শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

সুরমা জাহিদ

কিশোরীদের দেখা একাত্তরের ভয়াবহ স্মৃতি

মধুবন্তী ডায়েসের গল্প

[শেষ পর্ব]

 পরদিন বাড়িতে আবার মিলিটারি এসে হামলা করে। ঐ দিন আমরা ঘরে ছিলাম, আমাদের বাড়িতে একটা ঘর ছিল। সেটাতে কেউ থাকত না। ঐ ঘরে বসে দাদা কাজকর্ম করাতেন। বাচ্চারা মাঝে মাঝে খেলাধুলা করে। ঘরটা অনেক লম্বা ছিল। ঘরের ভেতরে এক পাশে ছিল অনেক বড় একটা ধানের গোলা। গোলার পিছনে  ছিল কিছু অপ্রয়োজনীয় হাবি-জাবি জিনিসপত্র। তারপর চেয়ার, টেবিল, টুল। তারপরও কিন্তু খেলা যেত। সেই ঘর এত বড় ছিল। যখন মিলিটারি বাড়িতে এসেছে তখন অনেকে সেই ঘরে ছিলাম। হঠাৎ কেমন যেন একটা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তখনই বুঝতে পারি মিলিটারিদের জুতার শব্দ। তখন চিৎকার করে আমি বলছি, মিলিটারি আসছে, পালাও, পালাও। এই বলেই আমিও পালাতে চেস্টা করছি। বাহিরে তাকিয়ে দেখি মিলিটারিরা বেশ কাছাকাছি চলে এসেছে। আমি ঘর থেকে বাহির হয়ে দূরে কোথাও পালাতে পারবো না ভেবে আমি ঘরের ভেতরে পালাতে চেস্টা করি। প্রথম ধানের গোলার ভেতরে উঠতে চেস্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। পরে গোলার নিচে গিয়ে শুয়ে পড়ি আর দুই একটা জিনিসপত্র আমার সামনে এনে রেখে দিয়েছি। ঘরের ভেতরে আমার সঙ্গে আরও দুই তিনজন ছিল । বাকিরা সবাই বাহির হয়ে গিয়েছিল। যারা ছিল তারা আর পালাতে পারেনি। মিলিটারিরা ঘরে ঢুকে পড়ে। আমার মনে হয় ঘর থেকে যে অনেকে বাহির হয়ে পালিয়ে গিয়েছিল তা দূর থেকে দেখেছে। তাই ঐ ঘরের ভেতর এসেছে। যারা ঘরের ভেতর ছিল তাদের মধ্যে একজনের বিয়ে হয়েছিল তার নাম ছিল খুব সম্ভবত: আলেয়া। আমাদের বাড়ির পাশেই ছিল তার বাড়ি। সে বাবার বাড়িতে এসেছিল বাচ্চা হবে তাই। তার দিন ঘনিয়ে এসেছিল। আর দুই জনের নাম ছিল হেলেনা আর রেখা। ওরা আপন দুই বোন ছিল।

মিলিটারিরা ঘরে ঢুকেই তাদের তিনজনকে ধরে ফেলে। তারপর তাদের পরনের কাপড় খোলে টানা ধর্ষণ করতে থাকে একজনের পর একজন। তিনজনকে পাশাপাশি মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেছে। মিলিটারিরা তো অনেকজন ছিল, তাই পালাক্রমে তারা তিনজনকে ধর্ষণ করেছে। তাদের কাজ শেষ হলে তারা চুপচাপ চলে যায়। আবার কি যেন মনে করে, ঘরের দরজা থেকে ফিরে আসে এবং হেলেনা ও রেখাকে তুলে নিয়ে যায়। আর আলেয়া পড়ে আছে। তাদের রক্ত বেয়ে বেয়ে সমস্ত ঘর ভিজে গিয়েছে। আমিও ভিজে গিয়েছি। এসব দেখে আমি ভয়ে আধ মরার মতন পড়ে আছি। এক সময় দেখি, আলেয়া ঘরে ছটফট করছে। তাদের রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে সমস্তটা ঘর। আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে চেস্টা করছি উঠে আসতে এবং আলেয়াকে সাহায্য করতে, কিন্তু পারিনি। মনে হচ্ছে আমার সমস্ত শরীর মাটির সাথে লেগে গিয়েছে। কেউ বুঝি আঠা দিয়ে রেখেছে। আমার কানে বাজছে আলেয়ার করুণ আর্তনাদ। মনে হয় মাঝে মাঝে পানি পানি করছিল ।

বেলা গিয়ে সন্ধ্যা নেমে এল। দুই একজন করে বাড়ি ফিরছে। এক সময় কেন যেন এই ঘরে আসে। ঘরে এসেই চিৎকার করে উঠে। সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। আলেয়াকে পাওয়া গিয়েছে। তার মানে এতক্ষণ আলেয়াকে খুঁজে পাচ্ছিল না। কয়েকজন ঘরে এলো, সবাই ভয় পাচ্ছে, কত কথা বলছে। আলেয়াকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তখনও আমার মুখ দিয়ে কথা বাহির হচ্ছে না। আমি আমার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করছি। কিন্তু আমার গলা দিয়ে কোন শব্দ বাহির হচ্ছে না। আমি দেখছি সবাই আলেয়াকে নিয়ে ব্যস্ত এবং তাকে নিয়ে যাচ্ছে। তারপর তো ঘরে আর কেউ আসবে না। সারারাত আমাকে অন্ধকারে একাকী এখানে কাটাতে হবে। কেউ জানে না যে, আমি এখানে লুকিয়ে আছি। অনেক চেস্টা করেও যখন আমি শব্দ বের করতে পারিনি তখন আমি হাত দিয়ে এটা-সেটা নাড়াতে চেস্টা করতে থাকি। এক সময় একটা শব্দ হল। ঘরে যারা ছিল তারা শুনতে পেয়েছে। তখন তারা আমাকে উদ্ধার করে। তারপর আর আলেয়ার খবর জানি না।

সেদিনের পর বাড়ির সবাই বলছেন, আমাদের এখানে থাকা ঠিক হবে না। তিন চারদিন পর আমরা ভারতের উদ্দেশ্যে আবার রওনা দেই। আবার সেই পায়ে হেঁটে শত না, শত শত বললে ভুল হবে, হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধা লাইন ধরে হাঁটছে তো হাঁটছেই। মনে হয়, এত বড় লাইন যে, আমাদের দেশ থেকে লাইন শুরু হয়ে ভারতে গিয়ে শেষ হয়েছে।

ভারতে গিয়ে আমরা শরণার্থী শিবিরে উঠি। ঐখানে অবস্থা তো আরও বেশি খারাপ। ঐখানে শুধু জান-মান হারানোর ভয় নেই। তাছাড়া সব দিক দিয়ে অসুবিধা ছিল-থাকার, খাওয়ার, গোসল করার, ঘুমানোর। যে ঘরের ভেতরে ৫০ জন থাকতে পারে, সেখানে মনে হয় ১৫০ জন লোকের থাকতে হয়েছে। এত লোক থাকলে যা হয় তাই হয়েছে। যাই হোক জান মানের নিরাপত্তা ছিল। শত কস্টের মাঝ দিয়ে পাঁচ সাতটি মাস পার করেছি। এক সময় শুনি, আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। মুহুর্তের মধ্যেই সব দু:খ কস্ট ভুলে মনের ভেতর আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করেছে। ভাবতেই কেমন যেন ভাল লাগছে যে আমরা স্বাধীন, আমাদের নিজের একটা দেশ হয়েছে, সেই দেশের মানুষ আমরা। বৃষ্টি হলে আষাঢ় মাসে ব্যাঙ যেভাবে ব্যাক ব্যাক করে ডেকে ডেকে লাফায়, ঠিক সেভাবে লাফাতে ইচ্ছে করছে, লাফিয়েছি অনেক। মনটা আকুল ব্যাকুল করছে, কখন স্বাধীন দেশে এসে পা রাখবো। মন অস্থির হয়ে আছে।

মাসখানেক পর আমরা আবার দেশে ফিরে আসি। বুক ভরা কত আশা-ভরসা, কত স্বপ্ন, কত কল্পনা। কিন্তু না, কিছুই পূরণ হল না। বাড়িতে এসে দেখে কোন ঘরবাড়ি নেই, সব পুড়ে ছাই। পুরো গ্রাম পুড়ে ছাই। একেবারে কিছুই নেই। তখন এমন একটা অবস্থা কে কাকে আশ্রয় দেয়। সবার তো একই অবস্থা। তারপরও আমার এক ফুপুর বাড়িতে গিয়ে আমরা কয়েকদিন ছিলাম। আর এদিক দিয়ে বাড়িতে ছোট ছোট করে কয়েকটা ছনের ঘর করে আমাদেরকে নিয়ে এল। আমরা থাকতে থাকি। দিন যাচ্ছে খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে।

সেই যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আব্বার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল। তারপর আর আব্বার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। আব্বাতো জানেও না আমরা কোথায়, আমরা বেঁচে আছি না মরে গিয়েছি, কিছুই জানে না। না জেনে আব্বা অস্থির হয়ে পড়ে। দেশ স্বাধীন হলে পরের বছর আব্বা দেশে আসেন। এসে আমাদেরকে না পেয়ে পাগলের মতন হয়ে যায়। আব্বা তো ভাবতেও পারেনি আমরা দাদার বাড়িতে আছি। খুঁজতে খুঁজতে আব্বা এক ফুপুর বাড়িতে যায়, ঐখানে গিয়ে জানতে পারে, আমরা দাদার কাছে আছি, ভাল আছি। ফুপু আব্বাকে নিয়ে দাদার কাছে আসে । আব্বা মনে হয় দুই মাসের মতন ছিলেন। দুই মাস পর আব্বা চলে যায়। আব্বা যাওয়ার কয়েক মাস পরেই আমাদের কাগজপত্র সব চলে আসে। আমরা চলে যাই স্বাধীন বাংলাদেশ ছেড়ে, সকল রকমের সকল বন্ধন সব ফেলে অন্য দেশে। সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে।

আমরা যাওয়ার বছর খানেক পরেই জানতে পারি আমার দাদা খুব অসুস্থ। তারপর হঠাৎ একদিন জানতে পারি, দাদা মারা গিয়েছেন। দাদা মারা যাওয়ার খবরটা শোনার পর আমার ভেতরে কেমন যেন একটা ধাক্কা লেগেছিল। সেই ধাক্কার সুর যেন আমাকে শুধু অপরাধী বানিয়েছে। বয়স কম ছিল বলে কাউকে তেমন কিছু বলতেও পারিনি । কিন্তু আমি যখন বড় হয়ে কাজ করতে শুরু করি তখন থেকেই আলাদা করে টাকা জমিয়ে রাখি।

১৯৯১ সালে আমি আবার দেশে যাই। দাদার বাড়িতে যাই। এত বছর পর আসার একটাই কারন ছিল, সেটা হল, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, নিজের খরচে নিজে যেদিন দেশে যেতে পারব সেদিনই দেশে ফিরবো, এই অভিমান ছিল মনে। হয়ত দাদা বেঁচে থাকলে আরও আগে আসা হতো। আমার আব্বা মারা গিয়েছেন, আমি এত কষ্ট পাইনি, যে কষ্ট আমি পেয়েছি দাদার মৃত্যুর খবর শুনে।

১৯৯১ সালের পর দেশে গিয়েছি দুই বার। সামনে আবার যাব, অবশ্যই যাব। আমি দেশকে খুব ভালবাসি, খুব মিস করি। আমার ইচ্ছে আছে আর কয়েক বছর এখানে থেকে বাকি জীবনটা বাংলাদেশে থাকবো। 

 

লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক

Header Ad

প্রথমবার এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করবেন বাংলাদেশের জেসি

সাথিরা জাকির জেসি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশি আম্পায়ার সাথিরা জাকির জেসি প্রথমবারের মতো নারী এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করতে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে মৌখিকভাবে বিষয়টি অবগত করেছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)।

দেশের একটি গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেসি। তিনি বলেন, ‘জুলাইতে এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করবো। বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।’

সাথিরা জাকির জেসি। ছবি: সংগৃহীত

এর আগেও জেসির ঝুলিতে ইমার্জিং এশিয়া কাপে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। গত বছরের জুনে এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে হংকংয়ে। এছাড়া চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এসিসি প্রিমিয়ার কাপে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন জেসি।

চলতি বছরের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কায় হবে এবারের নারী এশিয়া কাপ। গত এশিয়া কাপ বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত হলেও দেশি কোনো আম্পায়ার ছিল না।

বাংলাদেশ দলের হয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা জেসির পুরো মনোযোগ এখন আম্পায়ারিংয়ে। এখন পর্যন্ত ৮টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সামনেই ঘরের মাঠে আছে বিশ্বকাপ। জেসি এখন নিজেকে প্রস্তুতি করছেন বৈশ্বিক মঞ্চে দায়িত্ব পালনের জন্য।

তিনি বলেন, ‘আমি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করছি নিয়মিত। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ, তো অবশ্যই স্বপ্ন দেখি। আমি প্রস্তুত বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালনের জন্য।’

উল্লেখ্য, গত মার্চে আইসিসির প্যানেলে যুক্ত হন জেসি। তার পাশাপাশি প্যানেলে যোগ হয় রোকেয়া সুলতানা, ডলি রানী ও চম্পা চাকমার নামও। ম্যাচ রেফারি হিসেবে সুযোগ পান সুপ্রিয়া রানী।

বিয়ে না দেওয়ায় মাকে জবাই করলো ছেলে

নিহতের ছেলে রাসেল খান। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মা রানু বেগমকে (৫৫) গলা কেটে হত্যা করেছে ছেলে রাসেল খান (২২)।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে ফরিদগঞ্জের ৮ নম্বর পাইকপাড়া ইউনিয়নের ইছাপুর গ্রামের খান বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ। ঘটনার পর পলাতক থাকায় তাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

নিহতের স্বামী আতর খাঁন বলেন, আমার তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে রাসেল সবার ছোট। কয়েকদিন ধরে তাকে বিয়ে করানোর জন্য আমাদেরকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। সে আমাকেও মেরেছে। আমি স্থানীয় একটি মাদরাসায় বাবুর্চির কাজ করি।

তিনি আরও বলেন, রাসেল দুপুর ২ টা ৪৯ মিনিটে আমাকে ফোন দিয়ে বলে তার মাকে কে যেন ঘরে জবাই করে রাখছে। তখন আমি নিশ্চিত হয়েছি, আমার স্ত্রী তার সন্তানের হাতেই খুন হয়েছে। ফোন কেটে সঙ্গে সঙ্গে আমি বাড়িতে এসে দেখি আমার স্ত্রী রানু বেগমের মরদেহ বিছানায় পড়ে আছে। আমার ছেলে রাসেল পালিয়ে গেছে। পরে আমার ডাক-চিৎকারে স্থানীয়রা এসে পুলিশকে খবর দেয়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান হোসাইন আহমেদ রাজন শেখ বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছি। আমি জানতে পেরেছি নিহতের ৫ সন্তানের মধ্যে রাসেল সবার ছোট। বড় ছেলে ফারুক প্রায় ৫ বছর ধরে ঢাকাতে থাকে। বাড়িতে বাবা-মায়ের খোঁজ খবর রাখেন না। বাকি তিন মেয়ের বিয়ে হওয়াতে তারা স্বামীর বাড়িতে থাকে।

তিনি আরও বলেন, রাসেল ফরিদগঞ্জ বাজারে একটি মুদি দোকানে শ্রমিকের কাজ করে। গত কয়েকদিন ধরে সে তার মা-বাবাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে তাকে বিয়ে করানোর জন্য। যদি তাকে বিয়ে না করায়, সে মা-বাবাকে খুন করে ফেলবে। আমি চাই সঠিক তদন্ত করে এই হত্যার বিচার করবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে রানু বেগমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যার শিকার রানু বেগমের স্বামী আতর খাঁন ও তার মেয়ে শাহিনের বক্তব্য অনুযায়ী নিজের ছোট ছেলে রাসেল কর্তৃক হত্যার শিকার হয়েছেন তিনি। অভিযুক্ত রাছেল পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। এ বিষয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।

রেকর্ড তাপপ্রবাহের জন্য সরকার দায়ী: রিজভী

বক্ত রাখছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

দেশে চলমান রেকর্ড তাপপ্রবাহের জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতরণ অনুষ্ঠানে এই অভিযোগ করেন তিনি।

রিজভী বলেন, দেশে রেকর্ড পরিমাণ তাপপ্রবাহের জন্য সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়ন দায়ী। ১৫ বছর ধরে দেশে নির্বিচারে বন দখল ও বন উজাড় হয়েছে। এ কারণে পরিবেশ ভয়ংকর রূপ নিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান আমলেও গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতাম। অথচ এই সরকার রমজান মাসেও ১৫ দিন স্কুল খোলা রেখেছিল। যেখানে স্কুল সপ্তাহে দুদিন বন্ধ, তার মধ্যে শনিবার স্কুল-কলেজ খোলা রেখে বাংলাদেশ যে অগ্নিবর্ণ হয়ে উঠেছে, সেই আগুন রাঙা বাংলাদেশের মধ্যে এই বাচ্চাদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতরণ। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

তীব্র তাপপ্রবাহের জন্য সরকারকে দায়ী করে রিজভী বলেন, বাংলাদেশে এখন উত্তপ্ত আগুনের মতো পরিবেশ। এই উত্তপ্ত গরমে মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এজন্য একমাত্র দায়ী এই গণবিরোধী সরকার। এরা নদী রক্ষা করতে পারেনি। ভূমিদস্যুরা নদী দখল করে রেখেছে। অন্যায়ভাবে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার কিছুই করছে না। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কয়লা পুড়িয়ে তাপকেন্দ্র করলে দেশের কোনো লাভ হবে না। গাছ, ফসল, মাছ পুড়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, কুয়াকাটায় তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাগেরহাটের রামপালে কয়লা পুড়িয়ে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছে। যার কারণে সমুদ্রপারে নারিকেল গাছে আর নারকেল ধারে না, ফসল হয় না। আমাদের নিঃশ্বাস, আমাদের অক্সিজেন হচ্ছে সুন্দরবন। সেই সুন্দরবনকে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এই দেশে নদী খাল-বিল দিয়ে ভরা। কিন্তু সেই নদী খাল-বিলগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সারাদেশ গরমে উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে। ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রা মনে হচ্ছে ৪৩ বা ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা। এরকম গরম বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো পড়েনি। সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূতি হচ্ছে। যে দেশে এতো গাছপালা, এতো নদী, সেই দেশে এ রকম গরম হওয়ার কথা না। শুধু সরকারের লুটেরা নীতি, নদী ভরাট করার নীতির কারণে এই পরিস্থিতি হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি না কি যে কোনোভাবে ক্ষমতা দখল করতে চায়।’ আমরা দখল করতে যাবো কেন? দখল তো আপনারা করে রেখেছেন। জনগণ ছাড়া, ভোট ছাড়া। দেশের জনগণ চায় আন্দোলনের মাধ্যমে অতি দ্রুত এ সরকারের পতন হোক।

তিনি আরও বলেন, আপনারা যদি ক্ষমতা না ছাড়েন তাহলে বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে মরবে, গরমে আগুনে পুড়ে মরবে, মানুষ চাল-ডাল, চিনি -লবণ পাবে না। দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে মানুষ ধুকে ধুঁকে মারা যাবে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, সহ অর্থনৈতিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবীদলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, যুবদলের সহ সভাপতি জাকির হোসেন সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন আনু, সহ সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, শামসুর রহমান, যুবদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত, সাদিউল কবির নীরব, তৌহিদুল হাসান রিয়ন, বিএনপি নেতা জাকির হোসেন, ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, তারেক উজ জামান তারেক, কাজী রফিকুল ইসলাম, ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ তৌহিদুর রহমান আউয়াল, লিয়াকত হোসেন, সহ সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন নিলয়, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডাঃ সাইফুল আলম বাদশা, মতিঝিল থানা বিএনপি নেতা জাহিদুল হক জাহিদ, আলমগীর হোসেন, ঢাবি ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রাজু আহমেদসহ প্রমূখ।

সর্বশেষ সংবাদ

প্রথমবার এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করবেন বাংলাদেশের জেসি
বিয়ে না দেওয়ায় মাকে জবাই করলো ছেলে
রেকর্ড তাপপ্রবাহের জন্য সরকার দায়ী: রিজভী
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২.৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড, জনজীবনে অস্বস্তি
বিএনপির আরও ৭৫ নেতা বহিষ্কার
প্রেমিকার আত্মহত্যা, শোক সইতে না পেরে প্রেমিকও বেছে নিলেন সে পথ
দুই বিভাগে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস
অভিষেকেই শূন্য রানে ৭ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন রোহমালিয়া
ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে অস্ত্র ত্যাগ করবে হামাস
দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না: ওবায়দুল কাদের
কয়েক মিনিটের দেরিতে বিসিএসের স্বপ্ন ভঙ্গ ২০ পরীক্ষার্থীর
লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত
থাই প্রধানমন্ত্রীর গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে শেখ হাসিনা
আগুন নেভাতে দেরি হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, ২ ফায়ারম্যান আহত
পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা আত্নসাৎ, গ্রেপ্তার ৩
মৃত্যুর দু’বছর পর ব্রুনাই থেকে দেশে ফিরছে দুই প্রবাসীর লাশ
৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা চলছে
পরিবারের অমতে বিয়ে, স্বামী-স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সৌদির যেকোনো ভিসা থাকলেই ওমরাহ পালন করা যাবে
নাটোরে বোনের বৌভাতে গিয়ে একে একে তিন ভাইয়ের মৃত্যু