শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩ কার্তিক ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

আইনে পিতামাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব

মানবজাতির পৃথিবীতে আগমনের মাধ্যম হলো তার পিতামাতা। তাই মানুষের জীবনে পিতামাতার মর্যাদা ও অধিকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে একজন মানব সন্তানকে পিতামাতা সর্বোচ্চ ভালোবাসা দিয়ে লালন-পালন করেন। সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রচনায় পিতামাতা তিলে তিলে নিজেদের জীবন ও সামর্থ্যকে বিসর্জন করে এক সময় বার্ধক্যে উপনীত হন। কর্মক্ষম শরীর নিশ্চল হয়ে পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে থাকেন সন্তানের উপর।

তাই সন্তান কর্মক্ষম ও সামর্থ্যবান হওয়ার পর থেকেই পিতামাতার সার্বিক ভরণপোষণ ও সেবাযত্ন করার দায়িত্ব সন্তানদের উপর বর্তায়। নৈতিক, ধর্মীয় বা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে পিতামাতার অজান্তে সন্তানের ক্ষতি হলেও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না।

সন্তানের কাছ থেকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সদাচরণ পাওয়া পিতামাতার নৈতিক ও আইনগত অধিকার। বিশেষভাবে তারা যখন বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হন এবং কর্মক্ষম থাকেন না, তখন তারা ভরণপোষণ ও সেবাযত্ন পাওয়ার জন্য সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকেন। সন্তানের কর্তব্য, তার পিতামাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করা, অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, তাদের সঙ্গ দেওয়া এবং তাদের মনে কষ্ট পাবার মতো কোনো ব্যবহার না করা।

বর্তমান সমাজে পিতামাতার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার যথেষ্ট চিত্র রয়েছে। অনেক সন্তানের সক্ষমতা থাকার পরেও তারা আদর্শ শিক্ষা বা সদিচ্ছার অভাবে পিতামাতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। পিতামাতার ব্যয়ভার বহন না করে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে বা রাস্তায়, রেলওয়ে বা বাস স্টেশনে ফেলে যাওয়ার অনেক ঘটনা প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে, যা চরম অবক্ষয়ের ইঙ্গিত বহন করে। এমন পরিস্থিতি অনুধাবন করে নৈতিক ও মানবিকবোধ থেকে বাংলাদেশ সরকার সন্তান কর্তৃক পিতামাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করার জন্য ২০১৩ সালে পিতামাতার ভরণপোষণ আইন প্রণয়ন করে।

এ আইন তৈরির পূর্বে পিতামাতার দেখোশোনা করা সামাজিক স্বীকৃত রীতি ছিল। সামাজিক বাস্তবতার কারণে প্রবীণ পিতামাতার পরিস্থিতি অমানবিক হওয়ায় সন্তানের দায়-দায়িত্বকে আইনী বাধ্যবাধকতায় আনতে হয়েছে। মানুষ আইনের বিধান সম্পর্কে সচেতন হলে আইনের বাস্তবায়ন সামাজিক দায়বদ্ধতায় পরিণত হবে। এ ছাড়া ইসলাম ধর্মে ও অপরাপর অন্যান্য সব ধর্মে পিতামাতার সার্বিক সেবা-যত্নের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র কোরআনে তাঁর ইবাদত করার নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। পিতামাতার প্রতি সদাচরণের বিষয়টিতে অন্যান্য ধর্মেও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সব ধর্মে পিতামাতার সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সন্তানদের উপর তাদের অধিকারের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।

ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে পিতামাতার প্রতি কর্তব্য

সব ভালোবাসার মধ্যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে কিন্তু সন্তানদের প্রতি পিতামাতার ভালোবাসার মধ্যে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। জীবনের শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও পিতামাতা সন্তানদের সুখী দেখতে চান। এ কারণে পৃথিবীর সব ধর্মে পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও বাধ্যকরী নির্দেশনা রয়েছে।

ইসলামসহ অন্যান্য সব ধর্মেই সৃষ্টিকর্তার পরেই পিতামাতার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর ইবাদাতের পরই পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের প্রতি পবিত্র কোরআনে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ্-তে পিতামাতার মর্যাদা ও সদাচরণের বিষয়ে সব সময় গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।

পিতামাতার প্রতি আচরণ ও ব্যবহার বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন—
‘তোমার রব ফয়সালা করে দিয়েছেন তোমরা তাঁর ইবাদত ছাড়া অন্য কারোর ইবাদত করো না, পিতামাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদের ‘উহ্’ পর্যন্তও বলো না এবং তাদের ধমকের সুরে জবাব দিও না বরং তাদের সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে কথা বলো। আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলে, হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা (দয়া, মায়া, মমতাসহকারে) শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন (আল-কোরআন, ১৭: ২৩-২৪)।

আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং ভূমিষ্ঠের পর তার দুধ ছাড়ানোর দুই বছর পর্যন্ত। আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। পিতামাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরিক স্থাপন করতে পীড়াপীড়ি করে, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করব (আল-কোরআন, ৩৯: ১৪-১৫)।

এতো সব আমলের মধ্যে পিতামাতার প্রতি সদাচরণকে রাসুলুল্লাহ্ (সা.) আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল বলে ঘোষণা করেছেন। বিশেষ করে সন্তানদের অবশ্যই পিতামাতার সাথে নম্রভাবে কথা বলতে হবে, পিতামাতার আদেশ নির্দেশ যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। পিতামাতার সাথে কোমল ব্যবহার এবং নম্র ভাষায় বিনয়ী হয়ে কথা বলার নির্দেশ দেওয়ার কারণ হলো, বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হলে তারা অনেক সময় স্বাভাবিক আচরণ নাও করতে পারেন। তখন তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে বা কোনো বিষয়ে অধৈর্য হয়ে পড়তে পারেন। সেই অবস্থায়ও সন্তানদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং কোমল ভাষায় কথা বলতে হবে। কেননা, বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের কাছ থেকে ভরণপোষণ ও সেবা-যত্ন পাওয়া পিতামাতার আইনগত ও ধর্মীয় অধিকার।

এ ছাড়া পিতামাতার সেবা-যত্নের গুরুত্ব বিষয়ে একাধিকবার বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘আপনার রব নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করতে এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে’।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ্ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজ সর্বোত্তম? তিনি বলেন, যথাসময়ে নামাজ পড়া। আমি বললাম, তারপর কোন কাজ? তিনি বলেন, পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা’ (ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, হাদিস নং ২৭৮২; মুসলিম: ৮৫)।

ইসলামে এভাবে প্রবীণদের সামাজিক মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। প্রবীণদের অধিকার ও মর্যাদার বিষয়ে আল-কুরআন ও হাদীসে সুবিস্তৃত নির্দেশনা রয়েছে, যাতে জীবনের এ ক্রান্তিকালে প্রবীণদের অবহেলার শিকার হতে না হয়। সমাজের বয়স্ক প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে বয়সে ছোটদের সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ইসলাম ঘোষণা করেছে সমাজে প্রবীণদের মধ্যে কল্যাণ ও বরকত সুরক্ষিত। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রবীণদের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ্ ইব্নে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, ‘প্রবীণদের সঙ্গেই রয়েছে তোমাদের জন্য কল্যাণ ও বরকত’।

সনাতন ধর্মে পিতামাতার ভক্তির ওপর জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মনুসংহিতায় বলা হয়েছে- ‘দশজন উপধ্যায় থেকে একজন আচার্য উত্তম, শত আচার্যের চেয়েও পিতা উত্তম এবং হাজার পিতার চেয়ে মাতা সম্মানিত।’ তাই আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হচ্ছে নিজের পিতামাতার প্রতি যথাযথ সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রদর্শন করা।

বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী পিতামাতার সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতীত কোনো ব্যক্তি স্বর্গে যেতে পারে না। পিতামাতার সাথে অশোভনীয় আচরণ করলে পার্থিব জীবনের দুঃখ-কষ্টের পাশাপাশি পারলৌকিক জীবনেও কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। খ্রিস্টান, ইহুদি, জৈন, শিখ, কনফুসীয়ানসহ অন্যান্য ধর্মে পিতামাতার আইনী অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে নানা দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আইনে পিতামাতার ভরণপোষণ

বাংলাদেশে পিতামাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য একটি আইনী কাঠামোতে আনা হয়েছে। ২০১৩ সালে গৃহীত পিতামাতার ভরণপোষণ আইনে দায়িত্ব লঙ্ঘনের অপরাধে দণ্ডিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। পিতামাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশে এ বিষয়ে প্রণীত এটিই প্রথম আইন। সাধারণ মানুষের মধ্যে পিতামাতার ভরণপোষণের প্রতি অবহেলা ও অসচেতনতা দূর করতে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

এশিয়ায় ভারত ও সিঙ্গাপুরেও পিতামাতার ভরণপোষণের আইন আছে। উভয় দেশেই সন্তানরা পিতামাতার ভরণপোষণ দিতে আইনগতভাবে বাধ্য। তবে পার্থক্য হলো, তাদের আইনে আদালত দেওয়ানী প্রতিকার হিসেবে ভরণপোষণ বাবদ নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের আদেশ দিতে পারেন। কিন্তু আমাদের আইনে ভরণপোষণকে যখন অর্থের পরিবর্তে সেবা দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে এবং আইনের লংঘনকে ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ফলে আইনটি বাস্তবে প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বৃদ্ধ পিতামাতার সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

এ ধরনের সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে হবে সামাজিকভাবেই, কঠোর আইন দিয়ে সব সমস্যার সমাধান করা যায় না। বৃদ্ধ পিতামাতাকে যখন তার সন্তানেরা একাকিত্বে ঠেলে দেন, তখন এর সামাজিক বাস্তবতাকেও বিবেচনায় নিতে হবে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে আমাদের দুর্বল সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোরও দায় রয়েছে। আমাদের চিহ্নিত করতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোর সেই সমস্যাগুলোকে, যা বৃদ্ধ বয়সে পিতামাতাকে সন্তানের মুখাপেক্ষী করতে বাধ্য করে। যে হারে আমাদের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে, সেই অনুপাতে বয়স্কভাতা, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, চিকিৎসাসেবা বা অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।

বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে পিতামাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। মূলত পিতামাতার প্রতি সদাচরণ যতটা না আইনগত তার চেয়ে বেশি নৈতিক ও ধর্মীয় এবং সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত। মৌলিক নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয়ে পতিত কোনো সমাজে আইনের মাধ্যমে নৈতিক দায়িত্ব পালনের জন্য জনসাধারণকে বাধ্য করা সম্ভব নয়। বরং সমাজের সর্বস্তরে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অনুশীলন ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাই আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরে নৈতিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতার অনুশীলন চর্চা করতে হবে। কারণ, মানুষ আইনের বিধান সম্পর্কে সচেতন হলে আইনের বাস্তবায়ন সামাজিক দায়বদ্ধতায় পরিণত হয়। শিক্ষা ব্যবস্থা সকল স্তরে বিষয়টি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্তকরণ এবং রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি এ বিষয়ে আইনটি আরও সময়োপযোগী ও কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ড. নাহিদ ফেরদৌসি: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

আরএ/

Header Ad

কুড়িল বিশ্বরোডে বিআরটিসি বাসে আগুন

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডে বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস।

কুর্মিটোলা ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালেদ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে আমাদের কাছে খবর আসে কুড়িল বিশ্বরোডে বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। খবর পাওয়ার পর কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পারিনি বাসে কীভাবে আগুন লেগেছে। এছাড়া কেউ হতাহত হয়েছে কিনা সেই খবরও পাওয়া যায়নি। বাসটি কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভারের নিচে ময়লার ডিপোর পাশে সড়কে দাঁড়িয়ে ছিল।

Header Ad

তিনটি পর্বতারোহণে রেকর্ড গড়লেন পাবনার তৌকির

আহসানুজ্জামান তৌকির। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে নেপালের ৩টি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করলেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। আবার সেটি কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই আরোহণ করেছেন তিনি।

তার এই অভিযানের নাম ছিলো "TREE PEAK IN A ROW"। এই অভিযানের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলো রোপ ফোর আউটডোর অ্যাডুকেশন। তার এই সফলতার খবরে উচ্ছ্বসিত এলাকার মানুষ।

চলনবিল অঞ্চলের ছেলে পাবনার চাটমোহর পৌর সদরে বেড়ে উঠা এই তরুণ আহ্সানুজ্জামান তৌকির পেশায় একজন প্রকৌশলী হলেও পর্বতারোহণে তার রয়েছে বেশ কিছু সফলতা। তরুণ এই পর্বতারোহী গত তিন বছরে হিমালয়ের পাঁচটি ছয় হাজার মিটারের চূড়ায় শুধু লাল-সবুজের পতাকার মাতৃভূমিকে তুলে ধরেছেন অনন্য উচ্চতায়।

অনলাইনে আলাপকালে তৌকির জানান, বাংলাদেশ থেকে গত ৪ অক্টোবর নেপালের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করেন তিনি। কাঠমুন্ডুতে ২ দিনের অভিযান প্রস্তুতি শেষে চলে যান এভারেস্ট রিজিওনের খুম্বু ভ্যালীতে। সেখানে টানা পাঁচ দিন ট্রেকিং শেষে ১১ অক্টোবর পৌঁছান ডিংবোচে গ্রামে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে তার আইল্যান্ড পিক (৬১৬৫ মিটার) অভিযানের কথা থাকলেও টীম লিডার মহিউদ্দিন মাহির তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ১২ অক্টোবর লবুচে পিক অভিযানে যান তৌকির। সিদ্ধান্ত নেন কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই একা ক্লাইম্ব করবেন ৬১১৯ মিটারের লবুচে পিক।

১২ অক্টোবর সকালে প্রয়োজনীয় ক্লাইম্বিং ইকুইপমেন্ট নিতে চলে যান ডিংবোচে থেকে ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরের চোখুং গ্রামে। সেখান থেকে শুরু করেন ১৩ কিলোমিটার দূরের লবুচে হাই ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে যাত্রা। বিকালে লবুচে হাই ক্যাম্প পৌঁছে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে স্থানীয় সময় রাত ২টা ২০ মিনিটে সামিট পুশ করেন এবং সকাল ৭টা ৩৬ মিনিটে পা রাখেন লবুচে ইস্ট পর্বত চূড়ায়, তুলে ধরনের বাংলাদেশের পতাকা। প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই তিনি এই পর্বত অভিযান শেষ করেন।

তৌকির জানান, এরপর তিনি দলের সঙ্গে চলে যান এভারেস্ট বেস ক্যাম্প, সেখান থেকে আবার ফিরে আসেন আইল্যান্ড পিক ভিলেজ ক্যাম্প খ্যাত চোখুং এ। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ১৭ অক্টোবর যাত্রা শুরু করেন আইল্যান্ড পিক বেস ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে। দুপুরে বেস ক্যাম্পে পৌঁছে দুপুরের খাবার খেয়ে টীমমেটদের প্রশিক্ষণ দেন অ্যাসেন্ডিং এবং ডিসেন্ডিং কৌশলের। এরপর রাত ১টা ৪ মিনিটে সামিট পুশ করেন। প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া, একটু পর পর তুষারপাত এবং ফিক্সড রোপে প্রচুর ট্রাফিক পেরিয়ে ১৮ অক্টোবর সকাল ৯টা ৫৪ মিনিটে আইল্যান্ড পিক (৬১৬৫ মিটার) চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা উড়ান।

সফল সামিট শেষে তৌকির ফিরে আসেন চোখুং এ। এরপর নেমে আসেন শেরপা রাজধানী নামচে বাজার হয়ে লুকলা গ্রামে। সেখান থেকে শুরু হয় তার তৃতীয় অভিযানের প্রস্তুতি। খুম্বু ভ্যালী ছেড়ে এবার তিনি যাত্রা শুরু করেন হিংকু ভ্যালীর দিকে। টানা ৭ দিন মাকালু-বারুনসে ফরেস্ট ট্রেকিং শেষে ২৭ অক্টোবর হিংকু নদীর উৎপত্তি স্থল পেরিয়ে শেষ গ্রাম খারে তে পৌঁছান তৌকির। সকল ইকুইপমেন্ট চেক এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ২৯ অক্টোবর মেরা পিক হাই ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে বিকালে হাই ক্যাম্পে পৌঁছান। কিছুটা বিশ্রাম শেষে রাত ০২টা ০৮ মিনিটে সামিট পুশ করেন এবং ৩০ অক্টোবর সকাল ০৭টা ৩৬ মিনিটে তিনি সহ তার পুরো টিম মেরা পিক (৬৪৬১ মিটার) সামিট করেন এবং মেলে ধরেন লাল-সবুজের পতাকা।

এই অর্জন নিয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে আহ্সানুজ্জামান তৌকির জানান, ’হিমালয়ের সবগুলো পর্বত অভিযানই কষ্টসাধ্যের এবং ব্যয়বহুল। প্রচণ্ড ঠান্ডা এবং ঝুঁকিপূর্ণ ক্লাইম্বি শেষে যখন নিজ দেশের লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছি, তখন সব কষ্ট নিমিষেই আনন্দে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। ধন্যবাদ দিতে চাই রোপ ফোর আউটডোর এডুকেশন কে। যার পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই অভিযান সফল হতো না। বিশেষ করে রোপ ফোরের দুই প্রতিষ্ঠাতা মারুফা হক এবং মহিউদ্দিন মাহি যাদের নিরলস প্রচেষ্টায় সব কিছু আরও সহজ হয়েছে।

তরুণ এই পর্বতারোহীর এবার সামনের পরিকল্পনা এভারেস্ট নিয়ে। এর জন্য প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার এই অভিযানগুলো আরও সহজ হবে।

সপ্নবাজ এই তরুণ এখন নেপালে অবস্থান করছেন আরও একটি প্রশিক্ষণ অভিযানের জন্য। অভিযান শেষে আগামী ১৬ নভেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, তৌকির গত বছরের অক্টোবরে খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চুড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন। তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তৌকির। তিনি চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন।

Header Ad

ইসরায়েলি হামলায় গাজা ও লেবাননে আরও শতাধিক নিহত

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড ও লেবাননজুড়ে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজার অবরুদ্ধ উত্তরেই নিহত হয়েছেন ৪২ জন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ হাজার ৪৬৯ জনে পৌঁছেছে। এই সময় আহত হয়েছেন আরও ১ লাখের বেশি মানুষ।

লেবাননের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৩ জন নিহত ও ১৬১ জন আহত হয়েছে।

এদিকে লেবাননজুড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা অব্যাহত রেখেছে নেতানিয়াহু বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা, মসজিদের পাশাপাশি ঐতিহাসিক স্থাপনাতেও চালাচ্ছে একের পর এক হামলা।

স্থানীয় সময় বুধবার লেবাননের প্রত্নতাত্ত্বিক শহর হিসেবে খ্যাত বালবেকে একটি রোমান সাম্রাজ্যের সময়ের ঐতিহাসিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় গোটা এলাকা। ধ্বংস হয়ে যায় একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, ঐতিহাসিক আল-মানশিয়া দালান ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দালানটি অটোম্যান সাম্রাজ্যের ছিল। তারা জানায়, বাইরের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানা গেলেও, দালানটির ভেতরে কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা তদন্তের পর জানা যাবে।

বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ঐতিহাসিক এই শহরটিতে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই লেবানন-ইসরায়েল যুদ্ধে এখন প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজারেরও বেশি লেবাননের নাগরিক।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

কুড়িল বিশ্বরোডে বিআরটিসি বাসে আগুন
তিনটি পর্বতারোহণে রেকর্ড গড়লেন পাবনার তৌকির
ইসরায়েলি হামলায় গাজা ও লেবাননে আরও শতাধিক নিহত
আবারও এমবাপ্পেকে ছাড়াই ফ্রান্সের দল ঘোষণা
চিফ অফ স্টাফ হিসেবে সুসি ওয়াইলসকে নিয়োগ দিলেন ট্রাম্প
নারী ফুটবলারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
জুমার নামাজ ছেড়ে দেয়ার ভয়াবহ শাস্তি
স্বস্তি নেই নিত্যপণ্যের বাজারে, সরবরাহ বাড়ানোর তাগিদ
সুইজারল্যান্ডে হেনস্তার শিকার উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
দুপুরে রাজধানীতে বিএনপির র‍্যালি, বক্তব্য রাখবেন তারেক রহমান
ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক এমপি তাহজীব গ্রেফতার
হামাস-হিজবুল্লাহর হাতেই ইসরায়েলি দখলদারিত্বের সমাপ্তি হবে: খামেনি
শহীদ নাফিজের দেহ বহনকারী সেই রিকশাটি গণভবনের জাদুঘরে
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৭ জনের মৃত্যু
পদত্যাগ করলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান
শেখ হাসিনাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করল ভারত
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা বাজারে ভোক্তা অধিকারের অভিযান, খাবার হোটেলে জরিমানা
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জামায়াতের অভিনন্দন
২০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিলো আরাকান আর্মি
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত