বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব -২

স্নানের শব্দ

অফিস আর বাসার সাদামাটা সীমানার বাইরে ইদানিং নিজের একটা তৃতীয় জগত নির্মাণের খুব আকাঙক্ষা জাগে মনে মনে। বাসায় ফেরার পথে সন্ধ্যাগুলো শক্ত হাতে গলা চেপে ধরে, ইচ্ছা হয় দূরে কোনো রূপকথার জগতে চলে যাই, সমমনা বন্ধুদের সঙ্গে এক হয়ে আনন্দ করে, মাপা হাসির বদলে প্রাণ খুলে হাসে, মনের দুঃখে তাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে রোদন করে, পেটের ভেতর, বুকের ভেতর যে না বলা কথাগুলো গুড় গুড় করে সেগুলো আগপিছ না ভেবে কাউকে খুলে বলে একটু হাল্কা হয়ে নেয়। নারীর তো মনই নেই, তার আবার বন্ধু হবে কীভাবে? ঘরের বাইরে না গেলে বন্ধু হয়? নারী তো মা, মায়েদের কি বন্ধু থাকে? মায়েদের সবার এত কাজ, এত দায়িত্বের চাপ, তাদের সময়ের এত অভাব ...আজ মৌসুমীর ফ্ল্যাটেও কয়েকজন আসতে পারল না, কারও বাড়িতে মেহমান আসবে, কারও ছেলের পরীক্ষা, কারও শ্বশুরের মৃত্যুবার্ষিকী ...তবু যারা এলো তাদেরই বা পাওয়া যায় কোথায়?

কথাটা প্রথম উঠাল শবনমই, একটু কুন্ঠা, একটু ইতস্তত ভঙ্গীতে, একটা কাঠবাদাম চিবুতে চিবুতে,
‘আচ্ছা, তোরা নিজের দিকে তাকাস কখনো?’
‘হু, তাকাই তো, আয়নার সামনে গিয়ে নিজের দিকে তাকাই।’ সবার আগে সুরাইয়া জবাব দেয়। ওর পরনে ফুল ছাপা ম্যাজেন্টা কালারের জর্জেট শাড়ি, হাতে চিকন সোনালী ব্যান্ডের ঘড়ি, চোখে গাঢ় কাজলের সঙ্গে একগাদা ক্লান্তি লেপ্টে আছে।
‘কী দেখিস আয়নায়?’
‘কী আবার? একজন সফল ব্যাংকার নারীকে দেখি, মানে নিজেকে দেখি, নিজের চোখ, মুখ, কপাল, নাক, গাল, চিবুক। দেখি এক মধ্যবয়সিনীকে, দেখি সে খুব ক্লান্ত আর অবসন্ন। নিজেকেই হয়তো তখন প্রশ্ন করি, ওহে নারী, আয়নায় কী খুঁজো তুমি? উত্তর পাই, আয়নার ভেতর আসলে আমি আমার হারিয়ে যাওয়া তারুণ্যকে খুঁজি। কিন্তু পাই না বলে হতাশ হই। তবু কেন যেন আয়নার সেই বিষন্ন ক্লান্ত চেহারার নারীটির চোখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকতে ভালো লাগে। তার সঙ্গে গল্প করতে ইচ্ছা করে। কেন যে এমন লাগে আমার তাও তো বুঝি না। সবই তো আছে, স্বামী সন্তান, ভালো চাকরি, তবু মনে হয় কী যেন নেই, কী যেন হারিয়ে ফেললাম...’

সুরাইয়া ক্লান্ত কন্ঠে হয়তো সেই কথাটাই বলে যা এই ঘরে উপস্থিত শবনমের অনেক বান্ধবীর উপলব্ধির সঙ্গেই মিলে যায়। আয়না আসলে মানুষকে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। নিজের সঙ্গে নিজের একান্তে কথা বলার সুযোগ করে দেয়।
‘সেটা তো আছেই, কিন্তু আমি যেটা জানতে চাচ্ছি, কথাটা তোরা কীভাবে নিবি জানি না, নিজের শরীরের দিকে, আরও স্পষ্ট করে বললে নিজের সেক্স অরগানের দিকে ... নিজের বুক, পেট, নাভি, উরু, .. এসব দেখিস?’

‘ওইসব আমরা দেখব কেন? যাদের দেখার তারাই দেখবে, মানে দেখতো আর কি ! এখন আর দেখে কি না সেইভাবে ...’
হাসির হুল্লোড় ওঠে।
শবনম হাসির ভিড়ে কথাটা হারাতে দেয় না। বলে, ‘না, আমি তো সহজে নিজেকে দেখি না, তাকাইও না সেরকম করে,আসলে তাকানোর কৌতুহলও নাই, আগ্রহও নাই, অবসরও নাই। কিন্তু আজ সকালে হঠাৎ কি হলো শোন, চোখ পড়ে গেল নিজের দিকে...’

শবনম স্নান ঘরে তার চকিত পর্যবেক্ষণের ঘটনাটা জানালে ঘরের ভেতর আচমকা একটা অপ্রস্তুত নীরবতা নেমে আসে। কাকলী বলে, ‘এই ঘটনা আমার জীবনে আরও আগে ঘটেছে, অভিনন্দন বন্ধু! হিন্দি চুল পাকা ক্লাবে তোমাকে স্বাগতম!’

আরেক প্রস্থ হাসাহাসি। মৌসুমী তার ছোট করে কাটা সিল্কি চুল নাড়িয়ে বলল, ‘উহু, ক্লাবের নামটা পছন্দ হলো না, বড্ড অশালীন শোনাল! তারচে তুমি নান্দনিকভাবে রূপালী যৌনকেশের ক্লাব রাখতে পার!’

‘আচ্ছা, তোরা কি ইভ এন্সলারের দ্যা ভ্যাজাইনা মনোলগ পড়েছিস?’
আফিয়া ভারী চশমার কাঁচের ভেতর দিয়ে জানতে চায়, কলেজ জীবন থেকেই পড়ুয়া বলে সুনাম আছে ওর।

‘অসাধারণ একটা কাজ। অনেকে ক্রিটিক করে অবশ্য যে পোস্ট মেন্সট্রুয়েশন সময়ের নারীদের কথা বলা হয়নি ওতে। তবে সেটা ধর্তব্য নয়। মৌসুমী তো লেখক, মৌসুমী চাইলে এই বিষয়টা নিয়ে কাজ করতে পারে। বেশ ইন্টারেস্টিং হবে!’

‘শুরুটা শবনমকে দিয়াই হইতে পারে, একজন নারী গোসলের সময় নিজের নিম্নাঙ্গে রূপালী কেশ দেখে চমকে উঠে। হয়তো উৎকন্ঠায়, হয়তো হঠাৎ চৈত্রের নদীর মতো শরীরী পরিবর্তনের চিহ্ন অনুধাবন করতে পেরে, তারপর তার জীবনে ঘটে নানা কেচ্ছা কাহিনী, উত্থান পতন প্রেম ভালবাসা...আচ্ছা, এখানে যৌনকেশ শব্দটা কি অশ্লীল শোনাবে?’
কাকলী হঠাৎ একটু থেমে জিজ্ঞেস করে।
‘নিশ্চয়ই, এইসব শব্দ তো ট্যাবু, আমরা,মানে ভদ্র সমাজের মানুষেরা মুখে এসব কোনোদিন উচ্চারণ করি নাকি? ওই ঝগড়া-ঝাটির সময় বাল টাল বলে, খুবই খারাপ অর্থে..বাজে, নোংরা একটা শব্দ, স্ল্যাং,যদিও আজকালকার মেয়েরা নাকি কথায় কথায় এসব খুব বলে শুনেছি ...’
সুরাইয়া নাক কুঁচকে বলে।

‘ইভের মনোলগে এই যৌনকেশ নিয়ে একটা পর্ব আছে। সে বলছে, ভ্যাজাইনাকে ভালবাসতে হলে একে ঘিরে থাকা চুলকেও ভালবাসতে হবে, ফুলকে ঘিরে যেমন পাতা থাকে, যোনীকে ঘিরে তেমন চুল থাকে...’
‘মাই গড, আমার প্রথম প্রেমিক অন্ধকার সিনেমা হলে আমার পায়জামার ভেতর হাত ঢুকায়া প্রথমেই বলছিল, কিরে তুই এসব কাটিস না? আমি অবাক হইছিলাম এইগুলা আবার কাটতে হয় নাকি?’
মৌসুমী খিল খিল করে হাসতে হাসতে বলে।
‘আমার বিয়ের সময়, বড়আপা এসে চোখ ঘুরায়া উরুসন্ধির দিকে ইঙ্গিত করে বলল, পরিষ্কার করছ? আমি বললাম পরিষ্কারই তো আছে, সাবান দিয়া প্রতিদিনই ধুই। আপা বিরক্ত হয়ে বলল, শেভ করছিস?
আমি বললাম, শেভ তো পুরুষ মানুষ করে, ওদের দাড়ি গোঁফ আছে, আমি কেন শেভ করতে যাব?
আপা বিরক্ত হয়ে আর কিছু বলল না।’
আফিয়া’ও হাসে।

‘ইভ ওর মনোলগে একটা গল্প বলছে, কোনো এক স্বামী তার বউকে জোর করে শেভ করাত কিন্তু মেয়েটা শেভ করা পছন্দ করত না ..’
‘ওফ, ওরা কত সহজেই এসব কথা লিখতে পারে, বলতে পারে, কিন্তু আমাদের দেশের মেয়েরা ইমেজ নষ্ট হওয়ার ভয়ে কখনোই এসব নিয়ে লিখতেও পারে না। বলতেও পারে না।’

সুরাইয়া মুখ টিপে হেসে সাধু ভাষায় বলল. ‘বলিলে বা লিখিলে নারী জাতি সম্মন্ধে প্রচলিত সরল প্রশংসাপূর্ণ নানা বর্ণনার সত্যতা সম্মন্ধে জগতে ঘোরতর সন্দেহ জাগিবে যে...’

আফিয়া বলে, ‘শোন না, কোন পুরুষ লিখলে কেউ কিছু বলবে না,তখন এটা হবে জীবনের অংশ, আর মৌসুমী যদি সাহস করে লিখেও ফেলে তখন লোকজন এক বাক্যে বলবে, ছি! এত নির্লজ্জ! এটা কিছুই হয় নাই। ছি ছি পড়ে যাবে চারিদিকে, কেলেঙ্কারি আর বদনামির এক শেষ হবে, বলবে, বাল নিয়া লিখছে, বালের উপন্যাস হইছে...’

‘হুম, শেষমেষ দেখা যাবে সবাই এক সুরে হুক্কা হুয়া করার মতো এই একটা কথাই বলতে থাকবে...লেখকের ব্যক্তিজীবন নিয়া টানাটানি শুরু হয়ে যাবে, এই লেখক বিয়ে করে নাই কেন? কার সঙ্গে প্রেম ছিল? ছ্যাক খেয়ে চিরকুমারী রয়েছে কি না ..’
‘আরে, তাতে পরোয়া করি নাকি? এখন আর এত সতর্ক হয়ে কে লেখে? দিন পাল্টাইছে না, কে কান দেয় এসব আবালদের সমালোচনায় !.. ’
মৌসুমী বলে। কাকলি প্রসঙ্গ পাল্টায়, বুকের কাছে একটা কুশন চেপে ধরে বলে,
‘আগে তো আমাদের কুড়িতে বুড়ি বলতো, এখন পয়ত্রিশ, চল্লিশ,পঞ্চাশ ওরে বাবা, ওতো শেষ...মেনোপজ হইছে নাকি? তাইলে তো আর বিছানায় পারফর্ম করতে পারবে না...’

‘দূর, দূর, সময় পাল্টাইতেছে, এখন চল্লিশের উপরে গোল্ডেন এজ শুরু। জীবনের নতুন অর্থ তৈরি হয় তখন। আরও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা যায়,আমাকে দেখ আমার মনের বয়স চিরদিন একুশ, কমবেও না, বাড়বেও না...’
মৌসুমী হাতের উপর শাড়ির আঁচল ফেলে আধুনিক মডেলদের মতো সবার সামনে বৃত্তাকারে ঘুরপাক খায়।

শবনম বলে, ‘মানুষরা, বিশেষ করে ব্যাটা মানুষ গুলো যখন বলে, ওফ! আপনার এত বয়স! বোঝাই যায় না ! এত রাগ লাগে আমার! মানে কি, এই কথার? কি হইলে বোঝা যাইত? জবুথবু হয়ে বসে থাকলে! মাথা ভর্তি পাকা চুল থাকলে, মোটা সোটা হয়ে বাতের ব্যাথায় হাঁসফাঁস করতে থাকলে? হিন্দু বিধবাদের মতো সাজগোজ ছাড়া ঘরের এক কোণায় পইড়া থাকলে? কেমন দেখতে চায় তারা আমাদের? সব কিছুতে মেয়েদের বয়সের প্রসঙ্গ কেন টানতে হবে? সময় পাল্টাইছে এইটা তারা বোঝে না?’

আফিয়া এক্টিভিস্টদের মতো হাত উঁচিয়ে বলে, ‘থাম থাম, কোনো নারীদের কথা বলছ তোমরা? উচ্চবিত্ত বড়লোক ঘরের বুর্জোয়া নারীদের কথা? তাদের নিয়া দেশ? মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, দরিদ্র নারী যারা আছে তারা কি তোমাদের মতো দুধ ডিম মাখন খায়া তরুণী আছে? নাকি শরীর নিয়া তোমরা যতটা ভাবো, ততটা তারা ভাবে? নাকি তাদের ভাবার সুযোগ আছে?’

‘দেখ, আফিয়া ম্যাডাম,তুমি অধ্যাপিকা মানুষ, তুমি জানো,আমার সমাজে শ্রেণি বিভাজন আছে, সেইটাই সত্য, আমি আমার শ্রেণির কথাই বলতেছি, আমার শ্রেণির কথাই বলব, এটাকে সার্বজনীন ফ্রেমে তুমি যদি ফেলতে চাও, তবে ভুল করবা...’

‘আমি সেটাই বলতেছি, আমরা অনেকেই এখন করপোরেট পুঁজির প্রতিনিধিত্ব করি। পুঁজি তার সুবিধার জন্য নারীদের ব্যবহার করে, আমরা ব্যবহৃত হই। এখন তুমি কোম্পানীর শীর্ষ পদে একজন নারীকে বসায়া দিলা, বাকি সবকিছু একই রকম রইল, তাইলে কোথায়, কি পরিবর্তনটা আসবে বলো?’

‘না, তাই বলে একজন নারী যদি নিজের যোগ্যতায় যে কোন পেশায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাইতে পারে বা যায়, সেটাকে কি আমরা সাপোর্ট করব না?’
‘করব তো, প্রফেশনালি আগাইলে আমার কোন সমস্যা নাই, বরংআমি খুশি হব, কিন্তু কর্পোরেট নারীর কাছে খুব বেশি কিছু আশা করব না।’
‘অর্ডার ! অর্ডার ! অর্ডার!’ মৌসুমী দুই বন্ধুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে বক্তৃতার ঢঙে বলতে শুরু করে,
‘প্রিয় বন্ধুগণ, থামিয়ে দেওয়ার জন্য দুঃখিত, এইটা গুরুগম্ভীর সেমিনার নয়, সেই কথাটা মনে রেখে আস,আমরা নেকু নেকু প্রেম ভালাবাসা নিয়ে আলাপ করি, আর জানিয়ে রাখি, টেবিলে খাবার তৈরি, আমার আম্মা আর তার সহকারী সাজু খালা মিলে তোমাদের জন্য ইয়াম্মি, মজাদার সব খাবার রেধেছেন, তোমরা সকলেই যদি তার স্বাদ গ্রহণ করো, তবে আমি বাধিত হই...’

‘আমি এক্ষুনই স্বাদ নিতে চাই, এক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে পারছি না ..’
কাকলী বাচ্চাদের মতো চিকন গলায় চিৎকার করে বলে। এবার হুড়মুড় করে সবাই ছোটে খাবার সাজিয়ে রাখা টেবিলের দিকে।
‘মৌসুমী তো আর বিয়াই করল না, একবার না হয় মনের মিল হয় নাই, আবার তো চেষ্টা করতে পারত, আমি মরে গেলে ওর কি উপায় হবে, সেটাই ভাবি সারাদিন ..’
মৌসুমীর মা কাকলির প্লেটে কই মাছ ভাজা তুলে দিতে দিতে বলেন।
‘এত ভাবাভাবির কিছু নাই আম্মা, তখন শুধু তোমার হাতের ভালো খাবার খেতে পারব না, এ ছাড়া যেমন আছি তেমনই থাকব। তোমাকে মিস করব শুধু আর কিছু না...’

মৌসুমী মাছের কাঁটা বাছতে বাছতে নিজেই উত্তর দিয়ে দেয়। ‘একা লাগবে না তোর?’ খালাম্মা জিজ্ঞেস করে। ‘সে তো, তুমি যখন বড়পা বা ভাইয়ার বাড়িতে যাও, তখনো লাগে। একা থাকা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে, একলা থাকতে বরং ভালোই লাগে।’
‘খালাম্মা, মৌসুমী তো একা থাকাটা নিজের ইচ্ছায় নিজে পছন্দ কইরা নিছে, এইটা ওর সিদ্ধান্ত, তাই না? ও তো চাইলেই আরেকটা বিয়া করতে পারত, করে নাই। লেখক মানুষ, একা থাকে, নিজের মতো স্বাধীন জীবন যাপন করে, মুক্ত চিন্তা ভাবনা করে, লেখালেখি করে, অসুবিধা কী? এই ভাবেও তো বাঁচা যায়। আনন্দের সঙ্গেই বাঁচা যায়। দুনিয়া বদলায়া গেছে খালাম্মা !’

আফিয়া সুযোগ পেয়ে একটা লেকচার ঝেড়ে দেয়। মৌসুমীর সাদা কালো রঙের পোষা বিড়াল টিনটিন টেবিলের নিচে ওদের পায়ের কাছে ঘুরঘুর করে।
‘খেয়াল করছিস, আগের চেয়ে আমরা এখন ত্রিশ চল্লিশ বছর বেশি বাঁচি, গড় আয়ু তো এখন তেয়াত্তরের চেয়েও বেশি, এই লম্বা জীবন নিয়ে আমরা কী করব বল তো? রিটায়ার করব, বুড়ি হব আর নাতি নাতনিদের খেয়াল রাখব? এর বাইরে কিছু নাই?...বয়স বাড়তেছে আর এইসব চিন্তা মাথায় আসতেছে...’
খাবার শেষে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সুরাইয়া বলে। কাকলি একটু ধমকের সুরে বলে, ‘উফ! এত বয়স বয়স করিস কেন? বয়সটা ভুলে যা না, ভুলে একটা প্রেম করা শুরু কর!’

‘ভুলতে তো চাই। ভুলে যাইও মাঝে মাঝে। কিন্তু বন্ধু, এটাও বুঝি, এখন কোনো যুবকের চোখে ভালবাসা অন্বেষণ বৃথা। এখন আছে শুধু সহানুভূতি আর মায়া, এক ঘেয়ে জীবন, চরকির মতো একই বৃত্তে ঘোরা ফেরা আর সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা...’

সুরাইয়ার গলায় এমন একটা বিষাদ ছিল যে হঠাৎ করে কেউ আর কোনো কথা খুঁজে পেল না। ক্ষণিকের স্তব্ধতা ভাঙতেই যেন হঠাৎ চর্চাহীন গলায় গান গেয়ে উঠে শবনম, ‘আসবে পথে আঁধার নেমে, তাই বলে কি রইবি থেমে
ও তুই বারে বারে জ্বালবি বাতি হয়তো বাতি জ্বলবে না,
তবু ভাবনা করা চলবে না। ’ ‘ঠিক, ঠিক।’ বন্ধুরা কিশোরীদের মতো হৈ হৈ করে হাত তালি দিয়ে উঠে।
শবনম এবার আবৃত্তির ঢঙে বলে, ‘ও তুই বারে বারে করবি চেষ্টা পড়তে প্রেমে, হয়তো প্রেমে পড়বি না, তবু ভাবনা করা চলবে না, বন্ধ দুয়ার দেখলি বলে অমনি কি তুই আসবি চলে, তোরে বারে বারে ঠেলতে হবে, নইলে দুয়ার খুলবে না।’
পাঁচ বন্ধুর সমবেত হাস্য কলরবে মৌসুমীর বৈঠকখানার দেয়ালে হাঁটতে থাকা টিকটিকিটা ভড়কে গিয়ে তার শিকার ছেড়ে ঝুলতে থাকা পেইন্টিংসের নিচে গিয়ে লুকায়। ‘আমি কিন্তু সত্যিই উপন্যাসটা লিখব শবনম, সিরিয়াসলি, যে যাই বলুক, তুমি তোমার প্রেমকাহিনী কি আছে, আমাকে একদিন শুনাইও দোস্ত...’
বিদায় নেবার সময় মৌসুমী মনে করিয়ে দিল। ‘শুধু প্রেমকাহিনী কেন, অপ্রেমের কাহিনীও তো আছে, বন্ধু! লিখলে সব লিখবা!’
শবনম বলে।

স্নানের শব্দ: পর্ব-১ 

মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা উপজেলা নির্বাচন থেকে না সরলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ছবি: সংগৃহীত

উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয় এবং স্বজনদের প্রার্থী না হতে দলীয় যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা না মানলে সময়মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, উপজেলা নির্বাচনে যারা দলের নির্দেশনা না মেনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেনি, তারা নির্বাচনের আগে যে কোনো সময় করতে পারে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে৷ দল যার যার কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে অ্যাকশন নিয়ে থাকে। যারা প্রত্যাহার করেনি, তাদের বিষয়ে সময়মতো সিদ্ধান্ত আসবে।

তিনি বলেন, দলীয় নির্দেশনা অমান্য করলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের ব্যাপারে চিন্তা করা হবে। সময়মতো এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই করা হবে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের গত সাধারণ নির্বাচনে, নির্বাচনের পরে এসেছে, অনেকেই এমপি হন নাই, অনেকেই মন্ত্রী হন নাই। এখানেও কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় আছে। দল যার যার কর্মকাণ্ড বিচার করবে। চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত যারা প্রত্যাহার করবে না সময়মতো দল ব্যবস্থা নেবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেললাইনে বাস, পুলিশের তৎপরতায় প্রাণে বাঁচল ট্রেনের যাত্রীরা

রেললাইনে উঠে পড়া দুর্ঘটনা কবলিত আরপি এক্সপ্রেস বাস এবং বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার উপ-পরিদর্শক টিটু চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেল লাইনে উঠে পড়ে বাস। এ ঘটনায় বাস ও ট্রাকের চালকসহ ৪ থেকে ৫ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে এমন ঘটনায় ডিউটিরত পুলিশ সদস্যের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন ঢাকা ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের হাজারো যাত্রী।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) টিটু চৌধুরী এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ২ টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের উপজেলার হাতিয়া নামক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় কিছু সময়ের জন্য ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, মঙ্গলবার রাত ২ টার দিকে মহাসড়কের হাতিয়া এলাকায় ঢাকাগামী আরপি এক্সপ্রেস নামে একটি বাস ও বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেললাইনের উপরে উঠে যায়।

রেললাইনে উঠে পড়া দুর্ঘটনা কবলিত আরপি এক্সপ্রেস বাস ও ট্রাক। ছবি: সংগৃহীত

এ সময় মধ্যরাতে মহাসড়কে ঘটনাস্থলে ডিউটিরত ছিলেন বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) টিটু চৌধুরীসহ আরও বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তারা জানতে পারেন টাঙ্গাইল থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশনের দিকে ছেড়েছে।

একপর্যায়ে দ্রুত সংশ্লিষ্ট জায়গায় ফোন করে ট্রেনটি থামানোর জন্য অনুরোধ জানান এসআই টিটু। পরে ট্রেনটি ঘটনাস্থলে এসে দাঁড়ালে বড় ধরণের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় ট্রেনের হাজারো যাত্রী। এরপর দ্রুত বাসটি সরানো হলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ট্রেনে থাকা যাত্রী সবুজ আহমেদ ও হৃদয় ইসলামসহ অনেকেই জানান, হঠাৎ করে ট্রেনটি হাতিয়া নামক এলাকায় থেমে যায়। পরে জানতে পারি এখাকে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেললাইনে উঠে পড়ে। ঘটনাস্থলে দ্রুত ট্রেনটি দাঁড় না করালে যেকোন বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। আগেই অবগত হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পায় ট্রেনের হাজারো যাত্রী।

এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) টিটু চৌধুরী জানান, গত মঙ্গলবার রাত ২ টা ১০ মিনিটের দিকে মহাসড়কের হাতিয়া এলাকায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষ বাসটি রেললাইন উঠে যায়। পরে দ্রুত পুলিশ কন্টোলরুম বা রেলওয়ের সাথে যোগাযোগ করে টাঙ্গাইল স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী পঞ্চমগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঘটনাস্থলে দাঁড় করানো হয়। এতে করে ট্রেনের হাজারো যাত্রী রক্ষা পায়।

এসআই টিটু চৌধুরী আরও জানান, এ ঘটনায় বাসের ৪ জন যাত্রী ও ট্রাকের চালকসহ ৫ জন গুরুতর আহত হন। পরে তাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও ট্রাকটি সেতু পূর্ব থানায় রাখা হয়েছে।

ইনশাল্লাহ স্পিন বিভাগে পার্থক্য গড়ব : বাংলাদেশের নতুন কোচ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ক্রিকেটার মুশতাক আহমেদ। দায়িত্ব পাওয়ার পর গত সপ্তাহে ঢাকায় এসেছেন তিনি। এবং গতকাল মঙ্গলবার প্রথমবারের মত বিসিবিতে প্রবেশ করেন এই টাইগার কোচ। প্রথমদিনেই জানিয়েছেন নিজের পরিকল্পনা এবং লক্ষ্যের কথা।

মুশতাক বলেন, ‘প্রথমত, আমি বিশ্বাস করি যে, কোচ হিসেবে আমাকে বিশ্বাস রাখতে হবে। আমি এখানে এসেছি পার্থক্য গড়তে। ইনশাল্লাহ পার্থক্য গড়ব স্পিন বিভাগে। আমার যে অভিজ্ঞতা আছে এত বছরের, তা ভাগাভাগি করতে পারব তরুণ ও সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে। আশা করি, আমরা পার্থক্য গড়তে পারব।’

‘আমি বিশ্বাস করি, যাদেরকে কোচিং করানো সম্ভব, তাদেরকেই কেবল কোচিং করানো যায়। এখানকার তরুণরা দারুণ প্রতিভাবান। আমাদের অভিজ্ঞতা আমরা তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারি। আমি বিশ্বাস করি, দলটা দারুণ প্রতিভাবান ও সব দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।’-যোগ করেন তিনি।

মুশতাক চান লেগ স্পিনার খুঁজে বের করতে, ‘এশিয়ায় ক্লাব ক্রিকেটে, নেট অনুশীলনে সবসময়ই লেগ স্পিনার, রহস্য স্পিনার, চায়নাম্যান বোলার দেখতে পাওয়া যায়। আশা করি, আমার অভিজ্ঞতা সেখানে কাজে লাগবে এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারব অনেক।’

মুশতাক আরও বলেন ‘ক্লাব ক্রিকেট ও প্রথম শ্রেণির কোচদের সঙ্গে দেখা করতে পারি এবং চেষ্টা করতে পারি ভালো লেগ স্পিনার বা চায়নাম্যান বোলার বের করে আনতে। কারণ এখন সাদা বলের ক্রিকেটে মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট শিকারি স্পিনার লাগেই। রহস্য স্পিনারদের বের করে আনা গুরুত্বপূর্ণ এবং আশা করি, আমরা পারব।’

সর্বশেষ সংবাদ

মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা উপজেলা নির্বাচন থেকে না সরলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেললাইনে বাস, পুলিশের তৎপরতায় প্রাণে বাঁচল ট্রেনের যাত্রীরা
ইনশাল্লাহ স্পিন বিভাগে পার্থক্য গড়ব : বাংলাদেশের নতুন কোচ
ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী
এফডিসিতে সাংবাদিক-শিল্পীদের মারামারি, কী ঘটেছিল?
তীব্র গরমের মধ্যে ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়াল লোডশেডিং
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় বিএনপির আরও এক নেতা বহিষ্কার
যেসব এলাকায় গ্যাস থাকবে না আজ
ছয় দিনের সফরে আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর
পুলিশ সদস্যদের পদমর্যাদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন
গোবিন্দগঞ্জে ১৪ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা
রাজধানীতে ছাদ থেকে লাফিয়ে ট্রান্সজেন্ডার নারীর আত্মহত্যা
ভাড়া বাড়াইনি, শুধু ভর্তুকি প্রত্যাহার করেছি: রেলমন্ত্রী
নবাবগঞ্জে জাল দলিলে জমি দখলের চেষ্টা, সাবেক ও বতর্মান চেয়ারম্যান জেলহাজতে
ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির, গেলেন নেপাল
নওগাঁর মান্দায় বিদ্যুতের আগুনে পুড়ল ৮ বসতবাড়ি
ইন্টারনেটের ধীরগতি নিয়ে দুঃসংবাদ, এক মাস চলতে পারে ভোগান্তি
উপজেলা নির্বাচন: প্রথম ধাপে বিনা ভোটে ২৬ প্রার্থী নির্বাচিত
'রূপান্তর' বিতর্ক: জোভান-মাহিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা