চামড়া সংরক্ষণে বিনামূল্যে ৩০ হাজার টন লবণ দেবে সরকার: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া যেন ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হয় এবং নষ্ট না হয়, সে লক্ষ্যে সারা দেশে ৩০ হাজার মেট্রিক টন লবণ বিনামূল্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মাদরাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে এই লবণ দেওয়া হবে।
বুধবার (২১ মে) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘কোরবানির চামড়া ও সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির’ প্রথম সভা শেষে এ তথ্য জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, "চামড়া যেন পচে না যায়, সেজন্য এবার সময়মতো লবণ পৌঁছানো হবে। এবার আর দাম না পেয়ে বাধ্য হয়ে চামড়া বিক্রি করতে হবে না। পাশাপাশি এতিমখানা ও মাদরাসাগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে চামড়া সংরক্ষণের বিষয়ে।"
তিনি আরও জানান, জনসচেতনতায় একটি নির্দেশনামূলক ভিডিও তৈরি করা হবে, যা প্রচারের মাধ্যমে দেশজুড়ে মানুষকে প্রস্তুত করা হবে সঠিকভাবে চামড়া সংরক্ষণের বিষয়ে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২২ মে) চামড়ার মূল্য নির্ধারণে আবারও সভায় বসবে কমিটি। বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এবার গত বছরের চেয়ে চামড়ার দাম বাড়বে। তিনি বলেন, "প্রয়োজনে কাঁচা চামড়া সরাসরি রপ্তানির পথও খোলা রাখা হবে।"
সভায় আরও জানানো হয়, নির্ধারিত পশুর হাট ছাড়া অন্য কোথাও কোরবানির পশু কেনাবেচা করা যাবে না। এছাড়া হাটে হাসিলের হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হবে বলেও জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, “এবার কোরবানির সময় বাজার ব্যবস্থা, পশু পরিবহন এবং মূল্য নির্ধারণে সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।” পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা ও ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার বন্ধেও তদারকি থাকবে বলে জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ বলেন, “চাঁদাবাজি রোধে পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ তৎপর থাকবে। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও মাঠে থেকে সার্বিক সহায়তা দেবে।” জনগণ অভিযোগ জানাতে ৯৯৯ ছাড়াও একটি হটলাইন চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
গত ২০ মে সরকার কোরবানির পশু ও চামড়ার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ১৭ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। সদস্য হিসেবে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র, শিল্প, সড়ক পরিবহন ও সেতু, পরিবেশ, স্থানীয় সরকার, ধর্ম, প্রাণিসম্পদ, তথ্য উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের প্রতিনিধি। সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বাণিজ্য সচিব।
কমিটির দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে- যথাসময়ে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত লবণ সরবরাহ নিশ্চিত করা; চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা; কোরবানির পশুর পরিবহন ও হাট ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা রক্ষা; ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান; বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।
এছাড়াও সাভারের ট্যানারি শিল্পনগরীসহ সারা দেশে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিবেশগত সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
