সারাবিশ্ব
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. ওমর হাসেম মারা গেছেন
বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, খ্যাতনামা হাদিস বিশারদ ও মিশরের সিনিয়র আলেম পরিষদের সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ড. আহমেদ ওমর হাসেম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
ড. আহমেদ ওমর হাসেমের জানাজা আজ জোহরের নামাজের পর আল-আজহার মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। পরে আসরের নামাজের পর তার নিজ গ্রাম শরকিয়া প্রদেশের জাগাজিগ সেন্টারের বানী আমের গ্রামের হাশেমি স্কয়ারে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
তিনি ১৯৪১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুল আদ-দ্বীন অনুষদ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং ১৯৬৭ সালে ‘আল-আলমিয়্যা’ ডিগ্রি অর্জন করেন। হাদিস বিভাগে সহকারী শিক্ষক হিসেবে তার একাডেমিক যাত্রা শুরু হয়।
পরে হাদিসে স্নাতকোত্তর (১৯৬৯) এবং পিএইচডি সম্পন্ন করে ১৯৮৩ সালে তিনি হাদিস বিজ্ঞানের অধ্যাপক হন। ১৯৮৭ সালে জাগাজিগে উসুল আদ-দ্বীন অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পান এবং ১৯৯৫ সালে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন।
শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি প্রশাসনিক দায়িত্বেও তিনি ছিলেন দক্ষ। তিনি মিশরের জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের মনোনয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনৈতিক ব্যুরো, শুরা কাউন্সিল, মিশরীয় রেডিও-টেলিভিশন বোর্ড, ধর্মীয় অনুষ্ঠান কমিটিসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ইসলামী চিন্তাধারায় তার অবদান বিশাল। তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে- ‘আস-সুন্নাহ আন-নাবাবিয়্যাহ ও উলূমুহা’, ‘উসুল আল-হাদিস’, ‘মিসর ও আল-আজহারের মুহাদ্দিসগণ’, ‘আল-আজমা আল-খলিজিয়্যাহ ফি মিজান আল-ইসলাম’, ‘আল-ইসরা ওয়াল-মিরাজ’, ‘আন-নিসা ফি আল-ইসলাম’, ‘রমাদান ওয়াস-সিয়াম’ ইত্যাদি।
তার রচনাসমূহ আজও ইসলামী গবেষণায় প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচিত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি মিশরকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি ছিলেন আল-আজহারের হজ মিশনের প্রধান এবং একাধিক দেশে অতিথি অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৯২ সালে তিনি ‘রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পুরস্কার’ এবং ‘প্রথম শ্রেণির বিজ্ঞান ও কলা পদক’ লাভ করেন। তার তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছে দুই শতাধিক মাস্টার্স ও পিএইচডি গবেষণা।
ড. আহমেদ ওমর হাসেমের মৃত্যুতে ইসলামী জগতে এক শূন্যতার সৃষ্টি হলো। তিনি ছিলেন একাধারে জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। ইসলামি বিশ্ব আজ হারালো এক উজ্জ্বল বাতিঘরকে।