অর্থনীতি

জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি এ বছরই


ঢাকাপ্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২৮ এএম

জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি এ বছরই
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি (ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট–EPA) চলতি বছরই স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। তবে চুক্তির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এখনো দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মতৈক্য হয়নি।

এসব বিষয় নিষ্পত্তির জন্য আগামী অক্টোবর মাসে ঢাকায় এবং নভেম্বর মাসে টোকিওতে মন্ত্রী পর্যায়ের দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বরে টোকিওতে অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত আলোচনাতেও কয়েকটি ইস্যু অনির্ধারিত থেকে যায়। ফলে চুক্তির অবশিষ্ট বিষয়গুলো সমাধানে উভয় দেশ আরও দুটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আলোচনার প্রায় সব পর্যায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, “এ ধরনের আন্তর্জাতিক চুক্তি চূড়ান্ত করার আগে একাধিক দফা যাচাই, আইনগত পর্যালোচনা ও মন্ত্রণালয়সমূহের অনুমোদন নিতে হয়। সেই প্রক্রিয়াই এখন চলছে।”

গত ৩ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর টোকিওতে অনুষ্ঠিত সপ্তম দফা আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং ফরেন ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট উইংয়ের প্রধান আয়েশা আখতার। অপরদিকে, জাপানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক কূটনীতি বিষয়ক উপমহাপরিচালক ইজুরু কোবায়াশি।

আলোচনায় পণ্য বাণিজ্য, সেবা খাত, বিনিয়োগ, ই-কমার্স, মেধাস্বত্ব সুরক্ষা, শুল্ক কাঠামো ও অর্থনৈতিক জাতীয়তা নির্ধারণসহ নানা বিষয়ে ফলপ্রসূ মতবিনিময় হয়।

২০২৪ সালের মে মাসে শুরু হওয়া যৌথ সমীক্ষায় দেখা যায়, চুক্তি কার্যকর হলে জাপানের বেসরকারি খাত বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বর্তমানে দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৪২৮ কোটি ডলার। ধাপে ধাপে শুল্ক হ্রাস ও রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, এই অংশীদারি চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশের রপ্তানি সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়বে, বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পর জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (JETRO) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজুইকি কাটাওকা বলেন, “চুক্তি সম্পর্কিত কিছু বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে। তবে আশা করছি, চলতি বছরের শেষ নাগাদ আমরা এটি চূড়ান্ত করতে পারব।”

তিনি আরও বলেন, “এই চুক্তি রপ্তানি-আমদানি ও শুল্ক কাঠামোর সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। তাই উভয় দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের স্বার্থ সঠিকভাবে সমন্বয় করতে কিছুটা সময় লাগছে। লক্ষ্য হলো এমন একটি উইন-উইন (Win-Win) পরিস্থিতি তৈরি করা, যা বাংলাদেশ ও জাপান—দুই দেশের জন্যই লাভজনক হবে।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের রপ্তানি ও বিনিয়োগ খাতের জন্য নতুন যুগের সূচনা ঘটবে, যা দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় ভিত্তি দেবে।