রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৯

বিষাদ বসুধা

মোহিনী সারারাত ঘুমাতে পারেননি। একটা দুঃস্বপ্ন তাকে সারারাত তাড়া করেছে। তিনি ঘুমের ঘোরে দেখেন, আরেফিন তার কাছে এসেছে ক্ষমা চাইতে। তিনি চিরদিনের জন্য মোহিনীকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবেন। আর কোনোদিন মোহিনীর সঙ্গে দেখা হবে না। কথা হবে না। এটাই তাদের শেষ দেখা। শেষ কথা।

আরেফিনকে হঠাৎ নিজের কক্ষে দেখে ঘুমের ঘোরেই আতকে ওঠেন মোহিনী। এসব তিনি কি দেখছেন! আরেফিন দেশে নেই। দেশে আসার কোনো সুযোগও নেই। কারণ, বিমান চলাচল বন্ধ। বিমান চালু না হলে উহান থেকে তার খুব সহসা দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই। অথচ আরেফিন তার কক্ষে! ঘুমের ঘোরেই তিনি আরেফিনকে ডাকেন। আরেফিন! আরেফিন!

আরেফিন আবেগপ্রবণ কণ্ঠে মোহিনীকে বলেন, আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। বিয়ের পর এতোটুকু সুখও দেইনি। সেই মর্মবেদনায় আমি কেবল পুড়ছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও মোহিনী। তা নাহলে আমার ভেতরের মর্মযাতনা কমবে না। প্লিজ মোহিনী!
আরেফিন আর কথা বলতে পারেননি। কথা বলার এক পর্যায়ে হো হো করে কেঁদে ওঠেন তিনি। তখনই মোহিনীর ঘুম ভেঙে যায়। সেই থেকে আর ঘুমাতে পারেননি। ঘুরেফিরে ওই একটি স্বপ্নই তাকে তাড়া করে ফেরে। দুই চোখের পাতা বন্ধ হলেই যেন আরেফিন তার সামনে এসে দাঁড়ায়। ভয়ঙ্কর একটা অবস্থার মধ্যদিয়ে তার রাত কাটে।

সকালের দিকে রাজ্যের ঘুম নেমে আসে মোহিনীর দুই চোখে। ঠিক সেই সময়ই মোহিনীর মোবাইল বেজে ওঠে। ফোনের রিংটোনটা বড়ই বিরক্তিকর লাগছিল তার কাছে। হাতের কাছে পেলে হয়তো ছুড়ে ফেলতো। আবার এও ভাবে, এই অসময়ে কে ফোন করল? না। ফোন ধরতে মন চাইছে না। কিন্তু বেয়াড়া ফোনটা বেজেই চলছে। ফোন ধরতে হলে তাকে বিছানা থেকে উঠতে হবে। শরীরটাও যেন নেতিয়ে পড়েছে। মোটেই সায় দিচ্ছে না।

মোহিনী ভীষণ বিরক্ত। তিনি মনে মনে ভাবেন, মানুষ এতো বেকুব কেন? সময় বুঝে ফোন দেবে না! তা ছাড়া দেখছে যে আমি ফোনটা ধরছি না। তারপরও বার বার কেন ফোন করতে হবে!

মোহিনী বিরক্ত নিয়েই বিছানা থেকে ওঠেন। টেবিলের ওপরে রাখা মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে খাটের ওপর বসেন। কিছুতেই তিনি বসে থাকতে পারছিলেন না। খাটের পাশে বালিশ টেনে তাতে মাথা ঠেকান। তারপর ফোন কানে তোলেন। হ্যালো বলতেই টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে পুরুষ কণ্ঠ ভেসে আসে। আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জুনায়েদ বলছি। অসময়ে ফোন করার জন্য দুঃখিত। আপনি কি মিসেস আরেফিন?
মোহিনী খুবই নিচু স্বরে জবাব দেন। জি।
আপনার হাজবেন্ড; মানে মি. আরেফিন কি চীনের উহানে গিয়েছিলেন?
এবারও মোহিনী নিচু স্বরে বলেন, জি।
আমি আবারও দুঃখিত। এই অসময়ে আপনাকে একটা দুঃসংবাদ দিতে হচ্ছে।
জি! বলেই লাফিয়ে ওঠেন মোহিনী। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে তিনি বললেন, কি বললেন? দুঃসংবাদ?
হ্যাঁ। আরেফিন সাহেব মারা গেছেন। আমরা তার মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করছি। খবরটা জানানোর জন্যই আপনাকে ফোন দিয়েছি। স্যরি। অসময়ে ফোন দিয়েছি বলে কিছু মনে করবেন না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার কথা পুরোটা শুনতে পাননি মোহিনী। শুধু আরেফিনের মারা যাওয়ার খবরটুকু শুনেছেন। তারপর মোহিনীর হাত থেকে মোবাইলটা নিচে পড়ে যায়। মোহিনীর মাথাটা ঘুরে যায়। চারদিকে কেবল অন্ধকার দেখে। এ কী হোলো! কেমন করে হোলো! না না! এ হতে পারে না!
আরেফিন মারা গেছে! এ কথা বিশ্বাসই করতে পারছেন না মোহিনী। তিনি আরেফিনের কথা ভাবেন। একেবারে গভীর ভাবনায় তলিয়ে যান। মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন দানা বাঁধে। এজন্যই কি বার বার তিনি আরেফিনকে স্বপ্নে দেখেছেন? তার মানে আরেফিনের মৃত্যুর খবর তার কাছে আগেই পৌঁছেছে! আরেফিনের প্রেতাত্মা মোহিনীর সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করে গেছে!
গভীর বেদনার সঙ্গে মোহিনী বলেন, হায় খোদা! এ তুমি কী করলে!

মোহিনীর সমস্ত সত্তাজুড়ে আরেফিন। তাদের ভালোবাসার মুহূর্তগুলো মনের আয়নায় ভেসে উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নানা স্মৃতি তাকে আচ্ছন্ন করছে। কী গভীরভাবে মোহিনীকে ভালোবাসতেন আরেফিন। নেহায়েত পাগলের মতো ছিল সেই ভালোবাসা। মোহিনীকে ছাড়া তিনি কিছুই বুঝতেন না। মোহিনীই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। আরেফিনের সমস্ত ভালোলাগা অনুভূতিগুলো মোহিনীকে ঘিরে আছে। আর কিছুই ভাবতে পারেন না মোহিনী। আরেফিন আরেফিন বলে তিনি শুধু বিলাপ করেন। আর মনে মনে বলেন, এভাবে তুমি চলে যেতে পারো না আরেফিন! এভাবে চলে যাওয়া যায় না! এতো বড় ফাঁকি তুমি কেন দিলে? যাওয়ার সময়ই তুমি বলে দিতে পারতে, তুমি জীবনের তরে চলে গেছ। আর কখনো ফিরবে না! আমি যে তোমার পথ চেয়ে বসে ছিলাম আরেফিন।
দুঃখ কষ্ট বেদনায় মোহিনীর বুক ফেটে যায়। তিনি তার জন্য চিৎকার দিয়ে কাঁদতে চান। কিন্তু কিছুতেই কাঁদতে পারেন না। কান্না আসছে না। কষ্টের বাষ্প জমছে তার বুকে। ধীরে ধীরে সেই কষ্টগুলো ভারী পাথরের মতো বুকের ওপর চেপে বসে। কথায় বলে না, অল্প সুখে কাতর অধিক শোকে পাথর। অধিক শোকে মোহিনী পাথর হয়ে গেছেন। কাঁদতে পারলে হয়তো কিছুটা হালকা হতে পারতেন তিনি।

মোহিনী এও ভাবেন, কেন সেদিন আরেফিনের ওপর রাগ করে বাসা থেকে চলে এসেছিলাম? এতোটা রাগ না করলেও পারতাম। ও অনেকবার উহান থেকে আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে। সেদিন আমি ফোন ধরিনি। কেন ধরিনি? কি বলতে চেয়েছিল ও? মৃত্যুর আগ মুহূর্তে নিশ্চয়ই ও আমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল! আহারে! কী কষ্টই না পেয়েছে সে। হে বিধাতা, তুমি আমায় ক্ষমা করো। আমি ভুল করেছি। অন্যায় করেছি। ক্ষমা করো, ক্ষমা করো।

আরেফিনের পরিবারের কথাও ভাবেন মোহিনী। দরিদ্র পরিবারটি আরেফিনের টাকায় চলতো। এখন কি হবে? কিভাবে চলবে? আমি কি টাকা পাঠাবো? এই পরিবারটির সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় ছিল না। শুধু আরেফিনকে দেখে বিয়ে করেছিলাম। তাও আবার কোর্টে গিয়ে। কারো সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতেরও প্রয়োজন ছিল না। আরেফিনও কোনোদিন বলেনি। চাপ দেয়নি। এখন আমি টাকা পাঠালে তারা বিষয়টিকে কিভাবে নেবে?

হঠাৎ আপামনি আপামনি করে রহিমাবিবি ছুটে আসে মোহিনীর কাছে। মোহিনীকে শুয়ে থাকতে দেখে সে বিস্ময়ের সঙ্গে বলে, আপামনি, আপনার কি হইছে? এখনো শুইয়া আছেন কেন?
মোহিনী কোনো কথা বলেন না। তার কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। সে ওকে কি বলবে? ও কি বুঝবে? ওর কাছে বললে কি মোহিনীর কষ্ট দূর হবে? কিন্তু মোহিনী জানেন, রহিমাবিবি নাছোরবান্দা। না জেনে সে যাবে না। তাই তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলেন, আমার মন ভালো নেই। আমার কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। তুই এখন যা।
রহিমাবিবি বিস্ময়ের সঙ্গে বলে, আপামনি! আপনার মনও খারাপ হয়!

রহিমাবিবির কথাটা মোহিনীর কানে লাগে। রহিমার মুখ থেকে এই কথা শুনবেন ভাবতেও পারেননি তিনি। বিস্ময়ের সঙ্গে মোহিনী বললেন, কেন আমার মন খারাপ হতে পারে না?
আপনার মন খারাপ হইলে দুনিয়ার সব মানুষের মন খারাপ হবে। রহিমাবিবি বলল।
মোহিনী রহিমাবিবির দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তিনি নিজের শরীরে চিমটি কেটে বোঝার চেষ্টা করছেন, তিনি নিজে ঠিক আছেন কী না। তার মনে প্রশ্ন জাগে, ও কি আসলেই রহিমা; নাকি অন্য কেউ! এমন পরিণত কথা বলার মেয়ে কি রহিমা? বিস্ময়কর ব্যাপার তো!

হন্তদন্ত হয়ে মোহিনীর কক্ষে ঢুকলেন আনোয়ারা বেগম। উদ্বেগের সঙ্গে বললেন, কি রে মোহিনী! কি হয়েছে তোর? একদম ঘর থেকেই বের হচ্ছিস না! কোনো সমস্যা হয়েছে?
উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন মোহিনী। তিনি কোনো কথা বলেন না। আসলে তিনি কথা বলতে পারেন না। আনোয়ারা বেগম মেয়ের পাশে বসে তাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেন। গভীর মমতায় মেয়েকে আদর করতে করতে বলেন, তুই আমাকে বল তো! কি হয়েছে মা?

আবেগের দৃষ্টিতে আনোয়ারা বেগমের দিকে তাকান মোহিনী। তবু তিনি তার কষ্টের কথা বলেন না। এই মুহূর্তে তিনি যদি কাঁদতে পারতেন তাহলে খুব ভালো হতো। তিনি নিজে কিছুটা হালকা হতে পারতেন। কিন্তু চেষ্টা করেও তিনি কাঁদতে পারছেন না। কান্নাও যে কঠিন সেটা আজ তিনি বুঝতে পারছেন। ইচ্ছা করলেই কাঁদা যায় না।

আনোয়ারা বেগম মেয়ের চিন্তায় অস্থির। হঠাৎ মেয়েটা এমন উদাসীন হয়ে গেল কেন তা নিয়ে তার দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। কথাটা না জানা পর্যন্ত তিনি স্বস্তি পাচ্ছেন না। এক পর্যায়ে মোহিনীই মুখ খুললেন। তিনি ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললেন, মা আরেফিন আর নেই!

আনোয়ারা বেগম এসব কী শুনছেন! তিনি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বললেন, আরেফিন আর নেই মানে কী? কি হয়েছে আরেফিনের?
আরেফিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে!
মোহিনীকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে ধরে থাকেন আনোয়ারা বেগম। এ ছাড়া মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার আর কিছুই খুঁজে পেলেন না।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৮

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১২

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১১

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৮

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

আরএ/

Header Ad
Header Ad

ড. ইউনূসের জন্মদিনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা

তারেক রহমান ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টার অফিসে বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুল ও কেক পৌঁছে দেন।

প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফেরদৌস হাসান সেলিম ফুলের তোড়া ও শুভেচ্ছা সামগ্রী গ্রহণ করেন।

ফুলেল শুভেচ্ছা পেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার সুস্বাস্থ্য ও সফলতা কামনা করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তার এই অনন্য অবদানের জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

Header Ad
Header Ad

পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের দাবিকে ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীতে জিয়াউর রহমান স্মরণে আয়োজিত এক স্মারক প্রকাশনা ও আর্কাইভ উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, “যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট—তারা নির্বাচন বিলম্ব কিংবা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচাল করতে চায়। পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রয়োগযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সংস্কার মানে বাইবেল নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কারের মূল প্রবক্তা বিএনপি নিজেই। আমরা এরইমধ্যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে উপস্থাপন করেছি। তাই জাতীয় ঐক্যের নামে একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।”

সালাহউদ্দিন আহমদ জোর দিয়ে বলেন, “কেউ যদি মনে করেন সবাইকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মত মেনে নিতেই হবে, তাহলে ঐকমত্য কখনোই সম্ভব নয়। একতরফা মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় বাস্তবতাকে বুঝতে হবে।”

বিএনপি এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত নির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা না করায় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“সরকার যদি সত্যিই নির্বাচন চায়, তাহলে তাদের উচিত দ্রুত সময়সূচি ঘোষণা করা। বর্তমানে স্থানীয় নির্বাচনের মতো আয়োজন উপযুক্ত নয়; জাতীয় নির্বাচনই এখন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামি দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির দাবি জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের মহাসমাবেশে এ পদ্ধতি চালুর দাবি তোলে। বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে বলছে, এটি বাস্তবসম্মত নয় এবং এতে নির্বাচনের স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যুতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা আগামী নির্বাচনের আগে একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিতে পারে।

Header Ad
Header Ad

জোটবদ্ধ ইসলামি দল হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি: চরমোনাই পীর

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম । ছবি: সংগৃহীত

ইসলামপন্থীদের ঐক্যের প্রতি গণমানুষের প্রবল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, “যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে জোটবদ্ধ ইসলামি দলই হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। ইনশাআল্লাহ, রাষ্ট্রক্ষমতা আমাদের হাতেই আসবে।”

শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

চরমোনাই পীর বলেন, “আমরা স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে বহু রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখেছি, কিন্তু ইসলামি দল আজও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারেনি। এর বড় কারণ—আমরা বারবার নেতৃত্ব ও নীতির বাছাইয়ে ভুল করেছি। এবার আর সে ভুল নয়, এবার আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো।”

তিনি জানান, শুধু ইসলামি দলগুলো নয়, বরং দেশপ্রেমিক আরও কিছু রাজনৈতিক শক্তিকে একত্রে নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া চলছে। সেই ঐক্যই হতে পারে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার সেতুবন্ধ।

চরমোনাই পীর বলেন, “আমি বহু আগেই বলে আসছি—ইসলামপন্থী ভোট এক বাক্সে আনতে হবে। আমরা যদি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তাহলে জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রাখবে এবং ইসলামি শক্তিই হবে এই দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব।”

তিনি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আগামী নির্বাচনে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি’ চালু করতে হবে। যে দল যত ভোট পাবে, তারা তত আসনে প্রতিনিধিত্ব পাবে। এটা এখন জনদাবি—বহু রাজনৈতিক দল এই দাবিতে একমত।”

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “বিএনপির উচিত পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চিন্তা করা। এতে করে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে।”

এ সময় তিনি ইসলামী আন্দোলনের সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোর প্রতি দলটির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “সংস্কার প্রশ্নে আমরা আপসহীন। দেরি করা মানেই ২০২৪-এর গণ-আন্দোলনের সঙ্গে বেইমানি। আমরা বিশ্বাস করি, ৭২-এর সংবিধান জনআকাঙ্ক্ষার প্রতি বধির ছিল, তাই সেটিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন অপরিহার্য।”

তিনি আরও বলেন, “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সবসময় শান্তিপূর্ণ উপায়ে জনমত গঠনে বিশ্বাসী। তবে জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে দেশজুড়ে নতুন গণজাগরণ শুরু হবে।”

মহাসমাবেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি ও ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে এই বক্তব্য নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের সক্রিয় ও সংগঠিত ভূমিকাই যে এখন আলোচনার কেন্দ্রে, সেটাই যেন প্রতিফলিত হলো এই বক্তব্যে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ড. ইউনূসের জন্মদিনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা
পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
জোটবদ্ধ ইসলামি দল হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি: চরমোনাই পীর
খামেনির প্রাণ বাঁচালাম, ধন্যবাদটুকুও দিলো না: ট্রাম্প
পুরস্কার না নিয়ে মনু মিয়ার জানাজায় অভিনেতা খায়রুল বাসার
মা হারালেন ব্যান্ড তারকা তানজির তুহিন
ক্ষমতায় গেলে ১৮ মাসে ১ কোটি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে বিএনপি: আমীর খসরু
ফিলিস্তিনের মতো সাইপ্রাসও দখলে নিচ্ছে ইসরায়েল!
কালও চলবে এনবিআরের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’
‘এনবিআরের প্রশাসনিক আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই’
সিইসির সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে যা বললেন প্রেস সচিব
নওগাঁয় ছাত্রদলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নব গঠিত কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত
করোনায় আরও দুইজনের মৃত্যু,  শনাক্ত ৭
এক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে: ট্রাম্প
ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে ১৬ দফা ঘোষণা
নতুন রক্তের গ্রুপের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা
গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন আওয়ামী লীগ নেতা
সাগরতীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন করলেন কিম জং উন
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৬২
কূটনৈতিক অস্ত্র পানি নিয়ে ভারতের কঠোর অবস্থান, শঙ্কায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান