শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২০

যারা যুদ্ধ করেছিল

মজনু বলে, ‘আমরা তো আগে এক পাকিস্তান ছিলাম। তাইলে তাদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হচ্ছে কেন?’
মমিন বলে, ‘শোন, পাকিস্তান হওয়ার লগে লগে তারা আমাদের দাবিয়ে রাখা শুরু করে। প্রথমে হাত দেয় আমাদের ভাষার উপর। আমরা বাঙালিরা সংখ্যায় বেশি। বেশি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। অথচ পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্না ঢাকায় এসে ঘোষণা দেয় ‘উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ আর যায় কোথায়? শুরু হয় বাংলা ভাষার দাবিতে ভয়ংকর আন্দোলন। সেই আন্দোলনে আমাদের কয়েকজর বাঙালি শহীদ হয়। সেই থেকে আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালন করি।
তারপর ধর পাট উৎপাদন হয় আমাদের দেশে। সেই পাট চলে যায় পশ্চিম পাকিস্তান। যত কলকারখানা সব ওই প্রদেশে। সেনাবাহিনী সব বড় পদে ওরা চাকরি করে। আমাদের কোন বড় পদে চাকরি দেয় না। এই ধরনের বৈষম্যের প্রতিবাদে ১৯৬৬ সালে ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন।
পরবর্তী কালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের জন্য এই আন্দোলন এতই গুরুত্বপূর্ণ যে একে ম্যাগনা কার্টা বা বাঙালি জাতির মুক্তিসনদও বলা হয়।
‘ম্যাগনা ফাটা না কী যেন কইলেন, সেটা আবার কী?’

মজনুর প্রশ্নে মমিন হো হো করে হেসে ওঠে। পরক্ষণে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরে। তারা এখানে আত্মগোপনে আছে। সেটা জানাজানি হয়ে গেলে তাদেরই মহাবিপদ। মমিন নিচু গলায় বলে, ‘ম্যাগনা ফাটা না। ম্যাগনা কার্টা। এটা হলো রাজার ক্ষমতা খর্ব করার আইন। আগে তো পৃথিবীর সব দেশে রাজতন্ত্র ছিল। দেশের সব ক্ষমতা ছিল রাজার হাতে। পাবলিকের কোনো ক্ষমতা ছিল না। ১২১৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা আর সামন্তদের মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যে চুক্তির ফলে সাংবিধানিক শাসনের সূচনা হয়। এরই নাম ম্যাগনা কার্টা।’
‘যা বলছিলাম’, মমিন আবার বলতে শুরু করে। ‘৬ দফা পেশ করার পর থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে যেখানে পায় সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা শুরু করে। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর জেলজীবন শুরু। এমনও হয়েছে যে, জামিন পেয়ে জেলখানা থেকে বেরোনোর পর জেলগেটে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারপরও তাঁকে দমাতে যায়নি। অবশেষে সামরিকজান্তা ১৯৬৮ সালে জানুয়ারি মাসে তিনিসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দিয়ে তার মুখ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।’
‘সেটা আবার কী?’ মজনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
মমিন বলে, ‘পাকিস্তানিরা মামলায় অভিযোগ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কয়েকজন সামরিক এবং বেসামরিক ব্যক্তি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ববাংলাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এই মামলার নাম আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ষড়যন্ত্রটা নাকি হয়েছিল আগরতলায়। তাই এর নাম আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। গোপনে এই বিচারকার্য শরু হয়। তারা এই মামলায় শেখ মুজিবকে শাস্তি দেওয়ার গোপন ষড়যন্ত্র করতে থাকে। আর এদিকে বাঙালি জাতি তাতে ফুঁসে ওঠে। ছাত্ররা ১১ দফা আন্দোলন শুরু করে। তারা আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলে। ঢাকা শহর হয়ে পড়ে মিছিলের শহর। মিছিলে মিছিলে রাজপথ উত্তাল। গণআন্দোলনে নতি স্বীকার করে আইয়ুব খান আগরতলা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে। শেখ মুজিবসহ সকল বন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
তারপর ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে রেসকোর্স ময়দানে বিশাল গণসংবর্ধনার আয়োজন করে। লক্ষ জনতার সেই সভায় ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। সেই থেকে আমরা শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু বলি।
পূবর্ পাকিস্তানে তখন আন্দোলন দাবানলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছিল। আইয়ুব খান কোনো উপায় না দেখে সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় বসেই সাধারণ নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দেন। সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা না দেওয়ার ফন্দি আঁটতে থাকে। সংসদের মিটিং ডেকে সেই মিটিং আবার ক্যানসেল করে দেয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এই খবর ঢাকায় পৌঁছলে ঢাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ঢাকা তখন মিছিলে মিছিলে সয়লাব হয়ে যায়। তারপর আসে ৭ মার্চ। রেসকোর্স ময়দানে অগ্নিঝরা ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। আমি নিজে সেই ভাষণ শুনেছি। ভাষণ শুনে আমার শরীর দিয়ে মনে হয় আগুন বেরুচ্ছিল। মূলতঃ সেই ভাষণ শুনেই আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন। আলোচনা কিছু না। গোপনে গোপনে অস্ত্র আনতে থাকে বাঙালিকে শায়েস্তা করার জন্য। যেদিন ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করে সেই রাতেই অর্থাৎ ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি মিলিটারিরা নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তারা এই অপারেশনের নাম দেয় ‘অপারেশন সার্চ লাইট।’ তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল আক্রমণ করে নির্বিচারে বাঙালি নিধন করতে থাকে। তার আগে ২৫ মার্চ গভীর রাতে মিলিটারিরা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং দেশের স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতা যেমন তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আহমেদ, কামরুজ্জামানসহ অন্য নেতারা প্রবাসী সরকার গঠন করেন। তাজউদ্দিন আহমদ হন প্রধানমন্ত্রী এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তারা তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আহ্বান জানালে সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তরুণরা দলে দলে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে থাকে। মোটামুটি এই হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অংশ নেওয়ার ঘটনা।

মজনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘তাহলে তো ঠিকই আছে। বলা যায় যুদ্ধ করা আমাদের ফরজ হয়ে গেছে।’
‘তুমি ঠিকই বলেছ। আমাদের সব তরুণ যুবকের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ফরজ হয়ে গেছে। এমন কি যুবক হয়েও যারা যুদ্ধে অংশ নেয়নি তারাও রাজাকারের সামিল।’
‘তাইতো। এখনতো আমার মনে হচ্ছে আমি ঠিক কামটাই করছি। আমার মনোবল আরও বাইড়া গেল ওস্তাদ।’
‘তোর মতো মনোবল যদি সবার থাকত তাহলে পাকিস্তানি মিলিটারি বাপ বাপ করে এ দেশ থেকে পালাত। অথচ দুঃখের বিষয় কি জানিস, আমাদেরই কিছু জাত ভাই তাদের পেছনে হেইও দিচ্ছে।’
‘এই জন্যে রাজাকার পাইলে আমার মাথায় আগুন চইড়া যায় ওস্তাদ। আমি ওদের বেয়োনেট দিয়া খোঁচাইয়া খোঁচাইয়া মারি।’
তাদের আলোচনার মাঝে বাড়ির মালিক হরমুজ মিয়া ঢুকে পড়ে রুমে। লোকটি অতি সরল। মাথায় সারাক্ষণ টুপি। মুখে লম্বা দাড়ি। অতিরিক্ত পান খাওয়ায় সবগুলো দাঁতই লাল। ঠোঁটজোড়াও লাল টুকটুকে। দেখতে খারাপ লাগে না। তার আকস্মিক রুমে ঢুকে পড়ায় মমিন মাথা তুলে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকায়।
হরমুজ মিয়া দম নিয়ে ভয়ার্ত মুখে বলে, ‘একজন আপনার সাথে দেখা করতে আইছে।’
মমিন জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’
‘আমাদের গাঁয়েরই একজন মহিলা।’
‘কী চায় সে?’
হরমুজ মিয়া বেড়ার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ঝুনুর মা, কী কইবা কয়া ফালাও।’
ঘরটি টিনের ছাউনি। কিন্তু বেড়া পাটশোলার। বেড়ার আড়াল থেকে ঝুনুর মা কান্না গলায় বলে, ‘আমি আপনাদের কাছে বিচার দিবার আইছি।’
‘কীসের বিচার?’ মমিন জিজ্ঞেস করে।
‘ঝুনুর মা কান্না গলায় বলে, ‘আমার জামাই আমারে খালি মারে।’
প্রশ্ন শুনে মজনু ফিক করে হেসে ফেলে। মমিনের মুখেও হাসি চড়েছিল। কিন্তু সে হাসি অবদমন করে। কারো দুঃখ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা ঠিক না।
মমিন বলে, ‘এটাতো আমাদের বিচার করার কাজ না। আপনার জামাই যদি রাজাকার হতো তাহলে এতক্ষণ তাকে আমরা ধরে এনে ঝুলাতাম। তো আপনার স্বামী কি রাজাকার?’
‘রাজাকার হলে আর বিচার দিতে আসতাম না। আমি নিজেই তারে ঘুমের মধ্যে জবাই কইরা দিতাম।’
মমিন বিস্ময়ে হতভম্ব হয় ঝুনুর মায়ের কথা শুনে। রাজাকারদের প্রতি তার এত ঘৃণা। মমিন বলে, ‘তাহলে আমাদের আপনি কী করতে বলেন?’
‘আপনারা তারে ডাইকা একটু ভয় দেখাইবেন। যাতে যখন তখন আমার গায়ে হাত না তোলে।’
হঠাৎ মজনু কথা বলে ওঠে। বলে, ‘আমরা মিছেমিছি ভয় দেখাই না। ডাইরেক্ট অ্যাকশনে যাই। বুঝছেন কিছু। ডাইরেক্ট অ্যাকশন মানে গলা কাইটা দেই।’
মমিন মৃদু স্বরে ধমক দেয় মজনুকে। বলে, ‘এভাবে কথা বলছ কেন? চুপ থাক।’ মমিন মহিলাকে বুঝিয়ে বলে, ‘দেখুন এটা আমাদের কাজ না। এই ধরনের কাজ করে গ্রাম্য প্রধান বা মাতব্বররা। আমরা আরও বড় কাজের জন্য ঝাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আপনি যান।’

মহিলা এবার কাঁদতে শুরু করে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমি এতিম। আমারে মাইরা কাইটা ফালাইলেও কেউ দেখার নাই। গাঁয়ের মাতবরদের কাছে কত বিচার দিছি। বিচার তো করেই নাই। উল্টো আমার কপালে শণির দশা হয়। মাইর আরও বেশি কইরা দেয়। আমার আর জানে কুলায় না।’
মমিন এবার ভাবনায় পড়ল। মহিলার জন্য কিছু করতেও পারছে না। তাকে ধমক দিয়ে চলে যেতে বলবে, তাও পারছে না। উভয় সংকটে মমিন।
মজনু বলে, ‘ওস্তাদ মহিলার জন্য আমার খুব মায়া হইতাছে। ব্যাটারে ধইরা আইনা সাইজ কইরা দেই।’
‘না।’ মমিন ধমকে ওঠে।
মহিলার কান্না বন্ধ হচ্ছে না। এবার গলা চড়িয়ে কান্না শুরু করে সে।
মমিন বাড়ির মালিক হরমুজ চাচাকে ডেকে মহিলাকে চলে যেতে বলেন। হরমুজ নিজেও তার পক্ষে সাফাই গায়। বলে, ‘আপনারা কিছু একটা করেন।’
মমিন এবার বিস্ময়ে হরমুজের দিকে তাকিয়ে থাকে। মজনু উঠে দাঁড়ায়। বলে, ‘ওস্তাদ, আমি গেলাম। ব্যাটারে ডাইকা আনি। তারপর আপনি দুই কথা কয়া দিয়েন।’ মজনু আর পারমিশনের অপক্ষো না করে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর একজন একহারা গড়নের লোককে সঙ্গে নিয়ে রুমে ঢোকে। বয়স চল্লিশের ঘরে। হ্যাংলা পাতলা। দেখেই বোঝা যায় শরীরে পুষ্টির অভাব।
মমিন লোকটিকে দেখে ভাবে কী বলবে তাকে। সে লোকটিকে বসতে বলে। ঘরে একটি টুল ছিল সেটা টেনে নিয়ে সেখানেই বসে লোকটি।
‘নাম কী?’ মমিন জিজ্ঞেস করে।
লোকটি খুব স্বাভাবিকভাবে বলে, ‘হাকিম।’
‘কী করেন?’
‘পাইট খাটি।’
‘কী খাটেন?’
বাড়িওলা হরমুজ বলে, ‘কামলা খাটে। খুবই গরিব। জমি-জমা নাই। সারাদিন কামলা খাইটা যা পায় তাই দিয়া সংসার চালায়।’
‘তাহলে সমস্যাটা কোথায়?’ মমিন কণ্ঠ চড়িয়ে বাড়িওলা হরমুজ চাচাকে কথাটা জিজ্ঞেস করে। হরমুজ চাচা জবাব দিতে আটকে যায়। মমিন এবার হাকিমকে জিজ্ঞেস করে, ‘কোন দোষে আপনি আপনার বউয়ের গায়ে হাত তোলেন?’
‘কে বলল আমি আমার বউয়ের গায়ে হাত তুলি?’
‘সবাই বলে। এই যে হরমুজ চাচা সেও বলে। আপনার বউ বলে গেছে। বলেন, ‘কেন মারেন লক্ষ্মী বউটাকে?’ মমিনের কণ্ঠ চড়ে গেলে হাকিম ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে থাকে। কথা বলে না। মমিন ধমকে ওঠে। বলে, ‘কথা বলছেন না কেন? কথা কিন্তু আমরা বাইর করতে জানি। বাইর করমু কথা?’
মজনু ভেংচিয়ে বলে, ‘এখন চামচিকা সাজছ। মুখ দিয়া কথা বাইর হইতাছে না। বউটারে দুর্বল পায়া তার সামনে সিংহ সাজ। ওস্তাদ অর্ডার দেন, ব্যাটারে হাল্কা সাইজ কইরা দেই। যাতে জীবনে আর বউয়ের গায়ে হাত না তোলে।’
অবস্থা বেগতিক দেখে হাকিম ছুটে এসে মমিনের পা জড়িয়ে ধরে। বলে, ‘আমারে মাফ কইরা দেন। আমি আর বউরে মারমু না।’
মমিন বলে, ‘সত্যি কইরা বলেন তো, আপনি কেন মারেন বউটাকে?’
মমিন বাধ্য করে বলতে। হাকিম তোতলিয়ে বলে, ‘ভুল দেখলে মাথায় রক্ত চইড়া যায়।’
‘কী ভুল?’
‘রান্ধার ভুল। তরকারিতে খাবলা খাবলা নুন দিয়া রাখে। কইলেও ঠিক হয় না।’
‘তাই বলে লাঠি দিয়া পিটাইবেন?’ সে মানুষ না?’
‘আমার ভুল অয়া গেছে। আমারে মাফ কইরা দেন। আমি আর বউরে মারমু না।’
‘আপনার চোখ বলছে আপনি মিছা কথা কইতাছেন। এখন থেকে মাথায় রক্ত চড়লে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকবেন। দেখবেন রাগ পানি হয়ে গেছে। মনে থাকবে? শোনেন, আমরা কিন্তু এই এলাকায় থাকব। আবার যদি শুনি বউয়ের গায়ে হাত তুলছেন তাইলে কিন্তু নির্ঘাত মৃত্যু। কেউ আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না।’
‘জি। আর মারমু না।’
‘এবার যান।’ লোকটি ঘর থেকে বের হয়ে দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে যায়।
মমিন বলে, ‘মজনু। লোকটাকে ফলো কর। দেখ সে পাকিস্তানি ক্যাম্পের দিকে যায় কি না।’
মমিন বলার পর চাদরের নিচে স্টেনগান নিয়ে মজনু বেরিয়ে যায়।

বি.দ্র. ইসহাক খানের ‘যারা যুদ্ধ করেছিল’ উপন্যাসটি এবারের একুশে বইমেলায় মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে। উপন্যাসটি ‘মাওলা ব্রাদার্স’ এর স্টল থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন পাঠকরা।

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>
যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৯

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৮

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৭

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৬

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব- ১৫

যারা যুদ্ধ করেছিল: পর্ব-১৪

Header Ad
Header Ad

দেশের তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে যা বলল আবহাওয়া অফিস

ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র গরমের দাপট। চলতি মে মাসের শুরুতে আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে সহনীয় থাকলেও গত বুধবার (৭ মে) থেকে বাড়তে শুরু করে তাপমাত্রা।

শুক্রবার (৯ মে) পর্যন্ত দেশের ৪৫টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী রোববার (১১ মে) থেকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসবে এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কিছু এলাকায়, যা কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে জনজীবনে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, এবার এপ্রিল মাসে সাধারণত যতোটা গরম পড়ে, তার তুলনায় এবারের উষ্ণতা ছিল তুলনামূলক কম। বর্ষার আগমনের আগে এই সময়টিতে স্বাভাবিকভাবেই গরম বাড়ে, তবে এবারের তাপপ্রবাহটি ব্যাপক বিস্তৃত হওয়ায় তা জনজীবনে ভোগান্তি বাড়িয়েছে। আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, এপ্রিল মাসে দেশে কিছু এলাকায় তাপপ্রবাহ থাকলেও তা এত বিস্তৃত ছিল না। বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ স্থানে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের বুলেটিন অনুযায়ী, বর্তমানে রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারি, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বরিশাল ও পটুয়াখালীসহ মোট ৪৫ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

তাপমাত্রা যদি ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তবে তা মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি হলে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর চেয়ে বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে ধরা হয়।

বুলেটিনে আরও বলা হয়, শুক্রবার সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রাও সামান্য বাড়বে। আকাশ থাকবে আংশিক মেঘলা এবং আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে।

ঢাকায় এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২৮ মার্চ রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টায় ঢাকার বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৭৮ শতাংশ এবং পশ্চিম বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বাতাস বয়ে যাচ্ছিল ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে।

চুয়াডাঙ্গায় এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অপরদিকে, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল লালমনিরহাটের ডিমলায়—২২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিস্তৃত রয়েছে। এর প্রভাবে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে কিছু এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা তাপপ্রবাহ প্রশমনে সহায়ক হতে পারে।

এ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রচণ্ড গরমে যথাসম্ভব রোদ এড়িয়ে চলা, হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান, পর্যাপ্ত পানি পান এবং ঘন ঘন বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

Header Ad
Header Ad

আ.লীগ নিষিদ্ধে গুরুত্বের সাথে সরকার বিবেচনা করছে: সরকারের বিবৃতি

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাস ও স্বৈরশাসনের অভিযোগে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এ দাবি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

সরকার জানিয়েছে, এ বিষয়ে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়েছে এবং আলোচনা শেষে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের উল্লেখও করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

এ পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। পাশাপাশি জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এরই মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

 

এছাড়া, ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বর্তমানে হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনের ঘটনায় জনগণের ক্ষোভের বিষয়টিও সরকার পর্যবেক্ষণ করছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে সরকার।

Header Ad
Header Ad

টাঙ্গাইলে নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতা রাজ্জাকসহ ২ জন গ্রেফতার

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগে ডেভিল হান্টের অভিযানে টাঙ্গাইলের মধুপুরে নাশকতার মামলায় ভূঞাপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মো. আব্দুর রাজ্জাকসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে ভূঞাপুর থানা পুলিশ।

শুক্রবার (০৯ মে) সকালে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম রেজাউল করিম এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতারকৃত আব্দুর রাজ্জাক উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বাগবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলের অনুসারী ছিলেন।

অপরদিকে, একই মামলায় গত বুধবার রাতে উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সস্পাদক আলমগীর নামে আরেক নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে গত বৃহস্পতিবার মধুপর থানায় সোপর্দ করা হয়।

এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম রেজাউল করিম জানান, মধুপুর থানায় নাশকতার মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক ও আলমগীরকে গ্রেফতারের পর মধুপুর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে যা বলল আবহাওয়া অফিস
আ.লীগ নিষিদ্ধে গুরুত্বের সাথে সরকার বিবেচনা করছে: সরকারের বিবৃতি
টাঙ্গাইলে নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতা রাজ্জাকসহ ২ জন গ্রেফতার
অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল
এবার অপেক্ষা তারেক রহমানের ফেরার, চলছে জোরালো প্রস্তুতি
পদ্মার এক ইলিশের দাম সাড়ে ৮ হাজার টাকা
৫ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে থানায় নেওয়া হলো আইভীকে
জুমার পর যমুনার সামনে বড় জমায়েতের ডাক হাসনাত আব্দুল্লাহর
প্রথম আমেরিকান পোপ হলেন রবার্ট প্রিভোস্ট
একের পর এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল ভারত, সীমান্তজুড়ে ব্ল্যাকআউট
নিষিদ্ধ হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ
অবশেষে গ্রেফতার আইভী
ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার জেরে পিএসএলের বিদেশি ক্রিকেটারদের দেশত্যাগ শুরু
সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ল দুই মাস
মাহফুজ-আসিফ আ’লীগ নিষিদ্ধ চায়, কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কারা: হাসনাত
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও পদ ছাড়লেন স্নিগ্ধ
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ, ৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
টাঙ্গাইলে ট্রাক-পিকআপের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
ভারতীয় অর্ধশত সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের
নওগাঁর পতিসরে বিশ্বকবির কাছারি বাড়িতে জন্মবার্ষিকী ঘিরে উৎসবের আমেজ