শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২১

বিষাদ বসুধা

মোহিনী আজ আগেভাগেই ঘুম থেকে উঠেছেন। সকাল সকাল তিনি বিমানবন্দরে যাবেন। আরেফিনের লাশ আসবে। সেই লাশ দেখার কোনো উপায় নেই। পুরোপুরি প্যাক করা থাকবে। সেখান থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় লাশ দাফন হবে মাতুয়াইলে। বিমানবন্দরে মোহিনীর কিছুই করার নেই। তারপরও তিনি যাবেন। যাবেন তার প্রতি সম্মান জানাতে। একজন স্বামী, একজন বন্ধু, একজন প্রেমিক এবং একজন সুহৃদ হিসেবে আরেফিনই ছিলেন তার একমাত্র সঙ্গী। তাকে নিঃসঙ্গ করে দিয়ে তিনি অসময়ে চলে গেছেন। আরেফিনকে ছেড়ে তিনি চলে গিয়েছিলেন এটা সত্য। সেটা ছিল তার অভিমান; কেবলই অভিমান! অভিমান করেই তিনি চলে গিয়েছিলেন। নিশ্চয়ই সেটা তার শেষ যাওয়া ছিল না। আরেফিন হাত ধরে বললেই হয়তো তিনি ফিরে আসতেন। সেটাই মোহিনী মনে মনে চেয়েছিলেন। অথচ আরেফিনই চিরদিনের জন্য ওকে ছেড়ে চলে গেলেন!
মোহিনী যেদিকে তাকায় আরেফিনের স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন থেকে দাম্পত্য জীবন; কত কিছুই মনে পড়ছে আজ। ভালো স্মৃতিগুলোই আজ তার মনটাকে আচ্ছন্ন করে রাখছে। তিনি তৈরি হতে গিয়ে বার বার হোঁচট খাচ্ছেন। সারাক্ষণই মনে হচ্ছে, আরেফিন তার আশপাশেই আছে। তাকে ঘিরে রেখেছে। তৈরি হওয়ার সুযোগটুকুও দিচ্ছে না। আরেফিনের সঙ্গে স্মৃতিকাতর সময় কাটাতে কাটাতেই হঠাৎ তার মনে হয়; প্রকৃতি তাকে সুবিচার করেনি। তিনি মনে মনে প্রকৃতিকে উদ্দেশ করে বলেন, হে প্রকৃতি! এ তোমার কেমন বিচার! আমি মানুষকে এত উপকার করি! এতভাবে সাহায্য সহযোগিতা করি! তারপরও তুমি আমাকে শাস্তি দিচ্ছ! কারোনাকালে আমি বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমার পুরো অফিস মানুষকে সহযোগিতার জন্য কাজ করছে।

মোহিনী আবার বলেন, এসব আমি কী ভাবছি? প্রকৃতি যা করছে তা নিশ্চয়ই ভালোর জন্য করেছে। আর আমি মানুষকে যে সহায়তা করছি সেজন্য কি প্রকৃতির কাছে পুরস্কার চাইতে হবে! নিশ্চয়ই প্রকৃতি তার সর্বোচ্চ ভালোটা করবে। নিশ্চয়ই করবে।
রহিমাবিবি হন্তদন্ত হয়ে মোহিনীর কক্ষে এসে বলে, একি আপামনি, আপনি চা খান নাই? চা তো ঠাণ্ডা হইয়া গেল!
ও তুই চা দিয়েছিলি? আমি খেয়াল করিনি। মোহিনী বললেন।
আপামনি আপনার কি হইছে কন তো? আপনার মনডা কি খারাপ?
মোহিনী কোনো কথা বললেন না। তিনি আরেফিনের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। রহিমাবিবি মোহিনীর কোনো জবাব না পেয়ে আবারও বলে, আপনি না কই যাইবেন আপামনি?

মোহিনী এবারও কোনো কথা বললেন না। তিনি সাজঘরে গিয়ে তৈরি হতে লাগলেন। কাপ হাতে নিয়ে চলে যাওয়ার সময় রহিমাবিবি আবারও বলল, আপামনি চা কি দেব?
সাজঘর থেকেই মোহিনী বললেন, না। কোনো দরকার নেই। তুই একটা কাজ কর। আমার ড্রাইভারকে তৈরি হতে বল। আমি এখনই বের হব।
জি আপামনি।
রহিমাবিবি চলে গেল। সে বাইরে বের হয়ে ড্রাইভারকে গাড়ি নিয়ে প্রস্তুত থাকার জন্য বলল। এরমধ্যে মোহিনীও তৈরি হয়ে নিজের কক্ষ থেকে বের হয়ে আনোয়ারা বেগমের কাছে যান। তাকে আরেফিনের লাশের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন তিনি। কিন্তু মোহিনী কিছুতেই নিজের মনকে বুঝাতে পারেন না। তিনি কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, বিধাতা এমন একটা শাস্তি কেন আমাকে দিল বলতে পার? মৃত্যু যখন কপালেই ছিল, তখন স্বাভাবিক মৃত্যু কেন হলো না। এর আগে তো কয়েকবার হাসপাতালে ছিল। তখনই না হয় মারা যেত! করোনায় আক্রান্ত হয়েই মারা যেতে হবে! আর সেজন্য শেষ বিদায়ের দিনে তার চেহারাটাও দেখতে পাব না?

আনোয়ারা বেগম নিজের আবেগকে সামলে নিয়ে বললেন, কী করবি মা। সবই কপাল!
মোহিনী কোনো কথা বললেন না। তিনি হন হন করে বাইরের দিকে পা বাড়ালেন। এ সময় আনোয়ারা বেগম জানতে চাইলেন, কিরে মা, কই যাস?
বিমানবন্দর যেতে হবে মা। আরেফিনের লাশ আসবে। চেহারা তো আর দেখতে পাব না। দূর থেকে বিদায় জানাব, চিরদিনের জন্য বিদায়!
আমিও যাই। নিবি আমাকে?
কী দরকার মা। থাক। করোনার মধ্যে তোমার বের হওয়ার দরকার নেই।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আনোয়ারা বেগম বললেন, আচ্ছা!
মোহিনী বাসা থেকে বের হয়ে বিমানবন্দরের দিকে রওয়ানা হয়। গাড়িতে বসে সে মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে তারিখটা ভালো করে দেখল। দোসরা জুন। বুধবার। দুই হাজার বিশ সাল। তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ একটি দিন। তার জীবনসঙ্গীর চলে যাওয়ার দিন। এত দুঃখের, এত কষ্টের, এত বেদনার দিন তার আর কখনো আসেনি। এত কষ্ট তিনি আগে কখনো পাননি। আজ তার মনে হচ্ছে, সবকিছুই বুঝি শেষ হয়ে গেল। প্রকৃতির চরম এক শাস্তি তাকে মাথা পেতে নিতে হলো। তিনি জানেন না, কেন এত বড় শাস্তি তার জীবনে নেমে এসেছে। কার ভুলে তাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে? তিনি কি নিজে কোনো ভুল করেছেন? তিনি কি জীবনে কারও ক্ষতি করেছেন? কারও ক্ষতির চিন্তা করেছেন? মনে করার চেষ্টা করেন মোহিনী।

মোহিনী কিছুতেই নিজের ভুলের কথা মনে করতে পারছেন না। তিনি সব সময়ই অন্যের ভালোর চিন্তা করেছেন। অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। কোনোদিন কারও ক্ষতির চিন্তা করেননি। ছোটবেলা থেকেই তিনি পরোপকারী। নিজের ক্ষতি করেও অন্যকে কীভাবে সহায়তা করা যায় তা ভেবেছেন। অথচ আজ তাকে কষ্ট পেতে হচ্ছে। তাহলে কি তার পরিবারের কেউ ভুল করেছে? সেই শাস্তি তাকে পেতে হচ্ছে? তার দাদা অত্যন্ত দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। তার বাবাও সেই অভ্যাস পেয়েছে। তার পরিবারে এমন কেউ নেই যে অন্যের ক্ষতি করেছে। অন্যের টাকা পয়সা মেরে খেয়েছে। অন্যকে ঠকিয়েছে।

কষ্টের মধ্যেই মোহিনী সান্ত্বনা খোঁজেন। সৃষ্টিকর্তা যা করেন তা নাকি মঙ্গলের জন্যই করেন। এর মধ্যে কী মঙ্গল আছে তার অপেক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া আর উপায় কী!

মোহিনীকে বহনকারী গাড়িটি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমান বন্দরে পৌছবে। মোহিনী মোবাইল হাতে নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তার নম্বরে ফোন দিল। দুতিন বার রিং বাজার পরই লোকটা ফোন ধরল। হ্যালো।

মোহিনী সালাম জানিয়ে বললেন, আমি মোহিনী বলছি। আপনি কি বিমানবন্দরে এসেছেন? আমিও ঠিক কাছাকাছি। কোথায় আসব? ভিআইপি লাউঞ্জে? আচ্ছা আচ্ছা। আমি আর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আসছি। অনেক ধন্যবাদ ভাই।
ফোনে কথা বলা শেষ করে মোহিনী ড্রাইভারকে বললেন, ভিআইপি লাউঞ্জে নিয়ে চলো।

ড্রাইভার গাড়ি ভিআইপি লাউঞ্জে নিয়ে গেল। লাউঞ্জের গেটেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা অপেক্ষায় ছিল। মোহিনীকে দেখে সে চিনতে পারল। তার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছি।
ও আচ্ছা আচ্ছা। মোহিনী বললেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোহিনীকে ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে বলল, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমান অবতরণ করবে। আমাদের আর অল্প কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। আপনি চা খাবেন? কিংবা কফি?
না থাক। মোহিনী বললেন।
অসুবিধা নেই। খেতে পারেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বললেন।
না থাক। পরে এক সময় আপনার অফিসে গিয়ে খাব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হাসি ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, মোস্ট ওয়েলকাম। ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।
মোহিনী মাথা নেড়ে সায় দিলেন। আর কোনো কথা বললেন না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বললেন, আরেকটা কথা, আপনি বোধহয় জানেন, লাশ প্যাকিং অবস্থায় থাকবে। খোলা যাবে না। এখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে পাগলায় নিয়ে যাওয়া হবে।

মোহিনী এবারও মাথা নেড়ে সায় দিলেন। কোনো কথা বললেন না। হঠাৎ তার মনটা ভারী হয়ে উঠল। কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু যেন থেমে গেল। সবাই নীরব। পিনপতন নীরবতা ভিআইপি লাউঞ্জে। মোবাইল ফোনের রিং বাজার শব্দে সেই নীরবতা ভাঙে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে ছুটে যায় দরজার সামনে। তিনি মোহিনীকেও ডাকেন। লাশ এসেছে। আপনি আসুন।

মোহিনী সামনের দিকে পা বাড়ায়। মুহূর্তের মধ্যে এগিয়ে যায় দরজার সামনে। বাক্সে ভরা লাশ। শুধু বাক্স দেখে মনকে সান্ত্বনা দেবে, ওর ভেতরেই আরেফিনের লাশ আছে। ব্যাস। ওইটুকুই।

মোহিনী গাড়িতে বসে আছেন। বিমানবন্দর থেকে তিনি বাসায় যাচ্ছেন। ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে বের হয়ে সামনের দিকটায় আসতেই দেখেন রাস্তার পাশে অসংখ্য মানুষের ভিড়। ভিড়ের কাছাকাছি আসতেই তিনি কান্নার আওয়াজ পান। এক বয়স্ক মতো লোক চিৎকার দিয়ে কাঁদছেন। তার বেশভূষা অতি সাধারণ। চুল দাড়ি পাকা। মুখোমন্ডলের বলিরেখাগুলো স্পষ্ট। রোদে পোড়া বৃষ্টিতে ভেজা ঝামা ইটের তো কঠিন চেহারা; দেখেই বোঝা যায়।

লোকটা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমারে একবার শুধু আমার ছেলের লাশটা একটু দেখতে দেন ভাই! আমি খবর নিয়া জানছি, আমার পোলার লাশ আইজকা উহান থেকে আসব। হাচা কইতেছি। আমি একবার শুধু আমার পোলার মুখখানা দেখমু। আমার আর কিছু চাই না। শেষবারের মতোন আমি পোলাডারে একটু দেখতে চাই।

পথের লোকজন তাকে কী বলে সান্ত্বনা দেবে? কী সান্ত্বনা দেওয়ার আছে তাদের? তারা শুধু বুড়ো মানুষটার কষ্ট উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ বলছেন, ভাইরে, করোনা হলে লাশের কাছেও যাওয়া যায় না। বিদেশ থেকে বাক্সভর্তি করে আসছে। ওইভাবেই করব দেওয়া হবে। দেখার আর সুযোগ নাইরে ভাই!

মোহিনী গাড়ি রাস্তার পাশে রেখে বুড়ো লোকটার কাছে এগিয়ে যান। মোহিনীকে দেখে পুরুষ লোকগুলো জায়গা করে দেয় বুড়োর কাছে যাওয়ার জন্য। তিনি বুড়ো লোকটাকে উদ্দেশ করে বললেন, আপনার ছেলের লাশ কোন দেশ থেকে আসবে বললেন?
চীনের উহান থেকে।
আপনার ছেলের কী নাম?
কাঁদতে কাঁদতে বুড়ো লোকটা বললেন, আরেফিন।
নামটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে মোহিনীর মাথায় যেন বাজ পড়ে। বিদ্যুতের শক খাওয়ার মতো শরীরটা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলেন, আপনি আরেফিনের বাবা!
হ মা।
আপনার নাম?
আলী আকবর। বাড়ি বরিশাল। উপজেলা মেহেন্দিগঞ্জ। গ্রাম আজিমপুর।
কীভাবে জানলেন, আরেফিন মারা গেছেন?
আলী আকবর আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বললেন, আমি খোঁজ নিতে নিতে ওর অফিসে গেছিলাম। ওখান থেকে কইল, আইজ আমার ছেলের লাশ আইব। কতদিন আমার ছেলেডারে দেহি নাই। বাড়ি যাইব যাইব কইরা চীনে চইলা গেল। আর দেহাও হইল না।

মোহিনী অনেক কষ্টে নিজের আবেগ সামলে বললেন, আপনি আমার গাড়িতে ওঠেন। আপনি কেডা মা? আপনের লগে গেলে আমার পোলার লাশ দেখা যাইব।
আপনি আমার সঙ্গে আসেন।
মোহিনী গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। আলী আকবর তাকে অনুসরণ করলেন। পথের লোকেরা যে যার গন্তব্যে চলে গেল। গাড়িতে সামনের আসনে আলী আকবরকে বসতে দিলেন। তারপর মোহিনী পেছনে গিয়ে বসে ড্রাইভারকে বললেন, আমার অফিসে যাও।
ড্রাইভার গাড়ি স্ট্রাট দিল। গাড়ি চলতে শুরু করল। আলী আকবর কাঁদতে কাঁদতে বললেন, তুমি কেডা মা?
আমার অফিসে চলুন। তারপর বলছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌছে যাব। আপনি ঢাকায় আসছেন কবে?
কয়েকদিন হইয়া গেলো মা। পোলার খোঁজেই আইছিলাম। বাসায় গেছিলাম। দারোয়ান বলল, আরেফিন চীনে গেছে। তারপর অফিসে গেলাম। ওইখান থেকেই খবর পাইলাম, আরেফিন করোনায় মারা গেছে। আরেফিনের মা কইল, ঘরের চালে বইসা কাকগুলান কেমন কইরা ডাকতাছে। আপনি ঢাকায় গিয়া আমার ছেলের খবর লন! ছেলের মারে এহন আমি কী কমু?
আলী আকবর হাউমাউ করে আবার কাঁদতে শুরু করলেন। মোহিনী সান্ত্বনাসূচক কিছু কথাবার্তা বললেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি তার অফিসে পৌঁছলেন। আলী আকবরকে নিয়ে নিজের রুমে গেলেন। দরজা বন্ধ করে বললেন, আপনি বসুন। চা খাবেন?
আলী আকবর কোনো কথা বললেন না। তিনি চোখ পাকিয়ে অফিস দেখছেন। বিশাল অফিস দেখে তার চোখ ধাঁধিয়ে যায়। তিনি বসবেন কি বসবেন না তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান। ওই জায়গায় তাকে বড় বেমানান মনে হয়। নিজেকে বড় ছোট মনে হয় তার কাছে। তিনি বিনয়ের সঙ্গে বলেন, এইডা কোন জাগা মা?
গুলশান।
ও গুলশান! অনেক নাম হুনছি।
এটা আমার অফিস।
আচ্ছা মা, আপনি কেডা? আমারে কি আপনি চেনেন?
আমি আপনার ছেলের বউ!
আলী আকবরের চোখেমুখে রাজ্যের বিস্ময়। তিনি কী বলবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে তিনি মোহিনীর দিকে তাকিয়ে রইলেন।

চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

বিষাদ বসুধা: পর্ব ২০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৯

Header Ad
Header Ad

ড. ইউনূসের জন্মদিনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা

তারেক রহমান ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টার অফিসে বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুল ও কেক পৌঁছে দেন।

প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফেরদৌস হাসান সেলিম ফুলের তোড়া ও শুভেচ্ছা সামগ্রী গ্রহণ করেন।

ফুলেল শুভেচ্ছা পেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার সুস্বাস্থ্য ও সফলতা কামনা করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তার এই অনন্য অবদানের জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

Header Ad
Header Ad

পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের দাবিকে ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীতে জিয়াউর রহমান স্মরণে আয়োজিত এক স্মারক প্রকাশনা ও আর্কাইভ উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, “যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট—তারা নির্বাচন বিলম্ব কিংবা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচাল করতে চায়। পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রয়োগযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সংস্কার মানে বাইবেল নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কারের মূল প্রবক্তা বিএনপি নিজেই। আমরা এরইমধ্যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে উপস্থাপন করেছি। তাই জাতীয় ঐক্যের নামে একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।”

সালাহউদ্দিন আহমদ জোর দিয়ে বলেন, “কেউ যদি মনে করেন সবাইকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মত মেনে নিতেই হবে, তাহলে ঐকমত্য কখনোই সম্ভব নয়। একতরফা মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় বাস্তবতাকে বুঝতে হবে।”

বিএনপি এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত নির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা না করায় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“সরকার যদি সত্যিই নির্বাচন চায়, তাহলে তাদের উচিত দ্রুত সময়সূচি ঘোষণা করা। বর্তমানে স্থানীয় নির্বাচনের মতো আয়োজন উপযুক্ত নয়; জাতীয় নির্বাচনই এখন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামি দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির দাবি জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের মহাসমাবেশে এ পদ্ধতি চালুর দাবি তোলে। বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে বলছে, এটি বাস্তবসম্মত নয় এবং এতে নির্বাচনের স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যুতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা আগামী নির্বাচনের আগে একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিতে পারে।

Header Ad
Header Ad

জোটবদ্ধ ইসলামি দল হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি: চরমোনাই পীর

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম । ছবি: সংগৃহীত

ইসলামপন্থীদের ঐক্যের প্রতি গণমানুষের প্রবল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, “যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে জোটবদ্ধ ইসলামি দলই হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। ইনশাআল্লাহ, রাষ্ট্রক্ষমতা আমাদের হাতেই আসবে।”

শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

চরমোনাই পীর বলেন, “আমরা স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে বহু রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখেছি, কিন্তু ইসলামি দল আজও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারেনি। এর বড় কারণ—আমরা বারবার নেতৃত্ব ও নীতির বাছাইয়ে ভুল করেছি। এবার আর সে ভুল নয়, এবার আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো।”

তিনি জানান, শুধু ইসলামি দলগুলো নয়, বরং দেশপ্রেমিক আরও কিছু রাজনৈতিক শক্তিকে একত্রে নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া চলছে। সেই ঐক্যই হতে পারে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার সেতুবন্ধ।

চরমোনাই পীর বলেন, “আমি বহু আগেই বলে আসছি—ইসলামপন্থী ভোট এক বাক্সে আনতে হবে। আমরা যদি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তাহলে জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রাখবে এবং ইসলামি শক্তিই হবে এই দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব।”

তিনি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আগামী নির্বাচনে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি’ চালু করতে হবে। যে দল যত ভোট পাবে, তারা তত আসনে প্রতিনিধিত্ব পাবে। এটা এখন জনদাবি—বহু রাজনৈতিক দল এই দাবিতে একমত।”

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “বিএনপির উচিত পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চিন্তা করা। এতে করে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে।”

এ সময় তিনি ইসলামী আন্দোলনের সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোর প্রতি দলটির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “সংস্কার প্রশ্নে আমরা আপসহীন। দেরি করা মানেই ২০২৪-এর গণ-আন্দোলনের সঙ্গে বেইমানি। আমরা বিশ্বাস করি, ৭২-এর সংবিধান জনআকাঙ্ক্ষার প্রতি বধির ছিল, তাই সেটিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন অপরিহার্য।”

তিনি আরও বলেন, “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সবসময় শান্তিপূর্ণ উপায়ে জনমত গঠনে বিশ্বাসী। তবে জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে দেশজুড়ে নতুন গণজাগরণ শুরু হবে।”

মহাসমাবেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি ও ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে এই বক্তব্য নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের সক্রিয় ও সংগঠিত ভূমিকাই যে এখন আলোচনার কেন্দ্রে, সেটাই যেন প্রতিফলিত হলো এই বক্তব্যে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ড. ইউনূসের জন্মদিনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা
পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
জোটবদ্ধ ইসলামি দল হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি: চরমোনাই পীর
খামেনির প্রাণ বাঁচালাম, ধন্যবাদটুকুও দিলো না: ট্রাম্প
পুরস্কার না নিয়ে মনু মিয়ার জানাজায় অভিনেতা খায়রুল বাসার
মা হারালেন ব্যান্ড তারকা তানজির তুহিন
ক্ষমতায় গেলে ১৮ মাসে ১ কোটি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে বিএনপি: আমীর খসরু
ফিলিস্তিনের মতো সাইপ্রাসও দখলে নিচ্ছে ইসরায়েল!
কালও চলবে এনবিআরের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’
‘এনবিআরের প্রশাসনিক আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই’
সিইসির সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে যা বললেন প্রেস সচিব
নওগাঁয় ছাত্রদলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নব গঠিত কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত
করোনায় আরও দুইজনের মৃত্যু,  শনাক্ত ৭
এক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে: ট্রাম্প
ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে ১৬ দফা ঘোষণা
নতুন রক্তের গ্রুপের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা
গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন আওয়ামী লীগ নেতা
সাগরতীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন করলেন কিম জং উন
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৬২
কূটনৈতিক অস্ত্র পানি নিয়ে ভারতের কঠোর অবস্থান, শঙ্কায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান