এগারো বছরে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জলতরঙ্গ’

১১তম বর্ষে পদার্পন উপলক্ষে গান ও কবিতার আসর। ছবি: সংগৃহীত
এক দশক পূর্ণ করে এগারো বছরে পা রাখল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জলতরঙ্গ’। দেশীয় সংস্কৃতি, সংগীত ও কবিতার চর্চায় নিবেদিতপ্রাণ এই সংগঠনটি বরাবরই ব্যতিক্রমী আয়োজনে সাড়া ফেলেছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। এবারের বার্ষিক আয়োজনে তার ব্যতিক্রম হয়নি। উপলক্ষ ছিল সংগঠনের এগারো বছরে পদার্পণ। সেই আনন্দ ভাগাভাগি করতে শুক্রবার (১৬ মে) সন্ধ্যা ৭টায়, ঢাকার ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় এক অনন্য গান ও কবিতার আসর।
অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বেই মঞ্চে আসেন বিশেষ অতিথি, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তার ২০ মিনিটের বক্তব্য ছিল অত্যন্ত মননভরা ও প্রেরণাদায়ী। তিনি বলেন, “সংস্কৃতি শিক্ষার চেয়েও বড়, সভ্যতার চেয়েও বড়। সংস্কৃতিই জাতির মেরুদণ্ড। পুঁজিবাদ কীভাবে মানুষকে পণ্যে পরিণত করে তা আমরা সংস্কৃতির মাধ্যমে বোঝাতে পারি।”
তার বক্তব্যে ছিল সমাজ ও সংস্কৃতির সম্পর্ক, নিপীড়ন ও প্রতিরোধের চিত্র, আর মানুষের মনন ও মূল্যবোধের চর্চার গুরুত্ব। পুরো মিলনায়তন তখন পিনপতন নীরব, দর্শক-শ্রোতার চোখেমুখে গভীর মনোযোগ।
এরপর মঞ্চে আসেন দুই বিস্ময়কর শিশুশিল্পী- সারেঙ্গী বাদক ইউসুফ আহমেদ ও মাহিমা মেহজাবিন। এই দুই প্রতিভাবান শিল্পী নিজেদের পরিবেশনায় শ্রোতাদের তাক লাগিয়ে দেন। তাদের সারেঙ্গী বাদনে যেন ফুটে উঠেছিল প্রশিক্ষণ ও স্বতঃস্ফূর্ততার অপূর্ব সংমিশ্রণ।
প্রধান আয়োজন ছিল গান-কবিতার পর্ব ‘ভালো থেকো ফুল’। সমবেত কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গান ‘ও আমার স্বপ্নঝরা আকূল করা জন্মভূমি’ দিয়ে শুরু হয় পরিবেশনা। দর্শকরা যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গাইলেন প্রাণের গান। মুগ্ধতায় ডুবে গিয়েছিল পুরো গ্যালারি।
পর্যায়ক্রমে পরিবেশিত হয়- ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’, ‘ও আমার বাংলা মা তোর’, ‘জন্ম আমার ধন্য হল’, ‘আবার আসিব ফিরে’, ‘একতারা লাগেনা আমার’, ‘আজকের শিশু’, ‘হায়রে আমার মন মাতানো দেশ’, ‘স্বাধীনতা এক গোলাপ ফোটানো দিন’—সহ প্রায় ২০টি গান।
প্রতিটি পরিবেশনায় ছিল ছন্দ ও আবেগের নিখুঁত ভারসাম্য। শ্রোতারা শুধু শোনেননি, গলা মিলিয়েছেন একাত্ম হয়ে। সবশেষে পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত। তবে তা শুরু হয় গগন হরকরার জনপ্রিয় গান ‘আমি কোথায় পাব তারে’ দিয়ে। এই সময় ‘জলতরঙ্গ’-এর দুই সদস্য সামনে এসে একটি বড় জাতীয় পতাকা মেলে ধরেন শিল্পীদের সম্মুখে। মুহূর্তেই মিলনায়তনে ছড়িয়ে পড়ে এক গভীর আবেগ, দেশের প্রতি ভালোবাসার এক রঙিন আলোকচ্ছটা।
অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা, সঞ্চালনা, পাণ্ডুলিপি, আমন্ত্রণপত্র থেকে শুরু করে স্মরণিকা প্রকাশ পর্যন্ত সবখানেই ছিল মসৃণতা ও পরিশীলন। সময়ানুবর্তিতা ও পরিপাট্য ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন জাকির হোসেন তপন ও তানভীরা আশরাফ শ্যামা।
