে দিয়ে সান্ত¦নার কথা আওড়ালেন এবং সঙ্গে সঙ্গে পেছনের দিকে ঘুরে সিঁড়ি বেয়ে গম্ভীর চালে নামতে লাগলেন।


     লুসি তার মাকে জিজ্ঞেস করলেন, কী বললেন উনি?
     হেনরি আর নেই। সে নিহত হয়েছে।

 


চলবে...

 

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad

ভুয়া দলিল দেখিয়ে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেয় চক্রটি

চক্রের ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। ছবি: সংগৃহীত

ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) তৈরি করত চক্রটি। পরে এসব জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে তৈরি করত ফ্ল্যাটের ভুয়া দলিল। পরে এসব দলিল বিভিন্ন ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে মোটা অংকের টাকা ঋণ নিতো চক্রের সদস্যরা। তারা এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে ভুয়া দলিল জমা দিয়ে।

চক্রটির জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত করছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এ সংঘবদ্ধ ফ্ল্যাট জালিয়াতি চক্রের মাস্টারমাইন্ড জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিসসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

গ্রেপ্তার জালিয়াতি চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন- ইদ্রিসের প্রধান সহযোগী মো. রাকিব হোসেন (৩৩), জয়নালের ভায়রা ভাই কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (৫৪), জাল কাগজপত্র ও এনআইডি প্রস্তুতকারক মো. লিটন মাহমুদ (৪০), ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল প্রস্তুতকারক হাবিবুর রহমান মিঠু (৩০), এনআরবিসির ব্যাংক কর্মকর্তা হিরু মোল্যা (৪৪), আব্দুস সাত্তার (৫৪) ও সৈয়দ তারেক আলী (৫৪)। এর আগে, এই চক্রের ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

জব্দকৃত দলিল, নগদ টাকাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। ছবি: সংগৃহীত

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সীলমোহর, একই ব্যক্তির একাধিক এনআইডি ও টিন নম্বর, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডসহ নগদ ৩ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

শনিবার (৪ মে) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগস্থ সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের এই সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, সম্প্রতি সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট গোপন সূত্রে জানতে পারে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন পরিদপ্তরের কিছু অসাধু সদস্যদের সহযোগিতায় একাধিক এনআইডি ও টিন তৈরি করে আসছে। পরবর্তীতে এই এনআইডি ও টিন ব্যবহার করে চক্রের সদস্যরা ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের অসাধু লোকদের মাধ্যমে চক্রের সদস্যদের নামে ফ্ল্যাট/ জমির একাধিক মূল দলিল তৈরি করত। পরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব জাল দলিল দিয়ে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মর্টগেজ রেখে একটি ফ্ল্যাটের বিপরীতে একাধিক ঋণ নিত। এভাবে তারা প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।

তিনি আরও বলেন, জয়নাল আবেদীন ইদ্রিসের নেতৃত্বে এ চক্রটি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট বিক্রির ফাঁদ পেতে জাল দলিলের মাধ্যমে পথে বসিয়েছে বহু ফ্ল্যাট মালিককে। পাশাপাশি সম্ভাব্য ফ্ল্যাট ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা এবং ব্যাংক ঋণের বোঝা চাপিয়ে তাদেরকে করেছে নিঃস্ব। সিআইডির অনুসন্ধানে ফ্ল্যাট জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে জয়নালের মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান রুমানা জুয়েলার্স, নীড় এস্টেট প্রোপার্টিস লিমিটেড, স্নেহা এন্টারপ্রাইজ, ই আর ইন্টারন্যাশনালসহ চক্রের ২৫ জন সদস্যের বিরুদ্ধে ডিএমপির উত্তরা-পূর্ব থানায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা সিআইডি।

মোহাম্মদ আলী মিয়া আরও বলেন, এ চক্রের মাস্টারমাইন্ড জয়নাল রাজধানীর মিরপুরে কোঅপারেটিভ মার্কেটে একটি স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। পরে তিনি ও শহিদুল ইসলাম সবুজ মিলে ফ্ল্যাট জালিয়াতি শুরু করেন। এভাবে শতকোটি টাকার মালিক বনে যান জয়নাল। তার অন্যতম প্রধান সহযোগী দুই স্ত্রী রোমানা সিদ্দিক ও রাবেয়া আক্তার মুক্তা। প্রতারণার জন্য নিজ নামে ছয়টি এনআইডি ব্যবহার করেন তিনি। এসব এনআইডি দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫০টির অধিক হিসাব খোলেন। অর্থ আত্মসাতের টাকা দিয়ে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৭ তলা বাড়ি, ৩টি ফ্ল্যাট, মিরপুর ও আশকোনায় ৩টি ফ্ল্যাট কেনেন জয়নাল।

রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন উদ্বোধন

ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ করতে উদ্বোধন করা হলো আরও দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন। আজ (শনিবার, ৪ মে) সকাল ১০টায় মাদারীপুরের শিবচরে এক অনুষ্ঠানে ট্রেন দুটি উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম। রাজবাড়ি-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে রোববার (৫ মে) সকাল থেকে যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু হবে ট্রেন দুটি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রেলের উন্নয়নের জন্য অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। সবচেয়ে সস্তা পরিবহন ব্যবস্থা হলো রেল। এই রেল মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী একটা পরিকল্পনা নিয়েছেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাঙ্গা থেকে খুলনা, যশোর, বেনাপোল পর্যন্ত নতুন ট্রেন চালু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে সেটি উদ্বোধন করবেন। ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত আরেকটা লাইন চালু হবে। এই রেললাইন ৮টি জেলাকে যুক্ত করবে। পুরো লাইনই এলিভেটেড হবে। কারণ এই অঞ্চলের মাটি ভালো না। ট্রেন চলাচলের জন্য এই অঞ্চলের মাটি উপযুক্ত না। সেজন্য এটা পুরোটাই হবে এলিভেটেড।

রেলমন্ত্রী বলেন, এই দুটি লাইন চালু হয়ে গেলে ভাঙ্গা, শিবচর এই অঞ্চলের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে। আমরা চিন্তা করছি রেলে বর্তমানে দুইটি জোন আছে। আরো দুইটি জোন তৈরি করা হবে। এর একটি হবে ভাঙ্গা-ফরিদপুর। এটির জোনাল অফিস হবে ভাঙ্গায়। এতে করে ভাঙ্গায় রেলের সেবা বাড়বে।

মন্ত্রী আরও বলেন, ভবিষ্যতে আমরা ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে আরেকটি ট্রেন চালু করব। পরের ট্রেনটি নতুন বগি দিয়ে শুরু করব। আবার আগামী দুই মাসের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে খুলনা, যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত আরেকটি ট্রেন চালু হবে। ওই ট্রেন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী, রেল মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলীসহ অন্যান্যরা।

জানা যায়, ভাঙ্গা-ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে এক জোড়া এবং অপারেশনাল সুবিধার্থে একই রেক দ্বারা রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-রাজবাড়ী রুটে এক জোড়া কমিউটার ট্রেন পরিচালনা করা হবে। এর মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে ১২১ ও ১২৪ নম্বর ট্রেনটির নাম নির্ধারণ করা হয়েছে ভাঙ্গা এক্সপ্রেস। আর ভাঙ্গা-রাজবাড়ী রুটে ১২২ ও ১২৩ নম্বর ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে চন্দনা এক্সপ্রেস।

ট্রেনটিতে ২৪টি প্রথম, ৪৪টি শোভন চেয়ার এবং ৪২৪টি শোভন শ্রেণির আসন ব্যবস্থা থাকবে। উভয় পথে ভাঙ্গা জংশন, শিবচর, পদ্মা ও মাওয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক বন্ধ শুক্রবার।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা ননস্টপ চন্দনা কমিউটার সার্ভিস রাজবাড়ী স্টেশন থেকে ছাড়বে ভোর ৫ টায়,ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছাবে ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে।এরপর এই ট্রেনটি ভাঙ্গা কমিউটার নামে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ছাড়বে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ও ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাবে সকাল ৯টায়।

ফিরতি যাত্রায় ভাঙ্গা কমিউটার ঢাকার কমলাপুর থেকে ছাড়বে সন্ধ্যা ৬ টায়, ভাঙ্গায় এসে পৌঁছাবে রাত ৮টায়। এরপর এই ট্রেনটি চন্দনা কমিউটার নামে ভাঙ্গা ছাড়বে রাত ৮টা ১০ মিনিটে। আর রাজবাড়ী স্টেশনে এসে পৌঁছাবে রাত ৯টা ৩০ মিনিটে। ট্রেনটিতে ৫২৮টি শোভন শ্রেণির আসন থাকবে। বাণিজ্যিকভাবে ৫ মে থেকে যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করবে।

বাড়ি ফিরলেই বিয়ে, হিটস্ট্রোকে প্রাণ গেল আশিকের

প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

নাটোর জেলার সিংড়ায় তীব্র তাপপ্রবাহে জমিতে ধান কাটতে গিয়ে গরমে অসুস্থ হয়ে আশিক ইসলাম (২৪) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (৩ মে) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নাটোরের সিংড়া উপজেলার খড়খড়ি গ্রাম এলাকার একটি মাঠে এ ঘটনা ঘটে। আজ শনিবার সকাল ৯টায় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে আশিক ইসলামকে দাফন করা হয়েছে। মৃত আশিক রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বলরামপুর গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে।

আশিক ইসলামের সঙ্গে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক রেজাউল করিম বলেন, গতকাল সকাল থেকে সিংড়া উপজেলার খড়খড়ি গ্রাম এলাকার ধানের মাঠে আশিকসহ আমরা ১৪ জন শ্রমিক ধান কাটছিলাম। ধান কাটা শেষে মাড়াইয়ের জন্য দুপুরের পর থেকে ধানের বোঝা জমি থেকে বহন করে মালিকের বাসায় নিচ্ছিলাম। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আশিক প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোক করে ধানের বোঝা নিয়ে মাটিতে পড়ে সেখানেই মারা যায়।

আশিকের বাবা আশরাফ আলী বলেন, ধান কেটে বাড়ি আসলে ছেলের বিয়ে দেব বলে কনে দেখা হয়েছে। উভয় পরিবার বসে দিন ঠিক করে বিয়ে সম্পূর্ণ করা হবে। কিন্তু ছেলের ভাগ্যে আর বিয়ে হলো না।

এ বিষয়ে পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম জানান, তীব্র তাপদাহে হিটস্ট্রোকে আশিকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে নিজ গ্রামে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সর্বশেষ সংবাদ

ভুয়া দলিল দেখিয়ে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেয় চক্রটি
রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন উদ্বোধন
বাড়ি ফিরলেই বিয়ে, হিটস্ট্রোকে প্রাণ গেল আশিকের
অতিরিক্ত গরমে স্কুলগামী শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার উপায়
নোয়াখালীতে ট্রাক-সিএনজি সংঘর্ষ, সেনা সদস্যসহ নিহত ৪
‘অ্যাক্টরস হোম’-এর জায়গা বুঝে পেল অভিনয় শিল্পী সংঘ
ঢাকাসহ ৬ বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলো ভারত
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডাক পেলেন আম্পায়ার সৈকত
ইসরায়েলবিরোধী পোস্ট করলেই গ্রেপ্তার করছে সৌদি
মুন্সীগঞ্জে প্রাইভেটকার খাদে পড়ে একই পরিবারের ৩ জন নিহত
চড়া দামে গ্রাহকরা কিনছে কচ্ছপ গতির ইন্টারনেট
হামাসকে ৭ দিনের সময় দিল ইসরায়েল
বিদেশে পাড়ি জমানো কানাডিয়ানদের সংখ্যা বাড়ছে : গবেষণা
নওগাঁয় ট্রলির চাপায় সড়কে প্রাণ গেল এনজিও কর্মীর
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে দীর্ঘ হচ্ছে বিএনপিতে বহিষ্কারের তালিকা
প্রথমবারের মতো চাঁদে স্যাটেলাইট পাঠাল পাকিস্তান
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে কঠিন শর্ত দিল সৌদি
রাজশাহীতে আগুনে পুড়ল শত বিঘা জমির পান বরজ
জিম্বাবুয়েকে হেসে-খেলে হারাল টাইগাররা