বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর এপিএস বাশারের সম্পদের পাহাড়

সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আ ন ম আহমাদুল বাশার। ছবি: সংগৃহীত

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পাড়ি জমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই একে একে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে থলের বিড়াল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তার অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং আমলাই আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মতোই রাতারাতি বনে গিয়েছেন বিপুল সম্পদের মালিক। এমনই একজন হচ্ছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আ ন ম আহমাদুল বাশার।

গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রতিমন্ত্রীর এপিএস হয়েই মাত্র পাঁচ থেকে ছয় বছরেই বাশার হয়ে গেছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। দিনাজপুর জেলা ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর প্রভাবে নিয়োগ-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, দলীয় পদ দেওয়ার নামে কামিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। এসব টাকা পাচারে নিজেই নিয়েছেন এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার মালিকানা।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং তার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আ ন ম আহমাদুল বাশার। ছবি: সংগৃহীত

খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নাম পরিচয় কাজে লাগিয়ে যে শুধু নিজের স্বার্থ হাসিল করেছেন ব্যাপারটি এমন নয়। শতকোটি টাকার মালিক বানিয়েছেন নিজের মোটরসাইকেল চালককেও! একসময় মাদক কারবার ও নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হলেও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর প্রভাবে সীমাহীন দুর্নীতি চালিয়ে গেছেন এপিএস বাশার।

এপিএস হওয়ার আগের সময়টা খুব একটা ভালো ছিল না বাশারের। দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের টেনা এলাকার দরিদ্র কৃষক তাইজুল ইসলামের তিন ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। স্থানীয়রা জানান, একসময় বাশারের পরিবারের সম্পদ ছিল তিন থেকে চার বিঘা জমি। সেই জমিতে কোনো রকম আবাদ করে কষ্টে দিন কাটত এ পরিবারের। ছেলেদের পড়াশোনার খরচ চালাতে একসময় জমি বন্ধকও রেখেছিলেন কৃষক তাইজুল। তবে বাশারের অবৈধ টাকার কেরামতিতে সেই পরিবার এখন ফুলেফেঁপে কলাগাছ।

স্থানীয় মুদি দোকানদার রহমান আলীর ভাষ্যে, কেউ আলাদীনের চেরাগ পেলেও হয়তো এত দ্রুত কোটি কোটি টাকা, জায়গা-জমি, পুকুর, বাড়ি-গাড়ির মালিক হতে পারে না, যতটা এপিএস বাশার মাত্র ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে করেছেন।

জানা গেছে, খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সংসদীয় আসন বোচাগঞ্জের বাসিন্দা। এই সুবাদে তার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন বাশার। এক পর্যায়ে এলাকার পাশাপাশি ঢাকার রাজনীতিতেও বেশ প্রভাব খাটানো শুরু করেন তিনি। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় ২০১১ সালে খালিদ মাহমুদের সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি হন বাশার। তবে সভাপতি পদ বাগিয়ে নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু করেন নিয়োগ-বাণিজ্য। শিক্ষক নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজের টেন্ডার নেওয়া থেকে শুরু করে শেরেবাংলা নগর এলাকায় মাদকের রমরমা কারবার শুরু করেন তিনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কলেজ গেট এলাকায় একটি বাসায় গড়ে তৈরি করেছিলেন নিজস্ব টর্চার সেল। ছাত্রলীগের অন্য গ্রুপের নেতাকর্মীদের এবং টেন্ডার ও মাদক কারবারে কেউ বাধা দিলে সাঙ্গোপাঙ্গদের দিয়ে তাদের তুলে নিয়ে সেই টর্চার সেলে নির্যাতন করতেন। এসব অপকর্মের কারণে কমিটির এক বছরের মাথায় সভাপতির পদ ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হন।

এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে বলেন, বাশারের অত্যাচারে ক্যাম্পাসে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তো বটেই, ছাত্রলীগের যারা রাজনীতি করত, তাদেরও নির্যাতন করত বাশার। তার কথার বাইরে কোনো নিয়োগ হতো না। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকের কারখানা বানিয়ে ফেলেছিলেন।

আ ন ম আহমাদুল বাশার। ছবি: সংগৃহীত

তবে এত কিছুর পরও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ হতো বাশারের মাধ্যমেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই ২০১৩ সালে তৎকালীন দিনাজপুর-২ আসনের এমপি খালিদ মাহমুদ তাকে এপিএস হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর ২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় সংসদের অধীনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে খালিদ মাহমুদ দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বাশারকে। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং প্রতিমন্ত্রীর ক্ষমতার কারণে বাশার হয়ে ওঠেন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। রাজধানীসহ দিনাজপুর জেলায় শুরু হয় বাশারের তাণ্ডব।

বিআইডব্লিউটিএ ভবনে খালিদের চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান ছিলেন বাশার: জানা যায়, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মন্ত্রী হওয়ার পরপরই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) প্রধান কার্যালয় দখলে নেন এপিএস বাশার। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন বিকেল ৪টার পর তার নিজস্ব ঠিকাদার ও ব্যক্তিগত ক্যাডার বাহিনী নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ ভবনে প্রবেশ করে বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীদের কক্ষে গিয়ে তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করতেন তিনি। অপছন্দের ঠিকাদারকে বিআইডব্লিউটিএ ভবনে প্রবেশ করতে দিতেন না। কেউ গেলেই ক্যাডার বাহিনী নিয়ে হামলা করতেন তিনি।

বিআইডব্লিউটিএ ভবনের কয়েকজন তালিকাভুক্ত ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০ লাখ টাকার ওপরে যে কোনো কাজে এপিএস বাশারকে কাজের বিপরীতে কমিশন না দিলে কাজ পাওয়া যায় না। ওই ভবনে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আক্ষেপ করে বলেন, বিগত পাঁচ বছর থেকে টেন্ডার কাজে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে এপিএস বাশার হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েকশ কোটি টাকার ওপরে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাশারের বড় সহযোগী ছিলেন সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাইয়ের বউয়ের ছোট বোনের স্বামী মো. আরশাদ। এই দুজন মিলে নিয়ন্ত্রণ করতেন মন্ত্রণালয়ের সবকিছু। তাদের মাধ্যমেই কাজের পার্সেন্টেজ নিতেন প্রতিমন্ত্রী। কাকে কাজ দেওয়া যাবে, তা ঠিক করতেন আরশাদ আর বাশার। বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, চট্টগ্রাম বন্দর, পায়রা পোর্টের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে নিজেদের সিন্ডিকেটের লোক বসাতেন এই দুজন। তাদের মধ্যে আরশাদ নৌপ্রতিমন্ত্রীর ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ছিলেন সবার কাছে। মূলত এই আরশাদই প্রতিমন্ত্রীর হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে দিনাজপুরের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যক্তিগত সহকারী হলেও বাশার এলাকায় কখনো কখনো খোদ খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর চেয়েও বেশি ক্ষমতা দেখাতেন। দিনাজপুরে তার হয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন বাশার।

দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম রবি জানান, জেলার ডিসি, এসপি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতারা তটস্থ থাকতেন বাশারের ভয়ে। বাশার চাইলেই যে কাউকে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কাছে নায়ক বা ভিলেন বানাতে পারতেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা বাশার করেননি। নিজের অযোগ্য আত্মীয়স্বজনের দিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। যে যত বেশি তার আত্মীয়দের খুশি করতে পারতেন, সেই পদ ক্ষমতাসহ অর্থের মালিক হতেন।

বাশারের যত সম্পদ: স্থানীয় নেতাকর্মী ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজ গ্রাম টেনাসহ আশপাশের গ্রামে নামে-বেনামে ৩০০ বিঘা জমি রয়েছে বাশারের। এছাড়া কালুপীর বাজারের পাশে মসলাবাটি নামক স্থানে ১৫০ বিঘার ওপর পুকুরের সঙ্গে রয়েছে খামারবাড়ি। কালুপীর বাজারে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমি, দোকান ও গোডাউন করেছেন বাশার। পার্শ্ববর্তী উপজেলা পীরগঞ্জের ৫ নম্বর সৈয়দপুর ইউনিয়নে ৯০ বিঘা জমির ওপর আমবাগান, পীরগঞ্জ উপজেলায় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ৫৮ শতাংশ জমি, সেতাবগঞ্জ বাজারে নিজের নামে এবং আত্মীয়স্বজনের নামে কয়েক কোটি টাকার ১ হাজার ৭৪১ শতাংশ জমি, বিরল স্থলবন্দরের পাশেই ৩৮৬ শতাংশ জমি, দিনাজপুর শহরে শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনের নামে ৫টি প্লট রয়েছে বাশারের। এ ছাড়া ঢাকার লালমাটিয়া, আদাবর, শেখেরটেক, মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি, বাবর রোড়, হুমায়ুন রোডে রয়েছে ১৩টি ফ্ল্যাট এবং বছিলা ও ঢাকা উদ্যানে ৫ শতাংশ করে অসংখ্য প্লট রয়েছে বাশারের নামে।

টাকা পাচারে খালাতো ভাইয়ের নামে ‘খালাতো এন্টারপ্রাইজ’: মন্ত্রণালয় এবং বাশারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব, নিয়োগ-বাণিজ্য আর মাদকের কারবারের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশেও পাচার করেছেন বাশার। পাচারের দিকটা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন তার অন্যতম সহযোগী খালাতো ভাই রনি। এই রনিকে সবাই ‘খালাতো এন্টারপ্রাইজ’ নামে চেনে। রনিকে দিয়ে ‘খালাতো এন্টারপ্রাইজ’ নামে প্রতিষ্ঠান খুলে বোচাগঞ্জ উপজেলা নিয়ন্ত্রণ করতেন বাশার। তাকে দিয়েই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা নিয়েছিলেন তিনি। এই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আড়ালে প্রতি সপ্তাহে বিদেশে টাকা পাচার করতেন তিনি। এ ছাড়া খালাতো এন্টারপ্রাইজ দিয়ে এলাকার সব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন রনি। চাকরি-বাণিজ্য, বদলি, থানায় প্রভাব বিস্তার, মাদক-বাণিজ্য, সরকারি জমি গ্রাস—এমন কোনো কাজ নেই, যা রনি করতেন না। সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর কাছে যারা বিভিন্ন চাকরির লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরির জন্য যেতেন, বাশার তাদের রনির কাছে পাঠাতেন। রনি প্রতিজনের কাজ থেকে ৫ থেকে ২০ লাখ পর্যন্ত টাকা নিতেন।

স্থানীয়রা জানান, কারও যদি কপালে চাকরি লেখা থাকত তাহলে হতো, আর না হলে ওই টাকা আর কখনো ফেরত পাওয়া যেত না। টাকা ফেরত চাইলেই মিথ্যা মামলা আর নির্যাতনের ভয় দেখানো হতো।

এদিকে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে বিদেশে গেলে তার মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের সঙ্গে আত্মগোপনে চলে যান খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তার সঙ্গে আত্মগোপনে গেছেন এপিএস বাশার ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরাও। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়ম ও লুটপাটের বিষয়ে তাদের মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Header Ad
Header Ad

আমরা ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছি: শেহবাজ শরিফ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (বামে) এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। ছবি কোলাজ: ঢাকাপ্রকাশ

ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পাল্টা হামলাকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। তিনি বলেন, "পাকিস্তানি সেনারা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতের আগ্রাসন রুখে দিয়ে প্রমাণ করেছে, পাকিস্তান আর ১৯৭১ সালের সেই দুর্বল রাষ্ট্র নয়। আমরা আমাদের ইতিহাসের প্রতিশোধ নিয়েছি।"

বুধবার (১৪ মে) শিয়ালকোটের পাসরুর সেনানিবাসে "অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস"-এ অংশ নেওয়া সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাতে এসব কথা বলেন শেহবাজ। তিনি এই সামরিক অভিযানের প্রশংসা করে বলেন, “এই অপারেশন পাকিস্তানের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সেনারা দুর্দান্ত সাহস ও দ্রুততায় শত্রুর জবাব দিয়েছে।”

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে ভারত ও বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানকে পরাজিত করে। এর আগে পাকিস্তান ভারতের বিমান ঘাঁটিতে ‘অপারেশন চেঙ্গিস খান’ চালায়, যার জবাবে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

শেহবাজ বলেন, “ইতিহাসে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে—পাকিস্তানের সাহসী সেনারা কীভাবে ভারতের অপ্ররোচিত আগ্রাসনের জবাব দিয়েছে। তারা শুধু বর্তমানের নয়, অতীতের অপমানেরও জবাব দিয়েছে।”

পাক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “বিশ্ব জানে ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীকে কারা প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। আজও সেই একই শক্তি বেলুচ লিবারেশন আর্মি এবং তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে। এর পেছনে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।”

মোদির উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে শেহবাজ বলেন, “আপনার জ্বালাময়ী বক্তব্য নিজের কাছে রাখুন। পাকিস্তান শান্তি চায়, কিন্তু কেউ যেন আমাদের শান্তির আহ্বানকে দুর্বলতা না ভাবে। যদি আপনি আরেকবার আগ্রাসনের চেষ্টা করেন, তাহলে ফলাফল আপনার কল্পনার বাইরে হবে।”

সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের পানি প্রবাহ বন্ধ করার হুমকির জবাবেও কড়া অবস্থান নেন শেহবাজ। তিনি বলেন, “পানি ও রক্ত একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না। এটি পাকিস্তানের লাল লাইন। এই সীমা লঙ্ঘন করা হলে চরম পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”

শেহবাজের সফরে তার সঙ্গে ছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান ও বিমানবাহিনী প্রধানসহ অন্যান্য শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা।

Header Ad
Header Ad

পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ নার্সিং শিক্ষার্থীরা, শাহবাগে যান চলাচল শুরু

পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ নার্সিং শিক্ষার্থীরা, শাহবাগে যান চলাচল শুরু। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন ডিপ্লোমা নার্সিং শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৪ মে) রাত ৯টার দিকে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেন।

পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে তিনজন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নার্সিং শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা শাহবাগ মোড়ে পৌঁছান। শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দিলেও শিক্ষার্থীরা তা অতিক্রম করে মোড়ে অবস্থান নেন, ফলে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষোভ চলাকালে রাত ৯টার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরাতে লাঠিচার্জ শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীরা কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

আহত শিক্ষার্থী আভি শেখ বলেন, "আমরা পুলিশের কাছে মাত্র ১০ মিনিট সময় চেয়েছিলাম, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক ছেড়ে যেতে পারি। কিন্তু সেই সময় না দিয়ে তারা সরাসরি লাঠিচার্জ করে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।" তিনি আরও জানান, "আমরা এখন শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছি এবং সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।"

লাঠিচার্জের পর শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় ছেড়ে যাওয়ায় সেখানে যান চলাচল আবারও স্বাভাবিক হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোড়ে অবস্থান নিয়েছে, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Header Ad
Header Ad

অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ রিকশাচালককে দেড় লাখ টাকা অনুদান, পাবেন চাকরিও

ক্ষতিগ্রস্ত তিন রিকশাচালকের হাতে অনুদানের অর্থ তুলে দেন ডিএনসিসি প্রশাসক। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর আসাদগেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত তিন রিকশাচালককে দেড় লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সেইসঙ্গে তাদের চাকরির ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।

বুধবার (১৪ মে) ডিএনসিসি ভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রশাসকের নিজ কার্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তিন চালকের হাতে ৫০ হাজার টাকা করে মোট দেড় লাখ টাকার চেক তুলে দেন তিনি।

ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, "মানবিক দিক বিবেচনায় আমরা এই সহায়তা দিয়েছি। তবে এটা এককালীন। ভবিষ্যতে মূল সড়কে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করলে একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" তিনি আরও জানান, চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে এরই মধ্যে ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৩ মে) ডিএনসিসি ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) যৌথভাবে আসাদগেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূল সড়কে চলাচলরত অবৈধ ব্যাটারিচালিত বেশ কিছু রিকশা জব্দ করে। কিছু রিকশা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন কয়েকজন চালক।

এই ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নজরে আসে ডিএনসিসি প্রশাসকের। পরে তিনি দ্রুত সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন।

ডিএনসিসি প্রশাসক আরও জানান, রাজধানীর প্রধান সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা অপসারণ করা হচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অনুমোদিত মডেলে ব্যাটারিচালিত রিকশা উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে কয়েকটি কোম্পানিকে।

তিনি বলেন, "এসব রিকশাচালককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈধ রিকশা পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হবে। ব্র্যাকের সহায়তায় প্রায় এক লাখ রিকশাচালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যা চলতি মাসেই শুরু হবে।"

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আমরা ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছি: শেহবাজ শরিফ
পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ নার্সিং শিক্ষার্থীরা, শাহবাগে যান চলাচল শুরু
অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ রিকশাচালককে দেড় লাখ টাকা অনুদান, পাবেন চাকরিও
বিশ্বের ‘সবচেয়ে দরিদ্র প্রেসিডেন্ট’ হোসে মুজিকা মারা গেছেন
পিএসএলে দল পেলেন সাকিব আল হাসান!
বিজিবির অভিযানে মেহেরপুর সীমান্তে ৯৪ লাখ টাকার স্বর্ণসহ আটক ২
আ.লীগ সরকারের করা চুক্তিতে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো সম্ভব: দুদক
আইপিএলে ডাক পেলেন মোস্তাফিজ, বিসিবি জানে না কিছুই!
টাঙ্গাইলে জেমসের কনসার্টে মোবাইল চুরির হিড়িক, থানায় ১২৯ জিডি
ঈদে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ১৬ মে
আত্মপক্ষের সুযোগ হারালেন টিউলিপ সিদ্দিক
১ মাস না যেতেই পাল্টে গেল ডেসটিনির রফিকুলের দলের নাম
অশ্লীলতার অভিযোগে ৬ অভিনেত্রী ও ৩ নির্মাতার বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামীকাল থেকে রেইড: আসিফ মাহমুদ
ইসরায়েলের বিমানবন্দরে হুথিদের মিসাইল হামলা (ভিডিও)
আইপিএলে ৬ কোটিতে মুস্তাফিজকে দলে নিল দিল্লি ক্যাপিটালস
টাঙ্গাইলে বিএনপি নেতার কারখানায় ডাকাতি, গ্রেফতার ৯
সেলিব্রিটি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন গিগাবাইট টাইটানস, উচ্ছ্বসিত সিয়াম-মেহজাবীনরা
এপ্রিলে আইসিসির মাসসেরা ক্রিকেটার মিরাজ
সমাবর্তনে ড. ইউনূসকে ডি-লিট ডিগ্রি দিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়