হিলিতে ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে মা-মেয়েকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলিতে সাইকেল চুরির ঘটনায় চরম বর্বরতার শিকার হয়েছেন এক নারী ও তার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে। স্থানীয় নয়ানগর গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে প্রকাশ্যে তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে।
জানা গেছে, গত ১৭ মে শনিবার ফারুক হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে একটি সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে। পরদিন সেই সাইকেল প্রতিবেশী সিদ্দিক হোসেনের বাড়িতে পাওয়া গেলে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে তা উদ্ধার করে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। তবে পরবর্তীতে ফারুক হোসেনের স্ত্রী ও সিদ্দিকের স্ত্রীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে উত্তেজনার এক পর্যায়ে সিদ্দিক তার প্রতিবেশী ফারুকের স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনার জেরে ১৯ মে সোমবার বিকেলে ফারুক হোসেন, তার শ্যালকসহ কয়েকজন লোক সিদ্দিক হোসেনের স্ত্রী ও কিশোরী মেয়েকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে এনে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই নির্যাতনের দৃশ্য ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার পর থেকে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অভিযুক্ত ফারুকের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
সিদ্দিক হোসেনের মা জরিনা বেগম বলেন, “সাইকেল চুরি করলে ছেলের শাস্তি হোক, কিন্তু তার স্ত্রী ও নাবালিকা মেয়ের কী দোষ? তাদের এভাবে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন অমানবিক ও অন্যায়।”
প্রতিবেশী সূর্য বেগম বলেন, “চুরি যাওয়া সাইকেল ফিরে পাওয়া গেছে। এরপর একজন নারী ও মেয়েকে জনসমক্ষে খুঁটিতে বেঁধে মারধর করা বর্বরতা ছাড়া কিছুই নয়।”
অন্যদিকে অভিযুক্ত ফারুক হোসেনের স্ত্রী এলেন বেগম দাবি করেন, “আমার ওপর হামলার পর আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে আমার ভাই এসে মা-মেয়েকে খুঁটিতে বেঁধে রাখে যাতে তারা পালাতে না পারে। তবে পরে গ্রামের অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।”
স্থানীয় প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, “ঘটনার প্রকৃত রূপ যা-ই হোক, এভাবে কাউকে খুঁটিতে বেঁধে রাখা অনৈতিক ও বেআইনি। দেশে আইন আছে, এরই মাধ্যমে বিচার হওয়া উচিত।”
হাকিমপুর থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, “ঘটনার পর উভয় পক্ষ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।”
এই বর্বর ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী এবং সামাজিক সচেতন মহল।
