আইন আদালত

তদন্ত কর্মকর্তাকে ফের জেরা করবেন শেখ হাসিনার আইনজীবী


ঢাকাপ্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪২ এএম

তদন্ত কর্মকর্তাকে ফের জেরা করবেন শেখ হাসিনার আইনজীবী
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আজ ফের তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে জেরা করবেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

বুধবার (৮ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এই জেরা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা পরিচালনা করেন আইনজীবী আমির হোসেন। সেদিন তিনি তদন্ত কর্মকর্তার দেওয়া সাক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন সাফাই প্রশ্ন উত্থাপন করেন। বিশেষ করে, জুলাই গণহত্যার ঘটনায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর পেছনে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী “বাধ্য” ছিল — এমন যুক্তি খণ্ডন করেন তিনি। দীর্ঘ সময় জেরা চললেও শেষ না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল আজ পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করে।

মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, তারেক আবদুল্লাহ ও মামুনুর রশীদসহ অন্যরা।

এর আগে ৬ অক্টোবর আলমগীরের জেরার প্রথম দিন ছিল। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি শেখ হাসিনাসহ তিনজন আসামির বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন। এ মামলায় তিনি রাষ্ট্রপক্ষের ৫৪তম বা সর্বশেষ সাক্ষী। জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, এবং ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।

২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যে তিনি ট্রাইব্যুনালে নিজের জব্দ করা বিভিন্ন ভিডিও ও তথ্য উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদন, বিবিসি ও আল-জাজিরাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়। সাক্ষ্যে তিনি জানান, গত বছরের জুলাই-আগস্টে আন্দোলন দমনে ছাত্র-জনতার ওপর তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি চালানো হয়েছিল।

২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া সাক্ষ্যগ্রহণে তদন্ত কর্মকর্তা মোট ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন, যেখানে জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ দৃশ্য ফুটে ওঠে।

সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার এই মামলায় এখন পর্যন্ত ২৫ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। শেষ সাক্ষীর জেরা শেষে মামলাটি যুক্তিতর্ক ও রায়ের পর্যায়ে যাবে বলে জানা গেছে।

২৪ সেপ্টেম্বর মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা সাক্ষ্য দেন এবং পরে তাকেও জেরা করেন আমির হোসেন।

মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যিনি ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। বিভিন্ন সাক্ষ্যে গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশজুড়ে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। এসব ঘটনায় শেখ হাসিনা, কামালসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে।

মামলার ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগে তথ্যসূত্র রয়েছে ২,০১৮ পৃষ্ঠায়, জব্দ তালিকা ও প্রমাণাদি ৪,০০৫ পৃষ্ঠায়, এবং শহীদদের তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে ২,৭২৪ পৃষ্ঠায়। সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন ৮১ জন।

এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। মামলার সব সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে এখন সবার নজর যুক্তিতর্ক ও রায় ঘোষণার দিকেই।