বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২৭  

রিলিজিয়াস কমপ্লেক্সে আমাদের শেষ গন্তব্য ছিল আমর ইবনে আল আস মসজিদ। যদিও গির্জা চত্বরের গেট থেকে মসজিদের দূরত্ব পায়ে হেঁটে পাঁচ মিনিটের বেশি নয়, তারপরেও আমরা ফুটপাথে দাঁড়িয়ে আমাদের বাহনের অপেক্ষা করছিলাম; যেন মসজিদ থেকেই সরাসরি রাতের কায়রো ফেস্টিভ্যালে চলে যাওয়া যায়।

 

বাহনের চালক বয়সে তরুণ, সম্ভবত বুদ্ধিতে তরুণতর ও ইংরেজি ভাষা জ্ঞানের দিক থেকে তরুণতম। রানা ভাইয়ের কথা সে বুঝতে পারছিল না অথবা রানাভাই তাকে আমাদের অবস্থান বুঝাতে পারছিলেন না। ফলে অপেক্ষার সময় দীর্ঘ হচ্ছিল। এ সময় দেখলাম রাস্তার ওপারে ইজিপশিয়ান হস্তশিল্পের সম্ভারে সাজানো বিপণীবিতান সউক আল ফুসতাতের সামনে এক সারি পামগাছের মাথার  উপরে বেশ বড় গোল চাঁদ। সেদিন পূর্ণিমা ছিল কি না জানি না, তবে বাঁশ বাগান না থাকলেও সান্ধ্যকালীন এই চন্দ্রোদয়কে বলা যায় ‘পাম বাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই...।’

 পাম গাছের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে

কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ি এসে গেলে দেড় দুই মিনিটের মধ্যে আমরা মিশরের প্রাচীনতম মসজিদের সামনে পৌঁছে গেলাম। এখানে বিশাল চত্বরে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো সমস্যা নেই। তবে নামার পরপরই লক্ষ করলাম এতক্ষণ খ্রিস্টান ও ইহুদি উপাসনালয় এলাকার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও শান্ত সমাহিতভাব দেখে ধারণা হয়েছিল পুরো রিলিজিয়াস কমপ্লেক্সের চেহারাটা একই রকম হবে। কিন্তু মসজিদের সামনে নোংরা আবর্জনার স্তূপ ও খাবারের পরিত্যক্ত প্যাকেট ছড়িয়ে আছে। চত্বরে বেশ কয়েকটি বাঁধানো দ্বীপে সবুজ ঘাস পানির অভাবে বিবর্ণ হয়ে গেছে। বড় বড় স্বল্প সংখ্যক খেজুর গাছ ছাড়াও কয়েকটি সবুজ ঝোপের মতো গাছ কোনোমতে প্রাণ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদ চত্বরের ভেতরেই একটি আইল্যান্ডে বসে জমিয়ে যারা আড্ডা দিচ্ছে তাদের মনে হলো কায়রোর কিশোর গ্যাং।

 

হজরত ওমরের শাসনামলে খলিফার নির্দেশে আরব বাহিনী মিশর দখলের অভিযান চালায় আমর ইবনে আল আসের নেতৃত্বে। সেই কারণে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা আমর ইবনে আল আসকে মিশরের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে মিশর জয়ের পরে ৬৪১ খ্রিস্টাব্দেই তিনি শুরু করেছিলেন প্রথম মসজিদের নির্মাণকাজ। তার হাত ধরেই আফ্রিকায়, বিশেষ করে মিশরে ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছিল। রোমান দূর্গ ব্যাবিলনের ঠিক উত্তরে আল ফুসতাত নামের সেনা ছাউনি এলাকায় তিনি যে বসতি গড়ে তুলেছিলেন তারই সম্প্রসারিত রূপ বর্তমানের কায়রো।

আমর বিন আল আস মসজিদের প্রবেশ তোরণ

আদি নির্মাণকালে অর্থাৎ ৬৪১ খ্রিস্টাব্দে মসজিদের আয়তন ছিল দৈর্ঘ্যে ২৯ মিটার এবং প্রস্থ ১৭ মিটার। নবম শতকে এসে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের সংস্কারে এর আয়তন বাড়ানো হয়। আর বর্তমানে মসজিদের ভেতরের আয়তন সাড়ে ১৩ হাজার বর্গ মিটার। ভূমিকম্প ও আগুনে একাধিবার ধ্বংস ও ভস্মীভূত হয়েছে মসজিদ, আবার নির্মিত হয়েছে নতুন করে, ফলে প্রাচীন কাঠামো ও নির্মালশৈলীর কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। নেপোলিয়ানের মিশর আগ্রাসনের সময় ফরাসি সৈন্যেরা মিশর দখল করলে সুসভ্য বলে কথিত ফরাসিরা মসজিদের ভেতরের মেহরাব, মিম্বারসহ কাঠের কারুকাজ করা অলঙ্করণ খুলে নিয়ে জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহার করেছে।

আমর ইবনে আল আস ১৩৮০ বছর আগে নির্মিত হলেও এর পুনঃনির্মাণ, সংস্কার, পরিবর্ধন, পরিমার্জনের কাজ চলছে বছরের পর বছর ধরে। আমরাও একবিংশ শতাব্দীর নতুন সংস্কার কাজের মধ্যেই এসে পড়েছি। কাজেই মসজিদের প্রধান ফটক ও সামনের দীর্ঘ দেয়াল জুড়ে ধাতব পাইপের বেস্টনী দেওয়া। ইসলামে নারী অধিকার, নারীদের মর্যাদা ইত্যাকার  নানাবিধ গাল-গল্প প্রচলিত থাকলেও প্রধান প্রবেশ দ্বারে এসে জানা গেল এখানেও মসজিদে নারীদের প্রবেশাধিকার নেই। অতএব মাহবুবা বেগমকে বাইরে বসিয়ে রেখে আমি ও রানা ভাই একটা চক্কর দিয়ে আসার জন্যে মসজিদের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। প্রবেশ পথের পাশেই বাঁ হাতের দিকে আলখাল্লাধারী নিজের হাতে আমাদের জুতা নিয়ে খোপের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখলেন। আমরা এগিয়ে গেলাম বিশাল মসজিদের অভ্যন্তরে। 

মসজিদের একাংশ

মসজিদের বাইরেটা ঘিরে ভারতের বাদশাহী আমলের দূর্গের মতো দেয়াল এবং বিশাল তোরণ দেখে যতোটা উৎসাহিত হয়েছিলাম ভেতরটা দেখে ততোটাই হতাশ হলাম। মাঝের বেশ বড় একটা অংশ সংস্কার কাজের জন্যে ঘিরে রাখা হয়েছে। সামনের অংশ ও দুপাশের দীর্ঘ এলাকা জুড়ে কার্পেট পাতা। সারি সারি পিলারের মাথায় বাতি জ্বলছে, মাথার উপরে ঘুরছে ফ্যান। অনেকেই কার্পেটে বসে কিংবা পিলারের গায়ে লাগানো চেয়ারে বসে নামাজ পড়ছেন। এই ভর সন্ধ্যা বেলাতেও দু-চারজন মেঝেতে নরম কার্পেটে শুয়ে উপরে পাখার বাতাসে দিব্যি আরামে ঘুমিয়ে পড়েছেন।

মসজিদের দীর্ঘ কলামের সারি এবং দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার বিশালত্ব ছাড়া কোনো বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ল না। নির্মাণ বা স্থাপত্যশৈলী ছাড়া মসজিদের ভেভরে আসলে তেমন কিছু দেখার থাকে না। 
কায়রোর রঙিন আলোয় সাজানো সড়ক দ্বীপ ও পথের দুপাশে আলো ঝলমলে রাস্তা ধরে আমরা কায়রো ফেস্টিভ্যাল সিটির দিকে এগোচ্ছি। পথে ভাবছিলাম একেশ্বরবাদী তিনটি ভিন্ন এবং অনেক দেশে অনেক কালেই পরস্পরের প্রতি যুদ্ধাংদেহী তিন ধর্মের এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কীভাবে সম্ভব হয়েছে! আধুনিক মিশরের মানুষের মনে সেক্যুলারিজমের মূল মন্ত্র ঢুকিয়ে দিয়েছে?

শুধু এই এলাকায় নয়, এদেশে সব জায়গায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্ম নিয়ে অনুভূতির কোনো বাড়াবাড়ি নেই। শতকরা ৯৪ ভাগ মুসলমানের দেশে ৫ ভাগ খ্রিস্টান ও এক শতাংশের কম ইহুদি জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা আছে বলে মনে হয় না।  কায়রো ফেস্টিভ্যাল সিটি শুনে আমার মনে হয়েছিল হয়তো বাণিজ্য মেলার মতো অস্থায়ী কোনো উৎসব চলছে। কিন্তু উৎসব এলাকায় প্রবেশের পরে রঙিন আলোয় উদ্ভাসিত ভবনের সারি আর আঝোরে ঝরতে থাকা বর্ণবহুল ফোয়ারা পাশ কাটিয়ে বিখ্যাত চেইন শপ ‘ইকিয়া’র সামনে গাড়ি থেকে নামার পরে চমক ভাঙল। বুঝলাম এটি একটি স্থায়ী উৎসব, প্রকৃতপক্ষে কেনাকাটার মহোৎসব!

মসজিদের অভ্যন্তরে

অভিজাত আবাসিক এলাকা, রেস্টুরেন্ট রিসোর্ট, খেলাধুলা ও বিনোদনের বিপুল আয়োজন ছাড়াও ফেস্টিভ্যাল সিটি মল নামে বিশাল শপিং কমপ্লেক্সটির আয়তন আউটডোর ইনডোর মিলিয়ে সোয়া ২ লাখ বর্গ মিটার। ১ লাখ ৬০০ হাজার বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে ছোট বড় মিলিয়ে বিপণী কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩০০। ইকিয়া ছাড়াও পোশাকে মার্ক অ্যান্ড স্পেন্সার, এইচ অ্যান্ড এম, জারা, জুতা স্যান্ডেলের আদিদাস, চার্লস অ্যান্ড কিথ, নাইকি, হুশপাপি, মোবাইল ফোন নকিয়া, স্যামসুং, হুওয়াই আর খাবারের জন্য ম্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি, স্টারবাকের মতো বিশ্বখ্যাত ব্রান্ডের ছড়াছড়ি। এ ছাড়া কেরিফোরের মতো সব পেয়েছি সম্ভার সাজানো দোকান বা মিশরের স্থানীয় ব্রান্ডের পণ্যেরও কোনো কমতি নেই।

কথা ছিল ৮টার মধ্যে আমরা ইকিয়ার সামনে চলে এলে সৌরভ আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে। আমরা পৌঁছাবার কিছুক্ষণের মধ্যেই সৌরভ ফোন করে জানাল একটা ঝামেলায় আটকে যাওয়ায় ওর আসতে ঘণ্টাখানেক দেরি হবে। আমরা যেন এই সময়টা শপিংমলে একটু ঘুরে ফিরে কাটাই। বৈমানিক রাজি অবশ্য এরই মধ্যে এসে হাজির। একটা ঘণ্টা শপিংমলে ঘুরে কী করব ভাবতে ভাবতে সমানেই ইকিয়াতে ঢুকে পড়ালাম এবং তারপরে এক ঘণ্টারও বেশি সময় কোন দিক দিয়ে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না।

ড্রইংরুমে সোফাসেট, টেবিল, বই পুস্তকের আলমারি, জানালা দরজার পরদা, কিংবা বিছানা বালিশসহ খাট পালঙ্ক, কাপড় চোপড়ের ওয়ারড্রোব, মাথার কাছে টেবিল ল্যাম্প দিয়ে তৈরি রীতিমতো বেড রুমে ইচ্ছে করলেই শুয়ে পড়া যায়। তাও একটি দুটি নয়, বিভিন্ন ডিজাইনের আসবাবে সাজানো ঘরের পরে ঘর, গোটা ১০/১২ তো হবেই। তেমনি নানা আকার-আকৃতির রান্নাঘরের সরঞ্জামসহ সাজানো একের পর এক রান্নাঘর। বারান্দা-ব্যালকনি সাজাবার গাছপালা ফুলের টব, বসার জন্যে রকিং চেয়ার, গার্ডেন চেয়ার সব কিছুই প্রস্তুত।

ইকেয়ায় সাজানো রান্নাঘর

রানা ভাই বললেন, ‘একটা পুরো বাড়ি সাজাবার জন্যে যা কিছু দরকার এখানে একবার ঢুকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হেঁটে গেলে সবই পাওয়া যাবে। পছন্দ করে অর্ডার দিয়ে যাবেন, বাড়িতে ড্র্ইং ডাইনিং বেডরুম কিচেন সব সাজিয়ে দিয়ে আসবে।’

আমি বললাম, ‘তা ঠিক, তবে পকেটে যথেষ্ট ইজিপশিয়ান পাউন্ড অথবা একটা বড় অংকের লিমিটসহ ক্রেডিট কার্ড থাকতে হবে।’

আসবাবপত্র ও রান্নার এলাকা পার হবার পরে দেখা গেল, একই চত্বরে নিজেদেরই রেস্টুরেন্ট, কফি কর্নারে শীতল কিংবা ঊষ্ণ পানীয়ের ব্যবস্থা। কেউ ক্লান্ত বাইরে বেরিয়ে যেতে চাইলেও তার দরকার হবে না। এরপর জামা-কাপড়, জুতা-ছাতা, হাতঘড়ি-মোবাইল ফোন, প্রসাধন সামগ্রী, ছোটদের পোশাক ও খেলনা, গাছ-পালা, মানুষ ও প্রাণীদের প্যাকেটজাত খাদ্য-অখাদ্যসহ একই ছাদের নিচে এত কিছু দেখতে দেখতে সত্যিই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। খবর পেলাম সৌরভ এসে পড়েছে।

আমরা ইকিয়া থেকে বেরিয়ে কায়রো ফেস্টিভ্যাল শপিংমলের সুবিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ভবনগুলোর বিভিন্ন ফ্লোরের কয়েকটা দোকনে একটু করে ঢুকে ঢুকে কোথাও পণ্য কোথাও মূল্য আবার কোথাও কিছুই না দেখে বেরিয়ে এলাম। ঘুরতে ঘুরতে আমেরিকান টুরিস্টারের সেলস সেন্টারে ট্রাভেল ব্যাগ দেখতে দেখতেই মনে হলো একটা কিনে ফেলা যায়। কায়রো আসার সময় না হলেও ফেরার সময় কাজে লাগতে পারে। তা ছাড়া যথেষ্ট পাউন্ড পকেটে না থাকলেও ক্রেডিট কার্ড তো আছেই। 

নামাঙ্কিত রুটি

দেশি-বিদেশি, ব্রান্ডেড ও স্থানীয় মিলিয়ে ফেস্টিভ্যাল মলে খাবারের দোকানের সংখ্যা ৯৫টি। আমি হয়তো সাকূল্যে ৮-১০টার নাম জানি, কাজেই কোথায় রাতের খাবার খেতে যাব তা নিয়ে আমার চিন্তার কোনো কারণ নেই। সৌরভ ও রাজি দুজনেই কায়রোর পুরোনো পথিক, কাজেই রেস্তোরাঁ নির্বাচনের দায়িত্ব তাদের। হাতে নতুন কেনা ট্রলি ব্যাগ টেনে আমরা নিসানতাসিতে এলে বুঝলাম সৌরভ জায়গাটা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল। নিসানতাসি জাতে তুর্কি বংশোদ্ভুত, রিভিউতে পাঁচে পাঁচ পাওয়া অভিজাত রেস্টুরেন্ট। আমাদের পাঁচজনের জন্যে এক প্রান্তে বেশ বড় একটা টেবিলে বসলাম। ডান দিকে কাচের জানালার ওপারে কয়েকটি রেস্টুরেন্টের নাম জ্বলছে নিয়ন সাইনে। খানিকটা সামনে ফোয়ারা থেকে ঝরা পানি প্রতি মুহূর্তে রং বদলাচ্ছে।

মিশরে তুর্কি খাবার বেশ জনপ্রিয় আর অথেন্টিক তার্কিশ ডিশের জন্যে নিসানতাসির নাম সবার শীর্ষে। আমাদের মুখোমুখি টেবিল উপচে পড়া খাবার নিয়ে বসেছিল তিন তরুণী। খাবার তৈরির অপেক্ষার সময়টা যাতে একেবারে নির্জলা না যায়, সে জন্যে আমাদের টেবিলে এসেছে ছোলা ভেজানো চা। আমি নিসানতাসির মেন্যু উল্টেপাল্টে দেখছিলাম। অপরিচিত খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে পরিচিত কোশারি, ফালাফেল, মুসাকা, বাকালাভাসহ অসংখ্য চর্ব-চোষ্য-লেহ্য-পেয় সুস্বাদু খাবারের ছবির সঙ্গে যে দাম উল্লেখ করা হয়েছে তা আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে হলো। হঠাৎ করেই কাছাকাছি জ্বলে ওঠা আগুনের শিখা ও মিউজিকের সঙ্গে খন্তা-ছুরির খটখটাখট তাল তরঙ্গ শুনে মেন্যু থেকে মনোযোগ ছুটে গেল। 

গ্রিলের কেরামতি

আমাদের টেবিলের কাছেই একটা গ্রিল ট্রলি চলে এসেছে তার উপরে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মোড়ানো লবণ দিয়ে ঢাকা আস্ত ভেড়ার ঠ্যাংয়ের উপরে ক্ষণে ক্ষণে জ্বলে লাফিয়ে উঠছে আগ্নিশিখা। আর উপস্থিত শেফের হাতের হাতা-চামচ সৃষ্টি করে চলেছে বারবিকিউ মিউজিক! তবে বিষয়টা বারবিকিউ নয়, শিজলার তো অবশ্যই নয়। নাম জানার আগেই আমি ছবি তুলবার জন্যে ক্যামেরা হাতে উঠে পড়েছিলাম।

সৌরভ বলল, ‘একটু অপেক্ষা করেন। আমাদের টেবিলেও একই জিনিস আসছে।’ সেই একই জিনিস আসার আগেই আমাদের টেবিলও নানা খাবারে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। তবে বিস্ময়ের একটু বাকি ছিল। রেস্টুরেন্টের বেকারি থেকে সদ্য তৈরি রুটি নিয়ে শেফ মহোদয় হাজির হয়ে বললেন, ‘এই রুটিতে যার নাম লেখা আছে, তিনিই কেবল এই রুটি গ্রহণ করবেন।’

রাজি ও রানা ভাই নিসানতাসির  ডিনারে

দেখা গেল লম্বা রুটির উপরে কালোজিরা ছড়িয়ে ইংরেজিতে লেখা হেনা। কিছু পরেই বেজে উঠল আনন্দ সংগীত, তালে তালে খটাখট শব্দ তুলে আগুনের শিখা ছড়িয়ে এসে গেল গ্রিলড ল্যাম্বের বিশাল এক ট্রে। ক্ষণে ক্ষণে লাফিয়ে ওঠা আগুনের হলকা থেমে গেলে লবণের স্তর সরিয়ে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ভেতর থেকে নিপুণ শিল্পীর মতো ভেতরের মাংসের আস্ত একটি স্তূপ বের করে টেবিলে পরিবশেন করলেন কেতাদুরস্ত শেফ!  নিসানতাসির অসাধারণ একটি ডিনার শেষ করে বাসায় ফিরতে রাত প্রায় সাড়ে ১১টা বাজল। সৌরভ গাড়িটা পার্কিংয়ে নিয়ে যাওয়ার আগেই গাড়ি থেকে নেমে রানা ভাই বললেন, ‘ফলের ব্যাগটা?’

না, গাড়িতে নেই। তাহলে কি রিলিজিয়াস কমপ্লেক্স থেকে ফেস্টিভ্যাল সিটিতে আসার গাড়িতে থেকে গিয়েছিল, নাকি নিসানতাসির টেবিলের কোণায় থেকে গেছে! ঘটনা যাই হোক, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে রানা ভাইয়ের শেষ মন্তব্য, ‘খাবারের প্রত্যেক শস্য দানায় নাকি ভোক্তার নাম লেখা থাকে। এই ফলগুলোতে আমাদের কারো নাম লেখা ছিল না।’ 

চলবে... 

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২৪    

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২১

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-২০

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-১৯

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-১৮

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা: পর্ব-১৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১১

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১০

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৯

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৮

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

এসএন 

Header Ad

বেঁকে যাওয়া রেললাইনে কচুরিপানা থেরাপি

ছবি: সংগৃহীত

তীব্র তাপদাহে গাজীপুরে বেঁকে যাওয়া রেলপথ মেরামতে কচুরিপানা, কাঁদা ও পানি থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ইস্ট বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবু জাফর বলেছেন, সোমবার দুপুরে তীব্র তাপদাহে গাজীপুরের কালীগঞ্জে আড়িখোলা এলাকায় প্রায় ১৫ফুট পরিমাণ রেলপথ বেঁকে যায়।

এতে ওই পথে ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। পরে মেরামত করে প্রায় এক ঘন্টা পর আবার ট্রেন চলাচল শুরু করে।

তিনি বলেন, রেলপথে তাপমাত্রা ৫০ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা তার উপরে উঠলে রেলপথ বেঁকে যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দেয়। সেদিন সেখানকার রেললাইনে তাপমাত্রা ৫৫ডিগ্রি'র মতো ছিল। তাই ঢাকা-নরসিংদী রেলরুটের কালীগঞ্জ উপজেলার আড়িখোলা এলাকায় রেল লাইন বেঁকে যায়।

এ ধরনের বেঁকে যাওয়া রেলপথ ঠিক করতে প্রথমেই রেলপথ ঠান্ডা করা দরকার হয়। একাজে ব্যবহারে সেখানে বরফ না পাওয়ায় বিকল্প হিসেবে জলাশয় থেকে কচুরিপানা, কাঁদা ও ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ কচুরিপানা বা কাঁদা দীর্ঘ সময় পানি/ঠান্ডা অবস্থা ধারণ করে রাখতে পারে। গাজীপুরেও ওইসব প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া গেছে।

উচ্চতাপ থাকা অবস্থায় রেললাইন চাপ প্রয়োগ করলে তা আরো বেঁকে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। আর রেল লাইন ঠান্ডা হলে তা অনেকটাই আগের অবস্থায় চলে যায়। পরে প্রয়োজন হলে চাপ প্রয়োগ করে বাকি অংশ ঠিক করা সম্ভব হয়। উচ্চ তাপমাত্রা থেকে তাপমাত্রা ৩০/৩২ ডিগ্রিতে নেমে আসার পর চাপ প্রয়োগ করা হয়। গাজীপুরেও এ থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল রুটের আড়িখোলা স্টেশনের অদূরে (পশ্চিম দিকে) চুয়ারিয়াখোলা এলাকার কাজী বাড়ি নামকস্থানের রেললাইন বেঁকে যায়। বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আড়িখোলা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার দিলীপ চন্দ্র দাস।

স্টেশন মাস্টার দিলীপ চন্দ্র দাস বলেন, তীব্র গরমে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল রুটের আড়িখোলা স্টেশনের অদূরে (পশ্চিম দিকে) চুয়ারিয়াখোলা এলাকার কাজী বাড়ি নামকস্থানে অন্তত ১৫ ফুট রেললাইন বেঁকে যায়।

বিষয়টি জানার পর রেলওয়ে প্রকৌশলীদের পরামর্শে রেলপথে পানি, কচুরিপানা ও কাঁদা মাটি দিয়ে বেঁকে যাওয়া অংশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে তা মেরামত করা হয়। মেরামতের পর দুটি ট্রেন ঘটনাস্থল দিয়ে ধীর গতিতে গন্তব্যে চলে গেছে। ডাবল লাইনের অন্য লাইন দিয়ে রেল চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

আড়িখোলা রেলওয়ে স্টেশনের অধীনে কর্মরত কি-ম্যান (দড়িপাড়া-বড়নগর) মো. বাদশা মিয়া বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আড়িখোলা রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করে। পরে আড়িখোলা-পূবাইল স্টেশনের মাঝখানে চুয়ারিয়াখোলা এলাকার কাজী বাড়ি নামকস্থানে টহলরত রেলওয়ে কর্মচারীরা রেলপথ বাঁকা দেখতে পান। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালে, তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেন। এসময় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনটি আড়িখোলা রেলওয়ে স্ট্রেশনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

তিনি আরও বলেন, পানি, কচুরিপানা ও কাঁদা মাটি দিয়ে বেঁকে যাওয়া অংশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর এক ঘণ্টা পর ওই ট্রেনটি ধীর গতিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বিকেল ৪টার দিকে তিতাস কমিউটার নামের আরও একটি ট্রেন ধীর গতিতে বেঁকে যাওয়া স্থান অতিক্রম করে।

এবারের আইপিএলে কি আউট হবেন না ধোনি?

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন সেই ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলেই। বয়সটাও এখন ৪৩ ছুঁই ছুঁই। ব্যাট হাতে দেখা যায় শুধু আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। প্রতিবার দলের নেতৃত্বে থাকলেও এবার চেন্নাইকে নেতৃত্বও দিচ্ছেন না, দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের হাতে। ব্যাটসম্যান হিসেবেও নিজের ভূমিকা বদলেছেন। উইকেটে আসেন হাতে গোনা কিছু বল বাকি থাকতে। এসেই ঝড় তোলেন।

যখনই ক্রিজে আসেন, চার-ছক্কা মেরে রানের গতি বাড়িয়ে দেন। এই নতুন ভূমিকাতেও মহেন্দ্র সিং ধোনি পুরোপুরি সফল। মজার ব্যাপার হলো, এমন ‘হাইরিস্ক গেম’ খেলেও ধোনি এবারের আইপিএলে এখন পর্যন্ত আউট হননি।

ধোনি এবারের আইপিএলে এখন পর্যন্ত ম্যাচ খেলেছেন ৯টি, ব্যাটিং করেছেন ৭ ইনিংসে। ৭ ইনিংস ব্যাট করে খুব বেশি বল খেলেননি—৩৭টি। এই ৩৭ বলে রান করেছেন ৯৬, স্ট্রাইকরেট—২৫৯.৪৫। ছক্কা মেরেছেন ৮টি, চার ৯টি। বল খেলার সংখ্যাটা অবশ্যই খুব বেশি নয়। তবে মনে রাখতে হবে ধোনি এই ৩৭ বলের প্রায় প্রতিটিতেই খেলেছেন বাউন্ডারির জন্য। সে ক্ষেত্রে আউট হওয়ার ঝুঁকি থাকে আরও বেশি।

ধোনি কয়েকটি বলের জন্য ক্রিজে এসে ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন, এমন উদাহরণও আছে। এই যেমন গত ১৪ এপ্রিল ‘আইপিএল ক্লাসিকো’য় মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে।

ইনিংসের ২০তম ওভারে উইকেট এসে ৪ বলে ৩ ছক্কায় করেন ২০ রান। সেই ম্যাচটি চেন্নাই শেষ পর্যন্ত ২০ রানেই জেতে। এরপরের ম্যাচেই লক্ষ্ণৌর বিপক্ষে করেন ৯ বলে ২৮ রান।

সেদিন অবশ্য ম্যাচটি জিততে পারেনি চেন্নাই। তবে ম্যাচের শেষ ওভারে যেভাবে ১০১ মিটারের ছক্কা মেরেছিলেন ধোনি, তাতে তাঁর বয়সটা আসলেই ৪২ কি না, তা নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ জেগেছিল! ধোনি এরপর আরও দুই ম্যাচে ব্যাটিং করেছেন। এই ২ ম্যাচ মিলিয়ে খেলার সুযোগ হয়েছে মাত্র ৩ বল, তাতেই দুটি চার মেরেছেন।

গত মৌসুম থেকেই মূলত ধোনি চেন্নাইয়ের ইনিংসের একদম শেষভাগে ব্যাটিংয়ে নামতে শুরু করেন। গত আইপিএলে ১২ ইনিংসে বল খেলেছিলেন মাত্র ৫৭টি, রান করেছিলেন ১০৪। এবারও নিশ্চয় আরও কিছু বল খেলবেন ধোনি।

ফিনিশার হিসেবে ধোনি এমনিতেই কিংবদন্তি। তবে তাঁর ম্যাচ শেষ করার নিজস্ব একটা ধরন ছিল। শুরুতে কিছু সময় নিতে পছন্দ করতেন। এরপর শেষে গিয়ে সেটা পুষিয়ে দিতেন। তবে এখন ধোনি জানেন, সেই সুযোগটা তিনি পাবেন না। শরীরটাও হয়তো সায় দেবে না। তাই নতুন ভূমিকা বেছে নিয়েছেন। আর কীভাবে সেই ভূমিকায় সফল হতে হয়, সেটার প্রমাণ তো ম্যাচের পর ম্যাচ করেই যাচ্ছেন।

 

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রধান পাঁচ ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং সহযোগিতার পাশাপাশি এর বাইরে কোনো বিষয়ে আগ্রহী কিনা-মতামত জানতে চেয়েছে ওয়াশিংটন।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকায় অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব (দ্বিপাক্ষিক-পূর্ব ও পশ্চিম) ড. মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সভায় অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাঁচটি প্রধান ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং সহযোগিতা সম্প্রসারণে দুই দেশের চলমান অংশীদারিত্বের আরও ব্যাপ্ত করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের পাঁচটি ক্ষেত্র এবং এর বাইরে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে মতামত জানতে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) অনুরোধ করেছে।

ঢাকার এক দায়িত্বশীল কূটনীতিক বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি লিখেছেন, সেখানে বলা আছে, দেশটির কোন কোন খাতে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতাম, সেগুলোর ব্যাপ্তি আরও কীভাবে বাড়ানো যায় তা আলোচনা হয়েছে। এটা আসলে নতুন কিছু না। আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেসব এনগেজমেন্ট আছে সেগুলো কোন পর্যায়ে রয়েছে বা নতুন করে কোনো বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা—সেগুলো আমরা আলোচনা করি বা কোনো কনসার্ন থাকলে সেটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো।

যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের পাঁচটি খাত সম্পর্কে এ কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার মধ্যে একটি অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানো, পরিবেশগত সুরক্ষা বা জলবায়ু পরিবর্তন; এক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তর বা বিনিয়োগের বিষয় রয়েছে। তৃতীয়ত, নিরাপত্তা সহযোগিতা—এটার মধ্যে এন্টি টেরোরিজম অ্যাসিসটেন্ট রয়েছে; পুলিশ-র‌্যাবের তহবিল রয়েছে, সমুদ্র নিরাপত্তার সংক্রান্ত অংশীদারত্ব ইস্যু রয়েছে। তারপর মানবিক সহায়তা বিষয় রয়েছে, যা মধ্যে রোহিঙ্গাদের সহায়তার বিষয় যুক্ত। এছাড়া রাইটস ইস্যুস আছে; এর মধ্যে মানবাধিকার, গণতন্ত্র বা লেবার রাইটস ইস্যু আছে।

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশ সরব অবস্থানে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভোট শেষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে ওয়াশিংটন জানায়, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। পরবর্তী সময়ে ভোট নিয়ে নিজেদের অনঢ় অবস্থানের জানান দিলেও বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশের কথা জানান খোদ ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির ‘আলোচিত’ রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রও বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলনে একই বার্তা দেন।

তবে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠিতে। চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী তার সরকার।

ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাইডেনের চিঠির পর ওই মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফর করেন তার (মার্কিন প্রেসিডেন্টের) বিশেষ সহকারী ও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক এইলিন লাউবাখেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। ওই প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-ইউএসএআইডির সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার ছিলেন। আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রথম সফর ছিল।

ওই সফরে এইলিন লাউবাখেরের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বৈঠক শেষে ড. হাছান জানিয়েছিলেন, তারাও (যুক্তরাষ্ট্র) চায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় এবং আমরাও চাই একটি নতুন সম্পর্ক। যেহেতু দুদেশেরই সদিচ্ছা আছে, সুতরাং এই সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, গভীরতর ও উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের উভয় দেশ উপকৃত হবে।

অন্যদিকে, বাইডেনের বিশেষ সহকারী জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করছেন।

বাইডেনের সেই চিঠির প্রতিউত্তরের একটি কপি এইলিন লাউবাখেরের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। এছাড়া ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান হোয়াইট হাউজে ওই চিঠির মূল কপি পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এক বিবৃতিতে ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যকার অংশীদারত্ব এবং দুই দেশের নাগরিকদের সম্পর্ক আরও জোরদারের প্রত্যাশা করে।

সবশেষ, চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ব্রেন্ডান লিঞ্চের নেতৃত্ব এক‌টি প্রতি‌নি‌ধিদল নিয়ে ঢাকা সফর করে গেছেন।

মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মো শহীদুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবাস্তয়নে যে সব রাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন সেসব রাষ্ট্রসমূহের সমর্থন আদায়ে কাজ করছে তারা। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুবই সিরিয়াস বিষয়। এই কৌশলে এবং একইসঙ্গে চীনকে প্রতিহত করতে বাংলাদেশকে নিবিড়ভাবে পেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

গত বছরের (২০২৩) মে মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়। সেখানে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিতে দেশটির অব্যাহত নজরদারির কথা বলা হয়। পরবর্তী সময়ে অব্যাহতভাবে দেশটি নির্বাচন ইস্যুতে বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের চাপ প্রয়োগ করতে দেখা গেছে।

৭ জানুয়ারির ভোটে ২২৩টি আসনে জিতে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ।

গত ১৭ জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সেদিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের পারস্পরিক স্বার্থকে এগিয়ে নিতে আগামী মাসগুলোতে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার প্রতীক্ষায় আছি।

সর্বশেষ সংবাদ

বেঁকে যাওয়া রেললাইনে কচুরিপানা থেরাপি
এবারের আইপিএলে কি আউট হবেন না ধোনি?
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র
মানুষ আজ ন্যূনতম অধিকার থেকেও বঞ্চিত: মির্জা ফখরুল
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার
নওগাঁয় মাঠে ধান কাটতে গিয়ে গরমে কৃষকের মৃত্যু
আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রী
মে দিবসের কর্মসূচিতে এসে গরমে অসুস্থ শ্রমিকের মৃত্যু
টাঙ্গাইলে সেনা সদস্য পরিচয়ে প্রতারণা
ভারতের নির্বাচনি প্রস্তুতি দেখার আমন্ত্রণ পেল আওয়ামী লীগ
বঙ্গবন্ধু বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সর্বদা: খাদ্যমন্ত্রী
পুলিশ হেফাজতে সালমান খানের বাড়িতে হামলার অস্ত্রদাতার আত্মহত্যা
দুই মাস পর ইলিশ ধরতে নেমেছেন জেলেরা
গরমে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাচ্ছেন? হতে পারে বড় বিপদ
নিজ এলাকায় জানাজায় গিয়ে মোবাইল হারালেন ধর্মমন্ত্রী
মানুষের মস্তিষ্কের আকার বড় হচ্ছে!
শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদলেন র‍্যাব কর্মকর্তা
বিমানের খাবার নিয়ে অসন্তোষ প্রধানমন্ত্রী, দুইদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ
ছাত্রলীগ নেতাকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রদলের বিরুদ্ধে
শেখ হাসিনার অধীনে কেয়ামত পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না: রিজভী