শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২১

বিষাদ বসুধা

মোহিনী আজ আগেভাগেই ঘুম থেকে উঠেছেন। সকাল সকাল তিনি বিমানবন্দরে যাবেন। আরেফিনের লাশ আসবে। সেই লাশ দেখার কোনো উপায় নেই। পুরোপুরি প্যাক করা থাকবে। সেখান থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় লাশ দাফন হবে মাতুয়াইলে। বিমানবন্দরে মোহিনীর কিছুই করার নেই। তারপরও তিনি যাবেন। যাবেন তার প্রতি সম্মান জানাতে। একজন স্বামী, একজন বন্ধু, একজন প্রেমিক এবং একজন সুহৃদ হিসেবে আরেফিনই ছিলেন তার একমাত্র সঙ্গী। তাকে নিঃসঙ্গ করে দিয়ে তিনি অসময়ে চলে গেছেন। আরেফিনকে ছেড়ে তিনি চলে গিয়েছিলেন এটা সত্য। সেটা ছিল তার অভিমান; কেবলই অভিমান! অভিমান করেই তিনি চলে গিয়েছিলেন। নিশ্চয়ই সেটা তার শেষ যাওয়া ছিল না। আরেফিন হাত ধরে বললেই হয়তো তিনি ফিরে আসতেন। সেটাই মোহিনী মনে মনে চেয়েছিলেন। অথচ আরেফিনই চিরদিনের জন্য ওকে ছেড়ে চলে গেলেন!
মোহিনী যেদিকে তাকায় আরেফিনের স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন থেকে দাম্পত্য জীবন; কত কিছুই মনে পড়ছে আজ। ভালো স্মৃতিগুলোই আজ তার মনটাকে আচ্ছন্ন করে রাখছে। তিনি তৈরি হতে গিয়ে বার বার হোঁচট খাচ্ছেন। সারাক্ষণই মনে হচ্ছে, আরেফিন তার আশপাশেই আছে। তাকে ঘিরে রেখেছে। তৈরি হওয়ার সুযোগটুকুও দিচ্ছে না। আরেফিনের সঙ্গে স্মৃতিকাতর সময় কাটাতে কাটাতেই হঠাৎ তার মনে হয়; প্রকৃতি তাকে সুবিচার করেনি। তিনি মনে মনে প্রকৃতিকে উদ্দেশ করে বলেন, হে প্রকৃতি! এ তোমার কেমন বিচার! আমি মানুষকে এত উপকার করি! এতভাবে সাহায্য সহযোগিতা করি! তারপরও তুমি আমাকে শাস্তি দিচ্ছ! কারোনাকালে আমি বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমার পুরো অফিস মানুষকে সহযোগিতার জন্য কাজ করছে।

মোহিনী আবার বলেন, এসব আমি কী ভাবছি? প্রকৃতি যা করছে তা নিশ্চয়ই ভালোর জন্য করেছে। আর আমি মানুষকে যে সহায়তা করছি সেজন্য কি প্রকৃতির কাছে পুরস্কার চাইতে হবে! নিশ্চয়ই প্রকৃতি তার সর্বোচ্চ ভালোটা করবে। নিশ্চয়ই করবে।
রহিমাবিবি হন্তদন্ত হয়ে মোহিনীর কক্ষে এসে বলে, একি আপামনি, আপনি চা খান নাই? চা তো ঠাণ্ডা হইয়া গেল!
ও তুই চা দিয়েছিলি? আমি খেয়াল করিনি। মোহিনী বললেন।
আপামনি আপনার কি হইছে কন তো? আপনার মনডা কি খারাপ?
মোহিনী কোনো কথা বললেন না। তিনি আরেফিনের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। রহিমাবিবি মোহিনীর কোনো জবাব না পেয়ে আবারও বলে, আপনি না কই যাইবেন আপামনি?

মোহিনী এবারও কোনো কথা বললেন না। তিনি সাজঘরে গিয়ে তৈরি হতে লাগলেন। কাপ হাতে নিয়ে চলে যাওয়ার সময় রহিমাবিবি আবারও বলল, আপামনি চা কি দেব?
সাজঘর থেকেই মোহিনী বললেন, না। কোনো দরকার নেই। তুই একটা কাজ কর। আমার ড্রাইভারকে তৈরি হতে বল। আমি এখনই বের হব।
জি আপামনি।
রহিমাবিবি চলে গেল। সে বাইরে বের হয়ে ড্রাইভারকে গাড়ি নিয়ে প্রস্তুত থাকার জন্য বলল। এরমধ্যে মোহিনীও তৈরি হয়ে নিজের কক্ষ থেকে বের হয়ে আনোয়ারা বেগমের কাছে যান। তাকে আরেফিনের লাশের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন তিনি। কিন্তু মোহিনী কিছুতেই নিজের মনকে বুঝাতে পারেন না। তিনি কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, বিধাতা এমন একটা শাস্তি কেন আমাকে দিল বলতে পার? মৃত্যু যখন কপালেই ছিল, তখন স্বাভাবিক মৃত্যু কেন হলো না। এর আগে তো কয়েকবার হাসপাতালে ছিল। তখনই না হয় মারা যেত! করোনায় আক্রান্ত হয়েই মারা যেতে হবে! আর সেজন্য শেষ বিদায়ের দিনে তার চেহারাটাও দেখতে পাব না?

আনোয়ারা বেগম নিজের আবেগকে সামলে নিয়ে বললেন, কী করবি মা। সবই কপাল!
মোহিনী কোনো কথা বললেন না। তিনি হন হন করে বাইরের দিকে পা বাড়ালেন। এ সময় আনোয়ারা বেগম জানতে চাইলেন, কিরে মা, কই যাস?
বিমানবন্দর যেতে হবে মা। আরেফিনের লাশ আসবে। চেহারা তো আর দেখতে পাব না। দূর থেকে বিদায় জানাব, চিরদিনের জন্য বিদায়!
আমিও যাই। নিবি আমাকে?
কী দরকার মা। থাক। করোনার মধ্যে তোমার বের হওয়ার দরকার নেই।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আনোয়ারা বেগম বললেন, আচ্ছা!
মোহিনী বাসা থেকে বের হয়ে বিমানবন্দরের দিকে রওয়ানা হয়। গাড়িতে বসে সে মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে তারিখটা ভালো করে দেখল। দোসরা জুন। বুধবার। দুই হাজার বিশ সাল। তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ একটি দিন। তার জীবনসঙ্গীর চলে যাওয়ার দিন। এত দুঃখের, এত কষ্টের, এত বেদনার দিন তার আর কখনো আসেনি। এত কষ্ট তিনি আগে কখনো পাননি। আজ তার মনে হচ্ছে, সবকিছুই বুঝি শেষ হয়ে গেল। প্রকৃতির চরম এক শাস্তি তাকে মাথা পেতে নিতে হলো। তিনি জানেন না, কেন এত বড় শাস্তি তার জীবনে নেমে এসেছে। কার ভুলে তাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে? তিনি কি নিজে কোনো ভুল করেছেন? তিনি কি জীবনে কারও ক্ষতি করেছেন? কারও ক্ষতির চিন্তা করেছেন? মনে করার চেষ্টা করেন মোহিনী।

মোহিনী কিছুতেই নিজের ভুলের কথা মনে করতে পারছেন না। তিনি সব সময়ই অন্যের ভালোর চিন্তা করেছেন। অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। কোনোদিন কারও ক্ষতির চিন্তা করেননি। ছোটবেলা থেকেই তিনি পরোপকারী। নিজের ক্ষতি করেও অন্যকে কীভাবে সহায়তা করা যায় তা ভেবেছেন। অথচ আজ তাকে কষ্ট পেতে হচ্ছে। তাহলে কি তার পরিবারের কেউ ভুল করেছে? সেই শাস্তি তাকে পেতে হচ্ছে? তার দাদা অত্যন্ত দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। তার বাবাও সেই অভ্যাস পেয়েছে। তার পরিবারে এমন কেউ নেই যে অন্যের ক্ষতি করেছে। অন্যের টাকা পয়সা মেরে খেয়েছে। অন্যকে ঠকিয়েছে।

কষ্টের মধ্যেই মোহিনী সান্ত্বনা খোঁজেন। সৃষ্টিকর্তা যা করেন তা নাকি মঙ্গলের জন্যই করেন। এর মধ্যে কী মঙ্গল আছে তার অপেক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া আর উপায় কী!

মোহিনীকে বহনকারী গাড়িটি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমান বন্দরে পৌছবে। মোহিনী মোবাইল হাতে নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তার নম্বরে ফোন দিল। দুতিন বার রিং বাজার পরই লোকটা ফোন ধরল। হ্যালো।

মোহিনী সালাম জানিয়ে বললেন, আমি মোহিনী বলছি। আপনি কি বিমানবন্দরে এসেছেন? আমিও ঠিক কাছাকাছি। কোথায় আসব? ভিআইপি লাউঞ্জে? আচ্ছা আচ্ছা। আমি আর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আসছি। অনেক ধন্যবাদ ভাই।
ফোনে কথা বলা শেষ করে মোহিনী ড্রাইভারকে বললেন, ভিআইপি লাউঞ্জে নিয়ে চলো।

ড্রাইভার গাড়ি ভিআইপি লাউঞ্জে নিয়ে গেল। লাউঞ্জের গেটেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা অপেক্ষায় ছিল। মোহিনীকে দেখে সে চিনতে পারল। তার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছি।
ও আচ্ছা আচ্ছা। মোহিনী বললেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোহিনীকে ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে বলল, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমান অবতরণ করবে। আমাদের আর অল্প কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। আপনি চা খাবেন? কিংবা কফি?
না থাক। মোহিনী বললেন।
অসুবিধা নেই। খেতে পারেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বললেন।
না থাক। পরে এক সময় আপনার অফিসে গিয়ে খাব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হাসি ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, মোস্ট ওয়েলকাম। ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।
মোহিনী মাথা নেড়ে সায় দিলেন। আর কোনো কথা বললেন না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বললেন, আরেকটা কথা, আপনি বোধহয় জানেন, লাশ প্যাকিং অবস্থায় থাকবে। খোলা যাবে না। এখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে পাগলায় নিয়ে যাওয়া হবে।

মোহিনী এবারও মাথা নেড়ে সায় দিলেন। কোনো কথা বললেন না। হঠাৎ তার মনটা ভারী হয়ে উঠল। কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু যেন থেমে গেল। সবাই নীরব। পিনপতন নীরবতা ভিআইপি লাউঞ্জে। মোবাইল ফোনের রিং বাজার শব্দে সেই নীরবতা ভাঙে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে ছুটে যায় দরজার সামনে। তিনি মোহিনীকেও ডাকেন। লাশ এসেছে। আপনি আসুন।

মোহিনী সামনের দিকে পা বাড়ায়। মুহূর্তের মধ্যে এগিয়ে যায় দরজার সামনে। বাক্সে ভরা লাশ। শুধু বাক্স দেখে মনকে সান্ত্বনা দেবে, ওর ভেতরেই আরেফিনের লাশ আছে। ব্যাস। ওইটুকুই।

মোহিনী গাড়িতে বসে আছেন। বিমানবন্দর থেকে তিনি বাসায় যাচ্ছেন। ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে বের হয়ে সামনের দিকটায় আসতেই দেখেন রাস্তার পাশে অসংখ্য মানুষের ভিড়। ভিড়ের কাছাকাছি আসতেই তিনি কান্নার আওয়াজ পান। এক বয়স্ক মতো লোক চিৎকার দিয়ে কাঁদছেন। তার বেশভূষা অতি সাধারণ। চুল দাড়ি পাকা। মুখোমন্ডলের বলিরেখাগুলো স্পষ্ট। রোদে পোড়া বৃষ্টিতে ভেজা ঝামা ইটের তো কঠিন চেহারা; দেখেই বোঝা যায়।

লোকটা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমারে একবার শুধু আমার ছেলের লাশটা একটু দেখতে দেন ভাই! আমি খবর নিয়া জানছি, আমার পোলার লাশ আইজকা উহান থেকে আসব। হাচা কইতেছি। আমি একবার শুধু আমার পোলার মুখখানা দেখমু। আমার আর কিছু চাই না। শেষবারের মতোন আমি পোলাডারে একটু দেখতে চাই।

পথের লোকজন তাকে কী বলে সান্ত্বনা দেবে? কী সান্ত্বনা দেওয়ার আছে তাদের? তারা শুধু বুড়ো মানুষটার কষ্ট উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ বলছেন, ভাইরে, করোনা হলে লাশের কাছেও যাওয়া যায় না। বিদেশ থেকে বাক্সভর্তি করে আসছে। ওইভাবেই করব দেওয়া হবে। দেখার আর সুযোগ নাইরে ভাই!

মোহিনী গাড়ি রাস্তার পাশে রেখে বুড়ো লোকটার কাছে এগিয়ে যান। মোহিনীকে দেখে পুরুষ লোকগুলো জায়গা করে দেয় বুড়োর কাছে যাওয়ার জন্য। তিনি বুড়ো লোকটাকে উদ্দেশ করে বললেন, আপনার ছেলের লাশ কোন দেশ থেকে আসবে বললেন?
চীনের উহান থেকে।
আপনার ছেলের কী নাম?
কাঁদতে কাঁদতে বুড়ো লোকটা বললেন, আরেফিন।
নামটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে মোহিনীর মাথায় যেন বাজ পড়ে। বিদ্যুতের শক খাওয়ার মতো শরীরটা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলেন, আপনি আরেফিনের বাবা!
হ মা।
আপনার নাম?
আলী আকবর। বাড়ি বরিশাল। উপজেলা মেহেন্দিগঞ্জ। গ্রাম আজিমপুর।
কীভাবে জানলেন, আরেফিন মারা গেছেন?
আলী আকবর আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বললেন, আমি খোঁজ নিতে নিতে ওর অফিসে গেছিলাম। ওখান থেকে কইল, আইজ আমার ছেলের লাশ আইব। কতদিন আমার ছেলেডারে দেহি নাই। বাড়ি যাইব যাইব কইরা চীনে চইলা গেল। আর দেহাও হইল না।

মোহিনী অনেক কষ্টে নিজের আবেগ সামলে বললেন, আপনি আমার গাড়িতে ওঠেন। আপনি কেডা মা? আপনের লগে গেলে আমার পোলার লাশ দেখা যাইব।
আপনি আমার সঙ্গে আসেন।
মোহিনী গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। আলী আকবর তাকে অনুসরণ করলেন। পথের লোকেরা যে যার গন্তব্যে চলে গেল। গাড়িতে সামনের আসনে আলী আকবরকে বসতে দিলেন। তারপর মোহিনী পেছনে গিয়ে বসে ড্রাইভারকে বললেন, আমার অফিসে যাও।
ড্রাইভার গাড়ি স্ট্রাট দিল। গাড়ি চলতে শুরু করল। আলী আকবর কাঁদতে কাঁদতে বললেন, তুমি কেডা মা?
আমার অফিসে চলুন। তারপর বলছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌছে যাব। আপনি ঢাকায় আসছেন কবে?
কয়েকদিন হইয়া গেলো মা। পোলার খোঁজেই আইছিলাম। বাসায় গেছিলাম। দারোয়ান বলল, আরেফিন চীনে গেছে। তারপর অফিসে গেলাম। ওইখান থেকেই খবর পাইলাম, আরেফিন করোনায় মারা গেছে। আরেফিনের মা কইল, ঘরের চালে বইসা কাকগুলান কেমন কইরা ডাকতাছে। আপনি ঢাকায় গিয়া আমার ছেলের খবর লন! ছেলের মারে এহন আমি কী কমু?
আলী আকবর হাউমাউ করে আবার কাঁদতে শুরু করলেন। মোহিনী সান্ত্বনাসূচক কিছু কথাবার্তা বললেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি তার অফিসে পৌঁছলেন। আলী আকবরকে নিয়ে নিজের রুমে গেলেন। দরজা বন্ধ করে বললেন, আপনি বসুন। চা খাবেন?
আলী আকবর কোনো কথা বললেন না। তিনি চোখ পাকিয়ে অফিস দেখছেন। বিশাল অফিস দেখে তার চোখ ধাঁধিয়ে যায়। তিনি বসবেন কি বসবেন না তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান। ওই জায়গায় তাকে বড় বেমানান মনে হয়। নিজেকে বড় ছোট মনে হয় তার কাছে। তিনি বিনয়ের সঙ্গে বলেন, এইডা কোন জাগা মা?
গুলশান।
ও গুলশান! অনেক নাম হুনছি।
এটা আমার অফিস।
আচ্ছা মা, আপনি কেডা? আমারে কি আপনি চেনেন?
আমি আপনার ছেলের বউ!
আলী আকবরের চোখেমুখে রাজ্যের বিস্ময়। তিনি কী বলবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে তিনি মোহিনীর দিকে তাকিয়ে রইলেন।

চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

বিষাদ বসুধা: পর্ব ২০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৯

২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ জনের করোনা শনাক্ত

করোনাভাইরাস শনাক্ত। ছবি: সংগৃহীত

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৮১৬ জনে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ হাজার ৪৯৪ জনে অবস্থান করছে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ জন সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৭ হাজার ২৯৪ জন। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৮৫টি ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৮৮টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এক কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪৩টি।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার চার দশমিক ১২ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ।

এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় কেউ আইসোলেশনে আসেনি এবং আইসোলেশন থেকে কেউ ছাড়পত্র পায়নি। এ পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে এসেছেন চার লাখ ৫২ হাজার ৯৬৬ জন এবং আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন চার লাখ ২৩ হাজার ৭১৫ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২৯ হাজার ২৫১ জন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দু-দিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।

বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা, হিট অ্যালার্ট জারি

বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত রয়েছে তীব্র তাপদাহ। টানা চারদিন ধরে ৪০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। টানা তাপদাহে অতিষ্ঠ সীমান্তবর্তী জেলার মানুষ। অসহ্য গরমে ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে প্রাণিকুল। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল ৩ টার সময় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তীব্র তাপপ্রবাহে শুকিয়ে গেছে পুকুরের পানি। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র তাপদাহে হিট ওয়েভ অ্যালার্ট জারি করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। মাইকিং করে বলা হয়, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হতে।

দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের তাপে চরম গরম অনুভূত হচ্ছে। রোদে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে। রোদের তীব্র প্রখরতায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে চারপাশ। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, ইজিবাইক চালক ও ভ্যান-রিকশা চালকদের গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে। হা-হুতাশ করতে দেখা গেছে তাদেরকে। প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়েও কাজ করতে পারছেন না তারা। তাপদাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবীরা।

গরম থেকে বাঁচতে পানিতে নেমেছেন শিশু-কিশোররা। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, ‘তীব্র তাপদাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে, আপাতত বৃষ্টির সম্ভবনা নেই। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এখনও পর্যন্ত কোনো বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কমবে না।’

২০২৩ সালে ১৯ ও ২০ এপ্রিল জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর ৪৩ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।

গাছের ছায়ায় বসে আরাম করছেন ক্লান্ত মানুষজন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

চুয়াডাঙ্গার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের আশু মিয়া ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, প্রচণ্ড গরমে মাঠে জমিতে কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। ভ্যাপসা গরমে বেশিক্ষণ মাঠে অবস্থান করা সম্ভব হচ্ছেনা। ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জমিতে সেচ দেওয়ার পরও মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে।
কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুজন আলী বলেন, সকালে কাজের জন্য অফিসে আসতে হয়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। সড়ক থেকে গরম উঠে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। বাইরে বেশি সময় অবস্থান করা যাচ্ছে না।

উথলী গ্রামের শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, বারবার পানি পান করেও তৃষ্ণা মেটানো যাচ্ছে না। বৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন। পরিবেশের ভারসাম্য বাজায় রাখতে গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। ৪০ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে প্রতিদিন।

এদিকে চুয়াডাঙ্গাতে তাপমাত্রা বাড়ার কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শক্রমে চুয়াডাঙ্গাতে বৃহস্পতিবার ৭২ ঘণ্টার জন্য হিট ওয়েভ অ্যালার্ট (তীব্র তাপদাহের সতর্কতা) জারি করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় তথ্য অফিসের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।

জামায়াতের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের ঈদ পুনর্মিলনী ও গণসংযোগ পক্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) গণসংযোগ পক্ষের উদ্বোধন করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। এই গণসংযোগ চলবে আগামী ৩ মে পর্যন্ত।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজপথের আন্দোলনে বদ্ধপরিকর বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। পাড়া-প্রতিবেশী, সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন কেউই আমাদের দাওয়াতের বাইরে থাকবে না। আর সর্ব প্রথম দাওয়াত হবে নিজের নফসের প্রতি। আমাদের কথা ও কাজে যেন অমিল না থাকে। যেটা মানুষকে করতে বলব, সেটা যেন আমি নিজে আগে আমল করি।

তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি জনশক্তির কথাবার্তা, লেনদেন, সামাজিক কাজকর্ম আল্লাহর দ্বীন বা কোরআন অনুযায়ী হতে হবে। যতই বাঁধা আসুক আমরা ইকামাতে দ্বীনের কাজ চালিয়ে যাব। মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়াতে হবে। জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে হবে। তাহলেই আমাদের দাওয়াত কার্যকর হবে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে অনলাইন মাধ্যম জুম, ইউটিউব ও ফেসবুক লাইভ-এ ঈদপুনর্মিলনী ও গণসংযোগ পক্ষের উদ্বোধনে এসব কথা বলেন।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মনজুরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান মাদানী, বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী প্রমুখ।

এসময় সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, রমজানের প্রকৃত শিক্ষাকে আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে হবে। যারা রমজানে তাকওয়া অর্জনের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন মূলত তাদের জন্যই ঈদের আনন্দ। আমীরে জামায়াতের ঘোষণা অনুযায়ী আজ থেকে ১৫ দিনব্যাপী গণসংযোগ পক্ষ চলবে।

সর্বশেষ সংবাদ

২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ জনের করোনা শনাক্ত
বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা, হিট অ্যালার্ট জারি
জামায়াতের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
শহরে কৃষক লীগের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না: ওবায়দুল কাদের
রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে কেনিয়ার সেনাপ্রধানসহ নিহত ১০
পালিয়ে আসা ২৮৫ সেনা সদস্যকে ২২ এপ্রিল ফেরত নেবে মিয়ানমার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন: ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা
সারাদেশে ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
বিমানবন্দরের বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে পড়ল বাস, প্রকৌশলী নিহত
১০ হাজার টাকা চেয়ে না পেয়ে বাবাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক লুৎফুলকে শোকজ করল আওয়ামী লীগ
হামলার পর ইসরায়েলকে যে হুমকি দিল ইরান
আওয়ামী লীগ দেশকে মগের মুল্লুকে পরিণত করেছে: মির্জা ফখরুল
স্বচ্ছতার সাথে অনুদানের চলচ্চিত্র বাছাই করা হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
তীব্র গরমের মধ্যেই ঢাকাসহ তিন বিভাগে ঝড়-শিলাবৃষ্টির আভাস
ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন, সন্দেহের জেরে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহত
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন