শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত পল্লীতে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে দিন মাতৃক্রোড়ে যে শিশু প্রথম চোখ মেলেছিল, পরবর্তীকালে সে শিশুর পরিচিতি দেশের সীমানা পেরিয়ে পরিব্যাপ্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। মা-বাবার আদরের ‘খোকা’, রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের সুপ্রিয় ‘মুজিব ভাই’, সমসাময়িকদের প্রিয় ‘শেখ সাহেব’ থেকে মুক্তিকামী বাঙালির ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে অর্জন করেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি, শেষত কায়েমী স্বার্থবাদীদের প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে হয়ে ওঠেন জাতির অবিসংবাদিত নেতা-‘জাতির পিতা’, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’।

বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে তার নাম একাকার হয়েছে। এত শুধু একটি নাম নয় বাঙালির জাতীয় মুক্তির ইতিহাস। যে জন্য বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক। ১৭ মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক দিন। দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে প্রতিবছর পালিত হয়ে থাকে। জাতির জনকের শুভ জন্মদিনে সমগ্র জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে। ইতিমধ্যে জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ ‘মুজিববর্ষ’ সগৌরবে পালিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের আলোয় জাতীয় দিগন্ত আজ উদ্ভাসিত।

বঙ্গবন্ধু জীবনব্যাপী একটিই সাধনা করেছেন, বাঙালীর মুক্তির জন্য নিজকে উৎসর্গ করা। ধাপে ধাপে প্রতিটি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৪৮ থেকে ’৫২ অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন, ’৫০ থেকে ’৫৪ জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ, ’৫৪ থেকে ’৫৬ সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন, ’৬৪তে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িকতা, ’৬৬তে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্থাৎ স্বাধিকার তথা ৬ দফা, ’৬৯-এর গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে মৃত্যুকূপ থেকে মুক্তমানব হয়ে বেরিয়ে এসে সর্বজনীন ভোটাধিকারের দাবি এবং সংখ্যাগুরুর অধিকার আদায়, ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভূমিধস বিজয় অর্জন ও পরিশেষে ’৭১-এ স্বাধীনতার ডাক দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক এই পর্বগুলো সংঘটনে তাকে জীবনের ১৩টি বছর কারান্তরালে কাটাতে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তিকামী মানুষের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার একটি উক্তি এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, ‘বলা হয়ে থাকে যে, সত্যিকার অর্থে কেউ একটি জাতিকে জানতে পারে না যতক্ষণ না কেউ একজন এর কারাগারে বন্দী থাকে।’ ২০১২তে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য সরকারি সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা যাই এবং রোবেন আইল্যান্ডে নেলসন ম্যান্ডেলার কারাকক্ষ পরিদর্শন করি। এখানেই আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকেও মিয়ানওয়ালি কারাগারে এ রকম একটি নির্জন কক্ষে বন্দী রাখা হয়েছিল। এই বন্দিশালাতেই নেলসন ম্যান্ডেলা তার দীর্ঘ ২৭ বছর কারাজীবনের ১৮ বছর বন্দী ছিলেন। স্বচক্ষে দেখেছি বন্দিশালার নির্জন সেলটি। যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে কারাবন্দী ম্যান্ডেলার বিছানার জন্য একটি ও গায়ে দেওয়ার জন্য আরেকটি কম্বল, একটি প্লেট, গ্লাস ও জগ। ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটি পাঠ করে জেনেছি কারারুদ্ধ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সম্বল ছিল একটি থালা, বাটি, গ্লাস আর কম্বল। প্রকৃতপক্ষে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটির শিরোনাম তিনি দিয়েছিলেন ‘জেলখানার সম্বল থালা বাটি কম্বল।’ এখানে গিয়েই বারবার আমাদের কেন্দ্রীয় কারাগার এবং পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারের কথা ভেবেছি-যে কারাগারে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘকাল বন্দিজীবন অতিবাহিত করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হিসেবে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামিক সম্মেলনে গিয়ে মিয়ানওয়ালি কারাগারের প্রিজন গভর্নর (জেল সুপার) হাবীব আলীর কাছ থেকে বর্ণনা শুনেছি, কারাকক্ষের সামনে কবর খুঁড়ে বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী অথবা কবর বেছে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কবরকেই বেছে নিয়ে বলেছিলেন, ‘যে বাংলার আলো-বাতাসে আমি বর্ধিত হয়েছি, মৃত্যুর পর এই কবরে না, আমার লাশ প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিও।’ জাতির পিতা সাড়ে ৯ মাস পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারের নির্জন সেলে বন্দী ছিলেন। মিয়ানওয়ালি কারাগার ভিন দেশে হওয়ায় আমরা তা সংরক্ষণ করতে পারিনি। তবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যে কক্ষে তিনি বন্দী ছিলেন সে-সব সংরক্ষণ করা হয়েছে। আগরতলা মামলায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের যেখানে তিনি বন্দী ছিলেন সেটিও জাদুঘর করা হয়েছে। মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে আত্মোৎসর্গকারী নেতৃত্বের রয়েছে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত আদর্শিক মিল। যেমন ’৭১-এর ৪ মার্চ বাঙালির সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতির জনক বলেছিলেন, ‘চরম ত্যাগ স্বীকার করা ছাড়া কোনোদিন কোনো জাতির মুক্তি আসে নাই।’ তদ্রুপ দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘জনগণের মুক্তির জন্য অবশ্যই সবকিছু ত্যাগের জন্য প্রকৃত নেতাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন, ‘মানুষকে ভালোবাসলে মানুষও ভালোবাসে। যদি সামান্য ত্যাগ স্বীকার করেন, তবে জনসাধারণ আপনার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত।’ ‘আমার সবচেয়ে বড় শক্তি দেশের মানুষকে ভালোবাসি, সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তাদেরকে খুউব বেশি ভালোবাসি।’

বঙ্গবন্ধু সবসময় ছোটকে বড় করে তুলতেন। যেসব জায়গায় সফর করতেন, বক্তৃতায় সেখানকার নেতা-কর্মীদের বড় করে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকে থানার, থানা আওয়ামী লীগের নেতাকে জেলার এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকে জাতীয় নেতায় উন্নীত করে তিনি জাতির পিতা হয়েছেন। ফলত, সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে বহু চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আজো বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করেই টিকে আছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন হৃদয়বান এক মহান নেতা। কারো দুঃখ তিনি সহ্য করতে পারতেন না। পরকে সহজেই আপন করে নিতেন। যারা বিরোধী ছিলেন তাদের কাছে টেনে নিতেন। তিনি যখন বলতেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না’, মানুষ তাই বিশ্বাস করত। তিনি ক্ষমতার জন্য, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করেন নি। প্রিয় মাতৃভূমিকে শোষণ-বঞ্চনার নাগপাশ থেকে রক্ষা করে বাঙালিরা যাতে বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পারে সে জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে রাজনীতি করেছেন। ’৬৭-এর ১৭ মার্চ নিজের জন্মদিনে লিখেছেন, ‘আজ আমার ৪৭তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনে ১৯২০ সালে পূর্ব বাংলার এক ছোট্ট পল্লীতে জন্মগ্রহণ করি। আমার জন্মবার্ষিকী আমি কোনোদিন নিজে পালন করি নাই-বেশি হলে আমার স্ত্রী এই দিনটাতে আমাকে ছোট্ট একটি উপহার দিয়ে থাকত। এই দিনটিতে আমি চেষ্টা করতাম বাড়িতে থাকতে। খবরের কাগজে দেখলাম ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগ আমার জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বোধ হয়, আমি জেলে বন্দী আছি বলেই। ‘আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস।’ (কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা-২০৯) মনে পড়ছে ’৭১-এর রক্তঝরা মার্চের ১৭ তারিখের কথা। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ৫২-তম জন্মদিন ছিল। দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন চলছে। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শেষে তখনকার প্রেসিডেন্ট ভবন অর্থাৎ পুরাতন গণভবন সুগন্ধা থেকে দুপুরে যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে ফিরে এলেন তখন বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনাকালে একজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, ‘৫২-তম জন্মদিনে আপনার সবচাইতে বড় ও পবিত্র কামনা কী?’ উত্তরে স্বভাবসুলভ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘জনগণের সার্বিক মুক্তি।’ এরপর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনকালে বেদনার্ত স্বরে বলেছিলেন, ‘আমি জন্মদিন পালন করি না, আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। এ দেশে মানুষের নিরাপত্তা নাই। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যেকোনো মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কী, আর মৃত্যুদিনই কী? আমার জনগণের জন্য আমার জীবন ও মৃত্যু। আমি তো আমার জীবন জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি।’ জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে আসা জনসাধারণকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা থেকে আবৃত্তি করে বলতেন, ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক।’

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই বঙ্গবন্ধু লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। বারবার ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সময়পোযোগী। সেই কবে ’৬৬তে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা...’ গেয়ে হোটেল ইডেনে আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন। সেই সম্মেলনে দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ২০ মার্চ পল্টন ময়দানের বক্তৃতায় বলেছিলেন ‘৬ দফা কর্মসূচি নিয়ে অনেকের কাছে গিয়েছি, কেউ আমাকে সমর্থন করে নাই।’ কবিগুরুর গান থেকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে...।’ আরও বলেছিলেন, ‘আমার দলের নেতা-কর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছবই।’ বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেবার সমস্ত ষড়যন্ত্র আইয়ুব খান গ্রহণ করেছিল। আগরতলা মামলার সরকারি নাম ছিল ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা। স্বৈরশাসক তাকে প্রধান আসামি করে ফাঁসিকাষ্ঠে দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু মাথা নত করেননি। এ দেশের সংগ্রামী ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতির পিতার মুক্তির জন্য আন্দোলন করেছিল। সেই গণআন্দোলন প্রবল গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়। ফাঁসির মঞ্চ থেকে মুক্ত করে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) গণসংবর্ধনায় জাতির পিতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই বাঙালির বন্ধু তথা ‘বঙ্গবন্ধু’। ডেভিড ফ্রস্টের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আই ফিল ফর মাই কান্ট্রি অ্যান্ড মাই পিপল, অ্যান্ড দ্যান মাই ফ্যামিলি।’ সবকিছুর ঊর্ধ্বে জাতির পিতার কাছে ছিল বাঙালি ও বাংলাদেশ। তিনি ছিলেন বিশ্বে র নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা। যেখানেই মুক্তিসংগ্রাম সেখানেই তিনি সমর্থন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে তুলনা করা যায় ভারতের মহাত্মা গান্ধী, আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, ভিয়েতনামের হো চি মিন, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটোর সঙ্গে। তাদের সমকক্ষ নেতা ছিলেন তিনি। পৃথিবীতে অনেক দেশ স্বাধীন হয়েছে আলোচনার টেবিলে বসে। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছেন রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে। নিজ জীবনকে তিনি বাঙালি জাতির জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন। নেলসন ম্যান্ডেলা যেমন বলেছিলেন, ‘যে মরতে চায়, তাকে কেউ মারতে পারে না।’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘যে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত, তার মৃত্যু নাই।’ বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের একজন মহান নেতা, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। তিনি চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। একবার যে সিদ্ধান্ত নিতেন, মৃত্যুর মুখোমুখি হলেও আপোস করতেন না।

‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা ছিল বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের লালিত স্বপ্ন। ’৬৯-এর ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে স্বকণ্ঠে স্লোগান দেন, ‘আমার দেশ তোমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ।’ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যা কিছু সংঘটিত হয়েছে সবকিছু বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে হয়েছে। নেলসন ম্যান্ডেলা ’৫২তে বলেছিলেন, ‘একদিন আমি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হবো।’ আর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘একদিন আমি এই দেশকে স্বাধীন করবো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে তুচ্ছ।’ সেই লক্ষ্যে উপনীত হতে ধাপে ধাপে তাঁর আরাধ্য কর্মসূচী এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ’৭১-এর ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে ’৭০-এর নির্বাচনে নবনির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। শপথ গ্রহণ করাবেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। সেদিন বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘৬ দফা ও ১১ দফা আজ আমার নয়, আমার দলেরও নয়। এ আজ বাংলার জনগণের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। কেউ যদি এর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে বাংলার মানুষ তাকে জ্যান্ত কবর দেবে। এমনকি আমি যদি করি আমাকেও।’ জনগণের জন্যই ছিল তাঁর রাজনীতি ও কর্মসূচি। বক্তৃতায় সেদিন তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমাকে মোনেম খান কাবু করতে পারেনি, এমনকি আইয়ুব খানও পারেনি-কিন্তু আমাকে দুর্বল করে দিয়েছে আপনাদের এই অকুণ্ঠ ভালোবাসা। আপনারা দোয়া করবেন যেন আপনাদের এই ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারি।’ বাংলার মানুষের প্রতি ভালোবাসার মর্যাদা দিতে তিনি একাই রক্ত দেননি সপরিবারে রক্ত দিয়ে সে ঋণ পরিশোধ করে গেছেন।

মনে পড়ে, ’৭১-এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের কথা; যে ভাষণ আজ ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল’ হিসেবে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে আসীন। সেদিন তিনি একটি ভাষণের মধ্য দিয়ে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করেছেন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে জাতীয় মুক্তির মোহনায় দাঁড় করিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই ৭ মার্চের ভাষণ ছিল আমাদের প্রেরণার উৎস। ছাব্বিশে মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রারম্ভে বলেছিলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ তার এই শেষ বার্তা স্বাধীনতার ঘোষণা হৃদয়ে ধারণ করে হাতিয়ার তুলে নিয়ে ৯ মাস যুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর দেশকে হানাদার মুক্ত করেও আমরা স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করতে পারিনি। ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি যেদিন তিনি স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন, সেদিন মনে হয়েছে আজ আমরা প্রকৃতই স্বাধীন। এরপর ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ১০ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’-এর প্রথম অধিবেশনে দেশের জন্য সংবিধান প্রণয়নের ঘোষণা দেন। মাত্র ৭ মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা অর্জন করি সদ্য স্বাধীন দেশের উপযোগী বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিদেশ সফরে গিয়ে তার প্রতি বিদেশী রাষ্ট্রনায়কদের শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালোবাসা স্বচক্ষে দেখেছি। বিশ্বের রাষ্ট্রনায়করা বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, সোভিয়েট ইউনিয়নের রাষ্ট্রপ্রধান নিকোলাই পোদগর্নি, প্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই কোসিগিন, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভ, বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রনায়ক মার্শাল জোসেফ ব্রোজ টিটোসহ বিশ্বের বরেণ্য নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রকাশ করেছেন। আলজেরিয়াতে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ সেই বক্তৃতা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। জাতিসংঘে প্রিয় মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বক্তৃতায় বলেছেন, ‘মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি একান্ত দরকার।’ যখন সোভিয়েট ইউনিয়নে যান তখন দেশটির শীর্ষ চার নেতা পোদগর্নি, কোসিগিন, ব্রেজনেভ ও আঁন্দ্রে গ্রোমিকো তাকে অভ্যর্থনার জন্য ক্রেমলিনে সমবেত হন। ব্রেজনেভ বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘আমি ধন্য। আজ আপনার মতো মহান নেতার সান্নিধ্য লাভ করেছি।’ জাপান সফরকালে সম্রাট হিরোহিতো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে করমর্দন করে বলেছিলেন, ‘সত্যিই আপনি ইতিহাসের একজন মহান নেতা।’ তৎকালীন বিশ্বে মার্শাল টিটো অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। কাছে থেকে দেখেছি বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। ’৭৩-এ কমনওয়েলথ সম্মেলনে ৩২টি দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও সরকার প্রধান এসেছিলেন। আফ্রিকা মহাদেশের নেতারা কেনিয়ার জুমো কেনিয়াত্তা, জাম্বিয়ার কেনেথ কাউন্ডা, তাঞ্জানিয়ার জুলিয়াস নায়ারে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুইটলাম, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী টুংকু আবদুর রাজ্জাক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট শ্রীমাভো বন্দরনায়েক, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইদি আমিন, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়াকুব গোয়েনসহ বিশ্বের খ্যাতিমান নেতৃবৃন্দসহ অনেকেই কমনওয়েলথ সম্মেলনে এসেছিলেন। কিস্তু আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরতো। তিনি অন্তরে যা বিশ্বাস করতেন দেশের মানুষকে এবং বিশ্ববাসীকে তা-ই বলতেন। যেখানেই গিয়েছেন মানুষ তাকে আপন করে নিয়েছে। দীর্ঘ কারাবাসের পর পাকিস্তানের জিন্দানখানা থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পৌঁছার সংবাদ শুনে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ তৎক্ষণাৎ অবকাশ কেন্দ্র থেকে ফিরে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রীটে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানিয়ে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, ‘আপনি একজন মহান নেতা এবং আমি কখনোই ভাবিনি আপনার সঙ্গে দেখা হবে।’ এই ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

আজ বিশেষভাবে একাত্তরের পঁচিশে মার্চের থমথমে দিনটির কথা মনে পড়ে। সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে বের হই, কাজ শেষে পুনরায় নেতার সঙ্গে দেখা করি। বিদায় নেওয়ার সময় বলি, বঙ্গবন্ধু, আমার তো মনে হয় তারা অবশ্যই আপনাকে গ্রেপ্তার করবে। দৃঢ়-প্রত্যয়ী বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘করুক না। তাতে কী? ওরা আমাকে আগেও গ্রেপ্তার করেছে এবং তাতে ওদের কোনো লাভ হয় নাই। ওরা ফের আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। কিন্তু এ থেকে ওরা কি সুবিধা পাবে আমি জানি না। ওরা যদি আমাকে মেরেও ফেলে তাতেও ওদের কোনা লাভ হবে না। আমার মৃত্যুর বদলা নিতে বাংলার মাটিতে হাজারো শেখ মুজিবের জন্ম হবে। ওদের দিন শেষ এটা ওরাও জানে। দীর্ঘদিনের সংগ্রামের পর আজ এই সত্যই আমার হৃদয়টাকে অনাবিল আনন্দে ভরে দিচ্ছে। ওরা যদি আমাকে মেরে ফেলে এবং তুমি আমার লাশ দেখার সুযোগ পাও তখন দেখবে, আমি কেমন সুখে হাসছি।’ গণহত্যা শুরুর প্রাক্কালে সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা উদ্ধৃত করে বিষাদাচ্ছন্ন স্বরে অথচ অটল মনোবলে বলেছিলেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে এই বাংলায়...।’

’৭২-এর ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরে রেসকোর্স ময়দানের সর্বকালের সর্ববৃহৎ জনসমুদ্রে হৃদয়ের অর্ঘ্য ঢেলে আবেগমথিত ভাষায় বলেছিলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাবার সময় বলবো, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা।’ স্থির-প্রতিজ্ঞ থেকে জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘ভাইয়েরা, তোমাদেরকে একদিন বলেছিলাম, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। আজকে আমি বলি, আজকে আমাদের উন্নয়নের জন্য আমাদের ঘরে ঘরে কাজ করে যেতে হবে।’ সেদিন বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই যে, বাংলাদেশ একটি আদর্শ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোন ধর্মীয় ভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে-গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র।’ বঙ্গবন্ধু জীবনের প্রতিটি ধাপেই বাঙালীর সার্বিক মুক্তির জয়গান গেয়েছেন। যে স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, যে বাংলার জন্য তিনি যৌবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন, ফাঁসির মঞ্চে গেয়েছেন বাঙালির জয়গান, সেই বাংলা ও বাঙালির জন্য তার ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। সমুদ্র বা মহাসমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা সম্ভব; কিন্তু বাংলা ও বাঙালির জন্য বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের যে দরদ, যে ভালোবাসা তার গভীরতা অপরিমেয়।

তোফায়েল আহমেদ: আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি

 

Header Ad
Header Ad

‘জমি পাওয়ার জন্য ড. ইউনূস স্যারকেও বাবা ডাকতে রাজি আছি’

অভিনেতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয়। ছবি: সংগৃহীত

মা সবসময় সন্তানের চাহিদা পূরণে চেষ্টা করেন এবং সাধারণত সন্তানকে নিরাশ করেন না। ঠিক তেমনই, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাঁর মমতাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিকে মনে রেখে আলোচিত-সমালোচিত অভিনেতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয় একবার নিজেকে তাঁর সুযোগ্য সন্তান হিসেবে দাবি করে একটি আবদার জানিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনার কাছে রাজধানীর নিকটস্থ পূর্বাচলে একটি প্লটের আবেদন করেছিলেন অভিনেতা জয়। সেই আবেদনপত্রের একটি ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল, যা এর আগেও কয়েক দফায় ভাইরাল হয়েছিল ফেসবুকে।

২০১৪ সালে পূর্বাচলে জায়গা পাওয়ার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন অভিনেতা, যা ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ভাইরাল হয়। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলের পর সেই আবেদনপত্রটি ফের ভাইরাল হয়।

এদিকে দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক স্যাটায়ার বানিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা ও অন্তবর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। দেশের রাজনীতিবিদদের নিয়ে তৈরি গল্পে ‘৮৪০’ ওয়েব সিনেমা বানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে এই সিনেমা। এর আগেই বুধবার (১১ ডিসেম্বর) আয়োজন করা হয় ‘৮৪০’-এর বিশেষ প্রিমিয়ার শো।

‘৮৪০’ শিরোনামের ওয়েব সিনেমাটিতে একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরিয়ার নাজিম জয়। সিনেমটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমি চাওয়া প্রসঙ্গে তার কাছে জানতে চাইলে শাহরিয়ার নাজিম জয় গণমাধ্যমকে বলেন, আমার জমির প্রয়োজন আছে। তাই ড. ইউনুস স্যারকে বাবা ডাকতে হলেও ডাকবো। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মা বলে জমি চাওয়াতে আমি মোটেও অনুতপ্ত না। একটা জিনিস পাওয়ার জন্য বাবা, দাদা, মা ডাকা যায়। আর আমি আমার কাজের জন্য ভবিষ্যতেও ডাকবো। তবে হ্যাঁ আমি তখনও বলেছি বিগত সরকার যেভাবে স্বৈরাচার হয়ে উঠেছিল আর তাদের পতনের জন্য যত লোক প্রাণ দিয়েছে তা অনেক সেন্সেটিভ ইস্যু হয়ে গিয়েছে। আর ওই সকাররের প্রধানকে আমি মা বলেছি সেটার জন্য আমি অনুতপ্ত।

Header Ad
Header Ad

বেনাপোল বন্দরে এলো আমদানিকৃত ৪৬৮ মেট্রিক টন আলু

বেনাপোল বন্দরে এলো আমদানিকৃত ৪৬৮ মেট্রিক টন আলু। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

দেশের উর্ধ্বমুখী আলু বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ৪৬৮ মেট্রিক টন আলু আমদানি করা হয়েছে। এই আলুগুলো মালবাহী ট্রেনে করে ভারতের মেসার্স আতিফ এক্সপোর্ট সুজাপুর কালিয়াচক মালদা শহর থেকে আমদানি হয়ে বেনাপোল রেল স্টেশনে পৌঁছেছে।

রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেসার্স টাটা ট্রেডার্স নামক একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এই আলু আমদানি করেছেন। আগামীকাল শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) পণ্য চালানটি বেনাপোল বন্দর অথবা নওয়াপাড়া থেকে খালাস করা হবে।

সি এন্ড এফ এজেন্ট আলম এন্ড সন্সের প্রতিনিধি নাজমুল আরেফিন জনি বলেন, ভারত থেকে ট্রেনের একটি রেক-এ ৪৬৮ মেট্রিক টন আলু আমদানি করা হয়েছে। পণ্য চালানটি ছাড় করানোর জন্য আগামীকাল শনিবার বেনাপোল কাস্টম হাউজে কাগজপত্র সাবমিট করা হবে। কাস্টমস ও রেলস্টেশনের কার্যক্রম সম্পন্নের পর বেনাপোল বন্দর অথবা নওয়াপাড়ায় আনলোড করা হবে। নওয়াপাড়া থেকে আলুগুলো ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হবে।

বেনাপোল স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান জানান, রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের টাটা ট্রেডার্স নামক এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এই আলু আমদানি করেন। ভারতের মালদার আতিপ এক্সপোর্ট নামক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আলুর চালানটি রপ্তানি করেছেন। একটি ট্রেনের রেক-এ ৯৪৬০ ব্যাগ আলু আমদানি হয়েছে। যার ওজন ৪৬৮০০০ কেজি। পণ্য চালানটির আমদানি মূল্য ১০৭৬৪০ মার্কিন ডলার।

Header Ad
Header Ad

কারচুপিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দাবাড়ু, অভিযোগ রাশিয়ার

ভারতীয় দাবাড়ু ডি গুকেশ। ছবি: সংগৃহীত

চীনা দাবাড়ু ডিং লিরেনকে হারিয়ে দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন ভারতীয় দাবাড়ু ডি গুকেশ। এর মধ্য দিয়ে প্রথম ভারতীয় এবং সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড গড়লেন তিনি। ১৮ বছর বয়সী গুকেশ ৭.৫-৬.৫ স্কোরে জিতেছেন।

কিন্তু গুকেশের অভাবনীয় এ অর্জনের উল্লাসে পানি ঢেলে দিল রাশিয়ান দাবা ফেডারেশন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এক দিন না যেতেই বিতর্ক উঠেছে ডিং লিরেনের বিপক্ষে হওয়া গুকেশের ম্যাচটি নিয়ে।

রাশিয়ার দাবা সংস্থার প্রধান আন্দ্রে ফিলাতভের অভিযোগ, ডিং লিরেন ইচ্ছাকৃতভাবে ম্যাচ হেরেছেন। যে কারণে ফিডেকে তদন্ত শুরু করতে অনুরোধ করেছেন তিনি। এক সংবাদ সংস্থা এমনটা জানিয়েছে।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে গুকেশ হারিয়ে দেন লিরেনকে। ১৪তম ক্লাসিকাল ম্যাচটি জেতেন ভারতীয় দাবাড়ু। ১৩তম ম্যাচ শেষে দু’জনের পয়েন্ট সমান ছিল। শেষ ম্যাচ জিততেই সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হন গুকেশ।

কিন্তু সেই জয় নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। ফিলাতভের অভিযোগ, ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের শেষ ম্যাচ সকলকে অবাক করে দিয়েছে। চীনের দাবাড়ু যেভাবে হেরেছেন তা সন্দেহজনক। এটা নিয়ে ফিডের তদন্ত করা উচিত। লিরেন ম্যাচটা যে জায়গা থেকে হেরেছে, তা একজন প্রথম শ্রেণীর দাবাড়ুর পক্ষেও হারা কঠিন। চীনের দাবাড়ুর এই হার ইচ্ছাকৃত বলে মনে হচ্ছে।’’

 

এবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ ম্যাচেই আক্রমণাত্মক খেলেছেন গুকেশ। অন্যদিকে লিরেন বরাবরই রক্ষণাত্মক খেলছিলেন। শেষ ম্যাচেও সেটাই দেখা গেল। সময়ের চাপে সমস্যায় পড়েন লিরেন। প্রথম ৪০ চালের পর শেষ দিকে সময় কমছিল লিরেনের। তখন বোর্ডে গুকেশের রাজা ও দু’টি বোড়ে পড়ে ছিল। অন্য দিকে লিরেনের ছিল রাজা ও একটি বোড়ে। দেখে মনে হচ্ছিল, খেলা ড্র হবে। সেখানেই ভুল করে বসেন চীনা দাবাড়ু।

এদিকে, ম্যাচ শেষে লিরেন বলেছেন, ‘চাপের মধ্যে একটা চালে ভুল করে ফেলি। তারপরই গুকেশের মুখ দেখে বুঝতে পারছিলাম, ও কতটা আনন্দ পেয়েছে। তখন আর আমার কিছু করার ছিল না।’ গুকেশ বলেন, ‘আমি বুঝতে পারিনি যে লিরেন এত বড় ভুল করেছে। কয়েক সেকেন্ড পরে বুঝতে পারি। সেটা কাজে লাগাই।’

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘জমি পাওয়ার জন্য ড. ইউনূস স্যারকেও বাবা ডাকতে রাজি আছি’
বেনাপোল বন্দরে এলো আমদানিকৃত ৪৬৮ মেট্রিক টন আলু
কারচুপিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দাবাড়ু, অভিযোগ রাশিয়ার
রাগের বশে ২ বছরের শিশু সন্তানকে হত্যা করে পুকুরে ফেলেন মা!
দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ মারা গেছেন
শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান: তারেক রহমান
যদি রাজনীতিবিদরাই সংস্কার করেন, তাহলে ৫৩ বছর তারা কী করেছেন: রিজওয়ানা
পদত্যাগ করলেন পাকিস্তান টেস্ট দলের প্রধান কোচ
অভিনেতা আল্লু অর্জুন গ্রেপ্তার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরও ৮৫ বাংলাদেশি
তামিলনাড়ুতে হাসপাতালে আগুন, নারী-শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের নিন্দা ৫৩ নাগরিকের
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ইস্যুতে যা জানাল আমেরিকা
মৃদু শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা, আজও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৩০ ফিলিস্তিনি
গণমাধ্যমই দেশের ভালো-মন্দের অতন্দ্র প্রহরী: শাকিল উজ্জামান
পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে কুবি উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি
কুবির দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশের কাছে তুলে দিলো শিক্ষার্থীরা
তিন পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমে শুরুতেই দুই উইকেট